তোর নেশায় মত্ত পর্ব-০৯

0
906

#তোর_নেশায়_মত্ত
#লেখনীতে- আবরার আহমেদ শুভ্র
||পর্ব- ০৯||
_____________

‘সালসাবিল মঞ্জিল’ পিনপিন নিরবতায় ছেয়ে গেছে গতসপ্তাহ ধরে। সপ্তাহখানেক ধরে নিতু ও মিহিয়া কারো কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। পুরো শহর তন্নতন্ন করে খোঁজার পরও তাদের কোনো হদিস মিলছে না। আদ্র ভেবেই নিয়েছে যে এটার মুল ষড়যন্ত্রকারী হলো নিতুই! নিশ্চয় নিতুই মিহিয়াকে কিডন্যাপ করেছে! নাহলে কারোও সাধ্য নেই এই কাজ করার। রাগে ক্ষোভে আদ্রের যায়যায় অবস্থা। সেদিন নিজের বাবার অফিসে যাওয়ার জন্যই খুব তাড়াতাড়িই বেড়িয়ে পড়েছিল আদ্র। কারণ, তার বাবার পরিবর্তে তাকেই নিজেদের ব্যবসা সামললাতে হবে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আদ্রকে নতুন এমডি হিসেবে অফিস সামলানোর দায়িত্ব নিতে হয়েছিল। আর সেদিনই অফিসে উপস্হিত হওয়ার প্রস্তুতি নিতেই তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে পড়েছিলো আদ্র। যার ফলশ্রুতি, সে মিহিয়াকে সাথে করে ভার্সিটি পৌঁছে দিতে পারেনি। কারণ, মিহিয়ার ভার্সিটি আরও অনেক পরে। ফলে মিহিকে একা ভার্সিটি যেতে হয়েছিল। আর সেদিনই ঘটে তার জীবনের সবচেয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি। মিহিয়ার মিসিং! আর সেদিনই তার বিশেষ ইনফরমার মুহিত তাকে এটাও জানিয়েছিল যে মিহিয়ার মিসিং এর সময়ে নিতুও গায়েব। ব্যাপার হজম করতে বেশ কষ্ট হয়েছিল আদ্র। তার ভাবনাই তাহলে ঠিক। নিতুই যে কিনা নিজের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটির সাথে খারাপ ব্যবহার করতে ভাবলো না?

পুরো একসপ্তাহ ধরে শহরের প্রতিটা অলিগলিতে চিরুনি অভিযান চালিয়েও আদ্রের গার্ডসরা মিহিয়ার কোনো খোঁজই পেলো না। ছোফায় এককোণে বসে মাথা নিচু করে আছে আদ্র। তার পাশেই বসে আছে ১৬ বছর বয়সী মিহির ভাই মাহিন। এই বয়সে যথেষ্ট চালাক আর স্ট্রং পারসন সে! নিজের পড়ালেখার পাশাপাশি প্যারিসে নিজস্ব ব্যবসা সামলাই একহাতেই। হা মিহিয়ার মিসিং শোনেই হতদন্ত হয়ে কাল বিলম্ব না করে আপন ফ্যামিলিকে নিয়েই বিডি চলে আসে। ছোট হলেও তার বুদ্ধিমত্তা ঠিক বড়দেরও হার মানাবে। মিহিয়ার মা শাহেলা ইয়াসমিন, বাবা মাহবুব আলম চুপচাপ গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে আছেন। তাদের আদরের মেয়ে শেষে কিনা কিডন্যাপিং এর শিকার হলো? শাহানা ইয়াসমিন বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন, আপন মেয়ের মতোনই মিহিকে ভালোবাসতেন তিনি! আর সেই কিনা এখন মিসিং! আদ্রের কাঁধে হাতচাপা দিলো মাহিন। আদ্র চোখ তুলে তাকালো তার দিকে,

-জিজুই আমার মনে হয় কোনো পশ্চাৎ শত্রুই আপুনিকে কিডন্যাপড করেছে। আই হোপ, আমাদেরই একজন কাছের মানুষ হতে পারে সে!

মাহিনের কথাটা নিয়ে এখন বেশচিন্তায় পড়ে গেলো আদ্র। মাহিনের কথার ভিত্তিতে চিন্তা করে বলতে লাগল,

-কে হতে পারে সে? মিহিকে কিডন্যাপ করে তার কিই বা লাভ হবে? আর নিতু! সেই বা কি ক্ষতি করলো এই কিডন্যােপারের? আর তুমি বলছো আমাদের কাছের মানুষ। আই থিংক, আমাদের কাছের মানুষের মধ্যে কিন্তু নিতুও পরে।

-না জিজুই, নিতু আপু এই কাজ করবে বলে মনে হয় না।

-তাহলে কে হতে পারে?

তাদের কথার মাঝেই আদ্রের ফোনটা বেজে উঠল। সকলের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু এখন আদ্র। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে নিতুর কান্নাজড়ীত আওয়াজ ভেসে আসলো,

-আদ্র ভাইয়া! আমাকে আর মিষ্টিপুকে বাঁচান। ওরা আমাদের মেরে ফেলবে।

নিতুর মুখ থেকে ভাইয়া ডাক শোনে বেশ অবাক হলো আদ্র। যে মেয়ে তাকে বেবি, জান আরও কতো নামে ডাকতো আজ সেই মেয়ে কিনা ভাইয়া বলে ডাকছে! ওয়াট এন এমাজিং থিং! যায়হোক, আদ্র ব্যস্ততা নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

-কোথায় তোমরা?

-আ্ আমরা জ্ জানি ন্ না! আপনি পারলে এই নম্বর ট্রেস করে চলে আসুন প্লীজ। ও্ ও্ ওরা আ্ আপুনিকে খুব মেরেছে!

নিতুর কথা শোনে মুহুর্তেই আদ্রের মাথায় আগুন ধরে গেলো। কপালের সবুজ রগগুলো স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়ে উঠেছে। দাঁতেদাঁত চেপে নিতুকে বলল,

-প্রত্যেকটার অবস্থা খারাপ করে দেবো আমি। আমার শ্যামাপাখির গায়ে হাত উঠানোর প্রতিদান ওদের দিতেই হবে। আর এটা কার মোবাইল?

-আমাদের একটা রুমে বন্দী করে রেখেছিল এই একসপ্তাহ ধরে। তাদের বস আসলেই আমাদের মারবে। দড়জার আড়ালে সবটাই শোনেছি আমি। আর কিছুক্ষণ আগে এই রুমে এসেছে একজন। তাকে আপুনি পিছন থেকে একটা গাছে টুকরো দিয়ে আঘাত করার সাথে সাথেই পড়ে অজ্ঞান হয়ে যায় আর……

বলতে পারলো না তার আগেই মোবাইলের চার্জ শেষ। অফ হয়ে গেলো মোবাইল।

-ওহ শীট! মোবাই বন্ধ হয়ে গেলো।

-কেমন আছে আপুনি?

-ওদের অবস্থা ভালো নেই। তুমি এককাজ করো।

-কি কাজ জিজুই?

-এই নম্বরের সকল লিস্ট চেক করে তার একটা নম্বরকে ট্রেস করতে হবে আমাদের। তাহলেই আমরা মিহুদের খোঁজ সহজেই পেয়ে যাবো।

-ওয়েট অনলি ফাইভ মিনিটস। আমি এক্ষুণি করছি। সবটাই আমি পারবো।…. বলেই নিজের ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়ল মাহিন। এসব কাজে একদম ফাস্ট বললে চলে তাকে!
_________________

-মিষ্টিপু! এখন কেমন হবে?

-জ্ জানি না রে বোন। তবে দেখবি আদ্র ঠিকই খোঁজে নেবেন আমাদের।

-তাই যেন হয়। আমি খুব খুশি যে মরার আগে হলেও আমার মিষ্টিপুকে আমার কাছে পেয়েছি।

-চ্ চুপ একদম। মৃত্যুর কথা একদমই নয়। দেখবি…

-কিছু দেখতে হবে না মিহিয়া।

পেছনে ফিরে কথাটি বলা মানুষটার দিকে নজর দিতেই চমকে গেলো নিতু মিহিয়া দুজনেই। কারন, তাদের সামনেই মিহিয়ার আপন ফুফা খালেদ চৌধুরী দাঁড়িয়ে আছে।

-ফুফা! আপনি?

-হুসসস, কিসের ফুফা? কে ফুফা?

-ফুফা!

-জীবনের শেষ মুহুর্তে এসেই কি বলবি বলে ফেল। কয়েকঘন্টা পর তোরা শেষ। তোদের দুজনকে মেরেই তোদের সকল সম্পত্তির মালিক হবো আমি। কারণ, হায়দার আর মাহবুব তোদের নামেই সকল সম্পত্তির।দলীল করে দিয়েছে।

খালেদ চৌধুরীর কথায় আবারও অবাক হলো তারা। সে কেমনে জানলো এসব? নিতু কান্নাজড়ীত কণ্ঠে বলল,

-ফুফা, প্লীজ আপনি আমাকে যা করার করুণ। আপুনিকে ছেড়ে দিন। ওর কোনো ক্ষতি করবেন না প্লীজ।

-সেটা কি তোর কাছ থেকে শোনতে হবে আমায়?… নিতুর চুলগুলো মুঠি করে ধরে এই কথাগুলো বললেন খালেদ চৌধুরী।

পাশ থেকে বেড়িয়ে এলেব মাহবুব আলম। তাকে দেখে নিতু-মিহিয়া চমকে গেলেও মিহি বুঝতে পারলো সে তার বাবা নয়, কালপ্রিট আসলটাই! সে মিহিয়ার কাছে এসপ বলতে লাগল,

-দেখলে মিহু নিজের মেয়েকে মারতেও আমার হাতপা কাঁপে না।

মিহি একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,

-মাহমুদ আংকেল! আপনি কি ভেবেছেন? সকলেই অবলা? আপনাকে কেউ চিনুক আর না চিনুক আমি ঠিকই চিনতে পেরেছি। কারণ, প্রতিটা গল্পের একজন মুল খলনায়ক থাকে। আর আমার গল্পের মুল খলনায়কটাই যে আপনি!

মাহমুদ আলম বুঝতে পারলো মিহিয়ার সাবটাইপ জানা হয়েছে। কোনো কিছুই তার অজানা নয়। তবে কি রুশার টাও জানে?

-আপনিই যে আমার বাবার যময ভাই সেটা আমিই জানি। দুশ্চরিত্রের কারণে আপনাকে দাদুই বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছিলো। বুঝলেন!

-বেশি জেনে ফেললে মিহিয়া! জানো তো অতিরিক্ত কোনো জিনিশ ভালো না! ঠিক অতিরিক্ত কোনো কিছু জানাও ভালো না। আমার কাছে অতিরিক্ত কোনো কিছু জানার ফল হলো মৃত্যু! মৃত্যুর জন্য তৈরী হয়ে যাও।

-বেশ! দেখা যাক কে মরে আর কে বাঁচে। বিশ্বাসঘাতকার ফল আপনিও পাবেন মিস্টার খালেদ চৌধুরী।… খালেদ চৌধুরীর দিকে আঙুল তুলে বলল মিহিয়া।

-হা হা হা, এই খালেদ চৌধুরীকে মারবে এমন জীব এখন পৃথিবীতে আগমন হয়নি মিহু মা?… ব্যাঙ্গত্ত্বমুলক হাসি দিলো খালেদ চৌধুরী।

তাদের কথার মাঝেই নিতু বলে উঠল,

-কি ভেবেছেন মিস্টার? আপনারা যাই বলবল তাই হবে? মাহমুদ আংকেল কিডন্যাপিং এর আগের রাতে করিডোরে যখন বস সম্মোধন করে আপনার সাথে কথা বলছিলেন তখনই আমি সবটা শোনে ফেলি। আর ওনি যে মিষ্টিপুর বাবা নন সেটাও জানতে পেরেছিলাম সেদিনই। আর সেদিনই নিজ ইচ্ছাই ধরা দিয়েছিলাম আমি। কেন জানেন? কারণ, আমার মিষ্টিপুকে যে দেখতে পারি। কিন্তু সেখানে মিহিপু দেখে বুঝতে পারলাম রোকেয়া আন্টি কেন আমার কাছ থেকে সবটা লুকিয়ে ছিলো। আর আপনি যে রোকেয়া আন্টিকে ঠকাচ্ছেন সেটাও জানি আমি।

-অনেক বেশিই জেনে নিলে দুজনে। বাই বাই পৃথিবী।… বলেই মাহমুদ আলম গুলি চালিয়ে দিলেন প্রথমে মিহিয়ার উপরে। যেটা সোজা এপার ওপার করে দিলো মিহিয়ার দেহ। সেটা দেখে নিতু চিৎকার দিয়ে উঠল,

-মিষ্টিপুওওওওওওওও… বলে কান্নায় ভেঙে পড়লো নিতু।

#চলবে…..

[গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক বাস্তবের সাথে কেউ মেলাবেন না। ভুলত্রুটি মার্জনীয়। হ্যাপি রিডিং 😍]