তোমার নিরব অভিমানীনি পর্ব-১৬+১৭

0
371

#তোমার_নিরব_অভিমানীনি(১৬)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
#সারপ্রাইজ_পর্ব
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)

“যার বিয়ে তার খবর নেই পারাপরশির ঘুম নেই” কোমরে হাত রেখে এই কথা বলে নজরাত। রূপক হাই তুলে বলল,
—” যেই কুটনি মেয়েকে বিয়ে করতে চলেছি না জানি আমার কি হয়! তাই বিয়ে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হ‌ওয়ার প্রয়োজন মনে করছি না আমি।
নজরাত মিছে রাগ দেখিয়ে বলল,
—” মোটেও আমার ননদিনী কুটনি না। ভীষণ ভালো একটা মেয়ে মা শা আল্লাহ। যাই হোক কিছুদিন পর তুমি এমনিতেই বুঝতে পারবে।
এখন তাড়াতাড়ি উঠ, যেতে হবে তো নাকি?
—” এতো ভোর বেলা! এখনো পর্যন্ত সূর্য মামা ও ঘুম থেকে উঠেনি বোধ হয়।
—” ঘড়ির দিকে নজর দাও দেখতে পাবে সূর্য মামা উঠেছি কি উঠেনি। আমি শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে এসেছি আর তুমি কিনা পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছো? ভেরি ব্যাড ভাইয়া।

এরপরও রূপক আলসেমি করে শুয়ে থাকে, নজরাত উঠতে বললে সে বলে তাকে যদি নজরাত টেনে তুলতে পারে তবে সে উঠবে এর আগে নয়। ঠিক ছোট বেলার মতো। রূপক শুয়ে থাকলে পিচ্চি নজরাত নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ভাইকে টেনে তুলতো। তারপর রূপক তার সাথে কোন কাজে বা বেড়াতে যেত। এতে অন্যরকম একটা আনন্দ পায় রূপক। বোনটি রাগ করে যখন গাল দুটো ফুলিয়ে বসে থাকে তা দেখতে ভালো লাগে রূপক এর। তবে বোনের কোন ইচ্ছা অপূর্ণ রাখেনি কখনো।
আজোও শক্ত পোক্ত শরীরটা টেনে তুললো নজরাত। তারপরেই রূপক বোনের গাল দুটো টিপে দিয়ে বাথরুমে ঢুকে।
________
রাদ শাহমাত ঘুরে ঘুরে দেখছে ডেকোরেশন এর সব কিছু ঠিক ঠাক মতো করা হয়েছে কিনা। বরের স্ট্রিজ টা ফুল দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। রাহা কে পার্লারের মেয়েগুলো সাজিয়ে চলে যেতে রাদ শাহমাত বোন কে বধু বেশে কেমন লাগছে দেখতে আসে। রাহা লাল রঙা শাড়ি পরে লাল টুকটুকে বউ সেজে বসে আছে বিছানার মাঝ খানে। দৃষ্টি তার নত। ভাইকে দেখতে পেয়ে উঠে আসতে নিলে রাদ শাহমাত দ্রুত নিষেধ করে। এগিয়ে গিয়ে পাশে বসে বোনের গালে হাত রাখে। ভারী কোমল, ভারী স্নেহময়ী স্পর্শ।
রাহার চোখ ছলছলে হয়ে এল। রাদ শাহমাত বোনের মাথাটা নিজের কাঁধে চেপে ধরে বলল,
—” কাঁদে না বোন। আজকে আরো একজন কে সারাজীবন পাশে পাবি যে কিনা সবচেয়ে ভরসার পাত্র হবে তোর। সবচেয়ে কাছের মানুষ হয়ে উঠবে। দো’আ করি আল্লাহ যেন তোকে খুব সুখী করে।
রাহা কান্না রোধ করার জন্য ঠোঁট কামড়ে ধরে। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার। ভাবতেই বুক ফেটে কান্না আসছে। আজকের পর থেকে এ বাড়ির অতিথি হয়ে যাবে সে। মেয়েদের জীবনটাই এরকম।

সাজেদা চৌধুরী গহনার বক্স হাতে নিয়ে মেয়ের কাছে আসেন পরিয়ে দিবেন বলে। এসে দেখেন ছেলে মেয়ে দুটো কাঁদছে। তিনি যথাসম্ভব নিজেকে সংযত করে গহনা পড়িয়ে দিলেন রাহা কে। রাহা যখন জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো তখন আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলেন না সাজেদা চৌধুরী। চোখ দুটো ভিজে এলো তার। তবুও মেয়েকে শান্তনা বানী শুনিয়ে বুঝিয়ে বললেন শ্বশুরবাড়ি তে কিভাবে চলাফেরা করতে হবে না করতে হবে।
যোহরের সালাত আদায় করে বরযাত্রী আসে।রাদ শাহমাত ভেবেছিল নজরাত বুঝি তার ভাইয়ার বিয়েতে শাড়ি পরে সেজেগুজে আসবে। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে নজরাত সবসময়ের মতোই কালো বোরকায় নিজেকে আবৃত করে আসে। রাদ শাহমাত যত দেখছে তত‌ই মুগ্ধ হয়ে পড়ছে। তার বুঝে আসে না একটা মেয়ে এতটা ভালো হয় আজকাল?

খাওয়া দাওয়া সেরে বিয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। রাহা কে কবুল বলতে বলা হলে সে চুপ করে বসে থাকে। নজরাত তখন কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
—” তাড়াতাড়ি বলে দাও ওদিকে তো তোমার হবু বর সেজে গুজে বসে আছে কখন কবুল বলবে বলে।
নজরাত এর এহেন কথায় মুচকি হেসে কবুল বলে দেয় রাহা। সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে বরের কাছে আসে এবার। রূপক এর কথা আর কি বলব? ছেলেদের বরাবরই লজ্জা জিনিস টা কম। তাই কয়েক সেকেন্ড এর মাথায় বলে দিল কবুল। এ কথা নজরাত রাহা কে বলে হাসতে হাসতে শেষ। রাহা তখন লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে থাকে।

কনে বিদায় বেলায় নজরাত কে সাজ্জাদ হোসেন এবং রূপক খুঁজ করলে নজরাত তাদের জানায় সে যাবে না তাদের সাথে। কারণ সে চলে গেলে সাজেদা চৌধুরী এবং রাদ শাহমাত কে দেখার মতো কেউ থাকবে না। তাই তারা আর জোর করে না যাওয়ার জন্য।
_______
বাড়ি থেকে একজন মানুষ চলে গেলেই মনে হয় বাড়িটা পুরো নিস্তব্ধ হয়ে ফাঁকা ফাঁকা লাগে। চারিদিকে শূন্যতা বিরাজ করে। খুব মনে পড়ে যায় সেই মানুষটির কথা। শুধু মনে হয় ঐ মানুষটা থাকলে এখন ঘর জুড়ে হাটতো কথা বলতো। সেসব কথা মনে করে রাদ শাহমাত এর বুক ফেটে যাচ্ছে। বাসায় থাকতে না পেরে ছাদে গিয়ে বসে থাকে।
এদিকে মণি মনমরা হয়ে বসে আছে এক কোনায়। সাজেদা চৌধুরী তাজবি গুনছেন আর মেয়ের কথা মনে করে চোখের পানি ফেলছেন। মাঝখানে নজরাত কোন দিক সামলাবে ভেবে পায় না। তার বাবার কথা মনে পড়ে যায়। বাবা ও তো সেদিন তাকে বিয়ে দিয়ে এমনি করে কেদেছিল নিশ্চয়ই? ভাইয়া বিদেশে ছিল। বাবাকে শান্তনা দেওয়ার মত কোন আপনজন ছিল না সেদিন। নিশ্চয়ই বাবার খুব কষ্ট হয়েছিল?
বাবার কথা ভাবতে নজরাত এর বুকটা ভারী হয়ে এল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে শ্বাশুড়ি মায়ের কাছে গেল। কথায় কথায় সাজেদা চৌধুরী বললেন,
—” ব‌উমা তুমি রাদ এর কাছে যাও। ছেলেটা বোনকে ভীষণ ভালোবাসে। হয়তো খুব কষ্ট পাচ্ছে।
নজরাত জ্বি, আচ্ছা বলে।
রুমে কোথাও রাদ শাহমাত কে দেখতে না পেয়ে মণি কে জিজ্ঞাসা করে। মণি জানায় রাদ ছাদের দিকে গিয়েছে। এ কথা শুনে নজরাত ছাদের দিকে যায়।
রাদ শাহমাত ছাদের ছাদের মাঝখানে বসে আছে। চারিদিকে শীতের মৃদু মন্দ হাওয়া বইছে। নজরাত ধীর পায়ে এগিয়ে এসে হাঁটু ভাঁজ করে পাশে বসে।
কিছুক্ষণ নিরবতা চলে দুজনের মাঝে। নিরবতা ভেঙ্গে নজরাত বিষাদ-মলিন একটু হেসে বলল,
—” আজ থেকে পাঁচ মাস আগে ঠিক এমন একটি দিনে রাহার মতোই একটি মেয়ে ব‌উ হয়ে চৌধুরী বাড়িতে পা রাখে। মেয়েটির এই বিশেষ দিনে তার একমাত্র ভাইটি দেশেই ছিল না। একা বাবা ছেড়ে এসেছিল শুধুমাত্র একজন মায়ের আবদার রক্ষাত্রে। ভবিষ্যত সম্পর্কে অবগত হয়েও নিজেকে সেদিন পুরোপুরি বিসর্জন দিয়ে দিয়েছিল মেয়েটি।
সম্পূর্ণ নতুন একটি ঘরে সারারাত জেগে বসে ছিল তার স্বামী নামক মানুষটার জন্য। রাত পেরিয়ে দিন গেল তা-ও সেই মানুষটির দেখা মিলেনি। ভাবুন কতটা যন্ত্রনা, পিরাদায়ক ছিল মেয়েটির জন্য! সেও তো কারো আদরের একমাত্র বোন ছিল। তার ও তো কতশত স্বপ্ন ছিল।

নজরাত আরো কিছু বলতে নিলে রাদ শাহমাত তার ওষ্ঠদ্বয়ে আঙ্গুল ঠেকিয়ে বলল,
—” আর বলবেন না প্লিজ। আমি সহ্য করতে পারছি না।
তারপর পুনরায় নিজের মতো বসে থাকে। নজরাত ও কথা বারায় না। দৃষ্টি নত করে বসে থাকে। একটু পর রাদ শাহমাত বিরস মুখে বলে,
—” আমি ক্ষমার অযোগ্য তাই না?
নজরাত বার দুই ঢোঁক গিলল। একটা আবেগ তাকে দুর্বল করে দিচ্ছে। কান্না আসছে। আরো আড়ষ্ট হয়ে বসল।
রাদ শাহমাত একটু শব্দ করে হাসলো। বলল,
—” জানি আমি ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য না। তাই তো বার বার বলি আপনি চলে যান, নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন….
নজরাত কর্নধার চেপে ধরে বলল,
—” চুপ একদম চুপ! আর এসব শুনতে চাইছি না আমি। আমাকে একটু শান্তি দিন। দয়া করুন।

রাদ শাহমাত নজরাত এর অব্যক্ত ভালোবাসা বুঝে নিল। অশ্রুসিক্ত নয়নে বলল,
—” আমি আপনাকে একবার জড়িয়ে ধরতে পারি?
নজরাত দিশেহারা হয়ে রাদ শাহমাত এর মুখের দিকে চেয়ে বলল,
—” আমি তো কখনো দেওয়াল তৈরি করিনি।
রাদ শাহমাত আর সময় নিল না। ঝাপটে ধরে বিকারগ্রস্তের মতো এলোমেলো অধরযুগল ছুঁয়ে দেয়।
তার আকস্মিক স্পর্শে কেঁপে কেঁপে উঠছে নজরাত।….

#চলবে.. ইনশা আল্লাহ।

#তোমার_নিরব_অভিমানীনি(১৭)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)

ফার্নিচারে ভরপুর নিস্তব্ধ ঘরে বসে আছে রাহা। কোথাও কোন মানুষের গতানুগতি নেই। এশার নামায এর পর খাওয়া দাওয়া শেষে রূপক এর ফুফু এবং কিছু আত্মীয় মিলে রাহা কে সাজিয়ে রূপক এর ঘরে দিয়ে গেছেন।
এখন ঘড়ির কাঁটায় রাত দুইটা বেজে ঊনচল্লিশ মিনিট। অথচ রূপক এখনো অবধি রুমে আসছে না। রাহা বার দুই ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে ডুলে পরে। ঘুমিয়ে পড়লে যদি রূপক আসে? তখন যদি সে রাগ করে? এই ভেবে রাহা ঘুমানোর সাহস পাচ্ছে না কিছুতেই। এদিকে ঘুমে বিভোর হয়ে পড়ছে। তাই বিছানা ছেড়ে নেমে দাঁড়ায়। বুক সেলফ জুড়ে থাকা ব‌ইয়ের কাছে এগিয়ে যায়। সব সায়েন্স ফিকশন এবং ইংরেজি রাইটারের ব‌ইয়ে ভরপুর।
রাহা ব‌ই পড়তে তত পছন্দ করে না। কিন্তু এই মুহূর্তে সময় কাটাতে ব‌ই পড়াটা জরুরি হয়ে পড়েছে তার জন্য। তাই বুক সেলফ এর ব‌ই গুলো চোখ বুলাচ্ছে। কোনটা পড়া যায়? ভাবছে। তখন একটা ব‌ইয়ের মধ্যে নজর আটকে যায়। ব‌ইটা হাতে নিয়ে অপলক চেয়ে রইল। “ছায়া সঙ্গিনী” রাইটার “রুপকথা”! উপন্যাস যে কারো কাছে থাকা স্বাভাবিক ব্যাপার তাই এটা নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন বোধ করলো না রাহা। তবে তার ভাইটার কথা মনে পড়ে গেল। এই রুপকথা নামক রাইটার কে তার ভাই না দেখেই ভীষণ ভালোবাসে। অথচ মেয়েটা বিবাহিতা।
রাহা ব‌ই টা হাতে নিয়ে ইজিচেয়ারে বসে। তারপর কিছুটা পড়ে বেশ আগ্রহ জাগে তার। অতঃপর ব‌ইয়ের নেশায় মত্ত হয়ে পড়ে। রূপক এর কথা ভুলেই বসে একপ্রকার।
_____
রাদ শাহমাত গাঢ় স্বরে প্রশ্ন করে,
—” এখানে কি রাত কাটিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা আছে? শীত অনুভব হচ্ছে না”?
রাদ শাহমাত এর কথায় কিছুটা নড়েচড়ে বসে নজরাত। রাদ শাহমাত এর প্রশস্ত বুকের সাথে লেপ্টে গুটিয়ে বসে আছে সে। আজকের রাতটা স্বপ্নাচ্ছন্নের মতো লাগছে তার। এত সুখ তার কপালে ছিল? ভাবেনি নজরাত।
রাদ শাহমাত নজরাত এর হাত নিয়ে খেলা করতে করতে বলল,
—” আমায় ভালোবাসেন আপনি?
—” হুঁ।
—” কবে থেকে?
—” যবে থেকে আপনার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি সেদিন থেকে। আপনি বাসেন?
—” উঁহু!
নজরাত তৎক্ষণাৎ রাদ শাহমাত কে ছেড়ে মুখমুখী বসে। উদ্বিগ্ন মুখে চেয়ে থাকে রাদে’র দিকে। রাদ শাহমাত মৃদুস্বরে বলল,
—” ভালোবাসতে চাই।
তারপর দুই হাত বাড়িয়ে দিলে নজরাত পুনরায় তাঁর বুকে ঢলে পড়ে। মাথা নত করে নখ দেখতে লাগে। রাদ শাহমাত খুব যত্ন করে তার বাহুডোরে আবদ্ধ করে রেখেছে নজরাত কে। একটুক্ষন পর রাদ শাহমাত ধীর স্বরে বলল,
—” এবার রুমে যাবো?
নজরাত মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়। তারপর দুজনে রুমে চলে আসে।
লাইট অফ করে শুয়ে যাওয়ার পর দুজনে মাঝে দূরত্ব থাকে। তখন রাদ শাহমাত একটু একটু করে নজরাত এর দিকে আগালে নজরাত দূরে সরে যেতে চাইলে আকস্মিক হেঁচকা টানে নিজের বুকের উপর শুয়ে দেয় নজরাত কে। নজরাত কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
—” কি করছেন? ঘুমাবেন না?
রাদ শাহমাত রা করলো না। নজরাত কে পাশে শুয়ে দিয়ে তার উপর আধশোয়া হয়ে নজরাত এর কাঁপা কাঁপা ওষ্ঠদ্বয় নিজের আয়ত্তে দখল করে নেয়। স্বামীর আলিঙ্গনে সায় দেয় নজরাত। পবিত্র বন্ধনের আবদ্ধে ভাষে দুজন দুজনাতে।
______
সকাল বেলা রাহা ফ্রেশ হয়ে বিয়ের শাড়ি পাল্টে একটা সুতির শাড়ি পরে নেয়। রুম থেকে বেরিয়ে লম্বা বারান্দা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একদম শেষ প্রান্তে আসে। এতো বড় বাড়িটা দেখা হয়নি তার। তাই একটু দেখছে। একটা রুমের দরজা ভেজানো দেখে কি মনে করে যেন হালকা ধাক্কা দিল। ফলে দরজা খুলে গেল। রাহা একটু ভরকালো, ভাবেনি এভাবে খুলে যাবে দরজাটা। তাই একটু ভিতরে ঢুকে পুনরায় দরজা বন্ধ করতে উদ্যত হলে বিছানায় শুইয়ে থাকা রূপক এর খানিকটা মুখশ্রী দেখতে পায়! দরজা ছেড়ে একটু এগিয়ে যায়। ভালো করে খেয়াল করে। হ্যাঁ এটা তো রূপক ই। ও এখানে কি করছে? ও কি ভুলে গেছে? নিজের রুমে বিয়ে করা বউ তার জন্য অপেক্ষা করছে। কি আজব ব্যাপার!
রাহা অপলক চেয়ে থেকে ভাবলো। তার ভাইয়া যখন বিয়ে করে তখন ঠিক এরকমই করে যদিও রাদ শাহমাত এমনি করে অন্য রুমে এসে থাকেনি সে তার বন্ধু শিহাব এর বাসায় গিয়ে থাকে। বিয়ের দু’দিন পর বাসায় ফিরে। রাহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দরজাটা আগের মতই ভেজিয়ে দিয়ে নিচে নেমে আসে। মনে মনে ভাবে তার ভাইয়ার অন্যায় গুলো বুঝি তার উপর এসে পড়ছে!
কিচেনে দুজন হেল্পিং হ্যান্ড নাস্তা তৈরি করছেন। সাজ্জাদ হোসেন রাহা কে দেখতে পেয়ে হেসে বললেন,
—” বৌমা এসো।
রাহা সৌজন্য মূলক হাঁসি দিয়ে বলল,
—” আসসালামু আলাইকুম বাবা।
—” ওয়ালাইকুমুস সালাম। বসো বৌমা। নতুন পরিবেশে ভালো লাগছে তো নাকি?
—” জ্বি, ভালো।
কথার ফাঁকে সাজ্জাদ হোসেন একজন কে ডেকে বললেন রাহা কে কফি দেওয়ার জন্য।
তারপর কফি নিয়ে এলে, রাহা সাজ্জাদ হোসেন কে দিতে বললে তিনি জানান যে একটু আগেই তিনি খেয়েছেন তাই এখন আর খাবেন না। অতঃপর সাজ্জাদ হোসেন আর রাহা গল্প জুড়ে বসে। রাহার কাছে সাজ্জাদ হোসেন কে খুব ভালো লাগে। ভীষণ প্রাণ‌উজ্জল মানুষ সাজ্জাদ হোসেন। যার মধ্যে গম্ভিরতার ছিটে ফোঁটা ও নেই।

খানিকক্ষণ পর রূপক এর ফুফু আসেন। রাহা দাঁড়িয়ে বসতে বললে,
—” তিনি বলেন বসো তুমিও বসো।
সাজ্জাদ হোসেন কে উদ্দেশ্য করে বলেন,
—” ভাই আমি আজ‌ই চলে যাবো‌। ছেলে ব‌উ বাসায় একা আছে। ছেলেটাও বিদেশে জানোই তো কেউ নেই।
—” সে কি! কালই না এলি? বৌভাত পর্যন্ত অন্তত থেকে যা।
—” না ভাই। তোরা নতুন ব‌উ নিয়ে সিলেটে ঘুরে আসিস।
দু’জনের কথার মাঝে রূপক নিচে নেমে আসে। বাহিরে বের হতে হতে রাহা কে বলল, কফি বানিয়ে গার্ডেনে নিয়ে যেতে। সাজ্জাদ হোসেন বোনের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত তাই রূপক এর কথা শুনলেন না। না হয় রাহা কে বলতো কাউকে বলো কফি বানিয়ে দিতে, তোমাকে বানাতে হবে না। কিন্তু আফসোস রাহা লজ্জায় কাউকে বলতে পারলো না। নিজেই বানাতে গেল। একজন কাজের লোক অবশ্য বলেছেন যে, আমি বানিয়ে দেই? কিন্তু রাহা না করলে দ্বিতীয় বার আর বলে না। অথচ দ্বিতীয় বার বললেই রাহা রাজি হয়ে যেত। ঘরোয়া কাজ কর্মে রাহার কোনো দিন আগ্রহ জাগে নি। তাই সবসময় দূরে সরে ছিল।
________
প্রতিদিন এর মতো আজো ও রাদ শাহমাত তৈরি হয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যায়।
নজরাত বেলকনিতে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকে নিচে। যেখানে রাদ শাহমাত গাড়িতে উঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে। হঠাৎ উপরে নজর দিতে নজরাত কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। রাদ শাহমাত তার দিকে নজর দিতে নজরাত পিছনে ঘুরে যায়। নেত্রজোড়া বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। কিছুটা মন খারাপ হয়েছে তার। অন্যান্য দিনের মতো আজকের দিনটা তো ছিল না। তবুও রাদ শাহমাত এভাবে বেরিয়ে গেল। তাই নজরাত এর মন খারাপ।

এর মাঝে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে নেত্রজোড়া মেলে তাকায় নজরাত। রাদ শাহমাত মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে। তার খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে গ্রিলে হাত রেখে, একপ্রকার আবদ্ধ করে রেখেছে। নিঃশ্বাসের বাতাস গুলো আছরে পরছে রাদ শাহমাত এর গায়ে। রাদ শাহমাত মিষ্টি করে বলে,
—” সরি।
নজরাত অনিমেষ চাহনিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। তখন রাদ শাহমাত আবারো বলে,
—” একদম ভুলে বসেছিলাম, আপনার সাথে যে আমার কাল রাতে…
কথা শেষ হ‌ওয়ার পূর্বেই নজরাত ডান হাতে তার অধরযুগল চেপে ধরে। লজ্জা রাঙ্গা চোখে চেয়ে বলে,
—” আপনি যে এতো ঠোঁটকাটা আগে জানতাম না তো।
রাদ শাহমাত অস্ফুট স্বরে বলল,
—” এখন থেকে জানবেন! রোজ জানবেন! ক্ষনে ক্ষনে জানবেন!
নজরাত লজ্জাবতী গাছের পাতার ন্যায় মিইয়ে যায়। রাদ শাহমাত এর বুকে মুখ লুকায়।……

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।