#তোমার_মাদকতায়_আচ্ছন্ন
#তানজিলা_খাতুন_তানু
(পর্ব_১৫)
তুহা ফারাবিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে চলেছে। ফারাবির চোখেও পানি।
-এই তাহু পাখি আর কত কাঁদবে এইবার তো থামো।
– হুঁ। আগে কেন বলেন নি আপনি আমার প্রেমিক পুরুষ। কেন সামনে আসেননি বলুন।
– আমি সামনে আসলেই কি তুমি বিশ্বাস করতে বলো। আর সবথেকে বড়ো কারন হলো আমি চেয়েছিলাম তুমি আমাকে অনুভব করো।
– পাগল বানিয়ে ছেড়ে দিচ্ছিলেন তো।
ফারাবি আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো…
– আমি নিজেই তো পাগল হয়ে গেছি আর তোমাকে পাগল করতে যাবো কেন।
– কিন্তু বাবা।
– আঙ্কেলকে তুমি মানিয়ে নিতে পারবে না তাহু পাখি বলো।
– আমি চেষ্টা করবো।
– হুম।
ফারাবি তার তাহুপাখির কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে দিলো।
বিকালে..
তুহা বাড়িতে আসতেই দেখলো ওর বাবা ড্রইং রুমে বসে আছে। ওকে দেখা মাত্রই বললো..
– কোথায় গিয়েছিলে।
– মামাই এর কাছে।
– কি বললে তুমি,তোমার সাহস কি করে হয় ওই বাড়িতে যাবার।
– আমি গিয়েছিলাম সত্যি টা জানার জন্য। আর সবকিছু সত্যি জেনেছি। বাবা তুমি বিনাদোষে আমাদের কেন শাস্তি দিচ্ছো। কেন আমাদের আলাদা করতে চাইছো।
– তু… হা।
মিরাজ সাহেব তুহাকে মারার জন্য হাত তোলেন। কিন্তু নিজেকে সামলে নেয়।
– থামলে কেন মারো। আচ্ছা বাবা আমিও যদি আন্টির মতো ভুল করি সেটা কি ভালো হবে বলো। আন্টির না হয় ভালোবাসার মানুষটা ওনার সাথে ছিলো না কিন্তু আমার তো আছে আমি তো পারবো না বাবা অন্য কাউকে মেনে নিতে। আমিও ম/রে যাবো বাবা।
তুহার বাবা তুহাকে জড়িয়ে ধরলো। দুজনের চোখেই পানি।
– মারে এই কথা বলিস না তাহাকে হারিয়ে আমি তোকে আগলে বেঁচে ছিলাম আর তোর যদি কিছু হয়ে যায় তো আমি শেষ হয়ে যাবো। তোর সুখেই আমার সুখ। বল কি চাস তুই।
– আমি চাই তুমি ওইবাড়ির সাথে সমস্ত ঝামেলা মিটিয়ে নানুর কথা রাখো।
– আচ্ছা তাই হবে। কালকেই আমি ওই বাড়িতে যাবো।
তুহা ওর মা খুশি হয়ে যায়। মিরাজ সাহেব নিজের ঘরে চলে যায়।
– আমি তাহার মতো আমার তুহাকে হারাতে চাই না তাই সবকিছু মেনে নিচ্ছি কিন্তু কখনোই তোকে ক্ষমা করবো না ফারুক।( মনে মনে)
তুহা ওর ঘরে ছিলো মিহা ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো…
– দিভাই আমার বিশ্বাস হচ্ছে না তুই আমার হ্যান্ডসামের বউ হবি।
– বউ হবো না আমি ওনার বউই।
– ওলে বাবা রে।
দুই বোন গল্পেই মেতে উঠলো।
কথামতো ফারাবির বাড়িতে তুহার পরিবার আসলো। ফারাবির পরিবারের সকলের খুব খুশি এতদিন পর মিরাজকে নিজের বাড়িতে দেখে। ফারুক সাহেব উত্তেজিত হয়ে মিরাজকে জড়িয়ে ধরলেন। মিরাজ সাহেব মুখের কোনো একটা মেকি হাসি দিয়ে ফারুক সাহেবের কানে ফিসফিস করে বললো…
– আমি আমার মেয়ের খুশির জন্য এইসব করছি তবে আমি তোমাকে কখনোই মাফ করবো না।
মিরাজের কথা শুনে ফারুক সাহেবের মুখটা কালোহয়ে গেলো। উনি ভেবেছিলেন হয়তো সমস্ত মান অভিমান ভেঙে নতুন করে সবকিছু শুরু হচ্ছে কিন্তু তা নয় মিরাজ শুধু তুহার জন্য রাজি হয়েছে। তবুও মনে মনে তুহাকে কে কৃতজ্ঞতা জানালেন। তুহার কারনে মিরাজ এইবাড়িতে এসেছে এটাই অনেক।
মিরাজ সাহেব কথার মাঝে বললেন..
– যেহেতু তুহা আর ফারাবি একে অপরকে ভালোবাসে তাই এই বিয়েতে আমার কোনো আপত্তি নেয়। তোমরা বিয়ের আয়োজন শুরু করো, আমরা আনুষ্ঠানিক ভাবে তুহাকে ফারাবির হাতে তুলে দিতে চাই।
সকলেই খুব খুশি হয়ে যায়। কথামতো বিয়ের ডেট ফাইনাল করা হয়। বাড়ি ফিরে মিহা মেহতাবকে কল করলো…
– হ্যালো কে?
– আমি মিহা বলছি।
– আরে মিহা বল।
– ধন্যবাদ।
– কিসের জন্য!
– এই যে আমার দিভাই আর দাদাই এর মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি না হয়ে ওদের ভালোবাসাকে সার্পোট করার জন্য।
– ভালোবাসা জোর করে হয়না আর আমি চাই ও না জোর করে কিছু। ভালোবাসার মানুষটি সুখে দেখার মাঝে যে সুখ আছে তা অন্যকিছুর মাঝে নেয়।
– আপনি দিভাই কে ভালোবাসেন।
– হয়তো। আচ্ছা এখন রাখি।
– ওকে।
মেহতাব কলটা কেটে দিলো। মিহার বুকের উপরে কিছু একটা ভারী হয়ে আছে। তুহাকে মেহতাব ভালোবাসে কথাটা কেন জানো সহ্য করতে পারছে না।
পরেরদিন…
তুহা আর মেধা আজকে খুশির বাড়িতে যাবে। তুহার বিয়ের নেমন্তন্ন দিতে। যদিও আগে কখনোই যাওয়া হয়নি আর ওরা যাবে বিষয়টাও কেউ জানে না। কলিং বেলের শব্দ শুনে দরজা খুলে দিলেন খুশির মা। সামনে দুটো মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা হতভম্ব হলেন, পরক্ষনেই মুখের কোনো হাসি ফুটে উঠল…
– তোমরা মেধা আর তুহা না।
– জ্বি আন্টি।
– আরে ভেতরে এসো।
উনি ওদেরকে ভেতরে বসালেন। আর খুশিকে ডেকে দিলেন খুশি তো খুশি হয়ে ওদেরকে জড়িয়ে ধরলো।
– আরে তোরা আসবি একবার ওহ বললি না কেন।
– বললে কি আর সারপ্রাইজ থাকতো।
– সেটা ঠিক।
– বলো মা কি খাবে( খুশির মা)
– আন্টি কিছুই খাবো না আমরা একটা দরকারে এসেছি এখুনি চলে যাবো।
– কি দরকার! (খুশি)
তুহা মেধাকে খোঁচা দিলো। মেধা খুশির দিকে তাকিয়ে বলল…
– খুশি একটা গুড নিউজ আছে।
– কি?
– আমাদের তুহা রানির বিয়ে।
কথাটা শুনে খুশি খুশি হলেও ওর মা খুশি হতে পারলেন না। মুখটা কালোহয়ে গেলো ওনার।
– এটা তো খুব ভালো খবর তা জিজুর নাম কি?
– ফারাবি।
– কীইই?
খুশি বেচারা শক খেয়ে গেছে কথাটা শুনে।মেধা মুচকি হেসে বললো…
– এত অবাক হচ্ছিস কেন।
– না ওরা যা ঝগড়া করতো আবার বিয়ে কিছুই তো বোধগম্য হলো না।
– ঝগড়ার মাঝেই প্রেম।
কথাটা বলেই মেধা হাসতো লাগলো। তুহার লজ্জা লাগছে খুব, মেধাকে খোঁচা দিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করে বোঝালেন আন্টি আছে এখানে। মেধা চুপ করে গিয়ে বললেন…
– আন্টি আসলে সরি বাড়ির বড়োরা কেউ আসতে পারেনি হুট করেই বিয়ের ডেট ফাইনাল হওয়াতে সকলেই খুব ব্যস্ত। তাই আমরাই আসলাম, আপনারা কিন্তু সকলেই আসবেন আর খুশি কিন্তু কয়েকদিন আগে থেকেই আমাদের বাড়িতে থাকবে।
– আমরা সবাই যাবো কিন্তু খুশি থাকবে।
খুশির মায়ের কথাটা বুঝতে পেরে তুহা বললো…
– আন্টি আমাদের বাড়িতে খুশির কোনো অসুবিধা হবে না। আর খুশি তো আমাদের বন্ধু নয় বোন তাই আমার বিয়েতে আমার পাশে থাকলে আমার খুব ভালো লাগবে।
– আচ্ছা আমি ওর বাবার সাথে কথা বলে দেখবো।
তখনি ওখানে আশিক এসে বললো…
– কি কথা বলবে বাবার সাথে মা।
আশিক সামনে তাকিয়ে দেখলো,তুহা আর মেধা এসেছে।
– আরে তোমার কখন আসলে।
– এই তো মাত্রই।
– তা কি ব্যাপার আপনাদের পায়ের ধূলা আমাদের বাড়িতে পড়লো।
– আশিক তুই ওদের চিনিস।
– হুম মা।
– ওহ তোরা বস আমি আসছি।
উনি উঠে চলে যেতেই খুশি বললো…
– দাদাভাই জানো তুহার বিয়ে।
– সেই প্রেমিক পুরুষের সাথে নাকি।
কথাটা শুনেই খুশি আর মেধা তুহার দিকে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালো। মেধা সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বললো…
– কেসটা কি তুহা।
– পরেবলবো সবটা। এখন চুপ কর।
আশিক বিষয়টা বুঝতে পেরে বলল..
– তা পাত্রের নাম কি?
– ফারাবি চৌধুরী (মেধা)
– চৌধুরী কোম্পানির
– হুম।
– তাহলে তো কাব্যের দাদা তাই না।
– হ্যা তবে আপনি কাব্যদাকে চেনেন!
#চলবে…..🙂