তোমাতে আমাতে পর্ব-১৭

0
1632

#তোমাতে_আমাতে
লেখা আশিকা জামান
পার্ট ১৭

ওখান থেকে ফিরে দুইজনেই চুপচাপ ছিলাম। কোন কিছু জিজ্ঞাস করার দুঃসাহস আমার তখনো হয়নি।ও সেদিন রাতে স্টাডিরুমেই ঘুমিয়ে যায়। আমিও ডাকতে যাইনি।
রাত ৩:১০ বাজে আমি তখনো লাইট অফ করে বিছানায় নিঃশ্বব্দে বসে ছিলাম। সহসাই লাইটের আলোয় পুরো রুম দিনের আলোর মত পরিষ্কার হয়ে যায়।
ইমন চমকে উঠে আমার দিকে তাকায়।
— তুমি এখনো ঘুমুও নি। রাত কত হয়েছে কোন আইডিয়া আছে?
আমার পিঠ ঘেষে ইমন বসে পড়ে ।
আমার দুই কাধ শক্ত করে ধরে আমাকে ওর দিকে ঘুরায়।
— এক্সট্রেমলি সরি। আমি ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করে ছিলে তাই না!
আমার দুই গাল ধরে ও ওর মুখের কাছাকাছি নিয়ে যায়। লাইটের আলোয় আমি ওর মুখটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। অদ্ভুত সম্মোহনে টানছে আমায়, নিষ্পাপ, নিষ্কুলশ বদনখানি। এত অমায়িক কারো চেহারা হতে পারে? কিন্তু এই মানুষটা যে আমার বড্ড অচেনা। ওর লাইফে আদৌ আমার কোন অস্তিত্ব আছে কিনা আমি সন্দিহান। বড্ড কাটাকাটা করে বলে ফেললাম,
— ছাড়ো আমার বড্ড ঘুম পাচ্ছে।
— এতক্ষনতো তোমার ঘুম পায়নি। আমাকে দেখেই কি ঘুম পেয়ে গেল?
ওর গলাটায় বড্ড অভিমান ফুটে উঠলো। আমি অনিচ্ছা সত্বেও ওকে ঠেলে সরিয়ে দিলাম। সাথে সাথে ও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আমাকে বিছানায় ফেলে দিলো।
— তুমি কি এখন জোড়জবরদস্তি করবে?
— দরকার হলে তাই করবো?
বড্ড কাটাকাটাভাবে কথাগুলো বলে আমার ঠোটের কাছে গিয়ে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলো।
আমার চরম বিরক্ত লাগতে শুরু করলো।
— তুমি স্মোক করেছো?
— হ্যা করেছি তো?
— আগেতো কখনো দেখিনি?
আজকেই কেন?
স্পেশাল কিছু?
সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে প্রশ্নগুলো ছুড়ে দিলাম।
— আগে আরো এমন অনেক কিছুই হয়নি কিন্তু আজকে হবে? কোন সমস্যা!
আমি আরো কিছু বলতে চাইছিলাম কিন্তু বলার আগেই ওর আমার ঠোটের উপর হামলে পড়ে।
আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিলো।
একটুপর আমার ঠোট ছেড়ে দিয়ে গলায় ওর উষ্ণ নিঃশ্বাস অনুভব করতে লাগলাম। আমি কাপাকাপা গলায় ওর দিকে প্রশ্ন ছুড়েই দিলাম,
— যাকে ভালোইবাসোনা তাকে কাছে পাওয়ার এত ব্যাকুলতা কেন?
ইমন চমকে আমার দিকে তাকায়।
— রাতদুপুরে কি পাগলামি ভর করেছে? কোথায় কখন কি বলতে হয় এইগুলা কি নতুন করে শিখাতে হবে। জাস্ট স্টপ ইট!
বলেই আবার আমাকে কাছেটেনে নিলো। কেন যেন ওর স্পর্শটা বড্ড অসহ্য লাগতে লাগলো। যে স্পর্শ আমাকে উন্মাদ করে দিতো আজ সেই স্পর্শ চরম বিষাদময়। আমি নিজেই স্তম্ভিত। কখনো কখনো আকাঙ্ক্ষিত বস্তুতেও অনীহা হয়। যেমন আজকের বিষাদময় রাত…।

— আচ্ছা হঠাৎ আমার সাথে আপনার কি এমন দরকারি কথা থাকতে পারে বুঝতে পারছিনা। শুনোন আপনাকে অনলি ১৫ মিনিট সময় দিতে পারবো কারণ আপনি অলরেডি ১৫ মিনিট লেট করে এসেছেন।
— আসলে বাসা থেকে বের হতে একটু লেট হয়ে গেছে তাছাড়া রাস্তায় জ্যাম ছিলো। কি নিবেন?
— আপাতত কিছুই খেতে ইচ্ছে করছে না।
— তাহলে অনলি কফিটা নিন প্লিজ আমার খুব ভালো লাগবে।
— আচ্ছা ঠিক আছে।
আমি ওয়েটারকে বিদায় করে ইউশার দিকে তাকালাম। বেশ সুন্দর গোলগাল চেহারা। চেহারায় একটা চটপটে স্বভাব স্পষ্ট আর বেশ খানিকটা অধৈয্য।
আমি ঘামতে লাগলাম। বেশ খানিক্ষন চুপচাপ ছিলাম। ওয়েটার বেশ খানিক্ষন আগে কফি দিয়ে গেছে।
— দেখুন আপনি কিছুই বলবেন না। আমার হস্পিটালে যেতে হবে উঠছি।
আমি কাপাকাপা গলায় বলে ফেললাম,
— বসে যান। লাভই হবে।
— ও তাই আচ্ছা!
— ইমনের সাথে আপনার কি সম্পর্ক?
মেয়েটা চমকে আমার দিকে তাকালো।

— কিছুইনাতো। ও আমার ফ্রেন্ড। আরতো কিছু নেই।
কিছুক্ষন দুজনেই চুপ।
তারপর মেয়েটিই আমতা আমতা করে বললো,
— আচ্ছা ইমন কি আপনাকে আমার কথা কিছু বলেছে।
— আমি ইমনের অভ্যেস কিন্তু ওর ভালবাসাটা বোধ হয় আপনি।
আমি এক নিঃশ্বাসে কথাটা বলে নিজেই চমকে উঠলাম। মেয়েটা বিস্মিত হয়ে আমার দিকে তাকালো।
তারপর সহজ হয়ে বললো,
— আর ইউ কিডিং?
— সিরিয়াস।
থমথমে গলায় বললাম।
— ইমন আপনার স্বামী। আপনি বুঝতে পারছেন আপনি কি বলছেন?
— হুম সত্যিটাকে সত্যি বলে মেনে নেয়ার ক্ষমতা আমার আছে। হোকনা সেটা যতই অপ্রিয়।
আসলে ইমন আপনাকেই ভালোবাসে। আমার মাঝে সবসময় ও আপনাকেই খুজে বিশ্বাস করুন আমি কোন মজা করছিনা।
— কিন্তু আপনাদেরতো বিয়ে হয়ে গেছে। এখন আর এইসব বলে কি লাভ?
— বিয়ে হলেই কি সব শেষ হয়ে যায়?
ভালবাসাহীন কোন বিয়ে থাকার চেয়ে না থাকাটাইতো বেটার। আপনি কি ইমনকে ভুলতে পেরেছেন?

মেয়েটি আশ্রুসজল চোখে আমার দিকে তাকায়। ওর চোখই বলে দিচ্ছে আমার ইমনের প্রতি ওর ভালোবাসাটা। সরি আমার ইমন না। ও আমার কোনদিন ছিলো না।
— আপনি কি জানেন ওর আর আমার ব্রেকাপ হইছে অনেক আগেই। ইনফ্যাক্ট ইমন আর প্রেম তেমন ভাবে গড়ে উঠার আগেই ভেংগে যায়।
— কিন্তু দুইজনইতো কষ্ট পাচ্ছেন।মাঝখানে আমিই এসে…
সব এলোমেলো…
ইউশা আমার হাত ধরে ফেলে।
–দেখুন আপনি নিজেকে দায়ী করবেননা। সবতো কপালের লেখন। আরতো কিছু করার নেই।
আমি স্পষ্ট গলায় বললাম,
— কে বললো নেই?
আমি আপনার আর ইমনের মাঝে কি হয়েছে জানিনা। আর জানতেও চাইনা। আমি চাই আপনারা সমস্ত মান অভিমান ভুলে আবার কাছাকাছি আসুন।
— হুয়াট?
মেয়েটি উঠে পড়লে আমি উনাকে টান দিয়ে বসাই।
— দেখুন ইমনকে আমি চিনি ও রাজী হবেনা। ও আপনাকে বিয়ে করেছে যেহেতু সেহেতু আপনার দায়িত্ব এড়াতে পারবেনা। তাছাড়া আপনিও তো ওকে ভালবাসেন। তাহলে এইরকম একটা কাজ কেন করতে যাবেন?
— ধরুন ভালবাসি বলে।
মেয়েটা কিছুক্ষণ নিচের দিকে তাকিয়ে কি কি যেন ভেবে গেল।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
— আচ্ছা ইশিতা আপুকে কি আমার আর ইমনের ব্যাপারে কিছু বলেছেন?
— নাহ। আমি কৌশলে আপনার সাথে মিট করার কথা বলেছি। পরে ফোননম্বর ও নিয়েছি। কিছু বুঝেনি।
আচ্ছা আজকে উঠছি। আপনার সাথে পরে কথা হবে আপনি একটু ঠাণ্ডা মাথায় ব্যাপারটা নিয়ে ভাবুন।

ইমন ফোন নিয়ে কতক্ষন কি যেন করছিলো । আমি ড্রেসিংটেবিল এর সামনে চুল আচড়াচ্ছিলাম।
— শোন একটা কথা বলবো রাখবে?
— হুম বলো।
আমার দিকে না তাকিয়েই উত্তর দিলো।
— কালকে আমার সাথে এক যায়গায় যাবে?
— আচ্ছা যাবো।
বলার সাথে সাথেই উত্তর দিয়ে দিলো। কিছুটা অবাক হলাম।
একটুপর তাকালো আমার দিকে,
— আদি কোথায় যাওয়ার কথা যেন বলছিলা?
— গেলেই বুঝবা।
— আজব, না জেনে শুনে কোথায় যাবো?
— ভয় নেই, জাহান্নামে নিয়ে যাবোনা। আমি কোলবালিশ নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম।
— আদি সমস্যা কি?
এই বালিশটা এখানে কি করছে?
ওর প্রশ্নের উত্তর দেয়ার প্রয়োজন আমি মনে করছিনা।
ও আমার পাশে এসে বসলো,
— কি হলো কথা বলছো না কেন?
আমি ঘুমের ভাণ ধরে চোখবুঝে শুয়ে থাকলাম। ইমন রাগে গজগজ করতে শুয়ে পড়ে।
(চলবে)