তোমার হাতটি ধরে পর্ব-১৮

0
885

#তোমার_হাতটি_ধরে
#পর্ব_১৮
#Jechi_Jahan

সকালে আমি শান্তর রুম থেকে বের হয়ে আমাদের রুমে এলাম।রুমে এসে দেখি জোবান এখনো ঘুমাচ্ছে।ওনাকে ঘুমাতে দেখে আমার রাগ উঠে গেলো।আমি রুমের দরজা বন্ধ করে সোজা ওনার কাছে যাই।ওনার কাছে এসে ওনার পেটের উপর বসে ওনাকে এলোপাতাড়ি থাপ্পড় দিতে থাকি।ঘুমের মধ্যে হঠাৎ এরকম হওয়ায় উনিও ধরপরিয়ে উঠে পড়ে।আর আমাকে হঠাৎ এরকম করতে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।

জোবান-আউ মারছো কেনো?? (আমার হাত ধরে)

আমি-তো কি আপনাকে সালাম করবো। (রেগে)

জোবান-বলবা তো কি করছি।

আমি-বিয়ের আগে শান্তর সাথে প্ল্যান করে আমাকে বয়সের ব্যাপারে মিথ্যা বলা তাই না।

জোবান-ওয়েট,,,কে বললো তোমাকে এই কথা।

আমি-যেই বলুক,,,কথাটা তো সত্যি।

জোবান-দেখো আমি তোমাকে বুঝিয়ে বলি।

আমি-কি বুঝাবেন ,,, যে আপনার বয়স ৩৮ না ৩০।

জোবান-আরে প্রয়োজন ছিলো তাই বললাম।

আমি-ছিহ,,,তাই বলে এমন নীচ পরিকল্পনা করলেন।

জোবান-কি নীচ পরিকল্পনা করলাম??

আমি-এই যে শান্তকে দিয়ে আমায় মিথ্যা বললেন।আপনার বয়স ৩০ অথচ বললেন ৩৮।

জোবান-এই সত্যি করে বলোতো তোমাকে এগুলা কে বললো।

আমি-এততাও বোকা ভাববেন না আমাকে।আমি সত্যি কথা কোনো না কোনো ভাবে শুনে ফেলি।

জোবান-আরে ওটা তো এত বড় ব্যাপার না।

আমি-এটা কোনো বড় ব্যাপার না তাইনা।এরকম মিথ্যা বলে আমি আমাকে বাজে কথা শুনান কষ্ট দেন এটা ঠিক তাইনা।

জোবান-তোমার কষ্ট কেমনে হলো,,,আমি তো জাষ্ট শান্তকে বলেছি তোমাকে আমার বয়স টা মিথ্যা বলতে।

আমি-বাসর রাত থেকে শুরু করে বিয়ের ছয় দিন পর্যন্ত আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আপনার বয়স বেশি থাকা সত্ত্বেও আমি আপনাকে কেনো বিয়ে করলাম।জিজ্ঞেস করতেন ঠিকই কিন্তু আমি কিছু বলার আগে আপনি বলতেন আমি আপনাকে টাকার জন্য বিয়ে করেছি।মানে আপনি আপনার এই প্ল্যান এর ভিত্তিতে আমাকে এই কথা জিজ্ঞেস করে কষ্ট দিতেন।

জোবান-শিশির আমি তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য প্ল্যানটা করিনি।

আমি-মিথ্যা বলবেন না।

জোবান-আমি মিথ্যা বলছি না।বাসর রাতে তুমি টাইম চাওয়ায় আমার রাগ উঠে যায় তাই রাগের বশে বলে ফেলি।আর পরেরদিন শিরিনকে আমার ব্যাপারে বাজে কথা বলায় তখনও রাগের বশেই বলি।

আমি-ফাইজলামি করেন আমার সাথে।

জোবান-ওকে আমি বলছি আমি কেনো মিথ্যা বলছি।

আমি-কেনো??

জোবান-দেখতে চাইছিলাম তুমি বিয়েটা ভেঙ্গে দাও কিনা আমার বয়সের কথা শুনে।মানে মেয়েরা তো এত বুড়ো স্বামী চায়না তাই।

আমি-মানে??

জোবান-আগে উপর থেকে উঠো তারপর বলছি।

আমি-আমি উববো না আপনি পালিয়ে যাবেন না হয়।

জোবান-আরে সত্যি পালাবো না।

আমি-বলুন।(ওনার উপর থেকে উঠে)

জোবান-তো শুরু করি,,,বাবা আমার বিয়ের জন্য একদিন অনেকগুলো মেয়ের ছবি দেখায়।তো আমি বিয়ে করবোনা বলে ছবিগুলো না দেখে টেবিলে ফেলে উঠে চলে যাই।তবে যাওয়ার সময় তোমার ছবিটার উপর নজর পড়ে।

আমি-ওখানে আমার ছবিও ছিলো?

জোবান-হুম,,

আমি-কিন্তু কিভাবে???

জোবান-একজন ঘটকের মাধ্যমে।

আমি-ওহহ,,,

জোবান-তো তোমার ছবিটা দেখে আমার খুব ভালো লেগে যায়।আমি বাবাকে বলি তোমাদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব দিতে।তো বাবাও আমার কথা বিয়ের প্রস্তাব দেয়।কিন্তু তুমি বিয়েতে রাজি ছিলেনা যার জন্য তোমার বাবাও রাজি ছিলোনা।

আমি-এই মিথ্যা বলবেন নাতো।

জোবান-কি মিথ্যা বললাম??

আমি-আমার বাবা এই বিয়ে তে রাজি ছিলো।

জোবান-তোমার বাবা এই বিয়েতে প্রথমে রাজি ছিল না কারণ তুমি রাজি ছিলেনা।কিন্তু আমিও ছিলাম নাছোড়বান্দা আমি তো তোমাকে বিয়ে করবোই করবো।তাই আমি আমার বাবাকে বলি বিয়ে করলে আমি তোমাকেই করবো।আর বাবাও আমার কথায় তোমার বাবাকে প্রেশার দিতে থাকে তোমাকে আমার সাথে বিয়ের দেওয়ার জন্য।অবশেষে আমার বাবার রিকুয়েষ্ট এ তোমার বাবা রাজি হয়।

আমি-আল্লাহ,,আমি তো আরো বাবাকে ভুল বুঝে ছিলাম এতোদিন।

জোবান-হুম,,

আমি-তারপর,,,

জোবান-বলা ঠিক না,,কিন্তু আমার মেয়েদের প্রতি বিশ্বাসটা একটু কম।তাই আমি তোমাকে টেস্ট করার জন্য শান্তকে দিয়ে মিথ্যা বললাম।

আমি-কি টেস্ট করলেন আর কি ফলাফল বলেন।

জোবান-টেস্ট করেছি যে”এই মেয়ে যদি আমার বয়স বেশি শুনে বিয়ে ভেঙ্গে দেয় তাহলে বুঝবো এই মেয়েও বাকিদের মতো” আর ফলাফল পেয়েছি “এই মেয়ে একদম বাকিদের মতো নয়।আমার ৭০ বছর বয়সেও এ আমার পাশেই থাকবে।(বলেই মুচকি হাসলো)

আমি-(ওনার কথা গুলো শুনে আমি যেনো খুশিতে পাগল হয়ে যাবো।ইস,,,এতোদিন ভাবলাম উনি আমাকে ভালোবাসে না।কিন্তু উনি তো আমায় সেই প্রথম থেকেই ভালোবাসে।)ওয়েট,,,আপনি আমাকে বাকি মেয়েদের সাথে তুলনা করছেন।মানে,,,এই আপনি কয়টা মেয়ের সাথে ঘুরেছেন হ্যাঁ।(ওনাকে একটা ধাক্কা দিয়ে)

জোবান-আরে আমি কারোর সাথেই ঘুরিনি।আশেপাশে শুনেছি মেয়েরা নাকি এখন অল্পতেই ডিভোর্স দিয়ে দেয়, ব্রেকআপ করে দেয়।তাই তোমাকে বললাম বাকিদের মতো।

আমি-হুম,,,

জোবান-এবার বলো তো এসব কোথা থেকে জানলে।

আমি-কালকে আম্মু আমাকে বলেছে আপনার বয়স ৩০।তখন থেকে ভাবতে থাকি আপনার বয়স ৩০ হলে আমি ৩৮ জানি কেনো।অবশ্য আপনার বয়সের কথা আমাকে শান্তই বলেছিলো।তো এই ব্যাপারটা আমি লিনার সাথে শেয়ার করলে ও বলে শান্তকে জিজ্ঞেস করতে।তো এখন শান্তকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম ও ফটাফট বলে দিলো।কিন্তু বয়সের কথা কেনো মিথ্যা বলতে বললেন সেটা শান্ত জানতো না তাই বলতে পারেনি।

জোবান-শান্তকে ও কি আমার মত,,,

আমি-তো মারবো না,,,কোন না কোন পাগলের কথা শুনে আমাকে মিথ্যা বলেছে।

জোবান-হোয়াট??ওকে,,আচ্ছা মা তোমাকে হুট করে আমার বয়সের কথা কেনো বললো??

আমি-কালকে মাকে বলেছিলাম আপনার আর আমার মাঝে অনেক পার্থক্য।তো এই কথা বলে আমি বয়সের পার্থক্যটা বললাম।মা শুনে বলে যখন জোবানের বয়সই ৩০ তখন তোদের ১৭ বছরের পার্থক্য কিভাবে হয়।তো কালকেই জানলাম সত্যিটা।

জোবান-তুমি আমাদের মাঝে কি কি পার্থক্য দেখলা??

আমি-পার্থক্য দেখতে চান,,,ওকে তো বলি আপনি হলেন মাটির মোরগ আর আমি হলাম আকাশের পাখি।আপনি ভিলেইন আমি হিরোইন।আপনি ঝাল আমি মিষ্টি।আপনি তেঁতুল আমি আম।আর,,,

জোবান-ওয়েট,,,আমি ভিলেইন,মাটির মোরগ তাই না।

আমি-হুম।(বলে খাট থেকে নামলাম পালানোর উদ্দেশ্য)

জোবান- দাঁড়া আজ তোর হচ্ছে বলে।(বলই আমাকে খপ করে ধরে ফেললো)

——————-

আকিব-তিশা তুমি আবার ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিয়েছো।(রেগে)

তিশা-তো কি হয়েছে??

আকিব-আমি তোমাকে ডিভোর্স পেপার সাইন করার জন্য পাঠিয়ে ছিলাম।আর তুমি আমাকে আবার ওটা পাঠালে।

তিশা-আমি তো বলিনি যে আমি সাইন করবোনা।

আকিব-(তুমি যদি একবার বলো যে তুমি আমাকে ডিভোর্স দিবে না তাহলে আমিও তোমাকে ডিভোর্স দিবোনা।)তোমার প্রতি আমার কোনো বিশ্বাস নেই।

তিশা-না থাকলে নেই।

আকিব-এই(তিশার বাহু ধরে)তোর লাজ শরম নেই।তোর আমার প্রথম সন্তানকে নষ্ট করেছিস।তাও এত কথা কিভাবে বলিস।(রেগে)

তিশা-আমি তোমার বাচ্চাকে নষ্ট করিনি।

আকিব-তুই নিজে হাতে মেরেছিস আমার সন্তানকে।

তিশা-না জেনে কোনো কথা বলবেনা।

আকিব-আমি সব জেনেই কথা বলছি।দেখিস তো,,,তোর এসব বাজে স্বভাবের জন্য আমার পরে আর কেও তোকে আপন করে নিবে না।

তিশা-আমাকে আপন করে নেওয়ার লোক এসে গেছে।

আকিব-মানে??

তিশা-তোমার না জানলেও চলবে।

আকিব-যা মন চায় কর।(বলে চলে যেতে নেয়)

আশিক-আরে দুলাভাই।

আকিব-কেমন আছো??

আশিক-ভালো,,,তা চলে যাচ্ছেন যে??

আকিব-থেকে কি করবো??(তিশার দিকে তাকিয়ে)

আশিক-থেকে কি করবেন মানে,,,আজকে বাড়ীতে কি আপনি জানেন না।

আকিব-ওহ,,বাড়ীটা দেখছি ডেকোরেশন করা হচ্ছে আজকে কি বাড়ীতে।

আশিক-কি,,,আপনাদের বিয়ের পাঁচ বছরে আপনি প্রথম এই দিনটির কথা ভুলে গেলেন।

আকিব-সত্যি মনে নেই,,,বলোনা।

আশিক-আমার বার্থডে।

আকিব-ওহ শীট!!(মাথায় হাত দিয়ে) আমার তো খেয়ালই ছিলোনা।

আশিক-তো আজ থাকেন একেবারে কালকে যাবেন।

আকিব-থাকার অধিকার টা আমার মনে হয় আর রইলো না।

আশিক-দুলাভাই এভাবে কেনো বলছেন।

আকিব-বললাম,,,যাই হোক আমি আসি।

আশিক-তুমি যেওনা প্লিজ।

আকিব-ওকে সন্ধ্যায় আসবো,,,এখন যাই।(বলে চলে গেলো)

আশিক-আপু,,,

তিশা-হুম।

আশিক-বাচ্চাটা কেনো নষ্ট করলি তুই?

তিশা-তুই ও আমাকে ভুল বুজছিস।

আশিক-ভুল বোঝার মতই কথা।

তিশা-কেও ইচ্ছে করে নিজের সন্তানকে মারে।

আশিক-তাহলে তোর বাচ্চা নষ্ট হলো কেমনে।আর সবচেয়ে বড় কথা তোমার কাছে বেবি এবোরশান এর ঔষুধ আর ইনজেকশন ছিলো।

তিশা-ওগুলা আমি ইচ্ছে করে আনিনি।আমি তো অন্য ঔষুধ আনতে গিয়েছিলাম।কিন্তু দোকানদারই ভুলে এই ঔষুধ দিয়ে দেয়।আর আমি তো এই ঔষুধ চিনতাম না তাই খেয়ে ফেলি।

আশিক-আজ সব ঠিক থাকলে আমি মামা হতাম।

তিশা-ওসব বাদ দে,,,আর এমনিতেও আকিবের সাথে আমার ডিভোর্স হচ্ছে।যেই মানুষটা আমাকে বিশ্বাস করে না তার সাথে থেকে কি লাভ।যাক গে,,,আজ শিশিরকে ইনভাইট করেছিস।

আশিক-না,,,আজকে শিশির ভার্সিটিতেই আসেনি।

তিশা-তাহলে তো জোবানও আসবে না।

আশিক-আমি ওর নাম্বার জোগাড় করেছি।

তিশা-তাহলে ফোন দিয়ে আসতে বলিস।

আশিক-ওকে।

—***বিকালে***—

আমি আর জোবান শুয়ে আছি সরি জোবান ঘুমাচ্ছে আর আমি ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি।ঘুমানোর প্রস্তুতি নিয়ে অনেকক্ষণ হলো শুয়ে আছি কিন্তু ঘুম আসছে না।একটু নড়বো তারও সুযোগ নেই জোবান এমন ভাবে জড়িয়ে ধরে আছে।হঠাৎ আমার ফোনে একটা কল আসে।আমি ফোন নিয়ে দেখি আননোন নাম্বার।রিসিভ করবো কি করবো না ভাবতে ভাবতে কলটা কেটে গেলো।আমি এবার ওই নাম্বারে কল করতে গেলে আবার কল আসে।এবার আর অতশত না ভেবে আমি কলটা রিসিভ করি।

আমি-হ্যালো,,,আসসালামু আলাইকুম।

ওপাশে-আমি সরি,,,শিশির।

-চলবে।