তোমার খোলা হাওয়া পর্ব-০৩

0
345

#তোমার_খোলা_হাওয়া
#পর্ব_০৩
#Sumaiya_Sumu(লেখিকা)

“ঊষা বসে বসে চারপাশ দেখতে লাগলো। সবাই খুব আনন্দ করছে। হঠাৎ উজানের কিছু কাজিন’রা এসে বললো সবাই কিছু না কিছু পারফর্ম করবে। প্রথমে কয়েকজন মিলে খুব সুন্দর করে নাচ করলো আবার কয়েকজন গানও গাইলো। সবাই খুব মজা করে অনুষ্ঠান’টা ইনজয় করছে। ঊষা’রও অনেক ভালো লাগছে। হঠাৎ করে উজানের ছোট বোন মানে ঊষা’র ননদ এসে এনাউন্সমেন্ট করলো যে, ছোটদের পারফরম্যান্স শেষ এবার কাপল পারফরম্যান্স হবে। কিন্তু সবাই লজ্জা পাচ্ছিলো কেউ রাজি হচ্ছিলো না। অনেক বলার পর সবাই রাজী হলো। কিন্তু এর মাঝেই সবাই এসে ঊষা’কে টেনে নিয়ে গিয়ে মাঝখানে দাঁড় করিয়ে দিলো। ঊষা আর উজানকেও নাকি পারফরম্যান্স করতে হবে কিন্তু উজান কি ঊষা’র সাথে পারফরম্যান্স করতে রাজি হবে? উজানকে পারফরম্যান্সের কথা বলেই সে রেগে গেলো। কিছুতেই সে এসবে অংশগ্রহণ করবে না। সবাই ধরে-বেঁধে উষা আর উজান’কে এক জায়গায় এনেছে। উজান প্রচন্ড রেগে আছে। উজানের ফেস দেখে ঊষা’র ভয় করছে”। কিন্তু তাও মনে অনেকটা সাহস জুগিয়ে আস্তে করে বললো….

‘সবাই যখন এতো করে বলছে তাহলে’….

‘ব্যস! আপনি কি বলছেন বুঝতে পারছেন? আমি কিন্তু আপনাকে স্ত্রী হিসেবে মানি না ভুলে গেছেন আপনি’?

‘আমি সব জানি আর কিছুই ভুলি নি কিন্তু আমাদের ভেতরের সম্পর্ক’টা বেডরুমের ৪ দেয়ালের মধ্যেই বন্দি রাখলে হয় না? সেটা কি বাহিরে আনা খুব দরকার? আজকে বাড়িতে অনেক মেহমান এর মধ্যে যদি আপনি এমন করেন তাহলে বাসার সবাই কত অপমানিত হবেন? সবার মান-সম্মান নষ্ট হবে। আমি কি বলতে চাইছি বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই’?

“উজান কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সবার উদ্দেশ্যে বললো ‘আচ্ছা আমি রাজি কিন্তু এটাই শেষ। আমাকে এসবের মধ্যে আর কেউ জড়াবে না বলে দিলাম’। সবাই খুশি হয়ে তাতেই সায় দিলো।
ঊষাও একটু মুচকি হাসলো”। তারপর সবাই মিউজিক অন করে দিলো….

“Hua hai aaj pehli baar Jo aise muskuraya hai
tumhe dekha To jana hai
Ki khiu duniya ma Aya hu
~•~•~•~•~•~•~•~•~•~•~•~
Hua ha aj Pehli baar Jo aise muskuraya hai tumhe dekha To Jana hai kikhu
duniya mein aaya hun

Ye Jane Kar ke ja Mari
Tumhe jine ma Aya hu
Ma tumse ishq Kar naki
Izajat rab se laya hu

~•~•~•~•~•~•~•~•~~•~•~
Jame sa asmatak ha
Dhund Rahe jaha Sara
Bara paya nahi abtak
Khuda tumse koi pyara

Batomein tari ha
badmashiya, sabpe bajaki ha awyriya.

Ma likhdu asma par ye
Ye parlega haha Sara
Huya na hoga ab koyi eha ham dosa dubara.
Ma duniya varke tarife
Tumhe jine ma Aya hu
Ma tumse ishq karnaki izajat rab se laya hu”

“গানের সাথে তাল মিলিয়ে উজান আর ঊষা পারফর্ম করছে। কিন্তু উজানের এসবে কোনো আগ্রহ নেই সে মুখ-চোখ কুঁচকে আছে। তার মুখের ভাবভঙ্গি দেখেই বুঝা যায় সে বিরক্ত। এদিকে ঊষা লজ্জায় মাথা নুইয়ে আছে। এই প্রথম কোনো ছেলের এতোটা কাছাকাছি আসলো। উজানের প্রথম স্পর্শ পেয়ে ঊষা একটু কেঁপে উঠেছিলো তারপর থেকেই মাথা নিচু করে আছে। উজানের দিকে তাকাতে সাহস পাচ্ছে না কিন্তু একবার যদি উজানের দিকে তাকিয়ে ওর মুখের ভাবভঙ্গি দেখতো তাহলে ঊষা’র লজ্জা, ঠোঁটের কোণে লাজুক হাসি সব চলে যেতো। কিছু মানুষ কল্পনাতেই বেশি সুখী। ঊষা নিজের মতো করে কল্পনায় মুহুর্ত’টাকে সাজিয়ে একটু হাসছে। এভাবেই হাসুক না, ক্ষতি কি”?

“খুব সুন্দর ভাবে হাসি-আনন্দের মাঝেই অনুষ্ঠান’টি সমাপ্ত হলো। সবাই আস্তে আস্তে বিদায় নিয়ে যে যার বাসায় চলে গেলো। ঊষা রুমে গিয়ে সাজসজ্জা খুলে ফ্রেশ হয়ে নিলো। উফফ এখন যেন একটু পাতলা লাগছে। মানুষ যে এতো ভারি ভারি জিনিস কি করে পড়ে থাকে শুধু সেটাই ভাবছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছিলো তখনই দেখলো উজান রুমে আসলো। উজান রুমে হেসে একবার আঁড়চোখে ঊষা’র তাকিয়ে কাভার্ড থেকে কাপড়-চোপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। ঊষা নিজের হাতের কাজ শেষ করে বিছানা গুছিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। আজকে আকাশে বড় থালার মতো একটা চাঁদ উঠেছে। উষা’র যখন আগে খুব বেশি মন খারাপ হতো তখন চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকতো। আজও তার ব্যতিক্রম নয় সে চাঁদের দিকে উদাস মনে তাকিয়ে আছে। তার মন’টা ভালো নেই। যে কোনো দিন নিজের মা’কে মিথ্যে বলে নি আজ সেই মা’কে মিথ্যে বলেছে। কি করবে? এখন যে নিজের শ্বশুরবাড়ি’টাই আপন। এটাই যে শেষ ঠিকানা। মা জিজ্ঞেস করেছিলো ‘শ্বশুর বাড়ি কেমন? স্বামী কেমন’? তাদের যদি আসল কথা বলতাম তাহলে মা তো সেখানেই অজ্ঞান হয়ে যেতো। একমাত্র মেয়ে হওয়ায় ঊষা যে সবার নয়নের মণি ছিলো আর সেই নয়নের মণি এতো কষ্টে আছে জানতে পারলে কেউ ঠিক থাকতো না”। চাঁদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ঊষা এসব’ই ভাবছিলো হঠাৎ উজান পিছন থেকে বললো…

‘শুনুন’।

‘জ্বী’।

‘আজকে আপনার কথামতো আপনার সাথে পারফর্ম করলাম বলেই ভাববেন না আমি আপনাকে মেনে নিয়েছি’।

………

‘কালকে নাকি আপনার বাবার বাড়িতে যাওয়ার কথা’?

‘জ্বী’।

‘সকাল বেলা রেডি হয়ে থাকবেন আমি আপনাকে ড্রপ করে দিয়ে আসবো’।

‘আ..আপনি যাবেন না’?

‘নাহ্’।

‘আপনি গেলে সবাই অনেক খুশি হতো’।

‘কে খুশি হলো না হলো তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমার কাছে এই সম্পর্ক’টার কোনো মূল্য নেই। আমার আপনার জীবন নষ্ট করার কোনো ইচ্ছে ছিলো না। পরিবারের জন্য বাধ্য হয়ে বিয়ে করতে হলো। আপনি যদি এই বাঁধন থেকে মুক্ত হতে চান তাহলে মুক্ত হতে পারেন। আমাকে বলবেন আমি সব ফর্মালিটি পূরণ করে দিবো’।

“এটুকু বলেই উজান হনহন করে চলে গেলো। ঊষা’র দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝড়ে পড়তে লাগলো। উজান যদি একবার পিছনে ঘুরে তাকাতো তাহলে উষা’র অসহায় মুখ’টা দেখতে পারতো। ঊষা কাঁদতে কাঁদতে কখন বেলকনিতেই ঘুমিয়ে গেছে বুঝতেই পারে নি। রাত ১ টার দিকে উজান রুমে এলো। চারপাশে চোখ বুলিয়ে ঊষা’কে কোথাও দেখতে পেলো না তাতে বেশি একটা মাথা না ঘামিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে একটু অবাক হলো, এতো রাতে মেয়েটা রুমে নেই? বাড়িতেও তো কোথাও দেখলাম না তাহলে কোথায় গেলো? এসব ভেবে আস্তে আস্তে বেলকনির দিকে এগিয়ে গিয়ে উঁকি দিলে দেখলো উষা গুটিশুটি মে’রে নিচে ঘুমিয়ে আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে শীত করছে। ডিসেম্বর মাস, এখন তো শীতের’ই সময়। তবে শহরে সারাদিন খুব একটা শীত না পড়লেও মাঝরাতে শীত পড়ে। উজান কিছুক্ষণ ঊষা’র দিকে তাকিয়ে থেকে ভাবতে লাগলো ‘মেয়েটা এতো কেয়ারলেস কেন? নিজের প্রতি কেয়ার নেই? এভাবে মাটিতে ঘুমিয়ে আছে যদি ঠান্ডা লেগে যায়’? এসব ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানা থেকে কাঁথা’টা এনে ঊষা’র গায়ে জড়িয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটার মুখে আসলেই অনেক মায়া আছে। পরক্ষণেই দৃষ্টি সরিয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে উঠে চলে গেলো। নিজের উপর’ই নিজের রাগ লাগছে উজানের। দূর্বল হলে চলবে না তো। এসব ভাবতে ভাবতে উজানও ঘুমিয়ে পড়লো”।

——–

‘ফজরের আযানের ধ্বনি কানে ভেসে আসতেই উষা’র ঘুম ভে’ঙে গেলো। সে ধরফরিয়ে উঠে বসলো। উঠে বসতেই দেখলো ঠিকমতো নিশ্বাস নিতে পারছে না, সর্দি লেগে নাক বন্ধ হয়ে গেছে আর হাঁচি তো আছেই। সে চারপাশে খেয়াল করে দেখলো কালকে রাতে বেলকনিতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো তাই এমন হলো। হঠাৎ গায়ে কাঁথা দেখে একটু অবাক হলো কারণ সে তো কোনো কাঁথা নিয়ে ঘুমায় নি তাহলে? উজান গাঁয়ে দিয়ে দিয়েছে? তবুও একটা কিন্তু থেকেই যায়। উষা এই ব্যাপার’টা নিয়ে আর মাথা না ঘামিয়ে উঠে রুমে গেলো। গিয়ে দেখে উজান সোফায় ঘুমিয়ে আছে। লোকটাকে কতটা নিষ্পাপ, মায়াবী লাগছে অথচ কেউ কি বলবে এই লোকটাই উষা’র সাথে খারাপ ব্যবহার করে? ঊষা একটা হতাশার নিশ্বাস ছেড়ে ওজু করতে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর এসে সে নামাজ আদায় করে কুরআন তেলাওয়াত করতে বসলো”।

#চলবে….

(রি-চেইক করি নি। ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ। আপনাদের কি গল্পটা বোরিং লাগছে?)