#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
২৩.
হ্যাচকা একটানে বেলাকে রুমের ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। বেলা প্রথমে একটু চমকে গেলেও তার বুঝতে বাকি নেই এই কাজ কার হতে পারে, বেলা আগের থেকেই জানত তার সাথে এমন কিছু ঘটতে পারে, আর তার উপর দিয়ে যে এখন বেশ ঝড় বয়ে যাবে সেটাও বুঝতে বাকি নেই বেলার। বেলা মাথা উঁচু করে সাঁঝের চোখ চোখ রাখতেই কেঁপে ওঠে ভয়ানক ভাবে লাল হয়ে আছে চোখ দুটো মনে হচ্ছে এখুনি রক্ত গড়িয়ে পড়বে দেখতে ভীষণভাবে হিংস্র লাগছে সাঁঝের চোখ দুটো, তার ক্রোধের আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দেবে মনে হচ্ছে। বেলা শান্ত চোখে সাঁঝের দিকে তাকিয়ে আছে তবে বেলার এই শান্ত দৃষ্টি সাঁঝকে যেনো আরো বেশি করে রাগিয়ে তুলছে। সাঁঝ বেলার কাছে উদরের শার্ট এর কাছে জোরে টান মারতে ইন করা শার্ট ছেড়ে যায় সাথে নিচের দিকে থেকে কয়েকটা বাটান কেটে পড়ে যায় শার্ট এর ফাঁক দিয়ে কোমরে খামছে জড়িয়ে ধরে মিশিয়ে নেয় তার সাথে বেলা ব্যাথায় কুকড়ে উঠে চোখ চেপে বন্ধ করে নেয় তবে বেলার এইরকম প্রতিক্রিয়া দেখার পরও সাঁঝের রাগের এক বিন্দু পরিমাণ পরিবর্তন আসেনি। আরেক হাত উঠিয়ে বেলার ঘাড়ে পেচিয়ে বেলার মুখ উপরের দিকে করে নেয় সাঁঝের চোখে বারবার আজকের আর.এমের সাথে দাঁড়িয়ে হেসে হেসে কথা বলাটা ভেসে উঠছে। বেলার কানের কাছে মুখ নিয়ে হিসহিসিয়ে বলে ওঠে।
-“আমাকে জ্বলতে দেখতে চেয়েছিলে তুমি তাইনা?
-” নিশ্চয় খুব খুশি হয়েছ আমার এমন জলন দেখে। কিন্তু এই খুশি বেশিক্ষণ থাকবেনা তুমি আমাকে জ্বলতে দেখতে চেয়েছিলো আর আমিও জ্বলেছি এইবার আমার আগুনে তোমাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারবো।
সাঁঝের এমন কন্ঠস্বর শুনেই বেলা কেঁপে ওঠে এতক্ষণ মনে যা সাহস সঞ্চয় করে রেখেছিলো সবটা সাঁঝের এই কথা শুনে পালিয়ে গেছে আজ যে তার অবস্থা করুণ হতে চলেছে সেটা বুঝতে বাকি নেই বেলার। তারপরেও চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে রেখেছে তার শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে এই নিয়ে এত কাছে এই ভাবে সাঁঝ দ্বিতীয়বার তার কাছে এসেছে এর আগে কাছে আসলেও এতটা ঘনিষ্ঠতা ছিলোনা।
-“জ্বলছে না খুব জ্বলছে আমাকে অন্যের সাথে হেসে হেসে কথা বলতে দেখে! হাহ বেলা সাহস করে তাচ্ছিল্যভরা কন্ঠে বলে ওঠে।
-” হ্যাঁ আমার জ্বলছে তোমার পাশে কোনো ছেলে কে ওই ভাবে আমি মেনে নিতে পারিনা আর পারবো না কখনই। সাঁঝ হিংস্র ভাবে বলে ওঠে।
-“আমার পাশে কাউকে মেনে নিতে পারোনা অথচ নিজের সাথে দিনের বেশি সময়ে অন্য মেয়েকে চিপকে রাখতে পছন্দ করো তাইনা? বেলা তাচ্ছিল্য করে বলে ওঠে।
-” খুব মজা লাগে তখন মেয়েদের সাথে ওই ভাবে চিপকে থাক… ।
বেলাকে আর কোনো কথা বলতে না দিয়েই বেলার অধর নিজের অধরযুগলের মাঝে বন্দি করে ফেলে, বেলা বাঁধা দিয়েও পারেনা বেলাকে আরো শক্ত ভাবে মিশিয়ে নেয়, বেলা আর বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করেনা জানে করেও কোনও লাভ হবেনা কারণ সে ঘুমন্ত সিংহকে জাগিয়ে দিয়েছে এখন যতক্ষণ না পর্যন্ত নিজের রাগ মিটিয়ে নেবে ততক্ষণ তাকে ছাড়বে না আগের দিনের সাঁঝের ব্যবহার তার মনে আছে। আগ্রাসী ভাবে শুষে নিতে থাকে বেলার অধরসুধা মেটাতে থাকে তার ভিতরের জমে থাকা এতক্ষণের সমস্ত ক্রোধ হিংস্রতা গভীর থেকে গভীর ভাবে ডুবে যায় বেলার অধরে সাথে ছোটো ছোটো কামড়ে ভরে দেয়। বেলা ব্যাথায় সাঁঝের শার্ট খামছে একহাত সাঁঝের বুকের কাছে আর একহাত পিঠে দুটো হাতেই শক্ত করে খামছে ধরে এর ফলে বেলার হাতের নখ পিঠে আর বুকে গেঁথে যায় কিছুটা এতে সাঁঝের ব্যাথা লাগলে সেদিকে তার কোনো ধ্যান নেই সে এখন বেলার মধ্যে ডুবে আছে, বেলার কোমরে খামছে ধরে থাকা হাতটা দিয়ে আসতে আসতে বেলার পেট সংলগ্ন জায়গায় স্লাইড করতে থাকে। কতক্ষণ অধরসুধাতে মেতে ছিল হিসাব নেই তবে শ্বাস আটকে আসতেই বেলা ছটফট করতে শুরু করে ছাড়া পাওয়ার জন্যে বেলার ছটফট করা দেখেই সাঁঝ বেলার অধর মুক্ত করে দেয়। বেলা বড় বড় করে নিঃশ্বাস নিচ্ছে, সাঁঝ নেশাক্ত চোখে বেলার মুখের দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে বেলার গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয় এতে যেনো বেলার শ্বাস প্রশ্বাসের গতি আরো দ্রুত হয়ে বেলার মনে হয় তার দম আটকে আসতে চলেছে, সাঁঝের স্পর্শে বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছে বেলা তার শরীরে অনুরণন শুরু হয়ে গেছে সাঁঝ বেলার গলায় নিজের অধর ছুয়ে যাচ্ছে বারংবার বেলাকে সাঁঝ তার উষ্ণ স্পর্শে আরো বেশি করে উত্যক্ত করে চলেছে বেলা সাঁঝের চুল খামছে মাথা সরিয়ে দিতে চেয়েও পারেনা বেলার এমন ছটফট দেখে সাঁঝের ঈষৎ হয়ে যাওয়া রাগটা আবারো বেড়ে যায় গলা ঘাড়ে এবার কামড় বসাতে শুরু করে। বেলার কানেরপাতায় অধর ছুয়ে দিয়ে আলতো করে কামড় বসিয়ে দেয়।
-“আমি কোনো মেয়ের সাথেই চিপকে থাকিনা একমাত্র তুমি ছাড়া অন্য কোনো মেয়েই আমাকে কোনোভাবেই আকর্ষণ করতে পারেনা যদি সে সম্পূর্ন অনাবৃত হয়েও আমার সামনে এসে দাঁড়াও তারপরেও আমার মধ্যে কোনো উত্তেজনা কাজ করেনা আমাদের কে ছোট থেকে সব বিষয়ে পরিপূর্ণ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র তোমাকে ছাড়া, তোমাকে দেখলেই আমি বেসামাল হয়ে পড়ি, কোনো ভাবেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিনা। সাঁঝ বেলার কানের পাতায় নিজের অধর ছুয়ে রেখে নেশাগ্রস্ত কন্ঠে বলে ওঠে।
সাঁঝের কথা শুনেই বেলা কিছুটা কেঁপে ওঠে সাথে সাঁঝের অধর তার কর্নকুহর স্পর্শ করে যেতে তার শরীরে শীতল স্রোত বয়ে যায়, সাঁঝের বেলার কেঁপে ওঠা অনুভব করে মুখ সামান্য উঁচু করে বেলার মুখের দিকে তাকায় দেখে এখন চোখ চেপে বন্ধ করে আছে অধরযুগল তিরতির করে কেঁপে উঠছে।
-“আমি জানি তুমি মেয়েদের বলতে কি বলতে চেয়েছ তুমি দিশার কথা বলতে চেয়েছ সেটাও বুঝতে পেরেছি তবে তুমি এটাও দেখেছ আমার কাছে আসার জন্যে তাকে প্রতি মুহূর্তে কতটা অপমানিত হতে হয় তবে তুমি আমার ওকে থাপ্পড় মারা টা দেখনি। সাঁঝ বলে ওঠে।
বেলা সাঁঝের মুখে থাপ্পড়ের কথা তড়িৎ গতিতে চোখ মেলে তাকায় সাঁঝের দিকে বেলার ভ্রু কুঁচকে আছে চোখে জমা হয়েছে একরাশ প্রশ্ন। সাঁঝ বেলার মুখ দেখে বুঝতে পারে সে কথায় কথায় কি বলে ফেলেছে বেলার কাছে। সেদিন সকালে যে থাপ্পড় দিয়েছিলো দিশাকে তার কাজের জন্যে সেটা বেলার কাছে বলা যাবেনা এই ঘটনা বেলা সহ্য করতে পারবে তাকে নিয়ে বেলা খুবই সেন্সসিটিভ এইরকম কিছু বেলা মেনে নিতে পারবে না। দিশা লিমিট যখন ছাড়িয়ে তখন আর সাঁঝ নিজেকে আটকে রাখতে পারেনা থাপ্পড় মেরে মেরে আধমরা করে তবুও এরপরও ঠিক তারসাথে চিপকাতে আসে। বেলা সাঁঝের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে নেবে তার আগেই বেলাকে কোলে তুলে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় সাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে সাওয়ার অন করে দেয় বেলার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে সাঁঝ বেলাও এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাঁঝের দিকে দুজনেই ভিজে চুপ চুপে হয়ে গেছে। বেলার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বেলাকে ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে যায় কিছুক্ষণ পর বেলার ড্রেস নিয়ে রেখে দিয়ে দরজা আটকে রেখে আবার বের হয়ে যায় সাঁঝ রুমের মধ্যে চেঞ্জ করে নিয়ে বারান্দায় চলে যায়।
বেলা ওয়াশরূম থেকে বের হয়ে দেখে রুমে সাঁঝ নেই বারান্দার দিকে উঁকি দিতেই সাঁঝকে দাঁড়িয়ে থাকতে বেলা বারান্দার দিকে গিয়ে কোনো কথা না বলে সাঁঝের হাত টেনে রুমে এনে বিছানায় বসিয়ে দেয় বেলার এমন কাণ্ডে সাঁঝ হতভম্ব হয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে বেলার দিকে তবে বেলা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ফার্স্টএড বক্স এনে সাঁঝের সামনে বসে ডান নিজের কোলের উপর টেনে নিয়ে মেডিসিন লাগিয়ে দিয়ে ব্যান্ডেজ করতে থাকে। অফিসের ভাঙচুরে হাত কেটে গিয়েছিলো এটা বেলা তখনই সাঁঝের অফিসে থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে লক্ষ করেছিলো আর তাই সেও তাড়াতাড়ি করে বাড়ি ফিরে এসেছিল বেলা সাঁঝকে জ্বালাতে চেয়েছিলো কিন্ত কোনোভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হতে সে দেখতে পারবে না। বেলা জানতো সে নিজেই সিংহের গুহাতে যেচে ঢুকতে যাচ্ছে তাকে সামনে পেলে সাঁঝ তার সমস্ত রাগ তার উপর দিয়ে ওঠাবে তারপরেও দ্রুত বাড়ি ফিরে আসে সে জানত সাঁঝ কখনই এই কাঁটা হাতে মেডিসিন লাগাবে না আর সেটাই হলো রক্ত শুকিয়ে গিয়ে কড়া পড়ে গিয়েছিলো তারপরেও সাঁঝের এতক্ষণ কোনো হেলদোল ছিলোনা।
চলবে…?
#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
২৪.
-“আপনি যে তখন বললেন ছোটো থেকে আপনাদের ট্রেইন করা হয়েছে যাতে আপনারা সব অবস্থায় নিজেদের সেফ রেখে মোকাবিলা করতে পারেন, এই কথার মানে কী? বেলা ভ্রু কুঁচকে তার সামনে বসে থাকা সাঁঝকে জিজ্ঞেস করে ওঠে।
সাঁঝ বেলার কথা শুনে ঠিক হয়ে বসে এতক্ষণ সে একভাবে বেলার দিকে তাকিয়ে ছিল। বেলা যে তার হাত কেটে গেছে সেটা লক্ষ করেছে এটা ভেবেই মনে মনে হাসে কারোর চোখে এটা না পড়লেও বেলার চোখে যে পড়েছে এটা বুঝতে বাকি নেই তাইতো সে রেগে আছে জেনেও তার কাছে ছুটে এসেছে সেটা বুঝতে বাকি থাকেনা সাঁঝের। এতক্ষণ সে চুপচাপ বেলার কাজ পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছিলো কিন্তু বেলার কথা শুনে ঠিক হয়ে বসে যায় বেলার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে দেখে বেলা ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে উত্তরের আশায়।
-“রওশন পরিবার বিদেশের বুকে বেশ নামকরা, বিদেশের বুকে ছড়িয়ে আছে এর খ্যাতি বিভিন্ন দেশ জুড়ে রয়েছে রওশন পরিবারের ক্ষমতা, আমাদের দাদুদের কালে থেকে এই ক্ষমতা সাম্রাজ্য চলে আসছে তারাই দেশ বিদেশে কিছুটা আধিপত্য বিস্তার করেছে আর বাকিটা ড্যাড ও আমরা করেছি। ইন্ডিয়াতে আমাদের সব কিছু থাকলেও জন্ম বিদেশে ওখানেই সব কিছু সারা জন্ম নেওয়ার দশ বছর পর মম ইন্ডিয়াতে ফিরে আসে সাথে সারিফও এখান থেকেই ওরা দুজনই সব কিছু দেখাশোনা করেছে মমের সাথে মিলে আর বিদেশের বুকে সবটা আমি দেখেছি তখন ড্যাড মাঝে মাঝে ইন্ডিয়াতে আর মাঝে বিদেশে থাকতেন। আমাদের রওশন পরিবারের প্রত্যেকেই প্রশিক্ষণ নিতে হয় দশ বছর বয়েস থেকে যাতে সব রকম পরিস্থিতিতে মোকাবিলা করতে পারি নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারি পড়াশোনার সাথে সাথে ট্রেনিং ও নিতে হতো আমাদেরকে এই সময়ে আমাদের উপর কোনো রকম মায়া দেখানো হতো না যাতে আমরা সব কষ্ট সহ্য করে শক্ত হতে পারি যাতে কোনওরকম কোনো কিছুর সংস্পর্শে এসে আমরা দুর্বল না হয়ে পড়ি সব সময়ে স্ট্রং থাকি। আমার মম ও ড্যাডকে বিয়ে করে আমাদের ফ্যামিলিতে আসার প্রশিক্ষণ নিয়েছিলো এমনকি আমার গ্র্যান্ড মাও মমের মত প্রশিক্ষন নিয়েছিলো এদের কেও পাওয়ার দেওয়া হতো। আমাদের চার পুরুষ দিয়ে এই প্রথা চলে আসছে এইসব কাহিনি। ইন্ডিয়াতে নর্থে মেহতা ও সাউথের পুরো রওশন ফ্যামিলির আয়ত্তে এখানে এটা যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই বলে দেবে। আগে গ্র্যান্ডমা রওশন পরিবারের কর্তি ছিলেন পরে মম আর এখন তুমি হবে। সাঁঝ বেলার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।
বেলা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সাঁঝের দিকে তার চেহারায় স্পষ্ট বিস্ময়ের ছাপ ফুটে উঠেছে বেলা ভেবেছিল সাঁঝ গভর্নমেন্ট লিডার সাথে বিজনেসম্যান কিন্তু তাদের পরিবার যে কোনও সাধারণ পরিবার নয় সেটা বেলা জানতোনা তাদের পরিবারের যে এত কাহিনী জড়িয়ে আছে সেটার বিন্দুবিসর্গ সে কিছুই জানেনা ইন্ডিয়াতে অর্ধেক তাদের আয়ত্তে মানে তাদের রাজত্ব চলে এটাকি সে কল্পনাও করতে পেরেছিল আর সব থেকে বেশি বিস্ময় হয়েছে সাঁঝের গ্র্যান্ডমা আর তার মমের কথা শুনে তারাও এক একজন পাওয়ারফুল ওম্যান, আচ্ছা ওই পরিবারে কি শুধু তাহলে ছেলে আর তার বউদের প্রশিক্ষন দেওয়া হয় নাকি বাকিদেরও বেলার মনে প্রশ্ন ঘুরতে থাকে। সাঁঝ বেলার মুখের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে তাকাতেই বুঝতে পারে বেলা কি ভাবছে।
-“আমাদের পরিবারের সবাইকেই প্রশিক্ষন দেওয়া ছেলে মেয়ে উভয়ই এবং তাদেরকেও পাওয়ার দেওয়া হয় নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে সাথে যে কোনও কাজে তা ব্যবহার করতে পারে। সারাও একই ভাবে প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত কিন্তু সারা সব সময়ে সাধারণ ভাবে থাকতে চেয়েছে তাই তার কাছে পাওয়ার থাকা সত্ত্বেও কখনো সেটার ব্যবহার করেনি। সাঁঝ বলে ওঠে।
-“আপনি বুঝি সেইজন্যে মেয়েদের সাথে চিপকে যাতে করে নিজের ফিলিংস টা বুঝতে পারেন সবার প্রতি? বেলা তাচ্ছিল্য করে বলে ওঠে।
তবে বেলার কথা শেষ করতে না করতেই সাঁঝ একটানে বেলাকে নিজের কোলে বসিয়ে নেয় দুহাত বেলাকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় একহাত গলা জড়িয়ে ধরে ও আরেক হাত উদরে কাপড় সরিয়ে উন্মুক্ত উদরে চেপে ধরে বেলার কাঁধে থুতনি রেখে কানের পাতায় নিজের অধর ছুয়ে দেয়। হটাৎ এমন দ্বিমুখী আক্রমণে বেলা স্তব্ধ হয়ে গেছে। সাঁঝের হাত তার উদর ও গলা সংলগ্ন জায়গায় আলতো স্পর্শে ছুয়ে যাচ্ছে সাথে কানে অধরের স্পর্শ, বেলার শরীর এমন অত্যাচারে কম্পিত হয়ে উঠছে তার শরীরে অনুরণন শুরু হয়ে গেছে শ্বাস প্রশ্বাসের গতি দ্রুত হয়েছে বেলার এমন অবস্থা দেখে সাঁঝ বাঁকা হাসে ।
-“আজকে যে কাজ তুমি করেছ আমাকে জ্বালানোর জন্যে আমাকে জ্বলতে দেখতে চেয়েছিলে অবশ্যই আমি জ্বলেছি ভীষণ ভাবে এখনও জ্বলছি। তবে আমাকে জ্বালানোর যে পন্থা অবলম্বন করেছ সেটা যেনো দ্বিতীয়বার না হয় নাহলে সেদিন আজকের থেকেও অনেক খারাপ কিছু হবে। তুমি আমাকে তোমার যন্ত্রণা বুঝাতে চেয়েছিলে কষ্ট দিতে চেয়েছিলে ঠিক আছে আমি তোমার যন্ত্রণা বুঝি তুমি না বোঝালেও আমি জানি তুমি আমাকে কারোর পাশে সহ্য করতে পারো না ঠিক তেমনি আমি তোমার উপর কারোর ছায়াও সহ্য করতে পারিনা তাই কষ্ট দিতে হলে অন্য পথ অবলম্বন করো কিন্তু এই কাজ যেনো না হয়। সাঁঝ বেলার কানে অধর ছুয়ে রেখে শান্ত শীতল কন্ঠে বলে ওঠে।
সাঁঝের এমন শীতল কন্ঠস্বর শুনে বেলা কেঁপে ওঠে তার শরীরে শীতল স্রোত বয়ে যায়, সাঁঝ এতক্ষণ কথা বললেও তার হাত কিন্তু তার কাজ করে যাচ্ছে আলতো করে স্লাইড করে যাচ্ছে বেলার শরীরে।
-“এমন কিছু কিছু সময় আসে যা আমরা করতে চাইনা কিন্তু আমাদের না চাইতেও সেই কাজ করতে হয় বাধ্যতামূলক হিসাবে নিজের প্রাণকে রক্ষা করার জন্যে তাই এই নিয়ে মন খারাপ করতে হবেনা আমার পাশে যতো যেই চিপকে থাকুক না কেনো তারা কিন্তু তাদের পর্যাপ্ত শাস্তিটাও ঠিক পায়, এই সাঁঝের মনে শুধু ফিলিংস কাজ তার বউয়ের জন্যে সে বউকে দেখলেই নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। সাঁঝ নেশাক্ত কন্ঠে বলে ওঠে।
-“পাঁচ বছর পর আবারো তোমার মুখে তুমি শুনে আমার বুকের হৃদ স্পন্দন বেড়ে গেছে পুরো বুকে এসে লেগেছে তাই একবার যখন আবারো তুমিতে এসে গেছো তাই আর আপনি ডাক যেনো না শুনি তোমার মুখ দিয়ে। সাঁঝ বেলার ঘাড়ে নিজের অধর স্পর্শ করতে করতে ফিসফিসয়ে বলে ওঠে।
সাঁঝের কথা আর কাজ দেখে বেলা স্তব্ধ মেরে বসে আছে তার শরীরে শিরশিরানি শুরু হয়
সাঁঝ বলা কথাটা তার মাথায় ঘুরছে কি বললো তখন নিজের প্রাণের রক্ষা করতে এমন কিছু কাজ করতে মানে? তবে বেলা বেশিক্ষণ নিজের মনে ভাবনাতেও স্থির থাকতে পারিনি সাঁঝ তার স্পর্শে বেলাকে অস্থির করে তুলছে বারংবার।
————–
ছাদের কার্নিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে শান্তা তার চোখ অদূরে অন্ধকারে আবদ্ধ হয়ে আছে তার মাথায় এই মুহূর্তে কি চলছে সেটা তাকে দেখলে বোঝা যাবেনা তবে তার মনের ভিতরের ঝড় সে নিজেই টের পাচ্ছে তার জীবনের পর্যন্ত সব কিছুর হিসেব করছে, ছোটো থেকেই সে খুব আদরে বড় কখনো কোনো কিছুর অভাব তার হয়নি বাবা মায়ের আদরে ভরা ছিল তার প্রতিটা মুহূর্ত কিন্তু সেই ঘটে যাওয়া ঘটনা তার পুরো জীবন যে উলট পালোট করে দিয়েছে সাত বছর আগের ঘটনায় তার ছোটো মন বিষিয়ে ছোটো বয়সে অনেক কিছুই বুঝতে শিখিয়ে দিয়েছিলো তার বাবা মায়ের সাথে থাকতেও তার অস্বস্তি বাড়িয়ে দেয় এক ছাদের তলায় থাকলেও তাদের মাঝের সম্পর্কের মধ্যে বহু বহু দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছে শুধুমাত্র একটা মহিলার জন্যে তাদের পুরো পরিবার পাল্টে গেছে, হঠাৎ করে কারোর কন্ঠস্বর কানে আসতেই শান্তা তার ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে। পাশে তাকিয়ে দেখে নিশান বুকে হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে তার দিকে তাকিয়ে । আজকে তারা সবাই একসাথে মায়ানীড়ে আছে তারা প্রায়ই সময়ে মায়ানীড়ে কাটিয়ে দেয় একসাথে তবে আজকে তাদের সাথে যোগ হয়েছে আরও দুজন সারিফ ও জাকিয়া। সাঁঝের ও বেলার সম্পর্কে জানার পর সেলিব্রেট করবে বলেই সব এক জায়গায় সামিল হয়েছে।
-“কি ব্যাপার শান্তা আজকে হঠাৎ করে এত শান্ত হয়ে গেলো কেনো? অশান্ত ঝগড়া রানী কিনা আজকে একদম চুপচাপ! নিশান ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।
-” কিছুনা এমনি। শান্তা নিরুত্তাপ ভাবে উত্তর দেয়।
-“এই কি ব্যাপার হ্যাঁ প্রেমে ছ্যাকা ট্যাকা খেয়েছ নাকি তাই কি এমন দেবদাস হয়ে দাঁড়িয়ে আছো ভাইরে ভাই শান্তা ছ্যাকা খেয়ে বাঁকা হয়ে গেছে ভাবা যায়। নিশান ফিচেল কন্ঠে বলে ওঠে।
-“আচ্ছা তুই দেবদাস হবি কি করে তুই তো দেবদাসি হবি ফিমেল ক্যারেক্টার, সেই সময়ে শাহরুখ খান দেবদাস হয়েছিলেন পারোর প্রেমে আর এখন তুই দেখি দেবদাসি হয়ে গেছিস মনে হচ্ছে এবার তোকে দিয়েও এই দেবদাসি ক্যারেক্টার অভিনীত হবে তা তুমি কার জন্যে দেবদাসি হলে শুনি। নিশান বলে ওঠে।
তবে শান্তা কোনো রকম প্রতিক্রিয়া না করে সেই একইভাবে দাঁড়িয়ে আছে নিশান এতক্ষণ জেনে বুঝেই এতগুলো কথা বলেছে যাতে তার কথা শুনে শান্তা কোনো রূপ প্রতিক্রিয়া করে তার সাথে ঝগড়া করে মন খারাপ থেকে বেরিয়ে কিন্তু সেই একইভাবে রয়েছে তার মন ভালো করতে চেয়েও হয়নি তাই নিশানের আর বুঝতে বাকি নেই সে তার পরিবারের জন্যে মন খারাপ করে আছে এই একটা বিষয়ে শান্তা মন খারাপ হলে নিজেকে এর মধ্যে থেকে দ্রুত বের করে আনতে পারেনা। তাই নিশান শান্তার সাথে মিশে দাঁড়িয়ে রেলিং এর উপরে রাখা শান্তার হাতের উপর নিজের হাত রাখে আরেক হাত এগিয়ে নিয়ে শান্তার কাঁধ জড়িয়ে নেয়, শান্তা আস্তে করে তার মাথাটা নিশানের কাঁধে হেলিয়ে দেয়, এই দুজন সব সময়ে ঝগড়া করলেও তাদের মনে একে অপরের জন্যে দুর্বলতা কাজ করে তাদের মন খারাপ হলে একে অপরকে এইভাবে সঙ্গ দিয়ে মন খারাপের সঙ্গী হয়ে থাকে, যেখানে আমরা আনন্দের সঙ্গী হতে পারি ঝগড়ার সঙ্গী হতে পারি তখন আমরা কষ্ট দুঃখের সময়ে কেনো পিছিয়ে যাব কেনো তখনও তার পাশে থেকে তার এই খারাপ সময়ে এর সঙ্গী হতে পারবো না প্রকৃত বন্ধুতে সব সময়ে পাশে থাকা যায় পাশে থাকে সমস্ত বিপদে আপদে এই জন্যে তাদের মধ্যে এত দৃঢ় বন্ধন তবে শান্তা আর নিশানের মধ্যে যে শুধু বন্ধুত্বের সম্পর্ক আছে তেমন নয় তার থেকেও বেশি কিছু আছে তবে সেটাকে ঠিক কী নাম দেওয়া যায় সেটা তাদের জানা নেই, নিশান এর হাতের বাঁধন আরো দৃঢ় হয় দুজনেই একসাথে একইভাবে দাঁড়িয়ে থেকে একে অপরের সংস্পর্শে থেকে দুঃখ বিলীন করার চেষ্টায় আছে দুজনেরই দৃষ্টি অদূরে অন্ধকারে নিবন্ধ হয়ে আছে।
চলবে….?
ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন..। নিজেদের মতামত জানাবেন ।