তোর আসক্তি পাগল করেছে আমায় পর্ব-৩৪+৩৫

0
2784

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৩৪
.
–“উইল ইউ ম্যারি মি আলিয়া। আকাশ হাঁটু গেড়ে আলিয়ার সামনে বসে বলে ওঠে।
.
. সামনে দাঁড়ানো আলিয়া যেনো অবাক এর সপ্তম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। কি রিয়্যাকশান দেবে বুঝতে পারছে না। হটাৎ করেই সব কিছু তার মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। সে বেলার সাথে দেখা করতে এ বাড়িতে এসেছিল প্রতিদিন এর মত । কিন্তু হঠাৎ করেই সব কটা তাকে ধরে নিয়ে আসে রুফটফে। তারপরেই সব কটা কোনো না কোনো বাহনা দিয়ে কেটে পড়ে। আলিয়া এক মনে দূরের আকাশ দেখছিল শান্ত নিরিবিলি পরিবেশে। হটাৎ পাশে কারো উপস্থিতি অনুভব করে। পিছন মুড়ে তাকাতেই অবাক হয়ে যায়। তার সামনে হাঁটু মুড়ে বসে আছে আকাশ।
.
–“উইল ইউ বি মাইন আলিয়া ফরএভার? উইল ইউ হোল্ড মাই হান্ড আন্টিল ডাই? আকাশ আলিয়ার অবাক হয়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে বলে।
.
–” আমি জানি আমাদের মধ্যে তেমন কোনো ব্যাপার নেই। তবুও এটুকু আমি জানি তুমি আমাকে পছন্দ করো। তোমার সাথে হয়তো আমার দেখাটা ও তেমন হয়নি। তবে তোমাকে যেটুকু দেখেছি তাতেই আমার তোমাকে ভালো লেগে গেছে। সব সময়ে তোমার মুখ টা আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আমি এটা এড়িয়ে যেতে চেয়েছি কিন্তু আমি এটা করে উঠতে পারিনি। এটা আমার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এই অনুভূতি টা কে কি বলে আমি জানি না। তবে এটুকু জানি তোমাকে ছাড়া আমি এক মুহূর্ত ঠিক থাকবো না। তোমাকে আমার সঙ্গে চাই সারাজীবন এর জন্য। তোমাকে পাশে পেতে চাই মৃত্যুর আগে পর্যন্ত।
.
–“দেখো আমি জানি এটা কেমন একটা ব্যাপার হয়ে গেলো যে দেখা হল মাত্র কয়েকদিন আর তারপরেই তোমাকে বিয়ের জন্য প্রোপোজ করা। যদিও এটা কোনো প্রপার প্রোপোজ হয়ে ওঠেনি। না তোমাকে ভালোবাসি বলেছি না বলেছি ডেটে যাওয়ার জন্য। আমি জানি না ভালোবাসা কি।কিন্তু আমি জানতে চাই তোমার সাথে থেকে তোমাকে ভালোবেসে আমি জানতে চাই। ভালোবাসা আসলে কি আর কতটা নেশাগ্রস্ত কতটা আসক্তিময়। আমি বিয়ের পর তোমার সাথে জমিয়ে প্রেম করতে চাই। সবাই বিয়ের আগে প্রেম করে কিন্তু আমি চাই উল্টো। যেখানে থাকবে না কোনো লুকাছুপি কোনো পিছু টান। আমি আমার সাধ্য মতো তোমার সব ইচ্ছা পূরণ করতে চাই। তোমার প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে তোমার সাথে তোমার মত করে পথ চলতে চাই। যেখানে থাকবে না কোনো লোক দেখানো কোনো কিছু। যা থাকবে সেটা শুধু অন্তরের অন্তর স্থলের ভালোবাসা। দেখো আমি এর আগে কখনো প্রেম ভালোবাসা প্রোপোজ এই সব নিয়ে ভাবিনি তাই আমি জানি না যে কি ভাবে প্রোপোজ করতে হয়। আমি কোনো ফিল্মি ডায়লগ জানি না। আমি শুধু আমার মনের কথাটা তোমাকে জানালাম।
.
. আকাশ মাথা তুলে আলিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে যে এখন মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আকাশ উঠে দাঁড়িয়ে যায়। আরো এক পা এগিয়ে যায় আলিয়ার দিকে।
.
–“দেখো সম্পর্কের বয়স টা আসল নয়। কারোর প্রথম দেখায় ভালোবাসা হয়ে যায় আবার কারোর এক বছর লেগে যায়। পাঁচ বছরের সম্পর্কে ও বিচ্ছেদ হয়। আবার একমাস এর সম্পর্কেও বিয়ে হয়। তাই সম্পর্কের বয়স টা কখন ও আসল নয় এটা কখনো বড় হতে পারেনা । একে অপরের প্রতি গুরুত্ব টাই আসল। একটা সম্পর্কের মধ্যে যতো ভালোবাসা থাক না সেটা যতো পুরোনো হোক না কেনো। সেখানে যদি গুরুত্ব না থাকে একে অপরের প্রতি যদি কোনো কেয়ার না থাকে। তাহলে নিত্য দিনের অবহেলায় ভালোবাসার সম্পর্কে ও আসতে আসতে ভাটা পড়তে থাকে আর সেটা হয় যায় বিচ্ছেদ। তাই আমি সব সময় মনে করি একটা সম্পর্কের মধ্যে গুরুত্ব টাই আসল। একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য বিশ্বাস ভালোবাসা এইগুলো প্রয়োজন হয় না সময় সীমা। তাই আমি আমাদের সম্পর্ক টা কে সারাজীবন এর জন্য বাঁচিয়ে রাখতে চাই মৃত্যু পর্যন্ত। তাই তুমি কি আমার হাতটা ধরবে?
.
. আকাশ এর বলতে দেরি কিন্তু আলিয়ার আকাশের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেরি নেই। আকাশ কে জড়িয়ে ধরে ফুফিয়ে কান্না করতে থাকে আলিয়া। আকাশ ও দু হাত দিয়ে শক্ত করে আলিয়া কে জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে। আকাশ এর চোখের কোণে পানি চিক চিক করে ওঠে। আর মুখে ফুটে ওঠে একটা অনাবিল হাসির রেখা। যেটা পৃথিবীর সব থেকে অমূল্য কোনো জিনিস পেয়ে যাওয়ার খুশি। আলিয়া আকাশ কে ছেড়ে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। চোখের কোণে পানি আর মুখে রয়েছে একঝাক খুশির হাসি। আকাশ ও মুচকি হেসে আলিয়ার বাড়িয়ে দেয়া হাতে পরিয়ে দেয় নিজের নামের রিং। আবারও একে অপরের আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়।
.
–“ওয়ে হয়ে। আবতো লেড়কি ভি মান গেয়ি। তো আব শুরু হো যায়ে সাদি কি তাইয়ারি। বেদ পিছন থেকে বলে ওঠে।
.
–” পে.. পে প্যা প্যা পে। হোহো সাদি স্যানহায়ি আব গুনজে গি চারোও ওর। ওম লাফিয়ে লাফিয়ে বলে ওঠে।
.
. সব গুলো পিছন থেকে হইহই করতে করতে বেরিয়ে আসে। আলিয়া আকাশ কে ছেড়ে দাঁড়ায় মুখে রয়েছে হাসি চোখে রয়েছে লজ্জা। আকাশ সবার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে। সব গুলো এসে ওদের দুজন কে জড়িয়ে ধরে বাধাই দিতে থাকে। সব গুলো হইচই শুরু করে দেয় আনন্দে।

————

–“টুসুন বেবি এবার আমাদের ও বিয়ে করে নেওয়া উচিত কি বলো। আর কত দিন এই ভাবে দূরে দূরে থাকবো। আর তো আমার দিয়ে এই দূর বরদাস্ত হচ্ছে না। নিশান শান্তা কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ রেখে বলে ওঠে।
.
. শান্তা নিশান এর এই নেশাময় আওয়াজ শুনে কেঁপে ওঠে। জোরে নিশ্বাস টেনে নিয়ে মুখে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে তোলে।
.
–“কিন্তু আমি তো বিয়ে করতে চাই না। শান্তা নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলে ওঠে।
.
–” মানে? নিশান শান্তা কে ছেড়ে সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে।
.
–“মানে আমার এখন বিয়ে করার তো কোনো ইচ্ছেই নেই। বিয়ে করলে তখন এটা করোনা ওটা করোনা এখানে যেও না ওই করো না। না বাবা না আমি এখন কোনো ভাবেই বিয়ে করছি না। শান্তা বলে ওঠে।
.
–“আরে বেবি আব ইতনা ভি মাত তাড়পায়ো ইয়ার। আমি এমন কিছুই করব না। তুমি যা খুশি করতে পারো যেখানে খুশি যেতে পারো। ব্যাস বিয়ে করে নাও না বেবি প্লিজ। নিশান কাঁদো কাঁদো ভাবে বলে ওঠে।
.
–” পাক্কা প্রমিস। শান্তা চোখ উল্টে জিজ্ঞেস করে।
.
–“আরে হ্যাঁ হ্যাঁ। পাক্কা প্রমিস। গড প্রমিস। তোমার প্রমিস ।নিশান তাড়াতাড়ি করে বলে ওঠে।
.
–“ওকে তো ফির চালো শাদি কারলেতে হে। চোখ বড় বড় করে শান্তা বলে ওঠে।
.
–” হ্যা। নিশান যেনো অবাক হয়ে গেছে।
.
–“আরে বিয়ে। করবেনা? ঠিক আছে। করতে হবে না। শান্তা বলে ওঠে।
.
–” এই না না। বিয়ে করব তো। নিশান শান্তার কাছে এসে বলে ওঠে।
.
. শান্তা নিশান এর এমন করতে দেখে হেসে ফেলে আর নিশান সাথে সাথে শান্তা কে কোলে উঠিয়ে নিয়ে ঘুরিয়ে নেয়। নিজের মুখের সমান করে নিয়ে শান্তার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।

—————

–” এই তুমি কি আমাকে সত্যি ভালোবাসো নাকি বলোতো? সারা চোখ মটকে জিজ্ঞেস করে ওঠে বেদ কে।
.
–” হ্যাঁ সোনা ভালোবাসি তো তোমাকে। বেদ সারার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে ওঠে।
.
–“এই এই দূরে থাকো। একদম কাছে আসবে না। একদম কোনো লুতুপুতু নয়। ভালোবাসে? হু। সারা মুখ বেকিয়ে বলে ওঠে।
.
–“আরে সারু আমি ভালোবাসি তো তোমাকে। বেদ বলে ওঠে।
.
–” ভালোবাসা না ছাই । ভালোবাসো যখন তাহলে ভাই এর কাছে আমাকে চেয়ে নিতে পারছ না কেনো বল? সারা রেগে বেদ এর দিকে তেড়ে গিয়ে বলে ওঠে।
.
–“আরে বলবো তো। জিজ এর কাছে আমাদের কথা বলবো তুমি রাগ করছো কেনো। বেদ সারা কে শান্ত করতে বলে ওঠে।
.
–“প্রেম করতে পারো অথচ হাত চাইতে পারো না। হাত চেয়ে নিতে যতো আমতা আমতা ভাব না। সারা বেদ এর কলার ধরে বলে ওঠে।
.
–“না না একদমই না। বেদ সারার কোমর ধরে বলে ওঠে।
.
–“তোমাকে আমি আজকে সময় দিলাম যদি বলতে পেরেছ তো ভালো কথা না হলে আমি ভাই কে বলে অন্য কাউকে বিয়ে করে নেবো। সারা বেদ এর হাত কোমর থেকে সরিয়ে চিৎকার করে বলে ওঠে। বেদ এর দিকে আগুন চোখে তাকিয়ে বের হয়ে যায়।
.
–“আরে বেবি শোনো তো। আমি তো বলবো। শোনো না। পিছন থেকে বেদ সারা কে ডাকতে থাকে।
.
. সারা চলে যেতেই বেদ মুখ ফুলিয়ে নেয়। কোমরে এক হাত আর এক হাত মাথায় চুলকাতে থাকে। আরে ইয়ার পৃথিবী তে মেয়ে গুলোই কেনো এমন হ্যাঁ কেমন একটা আজিব প্রাণী মাইরি। বেদ মনে মনে ভাবতে থাকে।

—————
.
. ড্রইং রুমে বসে সবাই গল্পে মত্ত। এখন সবাই এর গল্পের মেইন টপিক হল আলিয়া ও আকাশ কে নিয়ে। এখানে সব কটা জোড়া সারি সারি বসে আছে। শুধু মাত্র সাঁঝ ছাড়া। এতে যদি বেলার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। বরং আরো বেশি বেশি করে সবার প্রেম কাহিনীর মধ্যে ঢুকে পড়ে গল্প শুনতে আছে। সারা বেদ এর থেকে দূরে বসে আছে। তাকিয়ে ও দেখছে না বেদ বারবার ইশারা করছে সারা কে তাতেও তার কোনো হেলদোল নেই। অন্য দিকে শান্তা কে সবার আড়ালে কোমরে জড়িয়ে ধরে বসে আছে নিশান। সবার চোখের আড়ালে কয়েকবার চুমু ও খেয়ে ফেলেছে। বেলা আলিয়া কে জড়িয়ে বসে আছে। আর আকাশ একটু দূরে বসে ওদের সাথে কথা বলছে। এখানে সাঁঝ থাকলে বরং আকাশ চুপচাপ থাকতো বস বলে কথা। ওম জাকিয়া দুজন দুজনের গায়ে হেলান দিয়ে বসে আছে একে অপরের হাত জড়িয়ে নিয়ে। এদের কোনো ব্যাপার নেই এখন না ওদের দুজনের মধ্যে কোনো ভাব আছে বিয়ে করার প্রোপোজ করতে হবে বা বাড়িতে বলতে। তারা দুজন তো বরং মস্তিতে আছে।যদি বলা হয় চল তোদের এক্ষুনি বিয়ে দিয়ে দেবো। তো মনে হয় ওরা লাফিয়ে লাফিয়ে চলে যাবে বিয়ে করতে। তবে এদের সবার থেকে একটু আলাদা ভাবে এক জোড়া বসে বসে তাদের প্রেম আলাপ করছে। দূরে দুজন এক টেবিলের সামনাসামনি বসে একে অপরের সাথে চোখে চোখে ইশারায় কথা বলছে। টেবিলের ওপরে হাতে হাত রেখে। আর টেবিলের তলায় থেকে একে অপরের পায়ের ওপর পা দিয়ে স্লাইড করছে। রুহি মাঝে মাঝে সারিফ এর দুষ্টু মিষ্টি ইশারায় লজ্জায় লাল হয়ে চোখ সরিয়ে নেয়।
.
. সাঁঝ সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতেই থমকে দাঁড়িয়ে যায়। সে ভ্রু কুঁচকে নিজের চোখ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ড্রইং রুমে হতে থাকা বৈচিত্র্যময় দৃশ্য দেখতে থাকে। চারিদিকে যেনো প্রেমের পসরা জমে আছে। একে অপরের প্রেমে যেনো ডুবে আছে। তারপরেই চোখ ঘুরিয়ে দেখতে পায় তার পাগলিটাকে। যেনো তার খুশি দ্বিগুণ হারে বেড়ে গেছে। সে সবার সাথে মিশে গল্পে মশগুল হয়ে আছে। আর কথায় কথায় খিল খিল করে হেসে উঠছে যার জন্য গালে ডিম্পল পড়ছে আর সাইট এর গজ দাঁত দেখা যাচ্ছে যার জন্য তার পাগলিটাকে আরো সুন্দরী লাগছে। এটা দেখে সাঁঝ এর চোখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। ঠোঁটের কোণে একটা মুচকি হাসি খেলে যায়। কিন্তু এটা চিরস্থায়ী হয় না বেশি ক্ষণ ।
.
–“বেলা মা।
.
. পিছন থেকে কারোর ডাকে সবার হুস ফেরে। সবাই নিজেদের গল্প থামিয়ে পিছন মুড়ে তাকায়। আর সাথে সাথে সবার চোখ মুখের চিত্র টাই পাল্টে যায়। এতক্ষণে হাসি খুশি থাকা মুখ গুলো রাগে বিরক্তি ভরা হয়ে যায়। আর সাঁঝ সিড়ির ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। চোখ মুখ পুরো লাল হয়ে যায়। হাতের মুঠো শক্ত করে নেয়। মাথার রগ গুলো ও যেনো ফুলে ফুলে উঠেছে। সামনে দাঁড়ানো আর কেউ নয় বেলার মু বলা মা।
.
–“সোনামা । হুইল চেয়ারে বসা এক ব্যাক্তি ভিতরে প্রবেশ করে।
.
.বেলা পিছনের দিকে তাকিয়ে চমকে ওঠে। প্রথমে তার মা কে দেখে চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেছিল। কিন্তু পিছন থেকে হঠাৎ করেই তার বাবাকে হুইল চেয়ার বসে আসতে দেখে বুকের মধ্যে ধক করে ওঠে। তার ভাই তার বাবা কে ভিতরে নিয়ে আসছে। বেলা একটুও দেরি না করে ছুটে যায় সেদিকে।
.
–“বাবাই তোমার এমন হল কি করে হ্যাঁ।তুমি হুইল চেয়ারে বসে কেনো। বল না কি হয়েছে তোমার। বেলা তার বাবাই আবিদ মজুমদার কে জড়িয়ে রেখে কান্না করতে করতে বলে ওঠে অস্থির হয়ে।
.
–” সিনু বাবাই এর এই অবস্থা কি করে হলো বল। কিরে কি করে হয়েছে? বেলা তার ভাই কে জিজ্ঞেস করে ওঠে।
.
. বেলার নিজের বাবা মা মরে যাওয়ার পর এই একটাই মানুষ ছিল যে তাঁকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে। এটা তার নিজের বাবা মা নয় এটা নিজের আপন মামা। বাবা মরে যাওয়ার পর থেকে মামা কে বাবাই বলে ডাকত। আর মামী কে শুধু মা। বেলার অনেক ছোটো বেলায় বাবা মা কে হারায় তখন ও আলিয়া কে মা বলতে দেখে দেখে নিজেও মা বলে ডাকত। কিন্তু এই মহিলা কখনো মা হওয়ার কাজ করেনি তার থেকেও জঘন্য ব্যবহার করেছে সব সময়ে বেলার সাথে। বেলার বাড়ি এসেই থাকতো তার বাবার বিজনেস নিয়ে তাদের সংসার চালাতে আর বেলা কে দিয়ে কাজ করাত আসতে আসতে বেলার সব কিছু নিয়ে নেয়। ওই বাড়িতে থাকতে একমাত্র তার বাবাই আর তার দিয়া আলিয়া তাকে দেখে রাখত সব সময় আর সোনু ও তো ছোটো তাদের বরং তাকে দেখে রাখতে হতো।
.
–“বেলা কান্না বন্ধ কর বাবা ঠিক আছে। বাবার পায়ে চোট লেগেছে পড়ে গিয়ে তাই। আলিয়া উঠে এসে বেলা কে চুপ করাতে বলে ওঠে।
.
–” দিয়া তুই আমাকে বলিসনি কেনো হ্যাঁ ।বাবাই এর অবস্থার কথা আমাকে তুই আগে কেনো জানাসনি । বেলা বলে ওঠে।
.
–“আরে সোনা মা তুই শুধু শুধু চিন্তা করবি তাই আমি বারণ করেছিলাম। বেলার বাবাই বলে ওঠে।
.
. বেলা আর কোনো কথা না বলে তার বাবাই কে নিয়ে ভিতরে দিকে হাঁটা দেয়। পিছন থেকে আবারো ডাক আসতে বেলা থেমে যায়। কিন্তু পিছন ঘুরে না।
.
–” বেলা মা। তোর বাবাই খুব অসুস্থ। আর এখন আমাদের বাড়িটা ও আমাদের নেই। আর বিজনেস টা ও বিক্রি হয়ে গেছে। এখন তুই একমাত্র সাহারা। মা তুই তোর এই বুড়ো বাবা মা কে দেখবি তো। বলেই বেলার মা এগিয়ে আসতে থাকে বেলার দিকে।
.
–” ওখানেই দাঁড়ান। আর এক পা ও এগোবে না। সাঁঝ দমদার তীক্ষ্ণ আওয়াজে বলে ওঠে।
.
. সবাই পিছনে মুড়ে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে রাখা সাঁঝ এর দিকে দেখতে থাকে। এখন কেউ সাঁঝ এর কঠিন রাগী মুখ দেখে থমকে যাবে। বেলা চোখে পানি নিয়ে সাঁঝ এর দিকে তাকায়। সাঁঝ আসতে আসতে নেমে এসে বেলার কাছে গিয়ে বেলার চোখের পানি মুছে দিয়ে ইশারায় চোখের পানি ফেলতে বারণ করে।
.
–“আপনার সাহস হলো কি করে এই বাড়িতে পা রাখার। আর মা কোথায় পেয়েছেন বেলা আপনার কেউ হয়না। কোন সাহসে এখানে এসেছেন। সাঁঝ চিৎকার করে বলে ওঠে।
.
. সাঁঝ এর চিৎকারে ওখানে থাকা বাকি সবাই চমকে ওঠে। বেলা তাকিয়ে আছে সাঁঝ এর দিকে। আর বাকিরা ও একবার সাঁঝ ও একবার ভয়ে কুকড়ে থাকা বেলার মায়ের মুখের দিকে তাকায় সবাই।
.
–“বাবা এমন করে বলতে নেই বেলা আমার মেয়ে হয়। ছোটো থেকে ওকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছি। বেলার মা ইনিয়ে বিনিয়ে বলে ওঠে।
.
–” হ্যাঁ কোলে পিঠে নয় খাটিয়ে বড় করেছো যাতে বড় করে বিক্রি করতে পারো টাকার লোভে সাঁঝ তীক্ষ্ণ গলায় চিৎকার করে বলে।
.
. ওখানে থাকা সবাই সাঁঝ এর এমন কথায় চমকে ওঠে। আলিয়া সোনু চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। তারা জানে তাদের মায়ের কীর্তি। বেলা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে। বেলা আগে হলে সে এতক্ষণ গোলে যেতো ওদের দুঃখের কাহিনী শুনেই কিন্তু দিশা থেকে ওর মায়ের কাহিনী শুনে নিয়েছিলো আগের থেকেই তাই আর চিড়ে ভেজেনি। কিন্ত ওখানে থাকা বাকিরা রেগে গেছে এই কথায়। আর বেলার মা তো পুরো চমকে উঠেছে সাঁঝ এর কথা শুনে।
.
–“কি ভেবেছেন আপনি যে আপনার কু কীর্তি গুলো চাপা থাকবে। আপনি যে বেলা কে বিক্রি করে দিয়েছিলেন রনি মেহতার কাছে টাকার লোভে সেটা কি মনে করেছেন আমি জানি না। ওর বাড়িতে থেকেই ওর বাবার বিজনেস নিজের নামে করে নিয়ে ওকে আপনি কাজের লোকের মত ট্রিট করেছেন। তাহলে এখন কি করে ভাবলেন যে ও আপনাকে সাহায্য করবে। সাঁঝ জোরে গম্ভীর আওয়াজে বলে ওঠে।
.
–“যে নিজের স্বামীর এই অবস্থা করতে পারে সে কখনই একজন মা স্ত্রী হতে পারে না। সাঁঝ বলে ওঠে।
.
–” মানে কি বলতে চাইছ তুমি? বেলা চমকে গিয়ে বলে ওঠে।
.
–“তোমার বাবাই এর এই অবস্থার জন্য এই মহিলা দায়ী। তোমাদের বাড়িটা এই মহিলা বিক্রি করতে চেয়েছিলেন কিন্তু তোমার বাবাই বাঁধা দিতেই তোমার বাবা কে সিঁড়ি থেকে ফেলে দেয়। সোনু আমাকে ফোন করে সবটা জানায়। আমি এর তোমার বাবাই আলিয়া কে বারণ করেছিলাম যেনো এখন তোমাকে না জানানো হয়। তখন তুমি দিশার কথা গুলো নিয়ে অনেক ভেঙে পড়েছিলে তাই। সাঁঝ ধীর গলায় বেলা কে বুঝিয়ে বলে ওঠে।
.
. বেলা এই কথা গুলো শুনে যেনো স্তব্ধ হয়ে গেছে। একটা মানুষ কিভাবে এতটা খারাপ নীচ মানসিকতা হতে পারে।
.
–“সাঁঝ কল দ্য পুলিশ। বেলা কঠিন গলায় বলে ওঠে।
.
. ওখানে থাকা বাকি সবাই প্রথমে বেলার কথায় অবাক হয়ে গেছিল। কিন্তু তারপরেই আবার ঠিক হয়ে গেছে। তারা এটা ভেবেই খুশি হয়েছে যে। বেলা এবার ঠিক ঠাক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
.
–” অফিসার ভিতরে আসুন। বেলার বলতে দেরি কিন্তু সাঁঝ কাজ করে দেখাতে দেরি নেই।
.
.বেলা অবাক চোখে সাঁঝ এর দিকে তাকাতেই সাঁঝ মুচকি হেসে বেলার নাক টেনে দিয়ে বলে ওঠে।
.
–” আমি জানতাম তুমি পুরোটা শোনার পর এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবে তাই আগেই থেকেই আমার কল করা ছিল। শুধু তোমার বলার অপেক্ষা ছিল।
.
. বেলা কোনো কথা বলে না চুপচাপ শুধু সাঁঝ এর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে আর ভেবে যাচ্ছে সাঁঝ এর কথা। সে কিছু ভাবলে বা কখন কি করতে পারে সেটা সাঁঝ তার কিছু না বলাতে ও বুঝে ফেলে। তার মুখ ফুটে কিছু বলতে হয়না তার আগেই কাজ হয়ে যায়।
.
–“বেলা আলিয়া সোনু আমি তোদের মা হই।তোরা এমনটা করতে পারিস না দেখ পুলিশ এসেছে। আলিয়া সোনু তোরা তো আমার নিজের সন্তান তোরা ও কি ওই বেলার মত করবি। বেলার মা আর্তনাদ করে বলে ওঠে।
.
–” আমাদের কোনো মা নেই। আজ থেকে আমরা এটাই জানবো। আলিয়া সোনু কে জড়িয়ে শক্ত ভাবে বলে ওঠে।
.
–” বেলা মা। আমি তো তোর মা হ…
.
–“আমার মা আমার ছোটো বেলায় মারা গেছে। আমার কোনো মা নেই। আর এতদিন যাকে মা বলে জেনেছি সে কখনই আমার মা হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। আর কখনো হতেও পারে না। অফিসার এনাকে নিয়ে যান। আর দেখবেন যেনো পালাতে না পারে। পুরো কথা বলতে না দিয়ে বেলা বলে ওঠে।
.
. অফিসার নিয়ে চলে যেতেই বেলা ঘুরে দাঁড়িয়ে সাঁঝ এর বুকে মুখ গুঁজে কান্না করে ওঠে। ওদিকে সোনু ও আলিয়ার চোখের কোণে পানি ফুটে উঠেছে।
.
–“সাঁঝ বাবাই আর সোনু ও এখন থেকে আমাদের সঙ্গে থাকবে? বেলা জিজ্ঞেস করে ওঠে।
.
–” কখনই না। ওরা আমদের সাথে থাকতে পারবে না। সাঁঝ কঠিন গলায় বলে ওঠে।
.
–“সাঁঝ । বেলা চিৎকার করে ওঠে।
.
. বাকি সবাই ও অবাক হয়ে গেছে। তারা সাঁঝ কথা শুনে যেনো এটা বিশ্বাস করতে পারছে না যে সাঁঝ এই কথাটা বলতে পারে।
.
–“কি সাঁঝ কি? সাঁঝ চোখ ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করে ওঠে বেলা কে?
.
. বেলা অবাক হয়ে আছে সাঁঝ এর দিকে ।
.
–“তোমার বাবাই আর সোনু যদি এখানে থাকে তাহলে তোমাদের বাড়ি আর বিজনেস এর দায়িত্ব নেবে কে শুনি? সাঁঝ চোখ ঘুরিয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে।
.
. বেলা অবাক চোখে একবার তাই বাবাই আর একবার সাঁঝ এর দিকে তাকায়। যে এখন হাসি মুখেই দাঁড়িয়ে আছে। বাকিরা ও আরও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
.
–“আরে বাবা তোমার মায়ের থেকে আমি তোমার সব কিছু নিয়ে নিয়েছি। বাড়িটা আমি তোমার বাবাই আর সোনুর নামে ট্রান্সফার করেছি। পরে তোমার বাবার টা আলিয়ার নামে হয়ে যাবে। আর বিজনেস ও ফিফটি পার্সেন্ট সোনু শেয়ার দিয়েছি। তাই ওরা যদি আমাদের সাথে থাকে তাহলে ওরা ওগুলো দেখবে কি করে শুনি। হ্যাঁ ওরা আমাদের সাথে থাকতে পারে। যখন খুশি আসতে পারে যেতে পারে। বুঝলে কিছু। সাঁঝ হেসে বলে ওঠে।
.
–“সাঁঝ । বেলা চোখে পানি আর মুখে হাসি নিয়ে বলে ওঠে।
.
–” আমি জানি জান তুমি কি বলতে চাইছ। আমি এটা পরে শুনব। এখন তুমি সবার সাথে আনন্দ করো আর তোমার বাবাই যতো দিন না সুস্থ হচ্ছে ততো দিন আমাদের সাথে থাকবে। এখন ঠিক আছে। আর হ্যাঁ একটা কথা তুমি ও তোমার ডান্স ও ইউনিভার্সিটি করে যদি চাও তো তুমি তোমার অফিসের দায়িত্ব নিতে পারো কারণ আফটার অল তুমি ওই কোম্পানী চেয়ারওম্যান। সাঁঝ বেলার গালে হাত রেখে বলে ওঠে।
.
. সাঁঝ এর কথা শুনে ওখানে থাকা প্রত্যেকে খুব খুশি হয়ে যায়। এতক্ষণ তাদের মনে থাকা অবাক কাটিয়ে ওঠে পরের কথা গুলো বুঝতে পারে সাঁঝ কেনো বলেছিলো। তাই সবাই এক সাথে থেকে আনন্দ তে মেতে ওঠে।
.
.
.
. 💝💝💝

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৩৫
.
–“ভাই আমি বেদ কে ভালোবাসি আর বেদকেই বিয়ে করতে চাই। মাথা নিচু করে বলে ওঠে সারা।
.
. সবাই একসাথে রাতের ডিনার করছিলো। আর সেখানেই সারা এসে বোমা টা ব্লাস্ট করে। সাঁঝ ভ্রু কুঁচকে তার সামনে দাঁড়ানো সারা কে দেখছে। সারিফ সবে মুখে খাওয়ার দিয়ে ছিল সারার কথা শুনতে গলায় আটকে যায়। আর বাকিরা খাওয়া রেখে সবাই এক দৃষ্টিতে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সারা কে দেখছে। যেনো মনে হচ্ছে তারা ভুল শুনেছে সারার মুখে এই কথা যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না।
.
. সাঁঝ আগে থেকেই জানতো এই বাড়িতে কি চলছে। কোথাকার জল কতদূর এগিয়ে গেছে। বেলা খাওয়া রেখে সাঁঝ এর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। বোঝার চেষ্টা করছে সাঁঝ এর অভিব্যক্তি কি হতে চলেছে। বেলা তাকে দেখছে বুঝতে পেরেই সাঁঝ বেলার দিকে তাকিয়ে দেখে তার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে আছে। সাঁঝ কোনো কিছু না বলে আরো চোখ মুখ গম্ভীর করে নেয়। আর বাকিরা সবাই চুপচাপ একে অপরের মুখ দেখে ইশারা করতে থাকে। তারা ভাবতেও পারেনি সারা এত বোল্ড।
.
–“চুপচাপ খেতে বসে যাও। সাঁঝ কঠিন ভাবে বলে ওঠে।
.
. সাঁঝ এর কথা আর কঠিন গলা যেনো ওখানে থাকা বাকিদের ও চমকে দিয়েছে। তারা আর কোনো কথা বলার সাহস পাইনি সারা ও চুপচাপ বসে পড়ে। শান্তা জাকিয়া রুহি আলিয়া সবাই করুন চোখে একবার সাঁঝ আর একবার সারা কে দেখছে তারা বুঝতে ও পারছে না আগে কি হতে চলেছে।
.
–“সারিফ সব ছেলে গুলো কে আধঘন্টার মধ্যে আমি ড্রইং রুমে দেখতে চাই। আর সাথে তোমাদের কেও। ওখানে থাকা বাকিদের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে। তারপরেই টেবিল ছেড়ে উঠে রুমে চলে যায়।
.
. সবার মধ্যে যেনো এবার হকচকিয়ে ওঠে। তারা বুঝতে পারছে না যে সাঁঝ কি করতে চাইছে।

—————
.
. ড্রইং রুমে বসে আছে সাঁঝ।তার পাশেই বসে আছে বেলা। আর পর সব লাইন দিয়ে বসে আছে বাকি মেয়ে গুলো। সবার চোখ মুখ উদ্বিগ্ন হয়ে আছে। বেলা বসে বসে শুধু একবার বাকিদের দিকে তাকায় আর একবার করে সাঁঝ কে ইশারা করে। হাতের ওপর হাত রেখে চিমটি কাটে। কিন্তু সাঁঝ গম্ভীর ও নিরুত্তাপ হয়ে বসে আছে দৃষ্টি সামনের দিকে। সে না বেলার দিকে দেখছে আর না বেলার করা কাজে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে।
.
. হটাৎ করেই বেদ ওম নিশান ওদের সাথে আকাশ ও হন্তদন্ত হয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায়। সব গুলো হাপাতে থাকে। তারা বাড়ির পরিবেশ এমন গম্ভীর দেখে ভ্রু কুঁচকে সবার দিকে দেখে।
.
–“কি হয়েছে এত জরুরি তলব কেনো তাও এত রাতে? নিশান বড় বড় নিশ্বাস ফেলতে ফেলতে বলে ওঠে।
.
. বাকিদের মুখে কোনো কথা নেই সবাই একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে চুপ করে আছে।
.
–” আরে হয়েছে টা কি বলবে কেউ। আর তোমরা এমন ভাবে বসে আছো কেনো? যেনো মনে হচ্ছে কারোর জন্য শোক পালন করছো? বেদ সবার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।
.
–” বেদ আমার বোনের বিয়ে ঠিক করেছি। সাঁঝ কঠিন গলায় বেদ এর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।
.
. সাথে সাথে যেনো একটা বাজ পড়লো পুরো রুম জুড়ে। সবাই চমকে গেছে। সাথে সাথে সারা আর বেদ এর মুখের রং চেঞ্জ হয়ে গেছে। বেদ এর অবস্থা পুরো করুন হয়ে গেছে কি বলবে বুঝতে পারছে না সে। ব্যাথাতুর চোখে একবার সাঁঝ এর দিকে তাকিয়ে নিয়ে আবারও সারার দিকে তাকায় করুন চোখে। মনে হচ্ছে এখুনি কেঁদে ফেলবে।
.
–“ভাই আমি তো তোমাকে বললাম আমি বেদ কে ভালোবাসি। আর আমি ওকে বিয়ে করব। সারা কাঁদতে কাঁদতে বলে ওঠে।
.
–” সেটা তুই বলেছিস যে তুই ভালোবাসিস। বেদ কি একবার ও বলেছে যে তোকে ও ভালোবাসে আর বিয়ে করতে চায়? গলার আওয়াজ আরো গম্ভীর থেকে গম্ভীর ভাবে বলে ওঠে সাঁঝ।
.
–“জিজ আমিও। মানে আমিও বাসি তো ভালো। আমিও বিয়ে করতে চাই সারা কে। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ওঠে বেদ।
.
–“হুম । ঠিক আছে ভেবে দেখছি। আর বাকি গুলোর কি কি কেস আছে বলে ফেলো দেখি ঝটপট। সাঁঝ এবার ওখানে থাকা সবাই কে বলে ওঠে।
.
. সাথে সাথে নিশান গিয়ে শান্তা কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। ওম তার সামনে বসে থাকা জাকিয়ার পাশে বসে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে। আকাশ হাত উঁচু করে তার পাশে বসে থাকা আলিয়ার হাত মুঠো করে ধরে দাঁড়ায়। দৃশ্যটা কিছুটা এমন যে সবাই সবারই জোড়ার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। দেখে ঠিক মিউজিক্যাল চেয়ার এর মত লাগে মিউজিক এর সাথে সাথে ছুটতে ছুটতে হঠাৎ মিউজিক অফ আর সবাই যে যার চেয়ার খুঁজে দাঁড়িয়ে যায়। এখানে ও তেমন সাঁঝ এর বলার সাথে সাথে যে যার জোড়ার কাছে হাজির।
.
–“আমরাও একে অপর কে ভালোবাসি। সবাই একসাথে বলে ওঠে সাঁঝ এর দিকে তাকিয়ে ।
.
. হটাৎ করে ঝড়ের বেগে ছুটে এসে সারিফ বসে থাকা রুহির হাত টেনে তার সাথে মিশিয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। তারপর রুহির গালে একটা টুপ করে চুমু খেয়ে বলে ওঠে।
.
–” ভাই আমিও ভালোবাসি রুহি কে। আর বিয়ে ও করতে চাই।
.
. ওখানে থাকা বাকিরা এমন কিছুতেই মুচকি মুচকি হেসে ফেলে তাদের জোর হাসি পেলেও সামনে বসে থাকা গুরু গম্ভীর সাঁঝ কে দেখে তাদের জোর হাসি মুচকি হাসিতে ট্রান্সফার করে।
.
–” হুম তো তোমরা কি ভাবে বিয়ে করতে চাও। সাঁঝ ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।
.
. সাঁঝ এর কথা শুনতে সবাই যেনো প্রথমে ভুল শুনেছে বলে মনে হচ্ছে তাদের। তারা একে অপরকে দেখে নিয়ে সবাই একসাথে চিৎকার করে ওঠে সাথে সাথে নিজের জোড়া গুলো জড়িয়ে ধরে। আর এদিকে বেলার দিকে ফিরে তাকাতে বেলা ও সাঁঝ কে জড়িয়ে ধরে একদম টাইট করে। বেলা সাঁঝ কে জড়িয়ে ধরতেই সাঁঝ বেলার কানের পাতা তে কামড়ে নেয়। সাথে সাথে বেলা সাঁঝ কে আরো জোরে জড়িয়ে ধরে সাঁঝ এর কাঁধে কামড় দেয়।
.
–“তোমাদের সবাই এর কি মনে হয়েছে আমি আপত্তি করব। আমি তোমাদের ব্যাপার কিছু জানিনা। আমি আগে থেকেই সব কিছু জানি তোমাদের ব্যাপার। শুধু তোমাদের বলার অপেক্ষায় ছিলাম। আর আমাদের পুচকি টা ও এত বড় হয়ে গেছে যে তোমাদের সবার আগেই এসে আমাকে জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তোমাদের সাহস হয়নি। সাঁঝ সবার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।
.
–“লাভ ইউ ভাই। সারা ছুটে এসে সাঁঝ কে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে।
.
. সবার চোখে মুখের খুশির আলো ফুটে উঠেছে। পুরো পরিবেশ আলোকিত হয়ে উঠেছে সবার খুশির জন্য।
.
–” তোমাদের চিন্তা করতে হবে না। আমি সব অ্যারেঞ্জমেন্টস করছি আর তোমাদের পেরেন্টসদের সাথে ও কথা বলে নেবো। তো এখন যে কয়দিন আছে জমিয়ে ইনজয় করো কেমন। বলে উঠে দাঁড়িয়ে সাঁঝ বেলা কে ও সবার সামনে দিয়ে কোলে তুলে রুমের দিকে পা বাড়ায়।
.
. আর ওখানে থাকা বাকিরা একে অপর কে জড়িয়ে ধরে তাদের নিজের নিজের আনন্দ প্রকাশ করছে। একে অপরের সাথে মেতে আছে তাদের ব্যাচেলর জীবন এর আনন্দ নিতে।

————–
.
.অন্ধকার রাস্তা দিয়ে রুদ্ধশ্বাসে ছুটে চলেছে রনি । তার পিছনে দশ জন গার্ড যারা তাকে ধরার জন্য তার পিছন পিছন ছুটে আসছে। রনির অবস্থা খুব খারাপ। পরনে বলতে গেলে কিছুই নেই শুধু মাত্র একটা শর্ট ছাড়া। পুরো উদাম গায়ে মাথার চুল গুলো আউলে ঝাউলে আছে। ঠোঁটের কোণে থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। পায়ের তলা দিয়ে রক্ত পড়ছে পায়ে ছোটো ছোটো পাথর ঢুকে গিয়ে। চোখের একদিকে কালো হয়ে গিয়ে ফুলে গেছে। তারা সারা বডিতে লিপস্টিক এর চিহ্ন ফুটে আছে। এখন সে তার প্রাণ বাঁচাতে ছুটে চলেছে।
.
. রনি কয়েকদিন যাবৎ একটা মেয়েকে পটিয়ে নিয়ে হোটেল রুমে নিয়ে মজা করছিলো। আর সেখানে গিয়ে উপস্থিত হয় এই গার্ড গুলো যারা তাকে টানতে টানতে মেয়েটার থেকে উঠিয়ে নিয়ে পেটাতে শুরু করে। আর মেয়েটা ও ওখান থেকে হাসতে হাসতে ওই গার্ড গুলোর সাথে হাত মিলিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। যেটা দেখে রনি বুঝতে পারে সে কোনো ট্রাপে বাজে ভাবে ফেঁশে গেছে। গার্ড গুলো ওর দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই ওখান কোনো রকমে পালিয়ে ছুটতে থাকে।
.
.রনির সামনে হঠাৎ করে একটা কালো গাড়ি এসে থেমে যায়। রনি তার ছোটার গতি কন্ট্রোল করতে না পেরে গাড়ির সাথে বাজে ভাবে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়ে রাস্তার মধ্যে। রাস্তায় পড়ে আছে রনি মাথা ফেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। আদো আদো ভাবে চোখ খুলে তাকায় রনি। তার কাছে সব কিছু ঝাপসা হয়ে আসছে তবুও অনেক কষ্টে চোখ খোলা রেখেছে। গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে আসে একটা কালো অবয়ব পুরোই কালো তাছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। অবয়ব টা কে নিজের দিকে আসতে দেখছে রনি। হাঁটু মুড়ে সামনে বসে। মাথার থেকে কালো হুডিটা ফেলতে অনেক কষ্টে রনি বলে ওঠে।
.
–“সাঁ…ঝ।
.
.সাঁঝ কোনো কথা না বলে উঠে দাঁড়িয়ে দূরে থাকা গাড়ির দিকে ইশারা করতে গাড়িটা দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসে রনির দিকে। গাড়িটা এসে ধাক্কা মারে রনি কে সাথে সাথে দূরে রাস্তার এক গাছের সাথে ধাক্কা লেগে আবারো রাস্তার মাঝে পড়ে। চারিদিকে রক্তের ছড়াছড়ি হয়ে গেছে।
.
–“আমার জান এর দিকে যে হাত বাড়াবে তারই অবস্থা এমনি হবে। একদম অকাল মৃত্যু যোগ। বেলা শুধু আমার। তার দিকে তাকিয়ে তুই ভুল করেছিস। তাকে কিনতে চেয়ে তুই তোর জীবন টা দাও লাগিয়ে দিয়েছিস মৃত্যুর সাথে। আর আমি কি করে তোকে ছেড়ে দেই বল। সাঁঝ দূরে পড়ে থাকা রনির দিকে তাকিয়ে হিংস্র ভাবে বলে ওঠে।

—————-
.
.চারিদিকে পানির গর্জন আর শো শো বাতাস বয়ে যাচ্ছে। বেলা ঘুমের মাঝেই অনুভব করে যেনো সে হওয়ার মধ্যে ভেসে যাচ্ছে চারিদিকে কেমন একটা পানির গর্জন শুনতে পাচ্ছে। আদো আদো করে চোখ খুলে তাকায়। চোখ খুলে তাকাতেই যেনো মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। না মানে বেলার মনে হচ্ছে যেনো সে আকাশের সাথে মিশে গেছে। চারিদিকে খোলা আকাশ ছাড়া কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। বেলা নড়তে অনুভব করে যে সে কারোর বাহুডোরের মধ্যে আছে। মাথা ঘোরাতেই দেখতে পায় সে সাঁঝ এর কোলে আছে আর তার দিকে তাকিয়ে আছে সাঁঝ। মুখে ফুটে আছে একটা মন কাড়া হাসি। বেলা সাঁঝ এর মুখে হাসি দেখে তার মুখেও হাসি ফুটে। সে দু হাতে সাঁঝ এর গলা জড়িয়ে ধরে। সাঁঝ বেলার নাকের সাথে নাক ঘোষে বেলা কে নিচে নামিয়ে দেয়।
.
. বেলা দাঁড়িয়ে গিয়ে অনুভব করে তার পায়ের তলায় নরম কিছুর। মাথা ঘুরিয়ে চারিদিকে দেখতেই তার চোখ কপালে উঠে যায়। কারণ সে যে দিকে মাথা ঘুরিয়ে দেখে শুধু পানি আর পানি আর মাথার ওপরে খোলা আকাশ। নিজের কাছের দিকে দৃষ্টি দিতে দেখে যে চারিদিকে সাদা আর লাল কম্বিনেশন এর ডেকরেট করা। সাদা সাদা পর্দা ও ঝুরি আর তার মাঝে মাঝে রেড লাভ শেপ এর বেলুন লাগানো। আর তার সাথে সে যেখানে দাঁড়িয়ে আছে পুরোটাই রেড গোলাপ এর পাপড়ি বিছানো। দূরে টেবিলের ওপরে সাদা টেবিল ক্লক এর ওপরে গোলাপ এর পাপড়ি দিয়ে লাভ আঁকা আর তার মধ্যে লেখা আছে #সাঁঝেরবেলা। বেলা অবাক হয়ে চারিদিকে দেখতে আছে। মুখে হাত দিয়ে বেলা সাঁঝ এর দিকে তাকায়। সাঁঝ নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দিকে বারোটা বাজতে পাঁচ সেকেন্ড বাকি। সাথে সাথে সাঁঝ বেলার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বেলার কোমর ধরে কাছে টেনে এনে সামনের দিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করে। বেলা সামনে তাকাতেই দেখতে পায়।ঘড়িতে পুরো রাত বারোটা বাজে। সমুদ্রের বুকে হঠাৎ করে একটা একটা করে ক্যাপিটাল ভেসে ওঠে। “” আই লাভ ইউ”” আর তার নিচে ভেসে ওঠে “” উইল ইউ ম্যারি মি “” । বেলা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে মুখে হাত দিয়ে আছে আর চোখের কোণে ভেসে খুশির পানি।
.
. সাঁঝ বেলা কে ঘুরিয়ে বেলার সামনে হাঁটু মুড়ে বসে তার দিকে হাত এগিয়ে দেয়। বেলা শুধু অবাক হয়ে দেখছে সাঁঝ এর দিকে । কি করতে চাইছে বুঝতে পারছে না বেলা। বেলার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে সাঁঝ।
.
–“বেলা আই লাভ ইউ। উইল ইউ ম্যারি মি? বক্স থেকে রিং বের করে বেলার দিকে এগিয়ে বলে ওঠে সাঁঝ।
.
. বেলা মুখে হাত রেখেই মাথা নাড়ায়। সাথে সাথে সাঁঝ বেলার আঙুলে রিং পরিয়ে দেয় আর তার পরেই ঝাঁপিয়ে পড়ে সাঁঝ এর গলায়। দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে। সাঁঝ ও দু হাতে জড়িয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে দু পাক ঘুরে নেয়। বেলা কে কোমরে ধরে বেলার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। বেলা দু হাতে সাঁঝ এর মাথা ধরে সেও শুষে নিতে থাকে সাঁঝ এর ঠোঁটের মিষ্টি। দুজন আসতে আসতে ডুবে যায় একে অপরের ভালোবাসার মাঝে।
.
.
. 💝💝💝
.
. চলবে….
.
. ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন ।সবাই নিজেদের মতামত জানাবেন। 😊 😊 😊