তোমার প্রেমের ছোঁয়ায় পর্ব-১৪+১৫

0
868

#তোমার_প্রেমের_ছোঁয়ায়💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ১৪

” তুই কি জানিস, তোর ওই কিউট কিউট জাপানি চোখগুলো কতটা সুন্দর, কতটা আদুরে? দেখলেই মনে হয়, আদরে ভরিয়ে দিই ওই চোখজোড়া। জানিস, আমার না মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছা করে ওই চুলের মাঝে নাক ডুবিয়ে বসে থাকি তোকে জড়িয়ে ধরে। রেগে যাচ্ছিস কি? জানতাম, রেগে যাবি। কিন্তু কী করব বল, আমার যে তোকে অনেক কথা বলতে ইচ্ছা করে। নীল আকাশে উড়তে চাওয়া ভাবনাগুলোর কথা। বিস্তীর্ণ ভূমি, এঁদো মাটিতে চরে বেড়ানো স্বপ্নগুলোর কথা, সবুজ মাঠের ঘাসে উড়ে বেড়ানো ঘাসফড়িংগুলোর কথা। আমার জীবনের অলিগলিতে বরফকঠিন শীতলতায় জমে থাকে অসংখ্য কথা। তোকে বলতে চাই, আর তোর থেকে শুনতে চাই।

আমি জানি, তুই অনেক রিজার্ভড। অনেক চাপা স্বভাবের একটা মেয়ে। বাইরে যদিও তুই কিছুটা ছোটাছুটি করিস। তোকে আমি খুব করে, পুরোপুরি বুঝতে চাই। তোর মনের প্রতিটি অনুভূতিকে বুঝতে চাই। এমন সব অনুভূতিকে আবিষ্কার করতে চাই দুজনে মিলে। যেগুলো হয়তোবা তুই নিজেও বুঝিসনি আগে। ব্যাপারটা কিন্তু বেশ মজার, তাই না? ইচ্ছা করে তোকে নিয়ে ওই মাঠের ঘাসে পা ছড়িয়ে বসতে, না না, ইবলিস মাঠটার কথা বলছি না…বলছি, তার পাশের ছোট মাঠটার কথা, যেখানে প্রচুর আকাশমণি ফুলের গাছ। তোকে নিয়ে পাশাপাশি হাঁটতে ইচ্ছা করে, পশ্চিমপাড়াগামী চারপাশের শোভা বাড়ানো সারি সারি কৃষ্ণচূড়াগাছগুলোর মধ্য দিয়ে। না না, হাত ধরতে চাইছি না। পাশাপাশি থাকব।

ও হ্যাঁ, বলতে­ ভুলেই গেছি! তোর গালে টোল পড়া বুকে কাঁপন ধরানো অপরূপ হাসিটা। উফ আল্লাহ! এত্তো আদুরে করে হাসিস কেমনে, বল তো? আমার না খুব ইচ্ছা, আমাদের তোর মতো একটা আদুরে মিষ্টি, কিউট মেয়ে হোক। তবে স্বভাবের দিক থেকে পুরোপুরি তোর মতো হলে চলবে না। ও অনেক আহ্লাদি স্বভাবের হবে। আমার কাছে হাজারো আবদার করবে। আমার মেয়েকে নিয়ে আমি খেলব প্রতিদিন, অন্য যত কাজই থাকুক না কেন। ঘুম পাড়াব, সাইকেল চালানো, সাঁতার শেখানো সব করব। ওর বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলব ছোট থেকেই। শুরুটা বোধ হয় রূপকথার বই দিয়েই করলে ভালো হবে, কী বলিস? তখন কিন্তু আমাদের বাপ-মেয়ের আদিখ্যেতা দেখে তুই রাগ করতে পারবি না! পড়াশোনা শেষ করে ওকে ওর পছন্দমতো কাজে যোগ দেওয়ার স্বাধীনতা দেব, তার ইচ্ছেমতো বিয়ে দেব। কোনো রাজপুত্রের দরকার নেই আমার, জামাই হিসেবে দরকার এমন কাউকে, যে কিনা ওকে বুঝবে। ঠিক ওর বাবার মতো। ওর বাবা যেভাবে মাকে বোঝে। এই রে! কোথা থেকে কোথায় চলে এলাম! মনে রাখবি তুই ছিলি, আছিস আর থাকবি প্রতিটা সময় এই মনের মণিকোঠায়।”

সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গে আহি’র ফোনের আওয়াজে।কাল রাত্রে কান্না করার ফলে মাথাটা বড্ড বেশি ব্যাথা করছে।দুহাতে মাথা চেপে ধরে উঠে বসে মোবাইল হাতে নিয়ে আদিয়াতের দেওয়া এতো এতো আবেগ আর ভালোবাসা মাখানো চিঠিটা পড়ে হৃদয়টা চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেলো আহি’র।প্রচন্ডে কষ্টে ফুক ফেটে যাচ্ছে তার।এতো কষ্ট কেন?এতো ব্যাথা কেন তার এই ছোট্ট হৃদয়টায়।এতোগুলো কষ্ট সে কি করে শেষ করবে?ইসস!! আত্মহত্যা পাপ না হলে আহি কবেই মরে যেতো।এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে আহি’র বাঁচতে ইচ্ছে করে না।আর, আদিয়াত?আদিয়াতই বা কেন এইসব বলছে?কেন এতো মায়া বাড়াচ্ছে?আহি তো তাকে ছাড়া বাঁচতে শিখে গিয়েছিলো।আবার কেন ওর জীবনে ফিরে আসলো সে?আর কি চায় সে?একবার দূরে ঠেলে দিয়ে কি মনে শান্তি পাইনি আদিয়াত?আবারও ওকে কষ্ট দিতে এসেছে কেন?এতোই যখন আহি’কে ভালোবাসে তাহলে সেদিন আহি’র এতো কান্না এতো কষ্ট দেখেও কেন চলে গিয়েছিলো?
এই ভালোবাসাময় কথাগুলো পাঁচ বছর আগে বললে কি বড্ড বেশি খারাপ হয়ে যেতো?নাহ! হতো না।বরংচ আহি’র জীবনটা এমনভাবে এলোমেলো হতো না।আজ শুধু মাত্র আদিয়াতের জন্যে আহি’র জীবনটা নরক হয়ে গেলো।
না আদিয়াত ওকে ফেলে চলে যেতো।নাহ, মামি ওকে জোড় করে বাড়ি থেকে বের করে দিতো!নাহ, সে ওর চাচা চাচির সাথে আসতো এইখানে।আর নাহ, সেইদিনের ভয়াবহ কাল রাত্রী আসতো ওর জীবনে।সেই কালরাত্রীটাই ওর জীবনটা একেবারে শেষ করে দিলো।বুকের ভীতরটা জ্বলে যাচ্ছে।কান্না আটকাবার জন্যে বার বার ঢোক গিলায় কন্ঠনালিতে ওর ব্যাথা করছে।পুরনো জখমগুলো তাজা হয়ে উঠেছে।নাহ! এর একটা বিহিত করতেই হবে।এইভাবে চলতে দেওয়া যাবে না।আদিয়াতকে ওর জীবন থেকে সরাতেই হবে।সে আর কোন সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হতে চায় না।একবার সবার জোড়াজুড়িতে আর নিজের উপর হতাশ হয়ে ভুল করে বসেছিলো।সেই ভুলের মাশুল আজোও তাকে দিতে হচ্ছে।সমাজের কাছে সে কলঙ্কিত,অলক্ষী,অপয়া! আর সবচেয়ে কঠিন সত্য হলো সে বিধবা।একজন বিধবা হয়ে সে কি করে আরেকজনের জীবন নষ্ট করবে?হ্যা! সে মানছে যে ও আদিয়াতকে ভালোবাসে।কিন্তু তাই বলে সে আদিয়াতকে মিথ্যে চলে ওর জীবনে ফিরে যাবে এ হয় না।আর এমনিতেও আদিয়াতকে ও যেমন ভালোবাসে,ঠিক তেমনি আদিয়াতের জন্যে ওর মনে তিক্ততা বিরাজমান।আহি আকাশ-পাতাল চিন্তাভাবনা করে আদিয়াতকে ছোট্ট করে একটা মেসেজ দিলো,

” দেখা করবো! সেদিনের সেই বাগানবাড়িতে ভার্সিটি পিরিয়ড শেষে।”

মেসেজটা করেই আহি উঠে দাড়ালো কিন্তু পারলো না।মাথা ব্যাথায় সে অস্থির।মাথায় বেশি চাপ নিলেই এমনটা হয়।হঠাৎ কি হলো কে জানে?আহি বহু কষ্টে ড্র‍য়ার থেকে একটা মেডিসিন বের করে খেয়ে নিলো।কিন্তু এটাই সবচেয়ে বড় ভুল করলো আহি খালি পেটে মেডিসিনটা খেয়েছে।

————–
নিজেকে সুন্দর করে পরিপাটি করে রেডি করে নিলো আদিয়াত। আহি তাকে নিজ থেকে ডেকেছে। আর সে যাবে এ হয় না-কি?গাড়ির চাবি নিয়ে আদিয়াত দ্রুত বেড়িয়ে পড়লো।
বাগানবাড়িতে পৌছে দেখলো আহি এখনো আসি নি।আদিয়াত অপেক্কা করতে লাগলো।
কিছুক্ষন পর গেটের বাহিরে চোখ গেলে দেখে আহি একটা ছেলের বাইকে করে এসেছে।ছেলেটা আর কেউ না আদ্র।আসলে আহিকে একটু অসুস্থ দেখে আদ্র জোড়াজুড়ি করে যে আহি কোথায় যেতে হলে আদ্রই নিয়ে যাবে।নাহলে আহি’কে কোথাও যেতে দেওয়া হবে না।শেষে না পেরে আদ্র’র বাইকে করেই আহি আসে।বাইক থেকে নামতে গিয়ে মাথা ঘুরে উঠে আহি’র। পরে যেতে নিলে আদ্র ওকে দুহাতে ঝাপ্টে ধরে।আদ্র বললো,

” ঠিক আছিস তুই?”

আহি নিজেকে আদ্র থেকে ছাড়িয়ে মলিন হেসে বলে,

” আমি ঠিক আছি।”

” দেখে তো মনে হচ্ছে না। চল তোকে বাড়িতে দিয়ে আসি।”

” আরে টেন্সন করিস না।আমি একটু একা সময় কাটাতে এসেছি।এই শান্ত পরিবেশে এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবো।টেন্সন নিস না।আর আমি ড্রাইবার আঙ্কেলকে ফোন করে দিয়েছি। সে যাওয়ার সময় আমায় নিয়ে যাবে।”

আদ্র চিন্তিত কন্ঠে বলে,

” আর ইউ সিয়র?”

” হ্যা!”

আদ্র আহি’র গাল স্পর্শ করলো।নরম গলায় বলে,

” কোন সমস্যা হলে আমায় ফোন করে জানাবি ওকে?”

আহি হাসলো।বললো,

” আচ্ছা! এখন বাড়ি যা।আন্টি তো আবার তোর জন্যে বসে থাকে খাবার নিয়ে।”

” আচ্ছা আসি বাই।”

” বাই!”

আদ্র চলে গেলো।আহি’র প্রচন্ড খারাপ লাগছে।মনে হচ্ছে ভীতর থেকে সবটা বেড়িয়ে আসবে।মাথাটা ভণভণ করে ঘুরছে।নিজেকে যথাসম্ভব সামলে নিলো আহি।তারপর টলতে টলতে এলোমেলো পা ফেলে বাগান বাড়িতে প্রবেশ করলো।
এতোক্ষন তীক্ষ্ম চোখে সবটা লক্ষ্য করছিলো আদিয়াত।রাগে তার শরীরটা রি রি করছে।এই ছেলেটা কে?আর আহি’র এতো কাছে আসবে কেন?কেন ওকে স্পর্শ করবে?সেই অধিকার তো শুধুই আদিয়াতের তাই না?রাগে আদিয়াতের চোখ লাল হয়ে এসেছে।তবে এটাই কি আহি’র বয়ফ্রেন্ড? যেটা ওই ক্লাবের ম্যানেজার বলেছিলো?
যদি এটাই সত্যি হয় তবে আদিয়াত সব শেষ করে দিবে।জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খার করে দিবে।আহি ওর না হলে ও আহিকে কারো হতে দিবে না।প্রথমে ওই ছেলে আর আহিকে মেরে ফেলবে।পরে নিজে নিজেকে শেষ করে দিবে।আহিকে নিজের কাছাকাছি আসতে দেখে চোখজোড়া বন্ধ করে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিলো আদিয়াত।রাগ কমানোর জন্যে।আপাততো আহি’র সাথে শান্তভাবে কথা বলতে হবে।রেগে গেলে হবে না।আদিয়াত চোখ খুলে আহির দিকে তাকালো।তারপর………

#চলবে_________

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।

#তোমার_প্রেমের_ছোঁয়ায়💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ১৫

দক্ষিনা বাতাস বইছে।বাতাসের সাথে ভেসে আসছে বেলিফুলের ঘ্রাণ।বাতাসের তীব্রতায় পুকুরের পানিতে ঢেউ তুলছে।পুকুরপাড়ে নানান রকম ফুল গাছগুলোতে ফুল ফুটেছে।আহি মনোযোগ সহকারে সব কিছু দেখছে।আর ভাবছে ঠিক কিভাবে আদিয়াতকে ওর জীবন থেকে সরানো যায়।মাথাটাও প্রচন্ড রকম ব্যাথা করছে।চোখপজোড়া বন্ধ হয়ে আসছে।তবুও নিজেকে সামলে রেখেছে আহি।আদিয়াতের সামনে সে নিজেকে দূর্বল প্রমান করতে চায় না।

আহিকে এমন চুপ-চাপ দেখে।আদিয়াত নিজেই বলে,

” কি ভাবছিস?”

আহি’র ফটাফট জবাব,

” ভাবছি আপনাকে কিভাবে আমার জীবন থেকে চিরতরে সরানো যায়।”

আদিয়াত চমকে উঠলো।কি বললো আহি এই মাত্র?কথাটা ঠিক হজম হচ্ছে না আদিয়াত।আহি বললেই হলো?আদিয়াত কখনই আহি’র থেকে দূরে যেতে পারবে না।কোনদিনও না।

” মানে?কিসব বলছিস?মাথা ঠিক আছে?”

আহি ঘুরে তাকালো আদিয়াতের দিকে।শান্ত চোখে তাকিয়ে বললো,

” আমার মাথা ঠিক আছে আপনার মাথা ঠিক নেই।”

আদিয়াত হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো।রাগমিশ্রিত কন্ঠে বললো,

” দেখ আহিয়ানা! আমাকে রাগিয়ে দিস না।ফলাফল খুব খারাপ হবে।”

আহি শক্ত কন্ঠে বলে,

” কি করবেন আপনি?হ্যা কি করবেন?আর কি চাই আপনার আমার থেকে।আমি মুভ অন করে ফেলেছি।তাহলে কেন আপনি আবারও আমাকে অতীতে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন?”

আদিয়াত চিৎকার করে বললো,

” মুভ অন করে ফেলেছিস,তাই না?কিসের মুভ অন হ্যা?আর কে তোর অতীত হ্যা?আমি তোর কোন অতীত নই।হ্যা অতীতে ছিলাম।তবে আমি তোর অতীতেও ছিলাম,বর্তমানেও আছি,আর ভবিষ্যতেও থাকবো। ”

আহি রেগে বলে,

” সেটা কখনই সম্ভব না।”

আদিয়াত রাগি চোখে তাকালো।বললো,

” কেন সম্ভব না একশোবার সম্ভব।আমি তোকে বিয়ে করবো।”

আহি তাচ্ছিল্য হাসলো।বললো,

” হাহ্! বিয়ে?তাও আমাকে?হাসালেন।আপনার মা আমার মতো এতিম মেনে নিবে তো?যখন ভালো ছিলাম তখনিই মেনে নিতে পারে নি।আর এখন তো আমি পৃথিবীর জঘন্যতম মেয়ে।আমি মদ খাই,সিগারেট খাই,ক্লাবে রাত কাটাই,জিন্স, ট্প্স এইসব পড়ি।আমার মাজে কোন ভালো দিক নেই।তাহলে কেন চান আমাকে বিয়ে করতে?”

আদিয়াত এইবার সেই অনাকাক্ষিত সত্যিটাই বলে ফেললো।

” কারন আমি তোকে ভালোবাসি।”

আহি চোখ বুজে নিলো।এটা কি বললো আদিয়াত?আহি’র সারাশরীরে কাঁপন ধরে গেলো।এই কথাটা, এই কথাটা শোনার জন্যে আহি কতো অপেক্ষা করেছে।দিন রাত আল্লাহ্ তায়ালার দরবারে সেজদা’য় কান্নাকাটি করেছে।ওর প্রতিটা মোনাজাতে আদিয়াত ছিলো।আজ ও শুনতে পেরেছে। নিজের ভালোবাসার মানুষটির মুখে ভালোবাসি শব্দটা শুনেছে কিন্তু আজ আহি তো চায় না এইটা।সে চায় না আদিয়াত ওকে ভালোবাসুক।চায় না! চায়না আহি কারো ভালোবাসা।বিধবাদের রঙ সাদা,তাদের ভালোবাসার রঙে রঙিন হওয়ার অধিকার নেই।
আহি নিজের কান্না আটকাবার যথা সাধ্য চেষ্টা করছে।আঁখিজোড়া মেলে তাকায় আদিয়াতের দিকে।আহির চোখজোড়া ভয়ানক লাল হয়ে গিয়েছে।আদিয়াত আবার বলে,

” আমি ভালোবাসি তোকে।সেই ছোট্টবেলা থেকে ছোট আহিয়ানাকে ভালোবাসি।ছোট আহিয়ানা যখন আমাকে ভয় পেয়ে লুকিয়ে যেতো তার সেই ভীতু চেহারা দেখে আমি প্রেমে পড়েছি।আমার আহিয়ানা তো এমন ছিলো না?কেন এমন হয়ে গেলি?ফিরে আয় না আমার আহিয়ানা! আমি যে বড্ড কাঙ্গাল তোর ভালোবাসার কাঙ্গাল।”

হঠাৎ আহি শব্দ করে হেসে দিলো।ওর হাসির ঝংকার চারদিকে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।হাসতে হাসতে আহি বলে,

” বাহ! খুব ভালো।এখন আমার জন্যে ভালোবাসা উতলিয়ে পড়ছে।তাই না?আর আমি যখন শতো কষ্ট নিয়ে বার বার আপনাকে বলেছিলাম।আমি আপনাকে ভালোবাসি।আমাকে ফেলে যাবেন না।তখন তো আমি খুব লাজুক ছিলাম।তাও নিজের লজ্জা সরম ত্যাগ করে বেহায়া হয়েছিলাম।আপনি কি করেছিলেন?আমাকে বেহায়া,নির্লজ্জ মেয়ে বলে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন।হ্যা আমি ভালোবাসতাম আপনাকে।কিন্তু এখন ভালোবাসি না।আর এখনি যদি আপনার প্রতি আমার ভালোবাসা থেকে থাকে।তাহলে তা আপনার প্রতি আসা তিক্ততায় ডেকে গিয়েছে।তাই চাইলেও আজ আমি আপনার ভালোবাসা গ্রহণ করতে পারবো না।”

আদিয়াত ভীষনভাবে রেগে গেলো।কেন পারবে না?সে তো ওর ভালোর জন্যেই বলেছিলো তাই না?কেন আহি বুজে না ওকে?কেন বুজে না যে আদিয়াত সত্যি ওকে ভালোবাসে।আদিয়াত তেড়ে গিয়ে আহি’র দু বাহু চেপে ধরলো।তাও প্রচন্ড শক্ত করে।ব্যাথায় আহি চোখ বুজে নিলো।তাও কিছু বললো না।ঠোঁটে ওর বিরাজমান এখনো তাচ্ছিল্যের হাসি।
আদিয়াত আহিকে ঝাকিয়ে চিল্লিয়ে বলে,

” কেন? কেন আমাকে ভালোবাসিস না?কেন বাসিস না?ওহ! ওই ছেলেটাকে ভালোবাসিস তাই না?এখন তো আমায় আর ভালো লাগবেই না।নতুন কাউকে পেয়েছিস তাই না?মুভ অন করে ফেলেছিস।কিন্তু আমি তো হতে দিবো না! ওই ছেলেটাকেও মেরে ফেলবো।তোকে মেরে ফেলে নিজেও মরে যাবো।বুজেছিস তুই?বুজেছিস?”

আহিকে প্রচন্ড জোড়ে ঝাকানোর কারনে আহির মাথা ব্যাথায় ছিরে যাচ্ছে।চোখে মুখে অন্ধকার দেখছে।শ্বাস আটকে আটকে আসছে।আহি’র রাগ উঠে গেলো।সে শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে আদিয়াতকে ধাক্কা মেরে দিলো।তারপর চিৎকার করে বলে,

” হ্যা!হ্যা ভালোবাসি আমি ওই ছেলেকে।সে আমার বেষ্টফ্রেবন্ড।আর বেষ্টফ্রেন্ড কে ভালোবাসলে সমস্যা কোথায়?জানেন বেষ্টফ্রেন্ড এর চেয়ে সেরে লাইফ পার্টনার আর কেউ হতে পারে না।বুজেছেন আপনি?আমি আদ্রকে……..”

আর বলতে পারলো।হঠাৎ আহি নাক মুখ দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হয়ে গেলো।কি থেকে কি হলো?আদিয়াত থমকে দাড়ালো এটা কি হলো?আদিয়াতের স্নায়ু কাজ করা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।আহি জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে নিতে ঢলে পড়ে যেতে নিতেই।আদিয়াত দ্রুত গিয়ে আহিকে দুহাতে জড়িয়ে ধরলো।বিষ্ময়ভরা নয়কে কাতরনন্ঠে ডেকে উঠলো,

” আহিয়ানা!!”

#চলবে_________

ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন।