তোমার হাতটি ধরে পর্ব-২২

0
868

#তোমার_হাতটি_ধরে
#পর্ব_২২
#Jechi_Jahan

আমি-তুমি এখানে কি করছো???

তিশা-মানে???

আমি-মানে তুমি এখানে এসে আমার স্বামীকে জড়িয়ে ধরেছিলে কেনো??

তিশা-তার আগে তুমি বলো তুমি এখানে কি করছো?

আমি-আমার স্বামীর অফিস আর আমি আসবো না।

তিশা-তো নক করে আসবে না।(রেগে)

আমি-আমি আমার স্বামীর কেভিনে নক করে আসিনা।আচ্ছা তুমি আমাকে এসব কথা কেনো জিজ্ঞেস করছো।আমি তোমাকে যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দিতে পারছো না।

তিশা-কি উত্তর দিবো??

আমি-আমার স্বামী কে কেনো জরিয়ে ধরেছো??

জোবান-আসলে তিশা আমার সাথে দেখা করতে এসেছিলো।

আমি-তো জরিয়ে ধরবে কেনো??

জোবান-আব আসলে আমি আর তিশা একে অপরকে চিনি।তো ও শুনেছে আমার অফিস এখানে তাই দেখা করতে এসেছে।আর আমাকে দেখে এতই এক্সাইটেড হয়েছে যে হুট করে জরিয়ে ধরলো।

আমি-(ব্যাটা বাদাইম্মা!!!এখনো বলতেছে না যে এই তিশাই তার এক্স)বাহ এখনো তো ভালো করে মিথ্যা বলাও শিখোনি।

জোবান-মানে??

আমি-একবার ওর মন ভেঙে শান্তি হয়নি তোর আবার এসেছিস ওর মন ভাঙতে।(তিশাকে)

তিশা-কি বলছো তুমি এসব???

আমি-দেখ আমি খুব ভালো করে জানি যে তুই আমার স্বামীর এক্স।

জোবান-শিশির এটা সেই তিশা না।

আমি-আপনি চুপ করুন,,,খুব দরদ লাগছে না নিজের এক্স এর জন্য।চার বছর পর ফিরে এসেছে একটু তো আদর সোহাগ করতেই হবে তাই না।

জোবান-শিশির কি যা তা বলছো।

আমি-এই তোর গায়ে কি বল শক্তি নেই।আমার উপর তো ঠিকই জোর খাটাস।এই মেয়েটা কে একটু জোর খাটিয়ে সরাতে পারলি না।

জোবান-তুমি আমাকে তুই করে বলছো??

আমি-বেশ করেছি তুই করে বলছি।

জোবান-দেখো শিশির ও আমাকে হুট করে জরিয়ে ধরায় আমি সরানোর সময় পাইনি।আর এর মাঝে তুমি ও এসময় আসলে।

আমি-আচ্ছা মানলাম তুই না হয় সময়ের কারণে ওকে সরাতে পারলি না।কিন্তু তোর মাঝে কি আত্মসম্মান নেই।মানুষতো আত্মসম্মানের কথা ভেবে হলেও কাওকে বাঁধা দিতে পারে।মানে এই মেয়েটা তোকে চার বছর আগে লাথি মেরে ফেলে চলে গেছিলো।আর তুই এখনো তার সাথে কথা বলিস ওকে নিজেকে জরিয়ে ধরতে দিস।

জোবান-এই তুমি কি এসব অকাজা কথা বলছো।

আমি-আমি অকাজা কথা বলছি তাই না।ওকে দেখ এবার আমি কি করি।বিয়ের পর থেকে তো শুধু সহজ সলর শিশির টাকেই দেখলা তো ভয়ংকর শিশির টাকে আজকে দেখে নাও।(বলে তিশার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম)

জোবান-শিশির।

আমি-চুপ,,,আচ্ছা তোমার মাঝে কি লজ্জা শরম নেই।মানে চার বছর আগে ওকে ছেরে একান্ত বিয়ে করলে।তারপর যখন ডিভোর্স হতে চললো তখন আবার ওর কাছে ফিরে আসতে চাইছো তাইনা।মানে কোথায় ডিভোর্স টা একটু আটকানোর চেষ্টা করবে তা না উল্টো আরেক দম্পত্তির ডিভোর্স করাতে চাইছো।

তিশা-এই আমি তোমার কোন পাকা ধানে মই দিয়েছি।তুমি আমার সাথে এমন মিসভিহেব করছো কেনো।

আমি-না,,,তুই আমার কাঁচা ধানে মই দিয়েছিস।আমার সংসার টা মাত্র ভালো ভাবে শুরু হলো আর তুই উড়ে এসে জুড়ে বসেছিস।

জোবান-শিশির তোমাকে কে বললো যে ওই আমার এক্স।

আমি-শুনুন আমার সাথে না একদম মিথ্যা বলবেন না।আর বুঝিনা আমি ওকে কথা শুনালে আপনার এতো জ্বলে কেনো।

তিশা-কারণ ও এখনো আমাকে ভালোবাসে।

জোবান-তিশা লিমিট ক্রস করোনা।(রেগে)

আমি-অনেক হয়েছে,,,এই তুই এখান থেকে বের হও।(তিশাকে উদ্দেশ্য করে)

তিশা-আমি জোবানের সাথে কথা বলা ছাড়া কোথাও যাবো না।

আমি-অনেক কথা বলেছিস আর জরিয়েও ধরেছিস এখন যা এখান থেকে।

তিশা-জোবান,,,তুমি এতক্ষণ আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলছিলে না।এখন তোমার বউয়ের চরিত্র নিয়ে কিছু বলো।আমি তার থেকে বয়সে বড় অথচ সে আমাকে সম্মান দিয়ে কথা না বলে তুই তুকারি করে কথা বলছে।

আমি-সম্মান চাই তোর তাই না,,,নে সম্মান দিলাম।(বলে তিশার হাত ধরে টেনে কেবিন থেকে বের করে দিলাম আর সাথে সাথে দরজা বন্ধ করে দিলাম)

জোবান-শিশির এটা কি ছিলো???

আমি-কিছুই ছিলো না।

জোবান-শিশির তিশা জাস্ট আমাকে জরিয়ে ধরেছে তার জন্য তুমি এতো রাগ করছো কেনো???

আমি-এটা আপনার কাছে জাস্ট লাগছে।এখন আপনার জায়গায় আমি আর তিশার জায়গায় সুমন ভাইয়া হলে কি করতেন রাগ করতেন না।

জোবান-হ্যাঁ আমি রাগ করতাম কিন্তু তোমার মতে করে না।তুমি তিশাকে ভালোভাবে চিনো না।এভাবে বলায় ও এখন আমার পেছনে আরো বেশি করে লাগবে।তুমি ওকে ভালোভাবে বুঝিয়ে বলতে তাহলে হয়তো ও আমার লাইফে আর কখনো আসতো না।আর যদি আসতো ও তাহলে বন্ধু হিসেবে আসতো।কিন্তু তুমি,,,

আমি-চুপ,,,খুব কষ্ট লাগলো বুঝি এক্সকে এভাবে বলায়।তাহলে যা ওকে গিয়ে বিয়ে কর ওর তো ডিভোর্স হতে চলেছে।ওকে বিয়ে করে আমাকেও ডিভোর্স দিয়ে দিস।তোকে না আমার জীবনসঙ্গী হিসেবে লাগবে,না আমার বাচ্চার বাবা হিসেবে লাগবে আর না আমার নাতি নাতনির নানা-দাদা হিসেবে লাগবে।থাক তুই ওই তিশা শাতচুন্নির কাছে।(বলে চলে আসতে নিলাম।)

জোবান-কি বললা??

আমি-কিছু বলি নাই কিন্তু এখন বলছি।আজকে তুই বাড়ী আয় তোর খবর আছে।(বলে চলে এলাম)

জোবান-বাপরে আজকে তিশার চক্করে এক নতুন শিশিরকে দেখলাম।

আমি অফিস থেকে বের হয়ে দেখি লিনা অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।লিনাকে দেখে আমি একটু অবাক হই।আমার যতটুকু মনে আছে আমি তো লিনাকে সাথে করে আননি তাহলে কোথা থেকে আসলো।আমি এবার সোজা গিয়ে লিনার সামনে দাঁড়ালাম।

লিনা-শিশির জানিস আমি মাত্র এখানে কাকে দেখলাম।

আমি-তিশাকে দেখেছিস তাই না।

লিনা-হুম,,,অনেক রেগে ছিল দেখে বুঝতে পারলাম।

আমি-রাগ করারই তো কথা।

লিনা-কেনো??

আমি এবার লিনাকে অফিসের ভেতরে ঘটা সব কিছু বললাম।এসব শুনে ও আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হা হা করে হেসে দিলো।

আমি-জোক ছিলো???

লিনা-না,,,কিন্তু আমি ভাইয়ার কথা ভেবে হাসছি।নিশ্চয়ই এত বড় ধাক্কা সামলাতে পারেনি।উনি নিশ্চয়ই মনে মনে বলছে যে এই মেয়েটার সাথে আমি ছয় মাস সংসার করছি অথচ এর যে আরেকটা কঠিন রুপ আছে সেটা জানিই না।

আমি-হয়তো,,,বিয়ের পর থেকে তো ওনার সামনে চুপ চাপই ছিলাম।কিন্তু দেখ ব্যাটা কত খেচ্চর তিশা যে ওর এক্স এটা আমাকে বললোই না।উল্টো যখন আমি বললাম তখন অস্বীকার করছিলো।

লিনা-আমি জানি ভাইয়া কেনো অস্বীকার করেছে।

আমি-কেনো???

লিনা-যে মেয়ে তার স্বামীর অতীত জেনে কেঁদে ঘর ভাসিয়ে ফেলে সে মেয়ে যদি তার স্বামীর এক্সকে দেখে তাহলে তো পৃথিবী ভাসিয়ে ফেলবে।

আমি-মানে??

লিনা-মানে তুই যাতে কষ্ট না পাস তাই ভাইয়া তোকে তিশার কথা বলেনি।

আমি-যাক গে ওসব বাদ দে,,,আচ্ছা তুই এখানে কিভাবে এলি??

লিনা-ভার্সিটিতে দেখলাম তুই ক্লাসে না গিয়ে সোজা বের হয়ে গিয়েছিলি।তো আমি তোর কাছে আসার আগেই তুই গাড়ীতে উঠে চলে গেছিলি।তাই একটা রিকশা নিয়ে তোর পেছন পেছন আসি।আর এসে দেখি তুমি তোমার হাফপ্যান্টের অফিসে।আচ্ছা যাই হোক আজকে আর ভার্সিটি তে যাবোনা।চল কোথাও ঘুরতে যাই।

আমি-চল।

আমি আর লিনা গাড়ীতে বসলাম কোথাও ঘুরতে যাবো বলে।বেশ কিছুক্ষণ গাড়ি চলার পর হঠাৎ আমার কি হয় আমি বুঝতে পারিনা।আমার মাথা ঘুরতে থাকে,,,আমি মাথাটা চেপে ধরে ছটপট করতে থাকি।আর এরপর কি হলো আমার মনে নেই।

—————–

দুপুরে জোবান বাড়ীতে এসে সোজা একটা গেস্ট রুমে চলে যায়।ওর এখনো শিশিরের কথাটা কানে বাজছে “তুই আজকে বাড়ীতে আয় তোর খবর আছে” তাই ও আর রুমে যাচ্ছে না।আসলে এখন জোবানও শিশিরকে ভালোবাসে আর শিশিরের হাসি খুশির মর্যাদাও দেয়।এখন যদি শিশির খুশি মনে ওকে পেটাতে আসে তাহলে তো ওকে বাঁধা ও দিতে পারবেনা।এসব ভেবে ও আর রুমে যাচ্ছে না। বেশ কিছুক্ষণ পর ও নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়।কিন্তু রুমে এসে ও অবাক হয়ে যায় কারণ শিশির রুমে নেই।ও বারান্দা আর ওয়াসরুমেও দেখে কিন্তু পায়না।একে একে বাড়ীর সব দিকে খুঁজেও যখন পেলোনা তখন সারভেন্টকে জিজ্ঞেস করলো।

জোবান-আপা,,,শিশির কি কোথাও গেছে???

সারভেন্ট-সকালে ভার্সিটিতে গেছে।

জোবান-হুম,,,কিন্তু দুপুরে তো বাড়ীতে এসেছিলো এরপর কি কোথাও গেছে?

সারভেন্ট-না তো,,,ম্যাডাম তো দুপুরে বাড়ীতেই আসে নাই।

জোবান-আরে কি বলেন না বলেন এখন দুপুরে ওর ভার্সিটির ছুটি হয়।তো ছুটির পরে ও বাড়ীতে না এসে কোথায় যাবে।আপনারা হয়তো খেয়াল করেননি ও এসেছিলো।

সারভেন্ট-না স্যার ম্যাডাম আসেনি।

এটা শুনার পরে জোবানের আরো টেনশন হতে লাগলো।হুট করে শিশির কোথায় গায়ের করার কথা।জোবান এবার শিশিরের বাড়িতে ফোন দিয়ে দেখে কিন্তু শিশির ওখানেও নেই।আর না ফেরে লিনার নাম্বারে ফোন দেয় কিন্তু লিনার নাম্বার বন্ধ পাওয়ায় ও এবার হতাশ হয়ে সোফায় বসে পড়ে।

——“”””””——

আমি আস্তে আস্তে চোখ দুটো খুললাম।তখন গাড়িতে আমার কি হয়েছিল আমার কিছুই মনে নেই।এখন চোখ খুলে দেখি আমি বিছানায় শুয়ে আছি।কিন্তু চারিপাশটা আমার কেমন অচেনা লাগছে।জানিনা এখন আমি কোথায় এসেছি।

-চলবে