তোমাতেই সীমাবদ্ধ পর্ব-২০

0
911

#তোমাতেই_সীমাবদ্ধ
#part:20
#Mishmi_muntaha_moon

গায়ে হলুদ শেষ হতেই গোসল করে এক ঘুম দেই চোখ যেনো মেলতেই পারছি না।
বেঘোর ঘুমে ব্যস্ত তখনই কারো ছোয়ায় ঘুম ভেঙে যায়।তাকাতেই দেখি আরিশ ভাইয়া কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে।প্রথম ভেবেছিলাম হয়তো স্বপ্ন দেখছি কিন্তু কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলাম বাস্তবে আরিশ ভাইয়া আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

উনাকে দেখে তারাতারি উঠে বসি।

–আপনি এখানে কি করছেন।আর এলেন কি করে।

ভাইয়া আমার কথা শুনে চেয়ার টেনে বসে বলল

–কি করে আবার আসবো দরজা দিয়ে এসেছি।তুই কি ভাবছিস তোর জন্য বাংলা সিনেমার হিরো দের মতো পাইপ অথবা দেয়াল বেয়ে আসবো??

আরিশ ভাইয়ার কথা শুনে মুখ চুপসে গেলো। আমি সত্যি ভেবেছিলা উনি হিরোদের মতো দেয়াল বেয়ে অথবা অন্য কোনো পন্থা অবলম্বন করে আসবে কিন্তু,,!

আমি মুখ ভেংচি কেটে বললাম

–আমি এইসব ভাবতে যাবো কেনো?আপনি আগে বলুন কেনো এসেছেন।কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে।

আরিশ ভাইয়া আমার হাতে একটা শপিং ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বলল

–থাক বাবা তোর এত্তো গভীরে চিন্তা করতে হবে না এইসব আমি বুঝে নিবো। এই ব্যাগের ভিতরে যা আছে কাল বিয়েতে পড়বি বুঝলি?আর একদম ভুতের মতো সাজবি না।একদম নরমাল হওয়া চাই।

ভাইয়ার কথা শুনে ভ্রু কুচকে বললাম

–কাল সকাল দিক দিয়ে আসলেও পাড়তেন।সাধের ঘুমটাই ভেঙে দিলেন।

–যতো কম কথা বলবি ততই আমার চড়ের হাত থেকে বাচবি বুঝলি।এখন ঘুমিয়ে পর আমি গেলাম।

ভাইয়া বারান্দার দিকে যেতেই বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করি

–কোথায় যাচ্ছেন?দরজা তো সামনে।

আরিশ ভাইয়া বারান্দা থেকেই কিছু আমার উপর ছুড়ে দিয়ে বলল

–তুই এতোটা গাধা কেনো।তুই কি ভেবেছিস এতো রাতে দরজার বেল বাজাবো আর তোর অতি শান্তশিষ্ট আম্মু আমাকে হাসিমুখে তোর ঘরে পাঠিয়ে দেবে।স্টুপিড কোথাকার।

আরিশ ভাইয়া বারান্দার থেকে কিছু একটা দিয়ে নেমে গেলো হয়তো মই ছিলো।

কি খারাপ লোক তখন বলল দরজা দিয়ে এসেছে সোজা ভাবে বলে দিলেই তো হতো যে বারান্দা দিয়ে এসেছে আবার আমাকে
গাধা বলে।অসহ্য লোক।

সকাল হতেই আরো বেশি প্রফুল্লতা দেখা গেলো সবার মাঝে। আপুকে অলরেডি সাজানো শুরু হয়ে গেছে কিন্তু আমার কেমন যেনো আলসেমি লাগছে আর এই আলসেমির থেকে আমি বড়ই বিরক্ত আজকের দিনে এই সব আলসেমি ঘিরে ধরতে হলো। মনে হচ্ছে বসা থেকে উঠতেই আলসেমি আর গোসল করা তো তার চেয়ে বেশি আলসেমিত ব্যাপার।মাহিয়া তো ধুমধামসে সাজা শুরু করেছে।আর আরিশ ভাইয়ার তো সকাল থেকে কোনো খবরই পাচ্ছি না। অবশ্য শুধু আরিশ ভাইয়া না ফারদিন ভাইয়া রিয়াদ ভাইয়া কাউকেই চোখে পরছে না। আমাকে এভাবে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে দেখে আম্মু সকল কাজ ছেড়ে ছুড়ে আমাকে বকতে এসে পরলো। যেনো সব কিছু থেকে আমার সাজ টা বেশি ইম্পরট্যান্ট উনার কাছে।আমার বসে থাকার মাঝেই আম্মু কঠোর কন্ঠে বলল

–তুই এভাবেই বসে আছিস কেনো।তোকে দেখে তো মনে হচ্ছেই না যে আজ তোর বোনের বিয়ে। সবার আগে সেজে গুজে একটু কাজেও হাত বাড়াতে পারিস কিন্তু তুই তো জন্মগত অলস তাই না।

আম্মুর কথা শুনে আমি ধীর সুস্থে সোজা হয়ে বসে ঠোট উলটে আম্মুর দিকে তাকালাম । আমাকে বসে থাকতে আম্মু আবারো অতি অবাক নিয়ে বলল

–কেমন মেয়ে তুই সাজের কথা উঠলে যেখানে সব মেয়েরা সবার আগে থাকে আর তুই।আর এখনো বসে আছিস কেনো তারাতারি যা নাহলে সবার সামনে মার খাবি।

আম্মুর কথা শুনে অসহায় ভাবে তাকিয়ে উঠে যেতে নিতেই আম্মু আমাকে থামিয়ে উনার রুম থেকে একটা ব্যাগ এনে আমার হাতে ধরিয়ে দিলো।
আম জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আম্মুর দিকে তাকাতেই উনি বলল

–এই ব্যাগের ভিতর যেই ড্রেস আছে এইটা পরবি আজ বিয়েতে।

আম্মুর কথায় কপালে চিন্তার ভাজ পরলো।এইটা কি করে পরবো আরিশ ভাইয়ার দেওয়া ড্রেসের কি হবে তাহলে।কিন্তু ওই ড্রেস পরলে আম্মু নিশ্চয় জিজ্ঞাস করবে এইই ড্রেস এলো কোথা থেকে তাহলে কি বলবো?

–আম্মু আমি অন্য কোনো ড্রেস পরি।

আমার কথা শুনে আম্মু ভ্রু কুচকে বলল

–কেনো এই ড্রেসে কি সমস্যা?

আমি মাথা নিচু করে বললাম

–না কোনো সমস্যা নেই
কিন্তু এইটা না পরলেও তো কোনা সমস্যা নেই তাই না।

–এইটা না পরলে অনেক সমস্যা আছে।এখন আর একটাও কথা না এইটা পরবি মানে এইটাই।

আম্মু চলে গেলো।আর কি করার আম্মুর দেওয়া ড্রেস নিয়েই ওয়াশরুমে গেলাম।

লাল রঙের অনেক ঘের ওয়ালা একটা গাউন পরে রুমে ঢুকলাম।

–ওয়া,,,,,ও।

মাহিয়াকে এমন অদ্ভুদ ভাবে ওয়াও বলতে দেখে ভ্রু কুচকে গেলো।চোখ মুখ কুচকে বিরক্ত নিয়ে বললাম

–চুপ ওয়া,,,,,,,,,,ও মানে কি? সুন্দর করে বল ওয়াও দেটস ইট।

–উফফ ওই ওয়াও ওর কথা বাদ দে আগে বল তোর ড্রেস টা তো ঝাকাস।

–আম্মু বলল এইটা পরতে এভাবে বলল যেনো না পরলে দুনিয়া উলটে পালটে যাবে।

–ভালোই হয়েছে তোকে না সাজলেও সুন্দর লাগবে কিন্তু যেহেতু আজ তোর বোনের বিয়ে তাহলে তো একটু সাজতে হবেই।আয় আমি তোকে সাজিয়ে দেই।

বিকেলের দিক।অনেক মেহোমান খেয়ে দেয়ে চলে যাওয়ায় মানুষের সংখ্যা কিছুটা কমেছে।আমি আর চেয়ার টেনে বসে আছি।কিছুক্ষন পর হয়তো আপুকে বিদায় দেওয়া হবে।
মন খারাপ করে বসে থাকার মাঝেই দুটি মহিলা আর একটি মাঝবয়স্ক লোক আম্মুর সাথে এলো।

আম্মু উনাদের এনে আমাকে দেখাতেই আমি সৌজন্য মুলক হাসি দিয়ে সালাম দিলাম।মহিলাটা আচমকা আমার হাত টেনে ধরে হেসে বলল

–চিনতে পারছো না আমাকে তাই না?আমি হলাম তোমার নাহিদ ভাইয়ার চাচি।

উনার কথা শুনে মুহূর্তে মুখের রঙ বদলে গেলো।
আম্মু যে কি করতে চাচ্ছে কিছুটা হলেও বুঝতে পারছি।

আম্মু আর উনারা আমাকে সামনে রেখেই কিছুক্ষন হাসি মুখে কথা বলে চলে গেলো।

সারাদিন বাদে রাতে পেলাম আরিশ ভাইয়ার দেখা। তখন আমার মনের মাঝে হাজারো কালো মেঘের আনাগোনা। একে তো আপু চলে যাওয়ার সময় কেঁদেকেটে অবস্থা খারাপ।আবার আপু চলে যাওয়ার পর কিছুটা শান্ত হয়ে রুমে এসে আরেক চোট কান্না।
চোখ ফুলে টইটম্বুর যা খুব সহজেই বুঝতে পারছি।আর নাক ও লাল হয়ে আছে তার মাঝে আরিশ ভাইয়ার দেখা নেই।

গোসল টোসল করে দরজার দিকে চোখ রেখে বসে ছিলাম। ভাইয়া কে উনার রুমে যেতে দেখে আশেপাশে উকিঝুকি মারলাম নাহ কেউ নেই।
ধীর পায়ে আরিশ ভাইয়ার রুমে ঢুকতেই উনি তীক্ষ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো।

–এখানে কি??

ভাইয়া এমন ভাবে কথা বলতে দেখে মৃদু কন্ঠে বললাম।

–আপনি সারাদিন কোথায় ছিলেন।একবারও তো দেখলাম না।

আরিশ ভাইয়া কালো রঙের পাঞ্জাবী পরেছিলো এখন দেখলাম মাত্র।

আরিশ ভাইয়া কাবার্ড থেকে বাদামি রঙের একটা শার্ট বের করে বলল

–তোকে দেখতে চাইছিলাম না তাই বাহিরে ছিলাম।

আরিশ ভাইয়ার কথায় অবাক হয়ে গেলাম।আমাকে দেখতে চাইছিলেন না মানে কি।আমি অবাক হয়ে বললাম।

–কেনো আমি আবার কি করলাম যে আমাকে দেখতে চাইছিলেন না।

আরিশ ভাইয়া উলটো পিঠ থেকে আচমকা ঘুরে আমার হাত টেনে ধরে কাছে নিয়ে বলল

–আমার দেওয়া ড্রেস না পরে ওই রিজবীর দেওয়া ড্রেস পরেছিলি তুই তাও আবার মাত্রারিক্ত খুশি নিয়ে।আর তুই ভাবছিস আমি নেচে নেচে তোকে দেখে যাবো।

চলবে,,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই)