তোমাতে করিবো বাস পর্ব-১৮+১৯+২০

0
147

তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_১৮
লেখনীতে-আফনান লারা
.
মায়ের ঝাড়ি খেয়ে রিনি গরম পানিতে চুবিয়েই তোয়ালেটা সরাসরি আসিফের পিঠে উঠিয়ে দিলো।আসিফ ওমনি লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে পিঠ মুছতে মুছতে বললো,’মাথা কি গেছে তোর?’

আসিফের রাগ দেখে রিনির মা এক দৌড়ে পালিয়েছেন, এদিকে রিনি যেভাভে বসে ছিল সেভাবে এখনও বসে আছে।রিনিকে চুপ করে থাকতে দেখে আসিফ আর কিছু বলেনি,নিজের পাঞ্জাবি দিয়ে পিঠ মুছে বসে থাকলো খাটের অন্যপাশে।তারপর দম ফেলে বললো,’আমি কাল সকালে আমাদের বাড়িতে যাব।আমি গ্রামে এসেছি আর মাকে দেখতে যাইনি এটা শুনে মা আমার উপর ভীষণ রাগ করবে।গিয়ে তাকে দেখে সোজা ঢাকা চলে যাবো।তুই ওখানে থাকলে থাকিস,না থাকলে আবার বাড়ি ফিরে আসিস।’

রিনি মুখ বাঁকিয়ে রুম থেকে বের হতেই মায়ের সামনে পড়লো।মা কোমড়ে হাত রেখে ওর দিকে তাকিয়ে আছেন।মানে কথাগুলো সব শুনেছেন।রিনি মাথা ঘুরিয়ে চলে গেলো শরবত বানাতে,মা ও পিছু পিছু আসলো তার।

‘আসিফ ঢাকায় অন কিয়ারে?’

‘আঁই কি জানি!আঁই কি হেতেনের লগে হারাদিন থাইনি??’

‘থাস না কা?অন যেন একবার যাই হালাইছস তো আবার হিরি আইছস কা?আবার যা!’

‘হেতেন নিতো চা না দেও ন??’

‘এগিন কইলেই অ নি!!তুই এল দরি ইগার লগে থাইস। আর মাইয়া মানুষ তুই, এইসব শিখান লাগে কা তোরে? গালের এই হাল বানাই রাখছস কা?হাজিটাজি থাকতি হারোস না??জামাইরে কেমনে খুশি বানান লাগে জানোস না?সখিনা জরিনারে দেখেস না ওরা কেমন রঙঢং করে।অবশ্য তুই কেমনে জানবি তুই তো বিয়ার হরে জামাইরে একদিন ও হাস ন!’

কথাটা রিনির গায়ে লাগলো।শরবতে চিনি না দিয়ে খালি ট্যাং গুলে রেখে হনহনিয়ে নিজের রুমে এসে আলমারি খুলে দাঁড়ালো।আসিফ আপাতত কারিমের রুমে বসে আছে।রিনির রুমের খাট ঠিক করা অবদি সে ওখানেই থাকবে।কারিম গেছে কাঠ মিস্ত্রিকে ডেকে আনতে।
———-
রাত্রিবেলার খাবার শেষ করে আবার আগেরমতন যে যার রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে ফেলেছে।তটিনি অপেক্ষায় ছিল একটা রুম খালি হবার যেটাতে সে গিয়ে ঘুমাবে,ভোরে সবাই ওঠার আগে আবার চলেও আসবে কিন্তু তার কপাল!!রুম যেটা খালি ছিল সেটাতে বুনি আর তৃষা ঘুমিয়েছে।বুনির রুমে বকুল আপু আর তার হাসবেন্ড।তটিনি সব রুম চেক করে উপায় না পেয়ে আবারও রুমে ফেরত চলে এসেছে।বাপ্পির দেয়া গিফটটা ভালভাবে দেখা হয়নি।তখন বাপ্পিকে ওর মা ডেকে নিয়ে গেছিলেন।নতুন ফোনের কত ঝামেলা।বসে বসে সফটওয়ার আপডেট দেয়া লাগে।এগুলা সে পরে করবে।যেটা জরুরি সেটা করতে গিয়েই হেরে বসে আছে।কোনোমতেই বাপ্পির সাথে সে ঘুমোতে পারবেনা।কারণ সে কখনও এভাবে ঘুমায়নি।তার রুমে তার নিজের বোন ঐশীই আসতোনা।কারণ নিজের রুম শেয়ার করা তটিনির পছন্দ ছিল না।বাপ্পির জায়গায় আসিফ ভাইয়া হলেও অনেক কষ্টে ওকে অভ্যাস বদলাতে হতো।কিন্তু এই বাপ্পিকে তো সে এমনিতেও পছন্দ করেনা তবে কি করে সে এই রাত কাটাবে!একটা ছেলের সাথে রাত কাটানো কি ছোট কোনো ব্যাপার!!
রুমের মাঝখানে দাঁড়িয়ে তটিনি ঘামছিল।বাপ্পি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ওকে মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কাছে এসে বললো,’আমি কি করছি আবার?’

ওমনি তটিনি ওর দিকে ফিরে আঙ্গুল তুলে বললো,”আপনি রাতে নাচানাচি করেন না তো?’

‘নাচানাচি মানে?রাতে কোন মানুষ নাচানাচি করে?

‘করে,,,ঐ যে হাত পা ছোড়াছুড়ি!’

বাপ্পি হাসতে হাসতে বিছানায় বসলো তারপর পা তুলে খাটের সাইডের একটা ড্রয়ার খুলে লোশন বের করে বললো,’আমিও তোমার মতই ছোট থেকে একা বিছানায় শুয়েছি তাই জানতাম না আমি রাতে ঘুমালে কি করি ঘুমের ঘোরে।এরপর একদিন অফিস থেকে সিলেট ট্যুরে গেছিলাম সেখানে হোটেলে একজন কলিগের সাথে ঘুমাতে হয়েছে।সকালে কলিগ জানালো আমি নাকি রাতে যেভাবে শুই সকালে তার উল্টো টা থাকি।মানে প্রচুর ঘুরাঘুরি করি।এবার বলো এটা কি আমার দোষ?’

‘আপনারই দোষ।!দিনে নিশ্চয় ভাবেন শিয়াল মুরগীর দৌড়াদৌড়ি আর তাই রাতে সেটা দেখেন!’

‘মোটেও না।তুমি আসার আগে আমি কাজ ছাড়া কিছুই বুঝতাম না।বাবা মাকে জিজ্ঞেস করে দেখো।আমার লাইফে কাজের বাহিরে কিছুই ছিল না’

তটিনি বিড়বিড় করতে করতে বাপ্পির কাছে এসে হাত পেতে বললো,’আপনার আলমারির চাবি দিন’

বাপ্পি চুপচাপ ড্রয়ার থেকে চাবি নিয়ে দিলো।ওমনি তটিনি আলমারি খুলে ভেতর থেকে দুটো কাঁথা বের করে সেগুলা ভাঁজ করপ বিছানার মাঝখানে রেখে বললো,’এপাশে আসলে ঘুমের মধ্যে রেখে হাঁড় ভেঙ্গে দিব’

‘তুমি এই সিরিয়ালের মতন নাটক কতদিন চালু রাখবে?’

‘যতদিন না সিরিয়াল শেষ হবে!’
————–
আসিফ জানালার গ্রিল ধরে আকাশের চাঁদ দেখছিল।তটিনির জন্য খারাপ লাগছে!ভীষণ!কিন্তু তার কিছুই করার নেই।
কিছু অনুভূতির নাম হয়না!তারা নাম পায়না।তবে নাম ছাড়াই থেকে যায় চিরজীবন।
মনের একটা কোণে তাদের স্থায়ী বাসস্থান থেকেই যায়।যত মানুষই লাইফে থাক না কেন,ঐ জায়গাটা কখনও সরেনা।

ঠিক সেইসময় দরজার কড়া নাড়ার আওয়াজ পেয়ে আসিফ চাঁদ থেকে চোখ নামিয়ে পেছনে তাকায়।
কিন্তু যা সে দেখলো তা দেখে তার আকাশ থেকে পড়ার মতন অবস্থা হয়ে গেছে।
তার চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে রিনি।খয়েরী রঙের জর্জেটের শাড়ী পরিহিত,ঠোঁটে টুকটুকে লাল লিপস্টিক, কপালে বড় করে একটা টিপ।চুলগুলোকে খোলা ছেড়ে দেয়া,হাতে শরবরবতের ট্রে।আসিফকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে রিনি দু কদম এগিয়ে বললো,’মনু!শরবতটা খেয়ে নেন’

এটা শুনে আসিফ কাশতে কাশতে বিছানায় বসে গেলো।রিনি ছুটে এসে শরবতটা ওর হাতে দিতে যেতেই আঁচলটা টুক করে পড়ে গেছে শরীর থেকে।
তা দেখে আসিফের এবার কাশি মাথার তালুতে উঠে গেছে।মাথায় বাড়ি দিতে দিতে সে অন্যদিকে ফিরে গেলো।কাশির জন্য কিছু বলতেই পারছেনা।
রিনি দ্রুত আঁচল ঠিক করে বলে,’ওপস সরি!!আম্মা জোর করি হিচল কাপড় এইডা ধরি হিইন্দাই দিছে।শুধু হড়ি যা শুধু হড়ি যা।অন আবার হড়ি গেছে!
আইচ্ছা আন্নে এত কাশেন কা?’
[আম্মা জোর করে পিছলে শাড়ীটা ধরে পরিয়ে দিছে।শুধু পড়ে যায়,শুধু পড়ে যায়।এখন আবার পড়ে গেছে!আচ্ছা আপনি এত কাশতেছেন কেন? ]

‘খুশিতে কাশি আমি।বেয়াদব কোথাকার!জীবনে শাড়ী পরিস নাই তুই?’

‘হিনছি!সুতার গুলা হিনছি।জর্জেটের গুলা এই প্রথম হিনলাম”

‘যা সামনে থেকে।তোকে কে বলছে এমন সং সেজে আসতে?এত লিপস্টিক কেন দিছোস??শাড়ী পরলে সেফটিফিন দিতে হয় জানিস না!’

‘জানি!সেফটিপিন টোগাই হাই ন, হেয়াইল্লাই এমনেই চলি আইছি।’
[জানি!সেফটিপিন খুঁজে পাই নাই,তাই এমনেই চলে এসেছি]

‘যা শাড়ী খুলে আয়,লিপস্টিক মুছ!’

‘লিপস্টিক কিচ্চে আন্নেরে?কোনাই খুলতাম??’

‘কোনাই খুলতাম মান?আমার সামনে খুলবি নাকি তুই??’

‘আম্মার কাছে যাইলে যদি হুনে আঁই শাড়ী খুলতাম চাই তাইলে শাড়ী খুলি আবার হাডাই দিবো একুলে।তার চাইতে বরং একুলেই খুলি!’
[আম্মার কাছে গেলে যদি শুনে আমি শাড়ী খুলতে চাই তাহলে শাড়ী খুলে আবার পাঠিয়ে দিবে এখানে।তার চেয়ে বরং এখানেই খুলি]

‘এই তোর বয়স কত হইছে!!এরকম বেয়াদবি করছিস!’

রিনি যেন এক কান দিয়ে কথা ঢুকিয়ে আরেক কান দিয়ে বের করে ফেলে।আঁচলটা গলার পেছন দিয়ে নিয়ে আবার সামনে এনে ওড়নার মতন পরে আসিফের পাশে বসে বললো,’আঁরে দেই আন্নের কেইন্না লাগে এক্কানা কন না’
[আমাকে দেখে আপনার কেমন লাগে একটু বলেন না]

‘ভূত লাগে!ঐ যে গাছের ঢালে ঝুলে থাকে।ওদের মতন’

‘হাঁচা করি কন।আঁরে দেখি দুই মিনিট আঁক করি ছিলেন। আঁই খেয়াল করছি!তার মানে হাগল হই গেছেন ক্যান না😌?’
[সত্যি করে বলেন।আমাকে দেখে দুই মিনিট হা করে ছিলেন। আমি খেয়াল করেছি।তার মানে পাগল হয়ে গেছেন তাই না?]

‘মোটেও না!হঠাৎ করে ভূত দেখলে মানুষ এমন তাকিয়েই থাকবে’

‘ভূত দেখার চাহনি আর মুগ্ধতার চাহনি আঁই চিনি মিঃজামাই!!থাক স্বীকার না করলে আঁর কি!!আচ্ছা লিপস্টিক মুছতে কইলেন কেন?না মুছলে কিরবেন?আন্নের কি ডর লাগে কোনো কিছুতে?’

আসিফ কপালের ঘাম মুছে সরে বসলো।রিনি ওর আরেকটু কাছে এসে বললো।,’আম্মা কইছে গাত বাজি থাকতাম😌’
[আম্মা বলেছে গায়ে লেগে থাকতে]

‘সর তুই!আমার দম আটকে আছে। কাছ থেকে সর!’

‘আন্নের কথা না হুনি!আম্মার কথা
তো হুনতে অইবো।নাহলে আম্মা ধরি পিডাইবো।আইয়েন একসাথে লাগি বসি থাকি’

আসিফ সরতে সরতে বিছানার শেষ প্রান্তে চলে এসেছে।রিনি আবার ওর খুব কাছে এসে বসে পড়ে।তারপর আর কিছুই করছেনা।তাকে নাকি তার মা বলেছিল আসিফের সাথে লেগে বসে থাকলে ভালবাসা বাড়বে,দূরে দূরে থাকলে ভালবাসা কমে।তাই সে এটাই করছে।এদিকে আসিফের দম তখন যে বন্ধ হয়েছিল এখনও খুলছেনা,মুখ দিয়ে শ্বাস নিচ্ছে।কি ফ্যাসাদে পড়ে গেছে।রিনিকে দেখে মনে হয় আজ সারারাত শান্তি দিবেনা।

ঠিক তখনই পাশ থেকে শোনা গেলো,’আন্নের কাছে অজ্ঞা সেফটিপিন অইবো?’
[আপনার কাছে একটা সেফটিপিন হবে?]
চলবে♥

তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_১৯
লেখনীতে-আফনান লারা
.
বাপ্পি এক পাশ হয়ে ঘুমাচ্ছে,এদিকে তটিনি বসে বসে পাহারা দিয়ে চলেছে বাপ্পিকে।তার চোখে ঘুম এসে টইটুম্বুর অথচ সে ঘুমাবেনা।যদি বাপ্পি তাকে ঘুমের মধ্যে জড়িয়ে ধরে? না না!!কিছুতেই তা হতে দেয়া যাবেনা।
তটিনি রাত আড়াইটা পর্যন্ত বাপ্পিকে পাহারা দিয়ে শেষে ঘুমের সাথে হেরে ঘুমিয়ে গেছে নিজের জায়গাতেই।তার আর পাহারা দেয়া হলোনা,দেখা হলোনা বাপ্পি তাকে ঘুমের ঘোরে স্পর্শ করে কিনা।বাপ্পি আসলে ঘুমায় নাই।এমনিতেই চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল।তার ভোররাত ছাড়া ঘুম হয়না এটা তটিনি জানেনা,হয়ত শুনেছে কিন্তু ভুলে গেছে।তটিনি ঘুমিয়ে পড়তেই বাপ্পি উঠে বসলো।ল্যাম্প শ্যাডের হলুদ আলোয় তটিনির মুখখানা কমলা রঙের ধারণ হয়েছিল।শোয়ার আগে সে মুখে ভালমতন ফেসওয়াশ ডলে ধুয়ে শুয়েছে যার কারণে মুখটা ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছিল।বাপ্পি গালে হাত দিয়ে মনযোগ সহকারে ওকে দেখছে।যেদিন তটিনি ওকে মেনে নিতে পারবে সেইদিনটা ওর কাছে খুব আনন্দের দিন থাকবে।সে জানেনা দিনটা কবে আসবে তবে সে প্রহর গুনে যাবে ঐ দিনটা আসার।তটিনি রাগ করবে তা জেনেও বাপ্পি হাতটা বাড়িয়ে ওর মাথার চুলের উপর রাখে।বকুল আপু তটিনির মাথায় বেলি ফুলের মালা গুজে দিছিলেন।মালাটা এখন ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলেও কিছু কিছু বাসি ফুল এখনও চুলে আটকে আছে,বেলি ফুল বাসি হলেও ঘ্রাণটা থেকেই যায়।এই ফুল বাপ্পির অসম্ভব প্রিয় একটা ফুল।সে আর লোভ সামলাতে পারেনি।ফুলটা তার প্রিয় এবং ফুলটা যেখানে এখন গড়াগড়ি খাচ্ছে সেই স্থান টাও ওর প্রিয়।মুখ এগিয়ে তটিনির চুলে ডুবালো সে।কি যে মুগ্ধতা কাজ করছে সারা শরীর জুড়ে যদি তটিনি একটিবার জানতে তবে অবহেলার চাদরে মুড়তো না কখনও।
———-
রিনি তার শাড়ী ধরে এলোমেলো ভাবে হেঁটে দরজার ফাঁক দিয়ে বাহিরে দেখলো কোথাও আম্মা আছে কিনা।কারণ এই শাড়ী আর তার পক্ষে পরে থাকা সম্ভব নাহ।কিন্তু তার পোড়া কপাল।সেখানে আম্মা আর আব্বা বসে বসে গল্প করছেন।তার মানে ওর বের হওয়া মুশকিল।তাই সে আবারও আসিফের কাছে ফিরে আসলো।আসিফ এতক্ষণ স্বস্তির দম ফেলছিল, কিন্তু রিনিকে আবার ফেরত আসতে দেখে তার দম আবার আটকে গেছে।রিনি শাড়ীটা এক হাতে ধরে রেখে কাছে এসে বললো,’আঁই বুইজ্জি তটিনি বইন আন্নের সামনে জীবনে শাড়ী হড়ে নো।যদি হইড়তো তাইলে আন্নে আঁরে দেই এরকম ডরাইতেন না।যেন জীবনে শাড়ী হিন্দিন্না কোনো মাইয়া হেতেন দেয় ন! এগিন কইরলে অইবো?আঁই আন্নের বউ ন?মাইনসে বউয়ের লগে এইন্না করে বুঝি?’
[আমি বুঝেছি তটিনি বোন আপনার সামনে জীবনে শাড়ী পরে নাই।যদি পরতো তাহলে আপনি আমাকে দেখে এরকম ভয় পেতেন না।যেন জীবনে শাড়ী পরা কোনো মেয়ে উনি দেখেন নাই।এগুলা করলে হবে?আমি আপনার বউ না?মানুষ বউয়ের সাথে এমন করে বুঝি?]

আসিফ কপাল কুঁচকে বলে ‘শোন!তোর সাথে আমার এখনও সেই সম্পর্কটা তৈরি হয়নি।আমরা বিয়ের পর থেকে এখনও সেভাবে সময় কাটাইনি তাহলে আমি এক মূহুর্তে কি করে সব এডজাস্ট করে নিব?’

‘আঁই কি কইছি অনই আর কোলে বাচ্চা আনি দেন?আঁই কইছি আঁরে আপন করি নেন।অনেক অপেক্ষা কইচ্ছি আন্নের লাই।’
[আমি কি বলেছি এখনই আমার কোলে বাচ্চা এনে দিতে?আমি বলেছি আমাকে আপন করে নিন।অনেক অপেক্ষা করেছি আপনার জন্য]

আসিফ একটু পিছিয়ে বললো,’শোন!এখন এইসবের সময় না।ঘুমা,আমায় ও ঘুমাতে দে।কাল ভোরে উঠতে হবে’

রিনি দাঁত কেলিয়ে আরও এগিয়ে শরবতটা এগিয়ে ধরলো।এমনিতেও রিনির এইসব কার্যকলাপ দেখে আসিফের গলা শুকিয়ে গেছিলো।তাই সে শরবতটা নেয় ওর হাত থেকে।নিয়ে এক ঢোক খেয়ে বললো,’চিনি দেস নি?’

‘না দি “”””ন”””।আঁই নিজেই এত মিডা যে আন্নের আর কোনো কিছুতে মিডা লাইগদোনো😌’
[না দিই নাই।আমি নিজেই এত মিষ্টি যে আপনার আর কোনো কিছুতে মিষ্টি লাগবেনা]

আসিফ শরবতের গ্লাসটা রেখে বললো,’সব শেষ হবে যখন আমি চলে যাব।।।বুঝবি তখন’

রিনি কথাটা যেন শুনেই নাই।শরবত বাকিটুকু সে ঢকঢক করে খেয়ে ফেলেছে।
এরপর শাড়ী ধরে গ্লাসটা নিয়ে চলে গেলো আবার।

আসিফ হাসছে।রিনি যে এতটা চঞ্চল তা সে জানতোনা আগে।শুধু মায়ের কাছে শুনেছিল রিনি নাকি এলাকা কাঁপায়!ওর দুষ্টামির কথা সে খবর পেয়েছিল মানুষজনের কাছে।কিন্তু আজ নিজের চোখে দেখেও নিলো।
মানুষ কেন যে খুব জলদি দুটো মানুষকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে দেয়!তারপর তাদের আলাদা করে দেয়!!
এই কারণে যাকে আমার বোঝা উচিত ছিল, দেখা উচিত ছিল,অনুভব করা উচিত ছিল তার সাথে কিছু না হয়ে,,, হয়ে গেলো অন্য একজনের সাথে।কি অদ্ভুত নিয়তি আমাদের!!
“””অথচ সব বৈধ এই মেয়েটির সাথেই,তার পরেও তাকে নিজের করে নিতে পারছিনা।মনের ভেতরের সেই অনুভূতিটা আমায় কষ্ট দিচ্ছে,বাধা দিচ্ছে।মনে বসাতে পারছিনা রিনিকে!!!”

‘আঁই আই গেছি😎’

আবারও রিনিকে দেখে আসিফ চমকে উঠলো।রিনি এবার আঁচলে সেফটিপিন লাগিয়ে এসেছে।আসিফের পাশে পা তুলে বসে সে বললো,’আম্মা রাঁধা শেষ অইলে খাইতে ডাইকবো।আঁর রুমের খাটটা ঠিক করা অইতাছে।আরও কিছুক্ষণ বই থান একুলে’

‘তুই যা। আমার কাছে এসেছিস কেন?’

‘তো কার কাছে যাইয়াম?বউ জামইর কাছে না আইলে কার কাছে আইবো?লেদা হোলাইনের মতন কথা কন কা?’
[তো কার কাছে যাব?বউ জামাইর কাছে না আসলে কার কাছে আসবে?বাচ্চাদের মতন কথা বলেন কেন?]

‘তুই বড় পাকনা হয়ে গেছিস তাই না?’

‘জামাই সব জানিও না জানার ঢং করলে বউরে তো পাকনা হতেই হবে’

‘আমাদের বিয়ে হবার পর তো একাই ছিলি এতদিন।কতটা প্রেম করছিস বল?’

‘অজ্ঞাও না।আন্নের ছবি লই ঘুম যাইতাম।আঁর মতন বউ আন্নে আর অজ্ঞা হাইতেন ন।আন্নেরে লই কত স্বপ্ন আঁই দেখছি যদি আন্নে যাইনতেন তাইলে এইসব তটি /মটিরে ছাড়ি আঁর কাছি দৌড়ি চলি আইতেন!!’
[একটাও না।আপনার ছবি নিয়ে ঘুমাতাম।আমার মতন বউ আপনি আর একটাও পাবেন না।আপনাকে নিয়ে কত স্বপ্ন আমি দেখছি যদি আপনি জানতেন তাহলে এইসব তটি/মটিরে ছেড়ে আমার কাছে দৌড়ে চলে আসতেন]

‘তটিনিকে নিয়ে কিছু বলবিনা’

‘একশোবার কইয়াম।আন্নের সাবাস তো কম না!আন্নে আরে থুই আরেক মাইয়ার লগে প্রেম করেন!কইতাম নি বেকেরে?’

‘আমি প্রেম করি নাই’

‘অবশ্যই করছেন।তা নাহলে ভেঁ ভেঁ করি কাইনতেন না।আঁই সব দেখছি।যাই হোক!অতীত লই টানাটানি কইত্তাম ন।আঁই আসি গেছি এবার আঁরে থুই যদি আবার কারোর লাই হাগল হইছেন তো চাইয়েন কিয়ারি আঁই”
[অবশ্যই করছেন।তা নাহলে ভেঁ ভেঁ করে কাঁদতেন না।আমি সব দেখছি।যাই হোক!অতীত নিয়ে টানাটানি করবোনা।আমি এসে গেছি এবার আমাকে রেখে যদি আবার কারোর জন্য পাগল হয়েছেন তো দেখিয়েন কি করি আমি]
———–
সকাল নয়টা বেজে গেছে, আজ দরজা লক করা ছিল বলো বাহিরের কোনো আওয়াজ রুম অবধি পৌঁছায়নি।তটিনিও ঘুমায়,বাপ্পি ও ঘুমায়।কিন্তু তটিনি তো বাপ্পির মতন দেরি করে ওঠার মানুষ না তাই ওর চোখ খুলে গেলো নয়টার দিকে।চোখ খুলতেই চোখের সামনে বাপ্পির বিশাল আকারের হাতটা নিজের গায়ের উপর দেখে সে যেন আকাশ থেকে পড়লো।এরপর পাশে চেয়ে দেখলো তার চুলের উপর মাথা রেখে বাপ্পি ঘুমাচ্ছে।তটিনি ওকে সরিয়ে নিজের চুল ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো।শেষে বাপ্পির হাতে একটা চিমটি কেটে ওর ঘুম ভাঙ্গানোর চেষ্টা করলো সে।কিন্তু বাপ্পি তখন গভীর নিদ্রায় ছিল।তার পরেও চিমটি খেয়ে সে চুল থেকে সরে গেছে বলে তটিনি হাঁপ ছেড়ে উঠে বসলো।বাপ্পির হাত সরিয়ে বিছানা থেকে নেমেও গেছে।কাল সারারাত লোকটা এমন করে ঘুমিয়েছে নাকি!

অনেকক্ষণ বাপ্পির দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে থেকে তটিনি তার কালকের আনা জামাকাপড় থেকে একটা থ্রি পিস নিয়ে পরে দরজা খুললো বাহিরে বের হবে বলে ওমনি সামনে পড়লো বকুল আপু।বকুল আপু আজ চলে যাবে।তাই চলে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।তটিনিকে থ্রি পিস পরা দেখে তিনি কাজ রেখে ছুটে আসলেন ওর সামনে।এরপর বললেন,’একি অবস্থা তটিনি?নতুন বউ বিয়ের ৩য় দিন থ্রি পিস পরে??যাও তোমার থার্ড শাড়ী পরে আসো।’

এই বলে তটিনির চুল ধরে বললেন,”গোসল করো নাই?কি দেখাচ্ছো এইসব!নতুন বউ গোসল না করে বের হয়??যাও গোসল করে আসো!’

তটিনি মুখটা গম্ভীর করে আবার চলে আসলো রুমে।বাপ্পিকে আরামে ঘুমাতে দেখে তার রাগ হলো তাও কিছু করলোনা।আবারও শাড়ী নিয়ে পরে আসলো।গোসল করবেনা মানে করবেনা তাই পানি এক মগ নিয়ে চুলের আগাটা ভিজিয়ে নিলো সে তারপর তোয়ালে পেঁচিয়ে বের ও হলো।

তটিনি এবার বের হয়েছে অনেকটা শান্তিতে।নাস্তা বানাতে নাকি আরও কিছু সময় লাগবে তাই সে বাগানের দিকে গেলো ঘুরে আসতে।এরই মধ্যে বাপ্পি ও উঠে গেছে।কাল যে টি-শার্ট পরে ঘুমিয়েছিল এখনও সেটাই আছে শুধু মুখ ধুয়ে সে বেরিয়ে গেলো।বুয়ার ডাক পড়লো নাস্তা রেডি হয়েছে তাই বাগান থেকে চলে আসলো তটিনি।ডাইনিংয়ে এসে বসতেই ওর পাশে বাপ্পি ও বসে।তটিনি প্লেট ঠিক করতে করতে বাপ্পির চুলের দিকে তাকায়।তারপর মুচকি হাসলো।আজ বাপ্পিকে সে ফাঁসিয়ে দিবে।দাঁত কেলিয়ে ও উঁচু গলায় বলে,’একি আপনি গোসল করেন নাই?😱’

‘নাহ।কেন করবো?’

এই কথা শুনে ওখানে থাকা সবাই অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো বাপ্পির দিকে।বাপ্পি সবার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।বকুল আপু ওর কান টেনে ধরে চেয়ার থেকে উঠিয়ে বললেন,’যা গোসল করে আয়।বেয়াদব!’

‘গোসল কেন করবো বুঝতেছিনা আমি”

‘তুই যা গোসল কর তারপর বোঝাবো তোকে’

‘আমার ইচ্ছে করছেনা এখন!কেমন শীত পড়েছে দেখছো?’

‘তো শীতকালে বিয়ে করেছিস কেন রে উজবুক??লাজলজ্জা সব খাইছে আবার বলে গোসল করবেনা।যা গোসল করতে নাহয় মার খাবি’

তটিনি খিকখিক করে হেসে চলেছে।বাপ্পি ওর হাসির মানে বুঝলোনা তাও জোরপূর্বক গোসলে চলে গেলো।
চলবে♥

তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_২০
লেখনীতে-আফনান লারা
.
আসিফ রিনিকে সাথে নিয়ে তার নিজের বাড়িতে চলে এসেছে।রিনিদের বাড়ি থেকে আসিফের বাড়ি বেশ একটা দূরে না।পায়ে হেঁটে আসা যায়।
আসিফের বাড়ির উঠানে পাটি বিছিয়ে বসে ছিল ওর দাদু।বসে বসে পান বানিয়ে খাচ্ছিলেন।চশমার যত পাওয়ারই থাকুক ইদানিং সব ঝাপসা মনে হয় তার কাছে।লিচু গাছে কতটা লিচু ধরেছে তা নিজের চোখে দেখতে পারেননা।দূর থেকে মনে হয় গোলাপি রঙের শাড়ী বিছানো পুরা গাছে।এখন দূর থেকে আসিফ আর রিনিকে আসতে দেখে তার বিশ্বাস হলোনা।কারণ এর আগে ওদের দুজনকে একসাথে তিনি দেখেননি।এখন দেখে নিজের ঝাপসা চোখের দোষ দিয়ে চুপ করে রইলেন।ভেতর থেকে সেসময় আসিফের বাবা বের হয় আর তখনই ওদের একসাথে দেখে এক গাল হাসি নিয়ে এগিয়ে গেলেন।রিনি সালাম দিলো তাকে।উনি আসিফের মাথায় হাত রেখে বললেন,’যাক!বউয়ের কদর বুঝলি তাহলে!’

আসিফ কিছু বললোনা।দাদুকে দেখে তার কাছে গিয়ে সালাম দিয়ে পাটিতে ধপ করে বসে গেলো।আসিফ এসেছে শুনে ওর মা রান্নাঘর থেকে ছুটে আসলেন।এতগুলা মাস পর ছেলেকে দেখে তিনি আবেগী হয়ে পড়েছেন।রিনি আসিফকে অন্যমনস্ক দেখে আসিফের বাবার সামনে ভ্যাঁত করে কেঁদে দিলো।উনি ওকে কাঁদতে দেখে বিচলিত হয়ে জানতে চাইলেন কান্নার কারণ কি।রিনি কান্নার কারণে কথাই বলতে পারছেনা।বাবা ওকে শান্ত করে বললেন বিষয়টা খুলে বলতে।

‘আন্নের হোলা আঁরে থুই ঢাকা চলি যাইবো কইছে।আঁই এতদিন হত্তে হত্তে থাইকছি আর হাইত্তাম ন।আন্নের হোলা বুঝতোই চা না’
[আপনার ছেলে আমাকে রেখে ঢাকা চলে যাবে বলেছে।আমি এতদিন একা একা থেকেছি আর পারবোনা।আপনার ছেলে বুঝতেই চায়না]

আসিফের বাবা এবার ওর মুখের দিকে তাকালেন।আসিফ এখনও এইসব কিছু শুনে নাই।সে তার দাদুর সাথে কথা বলতে ব্যস্ত।

‘কিরে আসিফ?’

‘কি বাবা?কিছু বলবা?’

‘তুই নাকি রিনিরে ঢাকা নিতি চাস না?’

‘হ্যাঁ।ওখানে গিয়ে কি করবে?আমি থাকি আরেকজনের বাসায়,তার মধ্যে ওকে নিয়ে থাকলে ওনারা কি ভাববে?আর আমি কি চাকরি পেয়েছি এখনও?কথা কি এটা ছিল?’

‘সে যাই হোক!শর্ত দেওয়াই হয় ভাঙ্গার জন্য।মেয়েটা অনেক তো অপেক্ষা করেছে।আর কত কষ্ট পাবে?’

‘না বাবা আমি ওরে নিতে পারবোনা। ‘
——–
বাপ্পি শীতের মধ্যে গোসল করে কাঁপতে কাঁপতে আবার খেতে আসলো।তটিনি খেয়ে দেয়ে বাগানে ঘুরঘুর করছিল।বাপ্পি একা একা নাস্তা করছে সেসময় বকুল আপু তটিনিকে বাগান থেকে ডেকে এনে বললেন,’স্বামী ভাত খাওয়ার সময় তার পাশে বসে থাকলে দুজনের ভালবাসা বৃদ্ধি পায়’

তটিনি মাথা নাড়িয়ে চেয়ার টেনে বসে থাকলো।আপু চলে যাবার পর বাপ্পি ওর দিকে তাকিয়ে বললো,’তুমি ইচ্ছে করে আমাকে দিয়ে গোসল করাইছো তাই না?নিজে করসিলা গোসল?’

‘করসি তো।এই দেখেন চুল ভিজা’

‘আমাকে ফাঁসানোর কি দরকার ছিল?কি ক্ষতি করেছিলাম তোমার?’

‘কিছুই করেন নাই তবে আপনাকে একটু ফাঁসাতে মন চাইলো।কি করবো,বোর হচ্ছিলাম’

‘এটার শাস্তি তুমি পাইবা! ‘

তটিনি যেন একটুও ভয় পেলোনা।মুখ বাঁকিয়ে চেয়ারে বসে পা দুলাতে থাকলো।বকুল আপু সব গুছিয়ে নিয়েছে
এরপর তৃষাকে নিয়ে দুলাভাইয়ের সাথে চলে গেছে সবাইকে বলে।
বাসাটা মূহুর্তেই কেমন শীতল হয়ে গেল।তৃষা আর বকুল আপু মিলে বাসাটাকে মাথায় তুলে রাখতো। এখন তারা চলে যাওয়ায় সব নিরব হয়ে গেছে।

তটিনি কোমড়ে হাত রেখে সবাইকে চলে যেতে দেখেছে বেশ অনেকক্ষণ ধরে।এরপর দেখা শেষে পেছনে ফিরতেই দেখলো বাপ্পি ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

‘কি?’

‘কি?কি দেখো এতো?বকুল আপুকে মিস করতেছো?তোমাকে না সকালবিকাল ঝাড়ি দিতো?’

‘তাও অনেক আদর করতো।ঝাড়ি দেয়া মানুষ অপছন্দের হবে কেন?ঝাড়ি দেয়া মানুষরা সে পরিমাণ আদর ও করে’

‘আচ্ছা চলো ঘুরে আসি’

তটিনি ব্রু কুঁচকে বলে,’কেন?আমরা কি প্রেম করে বিয়ে করছিলাম?’

‘ওমা!এরেঞ্জড হলে ঘুরতে যাওয়া যায়না?’

‘যায়,কিন্তু আমি যাব না কারণ আপনাকে আমি পছন্দ করিনা।আই হেট ইউ’

এই বলে তটিনি মহাআনন্দে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়া ধরতেই বাপ্পির বাবার সামনে পড়লো।তটিনির বলা এর আগের কিছু না শুনলেও আই হেট ইউ ক্লিয়ারলি শুনেছেন।
তটিনি ওনাকে দেখে মাথার ঘোমটা টেনে নিলো।

‘তুমি আমার ছেলেকে ঘৃনা করো?’

‘ননননা তো।’

‘আমি মাত্র শুনলাম আই হেট ইউ বলছো’

‘নাহ নাহ।আমি বলছি আই লাভ ইউ।সত্যি বিশ্বাস করেন’

‘তুমি তো বাপ্পিকে পছন্দ করতেনা তাহলে বিয়ের দুইদিনেই আই লাভ ইউ?আমি নিশ্চিত তুমি হেট ইউ বলছো’

তটিনির কপালে ঘাম উঠে গেছে।এটা শ্বশুর নাকি অন্য কিছু।এমন জোঁকের মতন ধরছে কেন।সে কোনো কিছু বলেই পার পাচ্ছেনা।
শেষে বাপ্পি এসে বললো,’আরেহ বাবা তটিনি আমায় আই লাভ ইউ বলছিল।’

‘ওহ!তাহলে ঠিক আছে’

এই বলে বাবা চলে গেলেন।তটিনি ফিসফিস করে বললো,’আবারও আই হেট ইউ হুহ!’

এটা বলে সে চলে গেছে।
——
আসিফ শীতের ভাপা পিঠা খেয়ে ব্যাগপত্র গুছিয়ে রওনা হয়ে গেছে।রিনিকে বাই বলেনি কারণ বলতে গেলেই সে আবার কান্নাকাটি শুরু করে দিবে।
সে চুপিচুপি বাসস্টপে এসে বাস একটাতে উঠেও গেছে।
একটা সিট পেলো ৩য় নাম্বারে সেখানে একটা মেয়ে বসা ছিল।
আসিফ ওখানে বসতে যাবে তখনই পেছন থেকে ব্যাগ নিয়ে রিনি এসে বললো,’এই আন্টি হরেন তো।হরেন!!একুলে আঁই বইয়াম।আন্নে আঁর আন্টি অইলে আঁর জামাই আন্নের মাইয়ার জামাই।বুইজ্জেন্নি😌🐸?’
[এই আন্টি সরেন তো সরেন!এখানে আমি বসবো।আপনি আমার আন্টি হলে আমার জামাই আপনার মেয়ের জামাই।বুঝছেন?]

রিনির কথা শুনে আসিফ চোখ কপালে তুলে তাকালো।

‘তুই এখানে কি করিস?কি করে আসলি!’

ঐদিকে সিটে বসা মেয়েটা আন্টি ডাক শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছে।

‘কি বললে তুমি!আমাকে তোমার আন্টি মনে হয়?’

‘থুক্কু জেডির মতন লাগে।জেডিরে মাইনসে তো আন্টিই কয়’

‘আবার জেডি বলতেছো!বেয়াদব!’

‘কিহ!আঁই বেয়াদব? ?তুই বেয়াদব!তোর চৌদ্দ গুষ্টি বেয়াদব।’

আসিফ রিনির মুখ চেপে ধরে ঐ মেয়েকে সরি বলতে বলতে পাশের সিটে নিয়ে আসলো।তারপর জানতে চাইলো সে এখানে কিভাবে আসছে।রিনি দাঁত কেলিয়ে বললো,’আঁই কইছিনা আঁই আন্নেরে ছাড়া থাইকতাম হাইরতাম ন।আঁরে কারিমে আনি দিছে একুলে।’

আসিফ রিনিকে নামিয়ে দিতে যাবে তখনই বাস ছেড়ে দিলো।
———
বাপ্পি হাতে টিকেট নিয়ে রুমে ফিরছিল।টিকেট গুলা বাবা দিয়েছে।কক্সবাজারের টিকেট।
তটিনি সেসময় বাপ্পির আলমারি থেকে পাওয়া ওর ছোটবেলার কিছু ছবি দেখছিল।বাপ্পি টিকেট ওর সামনে ধরে বললো,’জলদি প্রস্তুতি নাও।কাল রাতে রওনা হবো’

‘হোটেলে দুটো বেড নিবেন ‘

‘বাবা যে হোটেল বুক করেছে তাতে দুটো বেড নেই।সব একটা একটা’

‘আপনার এত হাসি আসছে কেন?আপনার বাবা এক খাট ওয়ালা রুম বুক করেছে তো কি হয়েছে?আমরা সেখানে গিয়ে দুই খাটের রুম বুক করবো’

‘আচ্ছা ফাইন!’

বাপ্পি নিজের ব্যাগটা বের করে জামাকাপড় গোছানো শুরু করে দিছে।তটিনি ভেতরে ভেতরে কক্সবাজারের পাগলা, ভক্ত এখন সেখানে যাবার কথা শুনে ইচ্ছা থাকার সত্ত্বেও লাফাতে পারছেনা।বাপ্পি ভাববে ও হানিমুন নিয়ে এক্সাইটেড। তাকে বুঝতে দেয়া যাবেনা।সে তো আর জানেনা ওর খুশি সব ঘুরাঘুরি নিয়ে।
———
রিনি বাসের জানালা দিয়ে বাহিরের গাছপালা দেখছে আর গাপুসগুপুস করে চিপস খাচ্ছে।আসিফ বিরক্ত হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে তার সাথে বিরক্ত হয়ে আছে পাশের সিটে বসা সেই মেয়েটি।এরকম অসভ্য মেয়ে সে তার জীবনে দেখেনি,তার তো আফসোস হয় এই মেয়েটির হাসবেন্ড নিয়ে।ছেলেটার জীবন শেষ একেবারে।

রিনি চিপস চাবাতে চাবাতে বললো,’খাইবেন্নি আন্টি?’

‘শাট আপ!আমি তোমার আন্টি না’

‘ওকে খালাম্মা’

মেয়েটা দাঁতে দাঁত চেপে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আসিফ আবারও সরি বলে তাকে থামিয়ে দিলো এরপর রিনিকে ধমকে বললো যেন চুপ করে থাকে।

‘আরেক বেডির সামনে নিজের বউরে ধমকান,কেমন বেডা আন্নে!’

‘তো তুই কি ভাল বিহেভ করতেছস!!বাসে ওঠার পর থেকে ঐ মেয়ের পিছনে লাগছস’

‘আঁই কিত্তাম।আই আন্টি কইলেই বেডি ইগা চ্যাঁত করি উডে।এডা কি আঁর দোষ!’
——–
তটিনি খাটে বসে কলা খেয়ে কলার খোসা সবসময় নিচে ফেলে দেয়।এটা তার ছোটকালের বাজে অভ্যাস।এখনও তাই করেছে।বাপ্পি জামাকাপড় গুছাতে গুছাতে ছোটাছুটি করছিল।তখনই কলার খোসায় পা রাখতেই পিছলে সে গিয়ে পড়লো তটিনির গায়ের উপর।তটিনি যদি এটা আগে থেকে জানতো তাহলে তার বহু পুরোনো এই অভ্যাস ঠিক করে নিতো।
বাপ্পির মতন ভাল স্বাস্থ্য দেহের অধিকারি একটা পুরুষ এভাবে পড়লো গায়ে।তটিনির সেটা সমস্যা ছিল না কিন্তু তার সমস্যা টাই হলো বাপ্পিকে নিয়ে।সে রাগের চোটে কিছু বলতেও পারছেনা। এ বাড়িতে বাপ্পির খেলাপে কিছু বলা যাবেনা,করা যাবেনা।এদিকে বাপ্পির পা খাটের স্ট্যান্ডের সাথে লেগে আটকে গেছে।সে পা ঘুরিয়ে নিজ থেকে উঠার শক্তি উপায় কিছুই পাচ্ছেনা।
চলবে♥