তোর আসক্তি পাগল করেছে আমায় পর্ব-২৮+২৯

0
2901

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_২৮
.
–“সারা বেবি তুমি ওম বেদ নিশান রুহি শান্তা জাকিয়া এক সাথে লাঞ্চ করে নিও আমার জন্য ওয়েট করতে হবে না। বেলা এক নিশ্বাস এর সাথে বলে ওঠে। একবার কিচেন আর একবার ডাইনিং রুম করে।
.
–” মিষ্টি তুমি একটু রিলাক্স হও। আমরা ঠিক লাঞ্চ করে নেবো। জাকিয়া বলে ওঠে।
.
–“আজ মনে হয় তোর আনন্দ দ্বিগুণ বেড়ে গেছে হু। বেদ চেয়ার টেনে বসে বলে ওঠে।
.
–“হুম একদম তাই তো মনে হচ্ছে দেখ না কেমন ছুটে চলেছে সকাল থেকে। শান্তা বলে ওঠে।
.
–” ওহহো টুসুন বেবি আজ আমার আনন্দ কোনো উৎসব এর থেকে কম নয়। বাই দ্যা ওয়ে আমি রেডি হতে গেলাম। হেসে চলে যায় বেলা।
.
. আজ বাড়ির মহল খুশি খুশি লাগছে না? একদম তাই বাড়িতে খুশির আলো দেখা যাচ্ছে। এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে বেলা এখন পুরো পুরি সুস্থ। সাঁঝ এর কেয়ার ভালোবাসা আর বেস্ট মেডিসিন আর প্রপার ট্রিটমেন্ট এর জন্য বেলা সাতদিন এর মধ্যে ঠিক হয়ে গেছে। তবে তার হাতে আর পায়ে এখন ও অল্প অল্প পুড়ে যাওয়ার দাগ আছে। আজ সকালেই সাঁঝ এর থেকে বেলা পারমিশন পেয়ে গেছে ছুটে হেঁটে বেড়াবার। তবে বেশি নয় নিয়ম মাফিক। কিন্তু বেলা তো বেলা। এক সপ্তাহ পর আজাদি পেয়েছে সেটা কি আর কোনো নিয়ম মেনে চলে। তাই সাঁঝ সকালে অফিসে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে বেলার নাচন কোদন শুরু হয়ে গেছে।
.
. বেলা রেডি হচ্ছে ।এখন সে সাঁঝ এর অফিসে যাবে। সকাল থেকে সাঁঝ এর পছন্দ মত ডিশ বানিয়েছে। জানে এতে রাগ করবে আবারো আগুনের কাছে যাওয়ার জন্য। তাতে কি তাকে দেখলে সব রাগ পানি করার জন্য তৈরী হচ্ছে। সাঁঝ এর পছন্দের কালার ফুল স্লিভ ট্রান্সপারেন্ট ব্ল্যাক ম্যাক্সি ড্রেস। চুল গুলো কে হাল্কা কার্ল করে ছেড়ে দিয়েছে। ঠোঁটে ওয়াইন কালার লিপস্টিক। চোখে গাড়ো করে কাজল টেনেছে। হাতে ব্ল্যাক স্টোন এর ব্রেসলেট ও আরেক হাতে ব্ল্যাক স্টোন এর ঘড়ি। পায়ে ব্ল্যাক স্ট্রাপেড হিল। পুরোই ব্ল্যাক গেট আপ নিয়েছে সাঁঝ কে আবার ও নতুন করে তার নেশায় আসক্ত করার জন্য। ব্যাস বেলার এই লুকে কুপোকাত হবে আজ সাঁঝ। আয়নায় নিজেকে দেখে নিয়ে বাঁকা হেসে বেরিয়ে যায় বেলা।

—————

সাঁঝ অফিসে বেসমেন্টে গাড়ি পার্ক করিয়ে নেমে ভিতরে ঢুকে যায় বেলা। অফিসে তাকে অনেকে চেনে আগের এখানে কাজ করার জন্য। আবার কিছু চেনে তাকে অফিসের মালিক এর বউ হিসাবে। অফিসে ঢুকতে সবাই তার দিকে হ্যাঁ করে তাকিয়ে আছে। বেলা এগিয়ে যায় রিশেপসান এর দিকে।
.
–“সাঁঝ… বেলা কে পুরো বলতে দেয় না।
.
–“গুড নুন ম্যাম। স্যার এখন একটা মিটিংয়ে আছে।আপনি কেবিনে গিয়ে বসুন। হেসে বলে ওঠে রিশেপসানে থাকা মেয়েটি।
.
–ওকে থ্যাঙ্কস । বেলা হাসার চেষ্টা করে বলে ওঠে।
.
. বেলা সাঁঝ এর কেবিনের দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই সামনে এসে দাঁড়ায় দিশা। পুরো অ্যাটিটিউড নিয়ে বেলা কে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঘুরতে থাকে। মুখে রয়েছে শয়তানি ভাব। বেলা হঠাৎ করে সামনে কেউ এসে যাওয়াতে দাঁড়িয়ে পড়ে সামনে দিশা কে দাঁড়াতে দেখে ভ্রু কুঁচকে যায়। দিশার মুখ চোখ দেখে বেলার অন্য রকম লাগে। তার ওপরে আবার তাকে ঘুরে ঘুরে দেখছে।
.
–“হে বেলা। কেমন আছো? তুমি হঠাৎ এই অফিসে? কোনো দরকার ছিল। দিশা বলে ওঠে।
.
–” আমি তো ভালো আছি। কিন্তু মনে হয় আপনি ভালো নেই। বেলা তীক্ষ্ণ গলায় বলে ওঠে।.
.
. এই প্রথমবারের জন্য দুজনের কথা হচ্ছে। এর আগেও দেখা হলেও বেলা এড়িয়ে গেছে বা হেসে পাশ কাটিয়ে গেছে।
.
–” আমি? আমি তো খুব ভালো আছি। আসলে আমি যতক্ষন অফিসে সাঁঝ এর সাথে থাকি ততক্ষণ খুব ভালো থাকি দুজন একসাথে অনেক টাইম স্পেন্ড করি। দিশা শয়তানি হেসে বলে ওঠে।
.
–” বাই দ্য ওয়ে তুমি অফিসে কি কোনো দরকার এর জন্য এসেছিলে? আমি জানি তোমার সাথে সাঁঝ এর রিলেশন । আর এটাও জানি যে ও ওর মন যতো দিন তোমার প্রতি আছে ততদিন তোমাদের রিলেশন আছে। তোমার খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি আমি সাঁঝ কে ছোট্ট থেকে চিনি। এক জিনিসের ওপরে ওর বেশি দিন মন টেকে না। তাই তোমাকে আগে থেকেই বলছি। আর সাঁঝ পছন্দ ও করে না ওর কাজের জায়গায় এই ভাবে এসে কেউ ডিসট্রাব করুক। মিথ্যে সহানুভূতি দেখিয়ে বলে ওঠে দিশা।
.
. বেলা কোনো কথা না বলে চুপচাপ শুনে যাচ্ছে কথা গুলো। দিশা একবার বেলার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে বেলার মুখে কোনো অনুভূতির চিহ্ন নেই। তাই আবারো বলে ওঠে।
.
–“আর তাছাড়া ওর মিটিং শেষ হলে আমাদের আজকে লাঞ্চ তারপর লং ড্রাইভ যাওয়ার প্ল্যান আছে। অনেক দিন দিয়ে সাঁঝ এর সাথে কোনো টাইম কাটানো হয়নি তাই সাঁঝ খুব বিরক্ত হয়ে আছে। তাই আজকে এসেই প্ল্যান করে নিয়েছে আমরা আজকে পুরোটা সময়ে এক সাথে থাকবো। দিশা বেলা কে দেখিয়ে লজ্জা পাওয়ার ভান করে বলে ওঠে।
.
. বেলা কোনো কথা বলে না চুপচাপ দিশার কথা গুলো শুনে যাচ্ছে। মনে মনে রাগ হচ্ছে তার কিন্তু মুখে কোনো রকম চিহ্ন নেই রাগ এর।
.
–“হয়ে গেছে? বলা শেষ? এবার আমি যেতে পারি? বলে দিশার হতভম্ব হয়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকায়।
.
. এতক্ষণ ধরে বলা কথা গুলোর কোনো রকম প্রতিক্রিয়া ছাড়াই কোনো কথা না বলে তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে ভেবে দিশা হতভম্ব হয়ে গেছে। বেলা পাশ কাটিয়ে চলে যেতে গিয়েও ফিরে আসে।
.
–” ওহ হ্যাঁ আর একটা কথা নাইস ট্রাই। বাঁকা হেসে ওঠে বেলা। আসলে আমি এই সব ট্রিকে পা দেয় না। আমার বিশ্বাস এত টা ও ঠুংকো নয়। এই গুলো খুব সস্তা ছিল। ইউনিক কিছু ট্রাই করো তাহলে কাজে দেবে কেমন? আর থ্যাঙ্কস। আমার কিছু বিভ্রান্তি পরিষ্কার করে দেয়ার জন্য। বলে বেলা চলে যায় সাঁঝ এর কেবিনে।
.
. এদিকে বাইরে দাঁড়িয়ে ফুসছে দিশা। প্রথমে হতভম্ব হয়ে গেলেও বেলার বলা কথা গুলো শুনে রাগের পারদ যেনো চড়ে গেছে। নিজের কেবিনে গিয়ে টেবিলের ওপরে থাকা জিনিস পত্র ফেলে দেয় নিচে। রাগে পাগল হয়ে যাচ্ছে । সে বেলার সামনে এত কিছু বললো বেলা কে ছোটো করলো অথচ বেলা উল্টে তাকে অপমান করে চলে গেলো এটা ভাবতেই মাথা ছিড়ে যাচ্ছে দিশার। মাথা চেপে বসে পড়ে চেয়ারে।
.
–“আমাকে অপমান করা। ঠিক আছে তোমার খুব বিশ্বাস তাই না। আর যেনো কি বললে তোমার বিশ্বাস ঠুংকো নয়। তুমি এই সব ট্রিকে পা দাও না। সাঁঝ এর ওপরে তোমার খুব বিশ্বাস না এই বিশ্বাস যদি না আমি ভেঙে গুড়িয়ে দিতে পেরেছি তাহলে আমার নামও দিশা মির্জা না। তখন দেখব কোথায় থাকে তোমার বিশ্বাস। সাঁঝ কে নিয়ে খুব বড় বড় কথা না। সেই সময়ে আমিও দেখব কোথায় থাকে সেই বড় বড় কথা আর বিশ্বাস। তোমার থেকে আমি সাঁঝ কে কেড়ে নেবো। সাঁঝ শুধু আমার। তোমার চোখের সামনে সাঁঝ কে আমার হতে দেখবে তুমি। আর আমিও তখন দেখব তোমার বিশ্বাস এর জোর কতটা? এবার বোঝা যাবে তোমার বিশ্বাস এর জোর বেশি নাকি আমার করা প্ল্যান এর। বলেই ঘর কাঁপিয়ে হাসতে থাকে দিশা।
.
.
.
. 💝💝💝
.
. চলবে…..

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_২৯
..সাঁঝ এর কেবিনে বসে আছে বেলা। চোখ মুখ পুরো রাগে লাল হয়ে আছে। এতক্ষণ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে রাখলেও এখন আর রাগ টা ধরে রাখতে পারছে না। দিশার বলা প্রত্যেকটা কথা যেনো এখনও গায়ে কাঁটার মত ফুটে যাচ্ছে। আর তার সাথে দিশার ইন্টেনশন বুঝতে আর বাকি নেই। আর এখন তার কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে এর আগে তার কাছে কে সাঁঝ এর সাথে দিশার ক্লোজ ছবি গুলো তাকে পাঠিয়ে ছিল। এগুলো ভাবতেই মাথা ফেটে যাচ্ছে রাগে। সকাল থেকে ফুরফুরে থাকা মন মেজাজ টা পুরো বিগড়ে গেছে।
.
. সাঁঝ তাড়াতাড়ি মিটিং শেষ করে তার কেবিন এর দিকে আসতে থাকে। সে জানত বেলা আসছে তার কাছে। সে অফিসে আসলেও তার নজর ছিল ল্যাপটপ স্ক্রিন এর ওপর যেটা পুরো বাড়ির ফুটেজ ভেসে ওঠে। তাই সকালে তার বেরোনোর পর থেকে বেলার প্রতিটা মুভমেন্ট দেখে গেছে। আর এখন সামনে থেকে বেলা কে দেখে তার চোখের তৃষ্ণা মেটাতে চাইছে তাই সময় যেনো আর কাটতে চাইছে না। কেবিনে ঢুকতে সরাসরি চোখ যায় সামনে সোফায় বসে থাকা বেলার ওপর। আর সাথে সাথে সাঁঝ এর চোখ মুখ কুঁচকে যায়। কারণ বেলার চোখ মুখ পুরো লাল হয়ে আছে। মনে হচ্ছে প্রচুর রেগে আছে। কিন্তু কেনো? হল টা কি? তার আসতে দেরি হয়েছে তাই কি? সাঁঝ নিজের মনে ভাবতে ভাবতে বেলার দিকে এগিয়ে যেতে লাগে।
.
. বেলার পাশে গা ঘেঁষে আসতে করে বসে মুখ ঝুকিয়ে বেলা কে দেখতে থাকে সাঁঝ। বেলা বুঝতে পারে যে সাঁঝ এসেছে তাও কোনো প্রতিক্রিয়া না করে চুপচাপ বসে থাকে গুম হয়ে। সাঁঝ আরো একটু সরে এসে বেলা কে টেনে নিজের কোলের ওপর টেনে এনে বসায়। এবারে বেলা আগুনে চোখে তাকায় সাঁঝ দিকে মনে হচ্ছে এখুনি এই চোখ দিয়ে ভষ্ম করে দেবে। সাঁঝ ও অবাক হয়ে যাওয়ার ভান করে ভয় পাওয়ার চেষ্টা করে। তারপরেই মুচকি হেসে বেলার থুতনি ধরে একটু উঁচু করে তোলে। তার পরেই টুপ করে বেলার থুতনিতে থাকা তিল এর ওপরে হালকা একটা বাইট বসিয়ে দেয়। বেলা হাত দিয়ে সাঁঝ কে সরিয়ে দেয়। কোলে থেকে উঠে যেতে নিলে সাঁঝ আরো জোরে চেপে বসিয়ে রাখে। ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন চোখে তাকায় বেলার দিকে।
.
–“ছাড়ো আমাকে বাড়ি যাব। বেলা অভিমান নিয়ে বলে ওঠে।
.
–” কেনো? হুম? বেলা কে নিজের সাথে আরো একটু মিশিয়ে নিয়ে বলে ওঠে।
.
–“না আসলে আমি তোমার কাজের মাঝে এসে ব্যাঘাত ঘটিয়েছি। আমি জানতাম যে তুমি আমাকে এখানে আশা পছন্দ করবে না। তাই আর তোমার সময় নষ্ট করতে চাই না। বলেই বেলা নিজেকে ছাড়াতে যায়।
.
. এতক্ষন এর জমে থাকা রাগ টা পুরো পুরি অভিমান হয়ে সাঁঝ এর ওপরে ঝড়ে ঝড়ে পড়ছে।
.
–” মানে? এইসব ভুল ভাল কথা কোথায় পেয়েছ তুমি? হুঁ? তুমি জানো না আমি পারলে তোমাকে আমার বুকের মাঝে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। তোমাকে ফটো ফ্রেম এর মত সব জায়গায় আমার সামনে সাজিয়ে বসিয়ে রাখি। তাহলে তুমি এমন কথা বলছো কেনো হঠাৎ করে। সাঁঝ কিছুটা জোরে তীক্ষ্ণ ভাবে বলে ওঠে।
.
. বেলা কোনো কথা না বলে নিজের মুখ অন্য দিকে ফিরিয়ে রেখেছে। সে জানে সাঁঝ তাকে কতটা ভালোবাসে। তার প্রতিটা কথার সত্যতা। সে জানে যদি সম্ভব হতো তাহলে সাঁঝ এর বলা প্রতিটা কথা সাঁঝ করে দেখাতো। তার পরেও দিশার বলা কথা গুলো তার কানে বাজে। আর চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই পুরোনো দিনের ছবি গুলো। আর এগুলো দেখেই যেনো রাগ জেদ অভিমান সব কিছু এক সাথে মাথায় চাড়া দিয়ে ওঠে।
.
–“আমার মনে হয় তোমার কোথাও যাওয়ার প্রোগ্রাম ছিল। তাই আমার চলে যাওয়া উচিত। আমার কারণে তোমাকে এখানে এখনও বসে থাকতে হচ্ছে। তাই আমি চলে যাচ্ছি তুমি বরং তোমার প্রোগ্রাম এর দিকে যাও। বেলা বলে ওঠে।
.
–” এই? এদিকে তাকিয়ে বল দেখি। আমি তোমাকে একবারও বলেছি আমি কোনো প্রোগ্রামে যাব? বা আমার কোনো প্রোগ্রাম আছে? তাহলে কথা উঠছে কেনো? সাঁঝ জিজ্ঞেস করে ওঠে।
.
. বেলা কোনো কথা বলে না চুপচাপ মাথা ঘুরিয়ে বসে আছে। দাঁত দিয়ে ঠোঁট দুটো কে পিষে যাচ্ছে। সাঁঝ বেলার কান্ড দেখে এবার কিছুটা জোরে বেলা কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়।
.
–“কি হল কথা বলছো না কেনো এখন? বল আমি বলেছি তোমায়? সাঁঝ কিছুটা ধমক দিয়ে বলে ওঠে।
.
–” আর তুমি আমার জিনিসের ওপরে অত্যাচার করছো কেনো শুনি? চোখ রাঙিয়ে বেলার ঠোঁটে আঙুল বুলিয়ে বলে ওঠে।
.
–“এক সপ্তাহ বাড়িতে ছিলে হয়তো বিরক্ত হয়ে গেছ। এখন রিফ্রেসমেন্ট এর দরকার তাই বাইরে যেতে পারো। কোথাও কোনো প্রোগ্রাম থাকতে পারে। বেলা এবার সাঁঝ এর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।
.
. যেখানে বেলা আসতে আসতে দেখতে পায় নীল গভীর চোখ জোড়া কেমন লাল হতে শুরু করেছে। কপালের রগ গুলো ফুলে ফুলে উঠতে শুরু করেছে। সাঁঝ এতক্ষণ ধরে বেলার এই সব আজগুবি কথায় বিরক্ত হচ্ছিলো আর এই কথা শুনে রাগে আগুন হতে শুরু করে আর রাগ টা কে নিয়ন্ত্রণ করে রাখতে পারছে না। তার সামনে এখন অন্য কেউ থাকলে এতক্ষণ তার মুখের জিওগ্রাফী পাল্টে দিত কিন্তু আফসোস এটা বেলা তাই এই চিন্তা আনা ও পাপ। সাঁঝ নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে এক হাত বেলার কোমরে শক্ত করে চেপে ধরে আর একহাত মাথার পিছনে চুল টেনে ধরে নিজের মুখের সমান করে। নিজের ঠোঁট দিয়ে বেলার ঠোঁটে ডুবে দেয়। প্রথমে জোরে জোরে শুরু করে কামড় দিতে থাকে নিজের রাগ কমাতে। বেলা নিজের হাত একটা সাঁঝ মাথায় আর গলায় রাখে। এদিকে সাঁঝ বেলার স্পর্শ পেয়ে আসতে আসতে নিজের রাগ কন্ট্রোল হয়ে আসে। আসতে আসতে এবার কামড় চুমু তে পরিনত হয়ে যায়। শুষে নিতে থাকে বেলার ওয়াইন কালার ঠোঁটের রস। মেতে ওঠে বেলা কে নিয়ে। সকালে যখন বেলা রেডি হচ্ছিলো তখন সামনে থাকা ফাইল ফেলে রেখে বেলা কে দেখ ছিল। ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাতে দেখেই সাঁঝ এর মনের মধ্যে ঝড় শুরু হয়ে গিয়েছিলো। কখন বেলা কে পাবে আর কখন ডুব দেবে বেলার ওই ঠোঁটের মাঝেই। এমনিতেই বেলা কে দেখলে নিজেকে সামলাতে পারে না। আর তার ওপরে যদি বেলার ঠোঁটে লিপস্টিক লাগানো দেখে তখন তো আর শ্বাস নিতে পারে না দম আটকে আসে পুরো নেশায় আসক্ত হয়ে যায় সাঁঝ।
.
. ওদের এই অবস্থায় দেখে বাইরে থেকে দিশা রাগে ফুসছে। শক্ত করে নিজের হাতে নিজের অন্য হাতের নখ বসিয়ে দিয়েছে। চোখ মুখ কেমন যেনো হিংস্র হয়ে উঠেছে। পারলে মনে হয় এক্ষুনি বেলা কে মেরে ফেলবে। দিশা এসেছিল আবার ও বেলার মনে বিষ ঢালার জন্য। কিন্তু এসেই এই দৃশ্য দেখেই তার মাথায় যেনো আগুন ধরে গেছে। নিজেই নিজেকে আঘাত করে যাচ্ছে নিজের রাগ কমাতে।

—————-
রেস্টুরেন্টে চেয়ারে বসে আছে রুহি। আর তার সামনে বসে আছে সারিফ ।যে এখন নিজের খাওয়াতে মন দিয়েছে। আর রুহি আগুন চোখে তাকে দেখে যাচ্ছে। কিন্তু সে দিকে সারিফ এর কোনো হেলদোল নেই সে নিজের মত করে খেয়ে যাচ্ছে। সারিফ অফিসে এসেছে। এতদিন সাঁঝ অফিসে না যাওয়ার জন্য তাকে প্রচুর চাপ নিতে হয়েছিল। আজ সাঁঝ অফিসে এসেছে তাই একটু ফাঁকা পেয়েছে। আর তাই ফোন করে রুহি কে আর্জেন্ট ডেকে এনেছে। কিন্তু রুহি এসে দেখে কেউ নেই। বসে বসে আধা ঘন্টা পার হয়ে যাওয়ার পর সারিফ আসে। কোনো কথা না বলেই অর্ডার করে খেতে থাকে। এদিকে চিন্তায় রুহির এতক্ষণ মাথা ফেটে যাচ্ছিলো। হটাৎ করে এমন আর্জেন্ট ডাকার জন্য।
.
–“কি হল তুমি না খেয়ে অমন করে তাকিয়ে আছো কেনো? সারিফ মাথা তলে রুহি কে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে ওঠে।
.
–” তোমার খাওয়া হলে তোমাকে খাবো তাই। চিবিয়ে চিবিয়ে বলে ওঠে রুহি।
.
. এমন কথাই হঠাৎ করে অবাক হয়ে গেছে সারিফ। প্রথমে খুশি হলেও রুহির চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে অনেক রেগে গেছে কিন্তু কেনো?
.
–” ওহ আমাকে খাবে বললেই হয়। আমি কি না করছি ।নাও খাও আমি পুরোটাই তোমার। হাসার চেষ্টা করে বলে ওঠে সারিফ।
.
. রুহি কোনো কথা না বলে চেয়ার টেনে একদম গা ঘেঁষে বসে এক হাত এগিয়ে নিয়ে সারিফ এর কলার টেনে এনে গলায় জোরে কামড় বসিয়ে দেয় রুহি। এদিকে এত জোরে কামড় এর ফলে সারিফ এর জান যায় যায় অবস্থা। মৃদু চিৎকার করে ওঠে মুখ দিয়ে। হটাৎ এমন আক্রমণ এর জন্য প্রস্তুত ছিল না সে মোটেও। চারিদিকে একবার তাকিয়ে দেখে। অনেকেই তাদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। রুহি সরে বসতেই সারিফ হাফ ছেড়ে বাঁচে। নিজের গলায় যেখানে রুহি কামড়ে নিয়েছে সেখানেই হাত বুলাতে বুলাতে বলে ওঠে।
.
–“এটা কেনো? হটাৎ কামড় কেনো? সারিফ অসহায় মুখ করে বলে ওঠে।
.
–” কেনো চুমু খেতে পারিস আর কামড় খেটে পারবি না? কেনো? চুমু খেতে তো অনেক মজা লাগে তো কামড় খেয়ে মজা লাগে না? রেগে জোরে বলে ওঠে রুহি।
.
. এদিকে সারিফ এর তো পুরো হাওয়া টাইট হয়ে গেছে। রুহির মত লাজুক লতা হঠাৎ করে এমন বাঘিনী হয়ে গেলো কি করে। যে কাল পর্যন্ত তাকে দেখে লজ্জা পেতো আজ সে ভরা রেস্টুরেন্টে তার গলায় কামড় বসালো। ভাবতেই অবাক লাগছে তার ওপরে এখন তুই তুকারি করছে তাকে। অবাক হয়ে দেখছে চোখ বড় বড় করে রুহি কে।
.
–“কি হয়েছে তোমার? হঠাৎ করে এমন করছো কেনো? অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে সারিফ।
.
–” তোর মাথা হয়েছে। তুই এখানে খেতে এসেছিস শুধু? কেনোরে তোর পেটে কি দশ বারোটা বাচ্চা আছে যে এসেই খেতে শুরু করেছিস? নাকি বছর বছর না খেয়ে আছিস? যখন খেতে এসেছিস তো আমাকে কেনো ডাকলি এখানে। রুহি চিৎকার করে বলে ওঠে।
.
–” কি সব বলছো? আর এটা কি ভাবে কথা বলছো তুমি? সারিফ চোখ বড় বড় করে বলে ওঠে।
.
–” কেনো রে আমি কি উর্দু ভাষায় কথা বলছি নাকি যে বুঝতে পারছিস না। রুহি দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে।
.
–“তুই এসেই খেতে শুরু করেছিস। আমাকে কি তোর চোখে পড়েনি? আমাকে বসিয়ে রেখে খেয়েই যাচ্ছিস? আরে যখন খাবি তখন আমাকে বসিয়ে রাখার কি দরকার। একা একা খেতে পারিস তো নাকি? আমি এদিকে চিন্তা করে যাচ্ছি ওকে নিয়ে যে কি হল হঠাৎ এমন করে কেনো ডাকে? আর এদিকে ও গিলে যাচ্ছে। শালা সব ছেলে এক রকম বাল। প্রথম প্রথম সোনা বেবি আর কিছুদিন পর থেকে তো চোখেই দেখবে না। রাগে দাঁত পিষে বলে ওঠে রুহি।
.
. এতক্ষণ পর সব কিছু পরিষ্কার হলো সবটা সারিফ এর কাছে। রুহি এর এমন ব্যবহার দেখে পুরো অবাক হয়ে গেছে। প্রথমে লজ্জা ছেড়ে সবার সামনে তাকে কামড় দিলো তারপর তুইতুকারি। আর এখন শেষে গালাগালি করছে। হায়রে একি মেয়েরা বাবা এত পুরো বিষ মেয়ে পুরোই মিছরির ছুরি। সারিফ এক হাত বাড়িয়ে রুহি কে জড়িয়ে নেয়। মুখ টা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে ঠোঁটের ওপরে আলতো করে নিজের ঠোঁট দিয়ে চুমু খায়। আর এতক্ষণ রাগে ফুলতে থাকা রুহি পুরো বেলুন এর মত চুপসে গেছে হটাৎ এমন করাতে। সারিফ এর দিকে তাকাতে দেখতে পায় তার দিকে কেমন দুষ্টু হেসে তাকিয়ে আছে। রুহির গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। এখন সব রাগ হওয়া হয়ে গেছে। মুখে এখন যতো রাজ্যের লজ্জা এসে জমা হয়েছে। সারিফ দুষ্টু হেসে পানির গ্লাস এগিয়ে দেয় রুহির দিকে। এদিকে এক নিশ্বাসে পুরো শেষ করে ফেলে।
.
–“স্যরি । এখন ঠিক আছে। চোখ টিপে বলে ওঠে সারিফ।
.
. রুহি লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। আর সারিফ অপলক দেখতে থাকে রুহির লজ্জা মাখা মুখটা। এটাই তো চাই প্রতিটা সম্পর্কের মাঝে ভুল যার হোক না কেনো একটা স্যরি প্রিয় মানুষ কে মুহূর্তে খুশি করে দিতে পারে। সম্পর্ক টাকে ভেঙে যাওয়া বা ঝগড়া থেকে বিরত রাখে।

——————-

–“চলো ঘুরে আসি। আজ আর কোনো কাজ নয়। তোমাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াব আজকে। না থাকবে কোনো বাধা আর না থাকবে কোনো হাই লেভেল পরিচয়। আজ আমরা আমাদের মত করে ঘুরে বেড়াব। পুরো উল্টো না কোনো বাঁধা মানব আর না কোনো নিয়ম। আজ শুধু আমরাই আমাদের মর্জির মালিক। মন যা চায় তাই করব। সাঁঝ হেসে বলে ওঠে বেলার কোলে শুয়ে শুয়ে।
.
.সাঁঝ তার কেবিনে সোফায় বেলার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে দু হাতে কোমর জড়িয়ে রেখে। আর বেলা হাত দিয়ে সাঁঝ এর সিল্কি চুল গুলোর মাঝে নিজের আঙুল চালিয়ে খেলা করে যাচ্ছে। হটাৎ সাঁঝ এর এমন কথায় হকচকিয়ে যায়।
.
–“হঠাৎ আজকে নিয়মের মানুষ নিয়ম এর বাইরে যেতে চাচ্ছে কি ব্যাপার? বেলা ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।
.
–“আজ বড্ড ইচ্ছে করছে তোমাকে নিয়ে অজানার উদ্দেশে ঘুরে বেড়াতে। মন চাইছে বড্ড বেসামাল হতে। আজ কোনো নিয়ম মানতে ইচ্ছে করছে না। আজ সব কিছুর উর্ধে গিয়ে তোমাকে নিয়ে প্রেমের জুয়ারে ভাসতে ইচ্ছে করছে। সাঁঝ বলে ওঠে বেলার পেটে নাক ঘসে।
.
. সাঁঝ এর এমন করায় বেলা কেঁপে ওঠে সাঁঝ এর মাথায় থাকা হাত টা শক্ত করে চেপে বসে। সাঁঝ চোখ খুলে মুখ ঘুরিয়ে বেলার দিকে তাকায় দেখে চোখ বন্ধ করে বসে আছে। হটাৎ সাঁঝ উঠে বসে যায়। নিজে উঠে দাঁড়িয়ে বেলার হাত ধরে দাঁড় করিয়ে দেয়। বেলার কাছে এগিয়ে গিয়ে বেলার ঘেঁটে যাওয়া চুল ঠিক করে দেয়। আর ড্রেস টা ও গুছিয় দেয়।
.
–“চলো। বলে সাঁঝ বেলার হাত টেনে নিয়ে যেতে থাকে।
.
. এদিকে বেলা পুরো অবাক বনে যায়। এতক্ষণ মনে হচ্ছিলো এমনি এমনি বলছে এখন তো দেখে এর মাথায় এখন বেসামাল হওয়ার ভূত চেপে বসেছে। কি করতে চাইছে বুঝতে পারছে না বেলা। চুপচাপ দেখে যাচ্ছে আর ভেবে যাচ্ছে এই মানুষ কি করতে চলেছে। সাঁঝ বেলা কে এনে গাড়িতে বসিয়ে দেয়।গাড়ি স্টার্ট দিয়ে গাড়ির রুফ খুলে দেয়। টান দিয়ে বেরিয়ে যায় বেলা কে নিয়ে সাঁঝ। কোথায় যে নিয়ে যাচ্ছে তাকে সাঁঝ সেটাই বুঝতে পারছে না বেলা।
.
.
–“যতো ইচ্ছা এখন আনন্দ করে নাও তোমার খুশি আমি খুব তাড়াতাড়ি কেড়ে নিতে চলেছি। তারপর দেখব কোথায় থাকে তোর মুখের ওই হাসি। বিশ্বাস টা যে খুব তাড়াতাড়ি ভেঙে গুটিয়ে যেতে চলেছে। তৈরী থাক। দাঁতে দাঁত চেপে বাঁকা হেসে বলে ওঠে দিশা। এতক্ষণ ওপরে থেকে কাঁচের বাইরে থেকে পুরোটাই লক্ষ করেছে আরে নিজের মধ্যে রাগে জ্বলে পুড়ে।
.
.
.
. 💝💝💝
.
. চলবে….
.
. ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন । সবাই নিজেদের মতামত জানাবেন। 😊 😊 😊