তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম পর্ব-১৮

0
633

#তোর_প্রেমেতে_অন্ধ_হলাম
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ১৮

কলেজে যাওয়ার মন নেই একদম সিয়ার। সবকিছু খুব বেশি বিরক্তিকর লাগছে, খুব বেশি। গতকাল রাতে জিদের বশে এসে ঘুমের দুইটা ট্যাবলেট খেয়ে শুয়ে পরেছিলো। কলেজে যাওয়ার ইচ্ছে আগে থেকেই ছিলো না এর জন্য ঘুম থেকেও ওঠে নি। বেলা বেশ গড়িয়ে ১০ঃ৩০ এর দিকে ঘুম ভেঙেছে তার। ফ্রেশ হয়ে এসে স্নিগ্ধ মুখে করিডরে খোলা বাতাসে বসে ছিলো। রোদের ঝলক এসে করিডরে পরেছে। সামনেই চা রাখা, থেকে থেকে তাতে চুমুক দিচ্ছে।

দোলা;; সিয়া, সিয়া

সিয়া;; আমি করিডরে।

দোলা;; আজ ক্লাস নেই তোর!

সিয়া;; তেমন একটা নেই আর ইচ্ছেও করছে না যেতে।

দোলা;; ওহ আচ্ছা থাক তাহলে।

সিয়া;; মা, ব্যাস্ত তুমি?

দোলা;; না।

সিয়া;; একটু আমার পাশে এসে বসবে!

দোলা;; এমা, কি হয়েছে তোর। খারাপ লাগছে?

সিয়া;; তেমন না একটু বসো।

দোলা;; আচ্ছা।

দোলা গিয়ে সিয়ার পাশে বসে পরে৷ দোলা খেয়াল করলো সিয়ার মুখ টা কেমন মলিন হয়ে আছে। এক দৃষ্টিতে আকাশ পানে তাকিয়ে আছে।

দোলা;; সিয়া, ঠিক আছিস তুই?

সিয়া;; মা, আমার বিয়ে ঠিক?

দোলা;; না মানে দেখ কেউ দেখতে আসলেই তো বিয়ে একদম ঠিক হয়ে গেলো না।

সিয়া;; আমি জানি মা। সায়নের সাথে বিয়ে তাই না!

দোলা;; এখনো ঠিক হয় নি। আচ্ছা যদি সায়নের সাথে তোর বিয়ে ঠিক করি তাহলে?

সিয়া;; যা ভালো মনে করো।

দোলা;; তুই কি রেগে আছিস আমার ওপর?

সিয়া;; না, একদম না। রাগ করার কোন মানেই হয় না। আমি বুঝি সব। তবে হয়তো কোথাও না কোথাও আমাকে “বেইমান” নামক উপাধি টা পেতে হবে এই আর কি।

দোলা তার মাথা অন্য পাশে ঘুড়িয়ে ফেলে। তখনই সিয়ার ফোনে ফোন আসে, সিয়া তাকিয়ে দেখে অর্নীল।

দোলা;; আমি যাই কিছু কাজ আছে। ভালো না লাগলে নিচে নেমে আসিস।

দোলা চলে যায়। সিয়া হাতে ফোন টা তুলে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে। ফোন পিক করবে কি করবে না ভাবছে। সিয়া ফোন টা পাশেই রেখে দেয়। ধরবে না। ধরলেই এত্তো গুলো প্রশ্ন একসাথে ছুড়ে মারবে অর্নীল। আর সেগুলো একটারও জবাব দেওয়ার সাহস-শক্তি বা ইচ্ছে কোনটাই নেই তার। তাই না ধরাটাই শ্রেয়। ফোন কানের কাছে বাজতে বাজতে এক সময় বিরক্তি ধরে গেলো সিয়ার। তাই সে ফোন কেটে দিয়ে বন্ধ করে রেখে দেয়।


অর্নীল তার অফিসে বসে বসে এতোক্ষন সিয়াকে ফোন দিচ্ছিলো আর অর্নীল সিওর ছিলো যে ফোন হয়তো ধরবে না সিয়া আর তাই হলো। ফোন কেটে দিয়ে অর্নীল তার সামানে থাকা সিয়ার ছবির একটা ছোট্ট ফ্রেমের দিকে তাকায়। অর্নীলের চোখ গুলো লাল হয়ে গেছে। সিয়ার ছবিটা হাতে নিয়ে বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে হালকা ছুইয়ে দেয় তাতে। অর্নীল এখন হুট হাট করেই সিয়ার বাসায়ও চলে যেতে পারে না কেননা এখন ব্যাপার টা বেশ সিরিয়াস আর ব্যাপার টার সাথে বড়ো রাও জড়িয়ে আছে তো এখন এমন পাগলামি করলে কেমন দেখায় সব। তাই অর্নীল শান্ত রাখছে নিজেকে। আসলে অর্নীল নিজেও দেখছে যে সিয়া ঠিক কি কি করতে পারে।

আর ওদিকে আদিবাকে জাবেদ তার বাবার বাসায় নামিয়ে দিয়ে গেছে। আদিবা কে এই সময়ে বাসায় আসতে দেখে বিল্লাল বেশ অবাক হয়।

আদিবা;; বাবা।

বিল্লাল;; কিরে মা তুই এই সময়ে? আর জাবেদ কেনো এলো না? ঠিক আছে তো সব?

আদিবা;; না বাবা কিচ্ছু ঠিক নেই। সত্যি কিচ্ছু ঠিই নেই।

বিল্লাল;; কি বলিস?

আদিবা;; ভেতরে চলো।

বিল্লাল;; আরে কিন্তু….

আদিবা;; আহা, তুমি আগে ভেতরে চলো তো।

আদিবা বিল্লাল কে নিয়ে ভেতরে চলে গেলো। আদিবা নিজে আগে মাথা ঠান্ডা করে তারপর বিল্লাল কে বসিয়ে সবকিছু আস্তে ধীরে বলতে লাগে।

আদিবা;; বাবা দেখো, এখন আমি যাই বলবো সব মনোযোগ দিয়ে শুনবে আর প্লিজ হাইপার হবে না। কারণ অনেক বছর আগের কথা তো এখন কোন কিছু করেও লাভ নেই।

বিল্লাল;; আচ্ছা হয়েছে কি?

আদিবা;; তুমি আগে ওই সাগর চৌধুরীর সাথে সব ধরণের কাজ করা বন্ধ করে দাও।

বিল্লাল;; কিন্তু কেনো?

আদিবা;; কারণ তোমার বড়ো ভাই কে আর কেউ না ওই সাগর চৌধুরীই খুন করেছে।

বিল্লাল;; কি সব যা তা বলছিস আদিবা?

আদিবা;; এটা কোন যা তা বলছি না বাবা। বিশ্বাস না হলে তুমি জেঠিমার সাথে কথা বলে দেখতে পারো। এতোদিন, এত্তোগুলো বছর অব্দি সিয়ার মা সবকিছুই লুকিয়ে রেখেছিলো। আর আমার রিসেপশনের দিন জেঠিমা যখন হুট করেই চলে যায় তার একমাত্র কারণ ছিলো সাগর চৌধুরী। অবশ্যই নিজের সামনে নিজের স্বামীর খুনি কে দেখলে কেউই ঠিক থাকতে পারবে না। জেঠিমা ও পারে নি।

বিল্লাল হুট করেই বুকের বা পাশে তার কাপাকাপা হাত দিয়ে চেপে ধরে। চোখ থেকে চশমা টা খুলে বাম হাতে রেখেছিলো তা হাত থেকে নিচে পরে যায়। শ্বাস আটকে গিয়ে কথা বলাও বন্ধ হয়ে যায়। আদিবা এক দৌড়ে গিয়ে তার বাবাকে ধরে ফেলে। বাড়ির সবাই কে চিল্লিয়ে ডাক দিলে সবাই ছুটে আসে৷ তারপর অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে গেলে বিল্লাল কে ইমারজেন্সি হস্পিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। সায়নেরই হস্পিটালে নিয়ে যায়। সায়ন হয়তো তখন বাসায় ছিলো। আদিবা তখন সায়ন কে ফোন করে দ্রুত তার হস্পিটালে আসতে বলে৷ আর খবর শুনে সায়ন দ্রুত এসে পরে। আদিবা তো কেদে কেটে একাকার। তারপরেই দোলা কে ফোন করে। দোলা শিউলি কে বাসায় রেখে সিয়া কে নিয়ে দ্রুত বাড়ি থেকে বের হয়ে পরে। বেশ সময় পর দোলা & সিয়া গিয়ে দেখে আদিবা হস্পিটালের ভেতরে তার বাবার হাত ধরে বসে আছে। কাদছে। দোলা আর সিয়ার ভেতরে যেতেই সায়নের চোখে পরে।

দোলা;; সায়ন, বিল্লাল কেমন আছে?

সায়ন;; আন্টি আসলে অতিরিক্ত প্রেসার পরেছে। অর্থাৎ উনি হয়তো হুট করেই বেশ শকিং একটা কিছু শুনেছেন তাই ধকল টা সামলাতে না পেরে বুকে চাপ দিয়ে উঠেছে। তবে ভাগ্য ভালো যে ভাবি জলদি আমাকে ফোন করেছে। দেরি হয়ে গেলে স্ট্রোক করার চান্স ছিলো অনেক বেশি। তবে এখন সব নরমাল আছে।

দোলা;; যাক বাঁচলাম।

দোলা এই বলেই ভেতরে চলে গেলো। আদিবা বাইরে এসে পরে। সিয়া কে দেখে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। তবে সিয়ার আদিবা কে বেশি একটা সুবিধের মনে হলো না। আদিবা সায়ন আর সিয়ার দিকে এক নজর তাকিয়ে সেখান থেকে চলে আসে৷ আর দোলা ভেতরে গিয়ে বিল্লালের পাশে বসে পরে।

দোলা;; বিল্লাল ঠিক আছো? হঠাৎ কি হয়েছিলো তোমার?

বিল্লাল;; ভাবি তুমি আমার কাছ থেকে এত্তো বড়ো কথা টা কি করে লুকাতে পারলে? আমার কি এই ব্যাপার টা শোনার মতোও কোন অধিকার ছিলো না।

দোলা;; কি বলছো এইসব। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

বিল্লাল;; ভাইকে সাগর মেরেছে।

দোলা কিছুটা হকচকিয়ে যায় বিল্লালের এমন কথায়। দোলা এখন এটাই ভাবছে যে বিল্লাল এই কথা কীভাবে জানতে পারলো।

বিল্লাল;; কি ভাবছো ভাবি আমি কি করে জানতে পারলাম। পেরেছি কোন এক না এক ভাবে। আর কতো, আর কতো লুকাবে। সত্য একদিন না একদিন তো সামনে আসারই ছিলো।

দোলা;; বিল্লাল!

বিল্লাল;; আমি জানি এত্তো পুরনো কেস কেউ ফাইল করবে না আর যেখানে সাগর চৌধুরীর মতো একজন সেখানে তো কথাই নেই। আমি আজকেই ওই লোকের সাথে সব কাজ বন্ধ করে দিবো।

দোলা;; এখন এইসব মাথা থেকে বাদ দিয়ে রেস্ট নাও। বেশি চিন্তা করো না এতে শরীর খারাপ তোমারই হবে। বাদ দাও। আমি চাই না আগের ইতিহাস পুনরায় ঘটুক।

এই বলেই দোলা বের হয়ে এসে পরে। আর ওদিকে সিয়া আদিবার কাছে যায়। গিয়ে দেখে আদিবা ফোনে কথা বলছে। সিয়াকে দেখে আদিবা ফোন রেখে দেয়।

সিয়া;; তুই চাচ্চু কে সব বলে দিয়েছিস তাই না?

আদিবা;; হ্যাঁ।

সিয়া;; যাক, একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে।

আদিবা;; অর্নীল ভাইয়ের সাথে তোর কথা হয়েছে?

সিয়া;; বেশ কয়েকদিন যাবত সবকিছুই বন্ধ।

আদিবা;; হুমম। বাসায় নানু হয়তো একা তুই জেঠিমা কে নিয়ে চলে যা। সায়ন আর আমি বাবাকে বাড়ি পৌঁছে দিবো।

সিয়া;; হুমম।

সিয়া আর দোলা প্রায় ঘন্টা খানিকের মতো হস্পিটালে থেকে তারপর এসে পরে। আদিবা সেইদিন আর তার শশুড় বাড়িতে যায় না। সেইদিন তার বাবার সাথে বাড়িতেই থেকে যায়।


এভাবেই সময় যাচ্ছে, দিন যাচ্ছে। একটা সময় সায়নের সাথেই সিয়ার বিয়ের কথা পাকাপুক্ত হয়ে যায়। সবাই বেশ খুশি। কেউ কেউ প্রকৃতি পক্ষেই খুশি আবার কেউ কেউ শুধু অভিনয় মাত্র। সায়নের পরিবার সত্যিই খুব ভালো। সায়ন নিজেও অনেক বেশি খুশি। তবে আদিবা বেশ নারাজ। সে সিয়াকে বুঝিয়েও কিচ্ছুই করতে পারছে না। আর সিয়া যে এইসব কিছু ইচ্ছে করে করছে তা কিন্তু মোটেও না। এক প্রকার বাধ্য হয়েই তাকে এই বিয়েতে মত দিতে হয়েছে।

সায়ন আর সিয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে। আজ থেকে শুরু করে ঠিক তিন দিন পর সিয়ার বিয়ে। সিয়া তার কলেজেও কাউকেই জানায় নি বিয়ের ব্যাপারে। একদিন সিয়া বাইরে গিয়েছিলো কিছু কাজে। সেখানে সে অর্নীল কে দেখে। আর দেখা মাত্রই তড়িঘড়ি করে সেই স্থান ত্যাগ করে। বাসায় এসে পরে সে। প্রায় ৭-৮ দিন পর অর্নীল কে দেখেছে সিয়া। রুমে ছুটে গিয়ে দরজা আটকে দিয়ে মুখ দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে ঢুকরে কেদে ওঠে।


অর্নীল তার বাসায় গেলে সাগর চৌধুরী আজ সোজা অর্নীলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরে। অর্নীল এড়িয়ে চলে যেতে ধরে কিন্তু সাগর চৌধুরী আটকিয়ে দেয়।

সাগর;; অর্নীল আজ তুমি আমার কথা না শুনে যেতে পারবেই না। খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।

অর্নীল;; জলদি বলো।

সাগর;; তোমাকে দেশের বাইরে যেতে হবে।

অর্নীল;; মানে?

সাগর;; মানে কিছু কাজের জন্য দেশের বাইরে যেতে হবে তোমাকে। আর এছাড়াও তুমি অনেক দিন যাবত যেতে চাইছিলে আমিই যেতে দিচ্ছিলাম না। তার ওপর তোমার কাজের চাপ ছিলো বেশি। কিন্তু এখন তো সব নরমাল। তাই বলছি যে এখন তুমি চলে যাও।

অর্নীল;; হুম ভেবে বলবো।

সাগর;; ভেবে বলার আর কি আছে। চলে যাও।

অর্নীল আর কিছু না বলেই ঘরে চলে যায়। মাঝখানে একদিন চলে যায়। বিয়ের বাকি রইলো আর মাত্র দুইদিন। আর এদিকে যেনো সাগর চৌধুরী অর্নীল কে বাইরে পাঠানোর জন্য একেবারে উঠে পরে লেগেছে। অর্নীলের সন্দেহ হয়। কিন্তু এছাড়াও অর্নীলেরও অনেক দিন যাবত বাইরে যাওয়ার প্ল্যান ছিলো। পাসপোর্ট-ভিসা সবই রেডি, অর্নীলও ভেবে নিলো যে সে যাবে।


এখন রাত, অর্নীল বেডে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। ফোন ঘাটছিলো, ঘাটছিলো বলতে ফোনে সিয়ার ছবি দেখছিলো। কিছু সময় পর উঠে গিয়ে ছাদে চলে যায়। ভারি ভারি কদম ফেলে ছাদে যাচ্ছে। নীরবতার মাঝে শব্দ গুলো যেনো সুস্পষ্ট। ছাদে গিয়ে রেলিং ধরে দাঁড়ায়। শূন্য চোখে তাকিয়ে আছে। সামনে হাজার হাজার সুউচ্চ বিল্ডিং৷ রাতের আধারে নানাবিধ আলো ফুটে ওঠেছে সেগুলোতে। হঠাৎ অর্নীল সিগারেট জ্বালিয়ে নেয়। অন্ধকারে সাদা ধুয়া গুলো শূন্যে মিলিয়ে যাচ্ছে। কয়েক পাফ নিতেই সিগারেটের আগুন টা নিভিয়ে দিলো। কেন যেনো মনও সায় দিচ্ছে না খেতে। সিয়া যে তার সাথে এভাবে সব কিছু হুট করেই বন্ধ করে দিবে তা অর্নীল ভাবেই নি। শুধু নিজের বাবার খুনি কে তা জানতে পেরে কথা বন্ধ করে দিয়েছে নাকি এর পেছনে আরো অন্য কোন কারণ রয়েছে এটাই ভাবছে অর্নীল। না সিয়া তাকে সব ক্লিয়ারলি জানাচ্ছে আর না নিজে জানতে পারছে। কেননা সিয়া সব স্কোপ অফ করে দিয়েছে। অর্নীল ডিসাইড করে নিলো সে আর তার বাবার সাথে আর থাকবে না। কারণ এখানে থাকলে সে ধীরে ধীরে পাগল হয়ে যাবে। দূরে চলে যাবে এখান থেকে। কাল ১২ঃ৩০ টায় অর্নীলের সিঙ্গাপুর যাওয়ার ফ্লাইট আছে। অর্নীল ভেবে নিয়েছে কিছুদিন বাইরে থেকে আসবে তারপর বাকি সব হ্যান্ডেল করবে। ঘন্টা খানিকের মতো ছাদের ওপরে থেকে নিচে নেমে আসে। সারারাত জেগে ভোরের দিকে অর্নীলের চোখ লেগে আসে। অফিসে যাবে না। প্রায় সকাল এগারোটার দিকে ফোনের কর্কশ আওয়াজে অর্নীলের ঘুম ভেঙে যায়। চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে ফোন ধরে। নাম্বার না দেখেই রিসিভ করেছে। গভীর কন্ঠে বলে….

অর্নীল;; হ্যালো।

জাবেদ;; হে অর্নীল কেমন আছো?

অর্নীল;; ওহ জাবেদ, হ্যাঁ ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?

জাবের;; আরে আমি কি এই সময়ে ভালো না থেকে থাকতে পারি বলো।

অর্নীল;; এতো খুশি ব্যাপার কি, বাবা-টাবা হবে নাকি?

জাবেদ;; আরে না। সায়ন মানে আমার ভাই আর কি ওর বিয়ে ঠিক।

অর্নীল;; ওহহ আচ্ছা যাক ভালোই হলো।

জাবেদ;; শুনো অর্নীল আগামীকাল বিয়ে বুঝলে৷ আর তোমাকে আসতে হবে মানে আসতেই হবে।

অর্নীল;; আব… জাবেদ আ”ম সো সরি বাট আমি সিঙ্গাপুর যাচ্ছি। আজ সাড়ে বারো টায় আমার ফ্লাইট।

জাবেদ;; কি বলো! আরে ক্যান্সেল করে দাও। কিছুদন পর যাও।

অর্নীল;; সরি ইয়ার, পারবো না। আমাকে যেতেই হবে। আর সমস্যা নেই সবাই তো আছেঅ, ইনজয় ম্যান৷

জাবেদ;; তার মানে আসনে না।

অর্নীল;; না আসতে পারলেও ফোন তো আছে। ভিডিও কল দিও দেখবো।

জাবেদ;; ধুর সেটা হয়।

অর্নীল;; আচ্ছা আমার কথা ছাড়ো তুমি বলো কেমন আছো আদিবা, তোমার বাবা-মা সবাই কেমন আছে?

জাবেদ;; হ্যাঁ সবাই অনেক ভালো।

অর্নীল;; আর সিয়া কেমন আছে?

জাবেদ;; আরে ও আবার ভালো থাকবে না। ওর ই তো দিন।

অর্নীল;; মানে?

জাবেদ;; আরে মানে সায়নের সাথে তো সিয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে। ওদের বিয়ে হচ্ছে।

জাবেদের কথায় অর্নীল যেনো আকাশ থেকে পরলো। তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে নেমে পরে। পুরো ব্ল্যাংক হয়ে গেছে সব কিছু। মাথা হ্যাং মেরে গেছে। অর্নীল কয়েক সেকেন্ড চোখ বন্ধ করে রেখে আবার খুলে। বিছানার সাইডে বসে হাত দিয়ে কপাল চেপে ধরে। চোখ-মুখ কেমন মূহুর্তেই লাল বর্ণ ধারণ করে ফেলেছে।

জাবেদ;; অর্নীল, অর্নীল! হ্যালো অর্নীল।

অর্নীল;; হ্য হ্যাঁ শুনছি বলো।

জাবেদ;; কি হয়েছে?

অর্নীল;; কিছু না। বিয়ে কবে?

জাবেদ;; বিয়ে আগামীকাল।

অর্নীল;; জাবেদ, সরি টু সে বাট এই বিয়ে হবে না, হতে পারে না।

জাবেদ;; মানে বুঝলাম না।

অর্নীল;; বুঝে যাবে।

এই বলেই অর্নীল ফোন কেটে দেয়। কিন্ত জাবেদের মাথায় কিছুই ঢুকে না। কোন রকমে ফ্রেশ হয়ে গায়ের ওপর জেকেট টা জড়াতে জড়াতে নিচে নেমে আসে। হলরুমে সাগর সার্ভেন্ট দের দিয়ে টেবিলে খাবার সাজাচ্ছিলো তখনই দেখে অর্নীল পারছে না শুধু দৌড় দিতে এতো দ্রুত হাটছে।

সাগর;; অর্নীল কোথায় যাচ্ছো? খেয়ে নাও কিছু।

অর্নীল;; ক্ষুদা আমার মরে গিয়েছে। And the flight is cancel, I”m not going to Singapore..

সাগর;; কিন্তু কেনো?

অর্নীল;; বিয়ে যে থামাতে হবে।

সাগর;; বিয়ে!

অর্নীল;; Don’t act like an innocent baba… তুমি সব জানো রাইট, আর সব জেনে বুঝেই আমাকে বাইরে পাঠাতে চাইছিলে। যেনো এদিকে সিয়ার বিয়ে হয়ে যায় আর আমি টেরও না পাই। সন্দেহ আগে থেকেই ছিলো আমার তোমার ওপরে। কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলি নি। এখন আমিও দেখবো যে সিয়ার বিয়ে অন্য জায়গায় কীভাবে হয়। গেট রেডি সিয়াকে নিজের ছেলের বউ হিসেবে দেখার জন্য।

এই বলেই অর্নীল বের হয়ে পরে। আসলে ঠিকই। নিজের কোন এক গার্ড কে দিয়ে সাগর চৌধুরী খোঁজ নেওয়ায়। আর পরে শুনতে পারে যে সিয়ার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে ডক্টর সায়নের সাথে। আর অর্নীল যেনো ঝামেলা না করে তার জন্যই তাকে বাইরে পাঠাতে চেয়েছিলো। কিন্তু সব প্ল্যান জলে গেলো। অর্নীল সবকিছ জেনে গেছে। আর জাবেদ অর্নীল কে সব বলে দিয়েছে কেননা জাবেদ জানে না যে অর্নীল আর সিয়া একে ওপর কে অনেক ভালোবাসে। তা না হলে হয়তো জাবেদ সায়নের সাথে সিয়ার বিয়ের আলাপ উঠতেই দিতো না। জাবেদ অর্নীল কে বলেও দিয়েছে সব না জেনেই।
আর ওদিকে বিয়ের সব কেনাকাটা শেষ, সব আয়োজন করা শেষ। তবে সবাই ঠিক করেছে যে বিয়ে টা হবে ঘরোয়া ভাবেই। এটা দোলা চায় আর সাথে বাকিরাও। আর আদিবা তো সিয়ার থেকে ফুলে রয়েছে। সিয়া যেনো এক জলজ্যান্ত কাঠের পুতুল হয়ে গেছে। কিছু বলে না, হাসে না। শুধু ফ্যাকাশে মুখ করে তাকিয়ে থাকে। এই ব্যাপার টা আদিবা, দোলা সবাই খেয়াল করেছে কিন্তু করার যে এখন কিছুই নেই। সিয়া শুধু সবার আড়ালে নিজের চোখের পানি ফেলে। সে তো ভেবেই বসেছে যে তার বিয়ে ঠিক। কাল সকালে সূর্য ওঠার সাথে সাথে বিয়ের সানাই বেজে যাবে আর হয়তো তার কিছুক্ষন বাদেই হয়ে যাবে সিয়া অন্য কারো। আচ্ছা অর্নীল কি এইসব কিছু জানে? দিয়া মাঝে মাঝে এটাই ভাবে। এভাবে দেখতে দেখতেই বেলা গড়িয়ে আবার রাতের আধার নেমে আসে।





চলবে~~