#তোমার_হাতটি_ধরে
#পর্ব_২৪
#Jechi_Jahan
আমি অবাক হয়ে ফাইল আর খাম টার দিকে তাকিয়ে আছি।আমি টাওয়াল টা মাথায় ভালোভাবে পেছিয়ে ফাইল আর খাম টা হাতে নিলাম।ওগুলা নিয়ে খাটের উপর বসে প্রথমে ফাইলটা খুললাম।ফাইলটা খুলে পড়ে আমার মাথা যেনো পুরো হ্যাং হয়ে যায়।ফাইলে স্পষ্ট লেখা আছে যে আমি প্রেগন্যান্ট,,,কিন্তু কিভাবে।আমি আর না ভেবে তারাতাড়ি খামটা খুললাম।খামের মধ্যে একটা চিঠি আছে।চিঠিটা নিয়ে আমি পড়তে শুরু করি।
—প্রিয় শিশির,,,
বুঝতে পারছি না চিঠিটা কোথায় থেকে লেখা শুরু করবো।কিন্তু যেখান থেকেই লেখা শুরু করি আজ সব সত্যিই বলবো।আজ তোমার কথা মতো আমি ওই হাসপাতাল থেকে তোমার রিপোর্ট টা আনতে যাই।রিপোর্ট টা নিয়ে আমি যখন ডক্টরকে জিজ্ঞেস করি যে রিপোর্টে কি এসেছে।জানো ডক্টর আমার দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে বললো আমি নাকি বাবা হতে চলেছি।শিশির তুমি বিশ্বাস করবেনা যে এটা শুনে আমি কতক্ষণ চুপ ছিলাম।হাসপাতাল থেকে সোজা আবার অফিসে চলে আসি।মানে কোথায় এমন একটা খবর শুনে আমি তোমার কাছে যাব তা না,,,উল্টো আবার অফিসে চলে এলাম।বলতে পারো খুশিতে আমি পাগল হয়ে গেছি।আবার অফিস থেকে বের হয়ে মিষ্টি কিনে বাড়িতে আসি।তুমি গোসলে থাকাকালীনই আমি স্টাডি রুমে চিঠিটা লিখলাম।তুমি জানোনা আমি আজ কত খুশি।বাবা হব জানলে যে এত খুশি লাগে সেটা আমি কল্পনাও করিনি।জানি তুমি এখন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে একটু অবাক হবে কিন্তু আমি তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য এই সামান্য চেষ্টা টুকু করলাম।
-ইনি তোমার বদমেজাজি বর।
চিঠিটা পড়ে আমার চোখ থেকে পানি পরতে লাগলো,,,জানিনা এটা কিসের কান্না।কিন্তু জোবানের এই খুশি হওয়া টা আমাকে ভাবাচ্ছে।এই লোকটা না ওইদিন বলেছিলো ওনার বাচ্চা চাই না।তাহলে আজ উনি এতো খুশি কেনো।আমার এসব ভাবনার মধ্যে হঠাৎ জোবান আমার সামনে বসে।
জোবান-কি ম্যাডাম কি ভাবছেন??
আমি-আপনি সত্যি খুশি তো জোবান??
জোবান-কোন বিষয়ে??
আমি-এই যে আপনি বাবা হবেন।
জোবান-তোমার কি মনে হয়??
আমি-আপনি খুশি হলে তো ভালো আর খুশি না হলে বাচ্চাটা এবোর,,,,
জোবান-ওই,,,কিসব আজে বাজে কথা বলছো???
আমি-সত্যিই তো বললাম।
জোবান-এতদিনে তুমি আমাকে এই চিনলে শিশির।আমি কি এতই খারাপ যে নিজের বাচ্চাকে মারতে চাইবো।
আমি-আহা আমি সেটা বলতে চাইনি।
জোবান-তো কি বলতে চাইছো।তুমিই বলো তাহলে তোমাকে এই চিঠিটা দিয়ে কি লাভ হলো আমার।
আমি-জোবান আপনি এমন করছেন কেনো???আমি তো ওসব মিন করে বলিনি আপনাকে।আমি জানি আপনি খুব খুশি এই বিষয় নিয়ে।আমি তো জাস্ট এমনে জিজ্ঞেস করলাম।
জোবান-ওকে,,,আমি বুঝতে পেরেছি।বাট সত্যি বলতে আমি খুব খুশি।এত খুশি হয়তো আমি জীবনেও হয়নি।আজ যদি আমার মা বেঁচে থাকতো তাহলে উনিও খুব খুশি হতেন।
আমি-আপনি নাকি মিষ্টি এনেছেন,,,কই আমাকে তো খাওয়ালেন না।
জোবান-ওহ সরি,,,তুমি ওয়েট করো আমি আনছি।(বলে চলে গেলো)
জোবানের রুমে থেকে বেরোনোর সাথে সাথে আমি আলমারির কাছে চলে যাই।আলমারি খুলে আমার জামা কাপড়ের ভেতর থেকে পিলের প্যাকেট টা বের করি।আমি শুধু এক পাতা খেয়ে শেষ করলাম।পিলটা হাতে নিয়ে ভাবছি পিল খাওয়া স্বত্বেও প্রেগন্যান্ট কিভাবে হলাম।আমি পিলের প্যাকেটটা এদিক ওদিক করে দেখতে লাগলাম।হঠাৎ আমি পিলের মেয়াদটা দেখে চমকে উঠি সাথে বুঝতে পারি আমার প্রেগন্যান্ট হওয়ার কারণ।আসলে পিল গুলো আউট অপ ডেট ছিলো তাই আমি প্রেগন্যান্ট হই।আর কিছু না ভেবে পিলটা আগের জায়গায় রেখে খাটে এসে বসি।
জোবান-নাও হা করো।(মিষ্টি নিয়ে ঘরে ডুকলো)
আমি-হা,,,(করতেই একটা মিষ্টি ডুকিয়ে দিয়ো)
জোবান-শুনো,,আগে তো যেমনে পারতা তেমনে চলতা।এখন আর সেভাবে চলতে পারবেনা কারণ এখন তোমার মাঝে আমার অংশ বেড়ে উঠছে।
আমি-হুম।
জোবান-নিজের বেশি বেশি যত্ন নিবা।
আমি-হুম।
জোবান-খাওয়া দাওয়া এখন থেকে ভালো করে করবা।
আমি-হুম।
জোবান-কি শুধু হুম হুম করছো।কিছু তো একটা বলো।
আমি-আমি আর কি বলবো বলেন।আমার খেয়াল রাখার জন্য তো আপনি আছেনই।তো আমার তো আর কোনো চিন্তাই রইলো না। তাই না???
জোবান-তাই তো।
ওনার এমন উত্তরে আমি খিলখিলিয়ে হেসে দিই।এরপর আমার এমন হাসি দেখে জোবানও আমার সাথে হেসে দেয়।ওনার এই হাসিটা দেখে আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেই ফেলি।যে যাই হয়ে যাক আমি আমার বাচ্চাকে এই পৃথিবীতে আনবো।
৬ মাস পরঃ-
এই ৬ মাসটা ও যেনো কিভাবে কেটে গেলো।আমি যে মা হতে চলেছি সেটা বেশ ভালো করেই উপলব্ধি করতে পারছিলাম।সেই ৬ মাস আগে থেকেই আমি রোজ নিজেকে আয়নায় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতাম।যে আজ কেমন পরিবর্তন হলাম,কালকে কেমন ছিলাম এসব।আমার পেটটা চার মাসের সময়ই হালকা বুঝা যাচ্ছিল আসলে চিকন হলে যা হয় আর কি।আমার পেটটা বুঝা যাওয়ায় জোবান খুব নারাজ ছিলো।ওনার কথা মতো চার মাসের সময় নাকি পেট বুঝা যায়না।আমি নাকি এক ব্যাটারি, কলম, মরিচ ইত্যাদি বলে খেপায়।তবে এই খেপানোর সাথে উনি আমার যথেষ্ট খেয়াল ও রেখেছেন।প্রেগন্যান্সির পর আমি শুধু ২ মাসই ভার্সিটিতে গিয়েছি এর পর আর যাওয়া হয়নি মানে জোবানই যেতে দেয়নি।আজ আমাকে চেপাক করাতে নিয়ে যাবে জোবান।সেই কখন থেকে রেডি হয়ে বসে আছি কিন্তু ওনার আসার নামই নেই।
জোবান-শিশির।(রুমে এসে)
আমি-কিছু বললাম না।
জোবান-আম সরি শিশির লেট করে ফেললাম।
আমি-আপনি জানেন আমি কখন থেকে আপনার জন্য ওয়েট করছিলাম।
জোবান-আরে রাস্তায় জ্যাম ছিলো।
আমি-আচ্ছা বুঝলাম,,,যান ফ্রেশ হয়ে আসুন।
জোবান-একেবারে এসেই ফ্রেশ হবো।
আমি-আরে পাগল নাকি,,,বাইরে কোরোনা আর আপনি।
জোবান-আচ্ছা বাবা যাচ্ছি।
জোবান ফ্রেশ হতে গেলে আমি আবার সবকিছু চেক করে নিলাম।যে সব ঠিকমতো নিয়েছি কিনা।এর মাঝে জোবান বের হয়ে আমাকে নিয়ে ধীরে ধীরে নীচে নামলো।আমাকে গাড়ীর পেছনে বসিয়ে উনি ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লেন।আগের বারও এরকম করেছিলেন।অবশেষে হাসপাতালে পৌঁছালে আমরা যথারীতি ভাবে নেমে পড়ি।
আমি-জোবান একটা কোন হাসপাতাল??
জোবান-মনে আছে,,,এই হাসপাতালে তোমাকে আমি নিয়ে এসেছিলাম আমার এক বান্ধবীর কাছে।
আমি-হুম আছে,,,কিন্তু আমি তো আগেরবার চেকাপ এখানে করিনি।
জোবান-আজকে করবো।
আমি-আচ্ছা।
জোবান-শুভা,,,আসবো??(শুভার কাছে গিয়ে)
শুভা-আরে জোবান,,,আয় আয়।
জোবান-কেমন আছিস???
শুভা-এইতো ভালো।
জোবান-শিশির বসো।(আমাকে ধরে চেয়ারে বসাল)
শুভা-শিশির প্রেগ,,,
জোবান-৬ মাসের।
শুভা-কি???(শিশির তো পিল খেতো তাহলে প্রেগন্যান্ট কিভাবে হলো)
জোবান-শিশির ৬ মাসের প্রেগন্যান্ট এখন তোর কাছে ওর চেকাপ করাতে এসেছি।
শুভা-ওহহ,,,কেমন আছো শিশির??
আমি-আলহামদুলিল্লাহ আপু।
শুভা-তা প্রথম মা হচ্ছো ফিলিংস টা কেমন???
আমি-ফাটাফাটি।
শুভা-জোবান,,,তুই এখানে বস আমি ওকে ওদিকে নিয়ে যাই।
জোবান-আচ্ছা।
শুভা আপু আমাকে রুমের অন্যদিকে নিয়ে একটা সিঙ্গেল খাটে শুইয়ে দিলো।শোয়ানোর পর শুভা আপু আমার চোখ দেখলো,শ্বাস চেক করলো আর কিসব জানি করলো।আর অবশেষে আমাকে নিয়ে জোবানের পাশে বসালো।
জোবান-কোনো সমস্যা নেই তো??
শুভা-না তেমন কোনো সমস্যা নেই তবে খাওয়ার দিকে আরেকটু নজর দিস।
জোবান-আমি তো নজর দিই কিন্তু সে খায় কই।
শুভা-আচ্ছা বাদ দে,,আমি কিছু ঔষুধ লেখি দিচ্ছি। এগুলা কোনটা কোন সময় খাওয়াবি তা এই কাগজে লিখা আছে।এগুলা নিজে আজকে থেকে খাওয়ানো শুরু করবি।
জোবান-এগুলা খেলে কি হবে??
শুভা-বেবি স্বাস্থ্যবান হবে।
জোবান-ওহ আচ্ছা,,,তো এখন আসি।
শুভা-হুম।
আমি আর জোবান হাসপাতাল থেকে বের হলে উনি আমাকে গাড়ীতে বসিয়ে দেয়।ঔষুধ কেনার জন্য পকেট থেকে কাগজটা বের করতে গেলে কি একটা খুঁজতে শুরু করে।
জোবান-শিশির,,,আমি আমার ফোন পাচ্ছি না।
আমি-আপুর রুমে রেখে এসেছেন মনে হয়।
জোবান-হয়তো,,,আচ্ছা আমি দেখে আসি তুমি বসো।
আমি-হুম।(বলতেই উনি চলে গেলো)
জোবান-শুভা আসবো।(শুভার রুমের সামনে)
শুভা-হ্যাঁ হ্যাঁ আয়,,,আমি তোকেই এতক্ষণ ফোন করছিলাম কিন্তু তোর ফোন দেখি চেয়ারের উপর পরে আছে।
জোবান-হুম ভুলে ফেলে গেছিলাম,,,কিন্তু তুই কেনো ফোন দিয়েছিলি?
শুভা-শিশিরের ব্যাপারে কিছু কথা বলতে।
জোবান-কেনো??কোনো কি সমস্যা আছে ওর।
শুভা-না,,ওর সমস্যা নেই কিন্তু সমস্যা আছে ওর বাচ্চার।
জোবান-কেনো আমার বাচ্চা কি বাঁচবে না??
শুভা-আমার পুরো কথাটা শুন।
জোবান-বল।
শুভা-তুই প্রথম যেদিন শিশিরকে এখানে আনিস আর ওর কন্ডিশন বলিস তখন আমি ভেবেছিলাম শিশির প্রেগন্যান্ট তাই এমন হচ্ছে।তো তোকে বের করার পর আমি শিশিরকে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে বললে ও সাফ মানা করে দেয়।
জোবান-কেনো??
শুভা-আমি ওকে এটার কারণ জিজ্ঞেস করলে ও বলে ও নাকি পিল খায়।সো প্রেগন্যান্সি টেস্ট করলেও নাকি পজিটিভ আসবে না।পিল খাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস ও সম্পূর্ণ এড়িয়ে যায়।এখন আমার কথা হচ্ছে ও যদি পিল খায় তাহলে ও প্রেগন্যান্ট হলো কিভাবে।
জোবান-,,,,,,,,
শুভা-শোন,,,তুই ওর স্বামী।তোর ওকে এসব ব্যাপারে জিজ্ঞেস করার পুরো অধিকার আছে।তুই ওকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস কর।
জোবান-হুম।(বলে চলে যেতে ধরলো)
শুভা-জোবান,,,তোকে জিজ্ঞেস করতে বলেছি বলে উল্টা পাল্টা কিছু জিজ্ঞেস করিস না।তুই একটা গদ্দব,,,জিজ্ঞেস করতে গিয়ে হয়তো ভুলভাল কিছু একটা জিজ্ঞেস করে ফেলবি।
জোবান-হুম আসছি।
———-
বিকালে আমি আর জোবান বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছিলাম আর গল্প করছিলাম।আমি হাসি মুখে কথা বললেও উনি কেমন মনমরা হয়ে কথা বলছে।
আমি-জোবান।(ওনার হাতের উপর হাত রেখে)
জোবান-হুম।
আমি-কি হয়েছে আপনার???
জোবান-কই কিছু না।
আমি-তাহলে??
জোবান-আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাই।
আমি-হুম করুন না।
জোবান-যা জিজ্ঞেস করবো তার প্রত্যেকটা কথা সত্যি বলবা।
আমি-আচ্ছা বাবা বলবো।
জোবান-(কিভাবে জিজ্ঞেস করি,,,এমনে তে একবার ওকে অবিশ্বাস করে ভুল করেছি।এখন আর আমি তেমন ভুল করতে পারবো না।কিন্তু কি যে জিজ্ঞেস করি।
আমি-জোবান বলুন।
জোবান-শিশির এই বাচ্চাটা আমার তো???
-চলবে,,,,,