তোমার প্রেমের ছোঁয়ায় পর্ব-০৫

0
647

#তোমার_প্রেমের_ছোঁয়ায়💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ০৫
সেহরা খান মনমরা হয়ে রান্না করছেন।মনটা তার একটুও ভালো নেই।একটুও না! ছেলেটা তার এসেছে পাঁচ দিন হয়ে গেলো।অথচ এখনো প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হয় না।হলো কি তার ছেলেটার।এমন তো সে ছিলো না।ছেলেটা তার হাসিখুশিতে ভরপুর ছিলো অথচ এখন কেমন কয়েকদিন যাবত মনমরা সে।না এমন চলতে দেওয়া যাবে না।কথা বলবেন সে আদিয়াতের সাথে।তাছাড়া অনেক বছর তো হলো এইবার বিয়েটাও করিয়ে দিতে হবে ছেলেটাকে।তাহলে এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে।উনার ভাবনার মাজেই কলিংবেল বেজে উঠে।সেহরা জাহান রান্নার আঁচটা কমিয়ে দিয়ে গিয়ে দরজা খুলতে চলে যান।
দরজা খুলতেই সেহরা জাহান দেখতে পান চারটা হাসি হাসি মুখ। সেহরা জাহান উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলেন,

–” আরে তোরা এসে পড়েছিস! আমি তোদের জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম আয় আয় ভিতরে আয়।”

চারজন সমানতালে ড্রয়িংরুমে সোফায় গিয়ে বসলো। সেহরা জাহান দ্রুত পায়ে হেটে রান্নাঘরে যেতে যেতে বলেন,

–” তোরা বস আমি তোদের হালকা নাস্তা দিচ্ছি।”

উনার কথা শুনে পাশ থেকে একটা মেয়ে মিষ্টি হেসে বলে,,

–” তুমি যাও তো আন্টি তোমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে আসো।গাধাটা আসার পর আমাদের সাথে একবারও দেখা করলো না।বিদেশ গিয়ে একেবারে ভুলে গেছে।”

সেহরা জাহান হাসলেন।পরম যত্নে মেয়েটির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

–” কষ্ট পাস না মা।এখন যখন এসেছে তোরা ওকে নিজের মতো করে ঠিক করে নেহ।”

সেহরা জাহান চলে গেলেন ছেলেকে ডাকতে।আর মেয়েটি গেলো রান্নাঘরে নাস্তা বানাতে।

এই চারজন হলো আদিয়াতের প্রানের বন্ধু।।ছোট থেকে বড় হওয়া সব একসাথে ওদের।কেউ কাউকে ছাড়া কিছু বুজে না।আদিয়াত আমেরিকা গিয়েও প্রতিদিন ওদের সাথে কথা বলতো।এদের চারজনের মাজে দুজন মেয়ে আর দুজন ছেলে।
জাহিন,সোহেব,এশা, রোজা আর আদিয়াত পাঁচ বন্ধু।এখানে আবার সোহেব আর রোজা জমজ ভাইবোন।শুধু দেড় মিনিটের ছোট বড়।এশা নাস্তা নিয়ে আসতেই রোজা আয়েশ করে বসে একগ্লাস জুস আর চিকেন ফ্রাই হাতে নিলোম।জাহিন ঠাট্টা করে বলে,

–” কম খা! আর কতো খাবি?একটু আগেই না তোরে বার্গার খাওয়ায় আনলাম?”

রোজা ধুপ করে এক কিল বসালো জাহিনের পিঠে।ফুসে উঠে বলে,

–” হারামজাদা আমার খাবারে নজর দিবি না।”

এশা হেসে বলে,

–” জাহিন কেন শুধু রাগাচ্ছিস?দেখিস না ও খায় ঠিকই কিন্তু স্বাস্থ্য হয়না। সেই তো ঠিক কংকালের মতো।”

রোজা চিকেন ফ্রাইয়ে কামড় বসিয়ে। চোখ রাঙিয়ে বলে,

–” হবে কিভাবে?দিন রাত ২৪ ঘন্টা এই হনুমানটা আমার খাবারে নজর দিয়ে রাখে।তো আমি মোটা হবো কিভাবে?”

সোহাব এইবার বোনকে থামালো,

–” রোজা থাম! তুই খা শুধু আর ঝগরা করিস না।এতোদিন পর আদিয়াতের সাথে দেখা করবো এটলিস্ট আজ এমন করিস না।”

সোহেবের কথার যুক্তিতে আর কেউ কিছু বললো না।বসে বসে আদিয়াতের জন্যে অপেক্ষা করতে লাগলো।
.
সেহরা জাহান ছেলের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।সেদিনের পর থেকে কেমন একটা জড়তা কাজ করছে তার মাজে।তবুও সাহস নিয়ে দরজায় ঠক ঠকালো।ভীতর থেকে ছেলের ভরাট গলা শোনা গেলো।সেহরা জাহান দরজা ঠেলে ভীতরে প্রবেশ করলেন।পুরোঘর অন্ধকার করে রেখেছে ছেলেটা।সেহরা জাহান কোনরকম হাতরিয়ে গিয়ে জানালার পর্দা সরিয়ে দিলেন।আকস্মিক সূর্যের আলো চোখে পড়ায় আদিয়াত চোখ মুখ কুচকে মাকে বলে,

–” উফফ মা এটা কি করলে?তাকাতে কষ্ট হচ্ছে।”

সেহরা তাকালো ছেলের দিকে।আদিয়াতের বেডের চারদিকে নিচে দিয়ে সোফার মতো সিস্টেম মানে বসা যায়।আদিয়াত সেখানে বসে আছে। সেহরা জাহান আরো খেয়াল করলেন ছেলের হাতে একটা ছবির ফ্রেম।আর ছবিটা আহির।সেহরা ব্যর্থতার দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। ছেলের কাছে গিয়ে বেডে বসে আদিয়াতের চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

–” আর কতোদিন এরকম থাকবি?”

–” ভালো লাগছে না মা।”

আদিয়াত মায়ের কোলে মাথা দিলো।

–” নিচে চল।”

–” ভালো লাগে না।”

— কি ভালো লাগবে তোর? এক সপ্তাহ ধরে এমন করছিস।কেন এমন করছিস?তুই কি চাস আমি মরে যাই?”

আদিয়াত দ্রুত মাকে ছেড়ে দিয়ে চিল্লিয়ে উঠে,

–” মা।।। কিসব বলছো?”

সেহরা তেঁতিয়ে উঠে বলে,

–” হ্যা ঠিকই বলছি।তুই তো এটাই চাস।”

–” কি চাও তুমি?”

–” আপাততো নিচে যা।”

আদিয়াত বিরক্ত হয়ে বলে,

–” কেন নিচে যাবো কেন?কোন সমস্যা?”

সেহরা ছেলেকে জোড় করে উঠাতে উঠাতে বলেন,

–” নিচে গিয়ে তো দেখবি চল।”

–” উফ! আচ্ছা চলো।”
.

মায়ের জোড়াজোড়িতে নিচে বসার ঘরে আসতেই।বিষ্ময় চোখে চেয় থাকে আদিয়াত। ওর চার বন্ধু এখানে এসেছে।নানা রকম চিন্তাভাবনার মাজে তো এই কলিজার টুকরোদের কথা ভুলেই গিয়েছিলো সে।আদিয়াতের মুখে হাসি ফুটে উঠে দ্রুত গিয়ে নিজের প্রাণপ্রিয় বন্ধুদের গিয়ে জড়িয়ে ধরে।কুশলাদি বিনিময় করে।
সোহেব বলে,

–” মামা তুই তো আমাদের ভুলেই গেছিস আমেরিকা থেকে এসে।মানে আমরা এখন কেউ না?”

আদিয়াত শ্বাস নিলো।অসহায় হয়ে বলে,

–” সরি রে দোস্ত আসার পর থেকে প্রচুর ডিপ্রেসড আছি।”

রোজা হাসলো।চমৎকার সেই হাসি।বললো,

–” আরে দোস্ত খাবি, দাবি, ঘুমাবি, ফুর্তি করবি প্যারা নাই চিল।”

আদিয়াত হেসে দিলো রোজার কথায়।এশা রোজার মাথায় গাট্টা মেরে দিলো।রোজা মাথায় হাত বুলিয়ে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।
জাহিন বলে,

–” কি কারনে এতো ডিপ্রেসড তুই।আমাদের বল।আমরা তোর বন্ধু আর এতো বছরে আমাদের মাজে কোন সিকরেট আমরা কোনদিন রাখিনি।আশা করি তুইও রাখবি না।”

আদিয়াত শ্বাস নিলো আবার ছাড়লো।তারপর বললো,

–” আমার ডিপ্রেসড এর কারন ‘আহিয়ানা’।”

সোহেব অবাক হয়ে বলে,

–” আহিয়ানা মানে আহি?”

–” হ্যা!”

এশার মুখ চুপসে গেলো।পাঁচ বছর ধরে তো ভালোই চলছিলো আবার কেন সেই মেয়ের নাম উল্লেখ হচ্ছে।কেন সেই মেয়েকে আবারো টেনে আনা হচ্ছে।তবে কি সে আদিয়াতকে পাবে না?এশা মনের দুঃখ মনে রেখে চুপ করে রইলো।চুপসানো মুখ নিয়েই আদিয়াতের কথায় মনোযোগ দিলো।

জাহিন বলে,

–” শুনছিলাম আহি না-কি চলে গেছে এখান থেকে।”

আদিয়াত মন খারাপ করে বলে,

–” হ্যা সেটাই তো।কিন্তু কেন চলে গেলো সেটাই ভেবে পাচ্ছি না আমি।”

সোহেব চিন্তিত স্বরে বলে,

–” ও না তোকে ভালোবাসতো?”

আদিয়াত নির্বিঘ্নে বলে,

–” হ্যা!”

–” তবে চলে গেলো কেন?”

–” সেটার উত্তরই আমি আজ এক সপ্তাহ ধরে খুচ্ছি।কিন্তু কিছুতেই কিছু মিলাতে পারছি না।”

সবাই নিরব রইলো কিছুক্ষন।জাহিন হঠাৎ হাসিমুখে বলে,

–” তুই চিন্তা করিস না।আমরা আছি না আমরা আহিকে খুজে বের করে দিবো।একদম বিন্দাস মুডে থাক।আর হ্যা রাতে চল ক্লাবে যাই তোর মুড ঠিক হয়ে যাবে।”

আদিয়াত নাকচ করলো,

–” না রে ইচ্ছে নেই ভালো লাগছে না।”

এশা এইবার মিষ্টি করে হেসে বলে,

–“চল না দোস্ত।আজ কতোবছর পর আমরা একসাথে একটু আনন্দ উপভোগ করি।তুই এমন থাকলে আমাদেরও ভালো লাগে না আর জাহিন বললো তো আমরা তোকে হেল্প করবো আহিকে খুজতে চল না প্লিজ।”

আদিয়াত বন্ধুদের দিকে তাকালো।তারা অধীর আগ্রহে তার দিকে তাকিয়ে আছে।আদিয়াতের মন সায় দিলো না তাদের না করে দিতে।এতো বছর পর বন্ধুদের সাথে দেখা।সব টেন্সন সাইডে রেখে তাদের সাথে নাহয় একটু সময় কাটাক।এতে তার ভালো লাগবে।আর তার সান্নিধ্য পেয়ে বন্ধুদের মন্ব ভালো হয়ে যাবে।আদিয়াত রাজি হয়ে গেলো।
সব বন্ধুরা মিলে আজ ক্লাবে গিয়ে আদিয়াতের ফিরে আসার সেলিব্রেশন করবে।
কিন্তু আদিয়াত কি আদৌ জানে যে তার জন্যে ভাগ্য কতো বড় শক রেডি করে রেখেছে।
সে কি পারবে সেইখান থেকে নিজেকে সামলে নিতে।দেখা যাক কি হয়?

#চলবে_________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।