তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব-১৬+১৭

0
265

#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_১৬

কোমরে কারোর শ*ক্ত হাতের স্পর্শ পড়ায় কেঁ*পে উঠলো আরশি। বন্ধ চোখের পাতাও মৃদু কেঁ*পে উঠলো তার। নাসারন্ধ্রে ভেসে আসলো পরিচিত এক ঘ্রাণ। তা*ড়া*হু*ড়ো করে লিফটে ঢোকার চ*ক্ক*রে কারোর সাথে যে এভাবে ধা*ক্কা লেগে যাবে বুঝতে পারে নি আরশি।

ঘাড়ে সামনের ব্যক্তির গরম নিঃশ্বাস আ*ছ*ড়ে পড়ায় পিটপিট করে চোখ খুললো আরশি। মাথা টা উঁচু করতেই চোখের সামনে ভেসে উঠলো পরিচিত এক মুখ। তার দিকে অদ্ভুত নে*শা*লো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ভীষণ অবাক হলো আরশি আবরার কে এই সময় অফিসে দেখে। আবরারের অমন দৃষ্টিতেও যেনো ক*ম্পি*ত হলো তার দেহ, মন। নিজেকে ছাড়ানোর জন্য মো*চ*ড়া*মো*চ*ড়ি করতেই আরও শ*ক্ত করে আরশির কোমর চে*পে ধরলো আবরার। এতে করে আবরারের আরও কাছাকাছি চলে আসলো আরশি। আবরারের গরম নিঃশ্বাস এবার তার সারা মুখে বিচরণ করছে। বুঁকের মাঝে ঢি*প*ঢি*প শব্দ হচ্ছে আরশির। মনে হচ্ছে কেউ তাকে অ*ব*শ করে ফেলেছে। আবরার আরশির চোখে চোখ রেখেই ফিসফিস করে বললো,

— আমার পিছু নিতে নিতে এখান পর্যন্ত চলে আসলে মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি?

আবরারের প্রশ্নে কপাল কু*চ*কে আসলো আরশির। সে কবে আবরারের পিছু নিলো? আরশি এক ধা*ক্কা*য় আবরার কে দূরে সরিয়ে দিয়ে বললো,

— আপনি দিন কে দিন আরও লু*চু আর অ*সভ্য হচ্ছেন এমপি সাহেব। এভাবে পাবলিক প্লেসে দাঁড়িয়ে একটা মেয়ে কে স্পর্শ করছেন লজ্জা করে না?

কথা শেষ করে আশেপাশে চোখ বু*লা*লো আরশি। তেমন কেউ নেই লিফটের কাছাকাছি। কেউ খেয়াল করে নি ভেবে স্ব*স্তি*র নিঃশ্বাস ফেললো সে। এবার আরশি নিজের কথার বিপরীতে আবরারের কাছ থেকে কিছু কথা শুনার জন্য প্রস্তুত হলো। কারণ ধা*ক্কা টা তার তা*ড়া*হু*ড়ো করার কারণেই লেগেছে। আর আবরার না ধরলে এতক্ষনে সে ফ্লোরে অবস্থান করতো। অন্যদিকে আরশির কোনো কথা যেনো আবরারের কানে ঢুকে নি। সে তো এক দৃষ্টিতে আরশি কে পরখ করতে ব্যস্ত। আরশি কে সম্পূর্ণ রূপে পর্যবেক্ষণ করতেই আবরারের মুখ থেকে আপনাআপনি বেরিয়ে আসলো,

— মাশাআল্লাহ……

আবরারের কাছ থেকে কিছু টা দূরে অবস্থান করায় শব্দ টা আরশির কর্ণকুহরে পৌছালো না। আরশির কাজল টা*না চোখের দিকে এখনো এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আবরার। আরশি আবরারের চোখের সামনে হাত না*ড়তেই পকেটে হাত গুঁ*জে সোজা হয়ে দাঁড়ালো সে। আরশি এক ভ্রু উঁচু করে জিজ্ঞাসা করলো,

— ঠিক আছেন তো এমপি সাহেব? নাকি মাথা গেছে? একা একা কি বি*ড়*বি*ড় করছেন?

আবরার নিজের বুঁকের বাম পাশে এক হাত রেখে বললো,

— নাহ ঠিক নেই মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি। এক শুভ্র পরী কে দেখে মাথা ন*ষ্ট হয়ে গেছে। তাই তো তাকে দেখে মুখ কে কন্ট্রোল করতে পারলাম না। আপনাআপনি মাশাআল্লাহ শব্দ টা বেরিয়ে আসলো। আর কারোর নজর যেনো তার উপর না পড়ে।

আবরারের কথা শেষ হতেই আরশি একবার নিজের দিকে তাকিয়ে আবরারের দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। আজ সে একটা সাদা সালোয়ার কামিজ পড়ে এসেছে। তাই আবরার শুভ্র রঙ উল্লেখ করায় একবার নিজের দিকে তাকিয়ে নিলো সে। মনে মনে ভাবলো,

— আচ্ছা এমপি সাহেব কি আমার কথা বলছেন? উনি কি আমার প্রশংসা করলো নাকি আমি কালা মানুষ হয়ে সাদা রঙ পড়ায় বে*ঙ্গ করলো?

আরশির ভাবনার মাঝে তু*ড়ি মা*র*লো আবরার। বাঁ*কা হেসে বললো,

— তোমাকে উদ্দেশ্য করে কিন্তু কিছু বলি নি মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি। ভু*লেও এই ভু*ল ভেবো না। আমি তো আমার শুভ্র পরীর কথা বললাম। তাকে দেখে আজ আমার মাথা ঠিক নেই। হ্যাং খেয়ে আছি এখনো।

আরশি মুখ বা*কিয়ে বললো,

— বুঝতে পেরেছি। আর আমি মোটেও ঐসব ভু*ল*ভা*ল ভাবি না হুহ।

আরশি আর কথা না বাড়িয়ে লিফটে প্রবেশ করলো। আরশি প্রবেশ করতেই আবরার ও লিফটে ঢুকে গেলো। আবরার লিফটের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে সোজা চোখে আরশির দিকে তাকিয়ে আছে। আবরার এভাবে তাকিয়ে থাকায় বি*র*ক্ত হলো আরশি। নাক মুখ কু*চ*কে বললো,

— স*ম*স্যা কি এমপি সাহেব? এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো? জীবনে মেয়ে দেখেন নি। আর আপনার না কোন শুভ্র না টু*ভ্র পরী আছে? তাহলে আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো? গিয়ে নিজের শুভ্র পরী কে দেখুন।

হুট করে বাঁ*কা হাসি দিয়ে আরশির দিকে এক ঝ*ট*কা*য় এগিয়ে আসলো আবরার। আরশির দুই পাশে হাত রেখে কিছু টা ঝুঁ*ক*তেই মুখ ঘুরিয়ে নিলো আরশি। আবরার আরশির কানের কাছে মুখ টা এগিয়ে নিয়ে ফিসফিস করে বললো,

— মেয়ে তো অনেক দেখেছি। কিন্তু আমার শুভ্র পরীর মতো কাউকে তো দেখি নি। সে তো সবার চেয়ে আলাদা। একদম ভিন্ন। আর আমি নিজের শুভ্র পরীকেই তো দেখছি। আই মিন সে তো সামনে নেই। তাই তোমাকে শুভ্র পোশাকে দেখে তোমার মাঝে তাকে কল্পনা করছি।

আবরার কথা শেষ করে যেভাবে এক ঝ*ট*কায় কাছে এসেছিলো ঠিক সেভাবেই দূরে সরে গেলো। এতক্ষন যেনো দম আ*ট*কে রেখেছিলো আরশি। আবরার দূরে যেতেই আ*ট*কে রাখা দম ছাড়লো সে। আবরারের দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললো,

— ফা*ই*জ*লামি করছেন আমার সাথে?

আবরার ঠোঁট উ*ল্টে বললো,

— অবশ্যই। তুমি আবার নিজেকে আমার শুভ্র পরী ভাবা শুরু করো না যেনো। কোথায় তুমি আর কোথায় আমার শুভ্র পরী? জানো সে কতো টা সুন্দর। আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর নারী সে। তার আঁখি জোড়ার কথা আর কি বলবো? তার ওই আঁখি জোড়াতে ম*ত্ত হয়েই তো আমি ভালোবাসা কি বুঝতে শিখেছি। তার সেই মা*রা*ত্মক আঁখি জোড়ায় যখন সে কাজল টা*নে তখন সেই আঁখি জোড়ার দিকে একবার তাকালে দৃষ্টি সরানো মুশকিল হয়ে যায়। তার ডাগর ডাগর আঁখি জোড়ার ধা*রা*লো চাহনি আমার হৃদয়টা কে ছি*ন্ন*ভি*ন্ন করে দেয়। শুভ্র পোশাকে তাকে কতো টা পবিত্র, স্নিগ্ধ লাগছিলো জানো? ইচ্ছা করছিলো সারা জীবন তার দিকে তাকিয়েই থাকি। কিন্তু সে তাকাতে দিলে তো?

শেষ কথা টা আ*ফ*সো*সের সাথে বললো আবরার। আবরারের মুখে অন্য একটা মেয়ের এতো প্রশংসা শুনে কেনো যেনো ভালো লাগলো না আরশির। সে মনে মনে ভাবতে লাগলো,

— সত্যিই কি এমপি সাহেবের কোনো শুভ্র পরী আছে? উনি কি সেই মেয়ে কে ভালোবাসেন? কে হতে পারে সেই মেয়ে যার এতো এতো প্রশংসা করছেন উনি?

আবরার আরশির ভাবনার মাঝে বলে উঠলো,

— বাই দা ওয়ে মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি, তুমি আবার আমার শুভ্র পরি কে হিং*সা করছো না তো?

আরশি রে*গে তাকালো আবরারের দিকে। এক আঙ্গুল তা*ক করে বললো,

— আমি মোটেও আপনার শুভ্র না টু*ভ্র পরী কে হিং*সা করছি না। তবে আপনি আমার মাঝে নিজের শুভ্র পরী কে কল্পনা করা বন্ধ করুন। নয়তো তার সাথে দেখা হলে বলে দেবো আপনি অন্য মেয়ের মাঝে তাকে খুঁজেন।

আবরার হাই তু*লে বললো,

— আমার শুভ্র পরী তোমার মতো হিং*সু*টে না বুঝলে মেয়ে। তাকে এসব বললেও সে রা*গ করবে না। তাই তুমি তাকে অবশ্যই বলতে পারো। আমি অনুমতি দিলাম।

লিফট কাঙ্ক্ষিত ফ্লোরে থামতেই আর কথা না বাড়িয়ে আবরারের আগে লিফট থেকে বেরিয়ে আসলো আরশি।

— মিস আরশি?

দুই কদম আ*গা*তেই আবরারের ডাকে থেমে গেলো আরশি। আবরারের মুখে আরশি নাম টা শুনে অবাক হলো সে। আবরার তো কখনো তাকে আরশি বলে ডাকে না। আরশি অবাক ভাব নিয়েই আবরারের দিকে ফিরলো। আবরার আরশির সামনে এসে জিজ্ঞাসা করলো,

— মিস আরশি তুমি এই অফিসে কি করছো তা তো বললে না।

আরশি ছোট করে বললো,

— আমি এখানে জব পেয়েছি।

আরশি জবাব দিয়েই আবার উৎসুক কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,

— কিন্তু আপনি এখানে কি করছেন এমপি সাহেব?

আবরার গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

— আমার অফিসে আমিই তো আসবো তাই নয় কি? আর এখানে আমি তোমার এমপি সাহেব নই। বস হই তোমার তাই স্যার বলে ডাকবে।

আবরার আর না দাঁড়িয়ে নিজের কেবিনে চলে গেলো। আবরারের রু*ড ব্যবহারে ক*ষ্ট পেলো আরশি। যেই আনন্দের সাথে প্রথম দিন অফিসে এসেছিলো, সব আনন্দ যেনো এক নিমিষে গা*য়ে*ব হয়ে গেলো। মনে মনে ভাবলো,

— এমপি সাহেব এতো রু*ড বিহেভ করলেন কেনো? অ*সভ্য, ব*দ, খা*রা*প লোক একটা। যখন যেমন খুশি তেমন আচরণ করে। ওয়েট আমার না টেবিলের চি*পা*য় লুকানোর কথা ছিলো? যেকোনো মূল্যে তার সামনে না পড়ার কথা ছিলো? কিন্তু দেখো বা*জে লোক একটা প্রথম দিনই সামনে চলে আসলো। আমাকে লুকানোর সুযোগটাও দিলো না। আর এখন তো তার কোন শুভ্র না কা*ই*ল্লা পরীর আমদানি হয়েছে আবার হুহ।

চলবে?

#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_১৭

আরশির আকাশ পাতাল ভাবনার মাঝে ম্যানেজার এসে জানিয়ে গেলো আবরার তাকে কেবিনে ডাকছে। আরশি ম্যানেজার এর পিছু পিছু আবরারের কেবিনে গেলো। গিয়ে দেখলো নতুন সবাই সেখানে উপস্থিত। আবরার সবার সামনে দাঁড়িয়ে হাসি হাসি মুখ করে বললো,

— আপনাদের সবাই কে ওয়েলকাম জানাচ্ছি। আমি আজওয়াদ আবরার। এই অফিস টা আমার বাবাই এর। কিন্তু তিনি অ*সুস্থ হওয়ায় আমাকে এই কোম্পানির পিছনে দৈনিক কিছু টা সময় দিতে হয়। তো আপনাদের সবার সাথে পরিচিত হওয়া যাক। সবাই একে একে নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন।

সবাই নিজেদের নাম, পরিচয় বলতে লাগলো। আরশি এক কোনে দাঁড়িয়ে মেয়েদের রঙ ঢং দেখছে। একেক জন আবরার কে দেখিয়ে ঢং করে করে কথা বলছে। তবে সবাই এক নয়। কিছু কিছু ভদ্র মেয়েও আছে। আরশির পালা আসতেই সে নম্র কণ্ঠে বললো,

— আমি আরশি রহমান।

বাস্ এতটুকুই। আবরার এমন ভাব করলো যেনো আজ প্রথম আরশি কে দেখেছে সে। আরশি গো*ম*ড়া মুখে তাকিয়ে তাকিয়ে সব টা দেখতে লাগলো। পরিচয় পর্ব শেষ হতেই আবরার সবার উদ্দেশ্যে বললো,

— আপনাদের সবার সাথে পরিচিত হয়ে ভালো লাগলো। আমি আশা রাখছি আপনারা সবাই মন দিয়ে কাজ করবেন। আর আমাকে যতো টা ভালো দেখছেন আমি কিন্তু ততোটা নই। কাজে কোনোরকম ভু*ল আমার মোটেও পছন্দ নয়। সো এভরিওয়ান বি কেয়ারফুল। কোনো কিছু না বুঝতে পারলে মিস প্রিয়ার কাছ থেকে বুঝে নিবেন। ভু*ল যেনো না হয়। মিস প্রিয়া?

আবরারের ডাকে রেসপন্স করলো একটা মেয়ে। আরশি তাকালো মেয়েটার দিকে। ভীষণ স্টাইলিশ মেয়ে টা। পরনে শার্ট প্যান্ট। চুল সুন্দর করে রঙ করা। দেখতেও বেশ সুন্দরী। আবরার প্রিয়া কে উদ্দেশ্য করে বললো,

— আপনি ওদের সবাই কে কাজে সাহায্য করবেন। না বুঝলে বুঝিয়ে দিবেন।

প্রিয়া মেয়ে টা ঠোঁটে লম্বা একটা হাসি টে*নে বললো,

— জি স্যার। আপনি কোনো চি*ন্তা করবেন না। আমি আছি তো। আমি ওদের সব বুঝিয়ে দিবো।

আরশি প্রিয়ার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। প্রিয়া তাকাতেই চোখাচোখি হলো দু’জনের। প্রিয়া মেয়ে টা আরশি কে কেমন যেনো একটা খাইয়া ফালাবো টাইপ লুক দিলো। এমন লুকের মানে বুঝলো না আরশি। এই মেয়ে কে তো সে এখন এই প্রথম দেখলো। তাহলে এই মেয়ে তার দিকে এভাবে তাকাচ্ছে কেনো ভাবতে লাগলো আরশি। আবরার সবাই কে উদ্দেশ্য করে বললো,

— এবার আপনারা যেতে পারেন।

সবাই সমস্বরে ইয়েস স্যার বলে একে একে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো। আরশি ও বের হচ্ছিলো এমন সময় আবরার ডেকে উঠলো,

— মিস আরশি…..

আরশি আবার ফিরে আসলো আগের জায়গায়। আবরার নিজের ল্যাপটপে কিছু একটা দেখতে দেখতে ক*ড়া কণ্ঠে বললো,

— লেট করা আমি মোটেও পছন্দ করি না। ভবিষ্যতে কখনো লেট করে আসবেন না। এবার নিজের কাজে যেতে পারেন।

ভীষণ অ*প*মা*নবোধ করলো আরশি। সে কখনোই কোনো কাজে লেট করে না। কিন্তু ভার্সিটি থেকে ক্লাস করে অফিসে আসতে লেট হয়ে গিয়েছে তার। তাও সময়ের আগেই পৌঁছে যেতো আবরারের সাথে ব*ক*ব*ক করেই তো দুই মিনিট লেট করলো সে। আরশি ঠিক করলো সে অফিসের কাজ ছাড়া আবরারের সাথে আর একটাও বা*ড়*তি কথা বলবে না।

ম্যানেজার আরশি কে তার ডেস্ক দেখিয়ে দিলো। আরশি ডেস্কে বসে কাজ করতে শুরু করলো। মনোযোগ দিয়ে কাজ বুঝার চেষ্টা করছে সে। এর মাঝে ডেস্কের সামনে কেউ আছে বুঝতে পেরে মাথা তু*ল*লো আরশি। দেখলো প্রিয়া নামক মেয়ে টা তার ডেস্কের উপর দুই হাত ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে রে*গে আছে। আরশি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে রইলো প্রিয়ার দিকে। প্রিয়া রা*গী কণ্ঠে বললো,

— দেখে তো ভো*লা*ভা*লা মনে হয়। অথচ আসতে না আসতেই আবরার স্যারের গায়ের উপর ঝাঁ*পি*য়ে পড়লে?

আরশি প্রিয়ার কথা থেকে ধারণা করে নিলো সে লিফটের সামনের ঘটনা দেখেছে হয়তো। আরশি চোখ ছোট ছোট করেই উত্তর দিলো,

— কে বলেছে আমি ভো*লা*ভা*লা? আমি তো মোটেও ভো*লা*ভা*লা নই। আর আমি আবরার স্যারের গায়ে পড়ি বা তার কোলে উঠে বসে থাকি তাতে আপনার কি?

আরশির উত্তরে প্রিয়া যেনো আরও রে*গে গেলো। ফোঁ*স*ফোঁ*স করতে করতে বললো,

— তোমাদের মতো থার্ড ক্লাস মেয়েরা পারোই তো এটা। ভো*লা*ভা*লা সেজে বড়লোক ছেলেদের ফাঁ*সা*নোই তো তোমাদের কাজ।

আরশি গালে হাত দিয়ে বললো,

— আমি নাহয় থার্ড ক্লাস কিন্তু আপনি তো ফাস্ট ক্লাস মানুষ তাই না আফা? তাহলে এভাবে গায়ে পড়ে আ*জা*ই*রা ঝ*গ*ড়া করছেন কেনো? আর আমাদের মধ্যে গুন আছে বুঝলেন তাই তো বড়লোক ছেলেরা ফেঁ*সে যায়। কিন্তু আপনার মধ্যে মনে হয় কোনো গুন টু*ন টা নাই। পুরাই বেগুন আপনি। তবে শিখতে চাইলে আমাকে বলিয়েন আমি শিখায় দিবো নে।

প্রিয়া আরশির টেবিলে থা*বা মে*রে বললো,

— ইউ বে*য়া*দব মেয়ে! তোমার সাহস কি করে হয় আমার সাথে ত*র্ক করার?

আরশি হাই তু*লে বললো,

— আপনার তো অনেক আদব আফা। তাহলে শুধু শুধু ঝ*গ*ড়ুটে মহিলার মতো ঝ*গ*ড়া করছেন কেনো? আপনার এতো স*ম*স্যা হলে আবরার স্যারের কাছে যান। তাকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করুন উনি কেনো একটা থার্ড ক্লাস মেয়ে কে ধরতে গেলেন? আপনি না জিজ্ঞাসা করতে পারলে আমাকে বলুন। আমি আপনার পক্ষ থেকে জিজ্ঞাসা করে আসছি।

আবরারের কাছে যাওয়ার কথা বলতেই মুখ শু*কি*য়ে গেলো প্রিয়ার। বাইরে যতোই বা*হা*দু*রি দেখাক না কেনো, সেও আবরার কে ভীষণ ভ*য় পায়। অথচ এই মেয়ে কে দেখো? কিভাবে ড্যাং ড্যাং করে আবরারের কাছে যেতে চাচ্ছে। প্রিয়া আরশির দিকে আঙ্গুল তা*ক করে বললো,

— তুমি জানো আমি কে? আমি চাইলে এখনই তোমার চাকরি কে*ড়ে নিতে পারি।

আরশি মাছি তা*ড়া*নো*র ভঙ্গিতে হাত না*ড়ি*য়ে বললো,

— কেন আপনি জানেন না আপনি কে? আমার জানামতে আপনি প্রিয়া। যে এই মুহূর্তে ঝ*গ*ড়ুটে মহিলার মতো আমার সাথে ঝ*গ*ড়া করছে। আর চাকরি কে*ড়ে নেয়ার ভ*য় আমাকে দেখাতে আসবেন না। আমার ভাগ্যে যা আছে তা আপনি হাজার চেষ্টা করেও কে*ড়ে নিতে পারবেন না। আর যেটা নেই সেটা আমি হাজার চেষ্টা করলেও ধরে রাখতে পারবো না।

আরশির আশেপাশের সবাই হা করে নিজেদের কাজ বাদ দিয়ে তা*মা*শা দেখছে। তাদের মধ্যে অধিকাংশ প্রিয়া মেয়েটা কে ভ*য় পায়। কারণ প্রিয়া মেয়ে টা কথায় কথায় চাকরি কে*ড়ে নেয়ার থ্রে*ট দেয়। আর যেহেতু সে সিনিয়র, তার জন্য চাকরি কে*ড়ে নেয়া খুব একটা ক*ঠি*ন না। এই ফ্লোর টা তার কথায় চলে। তাই তো সবাই চাইলেও প্রিয়ার উপর কিছু বলতে পারে না। আরশি কে প্রিয়ার কথার উচিত জবাব দিতে দেখে পুরনো কর্মীরা ভীষণ মজা পাচ্ছে, আ*ত্মা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তাদের। কিন্তু তাদের আবার আ*ফ*সোস ও হচ্ছে আরশির চাকরির জন্য। বে*চা*রির আজকে প্রথম দিন। আর নতুনরা তো হা করে সব গি*ল*ছে।

— কি হচ্ছে এখানে?

আবরারের গম্ভীর কণ্ঠে থ*ত*ম*ত খেলো মিস প্রিয়া। আরও কিছু বলতে চাইছিলো সে। কিন্তু আবরারের কথায় মুখ দিয়ে আর কিছু বের হলো না। আরশি কিছু বলার আগেই সে আবরারের কাছে গিয়ে নে*কা*মি করে বলতে লাগলো,

— দেখুন না স্যার এই বে*য়া*দব মেয়ে টা আসতে না আসতেই আমার সাথে ত*র্ক করছে। কোনো ম্যা*না*র্স নেই।

আরশি অ*গ্নি দৃষ্টি নিঃ*ক্ষে*প করলো প্রিয়ার দিকে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে ভীষণ রে*গে আছে সে। প্রিয়া আরশির দিকে আঙ্গুল তা*ক করে বললো,

— দেখুন এখনো কিভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। বাবা মা মনে হয় কোনো আদব কায়দা শিখায় নি।

এই একটা কথাই যথেষ্ট ছিলো আরশি কে হিং*স্র করে তো*লা*র জন্য। আরশি রা*গে প্রিয়া কে কিছু ক*ড়া কথা শুনাতে যাচ্ছিলো। কিন্তু তার আগেই আবরার শীতল কণ্ঠে বললো,

— মিস প্রিয়া আপনি বাকিদের টা দেখুন। আপনার মতে উনি বে*য়া*দব তাই তো? উনাকে সামলানোর দায়িত্ব আমার। মিস আরশি আপনি একটু কেবিনে আসুন।

আবরার চলে গেলো। আরশি যেতে নিলে সামনে আসলো প্রিয়া। শ*য়*তা*নি হাসি দিয়ে ফিসফিস করে বললো,

— এবার আমার সাথে বে*য়া*দবি করার ফল পাবে। তোমার চাকরি গেলো বলে। যাও যাও।

আরশি প্রিয়া কে পাশ কা*টি*য়ে আবরারের কেবিনে আসলো। আবরার আরশির কাছাকাছি দাঁড়িয়ে বললো,

— তুমি এতো ঝ*গ*ড়ু*টে কেনো মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি? সবার সাথে কথা বলে নিজের মুখ খা*রা*প করতে নেই। প্রথম দিনেই এই অবস্থা হলে কিভাবে হবে বলো তো?

আরশি ধা*রা*লো চোখে তাকিয়ে আছে আবরারের দিকে। রা*গে চোখ মুখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে তার। প্রিয়া কে কিছু বলতে না পেরে রা*গে তার মাথায় আ*গু*ন জ্ব*ল*ছে। আবরার আরশির আরেকটু কাছে এসে দাঁড়ালো। ওর চোখের দিকে গাঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললো,

— এভাবে তাকিও না মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি। তোমার অদ্ভুত চোখের ধা*রা*লো দৃষ্টিতে আমি যেনো নিজের ধ্বং*স দেখতে পাচ্ছি।

আবরারের চোখের দিকে তাকিয়ে আর ফিসফিস করে বলা কথাগুলো শুনে আরশির রা*গ*গুলো যেনো কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে। আরশি দ্রুত নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। বুক ধু*ক*পু*ক করছে তার। আবরার ও দূরে সরে গেলো। নিজের ফোনে কিছু একটা করতে লাগলো সে।

চলবে?