তোমার প্রেমের ছোঁয়ায় পর্ব-০১

0
1278

#তোমার_প্রেমের_ছোঁয়ায়💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ০১

ক্লাবের একটি ভি-আই-পি রুমে টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে সুয়ে আছে একটি মেয়ে।মেয়েটির কোন হুশ নেই।মেয়েটি টলতে টলতে কোনরকম উঠতে নেয় কিন্তু পারে নাহ।এতোটাই মাতাল হয়েছে যে তার শরীরে বিন্দু পরিমান কোন শক্তি নেই।মেয়েটি নিজের সাথে অনেক যুদ্ধ করে শেষমেষ টেবিল থেকে মাথা উঠিয়ে বসে।চোখের পাতা টেনেটেনে খুলে সব ঝাপসা ঝাপসা দেখছে।কোনরকম হাতরিয়ে টেবিলের পাশ থেকে লাইটার আর সিগারেট নিয়ে। সেটা নিজের মুখে পুরে দিয়ে লাউটার দিয়ে সিগারেটটা ধরালো।তারপর বেশ আয়েশী ভঙিতেই সিগারেট টানতে লাগলো।তারপর আবারো গ্লাসে ওয়াইন ঢেলে সেই সাথে ওয়াইন খেতে লাগলো।এরই মাজে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসলো একটি ছেলে। সে এসেই মেয়েটির সামনে বসে পড়লো।ছেলেটির চোখে জল টলমল করছে।ছেলেটি কিছু বলতে চাইছে তাও যেন ওর গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে নাহ।তবুও অনেক কষ্টে বলে উঠে,

–” আহি! লক্ষিটি প্লিজ আমার কথা শোনো।প্লিজ আর এইসব খাস না।প্লিজ বাড়িতে চল।অনেক রাত হয়েছে।”

ছেলেটি যখন ওই মেয়েটি মানে আহিকে ধরে উঠাতে চাইলো।আহি ঝাটকা মেরে নিজের হাতটা সরিয়ে দিলো।তারপর ভয়ংকর এক চাহনী নিক্ষেপ করে ছেলেটির দিকে।
ভাঙা ভাঙা গলায় আক্রোশ নিয়ে বললো,

–” হুয়াই ডিড ইউ কেম হিয়ার?হুয়াই? হাহ্!আমি বা..বারন করেছিলাম না নিহান ভাইয়া?ইট্স মাই লাইফ,মাই রুল্স। ডোন্ট ডেয়ার টু ইন্টারফেয়ার ইন মাই লাইফ।আদারওয়াইজ আমি ভুলে যাবো তুই আমার বড় ভাই।”

নিহান বোনের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে।চেয়েও কিছু বলতে পারছে না সে। নিজের আদরের বোনটাকে এইভাবে তিলে তিলে মর‍তে দেখে কোন ভাই বা সয্য করতে পারে।
হ্যা ও মানছে ও আহি ওর আপন বোন না। তবে আপন বোন থেকেও বেশি ভালোবাসে ও আহিকে।
আহি টলতে টলতে নিহানের পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিতেই পরে যেতে নেয়।নিহান দ্রুত নিজের বোনকে নিজের বাহুডোরে জড়িয়ে নেয়।আহি কিছুক্ষন জোড়াজুড়ি করে কিন্তু ওয়াইন খাওয়ায় ওর শরীরে এতোটা শক্তি নেই।তাই সে নিহানের বুকেই ঘুমিয়ে পড়ে।নিহান বোনের দিকে তাকিয়ে থাকে।ওর চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে তপ্ত একফোটা জল।কোনরকমে চোখের পানিটুকু মুছে বোনকে সাবধানে কোলে তুলে নেয় নিহান।তারপর রুম থেকে বের হয়ে গার্ডদের ক্লাবের বিল প্যে করে দিতে বলে ক্লাব থেকে বেড়িয়ে যায়।
গাড়ির কাছে আসতেই একজন গার্ড গাড়ির দরজা খুলে দেয়।তারপর বোনকে সাবধানে গাড়িতে বসে নিজেও গাড়িতে উঠে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
—————
বাড়িতে আসতেই নিহান গাড়ি থেকে নেমে বোনকে কোলে তুলে নেয় তারপর গার্ড্সদের ইশারা করে বাড়ির কলিংবেল বাজাতে।।
কলিংবেল এর আওয়াজ আসতেই একজন মহিলা যিনি নিহানের মা সে আপনমনে বলতে লাগলেন,

–” নিয়ে এসেছে জমিদারের বেটিকে।যবে থেকে এ বাড়িতে এসেছে কাউকে শান্তি দেয়না।আগে যাও একটু ছিলো এখন তো পুরাই নেশাখোর হয়ে গিয়েছে।কবে জানি আমার ভোলাভালা ছেলেটাকেও গিলে নেয়।কোন কুক্ষনে যে এটাকে বাড়িতে এনে তুলেছিলাম।আমাদের জীবনটাই বিশিয়ে তুললো।”

নিহানের মাকে এইসব বলতে দেখে নিহানের দাদি রাগী গলায় বলে উঠেন,

–” বউ মা! ভুলে যাবে না এই বাড়িতে ওকে তুমি নিয়ে আসোনি?এটা ওরই বাড়ি আর তুমি আহি দাদুমনির বাড়িতেই থাকছো। মুখ সামলে কথা বলবে।তোমার এই বাড়তি কথার জন্যে না জানি কবে তোমাকে খুব পস্তাতে হয়।আর এটাও মনে রাখবে আহি’র এই করুন অবস্থার জন্যে একমাত্র তুমি আর আমার ছেলে দ্বায়ি।মেয়েটাকে আগে সহজ সরল পেয়ে যা নয় তা করিয়েছো।তারপরেও তোমাদের কাছে ভালো হতে পারলো না।আর এখন তোমাদের কারনে ওর এই অবস্থা।মদ খায়,সিগারেট খায়,ক্লাবে যায়।তোমাদের কারনে আজ ও এতো খারাপ হয়েছে।”

বলেই দাদি ফুফিয়ে উঠলেন।নিহানের মা উনাকে ভেংচি কেটে দিয়ে দরজা খুলতে চলে গেলেন।
দরজা খুলতেই উনার চোখ চরকগাছ।নিহান আহিকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
এটা দেখেই মনে হয় তার মাথা একশ ডিগ্রী গরম হয়ে গেলো।সে রেগে হুংকার দিয়ে বললো,

–” এসব কি নিহান?তুই ওকে কোলে নিয়ে কেন এসেছিস?”

নিহান মায়ের কথায় বিরক্ত হয়ে তাকালো।তারপর বললো,

–” উফফ মা! দেখছো ওর হুশ নেই।তবুও কেন এইসব বলছো?এখন সরো ওকে রুমে দিয়ে আসি।”

–” হ্যা হ্যা! আমার কথা তো এখন বিরক্তই লাগবে।আমার ছেলেকেও বশ করে নিয়েছে অলুক্ষনে মেয়ে একটা জন্মের পর মা, বাবা কে তো খেয়ে নিয়েছেই তারপর আবার বিয়ে…..”

নিহান ওর মাকে থামিয়ে দিয়ে কড়া গলায় বলে,

–” তোমার এই ফালতু কথা বলা কবে বন্ধ করবে?বলেছি না এইসব কথা তুলবে নাহ!
কেন বার বার ওই একই টপিক নিয়ে পরে থাকো! এখন সরো আমার সামনে থেকে।”

নিহান আহিকে নিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো।এদিকে নিহানের মা আবারো আহিকে নানান কথা শুনাতে লাগলেন।দাদি বিরক্ত হয়ে তার রুমে চলে গেলেন।

নিহান আহিকে সাবধানে বিছানায় সুইয়ে দিলো। বোনের গায়ে কম্বল টেনে দিয়ে এ.সির পাওয়ার বাড়িয়ে দিয়ে রুমের লাইফ ওফ করে ড্রিম লাইট জ্বালালো।তারপর আহির কপালে চুমু খেয়ে উঠে চলে যেতে নিতেই হাত টান লাগে তার।নিহান পিছন ফিরে তাকায় দেখে আহি চোখে জল নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।নিহানের বুকটা ছ্যাৎ করে উঠলো।যতো যাই হোক সে বোনের কষ্ট সইতে পারে না।একদম না।নিহান দ্রুত আহির সামনে হাটু গেড়ে বসে আদুড়ে গলায় বললো,

–” কি হয়েছে আমার বোনটার?কেন সে কান্না করছে?সে কি জানে না ভাইয়ার তার প্রিন্সেসের চোখে পানি দেখতে পারে না।ভাইয়ার কষ্ট হয়।”

নিহানের আদুড়ে কথায় আহি ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে উঠলো।ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বলে উঠে,

–” ভাইয়া! আমি অনেক খারাপ তাই না?কিন্তু আমি তো ভালো থাকতে চেয়েছিলাম ওরাই তো দিলো না আমায় ভালো থাকতে।
মা, বাবা ছেড়ে চলে গেলো।আর.. আর…. ”

কথা জড়িয়ে আসছে আহি’র। আহি থেমে আবারো বলে উঠে,

–” যাকে ভালোবাসলাম সেও আমাকে বুজলো না ভাইয়া! তাহলে আমি কার জন্যে ভালো থাকবো?সে তো আমায় ভালোবাসলো না ভাইয়া। আমার কথা একটি বার ভাবলো না ভাইয়া! সে চলে গেলো আমায় ফেলে সে চলে গেলো বিদেশে। আমি সত্যি এতোটাই তুচ্ছ ছিলাম ভাইয়া?”

নিহানের বোনের জন্যে কলিজা ফেটে যাচ্ছে।সে বোনের এতো কষ্ট সয্য করতে পারছে না।বোনটা তার তিলে তিলে মরে যাচ্ছে।

–” বোন তুই এতোটা ভাবিস না।তোর মাথায় চাপ পড়বে। তুই কারো জন্যে কষ্ট পাবি না।তোর ভাইয়া আছে না।তোর ভাই থাকতে তোর কোন কষ্ট হবে নাহ।”

আহি চোখ বুজলো।চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে তপ্ত অস্রুধারা।ও বিরবির করে বলে,

–” না কষ্ট পাবো না।কিছুতেই কষ্ট পাবো না।আমি স্ট্রং গার্ল।স্ট্রং গার্লরা কারো জন্যে কষ্ট পায় না।”

আহি বির বির করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লো।নিহানের চোখে জল।বোনটা এই জীবনে আর কতো কষ্ট পাবে তা জানা নেই তার।তবে ও চেষ্টা করবে। ওর স্বর্বশ দিয়ে চেষ্টা করবে আহিকে ভালো রাখার।কারো জন্যে আর তার বোনকে কষ্ট পেতে দিবে নাহ।চোখেও মুছে নিহান এক পলক আহি’র দিকে তাকিয়ে থেকে রুমের বাহিরে চলে যায়।
—————-
–” সিয়া তাড়াতাড়ি ঘুমা কাল তোর ভাইয়ার ফ্লাইট।যদি না ঘুমোস তো তোর ভাইকে বলবো তোর জন্যে কিছুই আনতে না।”

মার কথায় সিয়া চোখমুখ কুঁচকে বলে উঠে,

–” দ্যাট্স নট ফেয়ের মাম্মাম।ভাইয়া কাল পাঁচ বছর পর আসছে।আর তুমি আমাকে ব্লাকমেইল করছো?আমি কি এখনো বাচ্চা খুকি না-কি।আমি এখন বড় হয়ে গিয়েছি।”

মেয়ের কথায় তিনি চিল্লিয়ে উঠেন,

–” তোর সাহস বেড়ে গিয়েছে অনেক।দ্বারা তোর বাবা কাল আসুক।তাকে বিচার দেবো বলবো দেখো তোমার মেয়ে দিনদিন আদড় পেতে পেতে বাদড় হয়ে গিয়েছে।আর তুই বড়? হাহ্ মাত্র ১৮ বছর বয়স! থাপ্রিয়ে গাল লাল করে দিবো।বিয়াদপ মেয়ে।”

–” উফফ! মাম্মাম!”

সিয়া কানে বালিশ চাপা দিয়ে সুয়ে পড়লো সে জানে এখন তার মা তাকে হাজারটা কথা শুনাবে যা সে আপাততো শুনতে চায় নাহ।আজ একটা লম্বা ঘুম দিবে।কাল তার ভাই আসবে সেই খুশিতেই সে আত্মহারা।সাত-পাঁচ না ভেবেই সিয়া ঘুমিয়ে পড়লো।
#চলবে______