তোর আসক্তি পাগল করেছে আমায় ২ পর্ব-২৯+৩০

0
667

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
২৯.

-“সাঁঝ তুমি দিশা কে কেনো কোম্পানী থেকে বের করে দিয়েছ? সাঁঝের বাবা বলে ওঠেন।

মাত্রই বাড়িতে পা রেখেছিলো সাঁঝ, সারিফ,সারা তারা দুইদিন মায়ানীড়ে কাটিয়ে আজকে অফিসে থেকে বাড়িতে ফিরে এসেছে আর বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতেই প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে গেলো। সাঁঝের পাশে সারিফ সারাও দাঁড়িয়ে পড়ে। এখনও বাড়ির ভিতরেই ঢুকতে পারিনি দরজার মুখেই দাঁড়িয়ে আছে। আর তাদের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে সামাদ রওশন তাদের বাবা আর ঠিক তাদের থেকে একটু দূরেই দাঁড়িয়ে আছে দোলা মির্জা আর দিশা। পুরো রুমের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয় তারপর সাঁঝ নিজের চোখ মুখের ভাব কঠিন করে নেয় একভাবে তার বাবার দিকে তাকায়, ছেলেকে এইভাবে তাকাতে নিজে কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও সেটা মুখে ফুটে উঠতে দেয়না নিজেকে বাইরে থেকে স্বাভাবিক রাখে।

-“আমাদের কি বাড়িতে ঢুকতে দেওয়ার ইচ্ছে নেই নাকি যে দরজায় পা দিতে না দিয়েই প্রশ্নবান শুরু করেছ? সারা কিছুটা বিরক্তি হয়ে বলে ওঠে।

-” তোমাদের কি আমি ভিতরে ঢুকতে বাধা দিয়েছি আমি শুধু কিছু প্রশ্ন করেছি। সামাদ সাহেব বলে ওঠেন।

-“প্রশ্নটা একটু পরেও করা যেতো আমরা এখনও বাড়িতে ঢুকতে পারিনি তার আগেই প্রশ্ন তারমানে এটাকি নয় যে প্রশ্নের উত্তর না দিলে বাড়িতে ঢুকতে দেবেন না। সাঁঝ তীক্ষ্ণ ঝাঝালো কন্ঠে বলে ওঠে।

-” সাঁঝ তুমি আমার কথায় ভুল বুঝছো! সামাদ সাহেব বলে ওঠে।

-“আপনি কি বলতে চেয়েছেন আর কি বোঝাতে চেয়েছেন সেটা আপনার কথার ধরণ দেখে বোঝা যাচ্ছে। সাঁঝ সেই একই ভাবে বলে ওঠে ।

-” সাঁঝ বাবা তুমি ভুল বুঝছো তোমার বাবাকে তোমার বাবা সেটা বলতে চায়নি। দোলা মির্জা পিছন থেকে তাড়াতাড়ি করে বলে ওঠে।

-“প্লিজ আন্টি আপনি একটু চুপ করে থাকুন আমরা আমাদের বাবার সাথে কথা বলছি সেখানে আপনি বাইরের লোক হয়ে আমাদের মাঝে কথা বলতে আসবেন না। সারা রুক্ষ কন্ঠে বলে ওঠে।

-” সারা কিভাবে কথা বলছো তুমি এটা! সামাদ সাহেব বলে ওঠে।

-“যার সাথে যেভাবে কথা উচিত সেই ভাবে কথা বলছি, আর তুমি কি এখন সরে দাঁড়িয়ে আমাদের ভিতরে ঢুকতে দেবেন নাকি আমরা বেরিয়ে যাবো? সারা বলে ওঠে।

সামাদ সাহেব কোনো কথা না সামনের থেকে সরে দাঁড়ায় সাথে সাথে সাঁঝ সারিফ সারা বাড়ির ভিতরে ঢোকে। সাঁঝ এক মুহূর্ত তার বাবা, দিশা, আর দোলা মির্জা কে দেখে নেয়।

-” যার জন্যে আমাকে এত প্রশ্ন করে যাচ্ছেন তাকেই আগেই জিজ্ঞেস করুন সে কি করেছে আর তাকে কি কারণে কোম্পানী থেকে ফায়ার করা হয়েছে তার সাথে সমস্ত ডিল ক্যান্সেল করা হয়েছে। সাঁঝ তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে ওঠে।

সাঁঝের কথা শুনে সামাদ সাহেবের ভ্রু কুঁচকে যায় তিনিও জানেন সাঁঝ বিনা কারণ ছাড়া কারোরই সাথে খারাপ ব্যবহার করেনা কিন্তু দিশা আর তার মা বললো তার নাকি কোনো দোষ নেই শুধু কিছু মিসটেক এর জন্যে তাকে বের করে দেওয়া হয়েছে তাহলে তিনি কি ওদের কথা শুনে সাঁঝকে এইভাবে চার্জ করাটা ঠিক করেছেন! নিজের মনে ভাবতে থাকে সামাদ সাহেব।

-“আমি আমার কাজের ব্যাপারে কাউকে কৈফিয়েত দেওয়া পছন্দ করিনা আর দিতেও বাধ্য নই তারপরেও যদি আপনি কিছু জানতে চান তাহলে সেটা বাকিদের থেকে জেনে নিতে পারেন। আর হ্যাঁ প্লিজ এরপর থেকে আর কারোর হয়ে সাল্লিস্যি করতে আসবেন না এতে আপনার খারাপ নাও লাগতে পারে তবে বাকিদের খারাপ লাগে। সাঁঝ কঠিন কন্ঠে বলে আর কোনো দিকে না তাকিয়ে উপরে তার রুমের দিকে পা বাড়ায়।

সাঁঝের বলা কথা গুলো শুনেই সামাদ সাহেব বুঝতে পারেন তাকে নিয়ে তার ছেলের মনে থাকা চাপা ক্ষোভ আরো কিছুটা বেড়ে গেছে সাঁঝের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি নিজেও রুমের দিকে চলে যায়। সারা সারিফও একবার দিশাকে দেখে নিয়ে রুমে চলে যায়।

-“মাম্মা দেখলে ওই সারাটা কিভাবে কথা শুনিয়ে গেলো। দিশা বলে ওঠে।

-” হুম সব কিছুই দেখলাম সারার মুখে খুব কথা ফুটেছে কেমন ট্যাক ট্যাক করে কথা গুলো বলে আমাকে বাইরের লোক বলে অপমান করলো, ঠিক আছে আমিও এই অপমানের বদলা ঠিক নেবো। দোলা মির্জা হিসহিসিয়ে বলে ওঠে।

-“আর তোকেও বলি এত চিপকানোর কি আছে একটু কি তর সয়না সময় পেলেই সাঁঝের উপর ঝাঁপিয়ে পড়িস কয়েকদিন আগেই তো একই কারণে থাপ্পড় খেলি তোকে এত এত অপমান করলো তবুও কি পেট ভরেনি যে আবারো চলে গেছিলি, একটু তো সবুর করতে হয় নাকি তা না খালি ফেবিকলের মতো চিপকে রয়েছে তোকে বের করবেনা তো আমাকে বের করবে! দোলা মির্জা মেয়ের উপরে রাগ ঝেড়ে বলে ওঠে।

দিশাকে আর কোনো কথা বলতে না দিয়ে তিনিও রুমের দিকে হনহনিয়ে চলে যায় আর এদিকে দিশা দাঁত মুখ খিঁচে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে এত অপমান সহ্য করতে হচ্ছে তার হিসেব করে রাখছে পরে সে পাই টু পাই সব শোধ বোধ করে নেবে।

————

খান বাড়ির সামনে এসে নিশান বাইক দাঁড় করায় পিছনে বসা শান্তা নেমে দাঁড়ায় বাইক থেকে একবার নিশান তো একবার বাড়ির গেটের দিকে তাকায়।

-“বাড়ি যাও আর মাথা ঠান্ডা রাখবে নামের মতো একদম শান্ত, একদম হট হতে যাবেনা হট শুধু আমার সামনে হলেই চলবে ঠিক আছে। নিশান বলে ওঠে।

-” হু !!! শান্তা ভ্রু কুঁচকে নিশানের দিকে তাকায়।

-“বললাম একদম মাথা গরম করবে না বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়বে না ঠান্ডা মাথায় থাকবে কেমন। নিশান কথা এড়িয়ে বলে ওঠে।

-“তোমার সামনে আমাকে হট হলেই চলবে এই কথার মানে কি হুম? ভ্রু নাঁচিয়ে প্রশ্ন করে ওঠে।

-” মানে মানকচু খেলে গাল চুলকায় তাই মানে জানার দরকার নেই পারলে নিজেই মানে বের করে নিও এই কথার ঠিক আছে। নিশান বলে ওঠে।

শান্তা শীতল চোখে ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই নিশান অন্য দিকে চোখ ঘুরিয়ে নেয়।

-” আচ্ছা তুমি ভিতরে যাও আমিও বাড়িতে যাই ঠিক আছে আর কালকে সকালেও আমি নিতে আসবো তোমাকে বাইক নিতে হবে না। বলেই বাইক স্টার্ট করে বেরিয়ে যায় নিশান।

শান্তা নিশানের যাওয়ার দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে এক সময়ে চোখের আড়াল হয় যেতে শান্তা বাড়ির ভিতরে ঢুকে যায়। ড্রইং রুমে সবাই বসে আছেন তবে শান্তার সেদিকে কোনো খেয়াল নেই সে তার মত করে বাড়ির ভিতরে ঢুকে সিঁড়ির দিকে পা বাড়ায়, তবে সে যেতে পারেনা তার আগেই পিছন থেকে তাকে ডেকে ওঠে। শান্তা এক মুহূর্ত চোখ বন্ধ করে নিজেকে স্থির করে নিয়ে পিছনের ঘুরে দাঁড়ায়।

-“কোথায় ছিলে তুমি এই দুইদিন? আর এখন কোথায় থেকে বাড়িতে ফিরছো? তুমি যে এই বাড়ির মেয়ে সেটা কি তুমি ভুলে গেছো সবাই যে তোমার জন্যে চিন্তা করছে সেটা তোমার মনে নেই? বুরহান খান অর্থাৎ বেলার বাবা বলে ওঠে ।

শান্তা এক পলক তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে দেখে নেয়, তার কাছে এই মানুষটা কে মেরুদন্ড হীন মনে হয়,কথা গুলো শুনেই শান্তার মুখে ফুটে ওঠে তাচ্ছিল্যের হাসি।

-“আমি কোথায় ছিলাম, কেনো বাড়িতে ফিরিনি, আমি এই বাড়ির মেয়ে আমার জন্যে সবাই চিন্তা করছে মানে তাহলে আপনিও চিন্তা করছেন রাইট! তা মিস্টার খান আপনি কখনো নিজের মেয়ের জনে চিন্তা করেছেন এইভাবে বা কখনো তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে ভালো আছে কিনা সে কি খায় কোথায় থাকে কি করে করেছেন কখনো এই প্রশ্ন? আমি এখনকার কথা বলছিনা সাত বছর আগের কথা বলছি কখনো কি জিজ্ঞেস করেছিলেন? না করেননি বরং আপনার তখন আরো বেশি করে জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল কারণ সে আপনার খুন আপনার মেয়ে ছিল কিন্তু তখন তো আপনাকে দেখে মনে হয়নি যে আপনার একটা মেয়ে আছে বলে তা আজকে হঠাৎ আমার জন্যে এত দরদ কেনো হচ্ছে কেনো এতো চিন্তা হচ্ছে যে নিজের মেয়ের জন্যে কখনো চিন্তিত হয়না সে কিনা তার ভাইয়ের মেয়ের জন্যে চিন্তিত হাস্যকর না। আমার কাছে বেকার এই চিন্তা দেখাতে আসবেন না আমি কি করি কোথায় থাকি কার সাথে থাকি সেইটা জানার কোনো প্রয়োজন নেই। শান্তা বলে ওঠে।

-“দেখেছ কি বেয়াদব মেয়ে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটাই জানে না আসলেই সঙ্গ দোষ কার সাথে থাকে দেখতে হবে না ওই নোংরা মেয়েটার সাথে মিশে মিশে এই অবস্থা। রিসা বলে ওঠে।

-” আচ্ছা মিসেস খান পাঁচ বছর আগে আপনি মুখের বেহাল দষায় বেহুস অবস্থায় খান বাড়ির গেটের সামনে পড়েছিলেন তাইনা তা এর কারণটা কি সবাই জানে বলেছেন কাউকে যে কেনো আপনার ওই অবস্থা হয়েছিলো আর কেনো বা বাড়ির বাইরে ওই ভাবে পড়েছিলেন? শান্তা বাঁকা হেসে বলে ওঠে ।

শান্তার কথা শুনে রিসার মুখ ফ্যাকাশে হতে শুরু করে আর বাকিরা অবাক হয়ে শান্তা আর রিসার মুখের দিকে তাকাতে থাকে।

-“নিশ্চয়ই মনে আছে ওই দিনের ঘটনা আর ঠিক কী হয়েছিল কি কারণে আপনার মুখের ওই অবস্থা হয়েছিলো রাইট? ভুলে যাবেন না তাই কার সম্পর্কে কথা বলছেন সেটা ভেবে বলবেন যার সম্পর্কে এত খারাপ কথা বলছেন সে চাইলে আপনার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের কেস কোর্টে পারে ঠিক আছে। শান্তা বলে ওঠে।

-“আরেকটা কথা মিস্টার খান পয়সার দুই পিঠ পিঠ তাই কখনই এক পিঠ দেখ কোন কিছু বিচার করতে যাবেন না। বলেই শান্তা উপরে চলে যায় নিজের রুমে ।

চলবে…?

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৩০.
ড্রইং রুমে চারিদিকে চুপচাপ কেমন একটা গুমোট ভাবে ভরে গেছে থম থমে ভাব বিরাজমান। রিসা খানের মুখ ভয়ে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে আর বাকি তিনজন শান্তার বাবা মা আর বুরহান খান অবাক আর প্রশ্নসূচক চোখে তীক্ষ্ণ ভাবে তাকিয়ে আছে, শান্তা ওদের মাঝে থেকে যাওয়ার আগেই যে অতীতের ঘটে যাওয়া ঘটনার বোমা ফাটিয়ে গেছে সেটায় এখন পুরো পরিবেশ থমথমে হয়ে আছে রিসার মাথায় তো এখনও আসেনা শান্তা কি করে জানালো এই ঘটনা সে এই ঘটনা চাপা দেওয়ার জন্যে কত ভূরি ভূরি ঘটনা সাজিয়ে ছিল তা আজকে এক নিমেষে শান্তা চোখে আঙুল দিয়ে সবাই কে ভুল প্রমাণ করে দেখিয়ে দিয়েছে এখন আর তার ওই মিথ্যে কাজ করবেনা উফ এমন হবে জানলে সে কখনই শান্তা কে চার্জ করানোর কথা কখনই বলত না হ্যাঁ সেই তো ওদের সবার মাথায় শান্তার ব্যাপার কথা বলে গেছে এটা সেটা যাতে এদের মাথায় ও শান্তা কে চিন্তা হয় আর শান্তাও বেলার থেকে আলাদা হয়ে যায় কিন্তু তার সব উল্টো হয়ে গেছে তার সব প্ল্যান তার উপরেই ভারী পড়েছে। কিন্তু শান্তা জানল কি করে তাহলে কি বেলা বলে দিয়েছে হ্যাঁ একমাত্র সে ছাড়া এই ঘটনা আর কেউ জানেনা আর জানতো আনিস তবে তার তো কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি সেই ঘটনার পর থেকে এক মনে ভেবে যায় রিসা আর এই পুরো সময়ে তার মুখের প্রতিক্রিয়া বারবার চেঞ্জ হতে থাকে।

-“রিসা শান্তা এইসব কি কথা বলে গেলো তারমানে তোমার ওই ঘটনার পিছনে অন্য কারণ ছিল তাইনা? বুরহান খান ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।

রিসা নিজের ভাবনার মাঝে ব্যস্ত থাকায় বুরহান খান প্রশ্ন করতে রিসা চমকে ওঠে ভীতু চোখে তাকায়। আর শান্তার বাবা মা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে এখনও ।

-“কি হলো বলো চুপ করে আছো কেনো! তারমানে তুমি আমাদের মিথ্যে কথা বলেছিলে! কিন্তু কেনো? বুরহান খান কঠিন কন্ঠে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” আ আস আসলে মানে আমি। রিসা ভয়ে ঢোক গিলে আমতা আমতা করে কিছু মিথ্যে বলার চেষ্টা করে কিন্তু বলবে বুঝতে পারেনা।

-“কি আমতা আমতা করে যাচ্ছো কি এমন হয়েছিলো সেদিন যে আমাদের মিথ্যে বলেছিলে তারমানে সেদিন আমি ঠিক ছিলাম কেউ তোমাকে মেরে ছিলো তোমার গালে থাপ্পড় এর ছাপ ছিল কিন্তু তুমি মানতে চাওনি কিন্তু আজ তোমার প্রতিক্রিয়া দেখে তাই মনে হচ্ছে। শান্তার মা বলে ওঠে।

-” কাউকে মারতে গেছিলো কিন্তু নিজেই খেয়ে এসেছিলেন শুধু তাই নয় তাকে কেউ আমাদের বাড়ির সামনে ফেলে দিয়ে গেছিলো এখন তো আমার মনে হচ্ছে তোমার চরিত্রের কোনো দোষ আছে আপনি এতদিন বেলাকে বলে এসেছিলেন কিন্তু আমার তো মনে হয় বেলা নয় নোংরা আপনি আপনার চরিত্রের ঠিক নেই। শান্তা পিছন থেকে ওদের কথার মাঝে বলে ওঠে ।

-“শান্তা!! রিসা চিৎকার করে ওঠে শান্তার কথা শুনে।

-” চিৎকার করে কোনো লাভ নেই চিৎকার করলে কোনো সত্যি পাল্টে যাবেনা সবাই চোখে পট্টি পরে থাকলেও আমি পরে নেই আর তাছাড়া আমি মুখে শুধু বলিনা প্রমাণ দিয়েই কথা বলি। শান্তা তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে ওঠে।

শান্তার কথা শুনে রিসা চমকে ওঠে কিসের প্রমাণের কথা বলছে ও কি প্রমাণ আছে শান্তার কাছে এতক্ষণ যেটুকু বাঁচার আসা ছিল এই ঘটনার থেকে সেই পথ টাও যেনো অন্ধকার দেখতে পাচ্ছে রিসা, আর বাকি শান্তার বাবা মা আর বুরহান খান অবাক বিস্ময় প্রশ্ন সব মিশেল প্রতিক্রিয়া নিয়েই তাকিয়ে আছে শান্তার দিকে।

-“প্রমাণ? কি প্রমাণের কথা বলছো তুমি শান্ত? বুরহান খান জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” এই যে এই প্রমাণের কথা বলছি, প্রমাণ ছাড়াতো তোমরা মুখের কথা কিছুই বোঝোনা সেটা সত্যি হোক আর চাই মিথ্যে, এটা দেখার পর অন্তত তোমাদের চোখের পট্টি টা একটু হলেও সরিয়ে ফেলো। শান্তা সেন্টার টেবিলের উপরে কত গুলো ফটো কপি ছুড়ে ফেলে বলে ওঠে।

এদিকে সবাই বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে ফটো গুলোর দিকে আর রিসার তো মনে হচ্ছে সে এক্ষুনি এখান থেকে ছুটে পালিয়ে যায় তার পা যেনো ভেঙে আসছে আর কিছু সেকেন্ড এমন ভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে সে নির্ঘাত ফ্লোরে লুটিয়ে পড়বে, শান্তার বাবা জাহির খান শান্তার মা সীমা খান আর বুরহান খান চোখ বড় বড় করে দেখে যাচ্ছে ছবি গুলো তাদের চোখে মুখে এতক্ষণ অবাক বিস্ময়ের মিশেল থাকলে এখন সেই জায়গায় রাগ ঘৃণার ছাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। শান্তার দেওয়া ছবি গুলোর মধ্যে দেখা যাচ্ছে রিসা কোনো এক কফিশপে বসে আছে অজানা কোনো ছেলের সাথে কিছুটা ঘনিষ্ঠ হয়ে এইরকম আরো কয়েকটা ছবি দেখা যাচ্ছে সেদিনের ঘটনার কিছু ছবিও আছে দুজন লোক রিসাকে গাড়ি থেকে বের করে তাদের বাড়ির সামনে ফেলে দিচ্ছে আর শেষে বের হয় বেলার সাথে কয়েকটা ছবি যেখানে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে রিসা বেলার মাথা ধরে সিঁড়ির রেলিংয়ে ঠুকে দিচ্ছে কোনোটাই থাপ্পড় মারছে সাথে আছে আনিস তাদের তিনজনেরও আছে যখন তারা দুজন মিলে বেলা কে টর্চার করছে। এই ছবি গুলো দেখেই বুরহান খানের চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে রাগে। প্রথমত রিসার এমন ছেলেদের সাথে থাকা ছবি সাথে বেলার সাথে করা এমন অত্যাচার দেখেই তার মাথায় যেনো কেউ আগুন জেলে দিয়েছে তিনি তার মেয়েকে যথেষ্ঠ ভালোবাসতো কিন্তু এই মহিলা কিছু না কিছু নিয়ে প্রতিনিয়ত তার কাজে অভিযোগ দিত আর তাই নিয়ে তিনিও বেলার সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করে দিত আর সেদিন তো আরো বেশি খারাপ কিছু ঘটে ছিল যার কারণে তার মেয়ে আজ তার কাছে নেই এগুলো ভেবে নিজের রাগ দমিয়ে রাখতে পারেনা রিসার গালে জোর দার থাপ্পড় বসিয়ে দেয়, রিসার এতক্ষণ ভয়ে কাপছিলো সাথে কষে থাপ্পড় দেওয়ার জন্যে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনা ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে, সীমা খান ও মুখ ঘুরিয়ে নেয় তিনিও যতো খারাপ হোকনা কেনো বেলার সাথে এমন করাতে তিনি কম খেপে নেই আসলে তিনি খারাপ নয় বেলার মা মারা যাওয়ার পর থেকেই তিনি বেলাকে দেখা শোনা করেছেন কিন্তু এই রিসা আসার পর থেকে বেলার সমন্ধে নানারকম কথা বলে তার ব্রেনওয়াশ করে দেয় তার জন্যে তিনি বেলার সাথে খারাপ ব্যবহার করে আর সেটা হলো ভুল বোঝা যখন মায়ের মত বেলার পাশে থাকার কথা ছিল তখন তিনি থাকেননি।

-” তোর এত বড় সাহস কি করে হয় হ্যাঁ আমার মেয়েকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েও তোর শান্তি হয়নি আবার তুই আমার মেয়েকে গিয়ে মেরে এসেছিস। আজ আমি তোকে মেরেই ফেলবো। বুরহান খান রাগে বলে পাশের দেওয়ালে থাকা চাবুক নিয়ে রিসার উপর প্রহার করতে শুরু করেন।

-” এখন মেয়ের চিন্তা মাথায় এলো আর এতদিন যে তার উপরে আপনি নিজেই খারাপ ব্যবহার করেছেন আর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলছেন সেখানে আপনিও কম অপরাধী নন রিসা খান যতোটা দোষী আপনিও ঠিক ততটাই দোষী উনি না হয় বাইরের লোক বেলাকে চেনেন না কিন্তু আপনি কি চেনেন না বেলা তো আপনার রক্ত আপনার মেয়ে ছিল তাইনা আপনার তো ভুল হওয়ার কোনো কারণ ছিলোনা আরো বেশি করে বোঝা উচিত ছিলো বেলাকে বেলার পাশে দাঁড়ানো উচিত ছিল কোনটা ভুল আর কোনটা ঠিক সেটা আপনার বোঝা উচিত ছিল কিন্তু আপনি কি করেছেন এই মহিলার কথা মতো চলেছেন আর বেলার সাথে ওই মহিলার সাথ মিলিয়ে অত্যাচার করে গেছেন সত্যি মিথ্যে কোনো যাচাই না করে আর শেষে কি করলেন বাড়ি থেকেও বের করে দিয়েছেন আর এই মহিলা তো এতেও ক্ষ্যান্ত হয়নি বেলার ওখানে গিয়েও তার উপরে অত্যাচার চালিয়েছে আপনারা সবাই এক রকম কেউ কারোর থেকে কম নয়, এত বছর তো মনেহয় একবারও মনে হয়নি যে আপনার আরো একটি মেয়ে ছিল না আছে বলে তাহলে আজকে এই ছবি গুলো দেখে এত রাগ হচ্ছে কেনো করুণা হচ্ছে নাকি! এতবছর যখন মেরুদন্ডহীন হয়েছিলেন তাই এখন নতুন করে আর মেয়ের উপরে আলগা দরদ দেখিয়ে লোক হাসাবেন না আর নিজেদের কে হাসির পাত্র বানাবেন না। শান্তা কঠিন কন্ঠে বলে ওঠে।

শান্তার বলা কথা গুলো ওখানে থাকা বাকি তিনজনের বুকে ছুরির মত আঘাত করে ওদের আজকে শান্তার বলা কথার উপরে আর কোনো কথা বলার নেই সত্যি তারা এত দিন মেরুদন্ডহীন হয়েছিলো কখনই চিন্তা করেনি বেলাকে নিয়ে তাহলে আজকে কেনো আজ কিছুটা সত্যি সামনে এসেছে বলে নাকি তাদের থেকে বয়সে ছোট্ট এক মেয়ে চোখে আঙুল দিয়ে সত্যি টা দেখিয়ে দিচ্ছে বলে বুরহান খান বুকে হাত চেপে ধরে বসে পড়েন তার সারা শরীর যেনো শান্তার বলা কথা গুলো জ্বালিয়ে দিয়েছে যন্ত্রণা করছে তার বুকের মধ্যে তিনি বাবা হয়েও তার মেয়ের উপরে অত্যাচার করে গেছে আজ তার লজ্জায় অনুশোচনায় মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে। শান্তা ওদের দিকে একবার দেখে নিয়ে উপরের দিকে চলে যায় আসলে এই ছবি গুলো তাকে সাঁঝ দিয়েছিলো রিসার বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্যে আর আজকে শান্তা সময়ে ও সুযোগ পেয়ে একবারে সাঁঝের দেওয়া এই ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে দিয়েছে সাঁঝ কখনই তার শত্রুদের ক্ষমা করেনা আর এখানে তো বেলার সাথে অত্যাচারের কথা সেখানে বেলা কি করে ছেড়ে দেয় সাঁঝ রিসার পিছনে নিজের লোক লাগিয়ে রেখে তার প্রত্যেকটা চাল চালনের উপর নজর রেখে ছিল আর আজ তার হিসেব ও নিয়ে নিলো। রিসার চারিদিকে একবার দেখে নিয়ে নিজের শরীর ঘষে ঘষে ওখান থেকে রুমের দিকে পালিয়ে যায়। বুরহান খান দুহাত নিজের মুখ চাপা দিয়ে একে একে প্রত্যেকটা ঘটনা ভাবতে থাকে তার মেয়ের উপরে করা অত্যাচার হওয়া আর সেদিনের সেই অভিশপ্ত ঘটনা যা পুরো ঘটনায় পাল্টে দিয়েছে সামান্য ক্ষীণ বেঁচে থাকা বাবা মেয়ের সম্পর্কের ও ইতি টেনে দিয়েছে।

চলবে….?

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন..। নিজেদের মতামত জানাবেন ।