#তোমার_হাতটি_ধরে
#পর্ব_১৯
#Jechi_Jahan
আমি ফোনটা কানে নিয়ে বসে আছি ভাবছি এটা কে হতে পারে।কন্ঠ শুনে এতটুকু বুঝা যাচ্ছে এটা একটা ছেলে।আমি একবার জোবানের দিকে তাকিয়ে ওনার হাতটা আস্তে করে সরিয়ে খাট থেকে উঠে পরি।ফোনটা নিয়ে বারান্দায় চলে যাই।
আমি-কে বলছেন??
ওপাশে-আমি আশিক।
আমি-কোন আশিক,,,আমি তো চিনি না।
আশিক-শিশির আমি সরি বললাম তো।
আমি-আরে আজব,,,তখন থেকে শুধু সরি বলেই যাচ্ছেন।কে বলবেন তো???
আশিক-আমি তোমার সিনিয়র আশিক।
আমি-ওহ,,,আপনি সরি আমি চিনতে পারিনি।
আশিক-হুম,,,কেমন আছো??
আমি-আছি,,,হঠাৎ আমাকে ফোন দিলেন??
আশিক-আজকে ভার্সিটিতে এলে না যে।
আমি-সেটা আপনার না জানলেও চলবে।কেনো ফোন দিয়েছেন সেটা বলুন।
আশিক-শিশির আমাকে ওইদিনের জন্য ক্ষমা করে দাও প্লিজ।
আমি-(চুপ করে রইলাম)
আশিক-শিশির ওইদিন আমার কি হয়েছিল আমি নিজেও জানিনা।তোমার ওই কথাটা শুনে আমার অনেক রাগ হয় তাই ওই রকম করে ফেলি।
আমি-(কিছুই বললাম না)
আশিক-শিশির প্লিজ ক্ষমা করে দাও না।
আমি-ফোন কেনো দিয়েছেন???
আশিক-আজকে আমার জন্মদিন।
আমি-ওহ,,,হ্যাপি বার্থডে।
আশিক-থ্যাংকস,,,আসলে।
আমি-আসলে??
আশিক-আসলে আমার বাবা আমার সব জন্মদিনই পালন করেছে তো এবার ও করছে।আমি আমার সব ফ্রেন্ডদের কেই ইনভাইট করেছি।তুমি আর লিনা আজকে ভার্সিটিতে ছিলেনা তো তোমাদের ইনভাইট করা হয়নি।তাই তোমার আরেক বান্ধবী থেকে তোমার আর লিনার নাম্বার কালেক্ট করি।লিনাকে আমি ফোন দিয়েছিলাম কিন্তু ও ধরেনি।তো তোমাকে বলছি আজ আমার জন্মদিনে তোমরা এসো।আর তোমার হাসবেন্ড কেও নিয়ে এসো।
আমি-সরি আশিক,,,
আশিক-সরি কেনো??
আমি-আমরা আসতে পারবোনা।
আশিক-শিশির প্লিজ,,,ওইদিনের রাগ আজকে তুলো না।
আমি-আমি ওইদিনের রাগ তুলছি না।আমি আর জোবান আমার বাবার বাড়ী এসেছি।এখন এখান থেকে এতো দূরে কিভাবে যাবো।
আশিক-শিশির প্লিজ,,,একটু ব্যবস্থা করো।
আমি-আপনি বুঝছেন না কেনো।আমি জোবানের পারমিশন ছাড়া আসতে পারবোনা।
আশিক-শিশির প্লিজ,,,আমার প্রথম আর শেষ অনুরোধ ভেবে আসো।
আমি-আচ্ছা চেষ্টা করে দেখি।
আশিক-ওকে,,,আমি তোমাকে আমার বাড়ির এড্রেস মেসেজে দিয়ে দিচ্ছি।
আমি-আচ্ছা।(বলে ফোন রেখে দিলাম)
আমি বারান্দায় চিন্তিত হয়ে বসে আছি।আমি এখন কি করবো বুঝতে পারছি না।জোবানকে বললে উনি রাজি হবে কি।আমি বসে বসে এসব ভাবছিলাম আর এর মাঝে জোবানের ডাক পড়লো।
জোবান-শিশির,,, (ঘুমো ঘুমো চোখে)
আমি-হুম কিছু লাগবে।(ওনার কাছে দৌঁড়ে এসে)
জোবান-তুমি কই গেছো???
আমি-আমি বারান্দায় ছিলাম।
জোবান-দূর,,,
আমি-কি হয়েছে??(ওনার পাশে বসে)
জোবান-তুমি কেনো উঠলা,,,এতক্ষণ কত শান্তিতে ঘুমাচ্ছিলাম।(আমার বুকের উপর মাথা রেখে জরিয়ে ধরে)
আমি-আসলে একটা ইম্পর্ট্যান্ট ফোন এসেছিলো।
জোবান-আমার থেকেও কি ইম্পর্ট্যান্ট ছিলো।(মাথাটা তুলে)
আমি-ওত টাও না।
জোবান-তো,,,কে ফোন দিয়েছে??
আমি-আমার ভার্সিটির সিনিয়র।
জোবান-কি,,,তোমার সিনিয়র তোমাকে ফোন দিলো কেন???
আমি-সিনিয়র হলেও আমাদের খুব ভালো বন্ধু।
জোবান-তো???
আমি-আসলে আজকে ওনার বার্থডে বলে আপনাকে আর আমাকে ওনার বাড়ীতে যেতে বলেছে।
জোবান-ওহহহ।
আমি-হুম,,,
জোবান-তো যাবে??
আমি-আপনি বললে।
জোবান-(কিছুক্ষণ চুপ থেকে)তো চলো।
আমি-সত্যি???
জোবান-হুম।
আমি-Thank you,,,Thank you,,,Thank you.(ওনাকে জরিয়ে ধরে)
জোবান-ওই এত খুশি হচ্ছো কেনো??
আমি-উনি অনেক রিকুয়েষ্ট করছিলো তাই।
জোবান-ওহ,,তা লিনাও যাবে নাকি।
আমি-ওহ আমি ওকে ফোন দি।(বলে উঠে গেলাম)
———–+++———–
আবির-Ashik,,,plz don’t do this…
আশিক-তুই আবার শুরু করলি।
আবির-তুই ঠিক করছিস না।
আশিক-আমি যা করছি আমার বোনের কথা ভেবেই করছি।
আবির-মাথা করছিস তুই ,,, তোর এই পাগলামোর জন্য চারটা জীবন নষ্ট হতে চলেছে আশিক।
আশিক-So what!!!
আবির-So what মানে,,,আশিক এমনিতে তোর ওসব এডিট করা ছবির জন্য জোবান আর শিশিরের মধ্যে কিছু ঠিক নেই।এখন তিশা আপুর ওমন বোকার মতো জোবানকে চাওয়া এসব কি ঠিক।
আশিক-ভালোবাসার মানুষকে চাওয়া কি ভুল?
আবির-এমন হলে ৫ বছর আগে ছেড়েছে কেনো??
আশিক-তখন ভুল করে ফেলেছিলো।
আবির-ভুল না রে,,,তোর বোন আসলে স্বার্থের পাগল।যখন জোবানের প্রয়োজন ছিলো তখন জোবানের পেছনে ঘুরেছে।পরে আকিবের প্রয়োজন ছিলো তাই আকিবের পেছনে ঘুরেছে।এখন যখন আকিব ছেড়ে দিচ্ছে এখন আবার জোবানের প্রয়োজন হয়েছে।
আশিক-আবির তুই কিন্তু বেশি বলে ফেলছিস।
আবির-এই তোর বোন এটা এমন কেনো রে।কোথায় তোর ভুলটা ধরিয়ে দিবে তা না উল্টো নিজের ভুলটা তোর ভুলের সাথে যোগ করছে।
আশিক-আপু কোনো কিছু যোগ করে নাই।আরে আপু তো জানতো ও না যে শিশির জোবানের স্ত্রী। একদিন আমার ফোনে ওদের ছবি দেখেছে সেই সুভাদে জেনেছে।আর তখনই আপুর জোবানের প্রতি আবার মায়া লাগে তাই তো,,,
আবির-এই তো পয়েন্টে এসেছিস,,,তোর বোন জোবানের কথা এতদিন মনে করেনি।যখন দেখেছে জোবান বিয়ে করেছে,সুখে আছে তখন তোর বোন আর সহ্য করতে পারেনি।নিজে তো সুখী হয়নি তাই জোবানকেও সুখি হতে দিবে না।
আশিক-চুপ করবি তুই।
আবির-কি চুপ করবো,,,ওকে যা মানলাম তুই না হয় শিশিরকে ভালোবাসিস।কিন্তু তোর বোন কোন হিসেবে এখন জোবানকে চাইছে তাও বিবাহিত হয়ে।
আশিক-ওর ডিভোর্স হবে।
আবির-ডিভোর্স হয়নি তো এখনো।তুই কোথায় ওদের ডিভোর্স টা হওয়া থেকে আটকাবি তা না করে তুই জোবানের সাথে তোর বোনকে মিলাচ্ছিস।
আশিক-আজকে আমার জন্মদিন আজকে এসব বলিস না।
আবির-ওকে আজকে আর কিছু বললাম না।কিন্তু এটা শুনে রাখ আমি না তোদের এসব প্ল্যান সাকসেসফুল হতে দেবো না।
আশিক-ওকে,,দেখা যাবে।
————!!!!!————
লিনার সাথে কথা বলে আমি রুম থেকে বের হয়ে গেলাম।সামনে মা আর বাবাকে দেখে ওদের আজকের পার্টির ব্যাপারে বললাম।বেশ কিছুক্ষণ পর হঠাৎ বাইরে গাড়ীর হর্ণ বাজলো।কে এসেছে দেখার জন্য বাইরে গেলে দেখি আমাদের ড্রাইভার।
আমি-কাকু,,,
কাকু-জ্বি ম্যাডাম আনি।
আমি-তুমি এখানে??
কাকু-স্যার আসতে বলেছে।
আমি-কেনো??
কাকু-এই ব্যাগ গুলো দেওয়ার জন্য।
আমি-ওহ,,,কি আছে ব্যাগে।
কাকু-আপনার আর স্যারের জামাকাপড়।
আমি-ওহ,,,আচ্ছা আপনি ভেতরে আসুন।
বলে আমি কাকুকে নিয়ে ভেতরে এসে কাকুকে চা নাস্তা দিলাম।রুমে এসে দেখি জোবান এখনো শুয়ে আছে।আমিও গিয়ে ওনার পাশে শুয়ে পরি।
জোবান-ড্রাইভার এসেছে???
আমি-কি দরকার ছিলো এগুলো আনানোর?
জোবান-দরকার ছিলো তাই আনিয়েছি।
আমি-দূর আপনার সাথে কথা বলাটাই বেকার।
জোবান-লিনাকে এখানে আসতে বলো।
আমি-লিনাকে এখানে আসতে বলবো কেনো??আমরাই ওর বাড়ীতে যাবো।
জোবান-গাড়ী সোজা আশিকের বাড়িতে যাবে।আর তোমার কথা অনুযায়ী যদি আমরা লিনার বাড়ী থেকে আশিকের বাড়ী যাই তাহলে দেরী হয়ে যাবে।
আমি-ওহ,,,
জোবান-যাও গিয়ে রেডি হও আমাদের আবার গ্রিপ্ট কিনতে হবে।
আমি-আচ্ছা।(বলে রেডি হতে শিরিনের রুমে গেলাম।)
আমি কাকুর এনে দেওয়া কালো রংয়ের গ্রাউন টা পরলাম।শিরিন রুমে থাকায় ও জেদ ধরলো আমাকে সাজিয়ে দেওয়ার।আমিও রাজি হয়ে গেলাম শিরিনের কথায়।শিরিন আমাকে সাজিয়ে ইউটিউব থেকে একটা হেয়ারস্টাইল দেখে মাথাটা বেঁধে দিলো।আমি রুম থেকে বের হয়ে দেখি লিনা সোফায় বসে আছে।
আমি-কিরে এসে পরেছিস???
লিনা-তোর জামাই ফোন দিয়ে পাগল করে দিচ্ছিল তাই তাড়াতাড়ি আসতে এলো।
আমি-আচ্ছা তুই একটু বস আমি রুম থেকে আসি।
রুমে এসে জোবানকে ডাকতে গিয়েই আমি থ হয়ে যাই।জোবানের ড্রেসআপও কালো রংয়ের।সাদা শার্টের উপর কালো কোর্ট,কালো টাই,কালো প্যান্ট একদম হিরো লাগছে।উনি আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে উঠলেন।
জোবান-কি,,,এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো??
আমি-লিনা চলে এসেছে।
জোবান-ওহ,,,এই তুমি নেকলেস টা পরোনি যে?
আমি-কোন নেকলেস??
জোবান-জামাটার সাথে একটা বক্স দেখোনি।
আমি-দেখেছি,,,আমি ভাবলাম আপনার।
জোবান-ওয়েট,,,(বলে ব্যাগটা থেকে নেকলেসটা বের করে আমার হলায় পরিয়ে দিলো)এবার পারফেক্ট,,,চলো যাওয়া যাক।
আমরা তিনজন আশিকের পার্টিতে সন্ধ্যায় এসে পৌঁছাই।একে তো দূরে তার মাঝখানে আমরা আশিকের জন্য গিপ্ট কিনতে যাই।আমরা এখন আশিকদের বাড়ীর সদর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।কিন্তু কেও এখনো আমাদের কাছে আসছে না কিন্তু বাড়ী ভর্তি মেহমান আছে।
জোবান-(এমন কেন লাগছে আমার।মনে হচ্ছে যেন এখানে আমার বহু পরিচিত মানুষরা আছে।)
আশিক-আরে তোমরা এসে গেছো।
আমি-জ্বী।
আশিক-আমি অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিলাম।ধন্যবাদ,,,আমার কথা রাখার জন্য।
আমি-জোবান পারমিশন দিলো বলেই আসতে পারলাম।
আশিক-ওকে আসো।
আশিক আমাদের ওর বাবা মা আর আত্নীয় স্বজন দের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। একেবারে শেষে ও আমাদের ওর বড় বোনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।ওর বোনের সাথে আমরা হাসি খুশি ভাবে কথা বললেও জোবান কেমন ধমধমে হয়ে আছে।
আমি-জোবান আপনি ঠিক আছেন??
জোবান-হ্যাঁ আমি ঠিক আছি।
আমি-ক্লান্ত লাগছে।
জোবান-না,,,ওকে তোমরা কথা বলো বমি একটু বাইরে থেকে আসছি।(বলে গেলো)
আশিক-ভাইয়ার কি শরীল খারাপ।
আমি-জানিনা।
এভাবে প্রায় অনেকক্ষণ আমরা পার্টিতে ছিলাম।কিন্তু আমার পাশে জোবান ছিলোনা।উনি সেই যে গেছে আর আসেনি।আমি পার্টির বিভিন্ন জায়গায় খুজলাম কিন্তু পেলাম না।এখন হঠাৎ করে উনি এসে আমার হাত ধরে বেরিয়ে গেলেন।
আমি-আরে আপনি এতোক্ষণ কোথায় ছিলেন???
জোবান-(চুপ করে আছে)
আমি-চুপ করে আছেন কেনো বলুন।
জোবান-আমি এখন বাড়ী যাবো।
আমি-কিন্তু লিনা??
জোবান-আমি ওর জন্য গাড়ী পাঠিয়ে দিবো।
আমরা গাড়ীতে উঠে সোজা ওনার বাড়ীতে চলে এলাম।বাড়ীতে ঢুকে কিছু না বলে উনি ওনার স্টাডি রুমে চলে গেলেন।আমিও কিছু না বলে রুমে চলেম এলাম।দুইদিনে রুমটা কেমন অচেনা লাগছে।আমি ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ড্রেসটা চেঞ্জ করে নিলাম।নেকলেসটা খুলে একটা বক্সে নিয়ে নিলাম লকারে রাখবো বলে।লকার খুলে বক্সটা রেখে যেই লকার বন্ধ করতে যাবো ওমনি একটা ডায়েরি দেখি।ডায়েরিটা জোবানের যেটা ওইদিন উনি আমার থেকে লুকাচ্ছিলেন।আমি ডায়েরিটা নিয়ে লকার বন্ধ করে দিলাম।দরজা বন্ধ করে ডায়েরি টা নিয়ে খাটে বসে পড়তে শুরু করলাম।কিন্তু ডায়েরি টা পড়ে যে আমি এমন কিছু জানতে পারবো সেটা কল্পনাও করিনি।
-চলবে।