#তোর_নেশায়_মত্ত
#লেখনীতে- আবরার আহমেদ শুভ্র
#পর্ব- ১০(বোনাস পার্ট)
_____________
-মিষ্টিপু প্লীজ চোখ খুলো। দেখো তোমার দুষ্টুপাখি তোমাকে ডাকছে। মিষ্টিপুওওও… বলে জ্ঞান হারিয়ে নিস্তেজ হয়ে গেলো নিতু।
নিতুর এমনিতেই রক্তে ফোভিয়া আছে। রক্ত দেখলেই সে ভয়ে সেন্সলেস হয়ে যায়। তারপরেও আজ নিজের সাথে যুদ্ধ করে প্রাণপণে ডেকে গিয়েছে মিহিকে। কিন্তু কোনো লাভ হলোই না, ডেকে ওর চোখ খুলাতে পারেনি নিতু। শেষে নিজেই সেন্সলেস হয়ে পড়ে।
-মাহমুদ আমার মনে হয় মিহিয়া মারা গেছে। তবুও ওর পার্লস চেক করে আইডেন্টিফাই করতে হবে।
-জ্বী আমি দেখছি।
মাহমুদ আলম মিহিয়ার পার্লস চেক করার পর নিশ্চিত হলো মিহিয়া এখনো বেঁচে আছে তবে ওর নিশ্বাস চলছে খুব ধীরগতিতে। এর মাঝেই এসে উপস্থিত হলো আদ্র, মাহিন, রুশা আর রুশার ফিয়ন্সে রায়ান। তাদের সাথে তাদের গার্ডসরাও আছে। আদ্রের গার্ডসরা মাহমুদ আলমদের সবকটা গার্ডসকে মেরে ভিতরে প্রবেশ করলো। মাহমুদ আলমদের গার্ডস আর অবশিষ্ট নেই যে তাদের রক্ষা করবে।
আদ্র মিহিকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে দৌঁড়ে যেতে নিলে মাহিন আটকে ধরে তাকে। চোখের ভাষায় বুঝিয়ে দিলো তাদের এখন কি করতে হবে। মাহমুদ আলম আর খালেদ চৌধুরী তারা দুজনেই তাদের নিজেদের সার্থের চিন্তায় এতোটাই মগ্ন ছিলো যে তাদের পাশের কারো উপস্হিতি পর্যন্ত টের পায় নি। মাহিন প্রথমে খালেদ চৌধুরীর বন্দুক নিয়ে নিলো সেটা আদ্রের হাতে জমা দিলো আর রায়ান কৌশলে মাহমুদ আলমের বন্দুক হাতে নিয়ে মাহমুদ আলমের মাথায় তাক করলো। আর সাথে সাথেই আদ্রের সবকটা বডিগার্ডস রুমে ঢুকে পড়ল। সবাইকে ইশারা করলো তাদের ধরে ফেলতে। মিহিয়া এতক্ষণ অবচেতন হয়ে পড়ে থাকলেও হঠাৎ ওর হাত নড়তে দেখে আদ্র ছুটে ওর কাছে গেলো। রুমে কাউকে ঢুকতে দেখে চমকে গেলো তারা। চারিদিকে তাকাতেই বিষ্ফোরিত হয়ে গেলো তাদের চোখ। কারণ, কম হলেও ২০ জনের বেশি সাদা পোশাক পরিহিত বলিষ্ঠ মানব তাদের দিকে বন্দুক তাক করে আছে। মাহমুদ আলম রাগী কণ্ঠে বলে উঠলেন,
-হাউ ডেয়ার ইউ? তোমাদের সাহস কি করে হয় এখানে প্রবেশ করার?
-মিস্টার মাহমুদ আলম আপনার সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছা আমার নেই আপাতত। বরং, কোর্টে দেখা হবে! … বলে গার্ডসদের নির্দেশ দিলো ওদের দুজনকে ধরে নিয়ে যেতে। সাথে সাথেই গর্জে উঠল খালেদ চৌধুরী,
-এই ছেলে তোর সাহস তো কম না? চিনিস আমি কে?
-উফস, বাঘ নাকি? ভয় পেয়ে গেলাম। জানেন কিনা জানি না, ছোচো মেরে হাত নোংরা করার মানুষ আমি নয়। সো, গার্ডস টেক দেম।.. বলে গার্ডসদের ইশারা করা মাত্রই সকলে তাদের দুজনকে নিয়ে চলে গেলো।
-জিজুই আপুনিকে তাড়াতাড়ি নিয়ে চলো প্লীজ। ওর থেকে প্রচুর পরিমাণ ব্ল্যাডিং হচ্ছে।
-ন্ ন্ না, মাহিন ভাই আমার। আমার সময় শেষ। প্লীজ আদ্র আমাকে মাফ করে দিবেন। আর… বলতে পারলো না নিস্তেজ হয়ে গেলো মিহিয়া।
-আপুনি… বলে ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠলো মাহিন আর রুশা দুজনেই। আদ্র ধমক দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বলল,
-এই তোমরা গিয়ে গাড়ী রেডি করো। এক্ষুণি মিহিয়াপুকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। কুইক মাহিন!.. বলে মাহিনকে তাড়া দিলো রায়ান।
তারপরে আদ্র মিহিয়াকে পাজকোলে করে নিয়ে বাইরে বের হয়ে এলো। রুশা আর মাহিন গিয়ে নিতুকে ধরে গাড়ীতে গিয়ে বসিয়ে দিয়ে, আদ্রকে বলল মিহিয়াকে নিয়ে আসতে গাড়ীতে। আদ্র মিহিয়ার মাথাটা রুশার কোলে দিয়ে ভালো করে শুইয়ে দিলো। তার আগে নিজের শার্টটা খুলে মিহিয়ার ক্ষতস্থানে শক্ত করে বেঁধে দিলো যাতে কোনো রকম ব্ল্যাডিং বন্ধ হয়। তারপরে সোজা ড্রাইভিং সীটে বসে গাড়ীর সর্বোচ্চ গতিতে চালাতে শুরু করলো। তার মাথায় একটাই চিন্তা, সেটা হলো তার প্রেয়সীকে বাঁচাতেই হবে। সেটা হোক যেকোনো মূল্যেই!
৪৭ মিনিটে তারা মিহিয়া আর নিতুকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে যায়। তারপরে মিহিয়াকে নিয়ে পাজকোলে করে আদ্র ভিতরে ঢুকে পড়ল। ডাক্তারকে আগেই ইনফর্ম করে রেখেছে। তাই আর বেগ পেতে হলো না। সরাসরি মিহিয়াকে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হলো।
আজ তার কারণেই তার প্রেয়সীর এই অবস্থা। মিহিয়ার কিছু হয়ে গেলে আদ্র কিছুতেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না। কিছুতেই না! আজ যদি রুশা সময়মত না আসতো হয়তো মিহিয়া আর নিতু দুজনের কেউকেই খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে যেত। হয়তো কাউকেই পেতো খুঁজে আর। একমাত্র রুশায় তাদের হেল্প করেছিলো মিহি নিতুকে খুঁজে বের করার জন্য। আদ্র বসে বসে সেই কথায় ভাবছে।
____________
ফ্লাসব্যাক—
আদ্র আর মাহিন যখন কোনো মতেই মিহিয়া-নিতুদের নম্বরের সাথে কন্টাক্ট করতে পারছিলো না। ঠিক তখনই মিহিয়ার ফোনে একটা কল আসে। যেটা মিহিয়ার নিজেী মোবাইল ছিল। কারণ, মিহিয়া যেদিন কিডন্যাপ হয়েছিল সেদিনই ভুল করে মোবাইল রেখে চলে যায়। আর সেটা এখন আদ্রের হাতে। আদ্র কলটা রিসিভ করা মাত্রই একটা মেয়ের কান্নাজড়ীত কণ্ঠ ভেসে আসল,
-আপুনিকে বাঁচান প্লীজ। ওওও ও খুব বিপদে আছে। সাথে নিতুপুও আছে। প্লীজ ওদের বাঁচান।.. রুশা বিশ্বাস নিয়ে ফোন দিয়েছিল কারণ তার বিশ্বাস ছিলো মিহিয়া তার ফোন বাড়ীতেই রেখে যাবে।
-ত্ তুমি ক্ কে?
-আমি রুশা। আপুনির ছোট্ট বোন টা। প্লীজ আপুনিকে বাঁচান।
-ওদের খোঁজই পাওয়া যাচ্ছে না।
-আপনি এই নম্বরটি ট্রেস করুন প্লীজ। ওরা এখন যেখানে আছে আমরা ঠিক সেখানেই আছে কিন্তু ওদের আড়ালে। জলদী আপনারা এখানে চলে আসুন। যেকোনো মুহুর্তেই তারা আপুনিকে মেরে ফেলতে পারে। ওরা খুব হিংস্র!
-এক্ষুণি আসছি আমরা। তুমি যাস্ট একটু সময় ওয়েট করো।
-জ্ জ্বী।.. বলে কাঁদতে কাঁদতে সেখানেই বসে পড়ে। মনে মনে বলছে,
-এই কোন পরীক্ষায় ফেললো গো আল্লাহ আমার লক্ষী আপুনিকে? সে আমার আপন বোন হওয়া সত্বেও আমি তাকে চিনতে পারলাম না! আপন বোনকেও কষ্ট দিতে ভুলি নি আমি? আপুনির জায়গায় আজ আমি থাকলে হয়তো ভালোই হতো। আমার আপুনিটা আজ মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে। আল্লাহ্ গো তুমি আপুনিকে সুস্থভাবে ফিরিয়ে দাও।… বলে হেচকি তুলে কান্না করতে লাগল।
-কান্না করো করো না রুশা। দেখবে সবটাই ঠিক হয়ে যাবে। উপরওয়ালার প্রতি ভরসা রাখো।.. বলে রুশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল রায়ান। নিজের কাজে আজ অনুতপ্ত সে। তাই তো নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করছে মিহিয়াকে বাঁচাতে।
-তাই যেন হয়। আপুনি ছাড়া আমার আর কেউ নেই রায়ান। সব্বাইকে মেরে ফেলেছে ওই নরপশুটা। আমার মা-বাবা, ভাই, সবাইকে মেরে ফেলেছে।
-শান্ত হও। দেখবে আপু ঠিকই সুস্থভাবেই ফিরে আসবে।
-হুম।
তারা অন্যদিকে মুখ করে ছিলো বলে আদ্ররা তাদের দেখতে পাই নি। অপরিচিত কারো হাত কাধে পেয়ে মাথা তুলে তাকাতেই আদ্র কে দেখতে পেলো রায়ান। স্বসম্মানে উঠে দাঁড়ালো সে। তার দেখাদেখি রুশাও উঠে দাঁড়ালো। রুশা গিয়ে আদ্রকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলল,
-আদ্র ভাইয়া প্লীজ আপুনিকে বাঁচান। ও্ ও্ ওরা খুব হিংস্র। ওইদিকেই ওর। ওই যে ওদের গার্ডস।.. বলে আঙুল দিয়ে ইশারা করলো রুশা।
আদ্র রুশার ইশারা করা স্থানে তাকে দেখতে পেলো কিছু গার্ডস তবে আদ্রের গার্ডসদের তুলনায় নগণ্য। সে তার গার্ডসের কয়েকজনকে অর্ডার করলো স্নাইপার দিয়ে এদের উড়িয়ে দিতে। মিহিয়াকে বাঁচাতেই যদি ওকে হিংস্র হতে হয় তবে সে হিংস্র হবেই। তারপরে যখন গার্ডসরা তাদের কাজ সম্পন্ন করলো আদ্ররা সেখানে গিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতেই গুলির আওয়াজ শোনতে পেলো। মুহুর্তেই আদ্র বুকের বাঁপাশ টা একরকম ধুক করে উঠল। হয়তো আগাম কোনো কুলক্ষণী বার্তা তার মনকে বারবার নিংড়ে দিচ্ছে। তবুও নিজেকে শক্ত করে সে দিকে এগিয়ে গেলো তারা ও তাদের গার্ডসরা। গিয়েই দেখতে পেলো মিহিয়া পরে আছে আড নিতু কান্না করছে মিহিকে ধরে। মুহুর্তেই কালো মেঘে ছেয়ে গেলো আদ্রের মন। তার মন তাহলে সঠিক তথ্যই তার মস্তিষ্কে প্রকাশ করেছিল। দেখতে দেখতে নিতুও নিস্তেজ হয়ে গেলো। তারপরেরটা উপরে দেখলেন।
______________
ডাক্তারের ডাকে ধ্যান ভাঙলো আদ্রের। সকলে উৎসুক তাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। এতোক্ষণে বাড়ীর সকলেই উপস্হিত। সাথে নিতুর বাবা মা ভাইও। মানে মিহিয়ার আপন মামা-মামীরা। তারা অপরাধীর ন্যায় শাহেলা ইয়াসমিনের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। ডাক্তার আদ্রের কাছে এসেই মুখ কালো করে ফেললেন। আদ্র ডাক্তারের কাছে এসে জিজ্ঞেস করছে,
-ডাক্তার আমার শ্যামাপাখি কেমন আছে? ওর এখন অবস্থা কেমন? টেল মি ডক্টর! টেল মি।
-মিস্টার আদ্র, প্লীজ কাম ডাউন! আমি জানি, আমরা এখন যেটা বলবো সেটা হয়তো আপনারা আশা করবেন না। বিকজ, She is no……
#চলবে_কি….?
[গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক বাস্তবের সাথে কেউ মেলাবেন না। ভুলত্রুটি মার্জনীয়। হ্যাপি রিডিং 😍]