তোমার প্রেমের ছোঁয়ায় পর্ব-০৩

0
700

#তোমার_প্রেমের_ছোঁয়ায়💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ০৩
মুখ উঠিয়ে দরজার সামনে দাঁড়ানো ব্যাক্তিকে দেখেই সিয়া স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো।আর ওকে এমন তব্দা খেয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সামনের ব্যাক্তিটি দুষ্টু হাসি দিয়ে ওকে সরিয়ে ভীতড়ে ডুকে গেলো।সিয়া এখনো হা করে তাকিয়ে আছে ব্যাক্তিটির দিকে। রান্নাঘর থেকে সিয়ার মা আবারো জিজ্ঞেস করলো,

–” কিরে সিয়া তোর বাবা এসেছি কি?বলছিস না কেন?”

সিয়ার কোন সারাশব্দ না পেয়ে তিনি চুলো বন্ধ করে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসলেন।

–” কিরে তোর কি হলো কথা বলছিস…..”

সামনে তাকাতেই তিনিও বাকরুদ্ধ।কিছুক্ষন ফ্রিজ হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে।চিৎকার করে কেঁদে উঠে দ্রুত গিয়ে ব্যাক্তিটিকে জড়িয়ে ধরলো।ব্যাক্তিটিকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কান্না করছে।ব্যাক্তিটিও ছলছল চোখে তাকে জড়িয়ে ধরে আছে কিন্তু ঠোঁটে তার প্রাপ্তির হাসি। ব্যাক্তিটি উনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে উঠে,

–” হুসস! হয়েছে তো আম্মু! আর কতো কাঁদবে?আমি কি মরে গেছি না-কি যে এতো কান্না করছো?কোথায় এতোদিন পর বাড়িতে আসলাম আমাকে একটু আদর যত্ন করবে। তা না বাচ্চাদের মতো ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদছো।”

সিয়ার আম্মু তাকে ছেড়ে দিয়ে ব্যাক্তিটির বাহুতে চাপড় মেরে বললেন,

–” ধুর শয়তান ছেলে কিসব বলছিস?কতোদিন পর তোকে দেখলাম। তাই কান্না করে দিয়েছি।আর তুই এসব কি অলুক্ষনে কথা বলছিস!”

ব্যাক্তিটি দু-হাতে মায়ের চোখের জল মুছে দিয়ে। মায়ের পায়ের কাছে বসে পা ধরে সালাম করলো।মাও হাসিমুখে ছেলেকে দোয়া করে দিলো।ব্যাক্তিটি উঠে নিজের মাকে জড়িয়ে ধরে আদুড়ে গলায় বলে,

–” এখন বলো আমার আম্মু কেমন আছে?”

মা ছেলের বুকে চুপটি করে সুয়ে থেকে বলে,

–” কোন মা কি তার সন্তানকে মিলো দূরে রেখে ভালো থাকতে পারে?”

ব্যাক্তিটি হেসে দিয়ে বলে,

–” এখন তো আমি এসে গেছি।এইবার আর কোন কান্না কাটি হবে না।যেখানে আদিয়াত আছে সেখানে দুঃখ কি করে আসে?”

মা ছেলের কথার মাজেই সিয়া ধুপ-ধাপ পা ফেলে ধুম ধরাম করে রুমে চলে গেলো।মা ছেলে একে অপরের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
আদিয়াত আর সিয়ার মায়ের নাম সেহরা জাহান তিনি সিয়া যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,

–” নেহ সামলা এইবার তোর বোনকে। সেই এক সপ্তাহ ধরে কতো প্লানিং তোকে নিয়ে।আর তুই তাতে এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে এক ঘন্টা আগেই এসে পড়েছিস।এইবার তুফান তুই থামাবি।”

আদিয়াত ভাব নিয়ে বলে,

–” আমি কি জানি?যে ও এতো রেগে যাবে?আমি তো আরো তোমাদের সার্প্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম।”

তারপর থেমে গিয়ে আবারো বলে,

–” যাই মহারাণীকে মানিয়ে নিয়ে আসি।”

সেহরা জাহান হাসতে হাসতে রান্নাঘরের দিকে যেতে গিয়ে বলেন,

–” দেখিস আবার খামছি খেয়ে মুখ লাল করে ফেলিস না।”

আদিয়াত মায়ের কথায় হেসে দিয়ে চললো বোনকে মানাতে।
.

বিছানায় মুখ ফুলিয়ে বসে আছে সিয়া সে আপাততো অনেক রেগে আছে।দীর্ঘ পাঁচ বছর পর তার ভাই আসলো।কতো প্লানিং করে ছিলো।আর তার ভাই সব ভেস্তে দিয়ে আগেভাগেই চলে এসেছে।কথা বলবে না সে তার ভাইয়ের সাথে।একদম বলবে নাহ।
রুমের দরজা ঠেলে ভীতরে ডুকলো আদিয়াত।বোনকে বিছানায় মুখ ফুলিয়ে বসে থাকতে দেখে মৃদ্যু হাসলো।বোনটা তার আসলেই অনেক বড় হয়ে গিয়েছে।ভিডিও কলে কথা বললেও কতোটুকু আর বোঝা যায়।এখন দেখছে অনেকটাই বড় হয়ে গিয়েছে।কোথায় ১৩ বছরের পুচকু সিয়াকে রেখে গিয়েছিলো আর এখন কোথায় ১৮ বছরের সিয়া।তবে হাতে পায়ে বড় হলেও বোনটা তার আগেই মতোই বাচ্চা আছে।আদিয়াত ধীর পায়ে বোনের পাশে গিয়ে বসলো।তা দেখে সিয়া আঁড়চোখে তাকিয়ে আবারো মুখ ঘুরিয়ে নিলো।আদিয়াত এইবার উঠে গিয়ে বোনের সামনে দু কানে হাত দিয়ে বসে পড়লো।তারপর বলে,

–” এইযে আদিয়াত কানে ধরে ক্ষমা চাইছে। সিয়া কি তার ভাইকে ক্ষমা করবে না!”

সিয়া কিছুই বললো না।মুখ ফুলিয়ে রইলো।আদিয়াত বিভিন্নভাবে বোনকে মানানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু সিয়া কিছুই বলছে না।আদিয়াত এইবার মন খারাপ করে বলে,

–” ঠিক আছে কেউ যেহেতু আমার সাথে কথা বলবে না।তো কি আর করার আমি তাহলে আবার চলে যায় এব্রোডে।”

আদিয়াত চলে যাওয়ার অভিনয় করতেই সিয়া দৌড়ে গিয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।আর পিঠে কিল ঘুশি দিতে লাগলো।

–” বজ্জাত, তুই একটুও ভালো না।আমি কতো দিন ধরে প্লান করেছিলাম আমি তোকে রিসিভ করতে যাবো।তুই এটা কি করলি?”

আদিয়াত হেসে দিয়ে বোনকে দুহাতে জড়িয়ে নিয়ে বলে,

–” তাহলে আমি আবার চলে যাই।তারপর আবারও আসি তখন তুই আমাকে রিসিভ করতে যাস।”

সিয়া ভাইয়ের বাহুতে ঘুশি মেরে দিলো।কলিংবেলের আওয়াজে সিয়া ভাইকে ছেড়ে দাঁড়ায়।সিয়া বলে,

–” পাপা এসেছে বোধহয়।”

–” হুম চল বাবার সাথে দেখা করি।”

দু ভাই বোন চললো তাদের বাবার সাথে দেখা করতে।হাসান আহমেদ সিয়া আর আদিয়াতের বাবা।বাবার সাথে আদিয়াত দেখা করলো।ছেলেকে এতোদিন পর দেখে হাসান আহমেদ নিজেকে সামলাতে পারেননি। ছেলেকে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি ছেড়ে দিলো।অনেকক্ষন বাবার সাথে জড়িয়ে রইলো।আদিয়াত সবার সাথে কথাবার্তা বললো।বিদেশ থেকে যা যা গিফ্ট এনেছে সবাইকে দিলো।সেহরা জাহান এইবার আদিয়াতকে বললো ফ্রেস হয়ে নিতে বললো। দুপুরের খাবার সময় হয়ে এসেছে।সবার সাথে কথা বলেও আদিয়াতের চোখ আরেকজনের দেখা পাওয়ার জন্যে এদিকওদিক তাকাচ্ছিলো।কিন্তু সাহস করে জিজ্ঞাসা করতে পারেনি। সিয়া ব্যাপারটা খেয়াল করলো কিন্তু তাও কিছু বললো না।সময় হোক তখন সে সবটা বলবে।আর তার আগে যদি ও নিজেই জিজ্ঞাসা করে তো তাহলে আরো ভালো।
_______
আহি ঘুমোচ্ছে।চেহারায় তার ক্লান্তির ছাপ।সে ক্লান্ত অনেক ক্লান্ত। নিজের সাথে লড়তে লড়তে এতোটাই ক্লান্ত যে ওর আর বাঁচতেই ইচ্ছে করে না।
হঠাৎ মুখের উপরে কারো গরম নিশ্বাস টের পেয়ে চোখ পিটপিট করে তাকালো আহি।ঝাপসা দৃষ্টি যখন স্পষ্ট হয়ে আসলো সামনে বসা ব্যাক্তিটিকে দেখে আহি হুরমুরিয়ে উঠে বসলো।চোখজোড়া বড়বড় করে তাকিয়ে থেকে কাঁপা গলায় ডেকে উঠে,

–“আ..আদি…আদিয়াত ভা..ভাইয়া!”

আদিয়াত নিজের মুখটা আহির দিকে নিয়ে গেলো।এমনটা হওয়ায় আহি দ্রুত অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে চোখ বন্ধ করে বিছানার চাঁদর খামছে ধরলো।আজও আজও সে আদিয়াতের উপস্থিতি নিজের কাছে সয্য করতে পারে না।তার হৃদপিন্ডট নামক যন্ত্রটা এতো জোড়েজোড়ে ধুমধারাম শব্দ করে ঢোল বাজায় যে মনে হয় এই বুজি সে এখনোই মারা যাবে।আদিয়াত আহি’র কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,

–” তুই আজও আমার সামনে নিজেকে স্থির রাখতে পারিস না আহি! কারন তুই আমাকে যতোই ভুলার চেষ্টা করিস না কেন? তুই তা কখনোই পারবি না।কারন আমি যে তোর প্রতিটা রন্দ্রে রন্দ্রে মিশে গেছি।তুই চাইলেই আমাকে নিজের থেকে আলাদা করতে পারবি না।কারন তুই আজও ভালোবাসিস আমাকে।”

আহি পারছে একটুও সয্য করতে পারছে না।আদিয়াতের ওর কাছে আসা আর এইসব কথা ওকে দূর্বল করে দিচ্ছে।কিন্তু ও চায়না দূর্বল হতে।চায়না কারো কাছে নিজেকে দূর্বল করতে।সে আর আদিয়াতকে ভালোবাসে না।একটুও ভালোবাসে না।সে ভুলে গেছে আদিয়াতকে।পাঁচ বছর আগেই আদিয়াতের জন্যে যে ভালোবাসা ওর হৃদয়ে ছিলো সেটা মাটি চাপা দিয়ে দিয়েছে।নেই কোন ভালোবাসা নেই ওর হৃদয়ে।
আহি দু-হাতে ওর কান চেপে ধরে চিল্লিয়ে উঠে,

–” না নেই কোন ভালোবাসা নেই।আমি কাউকে ভালোবাসি না।আহি মরে গেছে।যে আহি আদিয়াতকে পাগলের মতো ভালোবাসতো সেই আহি মারা গেছে।তুমি নিজ হাতে মেরে দিয়ে চলে গেছো আদিয়াত ভাইয়া।এখন আর আমি তোমাকে ভালোবাসি না।আমি আমার নিজেকেই ভালোবাসি না।তুমি কেন এসেছো আমার কাছে।চলে যাও।আমি আর চাইনা তোমাকে।না তোমাকে চাই আর না ভবিষ্যতে তোমাকে চাইবো।চলে যাও তুমি চলে যাওওও!”

ধপ করে দ্রুত চোখজোড়া খুলে উঠে বসলো আহি।জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিতে লাগলো।একি স্বপ্ন দেখলো সে।এমন স্বপ্ন সে আগে কখনো দেখেনি সে।এমন স্বপ্ন দেখার মানে কি? তবে কি আদিয়াত ফিরে এসেছে! নাহ নাহ আহি কেন ভাবছে এতোটা আহি ভাববে না।আদিয়াত আসুক আর নাহলে যা মন চায় করুক তাতে ওর কি?আহি’র কিছু যায় আসে না এতে।আর এতোদিনে তো বোধহয় আদিয়াত সুন্দরী কোন মেয়ে দেখে বিয়েও করে নিয়েছে।তাহলে সে কেন শুধু এসব ভাবছে। না সে আর ভাববে না।কিন্তু এই অসভ্য মনটাকে আহি কিভাবে বুজাবে?কিভাবে বুজাবে সে।এইযে আদিয়াত বিয়ে করে নিয়েছে কথাটা চিন্তা করতেই তো তার বুকে ব্যাথা করছে।আহি শুকনো গলায় ঢোগ গিলে পাশের টেবিল থেকে পানি নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নিলো।না তাকে একটা লম্বা শাওয়ার নিতে হবে।তাহলেই ভালো হবে।আহি উঠে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো শাওয়ার নিতে।

#চলবে___________

ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।