তোর নামেই শুরু পর্ব-০৫

0
329

#তোর_নামেই_শুরু
#তানজিনা_তিহা (লেখনীতে)
#পর্ব_০৫ (বোনাস পর্ব)

আমি ছোট মা আর ফুফা চলে এসেছি ছোট চাচার বাড়িতে। অনেক দিন পড়ে এলাম এখানে। এসেই আমার দু চোখ লিসাকে খুঁজছে। লিসা আমার একমাত্র চাচাতো বোন। আমার থেকে দুই বছরের ছোট ও। দুই বছরের গেপ থাকলেও আমরা সমবয়সীদের মতোই আচরণ করি। ওর সাথেই আমার সব গল্পের ঝুলি। বাড়িতে এসেই চাচির সামনে পড়লাম। চাচি এসেই আমাকে জরিয়ে ধরলেন।

কেমন আছিস মেঘা? আমাদের তো ভুলেই গেছিস। একবারও মনে পড়ে না চাচির কথা?

হুম। কি করবো বলো? এই যে এই মহিলার (ফুফুকে দেখিয়ে) বজ্জাত ছেলেটার জন্যই তো আসতে পারি না। খালি কথায় কথায় বকে আমাকে।

রিশানের কথা বলছিস? রিশান আসে নি?

ও কি আর আসে? এই ছেলেকে নিয়ে যে আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। (ফুফু)

কি আর করবে একটা বিয়ে করিয়ে দাও দেখবে সব ঠিক হয়ে গেছে। যখন বউ ঘরে আসবে সব ঠিক হয়ে যাবে। (চাচি)

রিশান ভাইয়ার বিয়ের কথা শুনতেই মনে কু ডাকছে। কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না। কেমন যেনো খারাপ লাগা কাজ করছে।

ছেলেকে যে বিয়ে করাবো মেয়ে পাবো কোথায়? এই ছেলেকে কে বিয়ে করবে?

কেন? আমাদের রিশান ভাইয়া কোন অংশে কম নাকি। ভার্সিটিতে সব মেয়ের ক্রাশ। একবার বিয়ের কথা বলেই দেখো না কত মেয়ের লাইন পড়ে। কথাগুলো বলতে বলতেই লিসা চলে আসলো।

আমি লিসাকে দেখে ততটা রিয়েকশন দিলাম না। মনটা হঠাৎই খারাপ হয়ে গেলো। সবাই ভাইয়ার বিয়ের কথা বলাবলি করছে কেন? ভাইয়া তো পড়াশোনা করছে। এসব শুনতে ভালো লাগছে না তবুও বসে আছি।

লিসা ঠিকই বলেছে। এখন একটা ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করিয়ে দাও ছেলেকে সব ঠিক হয়ে যাবে। (চাচি)

তা না হয় করাবো। আবিদের বিয়েটা আগে দাও। ওর তো সবই কমপ্লিট।

তা ভাবছি। এখন একটা বউ এনে আমি ছুটি নিবো।

হুম। আমিও তাই ভাবছি।

তাদের কথা আর ভালো লাগছে না। আমি লিসার হাত টেনে উপরে নিয়ে গেলাম।

আরে আরে কি করছিস? লাগছে তো।

লাগুক আরো বেশি লাগুক। তুই একটা শয়তান।

আমি আবার কি করলাম? আমি তো এখনো কিছুই বললাম না।

বলেছিস তুই অনেক কিছু বলেছিস।

তা আমি আপনাকে কি বলেছি ম্যাডাম?

বিয়ের কথা বললি কেন?

কই? আমি কখন বিয়ের কথা বললাম?

রিশান ভাইয়ার বিয়ের কথা বললি কেন? ভাইয়ার বিয়ের কথা তোকে কে বলতে বলেছে?

ওহো ভাইয়ার বিয়ের কথা বলায় মহারানী রাগ করেছে। তা ভাইয়ার বিয়ের কথায় তোর এতো লাগলো কেন?

আমার আবার লাগবে কেন? ভাইয়া এখন পড়াশোনা করছে তার বিয়ের দরকার কি?

তাই বুঝি? দিল মে কুচ কুচ হোতা হে তাই না?

যা কি বলছিস তুই।

কি বলছিস মানে? সত্যিই তো বলছি। তা কবে থেকে? একটু বললিও না।

কি বলবো? বারবার কি বলছিস তুই।

রিশান ভাইয়াকে ভালোবাসিস?

হুম বাসি ভাইয়াকে কে না ভালোবাসে। ফুফা ছোট মা তূই আমি চাচা চাচি সবাই ই তো তাকে ভালোবাসে।

আরে গর্দভ, ভাইয়াকে পছন্দ করিস?

এবার নিজের মাঝে কেমন জানি অজানা অনুভূতির সৃষ্টি হলো। লিসার কথা শুনে ভাবনার অতল গভীরে ডুব দিলাম। ভাইয়াকে নিয়ে কেন এতো ভাবি আমি? তার সব কথাই ভালো লাগে কেন? বকা খাওয়ার পরও কেন বারবার তার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হয়? সব বায়না রাগ অভিমান তার সাথেই। তাকে ছাড়া আমার কেন ভালো লাগে না। তবে ভাইয়াকে কি আমি পছন্দ করি? ভাইয়াকে ভালোবাসি?

কি রে মেঘু? কিছু বলছিস না যে? সত্যি নাকি?

যাহ কি বলছিস। ভাইয়া তো ভাইয়াই।

হুম হুম বুঝেছি আমি। দেখিস আবার ভাইয়া থেকে ছাইয়া যেন না হয়।

তুই চুপ করবি লিসা।

আমি তো চুপই আছি।

ধরনীর বুকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। যতই সময় যাচ্ছে আধার যেন ততই ঘন হচ্ছে। চারিদিকে পিন পিন নিরবতা। আকাশের মধ্যে আবছা চাঁদটা দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে মেঘের ভেলায় ভাসছে! বেলকনিতে দাঁড়িয়ে নিস্তব্ধ প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখে চলেছি আমি। চারপাশটা বেশ ভালো লাগছে দেখতে কিন্তু মনটা ভীষণ খারাপ। এখানে আসার সময় ভালো লাগলেও এখন আর ভালো লাগছে না। রিশান ভাইয়ার কথা মনে পড়ছে। ভাইয়া কোথায় আছে? কি করছে? ইদানিং ভাইয়ার কথাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। লিসার কথা শুনে তো আরো বেশি। আজকে তার বিয়ের কথা শুনে তো আমার কিছূই ভালো লাগছে না। ভাইয়ার বিয়ে? ভাইয়া কি কাউকে পছন্দ করে নাকি ফুফুর কথা মতো বিয়ে করবে? সত্যি ভাইয়ার বিয়ে? আর ভাবতে ভালো লাগছে না। ড্রইং রুমে চলে এলাম পানি নিতে খুব তৃষ্ণার্ত আমি। নিচে নামতেই দেখা হলো আবিদ ভাইয়ার সাথে। আবিদ আমার চাচাতো ভাই ছোট চাচার একমাত্র ছেলে। ভাইয়া এবার মাস্টার্স শেষ করেছেন।

কি রে মেঘু কেমন আছিস?

এই তো ভালো ভাইয়া। তুমি?

আমি ভালো আছি। তা দিনকাল কেমন কাটছে তোর? ইদানিং তো দেখাই মিলে না।

আমি কি করবো? রিশান ভাইয়া তো আমাকে আসতেই দেয় না।

আবিদ ভাইয়া আমার কথা শুনে মিটিমিটি হাসছেন।

রিশান আস্তে দেয় না। তা রিশান কেমন আছে?

ওই রাগী পেঁচার কথা বলবে না। আমার কোন শান্তি নেই ওই পেঁচা টার জন্য। সারাদিন শুধু বকতে থাকে। মেঘা এটা না ওটা ওটা না এটা। বদের হাড্ডি একটা। আর সব ঝারি তো আমার ভাগেই উঠতে ঝারি বসতে ঝারি।

মেঘা চুপ কর এখন।

কেন চুপ করবো আমি? হ্যাঁ কেন চুপ করবো? ওই শয়তানটা আমাকে একটু শান্তি দেন না। আমার বারোটা বাজিয়ে রেখেছে। আমার স্বাধীনতা বলতে কিছুই নেই। উনি যা বলবে তাই। নিজেকে কি মনে করে সে?

মেঘা এবার থাম। তোর ভালোর জন্যই বলছি।

থামবো না আমি একদম থামবো না। পেঁচা টার জন্য কলেজে গিয়েও শান্তি নাই। যখন তখন আমাকে ধমকায়। কি পেয়েছে সে?

মেঘা পিছনে দেখ থাম বোন আমার।

পিছনে কি দেখবো হ্যাঁ?

এতো রেগে আছিস কেন?

ওই ভূতটা আমকে কি মনে করে? আমারও তো মন আছে নাকি আমি কখনো আমার মতো কিছু করতে পারি না। সবকিছুতে তার হাত।

এবার আবিদ ভাইয়া আমাকে পিছন ফিরিয়ে দিলেন। পিছন ফিরে দেখে আমার চক্ষু চড়কগাছ। রিশান ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে!! এবার কি হবে? উনি কি সব শুনেছেন?
ভাইয়া দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আমার কথাগুলো শুনছিলেন। আমি এবার ভয়ে কাঁপছি। এবার আমাকে উনি কি যে করবেন তা আল্লাহই ভালো জানেন। মনে মনে আয়াতুল কুরসি পড়ছি আর আল্লাহকে ডাকছি। কি হবে?

তো তোর বলা শেষ হয়েছে না আর কিছু বাকি আছে?

না মানে ভাইয়া আসলে আসলে আমি আমি

আমি আমতা আমতা করে জবাব দিচ্ছি।

কি তুই? বল

ভাইয়া আস্তে আস্তে আমার দিকে এগুচ্ছে। আমি পিছিয়ে যাচ্ছি। আবিদ ভাইয়া বললেন,

রিশান বকিস না কিন্তু পড়ে তোমারই লস কেঁদে দিবো।

কিন্তু ও সাহস করে এতো কিছু বললো ওকে পুরুস্কার দেওয়া উচিত।

তাহলে আমি যাই দেখিস কিন্তু বেশি কিছু বললে তোমাকেই পাশে ঘেঁষতে দেবে না।

বলেই আবিদ ভাইয়া চলে গেলেন। এবার রিশান ভাইয়া আমার দিকে এক পা দু পা করে এগুচ্ছেন আর আমি পিছনে সরছি। আল্লাহই জানে আজ কপালে কি আছে?

মেঘপরি কি বলেছিলি আমাকে?

আ,,,,,,মি কি বলবো আবার?

কিছু বলিস নি।

ইয়ে মানে মানে

ভাইয়া আমার একেবারে নিকটে চলে আসছেন। কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না। ভয়ে শরীর থেকে ঘাম ঝরতে লাগলো।

(রিচেক হয় নি! অনুগ্রহ করে ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। পাঠকমহল হঠাৎ করেই বোনাস পর্ব দিয়ে দিলাম। কেমন লেগেছে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু)