#তোমার_হাতটি_ধরে
#পর্ব_২৩
#Jechi_Jahan
আমি শোয়া থেকে উঠে বসে পরলাম।চারপাশটা ভালো করে তাকিয়ে একটু চেনার চেষ্টা করলাম।কিন্তু দুর্ভাগ্য ক্রমে আমি বুঝতেই পারছিনা আমি কোথায়।আমার এসব ভাবনার মাঝে হঠাৎ রুমের দরজা খুলে লিনা ভেতরে আসে।
আমি-লিনা,,,
লিনা-কিরে,,,এখন কেমন লাগছে তোর শরীল???
আমি-আমার শরীরের আবার কি হবে??
লিনা-মানে তুই জানিস না কিছু??
আমি-কি জানবো??
লিনা-গাড়ীতে তুই অজ্ঞান হয়ে গেছিলি।
আমি- অজ্ঞান কেনো হলাম???
লিনা-আমি কি করে জানবো।
আমি-আমরা এখন কোথায়??
লিনা-আমার চাচার বাড়ীতে।
আমি-তোর চাচার বাড়ীতে কেনো??
লিনা-ডাক্তার বলেছিলো তোকে কিছুক্ষণ রেস্ট নিতে।তো আমি ভাবলাম হাসপাতাল থেকে তোর বাড়ীতে যেতে তো দেরি হবে।এর চাইতে ভালো আমি আমার চাচার বাড়ীতে নিয়ে আসি।কারণ আমার চাচার বাড়ী হাসপাতাল থেকে কাছেই ছিলো।
আমি-মানে???
লিনা-শুন,,,আমি তোকে প্রথম থেকে সব বলি।(বমার পাশে বসে)
আমি-হুম,,,বল।
লিনা-গাড়ীতে তুই অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পর আমি অনেক চেষ্টা করেছি তোকে জাগানোর।কিন্তু তুই উঠছিলিই না তাই আমি তোকে কাছেই একটা হাসপাতালে নিয়ে যাই।
আমি-কি???
লিনা-হুম,,,তোর তো জ্ঞানই ফিরছিলো না হাসপাতালে না নিয়ে কি করতাম।
আমি-ওহ,,,কিন্তু আমার তো মাথা ঘুরাচ্ছিলো এর মাঝে অজ্ঞান কখন হয়ে গেলাম।
লিনা-সেটা তো আমি জানিনা।
আমি- আচ্ছা,,, তো কি হয়েছিলো আমার??
লিনা-তেমন কিছু না শুধু কয়েকটা টেস্ট করেছে।আর বলেছে সাবধানে থাকতে।(তোমার কি হয়েছিল সেটা তুমি কালকে জানতে পারবে)
আমি-তেমন কিছু না হলে আবার কিসের টেস্ট???
লিনা-কিসের টেস্ট সেটাও আমি জানিনা।বাট কালকে তুই ভাইরাকে দিয়ে আনিয়ে নিস।
আমি-হুম।(বলে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম।)
লিনা-আ শিশির,,,তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি।
আমি-হুম কর।
লিনা-মনে আছে,,,ওইদিন তোকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম যে তুই পিল কেনো খাস।তুই একথা পরে বলবি বলে আর বললিই না।আজকে আমাকে বলবি তুই পিল কেনো খেতিস।
আমি-ছাড় না ওসব।
লিনা-তুই আমাকে বলবি না।
আমি-আচ্ছা আমার মা বলছি।
লিনা-হুম বল।
আমি-আমার শ্বশুর মানে জোবানের বাবা ইংল্যান্ড যাওয়ার কিছু দিন আগে জোবানকে ওনার রুমে ডাকে।তো ওনাদের রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আমি ওনাদের কিছু কথপোকথন শুনি।
লিনা-কি কথোপকথন???
আমি-সেদিন আমার শ্বশুর জোবানকে বলছিলো “দেরি করে বিয়ে করেছো এখন একটা বাচ্চা নিয়ে ফেলো।জানি তুমি হয়তো বলবে যে এ কেমন বাবা ছেলেকে বাচ্চা নিতে বলছে।কিন্তু আমি এ কথা না বলে পারছি না।আজ তোমার মা বেঁচে থাকলে ওই তোমাকে এ কথাটা বলতো”।জানিস বাবার এই কথাটা শুনে আমার খুব লজ্জা লাগছিলো + কষ্টও হচ্ছিল মায়ের জন্য।কিন্তু জোবানের কথা শুনে আমার লজ্জা আর কষ্ট কোনোটাই রইলো না।
লিনা-কি বলেছিলো ভাইয়া??
আমি-জোবান বলেছিলো ” দেরিতে বিয়ে করেও শান্তি নেই,,, সেই বাচ্চা নিয়ে নিতে বলছো।আরে এত দিন সিঙ্গেল থাকায় নিজের একটা স্বাধীনতা ছিল।কিন্তু এখন বিয়ের পরে অর্ধেক স্বাধীনতা চলে গেচে।পরে বাচ্চা আসলে তো আর কোনো স্বাধীনতাই থাকবে না”।জানিস এটা শুনে আমি চুপ হয়ে যাই।পরক্ষনে আমার শ্বশুর বলে “যে দেখো তোমার মা তোমাদের দুই ভাই বোনের বাচ্চা তো দূরে থাক বিয়ে টাও দেখে যেতে পারেনি।আমি আজ আল্লাহর রহমতে বেঁচে আছি বলে তোমাদের বিয়েটা দেখার সুযোগ পেলাম এখন নাতি নাতনিকে দেখার সুযোগ করে দাও”শ্বশুরের এই কথাটা শুনে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল।
লিনা-তারপরে ভাইয়া কি বললো??
আমি-উনি বলেছে ” বাবা তুমি আল্লাহর রহমতে আরো বাঁচবে আর সঠিক সময়ে বাচ্চা আসলে তাকে দেখতেও পারবে।আমার এখন কোনো বাচ্চা চাইনা।আর যদি বাচ্চা আসেও তাহলে হয়তো আমি ওকে ভালোবাসতে পারবোনা।তো তুমি এই টপিক টা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো”।বলে উনি আসতে নিলে আমি ওখান থেকে সরে যাই।
লিনা-তো এগুলোর সাথে পিল খাওয়ার কি সম্পর্ক?
আমি-জোবান বাচ্চা চায়না তাই আমি পিল খেয়েছি যাতে প্রেগন্যান্ট না হই।
লিনা-মানে ভাইয়া বললো আর তুমি পিল খেয়ে নিলা।
আমি-আমার ভয় হচ্ছিল,,, আমি এক্সিডেন্টলি প্রেগন্যান্ট হয়ে গেলে জোবান যদি বাচ্চাটা এবরশান করতে বলতো তখন।
লিনা-ভাইয়া এত নীচ না যে বাচ্চা এবোরশান করতে বলবে।
আমি-জানি,,,কিন্তু বাচ্চা আসলে তো জোবান ওকে আর ভালোবাসতো না।
লিনা-তোর না মাথায় সমস্যা আছে।
আমি-আচ্ছা তো এখন কি হয়েছে পিল খেয়েছি।
লিনা-কিছু হয় নাই।
—————
আমি ধীরে ধীরে বাড়িতে পা রাখলাম।বাড়ীতে আসার সময় আমার খুব ভয় করছিলো।কিছুক্ষণ আগে ফোনটা ওপেন করে দেখি জোবানের অনেকগুলো কল।কিন্তু ফোন সাইলেন্ট থাকায় শুনতে পাইনি।আমি বাড়ীতে ডুকে দেখি সারভেন্টরা কেমন চিন্তিত মুখে বসে আছে।
আমি-খালা।(সার্ভেন্টকে)
সার্ভেন্ট-ম্যাডাম,,,আপনি কোথায় ছিলেন???
আমি-আমার এক বান্ধবীর সাথে ছিলাম।কেনো কি হয়েছে??
সার্ভেন্ট-স্যার আজকে আপনাকে বাসায় না দেখে চিন্তায় পরে গেছিলো।অনেক জায়গায় খোঁজ করেছে কিন্তু আপনার কোনো খোঁজই পায়নি।
আমি-এখন উনি কোথায়???
সার্ভেন্ট-স্যার তো অনেকক্ষণ আগে বাসায় আসলেন।
আমি-কেনো উনি কোথায় গিয়েছিলেন??
সার্ভেন্ট-জানিনা,,,কিন্তু এখন স্যার ওনার রুমে আছে।
আমি-ঠিক আছে আমি গিয়ে দেখে আসি।
আমি আমাদের রুমে এসে দেখি পুরো রুম অন্ধকার হয়ে আছে।আমি খুঁজে খুঁজে লাইটটা জালিয়ে আঁতকে উঠি।জোবান খাটের উপর বসে আছে চোখ দুটো ওনার ফুলে লাল হয়ে আছে।মেঝেতে ওনার ব্লেজার,ঘড়ি আর জুতা এদিক ওদিক পড়ে আছে।আমি ধীরে ধীরে জোবানের পাশে গিয়ে বসে পড়ি।আমি যে ওনার পাশে বসে আছি ওনার মনে হয় সেই খেয়াল ও নেই একেবারে সামনেই তাকিয়ে আছে।আমি এবার জোবানের কাঁধে নিজের হাত রাখি।
আমি-জোবান।
জোবান-নিশ্চুপ।
আমি-জোবান।(একটু ধাক্কা দিয়ে)
জোবান-হুম।(ধরপরিয়ে উঠে)
আমি-কি হয়েছে আপনার???
জোবান-আমার আবার কি হবে??
আমি-কি হবে মানে,,,আপনি নিজের চেহারা টা একবার দেখেছেন।কেমন হয়ে আছে চেহারাটা।
জোবান-তুমি সত্যি আমার সামনে আছো??
আমি-মানে কি??আমি এতক্ষণ আপনার পাশে বসে আছি আর আপনি বলছেন আমি আপনার সামনে সত্যি আছি কিনা।
জোবান-শিশির আমি সরি।
আমি-কেনো??
জোবান-কোথায় ছিলে তুমি??
আমি-ছিলাম কোথাও একটা,,,আগে আপনি বলুন আমায় কেনো আপনি সরি বললেন।
জোবান-তুমি আজ সকালের জন্য আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলে তাইনা।
আমি-আমি আপনাকে ছেড়ে কোথায় যাবো??
জোবান-কোথাও না গেলে আমার ফোন রিসিভ করলেনা কেনো??
আমি-ফোন সাইলেন্ট ছিলো তাই ধরতে পারিনি।
জোবান এতক্ষণ স্বাভাবিক ভাবে কথা বললেও এখন ওনার চোখ দুটো ছলছল করছে।আমি ওনাকে কিছু বলবো তার আগেই উনি আমাকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দেয়।আমি ওনার এমন ব্যবহারে আমি জাস্ট থ হয়ে বসে থাকি।
জোবান-শিশির,,,আমি সকালের ব্যাপারটার জন্য খুব দুঃখিত।আমি ভেবেছি তিশার কথা জানলে তুমি কষ্ট পাবে তাই তোমাকে তিশার কথা বলিনি।তিশাকে আমি আর ভালোবাসি না শিশির।আমি এখন শুধু তোমাকে ভালোবাসি।প্লিজ শিশির আমাকে কোনোদিন ছেড়ে যেও না।
আমি-আপনার কেনো মনে হলো আমি আপনাকে এই সামান্য কারণে ছেড়ে চলে যাবো।ওইদিন কি বলেছি মনে নেই,,,আপনি আমি ছাড়া ১০ টা মেয়ের সাথে,,,,
জোবান-চুপ,,,আমি সহ্য করতে পারছি না।বাড়িতে এসে তোমার খোঁজ না পাওয়ায় আমার পুরো নাজেহাল অবস্থা হয়ে গেছিলো।সার্ভেন্টরা বলেছিলো তুমি নাকি বাড়ীতেই আসোনি।পরে তোমার বাড়ীতে কন্টাক্ট করলাম ওরা বললো তুমি ওখানে নেই।তোমার গাড়ির ড্রাইভার কে ফোন দিলাম দেখি উনি ফোন বাড়িতে রেখে গেছে।লিনাকে ফোন দিলাম দেখি ওর ফোন বন্ধ।আর না পেরে তোমার ভার্সিটিতে গিয়ে দারোয়ানের থেকে জানতে পারলাম তুমি নাকি সকালেই ভার্সিটি থেকে চলে গেছো।মানে আমি কোনো দিশ দিশা পাচ্ছিলাম না।টেনশনে হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছিলো।এই কোথায় ছিলে তুমি বলো না।
আমি-কালকে বলবো,,,এখন আমি অনেক ক্লান্ত একটু রেস্ট নিবো।
জোবান-আচ্ছা ঠিক আছে,,,তবে শিশির আমি আবার বলছি আমাকে কোনদিন ও ছেড়ে যেওনা।মায়ের মৃত্যুর পর এই প্রথম কাঁদলাম কারোর জন্য।এর মানে বুঝতে পারছো,,,আমি তোমার খুব ভালোবাসি।
আমি-হয়েছে সাব,,,এমন রোমান্টিক কথায় আমার পেট ভরবে না।আপনি অনুমতি দিতে,,,ডিনার টা করতে যেতে পারি??
জোবান-(আমার কথায় মুচকি হেসে)আচ্ছা চলো।
এরওর আমরা দু জনে ফ্রেশ হয়ে ডিনার করতে গেলাম।ডিনারের সময় খাবারগুলো আমার কাছে কেমন জানি লাগছিলো।ইচ্ছে করছিলো মুখ থেকে ফেলে দিই কিন্তু জোবানের ভয়ে আর ফেললাম না।ডিনার শেষে আমরা রুমে এসে ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালে—
জোবান-শিশির,,,শিশির।
আমি-হুম।(ঘুমের ঘোরে)
জোবান- উঠো।
আমি-উুহু।
জোবান-১০ টা বেজে গেছে আজকে ভার্সিটিতে যাবেনা।
আমি-না আজকে যাবো না।
জোবান-তুমি তো ভার্সিটি মিস দাওনা তাহলে আজকে কি হলো??
আমি-এমনে ভালো লাগছেনা।
জোবান-আচ্ছা আমি তাহলে অফিসে যাচ্ছি তুমি ঘুমাও।(বলে আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে রুমে থেকে বের হয়ে গেলো)
জোবানের বের হওয়ার এক মিনিট পর হঠাৎ আমার রিপোর্ট টার কথা মনে পড়লো।আমি শোয়া থেকে উঠে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম।রুম থেকে বের হয়ে দেখি জোবান দরজার কাছাকাছি চলে গেছে।আমিও দৌড়ে এবার ওনার সামনে চলে গেলাম।
আমি-জোবান।
জোবান-আরে তুমি উঠলে কেনো??(পেছনে ফিরে)
আমি-আপনার একটা কাজ আছে।
জোবান-কি কাজ???
আমি-আপনাকে একটা রিপোর্ট আনতে হবে।
জোবান-কার রিপোর্ট??
আমি-আমার রিপোর্ট।
জোবান-কি হয়েছে তোমার???
আমি-কালকে আপনার কাছ থেকে এসে আমি আর লিনা গাড়ীতে বসি।গাড়ীটা কিছুদূর যাওয়ার পর নাকি আমি অজ্ঞান হয়ে যাই।লিনা বারবার চেষ্টা করছিল আমার জ্ঞান ফেরানোর।আমার জ্ঞান ফেরানো তে বিফল হয়ে ও আমাকে পাশের একটা হাসপাতালে নিয়ে যায়।হাসপাতালে নাকি আমার কিছু টেস্ট করায় আর ওই টেস্টের রিপোর্ট নাকি আজকে দিবে।সো আজকে আপনি রিপোর্ট গুলো আনবেন।
জোবান-এত কিছু হয়ে গেলো আর তুমি,,,,
আমি-চুপ,,,অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে আপনি যান।
জোবান-আচ্ছা হাসপাতালের নামটা তো বলো।
আমি জোবানকে হাসপাতালের নাম বলে বিদায় দিয়ে আবার রুমে এসে ঘুমিয়ে গেলাম।আর আমি এমন একটা ঘুম দিলাম যে ঘুম ভাঙ্গলো একেবারে দুপুরে।ঘুম থেকে উঠে আমি সোজা ওয়াশরুমে চলে যাই গোসল করতে।প্রায় দু ঘন্টা গোসল করে যেই ওয়াশরুম থেকে বের হলাম ওমনি পায়ের সামনে কিছু একটা দেখে আমি লাফিয়ে উঠি।পরে ভালো করে তাকিয়ে দেখি একটা ফাইল আর একটা খাম।
-চলবে,,,,