#তোমার_মাদকতায়_আচ্ছন্ন
#তানজিলা_খাতুন_তানু
(পর্ব _১৪) সত্যের মুখোমুখি 💖
তুহা ভয়েতে কেঁপে উঠছে। ফারাবি ওর হাতটা তুহার হাতের উপরে রাখলো,তুহা ফারাবির দিকে তাকাতেই ফারাবি চোখ দিয়ে আশ্বাস দিলো কিছুই হবে না। চিন্তা করো না।
– মিরাজ খুব বুদ্ধিমান মানুষ। কিন্তু কখনো কখনো পরিস্থিতির চাপে পড়ে বুদ্ধিমান মানুষটাও বোকা হয়ে উঠে তার বড়ো প্রমান মিরাজ।
ফারাবির বাবা কিছুক্ষন থেমে তারপরে বলতে শুরু করলেন..
– তুহা তুমি হয়তো জানো না তোমার বাবার দুটো বোন ছিলো।
– দুটো বোন!
– হুম। তাহা মিরাজের ছোটবোন খুব আদরের তাহার কোনো আবদার কখনোই মিরাজ ফেলতো না। তাহা বয়সে অনেকটাই ছোট তখন মাত্র ১১ এ পড়ছে। একদিন মিরাজ তাহার ঘরে গিয়ে আমার কিছু ছবি দেখতে পাই ভয় ও শঙ্কিত হয়ে পড়ে তাহাকে প্রশ্ন করতে শুরু করে..
অতীত…
– তাহা বোন আমার চুপ করে থাকিস না বল ফারুকের ছবি তোর কাছে কেন।
তাহা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
– বোন আমার বল না দাদাকে।
– দাদা আমি ফারুক দাকে ভালোবাসি।
মিরাজ এক পা পিছিয়ে গেল।
– ফারুক জানে কথাটা।
– না দাদা আমাকে আমার ফারুককে এনে দাও না।
মিরাজ রাগে গজগজ করতে করতে বললো…
-পাগলের মতো কথা বলিস না। ফারুক বিবাহিত আর তোর সাথে ফারুকের বয়সের কতটা ফারাক তুই আবেগের বশে ভুল করছিস বোন। নিজেকে সামলে নে ফারুক কখনোই তোর হবে না।
মিরাজ তাহাকে অনেক বোঝায়। তাহাকে সময় দেয় কিন্তু তাহার পাগলামি ধীরে ধীরে বাড়তেই থাকে। মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকে তখন মিরাজ আর কোনো উপায় না পেয়ে তাহার বিয়ে ঠিক করে। আর সেইদিনই..
তহুরা আর ওর বড়ো ননদ তাহাকে আনার জন্য ঘরে আসতেই দেখে ঘরের দরজা বন্ধকরা। অনেক কষ্ট করে দরজা খোলার পর দেখতে পাওয়া যায় শাড়ি গলায় দিয়ে তাহা ঝু/ল/ছে।
– তাহা বোন আমার।
মিরাজের বাবা মা কেউ ছিলো না দুই বোনকে নিয়েই ওর সবকিছু ছিলো তাহার মৃ/ত্যু টা সহজ ভাবে নিতে পারেনি পাগলের মতো ব্যবহার করতে থাকে। তাহার দাফন করা হয় মিরাজ ওকে লাল শাড়িতে দেখতে চেয়েছিলো কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে সাদা কাফনে দেখতে হলো।
১ মাস কেটে যায়, তবুও মিরাজ তাহার কথা ভুলতে পারে না। তাহার ঘরেগিয়ে কান্নাকাটি করতে থাকে। একদিন, ঘর আলো করে তুহা আসলো, সেইদিন মিরাজ তুহাকে আঁকড়ে ধরে কেঁদেছিলো। মনে হচ্ছিল হারানো তাহাকে ফিরে পেয়েছিলো। তাহার সাথে নাম মিলিয়ে তুহা রাখলো।
মিরাজ প্রতিদিন কাজ সেরে তাহার ঘরে গিয়ে তাহার সাথে সময় কাটাতো কল্পনায়। একদিন তাহার ঘর থেকে একটা চিঠি পাই,চিঠিটা তাহার বিয়ের দিনের লেখা।।
প্রিয় দাদা.
যখন তুমি এই চিঠিটা দেখবে তখন আমি আর এই পৃথিবীতে থাকবো না। আমাকে মাফ করে দিও। আমি পারলাম না ফারুকের মায়া থেকে বের হয়ে নতুন করে কাউকে ভালোবাসতে পারলাম না। তাই এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিলাম। ভালো থেকো দাদা।
ইতি____
তাহা।
চিঠিটা পড়ার পর থেকে মিরাজের মনে আলাদা রকমের একটা ক্ষোভ জমা হলো। সবকিছুর জন্য ফারুককে দায়ী করতে লাগলো। এই পরিবারের সাথে নিজের সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো।
বছর খানেক পর…
তুহার বয়স তখন মাত্র ৩ বছর আর ফারাবির বয়স ৭-৮ বছর হবে। হঠাৎ একদিন ফারাবির দাদু অসুস্থ হয়ে পড়লেন, অসুস্থ হয়েছিলেন এই দুই পরিবারের দ্বন্দের কারনে। উনি চাইছিলেন মৃ/ত্যু/র আগে এই দুই পরিবারের দ্বন্দের অবসান ঘটাতে। অসুস্থতাকে কাজে লাগিয়ে উনি ব্ল্যাকমেল করলেন। মিরাজ ওনাকে যথেষ্ট ভালোবাসতেন।
– মিরাজ ফারুক বাবা আমার শেষ ইচ্ছাটা তোরা রাখবি না।
– এইরকম বলো না। (ফারুক)
– মিরাজ বাবা আমার ইচ্ছা রাখবে না।
– বাবা আপনি বলুন আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।
– না তোরা দুজন আমাকে ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা কর।আমার ইচ্ছাটা তোরা রাখবি।
– করলাম।
– আমি চাই ফারাবি আর তুহার বিয়ে হোক।
সকলেই চমকে উঠলো। ফারুক বললো…
– কিন্তু বাবা ওরা তো খুব ছোট।
– তো কি হয়েছে। ওদের হয়ে তোরা সই করবি কাবিনে আর বড়ো হবার পর ওদের পুনরায় বিয়ে দিবি।
– আমি রাজি নয় (মিরাজ)
– আমাকে ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করেছো কিন্তু।
–
মিরাজ বাধ্য হয়ে কাবিননামায় সই করেন। ওদের দুজনের বিবাহ সম্পন্ন হয়।
কিন্তু তার দুইদিন পরেই বাবা মারা যায়। আর মিরাজ কাবিনটা ছিঁড়ে ফেলে দেয়।
– এটা কি করলি তুই মিরাজ।
– যা করেছি বেশ করেছি। আমি তোমার কারোর সাথে কোনো সম্পর্ক রাখতে চাই না।আমি ফারাবিকে আমার মেয়ের জীবনে আস্তে দেবো না।
-তহুরা এইবাড়ির মেয়ে তাই এই বাড়িতে আসার অধিকার ওর আছে।
– ঠিকাছে তহুরা আসবে আমি কখনোই ওকে বাঁধা দেবো আর না কখনো ওকে কষ্ট পেতে দেবো কিন্তু কখনোই তুহাকে এই বাড়ির ধারে আস্তে দেবো না।আর না এইবাড়ির কারোর ধারে কাছেআসতে দেবো। তুহা আর ফারাবিকে কখনোই আমি এক হতে দেবো না।
________
তুহা সবটা শুনে থম মেরে বসে আছে সবটা শুনে।
– সেই থেকেই শুরু। বাবা চেয়েছিলেন তোমাদের চারহাত এক করে সবকিছু ঠিক করে দেবেন কিন্তু আরো সবকিছু গোলমাল হয়ে গেলো। তবে সবকিছুর মাঝে মিরাজ নিজের কথা রেখেছে আমার তহুরা কে কখনোই কষ্ট পেতে দেয়নি যার জন্য আমি ওর কাছে চিরকৃতজ্ঞ।
– কিন্তু মামাই আঙ্কেল যেটা করছেন সেটা তো অন্যায়। (মেধা)
– হুম জানি কিন্তু ওকে কে বোঝাবে। যাই হোক তোমরা এসেছো খেয়ে যাবে। আমি ভেতরে গেলাম।
উনি উঠে চলে গেলেন। ওনার চোখের কোনো পানিটা কারোরই নজর এড়ালো না। ফারাবিও উঠে চলেগেলো। তুহা এখনো বসে আছে। তুহার পাশে ওর মামিমনি বসলো…
– জানিস তুহা মা আমার ছেলেটা না তোকে খুব ভালোবাসে। সেই ছোটবেলা থেকেই। যখন এইসব হয় তখন হয়তো তুই ছোট থাকলেও ওতো বড়োছিলো সেই থেকেই ওরমনে শুধু তুই। ছেলেটা শুধুমাত্র তোর জন্য এতগুলো বছর বিদেশে ছিলো তোকে ভুলে থাকার জন্য কিন্তু পারেনি তিশাকে দিয়ে তোর খোঁজ নিয়েছে প্রতি নিয়ত। তোর মামাই বলেছিলো অন্য কারোর সাথে বিয়ে দেবে সেইদিন বাড়িতে তুলকালাম করেছিলো।
– আর মনিকা দি।
তুহার মুখে মনিকার নাম শুনে কিছুটা আন্দাজ করতে পারলেন উনি।
– মনিকা এসেছিলো দাদাকে নিয়ে কিন্তু ফারাবি না বলে দিয়েছি সোজাসুজি। তার তাহু পাখি ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবে না কখনো প্রয়োজনে সারাজীবন একা থাকবে।
তুহার চোখ ভিজে গেলো। মামিমনি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো…
– ছাদে আছে ছেলেটা যা মা সবকিছু মিটিয়ে নিয়ে নতুন করে শুরু কর। দুজনে একসাথে তোর বাবার ভুলটা ধরিয়ে দে।
তুহা মেধার দিকে তাকালো। মেধাও ওকে ইশারা করলো যাবার জন্য। তুহা দৌড়ে চলেগেলো। পরিবারের সকলের মুখেই হাসি আর চোখে পানি। এতবছরের ভালোবাসাটা প্রকাশিত হচ্ছে সবাই খুব খুশি।
– আল্লাহ এবার আমার ছেলেটাকে সুখের মুখ দেখিয়ো। ( মনেমনে)
তুহা ছাদে গিয়ে দেখলো, ফারাবি হাতে একটা সিগারেট ধরে দাঁড়িয়ে আছে। চেষ্টা করছে স্মোক করার কিন্তু অভ্যাস না থাকার কারনে হচ্ছে না।নিজের কষ্টগুলো কমানোর চেষ্টা করছে। আর একহাতে বারবার নিজের চোখের পানি মুছে চলেছে। তুহা আর পারলো না দৌড়ে গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।
আচমকা এইরকম হওয়াতে ফারাবি চমকে উঠলো। পরক্ষনেই মুখে হাসি ফুটলো। হাতের সিগারেটটা ফেলে দিয়ে সামনে ঘুরে তুহাকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলো যেন ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে। দুটি মানুষ তাদের বহু বছরের তৃষ্ণা মেটাতে ব্যস্ত। দুজনে কি এইবার এক হবে নাকি আবারো নতুন কোনো ঝামেলা তৈরি হবে ওদের জীবনে।
#চলবে…