তোমার হাতটি ধরে পর্ব-২৬

0
966

#তোমার_হাতটি_ধরে
#পর্ব_২৬
#Jechi_Jahan

আমি এখানে এসেছি আজ প্রায় এক মাস হতে চললো।কিন্তু জোবান আমার একটা খোঁজ ও নেয়নি আর একটা ফোনও দেয়নি।মানে আমি রাগ করে চলে এসেছি কোথায় আমার রাগটা একটু ভাঙ্গাবে তা না উল্টো ঘরে ঘাপটি মেরে বসে আছে।তবে একটা কথা,,,উনি আমাকে ফোন না দিলেও আমার বাবা মাকে রোজ ফোন দেয়।বাবা মাকে ফোন দিয়েই আমার খোঁজ নেয় মানে আমাকে ফোন দিয়ে আর খোঁজ নেয় না।কিছুদিন আগে শুভা আপু আমাকে ফোন দিয়ে ওইদিনের সব কথা বলেছিলো।আর এগুলো শুনেই আমার ওনার উপর থেকে রাগটা কমেছে।কিন্তু এখন আমি নিজে থেকে বাড়ী যাচ্ছিনা চাইছি উনি নিজে এসে নিয়ে যাক।কারণ আমি নিজে থেকে গেলে জোবান বলবে “এ্যা ঠং করে তো চলে গেছিলা এখন আবার আসতে গেলা কেনো”। আমি জানি জোবান এসব বলবে কারণ জোবানের কথাই এরকম ত্যাড়াব্যাড়া।

শিরিন- আপু।(আমার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে)

আমি- হুম।

শিরিন- বলছি যে,,, চলোনা আজকে কোথাও ঘুরতে যাই।

আমি-কি,,,ঘুরতে যাবো তাও এই অবস্থায়??

শিরিন-তো কি হয়েছে??

আমি-না আমি যাবোনা।

শিরিন-আপু প্লিজ চলো না।

আমি-দূর,,,জ্বালাস না তো আমি যাবোনা এই অবস্থায়।

শিরিন-মনে হচ্ছে যেনো দুনিয়ায় প্রথম তুমিই প্রেগন্যান্ট হয়েছো।😒😒😒

আমি-এই এত জ্বালাছিস কেনো বলতো???

শিরিন-আরে,,,রোজ তো আমার সাথে না হয় শান্তর সাথে হাটঁতে যাও।আজকে একটু আমার সাথে ঘুরতে গেলে কি হয়।

আমি-যখন মা হবি তখন বুঝবি আমি এমন কেনো করছি।

শিরিন-আচ্ছা তখন কার কথা তখন বুঝবো।এখন চলো না প্লিজ,,, ওকে তুমি পেটটা ডেকে যেও।

আমি-তুই কি আমাকে ছাড়া ঘুরতে যেতে পারবিনা।

শিরিন-পারবো,,, কিন্তু তুমি সহ চলো না প্লিজ।

আমি-আচ্ছা যা,,, আমি রেডি হচ্ছি।

শিরিন-ওকে।

আমি এবার উঠে ফ্রেশ হয়ে একটা ডিলাডালা কামিজ পরে পরে রেডি হয়ে নিলাম।ড্রয়িং রুমে এসে দেখি শিরিন রেডি হয়ে মায়ের সাথে কথা বলছে।মায়ের সাথে এভাবে কথা বলতে দেখে এতটুকু বুঝলাম মাও চাচ্ছে আমি শিরিনের সাথে বাইরে যাই।আমি এবার ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।

আমি-হ্যাঁ রে,,,তুই ঘুরতে যাবি না???

শিরিন-হুম চলো!!! আচ্ছা মা আসি।(বলে আমাকে নিয়ে বের হয়ে গেলো)

আমি-আমাদের সাথে আর কেও যাচ্ছে না।

শিরিন-শান্ত আর লিনা আপু যাবে।

আমি-লিনা কিভাবে যাবে,,,লিনা তো এখানে নেই।

শিরিন-লিনা আপু এখানেই আছে শুধু ব্যস্ততার কারণে তোমার কাছে আসতে পারছে না।

আমি-ওহ,,, তো চল।

লিনা আর আমি এবার গাড়ীতে উঠি।গাড়ীটা সোজা গিয়ে একটা কফি শপের সামনে থামলো।শিরিন গাড়ী থেকে নেমে আমাকেও নামালো।আমাকে নিয়ে কফি শপে ডুকে মেনু কার্ড নিয়ে বসে পড়ল।

আমি-এই তোর ঘুরতে আসা।

শিরিন-মানে???

আমি-সামান্য কফি খাবি বলে আমাকে এত রেডি করিয়ে আনলি।আরে বাড়িতে বললেই তো আমি বানিয়ে দিতাম কফি।

শিরিন-আসার সময় বলেছি না শান্ত আর লিনা আপু ও আসবে।

আমি-হুম।

শিরিন-ওরা সোজা এখানে আসবে,,,তাই আমাদের ও এখানে আসা।আচ্ছা ওসব বাদ দাও,,,তা কি খাবে বলো???

আমি-কফি শপে যেহেতু এসেছি কোল্ড কফি খাবো।

শিরিন-এই অবস্থায়??

আমি-আরে বিশ্বাস করবি,,, এই ছয় মাস জোবান আমাকে কোনো ঠান্ডা জাতীয় জিনিস খেতে দেয়নি।কতবার বলেছি একটু আইসক্রিম খাবো,একটু ঠান্ডা ঠান্ডা ফিরনি খাবো কিন্তু আমাকে খেতেই দিতো না।

শিরিন-মোটেও খেতে দিতো না??

আমি-দিতো কিন্তু কিভাবে জানিস,,,আইসক্রিম ওভেনে গরম করে গলিয়ে,ফিরনি ওভেনে গরম করে দিতো।তুই ই বল এগুলা গরম গরম খেতে ভালো লাগে।

শিরিন-হুম তাই তো।

আমি-তো আজকে যেহেতু সুযোগ পেয়েছি আমি ঠান্ডা কিছু খাবোই।তুই অর্ডার দে,,,,

শিরিন-আচ্ছা দিচ্ছি।

এটা বলে শিরিন বসে রইলো কিন্তু তখন আমার ফোনে একটা মেচেজ আসে।আমি মেচেজটা ওপেন করে দেখি জোবানের মেচেজ।লেখা আছে “কোনো কোল্ড কফি খাওয়া যাবেনা”। মেসেজটা পড়ে আমি শপের চারিদিকে তাকালাম না জোবানকে কোথাও দেখছি না।তাহলে উনি জানলো কিভাবে যে কোল্ড কফি খাবো।আমিও এবার নাছোড়বান্দা হয়ে কোল্ড কফি টাই অর্ডার দিলাম।আমাদের কফি খাওয়া শেষ হলেই শান্ত আর লিনা আসে।আর আমরা আবার ওদের সাথে বের হয়ে পড়ি।

বিকালেঃ-

জোবান-হ্যালো শান্ত??

শান্ত-জ্বি ভাইয়া।

জোবান-তোমরা এখন কোথায়???

শান্ত-আমরা সবাই একটা পার্কের সাইডে দাড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছি।

জোবান-ওহ,,, তা শিশির কই??

শান্ত-আপুও আছে আমাদের সাথে।

জোবান-আচ্ছা বাড়ীতে সব ডেকোরেশন হয়ে গেছে তো??

শান্ত-হ্যাঁ ভাইয়া,,, আপনার পাঠানো লোক গুলো সব ডেকোরেশন করে ফেলেছে।

জোবান-করে ফেললেই ভালো,,, তবে একটা কথা আমি না বলে পারছিনা।

শান্ত-কি কথা ভাইয়া?

জোবান-মানে মানুষ এত কি ভুলো মনের থাকে যে নিজের জন্মদিন ভুলে যায়।

শান্ত-আপু এমনই,,, বিয়ের আগেও ভুলে যেতো।

জোবান-যাই হোক,,, আমি এখন কেক নিতে এসেছি।তোমরা প্ল্যান অনুযায়ী বাড়িতে চলে এসো।

শান্ত-আচ্ছা ভাইয়া। (বলে ফোন রেখে দিলো)

————

সন্ধ্যায় আমরা সবাই ক্লান্ত হয়ে বাড়িতে আসলাম আমি অভস্য এতটা ক্লান্ত না।কারণ এরা আমাকে গাড়িতে বসিয়েই নিজেরা নিজেরা ঘুরেছে এবং শপিং করেছে।এই নিয়ে আমার ওদের উপর খুব রাগ হচ্ছে। যখন আমায় সহ নিয়ে ঘুরবিই না তখন শুধু শুধু এই অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার দরকার কি ছিলো।আমি রেগে ওদের আগে এসে দরজাটা খুলে ভয় পেয়ে গেলাম।পুরো বাড়ি অন্ধকার হয়ে আছে।আমি পেছনে ফিরে যেই ওই তিনজনকে ডাকতে যাবো ওমনি দেখি ওই তিনজন ওখানে নেই।এটা দেখে আরো ভয় পেয়ে গেলাম কোথায় গেলো ওরা।আমার ভয়ে এবার অসস্তি লাগছে,, তাড়াতাড়ি ফোনের প্লাস লাইটটা অন করে বাড়ির ভেতরে ডুকলাম।আমি বাড়ীতে ডোকার সাথে সাথে সব লাইট একসাথে জ্বলে উঠে আর সবাই একসাথে আমাকে বলে “Happy Birthday Shishir🎂🍰🥧”। কিন্তু আমি এসবে কোনো কান না দিয়ে ওখানেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যেতে নেই।কিন্তু পেছন থেকে শান্ত এসে আমাকে ধরে ফেলে।

————-

জোবান-এত প্ল্যান করলাম সব এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো।

শিরিন-সরি ভাইয়া আমাদের জন্য।

জোবান-না না তোমরা তো সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই লুকিয়েছিলে।কিন্তু কে জানতো যে শিশির ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যাবে।

লিনা-ভাইয়া আপনি ওসব ছেড়ে এখন শিশিরকে নিয়ে ভাবেন।মেয়েটা সেই সন্ধ্যায় যে অজ্ঞান হয়েছে এখনো চোখ খুলেনি।

জোবান-হুম।

শিশিরের আম্মু-আসবো??(দরজার সামনে দাঁড়িয়ে)

জোবান-আরে মা আসুন অনুমতি নেওয়ার কি আছে??

আম্মু-কি বলবো বলো,,, তুমি শিশিরের জন্য এতো আয়োজন করলে অথচ এদের জন্য তা আর হলো না।

শিরিন-মা আমরা তো আর জানতাম না আপু এত ভয় পেয়ে যাবে আমাদের না দেখে।

আম্মু- এই অবস্থায় ভয় পেলে বাচ্চার ক্ষতি হয়।

জোবান-কি???

আম্মু-হুম,,, কালকে ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেও ঠিক আছে।

জোবান-জ্বি।

রাতে এসব কথা বলেই সবাই চলে যায়।ওনারা যাওয়ার পর প্রায় ১১ঃ৩০ টার দিকে আমি ঘুম থেকে উঠি।আমাকে উঠতে দেখে জোবান কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে যায়।ওনার যাওয়ার পানে কিছুক্ষণ তাকিয়ে আমি উঠে ফ্রেশ হতে গেলাম।ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখি জোবান এক প্লেট বিরিয়ানি আর এক পিস কেক নিয়ে বসে আছে।আমাকে দেখে উনি খাবার নিয়ে আমাকে খাওয়াতে শুরু করেন।ক্ষুধার্থ থাকায় আমিও চুপচাপ খাবার খেয়ে শুয়ে পরলাম।জোবানও প্লেট রেখে এসে আমার পাশে এসে শুয়ে পরে।এতক্ষণ ঘুমানোর কারণে আমার ঘুম আসছিলো না।কিন্তু কিছুক্ষণ ঘড়াঘড়ি করার পর আবার ঘুমিয়ে যাই।পর দিন সকালে আমি জোবানের ডাকে ঘুম থেকে উঠি।

জোবান- রেডি হয়ে নাও।

আমি-কেনো??

জোবান-বাড়ীতে যাবো।

আমি-কেনো??

জোবান-কেনো মানি??

আমি-এসেছি কয়দিনই বা হলো???

জোবান-এসেছো এক মাস হতে চললো।এখন বেশি পটর পটর না করে রেডি হও।

আমি-এক মাস তো আমাকে ছাড়া থাকতে পারলেন আর কিছুদিন থাকতে পারবেন না।

জোবান-না পারবোনা।

আমি-নাটক করেন আপনি,,, এই মাসে তো আমার খোঁজ নেওয়া দূরে থাক আমাকে একটা ফোনও দেননি।

জোবান-তো তুমি কি বলতে চাও???তুমি যতবারই ফালতু এক্সকিউজ দেখিয়ে তোমার বাপের বাড়ী আসবে আমি ততবারই তোমাকে আদর সোহাগ করে ওই বাড়ীতে নিয়ে যাবো।(রেগে)

আমি-আমি ফালতু এক্সকিউজ নিয়ে আমার বাপের বাড়ী আস???জোবান আমি আপনার উপর রাগ করে এ বাড়িতে শুধু দুবার এসেছি।হ্যাঁ মানলাম এবারে আসাটা আমার ঠিক হয়নি কারণ আমি আপনাকে ভুল এসেছি তাই।কিন্তু এর আগের বার আমি ফালতু এক্সকিউজ দিয়ে আসিনি।

জোবান-শিশির আমার ভালো লাগছে না।তুমি প্লিজ তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসো।আর তোমার জামা কাপড় আমি ঘুছিয়ে নিয়েছি।(বলে চলে গেলো)
————
উনি বাড়ী থেকে আমাকে সোজা হাসপাতালে আনলেন।হাসপাতাল থেকে বাড়িতে এসে আমরা অবাক হয়ে যাই।কারণ বাড়িতে জেরিন আপু আর বাবা আছে।

জেরিন-ভাবী কেমন আছো তুমি???(আমার কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে)

আমি-ভালো আছি আপু,,,কতদিন পর তোমাকে দেখলাম।ওইদিন যে গেলে আর তো আসলেই না।

জেরিন-সরি গো,,,আসার পারমিশন পাইনি।

আমি-বাবা আসসালামু আলাইকুম।

বাবা-ওয়ালাইকুম আসসালাম।কেমন আছো তুমি?

আমি-এই তো ভালো।

বাবা-তা আমাকে দেখে অবাক হওনি।

আমি-অবাই হইনি তো বরং সারপ্রাইজড হয়েছি।

বাবা-যাও ঘরে যাও।

আমি-জ্বি।

সেদিনের পর থেকে অনেক দিন কেটে গেলো।এতদিন জোবান একা খেয়াল রাখলেও এখন বাবা আর আপু ও যোগ হয়েছে।বাবা আর আপু থাকায় আমার এতদিন ওনাদের সাথে গল্প করেই কেটেছিল।আজ বিকালে যখন আমি শুয়ে ছিলাম তখন হঠাৎ আমার পেটে ব্যাথা অনুভব হয়।আমি প্রথমে পাত্তা না দিয়ে সেই শুয়েই ছিলাম।কিন্তু পরে যখন আরো তীব্র ব্যাথা অনুভব করি তখন আমি বুঝতে পারি আমার বাচ্চা আজ পৃথিবীর আলো দেখতে চলেছে।

-চলবে।