তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_২১
লেখনীতে-আফনান লারা
.
তটিনির চেষ্টায় বাপ্পি উঠতে পারলো তাও অনেক কষ্টে।পা খাটের সাথে না আটকালে উঠতে আরও সহজ হতো।তটিনি কাঁধে ব্যাথা পেয়েছে।সত্তর একাত্তর ওজনের একটা মানুষ গায়ের উপর ধুম করে পড়া কি মুখের কথা??
কাঁধে হাত দিয়ে তটিনি উঃ করে বললো,’ইচ্ছে করে পড়ছেন তাই না!’
‘কলার খোসা ইচ্ছে করে তুমি এখানে ফেলেছিলে যাতে আমি গিয়ে তোমার গায়ে পড়ি।তাই না?’
তটিনি বিড়বিড় করে কিসব বললো যার কোনোটাই বাপ্পি বুঝলোনা।সে নিজেও ব্যাথা পেয়েছে পায়ে।খাটে বসে পা ধরে তাই দেখছিল, তটিনি কাঁধ ধরে নিচে নেমে ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে মলম তুলে কাঁধে লাগিয়ে নিচ্ছে সসেসময় রুমে আসলো বাপ্পির মা।তিনি বাপ্পিকে পা ধরে চোখ মুখ খিঁচাতে দেখে আন্দাজ করে নিলেন নিশ্চয় বাপ্পি ব্যাথা পেয়েছে।তাই ছুটে এসে জানতে চাইলেন কোথায় ব্যাথা পেয়েছে।বাপ্পি কথাটা চেপে যেতে চাইলেও মায়ের কাছে ধরা খেলো একটা কারণে।আর সেটা হলো ওর পায়ে লাল দাগ বসে গেছে।মা তটিনির হাত থেকে মলম নিয়ে এসে ওর পায়ে লাগাচ্ছেন এখন।তটিনি কাছে এসে ধীর গলায় বললো,’আন্টি আমিও ব্যাথা পেয়েছি।এই দেখেন কাঁধে’
‘ও কিছুনা।কিন্তু বাপ্পির পা দেখো তুমি,, লাল হয়ে দাগ বসে গেছে।মনে হয় রক্ত জমে গেছে।তুমি কি দেখোনি ও কিভাবে ব্যাথা পেলো?’
তটিনি ব্রু কুঁচকে ওখান থেকে সরে গেছে।বাপ্পি প্রথমদিন তাহলে ঠিক কথাই বলেছিল।
আসলেই সে ঠিক বলেছে, এ বাড়িতে ওকে সবাই অনেক বেশি আদর করে।
জানালার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তটিনি ওকে হিংসা করছে।বাপ্পির মা মলম লাগিয়ে দিয়ে চলে গেছেন গরম দুধ আনতে।
বাপ্পি তখন পেছনে ফিরে তটিনির দিকে তাকালো।তটিনি ওমনি বললো,’কোলে নিয়ে হাঁটবো একটু?এই টুকু ব্যাথায় এত ব্যস্ত হলে আরও বড় আঘাতে কি ঘটে কে জানে!’
আাপ্পি হাসলো তারপর পা নামিয়ে মলম নিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হেঁটে তটিনির কাছে এসে দাঁড়ালো।তটিনিকে অবাক করে দিয়ে মলম নিয়ে সে ওর কাঁধে লাগিয়ে দিতে লাগলো এবার।
তটিনি এটা আসলেই ভাবতে পারেনি বাপ্পি কাছে এসে যে এমনটা করবে।
বাপ্পি মনযোগ দিয়ে মলমটা ভালমতন লাগিয়ে ফু দিয়ে বললো,’এই বাড়ির সবার কাছে আমি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলেও আমার কাছে তুমি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
এই বলে বাপ্পি আবার গিয়ে আগের জায়গায় বসলো।মা তখনই দুধের গ্লাস নিয়ে আসলেন।
‘কিরে বাপ্পি তুই বুঝি উঠেছিলি?’
‘না তো’
‘তাহলে তোর জুতায় মলম লাগা কেন?কেন উঠেছিল?তটিনিকে বললেই হতো’
‘না আমি উঠি নাই।তুমি এত টেনসন করিওনা’
‘করবোনা টেনসন?কাল তোদের কক্সবাজার যাবার কথা ছিল আর এখন তুই এই ঘটনা ঘটাই রাখলি’
এই বলে বাপ্পির মা নিচে তাকিয়ে কলার খোসাকে মেঝেতে আটকে থাকতে দেখে সেটা তুলে বললেন,’এটাতে পিছলে পড়েছিস তাই তো?কলার খোসা মেঝেতে ফেলার অভ্যাস তো তোর না।এটা নিশ্চয় তটিনি করেছে?
তটিনি?এটা কেমন স্বভাব?তোমার এই বাজে অভ্যাসের জন্য বাপ্পির আজ এই অবস্থা হলো।আর কখনও এইসব করবানা।বাপ্পি খুব পরিষ্কার স্বভাবের ছেলে।তোমাকেও সেরকম হতে হবে।’
মা রাগী চোখে তাকাতে তাকাতে চলে গেলেন।তটিনি গাল ফুলিয়ে তার ট্রলি ব্যাগ টেনে নিজের সব জামাকাপড় গুছানো শুরু করে দিলো।বাপ্পি মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।তটিনি সব গুছিয়ে নিতেই বাপ্পি বললো,’মায়ের বকার জন্য আমি সরি বলছি।এভাবে রাগ করলে হবে?গুরুজনরা তো একটু আকটু বলেই।গায়ে নেয়ার কি আছে?’
‘আসার পর থেকে এটা করোনা,ওটা করো।ওটা করোনা এটা করে শুনতে শুনতে কান পেকে গেছে আমার।আপনারা এইসব আগে জানিয়ে বিয়ে করবেন না??আরেক পরিবেশের আরেক ঘরের একটা মেয়েকে বিয়ে করে এনে নিজেদের মনমত নিয়ম তার উপর চাপিয়ে দিলে হবে??’
‘তটিনি প্লিজ যেও না।আচ্ছা আমি সবাইকে বুঝিয়ে বলবো যাতে তোমার সাথে ভাল ব্যবহার করে’
তটিনি তাও হাঁটা ধরেছে।বাপ্পি বাধ্য হয়ে বিছানা থেকে নেমে ওকে আটকাতে যেতেই পায়ে ব্যাথা পেয়ে আবারও গিয়ে তটিনির গায়ের উপরই পড়েছে।তটিনি দরজার সাথে লেগে দাঁড়িয়ে আছে।বাপ্পি মাথা তুলে হাত দরজাতে রেখে বললো,’সরি।ব্যালেন্স করতে পারিনি।পায়ে ব্যাথা অনেক।প্লিজ যেও না,মচকে গেছে মনে হয়।আমি কথা দিচ্ছি কেউ আর তোমাকে বকবেনা’
তটিনি গাল ফুলিয়ে বাপ্পির সামনে থেকে সরে গিয়ে বিছানায় উঠে বসে থাকলো।বাপ্পি ড্রয়ার খুলে বিসকুটের প্যাকেট এনে দুধের গ্লাসটা তটিনির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,’এই বিসকুটটা দুধ দিয়ে খেতে অনেক মজা।নাও খাও’
———-
রিনি আসিফের হাত শক্ত করে ধরে ঘুমিয়ে আছে।আসিফ এতক্ষণ ওকে ছাড়ানোর সব চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়ে এখন আর সরানোর চেষ্টা করছেনা। রিনি যেভাবে আছে সেভাবেই ওকে ছেড়ে দিয়েছে।রিনিকে হয়ত আর কোনোদিন ফেরানো যাবেনা।
‘যত যাই বলি না কেন দিনশেষে সে তো আমার বিয়ে করা বউ।না আমি অস্বীকার করতে পারবো আর না রিনি আমায় অস্বীকার করতে দিবে।’
আসিফ গম্ভীর হয়ে বসে আছে।রিনির গালের নরম ছোঁয়া ওর হাতে বারবার করে লাগছে বাসের ধাক্কায়।বুকের ভেতর ধরফর করছে অনবরত।রিনিকে সরিয়ে দিলেই যেন মনে শান্তি লাগতো। কিন্তু সরানো সম্ভব না বলে এটাই সয়ে যেতে হবে।
রিনি পাকাপোক্ত ভাবে ধরে আছে যেন আসিফ তাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে সে ভয়ে।
আসিফের ও একই ধারণা হলো।মানুষ এই ভাবনা নিয়ে কখন কাউকে শক্ত করে ধরে?
মানুষটা হাতছাড়া হয়ে যাবার ভয় থাকলেই কেবল শক্ত করে ধরি আমরা।আসিফ সেটা বুঝতে পেরে রিনিকে দূরে সরিয়ে দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
কুমিল্লাতে বাস বিরতিতে থামলো আসরের নামাজ আদায় করার জন্য।
আসিফ রিনিকে রেখে উঠে চলে গেছে।
কয়েক মিনিট পরেই রিনির ঘুম ভেঙ্গে গেলো আর পাশে আসিফকে না দেখে সে ভয় পেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছে।আসিফের নাম ধরে কয়েকবার ডাকাডাকি ও করলো তাও কেনো সাড়া পেলোনা।
পাশের সিটে বসা মেয়েটা আসিফকে নামাজ পড়তে যেতে দেখেছে কিন্তু সে রিনিকে ভয় দেখানোর জন্য বললো,’তোমার জামাই তো তোমায় ফেলে চলে গেছে’
রিনি মেয়েটার মুখে হাসি দেখেই বুঝেছে মেয়েটা মিথ্যা বলছে তাই সে বললো,’আরঁ জামাই কি আন্নের জামাইর মতন নি যে বউ থুই দাই যাইবো?আঁই জানি আঁর জামাই কোনো কামে বাহির হইছে।হেতেন অনেক দায়িত্ববান মানুষ।আঁরে থুই জানের মতন মানুষ না’
[আমার জামাই কি আপনার জামাইর মতন যে বউ রেখে চলে যাবে?আমি জানি আমার জামাই কোনো কাজে বের হইছে।উনি অনেক দায়িত্ববান মানুষ। আমাকে রেখে যাবার মতন না’]
এই বলে রিনি মুখ বাঁকিয়ে বসে পড়লো আবার।
———-
‘তটিনি রান্নাঘরে এসে একটা টোটকা বানাচ্ছে বাপ্পির মায়ের আদেশে।তিনি চান বাপ্পিকে কালকের মধ্যেই সুস্থ করে ফেলতে তাই তটিনিকে কাজে লাগিয়ে দিছেন
তটিনি আগে এইসব কাজ করেনি।ওদের বাড়িতে বুয়া আছে।বুয়া সব করতো,তটিনিকে রান্নাঘরে দেখা যেতো না,অনেক আদরের মেয়ে ছিল।আদরের হলেও বিয়েতে তার মত নেয়া হয়নি বলে সে আগের সব আদর ভুলে বাবা মায়ের উপর প্রচণ্ড রকম রেগে ছিল।ওকে যেমন আদর করতো তেমনই মার দিতো বাবা মা দুজনেই।মার দিয়ে আবার আদর করতো।মাঝে মাঝে তটিনি মনে করতো সে ভুল করে ভুল পরিবারে জন্ম নিয়ে ফেলেছে।
বাবার কথা ভাবতে গিয়ে টোটকার গ্লাসে জুস ভেবে সে গিলে খেয়ে নিয়েছে।
সেটা দেখে বাপ্পির মা দিলেন এক চিৎকার। ভয় পেয়ে তটিনি গ্লাস রেখে বললো,’সরি আন্টি।আমি এক্ষুনি আরেকটা বানিয়ে দিচ্ছি’
‘সেটা সমস্যা না। সমস্যা হলো তুমি যে এটা খেলে এখন তো তোমার শরীর খারাপ করবে’
‘কেন?এটা তো উনি ও খাইতেন।তাহলে আমি খেলে কি সমস্যা হতো?’
‘এটা পায়ের ব্যাথা ভাল করার ঔষুধ।যারা সুস্থ মানুষ তারা এটা খেলে হিতের বিপরীত হয়’
‘তার মানে কি হবে আমার এখন?’
‘বমি পাচ্ছে?’
‘না তো।তবে তেতো লাগছে মুখে’
‘আচ্ছা তুমি বরং গিয়ে শুয়ে থাকো।টোটকাটা আমি বুয়াকে দিয়ে বানিয়ে নিচ্ছি ‘
এই বলে বাপ্পির মা তটিনিকে পাঠিয়ে দিলেন।বাপ্পি শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছিল।তটিনিকে দেখে ফোন রেখে বললো,’চিৎকার শোনা গেলো।কি হয়েছে ওখানে?’
তটিনি মুখে হাত দিয়ে দৌড়ে গেলো ওয়াশরুমের দিকে।বাপ্পি কিছুই বুঝলোনা কি হচ্ছে ওখানে।ওমনি সেখানে বুনি এসে বলে,’ভাবী মনে হয় প্রেগন্যান্ট ”
‘চুপ কর বোকা মেয়ে কোথাকার!এত জলদি প্রেগন্যান্ট হয় নাকি!’
‘কিন্তু ভাইয়া আমি তো জানি বিয়ে করলেই সাথে সাথে প্রেগন্যান্ট হয়।’
চলবে♥
তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_২২
লেখনীতে-আফনান লারা
.
আসিফ নামাজ পড়ে আসার সময় দেখে তার সাথের একজন যাত্রী যিনি কিনা একজন বৃদ্ধ মানুষ,তিনি সিজদাহ দিয়ে বসার পর আর উঠতে পারছিলেন না কিছুতেই।এদিকে বাসের কন্ডাক্টর চিল্লাফাল্লা শুরু করে দিয়েছে বাস ছাড়বে বলে।রিনির ভয় হলো আসিফকে নিয়ে।এতক্ষণ সময় লাগার তো কথা না,তাই ব্যাগ সব নিয়ে সে একাই বের হয়ে গেলো বাস থেকে। তারপর হাঁটা ধরলো আসিফকে খুঁজতে।রিনি বেরিয়ে যাবার পরেই আসিফ ঐ বৃদ্ধকে নিয়ে বাসে উঠেছে।সে উঠতেই ড্রাইভার জানায় রিনি ওকে খুঁজতে বেরিয়ে গেছে।আসিফ পড়লো মহাবিপদে।এসব শুনে সে আর বাসে দাঁড়িয়ে থাকেনি।নেমে গেছে রিনিকে খুঁজতে।
রিনি কুমিল্লা বিশ্বরোড ধরে হাঁটা ধরেছে যতদূর যাইতে পারে। অনেকদূর আসার পর ত্তার মনে পড়লো আসিফ তো হোটেলের পাশের মসজিদে নামাজ পড়তে গেছিলো তাহলে সে এদিকে আসছে কেন?এই ভেবে কপালে ঠাস করে চড় একটা বসিয়ে সে উল্টো পথে হাঁটা ধরলো আবার।
রিনির গায়ে ছিল সাধারন একটা থ্রি পিস।ঐ রোডে বড় বড় গাড়ী চলাচল করছিল বলে বাতাসের তোড়ে থাকা যাচ্ছিল না।রিনি একবার ওড়না ঠিক করে আবার ব্যাগ ধরে।রাস্তার কিছু বখাটে ছেলে রিনিকে খেয়াল করে ওর পথ রোধ করে দাঁড়ালো হঠাৎ।
‘কি গো কচি খুকি!কোথায় যাচ্ছো?’
রিনি থেমে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,’কি কইছেন?কচি খুকি?আঁরে দেই আন্নের কচি খুকি লাগে হাঁচা??’
[কি বললেন?কচি খুকি?আমাকে দেখে আপনার কচি খুকি লাগে?সত্যি?]
ছেলেরা তিনজনেই অবাক হয়ে রিনির দিকে তাকিয়ে আছে।মেয়েদের টিজ করে কচি খুকি বললে জ্বলে আগুন হয়ে বলে বেয়াদব কোথাকার।আর এই মেয়ে দেখি খুশিতে লাল হয়ে গেছে।
ছেলেটা এবার একটু এগিয়ে রিনির ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে বললো,’খুকি তোমার ঠোঁটটা অনেক সুন্দর’
রিনি তখন দাঁত বের করে বললো,’বেনে কদুর তরকারি খাই আইছি।চান চাই আটকি রইছেনি?খচখচ করতাছে”
[সকালে লাউয়ের তরকারি খেয়ে এসেছি।দেখুন তো আটকে আছে কিনা?খচখচ করতেছে🐸]
ছেলেটা একটু পিছিয়ে বললো,’মেয়েটা বড়ই খাচ্চোর প্রকৃতির’
অন্য ছেলেটা রিনির হাত খপ করে ধরে বললো,’ঐখানে চলো।ঐখানে সুন্দর একটা জায়গা আছে,তোমায় ঘুরিয়ে দেখাবো’
রিনি দাঁত কেলিয়ে ব্যাগ সব গুলে ঐ ছেলের হাতে ধরিয়ে বললো,”আডেন যাই।আঁর জামাই তো ঘুরাইতোনো।আন্নে গো লগেই ঘুরিয়াম’
[চলেন যাই।আমার জামাই তো ঘুরাবেনা।আপনাদের সাথেই ঘুরবো]
ছেলেগুলো বলদের মতন রিনিকে সাথে নিয়ে চললো।হাঁটতে হাঁটতে সেই ছেলেটা রিনির দিকে তাকাতেই রিনি বলে উঠে,’চান না কদু লাগি রইছেনি দাঁতে,হিহি’
[দেখুন না লাউ লেগে আছে কিনা দাঁতে।হিহি]
ছেলেটা আবারও সরে দাঁড়ায়।বিষয়টা বিরক্তিকর!! ঐদিকে যে ছেলেটা রিনির হাত ধরেছিল সে ব্যাগ টানতে গিয়ে হাঁপিয়ে গেছে।ব্যাগগুলো এত ভারী!
———
বাপ্পির পা সম্পূর্ণ ভাল হয়ে গেছে যার কারণে তারা এখন কক্সবাজার যাবার জন্য তৈরি হবে।
তটিনি তার বাবাকে ফোন করে খোঁজ খবর নিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নিলো আগেই,হাতে বেশি সময় নেই।বাপ্পি নাকি নিজে ড্রাইভ করবে,ব্যাপারটা অনেক সুন্দর হবে তা বোঝাই গেলো।
তটিনির মন খারাপ,কারণ কাল রাতে খেতে বসে বাপ্পির আম্মু ওকে আরও এক ধাপ ঝাড়ি দিয়েছেন কলার খোসা নিয়ে।তটিনি শুধু রাগে কটমট করতে করতে বাপ্পির চেহারা দেখছিল।
বাপ্পি তটিনিকে নেয়ার আগেই গাড়ী নিয়ে একবার বের হয়েছিল।কি কারণে বের হয়েছিল তা তটিনি কিংবা বাড়ির কেউই জানেনা।প্রায় আধা ঘন্টা-পঁয়তাল্লিশ মিনিট পর সে গাড়ী নিয়ে এসে তটিনিকে বের হতে বলে।
জাকির কাকা ব্যাগপত্র সব গাড়ীতে তুলে দিয়ে গেছেন।তটিনি গিয়ে বাপ্পির সাথে না বসে পেছনের সাইডে বসলো। সে বুঝাতে চাইছে সে রেগে আছে।
বাড়ির এরিয়া ছাড়িয়ে যাবার পর বাপ্পি তার কাছে থাকা ব্যাগটা তটিনির কাছে দিয়ে মেইন রোডে গাড়ী ওঠালো।তটিনি ব্যাগটা হাতে নিয়ে দেখছে।ব্যাগ দেখে মনে হয় এটা তার জন্য গিফট।হুট করে তটিনির মনে পড়ে গেলো কয়েক বছর আগে আসিফের সাথে রাগ করায় আসিফ তাকে এক গুচ্ছ পদ্মফুল এনে হাতে দিয়েছিল।দুটো মানুষের মধ্যে কত তফাৎ!
কেউ ফুল দেয় আর কেউ দামী গিফট!!
কথাটা শেষ না করতেই ব্যাগ হাতিয়ে তটিনি অনেকগুলো লাল গোলাপ খুঁজে পেলো।বাপ্পি ও তাকে ফুলই দিয়েছে।এর জায়গায় দামী গিফট হলে হয়ত সে খুশি হতোনা।কিন্তু ফুল পেয়ে এখন তার খুশিই আর ধরছেনা কোথাও।
বাপ্পি লুকিং গ্লাসে তটিনির ঠোঁটে মিষ্টি হাসি দেখে স্বস্তি পেলো।খুশিতে গাড়ীর স্পীড বাড়িয়ে দিলো সে।তটিনি ফুলগুলো ব্যাগ থেকে বের করে হাত দিয়ে ছুঁয়ে ছুয়েঁ দেখছে।তারপর হঠাৎ বাপ্পির উপর রাগের কথা মনে আশায় গালটা আবার ফুলিয়ে ফেলে সে।
———-
ছেলেগুলো রিনিকে একটা নির্জন জায়গার দিকে নিয়ে যাচ্ছিল ঠিক ঐ সময় আসিফ এসে থামলো ওদের সামনে।রিনি ওকে দেখে খুশি ওর কাছে এসে বললো,”জানেননি আন্নেরে কত টোগাইছি!কোনাই আছিলেন?’
[জানেন আপনাকে কত খুঁজেছি।কোথায় ছিলেন?]
‘আগে বল তুই আমাকে না বলে বাস থেকে একা একা নেমে গেছোস কেন?একা ঘুরার অনেক শখ না তোর?’
ছেলেগুলা ব্যাগ রেখে উধাও হয়ে গেছে।রিনি এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে না দেখে বললো,”দুলাভাইরা বেকে কুনমি গেছে, আঁরে বলে ঘুরাইতে লই যাইবো।অন হেতারা কোনাই’
[দুলাভাইরা সবাই কোনদিকে গেছে?আমাকে নাকি ঘুরাইতে নিয়ে যাবে।এখন তারা কোথায়? ]
‘এই সন্ধার সময় কোনো ছেলে কোনো মেয়েকে ঘুরাইতে নিয়ে যায়?ইজ্জতের দাম নাই তোর?’
রিনি কপাল কুঁচকে বলো,’তাহলে আন্নে আঁরে কোনাই নেন কন চাই।আন্নেও কি আঁর ইজ্জত লই যাইবেন?তবে হুনি রাখেন, আন্নের লাই আর ইজ্জত ফ্রি ফ্রি ফ্রি😌!!’
আসিফ রিনির কান টেনে ধরে রাস্তার অন্যপাশে নিয়ে আসলো।ঢাকাগামী একটা বাস ধরতে হবে, আগেরটা ওদের জন্য ওয়েট করতে করতে বিরক্ত হয়ে চলে গেছে।
রিনি আসিফের হাতটা জড়িয়ে ধরে রাখলো হঠাৎ করে।
——-
তটিনির রাগ যায়নি বলে বাপ্পি আরেকটা ব্যাগ ধরিয়ে দিলো ওর হাতে।মানে সে শুধু একটা ব্যাগ কিনেনি।অনেকগুলো কিনেছে।এই ব্যাগে ছিল একটা শাড়ী,তাতে আবার আবদার করা একটা চিঠি।যাতে লেখা আছে যে দিনটাতে বাপ্পির প্রতি তটিনি মুগ্ধ হবে ঠিক সেদিনটায় যেন গায়ে এই শাড়ীটা পরে।’
তটিনি শাড়ীতে হাত বুলিয়ে ব্যাগটা এক পাশে রেখে দেয়।বাপ্পি গান চালু করে এবার গতি কমিয়ে দিয়েছে গাড়ীর।গানটা ছিল’Tuhi e mujko bata de’
গানের সাথে সাথে সেও গলা মিলাচ্ছিল।আর তটিনি জানালার সাথে মাথা লাগিয়ে বাইরের অন্ধকার রাস্তাটার দিকে বিনাকারণেই তাকিয়ে ছিল।গানটা উপভোগ করার জন্য জানালা নামিয়ে নিল সে।সাথে সাথে ঠাণ্ডা হাওয়া সব এসে গায়ে লাগতে লাগলো।তটিনির চুল উড়ছে তাতে।শীত ও লেগে উঠলো তাও সে জানালা ওভাবেই খোলা রেখে দিয়েছে।তটিনি এক কোণায় চলে যাওয়ায় লুকিং গ্লাসে আর তটিনিকে দেখা যাচ্ছিল না।
তটিনিকে না দেখতে পেয়ে বাপ্পির ভাল লাগা বন্ধ হয়ে গেছে।তাই সে সুইচ ক্লিক করে কারের সবগুলা জানালা অটো বন্ধ করে দিলো।জানালা বন্ধ হয়ে গেছে দেখে তটিনি জানালা খোলার বৃথা চেষ্টা করেও পার পায়নি বলে আবার আগের জায়গায় এসে বলে,’জানালা বন্ধ হলো কেন বুঝলাম না’
‘জানালার সাথে ঝগড়া করেছো কিনা ভেবে দেখো’
‘আপনি জানালা বন্ধ করেননি তো?’
‘ওটা তো আমার পাশের জানালা না।আমি কিভাবে বন্ধ করবো?’
‘সেটাই তো কথা।কত ভাল বাতাস খাচ্ছিলাম।সুখ সহ্য হয়না কারোর!
তটিনি মুখ বাঁকিয়ে সেই ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো,অন্ধকার চারিদিক,কেবল কারের ভেতর অরেঞ্জ লাইটের আলো,সামনে সদ্য বিয়ে করা স্বামী ড্রাইভ করছে আর পেছনে সে বসে বসে আজগুবি চিন্তায় মত্ত।
ভেতরে রোমান্টিক অনুভূতিটা তটিনি মনে করেও দূরে ঠেলে দিলেও বাপ্পি ঠিকই অনুভব করে নিয়েছে।কিছুদূর গিয়ে সে কার থামালো।তটিনি জানতে চাইলো কি কারণে থামিয়েছে।বাপ্পি ছোট্ট করে একটা হাসি দিয়ে বলে গেলো’কফি’
তটিনি কফির কথা শুনে তাড়াহুড়ো করে কার থেকে নেমে বললো,’আমি কফি খাইনা।আমার জন্য চা আনবেন”
বাপ্পি কিছুদূর গিয়ে হোটেল থেকে চায়ের ওয়ানটাইম কাপ এনে তটিনির হাতে দিয়ে কারের ভেতরে মাথা ঢুকিয়ে পেছনের সিটের দরজা লক করে আবার তটিনির পাশে এসে দাঁড়ালো।
চা খেয়ে তটিনি যখন দরজা টানলো তখন আর খুলতে পারলোনা।কি আজব!এই গাড়ীটা তার সাথে শত্রুতা শুরু করলো কেন!বাধ্য হয়ে সে বাপ্পির পাশেই বসেছে এবার।
বাপ্পির খুশি আর ধরে কই।
তটিনি অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলো এই সিট দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে পেছনের সিটে গিয়ে বসবে।তাই করার জন্য সে উঠে বসে পেছনের সিটের দিকে যাওয়া ধরতেই বাপ্পি তার বাম হাত দিয়ে ওর পথ রোধ করে ফেললো।
‘এটা কি?আমি পেছনে যাব’
‘না যাবেনা’
‘কেন?’
‘আমার সাথে বসতে বলেছি,বসবা।এমন ব্যবহার করতেছো যেন আমি এক অপরিচিত মানুষ”
“সেটা বললেও কম হবে আপনাকে।এখন অবধি আমি চিনতেই পারিনি’
‘একসাথে বসলে মরে যাবানা।চুপচাপ বসো’
‘আমি বসবোনা’
এই বলে তটিনি জোরাজুরি করে বসতে চাইলে কিন্তু বাপ্পির এক হাতের শক্তির সাথে পেরে উঠলোনা সে।তাই আবার আগেরমতন বসে গাল ফুলিয়ে রাখলো।বাপ্পি হাতটা ঐরকমই রেখে ড্রাইভ করছে।
‘আমি আপনার পাশে বসলে কি হয় আপনার?’
‘মনে মনে ভাল লাগা কাজ করে,শক্তি পাই যেটা কিনা রাতের মধ্যে ড্রাইভ করতে হেল্প করবে।ও তুমি বুঝবেনা।তোমার তো ফিলিংস সব আসিফকে নিয়ে।বাপ্পিকে নিয়ে ভাবতে তোমার নিজেই নিজের মনকে ট্যক্স দিতে হয় মনে হয়।সেই ট্যাক্স দেয়ার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছ রীতিমত।মনে রেখো খুব জলদি মামলা খাইবা’
চলবে♥
তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_২৩
লেখনীতে-আফনান লারা
.
‘আপনাকে আমি শুরুতেও পছন্দ করতাম না।এখনও করিনা।যতই কেয়ার করেন না কেন আমার মন গলাতে পারবেন না কিছুতেই।আসিফ ভাইয়াকেই ভালবাসতে আমার অনেকদিন লেগেছিল জানেন?আমার চয়েসটাই অন্যরকম।আমি অসাধারণ মানুষকে বাছাই করি’
‘আর আমি অসাধারণ না তাই তো?’
‘আপনি কি আসলে বলতে পারবোনা।তবে আমার পছন্দ না আপনাকে’
‘পছন্দের হতে হলে কি করতে হবে?’
‘কখনই হবেন না।কঘা ঘুরাতে হবেনা এত।একবার যখন বললাম আপনাকে আমি পছন্দ করিনা তখন আর কোনোদিন করবোনা।’
বাপ্পি ফোন বের করে কাকে যেন কল করলো সেইসময়।ইয়ারফোন কানে গুজে তার সাথেই কথা বলা শুরু করেছে।খোঁজখবর ও নিচ্ছে।মনে হলো কোনো মেয়ের সাথে কথা বলছে।তটিনি ভেবেছে তাকে জেলাস ফিল করাতে বাপ্পির যত কারসাজি।কিন্তু আসলে তার ধারণা ভুল।বাপ্পি সত্যি সত্যি কেউ একজনের সাথে কথা বলছে।বলতে গেলে এখন তটিনিকে পাত্তাই দিচ্ছেনা।ওর পাশে যে ওরই ওয়াইফ বসে আছে সেদিকে তার ভ্রুক্ষেপ ও নেই।দিব্যি ফোনের ওপারের মানুষটার সাথে কথা বলে চলেছে সে।
তটিনি সেই ফুলগুলো পেছন থেকে তুলে এনে হাত বুলাচ্ছে আর প্লেয়ারে মিডিয়াম সাউন্ডে বাজতে থাকা সেই গানটি শুনছে।বাপ্পি শেষে ফোনে চুমুই বসিয়ে দিলো।তটিনি সব খেয়াল করেও চুপ করে আছে।ফোনে অনেকক্ষণ কথা বলা শেষ করে বাপ্পি পাশে তাকিয়ে দেখে তটিনি মুখ অন্যদিকে ফেরানো অবস্থায় ঘুমিয়ে গেছে।
চুমুটা আসলে বাপ্পি কাউকেই দেয়নি।কল কেটে দিয়েছিল অনেক আগেই।এতক্ষণ সে তার পুরোনো এক কলিগের সাথে কথা বলেছে।ইচ্ছে করে অন্যভাবে বলছিল যাতে তটিনি ভাবে সে কোনো মেয়ের সাথে কথা বলছে।
ফুলগুলোকে কোলে ধরে রেখেছিল তটিনি।বাপ্পি ওর হাতে ফুলগুলোকে আঁকড়ে ধরে রাখতে দেখে খুশি হলো অনেক।তটিনি যতই মুখে বলুক সে বাপ্পিকে অপছন্দ করে,আসলে কিন্তু সেও বাপ্পির মতই কেয়ারটা ভাল জানে।
বাপ্পি নিজের গায়ের শালটা খুলে তটিনির গায়ে জড়িয়ে দিয়ে আবারও ড্রাইভে মন দেয়।
তটিনির যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন সে নিজের গায়ে বাপ্পির শালটা দেখে হকচকিয়ে মাথা তুলে বসে পড়ে।ওকে এভাবে চমকাতে দেখে বাপ্পি গাড়ী থামিয়ে ফেললো।
‘কি হয়েছে?খারাপ স্বপ্ন দেখলে নাকি?’
‘আপনার শাল আমার গায়ে কেন?আমার কি শীত করছিল?’
‘করছিল কিনা জানিনা।তবে এটা আমার কর্তব্য ছিল’
তটিনি শালটাকে বাপ্পির কাছে রেখে দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে বললো,’যাকে চুমু দিছিলেন তাকেই পরাইয়া দেন”
‘দিব,তাকে নতুন একটা কিনে দিব।বউয়ের জন্য তো পুরান ই যথেষ্ট ‘
বাপ্পির কথায় তটিনির রাগ হলো।তাই চিৎকার করে গাড়ী থামাতে বললো সে।বাপ্পি গাড়ী থামাতেই তটিনি দরজা খুলে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেছে।বাপ্পি ভাবেনি এতটা রাগ করবে ও।
বাপ্পি ও ওর পিছু পিছু চললো এবার।
‘তটিনি থামো, আচ্ছা সরি।আর এভাবে বলবোনা।’
তটিনি ও নাছড়বান্দা। সে কোনো কথাই শুনবেনা।সামনে যেদিকে দুচোখ যাচ্ছে সেইদিকেই চলছে সে।
বাপ্পি দ্রুত হেঁটে তটিনির কাছে পৌঁছে ওর হাত ধরে আটকালো।তটিনির চোখে পানি ছিল।বাপ্পি ওর চোখে পানি দেখতেই হাত ছেড়ে দেয়।পাশের একটা দোকানের আলোয় ওর চোখের পানি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল।
‘তুমি কাঁদছো কেন? ‘
‘আপনার কথায় খুব ভাল লেগেছে, তাই কাঁদছি’
‘মাফ করে দাও।আর কোনোদিন এভাবে বলবোনা।ওটা আমার একটা কলিগের কল ছিল।চুমুটাও ফেক!তাও সরি!আর এমন ফান করবোনা’
‘এতবার সরি কেন বলছেন?’
‘আচ্ছা সরি আর বলবোনা’
‘আবার?’
‘ওকে আর বলবোনা কিছু।চলো এখন।এমনিতেও আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।’
———
আসিফ অনেক কষ্টে রিনিকে নিয়ে তটিনিদের বাড়ি পৌঁছালো।এমনিতেও ওনাদের বাসায় আসিফ থাকার সময় তার ভীষণ লজ্জা হতো।এখন আবার সাথে করে রিনিকে নিয়ে থাকবে, তাতে ওর আরও বেশি লজ্জা হচ্ছে।
এদিকে চাকরি পাওয়া তো মুখের কথা না।
তটিনির বাবা বাসায় ফিরেছেন।আসিফকে দেখে খুশিই হলেন ভীষণ।তিনি জানেন সেদিন আসিফ তার বিয়ের কথা তুলেছে যাতে তটিনি বাপ্পিকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায় আর তাই আসিফের উপর তিনি অনেক সন্তুষ্ট ।
আসিফকে দেখে একেবারে গলা জড়িয়েই ধরে ফেললেন।
রিনি আজ তটিনির রুমে ঢুকেছিল।তটিনির রুমটা তার ভীষণ ভাল লেগেছিল ঐদিন,কিন্তু লজ্জায় ভালভাবে দেখতে পারেনি।আজ ফাঁকা পেয়ে ঢুকে পড়েছে সে।তটিনি খুব সুন্দরভাবে রুমটাকে সাজিয়ে রেখেছে।সবকটা কোণা সুন্দর।রিনি সব ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছিল।হঠাৎ তার হাতের সাথে লেগে গুছিয়ে রাখা বইয়ের একটা তাক মেঝেতে পড়ে যায়।রিনি জিভ কামড়ে নিচে বসে বইগুলো এক এক করে আগের জায়গায় রাখছিল,তখনই একটা বই ধরে তার মনে হলো এর ভেতর কিছু আছে।বইটা খুলে আসছিল।
রিনি বইটা খুলে দেখে ভেতরে কতগুলো গোলাপ,যেগুলা শুকিয়ে আছে।গোলাপের ডাঁটায় আবার টেপ মারা।টেপে তারিখ লেখা আছে যে তারিখে ফুলগুলো কেনা হয়েছিল।
রিনি গালে হাত দিয়ে বললো,’মাগো মা!! এত গভীর প্রেম আছিলো এতাগো!!না জানি কিচ্চে কিচ্চে।আঁই তো কিছু জানতাম ও না!হোড়া কপাল আঁর🙂🤒’
[এত গভীর প্রেম ছিল এদের?না জানি কি কি করেছে। আমি তো কিছু জানতাম ও না।পোড়া কপাল আমার]
———
গাড়ীতে তটিনি ফুলগুলো দেখতে দেখতে অনেক কিছু ভাবছিল।তারপর হঠাৎ করে সে বাপ্পির মুখের দিকে তাকিয়ে বসে।বাপ্পি অবশ্য সেটা খেয়াল করেনি।হাইওয়ে তে ছিল বলে সামনের দিকে মন দিয়ে গাড়ী চালাচ্ছিল। তটিনি অনেকক্ষণ বাপ্পির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবছিল আসলেই কি বাপ্পি তাকে ভালবাসে বলেই কেয়ার করে নাকি এর পেছনে অন্য কারণ!নাহ!
‘স্বামীর কেয়ারে আবার কিসের অন্য কারণ থাকবে!হয়ত সত্যি কেয়ার করে!আমায় পেতে চায় বলে কেয়ার করে?’
‘আচ্ছা একটা কথা বলবেন?’
‘ কি?’
‘আমায় ঠিক কি কারণে আপনার পছন্দ হইছিল?’
‘কোনো কারণ নেই দেখেই মনে হলো তুমি আমার ওয়াইফ হবার যোগ্য আর তাই বিয়েতে হ্যাঁ বলে দিয়েছি’
‘তার ও তো কিছু কারণ থাকে’
‘কারণ নেই।বলতে গেলে আবার রাত শেষ হয়ে যাবে।এইবার ভাবো!’
‘আপনি ভালবাসেন তো আমাকে তাই না?’
‘হ্যাঁ।অনেক।হঠাৎ এই ভুলসময়ে সঠিক প্রশ্ন করার মানে কি তটিনি?’
‘আমার ইচ্ছে হলো জানার।জেনে খুশি হলাম যে আমাকে কেউ ভালবাসে’
‘কলেজ লাইফে কেউ ভালবাসেনি?’
‘ফুল দিয়ে হাঁটু গেড়ে অনেকেই লাভ ইউ বলছিল কিন্তু আমি তো তখন আসিফ ভাইয়ার প্রেমে মত্ত ছিলাম তাই ওরা কেউই পাত্তা পায়নি’
‘আর আমি পেলাম কেন?আসিফ চলে গেছে বলে?’
‘আপনি আমার জীবনে না আসলে সেদিন আসিফ ভাইয়ার বিয়ের খবর জানার পরেও আমি আজ সিঙ্গেল থাকতাম।সেদিন আপনার সাথে আমার বিয়ে হবার কথা হয়েছিল বলেই বিয়েটা হলো।’
‘আমি যে তোমায় ভালবাসি সেটা তো তাহলে বুঝতে পেরেছো।তাহলে আমায় মেনে নিতে সময় কেন পোহাচ্ছো?’
‘আমাকে ভালবাসলে আমারও ভালবাসতে হবে?এত সোজা না একজনকে ভুলে গিয়ে আরেকজনের প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া’
‘তুমি অলরেডি প্রেমে পড়ে গেছো।নাহলে কথায় কথায় এত গা জ্বলতো না তোমার’
‘আমি একবারও জেলাস হইনি।বানোয়াট কথা বলবেনা না একদম’
‘ঠিক আছে।আমি আজ হোটেলে অন্য একটা মেয়েকে নিয়ে থাকবো।আর তুমি আরেকটা রুমে থাকবে।ডিল!!’
এই বলে বাপ্পি চুপ হয়ে গেলো।তটিনি এতটাও সিরিয়াসলি নেয়নি।সে ভেবেছে বাপ্পি মজা করে বলেছে।কিন্তু তার ধারণা আবারও ভুল করে দিয়ে হোটেলে এসে সবার সামনে ম্যানেজারকে বাপ্পি বললো,’আপনার কাছে এমন কোনো মেয়ের সন্ধান আছে যে কিনা অবিবাহিত, রাত কাটানোর জন্য?’
বাপ্পির এরকম কথায় তটিনি যেন আকাশ থেকে পড়লো।সে কল্পনাও করেনি বাপ্পি এতটা সিরিয়াস হয়ে যাবে।সে হা করে তাকিয়েই ছিল।এদিকে ম্যনেজার ফিসফিস করে বলে দিছে টাকা দিলে সব পাওয়া যাবে।
তটিনি ধমকে বললো,’চুপ করেন আপনারা’
বাপ্পি তটিনির কথার তোয়াক্কা না করে ম্যানেজার কে আবার বললো,’টাকা বাড়িয়ে দিব, আজ সারারাত আমার সাথে থাকতে হবে তাকে’
তটিনি দেরি না করে তখনই ঠাস করে থাপ্পড় মেরে দিলো বাপ্পির গালে।এটা দেখে বাকিরা সবাই অবাক হলেও বাপ্পি বিন্দুপরিমাণ অবাক হয়নি।বরং সে গালে হাত দিয়ে অনবরত হেসে চলেছে।তটিনি রাগে ক্ষোভে হনহনিয়ে বুক করা রুমের দিকে চলে গেলো।ম্যানেজার পানির গ্লাস এগিয়ে ধরলো বাপ্পির দিকে।বাপ্পি পানি খেয়ে বললো,’এই চড়টার জন্য এতক্ষণ সেই অফার করেছি আপনার কাছে যে অফারটা আমার বাপ দাদার ১৪গুষ্টির কেউ আজ অবধি করে নাই।মূলত এই চড়টা খাওয়ার জন্যই আমার এত কিছু করা।আপনি ভাই আমার একটা কাজ করে দেন,আমি পে করতেছি।কাজটা সুন্দরভাবে হলেই হলো’
এই বলে বাপ্পি কিছু টাকা দিয়ে অনেক কিছু শিখিয়ে পড়িয়ে দিলো ম্যানেজারকে। এরপর চলে গেলো ওখান থেকে
চলবে♥