#তোমাতে_আমাতে ২
পর্ব ১১
আশিকা জামান।
মেঘ ডাকছে গুডুম গুডুম৷ অসময়ে। হ্যাঁ বড্ড অসময়। লাগামছাড়া হাওয়ায় জানালার পর্দা উদ্ভ্রান্তের মত উড়ছে। বিদ্যুৎ চমকানোর আওয়াজ বিকট শব্দে চারপাশ আচ্ছন্ন করে রেখেছে। এতো গেল প্রকৃতির গুমোট ভাব। হৃদয়ের মেঘ যে অথৈ প্লাবনের আশায় পায়তারা করছে তার কি হবে?
হঠাৎ ই দমকা হাওয়ার শব্দ ঘন থেকে ঘনতর হচ্ছে।
আমি উদ্ভ্রান্তের মত ছুটে গেলাম ইমনের কাছে। জানিনা কোন সে টানে আজন্ম দুজন দুজনার কাছে এসেছিলাম। কড়াভাবে নিজের অধিকার ফলাতে লাগলাম।
” ওয়েদারের কন্ডিশন দেখেছো? ইমন এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে৷ রুমে চলো।” হাতে টান দিয়ে ওকে একরকমভাবে আমার দিকে ঘুরিয়ে ফেলি।
প্রথমে আগুন ঝরা চোখে আমার দিকে তাকালেও ক্রমশ শান্ত শীতল দৃষ্টিতে প্রশমিত হতে বেশিক্ষন লাগলোনা।
নিশ্চুপে আমার হাত ধরে রুমে চলে এলো। যেন এতোক্ষন কিছুই হয়নি।
আমি বিছানায় বসতে চেয়েছিলাম তার আগেই ও আমাকে জাপটে ধরে।
এমনভাবে ধরে আমার প্রান প্রায় উষ্ঠাগত। তবুও দাতে দাত চেপে সহ্য করলাম। এখন যদি সরিয়ে দেই
তাহলে আরেকদফা অভিমানের ঝড় উঠবে। যেটা এই মুহুর্তে আমি চাইছি না।
” খুব সুন্দর লাগছে৷ তোমাকে শাড়িটায় খুব মানিয়েছে আমার লাল টুকটুকে বউ।” কথাটা বলেই ও আমার কপালে ছোট্ট করে একটা চুমো একেঁ দেয়।
আমি চাতক পাখির ন্যায় ওর চোখের দিকে তাকায়। হয়তোবা এই দৃষ্টি আমার ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত। আমি ছেড়ে দিয়ে পিছিয়ে যেতে থাকি। কিন্তু পারনি তার আগেই ও আমার কোমড়ের ভাজে হাত রেখে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে। সমস্ত শরীর শিথিল হতে থাকে। নিজেকে ভারশূন্য মনে হতে থাকে ফলে আমার বিছানায় পড়ে যাওয়াটা ঠেকাতে পারিনি। ইমন ও আমার উপরে এসে পড়ে। আমি ওকে দুইহাত দিয়ে ঠেলতে চাইলাম কিন্তু সুবিধে করে উঠতে পারলাম না।
এক হাতে শাড়ির আচল অন্য হাতে আমার চিবুকে আলতো স্পর্শ। অন্যরকম এক চাহিদার আভাস টের পেলেও নিজেকে দমিয়ে রাখতে আমার বেশ বেগ পেতে হলো। তবুও বললাম,
” প্লিজ, ছাড়ো আমাকে? গাইনোকলোজিস্ট কি বলেছে..!”
অর্ধ ডুবন্ত ইমন হাসের মত গলা তুলে বললো,
” তুমি আমাকে এখন গাইনোকলোজিস্ট দেখাচ্ছো? ইউ হ্যাভ নো ইন্টারেস্ট..? এটা বললেই পারতে।”
খামোকাই ইমন চটে গেলো। আধশোয়া থেকে সোজা বিছানায় বসে গেলো।
” তুমি কিন্তু আমাকে ভুল বুঝছো। ভুলভাবে ব্যাখ্যা করছো?”. আমি ওকে হাতের জোরে আমার দিকে ঘুরানোর চেষ্টা করছিলাম।
” সবকিছু এতো বিধিনিষেধ মেনে হয়না। ইন্সট্যান্স মাথায় আসে। এখন এতে যদি তোমার অসম্মতি থাকে তাহলে তোমাকে ফোর্স করার কোন মোটিভ আমার না পূর্বে ছিলো না এখন আছে।”
” ইমন তুমি সব জেনে বুঝে এখন এরকম কথা বলতে পারো না। অন্তত তোমার ক্ষেত্রে এমন পাগলামো মানায় না।”
” আদৃতা, আমি যদি সবটা জেনে বুঝেই থাকি তাহলে তোমার উচিৎ ছিলো আমার প্রতি ভরসা করা। বাট তুমিতো আমাকে সেই যায়গাটাই দিলেনা। “.
আমি নিশ্চুপ ছিলাম ওর প্রশ্নের উত্তর দেবার মত অবস্থায় তখন আমি নেই। ও কি বুঝলো জানে?
” এরকম সিচুয়েশন পূর্বেও তৈরি হয়েছিলো তুমি তখনতো বাধা দাওনি। আগ্রহটা তোমারো কম ছিলোনা। তবে আজকেই কেন?”
আমি তখনে নিঃশব্দে জল ফেলছিলাম। ইমন আবারো তেতে উঠলো,
” আদৃতা, আমি এরকম ঠুনকো বিষয় নিয়ে যে তেতে উঠবোনা এটা তুমি ভালো করেই জানো? আমারতো সমস্যার গোড়াটা জানা দরকার? এরকম শাপ ব্যাঙ বুঝিয়েতো পার পাবেনা৷ আজকে সারাদিন তোমাকে অবজার্ভ করলাম ফলাফল জিরো। আমার অপরাধটাতো জানার অধিকার রাখি। বলো কি হইছে?”
ইমন আমার দুই কাধ বেশ চাপ দিয়ে ধরে।
আমার ফুপিয়ে কাদঁতে কাদঁতে বললাম,
” জানোনা কি হয়েছে? একদম ন্যাকা সাজবে না। কি ভেবেছোটা কি? দেশে সুবিধে করতে পারছোনা বলে ইউশাকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়াতে ফূর্তি করা হবে। আর আমি বেকুবের মত সব মেনে নিবো।”
ইমন যেন আকাশ থেকে পড়লো। হতবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো।
” এইভাবে তাকাচ্ছো কেন? তুমি না বললে কি ভেবেছো আমি জানবোনা। চোরের মত একদম তাকাবে না।”
” শেট আপ আদৃতা। তুমি মুখে যা আসছে তাই বলে যাচ্ছ। অবাক না হয়ে পারছিনা। এরকম মিডিল ক্লাস সেন্টিমেন্ট নিয়ে থাকো কি করে?
ইউশা কোথায় যাচ্ছে না যাচ্ছে এতে আমারতো কোন মাথা ব্যাথা নেই। তাহলে তোমাকে বলায় না বলায় কি এসে যায়। আশ্চর্য তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি ইউশার সাথে হানিমুনে যাচ্ছি! আমি পড়তে যাচ্ছি বেলাল্লাপনা করতে নয়৷ আশ্চর্য সেখানে ইউশাকে গেলে আমার কি করার আছে? না আমি ক্যানসেল করতে পারি না ওকে না করতে পারি। ব্যাপারটাকে এতো জটিল করে তোলার কি আছে?”
” তারমানে তুমি ইউশার সাথে যাবেই?”
” ফর ইউর কাউন্ড ইনফরমেশন! আমি অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছি। সাথে অনেকেই যাচ্ছে। তাদের মধ্যে ইউশা থাকলে আমার করার কিচ্ছু নেই।”.
আমি আরো জোরে কাদঁতে লাগলাম।
” তুমি এতোটা খারাপ আমার জানা ছিলোনা। তুমি আমার সাথে এরকমটা করতে পারো না। ইউ হ্যাভ নো রাইটস। ”
” আদৃতা, তুমি আমাকে রাইটস শিখাচ্ছ। তোমাকে আমার কি বলা উচিৎ, সত্যি আজকে আমি ভাষা শুন্য। তুমি আজকে ঠিক কি কি বলেছো তুমি জানো? তুমিতো পাগল হয়ে গেছো। তুমিকি নিজের মধ্যে আছো? তিল তিল করে গড়া তোমার প্রতি আমার সমস্ত ভালোবাসাকে আজঁ তুমি অপমান করেছো? আমার পাচঁ বছরের সংসার জীবনকে তুমি প্রশ্নবিদ্ধ করেছো? বিয়ের পর তোমার আমার মাঝে ইউশাকে কে টেনে নিয়াসছিলো? তুমি টেনে আনছো। অহেতুক কারণে। আমি ওকে ঘৃনা করি। এরপরে ও তুমি বহু কাহিনি করেছো। যার আমার লাইফে কোন এক্সিস্টেন্সই নেই তাকে তুমি আবার টেনে আনতেছো। আমাকে আবার ভুল বুঝতেছো? আচ্ছা তুমি ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখেতো এতে আমার কি অপরাধ? হ্যাঁ একটাই অপরাধ বিয়ের আগে আমার একটা গার্লফ্রেন্ড ছিলো। আচ্ছা এরজন্য আমার আর কত সাফার করতে হবে বলতে পারো? আমি ফেড আপ আদৃতা। তুমি আর এই অধ্যায় টা আমার সামনে এনো না। নিজে কষ্ট পেয়ো না সাথে আমাকেও কষ্ট দিওনা। একদিন কিন্তু এই আজকের রাতের কথা ভেবেই তোমার আফসোস হবে এই বলে দিলাম।”
ইমন একদমে কথাগুলো বলে মরার মত বিছানায় বসে পড়লো। তারপর কতক্ষন কি ভেবে আবার বললো,
” তোমার যেহেতু এতই ইনসিকিউরিটি! তো তুমিও চলো আমার সাথে। তাহলেতো আর সমস্যা নেই।”
” কক্ষনো না তুমি যাবোনা এটাই ফাইনাল।” কথাটা বলে আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম।
চোখে মুখে পানি দিয়ে এসে আবার বিছানায় বসলাম। ইমন আবার ব্যালকনিতে চলে গেছে ততক্ষণে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
” তুমি আবার এখানে কেন?”
হাতের সিগেরেটটা অন্যদিকে লুকাতে চায় ও।
” সিগেরেট খাচ্ছো কেন? মানা করেছি না! ফেল বলছি।”
তখনো ফেলছিলো না দেখে আমি জোর করে হাত থেকে কেড়ে নেই।
” কি পুরান প্রেম মনে উদয় হইছে? খুব বিরহ না।”
” না পুরান প্রেম কোন জন্মেই শেষ। যেটা ছিলো সময়ের আবেগ তার জন্য বিরহ ইমন চৌধুরী করে না। বিরহ কেন হয়, সেটা যদি নিজের বউকে বলে বলে দিতে হয় তাহলে চুলোয় যাক বিয়ে নামের শব্দটা।”
ইমন আমার কানের নিচে হাত দিয়ে মুখটা উপরে টেনে তুলে। চোখে মুখে নাকে ওর উষ্ণ নিঃশ্বাস পড়ছিলো। বুক কাপছিলো।
আধো ভাঙ্গা গলায় বললো,
” বলো, বুঝোনা ঠিক কতোটা ভালোবাসি। কেন এভাবে কষ্ট দাও।”
আমার চোখে তখন জল উপচে পড়ছে। সারা শরীরে উত্তেজনা।
ইমন হঠাৎই আমার ঠোঁট দুটো কামড়ে ধরে। চুমো খায় দীর্ঘক্ষন। দুজন দুজনের মাঝে ডুবতে থাকি বেশ কিছুক্ষন। উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে প্রায় পড়ে যাওয়ার উপক্রম হতেই ও আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানার দিকে আগাতে থাকে৷
চলবে…