তোমার প্রেমের ছোঁয়ায় পর্ব-২২+২৩

0
658

#তোমার_প্রেমের_ছোঁয়ায়💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পর্বঃ২২
মৃদ্যু মন্দ বাতাস।সেই সাথে মনমাতানো হাসনাহেনা ফুলের সুভাসে চারদিক মিমোহিত।বাহিরে জোৎস্নার ছড়াছড়ি।রুমের ভিতর এটাচ্ড মিনি ছাদটার দোলনায় মন মরা হয়ে বসে আছে বিয়ের সাজে সজ্জিত এক ভূবনমোহিনি।এতো এতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তার মন ভালো করতে সক্ষম হলো না।বরংচ তার মনের আকাশে কালো মেঘে ছেয়ে জর্জরিত।আজ কাঁদতে চাইছে সে।কিন্তু কান্নাগুলোও আজ ওর সাথে স্বার্থপরতা করেছে।চোখের কোনে জলের ছিটেফোঁটাও আসছে না।এমন কেন হয় তার সাথে?কেন সে যা চায় তা হয় না।ওর পুরো জীবনটা কেন অন্যের অধীনে থেকেই পার হয়ে গেলো।মন চাপা এক দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো আহিয়ানার।এতোটা অসহায় আজ সে কেন?আজ নিজের উপরই চরম বিরক্ত আহিয়ানা।মন চাচ্ছে নিজেকে কেটে টুকরো টুকরী করে একেবারে শেষ করে দিতে।ভারি হয়ে আসা চোখজোড়া নিয়ে সেই মিনি এটাচ্ড ছাদে ছোট্ট একটা সুইমিংপুল আছে সেখানে পা ডুবিয়ে বসলো আহিয়ানা।সেখানে ফেক পদ্মফুলের ছড়াছড়ি।কিন্তু দেখতে একদমই নকল মনে হয় না।রাত্রী বেলা সেই পদ্মফুল হতে নানান রঙের আলোর বিস্ফোরণ ঘটে।
একসময় এই ছাদে আসার জন্যে কতো পাগল ছিলো আহিয়ানা।শুধু আদিয়াতের ভয়ে আসতে পারতো না।আদিয়াত ওকে এখানে আসতে সাফ মানা করে দিয়েছিলো।আদিয়াত বলতো সে ওর বউকেই এখানে আগে আসতে দিবে।তার আগে এখানে কেউ আসতে পারবে না।সিয়া ও না আহিয়ানাও না।একদিন আদিয়াত ভার্সিটিতে যাওয়ায় আহিয়ানা আর সিয়া লুকিয়ে সেখানে গিয়েছিলো।কিন্তু সেটা কিভাবে কিভাবে যেন আদিয়াত জেনে যায়।পরে সিয়া আর ওকে ইচ্ছামতো বকে ছিলো আর থাপ্পরও মেরেছিলো।আহিয়ানা রাগ করে আদিয়াতের সামনেই যায়নি পুরো দশদিন।পরে আদিয়াত ওকে চকোলেট গিফট করাতে এমনিতেই মন গলে যায় ওর। কিন্তু খাটাসটা তাও ওকে সরি বলেনি।ছোট বেলার কিছু স্মৃতি মনে পরতেই তাচ্ছিল্য হাসে আহিয়ানা।জীবনটা বড্ড অদ্ভূত বড়ই অদ্ভূত।
.

জিহান,সোহেব,এশা,সিয়া আর রোজা হতে বহুত কষ্টে ছাড়া পায় আদিয়াত।বজ্জাতগুলো টাকা ছাড়া আসতেই দিতে চাইছিলো না।বিশ হাজার টাকা আদায় করে ভেগেছে এক একটা।বাপরে বাপ সবগুলো বাটপার। রুমে প্রবেশ করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো আদিয়াত।তারপর সারারুমে চোখ বুলিয়ে আহিয়ানাকে না দেখতে পেয়ে ভ্রু-জোড়া আপনা-আপনি কুচকে এলো ওর। আশ্চর্য এই মেয়ে গেলো কোথায়?
দৃষ্টি জোড়া এদিক সেদিক এলিয়ে এক জায়গায় চোখ আটকে যায় আদিয়াতের।খোলা এলোমেলো চুলে,বধূর সাজে সজ্জিত এক রমনী পানিতে পা ডুবিয়ে চন্দ্র-বিলাশ করছে। চাঁদের আলো তার চোখে মুখে পরছে বিদায় তাকে মায়ারাজ্যের কোন রানী মনে হচ্ছে।এতোটা পবিত্র আর স্নিগ্ধ কাউকে কিভাবে লাগতে পারে ভেবে পায় না আদিয়াত।আহিয়ানা মিনি ছাদটায় দেখে পুরনো দিনের কিছু স্মৃতি মনে পরে যায় আদিয়াতের।আলতো হাসে সে।সেই হাসিতে নিজের প্রাপ্তিতে কতোটা খুশি আজ সে তা স্পষ্ট বিদ্যমান।আদিয়াত মুচকি হেসে ধীর পায়ে এগিয়ে যায় আহিয়ানার দিকে।
সেখানে গিয়ে আহিয়ানার পিছনে বসে পরে।
পিছনে কারো অস্তিস্ত্ব অনুভব করায় বুজতে পারে আহিয়ানা আদিয়াত এসেছে। তাও কিছু বললো না সে।কিছুক্ষণ নিরবতা রইলো।তারপর আদিয়াতই বললো,

-” আহিয়ানা এখানে কি করছিস?”

আহিয়ানা তখনি চাঁদের দিক তাকিয়ে থেকেই উত্তর দেয়,

-” দেখতেই পারছেন।”

হালকা হাসলো আদিয়াত।বললো,

-” চল রুমে।ফ্রেস হয়ে নেহ।ওযু করে নামাজ পরে নেই।”

আহিয়ানা কিছুই বললো না।নিঃশব্দে উঠে দাঁড়িয়ে লাগেজ থেকে একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।আদিয়াত করুন চোখে সেদিকে তাকিয়ে থেকে নিজেও রুমের ভীতরেই চেঞ্জ করে নিলো।ওয়াশরুমে থেকে পানির আওয়াজ আসছে।তারমানে মেয়েটা গোসল দিচ্ছে। এই এতো রাতে গোসল কেন করছে? যদি জ্বর টর হয়।উফফ,এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারে না আদিয়াত।চেঞ্জ করে রুমে বসেই আহিয়ানার অপেক্ষা করতে লাগলো সে। কিছুক্ষন পর ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দে সেদিকে তাকায় আদিয়াত।
কিন্তু সেখানেই চোখ আটকে গেলো ওর।এই মেয়ে আর কতোভাবে ওকে ঘায়েল করবে ভেবে পায় না সে।নিশ্চিত আদিয়াত একদিন ওর রূপের তেজে মরেই যাবে।হালকা মিষ্টি কালার শিফনের শাড়ীতে মারাত্মক সুন্দর লাগছে আহিয়ানাকে।মাত্র গোসল করায় স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে মুখমন্ডল,সেই সাথে কপালে ল্যাপ্টে আছে ছোট ছোট চুল গুলো।আদিয়াত হা করে তাকিয়ে আছে।

আহিয়ানা দেখে আদিয়াত ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।বেচারি লজ্জায় কাচুমাচু হয়ে যায়।না চাইতেও সে সেই ছোট্ট আহিয়ানার মতো আদিয়াতকে দেখলেই যেমন লজ্জায় গুটিয়ে যেতে আজও তার ঠিক সেইরকম লজ্জা লাগছে।ইনফেক্ট তার থেকেও বেশি লাগছে।আহিয়ানা নিজেকে সামলে নিয়ে কপালে পরে থাকা চুলগুলো কানের পিছনে গুজে আস্তে করে বললো,

-” আপনিও ফ্রেস হয়ে ওজু করে আসুন।”

আহিয়ানার কথায় আদিয়াত সম্ভিত ফিরে পায়। হালকা হেসে মাথা চুলকে ওয়াশরুমে গিয়ে ওযু করে আসে।আদিয়াত এসে দেখে আহিয়ানা জায়নামাজ বিছিয়ে ফেলেছে।মৃদ্যু হেসে ড্র‍য়ার থেকে একটা টুপি বের করে সে আহিয়ানার সামনে দাড়ালো তারপর আহিয়ানা আদিয়াতের পিছনে।
তারপর নফল নামাজ আদায় করে নিলো।আহিয়ানা মনে প্রাণে দোয়া চাইলো।এখন ওর বিয়ে হয়েছে।ওদের সম্পর্কটাও যেন আর পাঁচটা স্বামি স্ত্রীর মতো স্বাভাবিক হয়।সে যেন মনে প্রাণে আদিয়াতকে গ্রহন করে নিতে পারে নিজের স্বামি রূপে।কারন আর যাই হোক।স্বামি স্ত্রীর সম্পর্ক কোন ছেলে খেলা না।এর গভীরতা ঠিক কতোটুক তা আহিয়ানা খুব ভালোই জানে।তাদের সম্পর্কে যদি স্বাভাবিকতা না আসে।তাহলে আল্লাহ্ নারাজ হবেন।আর নিজের রবকে নারাজ করা একদম ভালো না।আদিয়াত্ও একই দোয়া করলো।
নামাজ শেষে আদিয়াত উঠে দাড়াতেই ঝট করে আহিয়ানা আদিয়াতের পা ধরে সালাম করে।আদিয়াত চমকে যায়।হঠাৎ কি হলো বুজে উঠতে পারেনি সে।আদিয়াত দ্রুত আহিয়ানার দুবাহু ধরে ওকে উঠিয়ে বলে,

-” কি করছিস এসব?”

আহিয়ানা ছলছল নয়নে তাকায় আদিয়াতের দিকে।ধরা গলায় বলে,

-” কেন নিজের স্বামিকে সালাম করবো না?”

আদিয়াত নম্র চোখে তাকায় আহিয়ানার দিকে।তারপর কাপা হাতে ওর গাল স্পর্শ করলো।সাথে সাথে আহিয়ানা চোখজোড়া বন্ধ করে নিলো।ওর গাল দিয়ে গড়িয়ে পরলো টসটসে দুফোটা জল।আদিয়াত যত্নে সহকারে সেই চোখের পানি মুছে দিলো।আহিয়ানা চোখ খুলে তাকালো।আদিয়াত নরম কন্ঠে বলে,

-” আজই শেষ।এরপর যেন আর না দেখি এসব করতে।তুই মাথা উচু করে বাঁচবি কারো সামনে মাথা নিচু করবি না।এমনকি আমার সামনেও না। কোনদিন না বুজেছিস?”

আহিয়ানা কান্না মাখা চোখেই মাথা দুলালো।আদিয়াত আহিয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।আহিয়ানার কি হলো সে জানে।ঝাপিয়ে পরলো আদিয়াতের বুকে।ওকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করে দিলো।আকস্মিক এমন হওয়ায় আদিয়াত টাল সামলাতে না পেরে দুকদম পিছিয়ে যায়।আহিয়ানার কান্নার প্রতিটা ধ্বনি ওর বুকে তীরের মতো বিধছে।আহিয়াবা চিৎকার করে কান্না করতে করতেই বলে,

-” আমি ভালোবাসি আপনাকে।অনেক ভালোবাসি।আমি আর সহ্য করতে পারছি না।এইবার আমি স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে চাই।আমি আর পাঁচটা মেয়ের মতো চলতে চাই।স্বামি সংসার নিয়ে সুখে থাকতে চাই।কিন্তু আমি পারছি না।পুরনো সেই বিষাক্ত স্মৃতিগুলো আমাকে তাদের বেড়াজালে এমনভাবে জড়িয়ে নিয়েছে যে আমি চাইলেও পারছি না।কেন আমার সাথেই এমনটা হলো। বলুন না?কেন এমনটা হলো?আপনাকে ভালোই তো বেসেছিলাম তাই না?আর কোন পাপ তো করেনি।বলুন? বলছেন না কেন?”

আদিয়াতের নিজেরও চোখে বাধ ভেঙেছে। প্রিয়তমার চোখের পানিগুলো ছুড়ির ন্যায় আঘাত করে চলেছে হৃদপিন্ডটায়।আদিয়াত নিজের চোখের পানি মুছে দুহাতে জড়িয়ে নিলো আহিয়ানাকে। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

-” শান্ত হো জান।তুই এমন করলে চলবে না।তুই তো আমার স্ট্রোং আহিয়ানা তাই না?আর এখন থেকে আমি আছি তো।আমি ঠিক সবটা ঠিক করে দিবো।তোকে আর কষ্ট পেতে দিবো না।তোকে অনেক ভালোবাসবো।ঠিক এতোটাই ভালোবাসা দিবো যে তুই পুরনো সব কষ্ট ভুলে যাবি।”

আহিয়ানা কাঁদতে কাঁদতে বললো,

-” আমি ভুলতে চাই আদিয়াত।ভুলতে চাই।আমাকে ভুলিয়ে দিন।”

আদিয়াত আহিয়ানাকে নিয়ে দেয়াল ঘেসে নিচে বসে পরলো।আহিয়ানা আদিয়াতের পিঠ খামছে ধরে কাঁদছে।ওর নখগুলো মনে হয় আদিয়াতের পিঠে ডুকে যাচ্ছে।ব্যাথা পাচ্ছে আদিয়াত তাও কিছু বললো না।কাদুক আজ আহিয়ানা কাঁদতে কাঁদতে ওর বুক ভাসিয়ে দিক।কাঁদলে মন হালকা হয়।আদিয়াত আহিয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।অনেক্ষন পর ধীরে ধীরে আহিয়ানার কান্না থামলো। কিন্তু কান্নার রেশটা রয়ে গেছে।এখনো কেঁপে কেঁপে উঠছে ওর শরীর।আহিয়ানার ভারি নিশ্বাসের শব্দে আদিয়াত বুজতে পারে আহিয়ানা ঘুমিয়ে পরেছে।আদিয়াত আলতো হাতে আহিয়ানাকে কোলে তুলে নিলো।আহিয়ানাকে বিছানায় সুইয়ে দিয়ে নিজে আরেকপাশে গিয়ে সুয়ে পরলো তারপর আহিয়ানাকে বুকে টেনে নিলো।শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।আহিয়ানার কপালে চুমু খেয়ে বিরবিরিয়ে বললো,

-” তোকে আমি আর কষ্ট পেতে দিবো না। একটুও না।এখন থেকে তুই সুখের রাজ্যে ভাসবি আহিয়ানা।তোর দুঃখের কারন যেমন আমি ছিলাম।আজ থেকে তোর সুখের কারনও আমিই হবো।”

#চলবে______
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।

#তোমার_প্রেমের_ছোঁয়ায়💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ২৩
ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে মাত্রই।নিকষ কালো আধার রাত্রী পেরিয়ে কমলা রঙের দীপ্তি ছড়িয়ে উদয় হচ্ছে সূর্যি মামা।পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ।আজান শেষ হয়েছে প্রায় অনেক্ষন হলো।পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায় আহিয়ানা।সে অদ্ভূত এক মধুর ধ্বনি শুনতে পারছে।সেই শব্দগুলো একেবারে হৃদপিন্ডে কি আঘাত করছে।মিষ্টি এক যন্ত্রনা হচ্ছে বুকের বা-পাশটায়।এক সুরালো মধুর ধ্বনি, ঢিপ,ঢিপ,ঢিপ,ঢিপ।আহিয়ানা তন্দ্রাভাব কেটে যেতেই চোখ বড় বড় করে তাকালো।আরে সে তো আদিয়াতের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ।লোকটা তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ঘুমোচ্ছে।আদিয়াতের হৃদপিন্ডের ধুকপুকানির আওয়াজটাই এতোক্ষন পাচ্ছিলো আহিয়ানা।তার মানে সে কাল পুরো রাত আদিয়াতের বুকেই ঘুমিয়েছে।মনটা ভালো লাগায় ছেয়ে গেলো।কাল রাতের কথা মনে পরতেই একরাশ লজ্জা এসে ভর করলো ইয়াসিবার চোখে মুখে।সে এখন বউ,অর্ধাঙ্গিনী,স্ত্রী। কার?আদিয়াতের।হ্যা আদিয়াতের স্ত্রী সে।কথাটা যতোবার আহিয়ানার মন আর মস্তিষ্ক জানান দেয়।ভালো লাগার চরম সীমানায় পৌছে যায় আহিয়ানা।আহিয়ানা এক ধ্যানে ঘুমন্ত আদিয়াতের দিকে তাকালো।কি নিস্পাপ বাচ্চাদের মতো লাগছে।এই লোকটা তার স্বামি।যাকে সে সেই ছোট বেলা থেকে মনে প্রানে ভালোবেসে এসেছে।ওর প্রতিটি মোনাজাতে যাকে চেয়েছে।আল্লাহ্ তায়ালা তাকেই দিয়েছেন।ইয়াসিবা আর কোন দুঃখ নেই।এই লোকটা ওর পাশে থাকলে আর কিছু চায় না ও।আদিয়াতের বাহুতে যেন ওর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারে এইটাই মনে প্রানে দোয়া চাইলো আহিয়ানা।
আহিয়ানা আর কোন অভিমান রাখতে চায় না।সে আবার নিজের আগের জীবন ফিরে পেতে চায়। যে আহিয়ানা পাগলের মতো আদিয়াতকে ভালোবাসতো তার জন্যে সব করতে রাজি ছিলো।সেই আহিয়ানা হতে চায়।কিন্তু পরিমুহূর্তে কিছু একটা ভেবেই মন খারাপ হয়ে গেলো আহিয়ানার।আদৌ কি সে পারবে আগের আহিয়ানা হতে?ও একটা বিরাট তাকমা নিয়ে ঘুরছে।সমাজের কাছে সে তো ফেলনা।তার কোন দাম নেই।সে ডিভোর্সি। আর আদিয়াত? সে তো এক উত্তম পুরুষ।যাকে সব মেয়েই তার স্বামি রূপে গ্রহন করার জন্যে পাগল।সেখানে আহিয়ানার মতো একটা মেয়ে কি আদিয়াতের যোগ্য?

-” সমাজ কি বললো?না বললো।কি ভাবলো? না ভাবলো।এতো সব চিন্তা করে তো লাভ নেই আহিয়ানা।তুই আমি কিভাবে সুখে থাকবো সেটাই ম্যাটার করে।তুই আমাকে আর আমি তোকে মেনে নিয়েছি কি-না সেটা ম্যাটার করে।আর আমরা দুজন দুজনকে পাগলের মতো ভালোবাসি।সেখানে সমাজের কথা চিন্তা করে আমাদের মাজে দূরত্ব আনা একদম বোকামি হবে আহিয়ানা।”

মুচকি হেসে আদিয়াত কথাগুলো বলেই।আহিয়াবার কপালে গাঢ়ো এক চুমু খেলো।আহিয়ানা অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে আদিয়াতের দিকে।এই লোকটা তার মনের কথা বুজলো কিভাবে?সে তো মুখ ফুটে কিছু বলেনি?তাহলে?

আদিয়াত আহিয়ানাকে বুকে নিয়েই উঠে বসলো।আদূরে গলায় বললো,

-” এতো চিন্তা করে লাভ নেই।চল আগে আমাদের বিয়ের প্রথম দিনটা নামাজ পরে শুরু করি।”

আহিয়ানার আধার মুখে আবার হাসি ফুটে উঠলো।ও নিজেকে আদিয়াত থেকে ছাড়িয়ে উঠতে নিলেই আদিয়াত ঝট করে আহিয়ানাকে কোলে তুলে নেয়।আহিয়ানা দ্রুত দুহাতে আদিয়াতের গলা জড়িয়ে ধরলো।অস্থির কন্ঠে বললো,

-” আরে কি করছেন আপনি?ছাড়ুন। আমি একাই যেতে পারবো।”

আদিয়াত ওয়াশরুমের দিকে আগাতে আগাতে বললো,

-” আমি যা করছি আমাকে কর‍তে দে।নাহলে কোলে নিয়ে সোনা মিনি ছাদ থেকে ফেলে দিবো।”

আহিয়ানা মুখ ফুলিয়ে বললো,

-” বিয়ের পরের দিন থেকেই এমন ধমকা ধমকি শুরু করলেন?”

আদিয়াত ভ্রু উচু করে তাকাতেই চুপ হয়ে যায় আহিয়ানা।আদিয়াত নিঃশব্দে হাসলো।তারপর আহিয়ানাকে নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে দুজনে ফ্রেস হয়ে ওযু করে নামাজ পরে নিলো।নামাজ শেষে আদিয়াত বললো,

-” তুই মিনি ছাদে যা।আমি কফি নিয়ে আসছি।”

আহিয়ানা ছোট্ট আওয়াজে বললো,

-” আপনি কেন যাবেন?আমিই যাচ্ছি।”

আদিয়াত তীক্ষ্ম চোখে তাকাতেই আহিয়ানা ভৌদৌড়ে একেবারে মিনি ছাদে চলে গেলো।সেখানের দোলনায় বসে আদিয়াতকে মনে মনে অনেক ভয়ানক বকাও দিলো।
এদিকে আদিয়াত আহিয়ানাকে এইভাবে ভয় পেতে দেখে হাসতে হাসতে কফি আনতে চলে গেলো।

—–

-” দরজা খোল এশা মামুনি।”

-” মা আমার দরজা খোল এইভাবে কাল থেকে নিজেকে ঘরবন্ধি করে রাখলে কিভাবে হবে?”

-” মা দরজা খোল।পাগলামো করিস না।”

এক নাগারে এশাকে ডেকে চলেছে এশার বাবা মা।কিন্তু এশা টু শব্দও করছে না।কেন যেন ওর গলা দিয়ে কোন আওয়াজই বের হচ্ছে না।কন্ঠনালিতে কথাগুলো আটকে বাজেভাবে ব্যাথা করছে।এতো কষ্ট,এতো যন্ত্রনা কিভাবে সহ্য করবে সে?সবটা তো মেনে নিয়েছিলো।আদিয়াত আর আহিয়ানা যেন সুখে থাকে সেই দোয়া করেছিলো ও।তবে আজ কেন?এতো কষ্ট লাগছে।কেন মনে হচ্ছে ওর কলিজাটা কেউ ওর বুক চিরে বের করে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে।নিজের মন, মস্তিষ্ক সব শূন্য মনে হচ্ছে।বুকটা হাহাকার করছে।নিজেকে পাগল, পাগল লাগছে ওর।দুহাতে চুল টেনে ধরে সারাঘর পায়চারি করলো।কিভাবে সে এই কষ্টগুলো কমাবে?কিভাবে? এশা কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে ওয়াশরুমে ছুটলো।কল ছেড়ে ইচ্ছামতো চোখে মুখে পানি দিলো।তারপর ওযু করে জায়নামাজ বিছিয়ে আল্লাহ্ তায়ালার দরবারে এই কষ্ট যাতে কমে যায় সেই দোয়া করলো।

-” হে রাব্বুল আলামিন।আমার কষ্টগুলো কমিয়ে দেও।আমাকে সবটা সহ্য করার ক্ষমতা দেও আল্লাহ্।আমি যেন নিজেকে সামলাতে পারি।আমি কান্না থামাতে পারতেছি না আল্লাহ্।কিন্তু আমি তো কাঁদতে চাই না।কেন কাঁদবো?আদিয়াত তো সুখে আছে তাই না?আমার ভালোবাসার মানুষটি সুখে থাকলেই তো আমি সুখি।আর কি চাই বলো?হে আমার প্রতিপালক,পরম দয়াশীল আমাকে তুমি শক্তি দেও।আমার বুকটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে আল্লাহ্।আমাকে এই কষ্ট থেকে নিস্তার দেও।আমার ভালোবাসার মানুষটি যেন সুখে থাকে আল্লাহ্।আমার দোয়াগুলো কবুল করো। আমি তোমার দরবারে আজ ভিক্ষা চাইছি হে আমার রাব্বুল আলামিন।আমার দোয়া কবুল করো।”

এশা আল্লাহ্ দরবারে হাউমাউ করে কাঁদছে।ওর প্রতিটি আর্তনাদ যেন কতোশতো কষ্টে মোড়ানো তা বলে বুজানো সম্ভব না।তবুও সে সামলে উঠবে।নিজের মনকে সামলাবে।কাঁদবে না,ভেঙ্গে পরবে না।
ইসস, ভালোবাসা হারানোর যন্ত্রনা যে মৃত্যু যন্ত্রনা থেকেও বেশি।এর থেকে মৃত্যুও ভালো।ভালোবাসায় যেমন সুখ বিরাজমান আবার দুঃখ ও বিরাজমান।তবে এক তরফা ভালোবাসাগুলো সত্যিই অনেক পবিত্র।
—–

আহিয়ানা দোলনায় বসে পা দোলাচ্ছিলো।তখনি আদিয়াত ধপ করে কফি হাতে ওর পাশে বসে পরলো।আহিয়ানা চমকে উঠে।সে ভয় পেয়ে গিয়েছিলো।

-” এইভাবে কেউ বসে?আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তো।”

আদিয়াত একটা কফির মগ আহিয়ানার হাতে দিয়ে কিছু বললো না।সামনে উদয়মান সূর্য উঠা দেখতে লাগলো।আহিয়ানা এখনো তাকিয়ে আছে আদিয়াতের দিকে।সূর্যের হালকা হলদে আলোতে কি সুন্দর দেখাচ্ছে আদিয়াতের মুখশ্রী।নামাজ পরায় যেন চেহারার সৌন্দর্য দ্বিগুন বেরে গিয়েছে।
এই লোকটার সব কিছুই সুন্দর।তার চুল! ওই সিলকি চুলগুলো আহিয়ানার এলোমেলো করে দিতে ইচ্ছে করে।তার কপাল! এই কপালে গভীরভাবে নিজের আদুরে স্পর্শ দিতে ইচ্ছে করে।তার চোখ! সেই চোখের সাগরে আহিয়ানার তলীয়ে যেতে ইচ্ছে করে।তার গাল।ওই ফর্সা গাল দুটো টেনে দিয়ে বাচ্চাদের মতো আদর কর‍তে ইচ্ছে করছে।ফর্সা নাকটা টেনে লাল করে দিতে ইচ্ছে করে।আর ঠোঁটে! এক ঢোক চিপলো আহিয়ানা।এই ডার্ক রেড ঠোঁটজোড়াতে।নাহ, আর ভাবতে পারলো না।লজ্জায় ওর গাল দুটো লাল হয়ে গেলো।এমতাবস্থায় আদিয়াতের আরো ভয়ানক একটা কথায় আরো নেতিয়ে গেলো মেয়েটা।

-” আমার দিকে তাকিয়ে, আমাকে নিয়ে নানান চিন্তা করে লজ্জায় লাল নীল হয়ে যাচ্ছিস।এখন আমি যে তোকে এইভাবে দেখে বেসামাল হয়ে যাচ্ছি।সেটা কি হবে?আমার বুকে যে তুই আগুন ধরিয়ে দিচ্ছিস।তোর আগুনে জ্বলসানো রূপ দিয়ে তার কি হবে?বলতে পারিস?”

#চলবে________

ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।