তোর নামেই শুরু পর্ব-০৮

0
312

#তোর_নামেই_শুরু
#তানজিনা_তিহা (লেখনীতে)
#পর্ব_০৮

চোখ খুলে নিজেকে এক বদ্ধ কুটিরে একটা চেয়ারে আবিষ্কার করলাম। চারপাশটা একদম অন্ধকার। মানুষজন এখানে থাকেন বলে মনে হয় না। বেশ পুরানো ঘরটা। পাশে খড়কুটোর আবরণ। একদম ধূলোবালিতে ঘেরা। মনে হচ্ছে এক আঁস্তাকুড়ে আছি। আমার হাত পা চেয়ারের সাথে খুব শক্ত করে বাঁধা। মাথাটা বেশ ঝিমঝিম করছে মনে হচ্ছে এখনই পড়ে যাবো। চারপাশে ভালো করে দেখে বুঝতে পারলাম আশেপাশে কেউ নেই। আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে কে? কেন এনেছে? কালো আবরণে আবৃত ব্যক্তি কে? কে সে? আমার সাথে কি শত্রুতা তার? নানান প্রশ্ন মাথায় আসছে। মাথা নাড়াতে পারছি না কেন তা আমার অজানা। হঠাৎ কেউ একজন ঘরটায় প্রবেশ করলো। দরজার দিকটায় চেয়ে দেখলাম একদম নিজেকে কালো রঙে ঢেকে রেখেছে সে। কালো রঙ দিয়ে নিজেকে আবদ্ধ করে রেখেছে সে। সে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে দরজাটা লাগিয়ে দিলো। তাকে চিনতে পারছি না। সে আমার পাশে এসে বসলো।

কি খবর মেহুলাম্মু?

আপনি কে? আমাকে এভাবে ধরে এনেছেন কেন?

সে অট্টোহাসিতে ফেটে পড়লো। আমি অবাক হয়ে চেয়ে আছি তার দিকে। কে হতে পারে সে? আমাকে মেহুলাম্মু বলে ডাকছে কেন? তবে কি সে আমার পরিচিত কেউ? কে হতে পারে?

মেহুলাম্মু আমাকে চিনতে পারো নি?

আপনি কে?

আমাকে অনেক ভালো করে চিনো তুমি। আস্তে আস্তে বুঝতে পারবে আমি কে।

আপনি আমাকে ধরে এনেছেন কেন? আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি?

তুমি আমার কোন ক্ষতি করো নাই। কিন্তু তোমাকে আমার লাগছে।

কেন?

সময় হলেই বুঝবা।

এই ব্যক্তির কথা কিছুই বুঝতে পারছি না আমি। কি বলতে চাচ্ছে সে? কে সে? আমাকে চিনে কিভাবে? আমার সাথে কি সম্পর্ক তার? কেন এনেছে আমাকে। আর কিছু ভাবতে পারছি না। সেই ব্যক্তিটির ফোনে টুং টাং রিংটোন বেজে উঠতেই সে রিসিভ করলো।

হা বল।

ওপাশে…

কি বলিস? তুই দাড়া আমি আইতাছি। ওই হারামিরে একদম খাইয়া ফেলমু।

ওপাশে…

আমি আইতাছি।

কি হলো বুঝতে পারলাম না। এটা বুঝতে পারছি লোকটি প্রচণ্ড রেগে কারো সাথে কথা বলছিলেন। ফোনটা কেটে দিয়ে সে আমার চুলের মুঠি শক্ত করে ধরলেন। ব্যাথায় চোখ মুখ খিচকে নিলাম।

কি মনে করছোস? তুই আমার হাত থেইকা বাইচ্চা যাবি। জীবনেও না। আগে তোর সব কিছু নিজের নামে করি এরপর মজাডা দেখবি।

বলেই সে চলে গেলেন। আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। কে উনি? আমার সাথে কি সম্পর্ক? আমাকে কেন ধরে এনেছেন। কার সাথে কথা বলেছেন। আমার সব কিছু নিয়ে নেবে মানে? আমার খুব ভয় লাগছে এখন। এই লোক আমার সাথে খারাপ কিছু করবে না তো?
রিশান ভাইয়া! রিশান ভাইয়া কোথায়? ছোট মা, ফুফা তারা কোথায়? আমাকে না পেয়ে তাদের কি অবস্থা হয়েছে? নাকি তারাও আমার মতো বন্দি। কিছুই ভাবতে পারছি না। মাথাটা আর কাজ করছে না। কি যে করবো ভেবে পাচ্ছি না।

কিছুক্ষণ পর সে আবার চলে আসলো। রাগে গজগজ করতে করতে আমার দিকে এগিয়ে এলো তার হাতে একটা প্যাকেট। প্যাকেটটা আমার দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বললো,

তাড়াতাড়ি খেয়ে নে।

এরপর আমার কাছে এসে আমার ডান হাতের বাঁধন খুলে দিলো। আমার পাশে বসে বললো,

যদি পালানোর চেষ্টা করিস না তাহলে জেন্ত পুঁতে ফেলবো। আমার হাত থেকে তোর মুক্তি নেই। অনেক প্লেন অনেক অপেক্ষার পর তোকে বাঘে পেয়েছি। এবার আমার উদ্দেশ্য পূরণ হবেই।

আমি আমার সাথে এই ব্যবহারের কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। সে কেন এমন করছে?

এই তাড়াতাড়ি খেয়ে নে। তুই মরে গেলে কিভাবে আমার উদ্দেশ্য পূরণ হবে?

বলেই লোকটি হাসতে থাকে।

আমি খাবার খেতে অসম্মতি জানালে সে আমার গালে জোরে এক থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। সাথে সাথে চেয়ারসহ মাটিতে পড়ে যাই আমি।

আমি আর এক মুহুর্ত ও দিতে চাই না আপনাদের। একটা মেয়ে গায়েব একুশ ঘন্টা হয়ে গেলো আর আপনি কোন সন্ধান দিতে পারলেন না? কি করছে আপনার টিম?

মি. রিশান আপনি শান্ত হন আমরা চেষ্টা করছি তো। আমরা সব জায়গায় বলে দিয়েছি।

নো এক মিনিটও আপনাদের আমি দিচ্ছি না। অনেক সময় দিয়েছি আপনাদের। আপনারা কিছু করতে পেরেছেন?

শান্ত হন প্লিজ আপনি।

ওসি সাহেব আমি শান্ত হতে পারবো না।

নিশান বাবা শান্ত হ।

মা আমার মেঘপরির জন্য আমি কিছু করতে পারছি না আর তুমি বলছো শান্ত হতে? কি করে শান্ত হবো আমি? আমার মেঘপরি ছাড়া আমি শূন্য। ও কোথায় আছে এখনো তা আমার অজানা। আমি আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি মা। মেঘপরিকে আমিই খুঁজে বের করবো।

বলেই রিশান থানা থেকে বের হয়ে গেল। তার মা পিছন থেকে বহুবার ডাকলেও সে কর্ণপাত করলো না। সে যে তার মেঘপরির জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে মেঘাকে না পেয়ে তার মাথায় বাজ পড়লো। সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজেও মেঘাকে পায় নি সে। আত্মীয় স্বজন সবার বাসায় দেখছে কিন্তু তার মেঘপরি কোথাও নেই! পাগল হয়ে যাচ্ছে সে।

থানা থেকে বেরিয়ে গাড়িতে চড়তেই ফোনের শব্দ আন্দাজ করতে পায় সে।

কি রে কি খবর?

ওপাশে….

আমি এক্ষুনি আসছি।

মেহুলাম্মু কি খবর? আছো নাকি মা-বাবার কাছে চলে গেছো?

কারো ডাক শুনতেই সামনে তাকালাম। সামনে তাকিয়ে দেখলাম কয়েকজন লোক দাঁড়িয়ে আছে সবার শরীর কালো আবরণে আবৃত। সবাই এক দৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এদের মধ্যে থেকে একজন আমার কাছে এসে বললো,

তোর আশিক তো তোকে পাগলা কুত্তার মতো খুঁজছে কি করবো তার?

ওই হারামির খবর আমি নিতাছি তোরা ওরে দেখ। আমি যাই।
বলে একজন চলে গেল।
কিছুই বুঝতে পারলাম না। এরা কি রিশান ভাইয়ার কথা বলছে? রিশান ভাইয়া আমাকে খুঁজছে? শরীরে একটুও জোর নেই। একদম নেতিয়ে গেছি বসে থাকার মতো শক্তিও আমার মধ্যে নেই। এরা আমার প্রতি এতো নির্দয় হচ্ছে কেন? কি শত্রুতা আমার সাথে?
এদের মধ্যে থেকে আরেকজন বলে উঠলো,

এর আশিক আসার আগেই কাজটা সেরে ফেলি কি বলিস?

হুম। ঠিক বলছিস। আর বসও তো তাই বলে গেল।

তো বেবি এদিকে এসো।

এই বলেই একজন এসে আমার জামার হাতা টা উঁচু করলো আরেকজন এসে আমার হাতে ইনজেকশন দিয়ে দিলো। আমি জোরে জোরে চিৎকার করছি কিন্তু এরা আমার আওয়াজ কানে নিচ্ছে না। খানিকক্ষণ বাদে আমি লুটিয়ে পড়লাম। কি যেন কি প্রবেশ করালো আমার শরীরে। মাথা ঘুরিয়ে যাচ্ছে। কেমন যেন লাগছে আমার। তবে কি এখানেই সমাপ্ত আমার জীবন? আমাকে কি মারার প্লেন করছে এরা? চোখজোড়া বন্ধ হয়ে আসছে। চোখ খুলে রাখা আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। একসময় কাতর হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।

চলবে…….

(রিচেক হয় নি! অনুগ্রহ করে ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)