তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম পর্ব-২৪

0
615

#তোর_প্রেমেতে_অন্ধ_হলাম
#লেখিকা;; Tamanna Islam
#পর্বঃ ২৪ {বোনাস 🌺}

সিয়া চোখ গুলো বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে ছিলো। কোন প্রকার কোন হেলদুল নেই। তা দেখে দোলা সিয়াকে হাত দিয়ে কিছুটা ধাক্কা দেয়।

দোলা;; সিয়া, সিয়া। আরে ওই সিয়া

সিয়া;; হুমমম

দোলা;; শুনেছিস কিছু?

সিয়া;; হুম

দোলা;; শোন ছেলে অনেক ভালো বুঝলি। তোকে দেখেছে আর দেখা মাত্রই পছন্দ করে ফেলেছে। অর্থাৎ তোর জন্য পাগল। আমাকে বলেছে সবকিছুই। আর ছেলে অনেক ভালো চাকরি করে, ছেলে হিসেবে একেবারে পারফেক্ট। আর পরিবার বলতে এইতো আমরাই।

সিয়া;; আমরা মানে?

দোলা;; আমরা মানে এইতো আমরা। মানে বিয়ে হলে তো এক পরিবারই হয়ে গেলাম তাই না বল। আর শোন এত্তো ভালো ছেলেকে আমি আসলে হাত ছাড়া করতে চাই নি তাই বিয়ে ঠিক করে ফেলেছি।

সিয়া;; কিন্তু আমাকে এ……..

দোলা;; আরে তোকে আর কি জিজ্ঞেস করবো বল, আমি তো জানি যে তুই আমার সোনার টুকরো মেয়ে। কখনোই আমার কথার অবাধ্য হবি না তাই ভাবলাম যে যত দ্রুত সম্ভব সব ঠিক ঠাক করে ফেলি। তাই বিয়ের কথা একেবারে পাকাপুক্ত করেই আসলাম।

সিয়া;; মা আমার কিছু টাইম লাগতো।

শিউলি;; আরে না কিসের টাইম, এখন কোন সময় নেওয়া যাবে না। এখন শুধু বিয়ে হবে। তোর যা করার তুই এই ২-১ দিনের মাঝেই সব করে নে।

সিয়া;; ২-১ দিন মানে?

শিউলি;; বিয়ে তো আগামী পরশু রে।

সিয়া;; কিহহহহহ?

সিয়া এখন আর বসে থাকতে না পেরে এক ঝটকায় উঠে দাঁড়িয়েই পরলো। তার নিজের বিয়ে পরশুদিন আর সে নিজেই জানে না, বাহহ।

সিয়া;; মা এটা কোন কথা না, কি করছো আর কি বলছো তোমরা ভেবেছো একবার? আমাকে, আমাকে জিজ্ঞেস অব্দি করলে না।

দোলা;; কেনো? তুই রাজি না? কি সমস্যা?

সিয়া;; আমাকে একটু একা থাকতে দাও তো এখন প্লিজ। মাথা ফেটে পরছে আমার প্লিজ একা থাকতে দাও কিছুক্ষণ আমাকে।

দোলা;; আচ্ছা তা না হয় দিলাম। তবে এই ডালা গুলো এখানেই থাক। সব তোর জন্য জিনিস আছে। এক এক করে খুলে দেখ।

এই বলেই শিউলি আর দোলা চলে গেলো। সিয়া হাতের নখ খাচ্ছিলো আর ডালা গুলোর দিকে তাকিয়ে ছিলো তখনই দোলা যাবার আগে পেছন ফিরে আবার সিয়ার উদ্দেশ্যে বলে ওঠে…..

দোলা;; সিয়া শোন! বিয়ে কিন্তু পরশু আর এখন রাত। তো ওই হিসেবে বিয়ের আর একদিন আছে বলা যায়।

এই বলেই দোলা চলে যায়। আর সিয়া নিজের চুল নিজেই খামছে ধরে দেয় এক চিল্লানি। মন চাইছে সত্যি সত্যি নিজের চুল গুলো টেনে ছিড়ে ফেলুক। এত্তো প্যারা আর ভালো লাগে না। আর দোলা যেনো সিয়াকে কথা টা একটু খোঁচা মেরেই বলেছে। যেনো সিয়া আরো প্যারা নেয়। আর এক মূহুর্ত দেরি না করে সিয়া ফোন টা হাতে নিয়ে অর্নীল কে ফোন করে। ফোন বাজতে বাজতে কেটে যাচ্ছে তবে ধরছে না। সিয়ার এখন রাগে কান্না আসছে। সবাই তার সাথে এমন শুরু করেছে কেনো? একটা সময় কল রিসিভ হয়।

অর্নীল;; হুম সিয়াজান!

সিয়া;; মরছে।

অর্নীল;; কি?

সিয়া;; সিয়া মরছে।

অর্নীল;; ফাইজলামি করো?

সিয়া;; অর্নীল….

এই বলেই সিয়া সত্যি সত্যি কেদে দেয়।

অর্নীল;; আরে, সিয়া কাদছো কেনো? হয়েছে কি? আর ইউ ওকে?

সিয়া;; আ”ম নট ওকে৷

অর্নীল;; কি হয়েছে? কেউ কি কিছু বলেছে?

সিয়া;; আ আম আমার ব বিয়ে ঠিক।

অর্নীল;; ওহ আচ্ছা এই ব্যাপার।

সিয়া;; হ্য! এই ব্যাপার মানে? আরে আমার বিয়ে, বিয়ে ঠিক। বিয়ে বুঝেন আপনি বিয়ে। আর আপনি বলছেন এই ব্যাপার।

অর্নীল;; হ্যাঁ তো! তাতে কি এমন হয়েছে?

সিয়া;; আরে আশ্চর্য আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে আর আপনি ব্যাপার টাকে এতো হালকার ওপর নিচ্ছেন? অর্নীল। আমি অন্য কারো বউ হয়ে যাবো। অন্য জনের ঘর-সংসার করবো। পারবেন আপনি আমাকে অন্য কারো বউ হিসেবে দেখতে?

অর্নীল;; আরে বাবা রে আস্তে, এত্তো হাইপার হচ্ছো কেনো। টেক ইট ইজি।

সিয়া;; অর্নীল এইবার শুধু বিয়ের কথা না একেবারে বিয়ে ঠিক করে রেখে এসেছে আম্মু। মানে বিয়ের সব ঠিক। পরশুদিন আমার বিয়ে।

অর্নীল;; হুমম।

সিয়া;; হুমম? ব্যাস এই হুমম?

অর্নীল;; এই খাবা?

সিয়া;; কি?

অর্নীল;; চিপ”স খাবা। অনেক মজার।

সিয়া;; অর্নীইইইইইইইইইইইইইইইইইইল 📢

অর্নীল;; আমার কান শেষ।

সিয়া;; কাল আমি কলেজে যাবো না। আপনি দেখা করবেন কাল আমার সাথে। একদম সকাল সকাল। কাল আপনাকেও অফিসে যেতে হবে না। কাল আমরা দেখা করছি ওকে!

অর্নীল;; ওকে বায়।

সিয়া;; আরে………

অর্নীল ফোন কেটে দেয়। সিয়া ফোন টা রেখে বিছানার ওপর বসে পরে। দুহাতে মুখ চেপে ধরে রেখেছে। চুল গুলো এলো মেলো হয়ে গেছে। চোখ দিয়ে নিঃশব্দে টুপ টুপ করে পানি গড়িয়ে পরছে। সিয়া তার পাশে তাকিয়ে দেখে অর্নীল যে তাকে একবার একটা বড়োসড়ো টেডি বিয়ার গিফট করেছিলো তা ড্যাবড্যাব করে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। সিয়া টেডি টাকে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেদে দেয়। আসলেই এটা কষ্টদায়ক যে ভালোবাসা হয় একজন কে আর বিয়ে করা হয় আরেকজন কে। রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পরে সে। দরজা টা অব্দি লাগায় নি। ওই টেডি বিয়ারের ওপরেই কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে গেছে। রাত ২ঃ৩০ এর দিকে দোলা সিয়ার রুমে উঁকি দিয়ে দেখে এলোমেলো হয়ে ঘুমাচ্ছে৷ রুমের ভেতরে গিয়ে সিয়ার ওপর চাদর টা আলতো করে টেনে দিয়ে বের হয়ে পরে।



পরেরদিন সকালে জালানা দিয়ে সূর্যের তীব্র রোদ চোখে পরলে মুখ মূহুর্তেই কুচকে ফেলে সিয়া। ঘুড়ে আবার শুতে যাবে তখনই বিছানার এক সাইডে থাকা ডালা গুলোর ওপর নজর যায়৷ আর “পরশু সিয়ার বিয়ে” এই কথা টা মাথায় এসে বারি খায়। ঘুমের গুষ্টি উদ্ধার হয়ে গেছে। এক ঝটকায় উঠে বসে পরে৷ হুড়মুড় করে ফোন টা হাতে নিয়ে দেখে ৯ টা বাজে। সিয়া উঠে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে নেয়। অর্নীলের সাথে দেখা করতে হবে। ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে দেখে ছোট টেবিলের ওপর একটা প্লেট রাখা তার ওপর নাস্তা। খাওয়ার ইচ্ছেই ছিলো না কিন্তু রাতেও খায়নি বিধায় খুদা টা একটু বেশি৷ তাই রেডি হতে হতে যতটুকু সম্ভব খেয়ে নেয়। তারপর দ্রুত পায়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে পরে।

শিউলি;; কিরে কোথায় যাচ্ছিস?

সিয়া;; একটু কাজে যাচ্ছি বাইরে। ঘন্টা এক পরে চলে আসবো।

দোলা;; এই জলদি আসিস তো।

সিয়া;; কেনো?

দোলা;; কেনো মানে? বাইরে যেতে হবে তো।

সিয়া;; আবার বাইরে কি করতে যাবো?

দোলা;; আরে বিয়ের শাড়ি-লেহেঙ্গা এই সবকিছু কিনতে যেতে হবেনা!!

সিয়া;; উফফ মা। আমি পারবো না যেতে।

দোলা;; পারবি না মানে। তুই যাবি তোর ঘাড়ও যাবো।

সিয়া;; আচ্ছা যাবো। এখন আগে আমাকে বাইরে যেতে দাও।

দোলা;; যা।

সিয়া বাইরে এসে পরে৷ আজ স্কুটি নিয়ে বের হয়েছে। রিকশার জন্য অপেক্ষা করার মতো ধৈর্য এখন বর্তমানে তার নেই। আর অর্নীল & সিয়া সবসময় যে কফি শপে দেখা করতো সিয়া সেখানেই চলে যায়। অর্নীলেরও সেখানেই আসার কথা। সিয়া গিয়ে দেখে অর্নীল বসে বসে কফি খাচ্ছে আর হাতে একটা ম্যাগাজিনের বুক। সিয়া নিজের মাথা থেকে হ্যালমেট টা খুলতে খুলতে ভেতরে চলে যায়। সিয়া যেই বেগে এসেছে তাতেই অর্নীল বুঝে যে এটা সিয়া বাদে আর কেউই না। সে এসে অর্নীলের সামনে বসে পরে। অর্নীল সিয়ার দিকে তাকিয়ে নিজের দু ভ্রু খানিক নাচায়।

সিয়া;; হাফ গ্লাস পানি অর্ডার করুন তো।

অর্নীল;; হুয়াট? শুধু পানি খাবে?

সিয়া;; না, ওই হাফ গ্লাস পানিতে ডুবে মরে যাবো। এগুলা জ্বালা আর ভালা লাগে না।

অর্নীল;; আচ্ছা এখানে এতো স্ট্রেস নেওয়ার মতো তো কিছুই দেখি না আমি। এতো প্যারা নিচ্ছো কেনো।

সিয়া;; মরে যাই আমি।

অর্নীল;; সিয়া, বেশি হচ্ছে এইবার (গম্ভীর মুখে)

সিয়া;; অর্নীল আমি আপনাকে ভালোবাসি, আর আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে। বিয়ে আজ বাদে আগামিকাল। আপনি কি করে এতোটা চুপ করে বসে আছেন বলুন তো। বিয়ে টা কোন ভাবে ভেঙে দিন আগের মতো। আমি তো আপনাকে ছাড়া আর কাউকে ভাবতেও পারি না। আমি আপনার জায়গা অন্য কাউকে দিতেই পারবো না। আপনি কি বুঝতে পারছেন আমি কি বলছি?

অর্নীল;; সিয়া শোন আমার কথা, কারো বাবা-মা তাদের সন্তানের জন্য খারাপ চায় না। সবাই চায় যে তাদের বাচ্চাকাচ্চা রা বেস্ট জিনিস টাই পাক। আর রইলো আন্টির কথা তো হ্যাঁ আন্টি একদম ঠিক করেছেন। আন্টি যে তোমার & আমার ব্যাপার টা জানে না তা কিন্তু না। শি নো”স এভরিথিং এবাউট আস। হয়তো তিনি বুঝতে পেরেছেন যে আমার সাথে তোমার এক হওয়া হবে না তাই অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক করেছেন। আর হ্যাঁ সে অবশ্যই তোমার জন্য ভালো হবে।

সিয়া;; এখন আমি কি করবো?

অর্নীল;; এখন তোমার কাজ হচ্ছে চুপচাপ ভালো+ভদ্র মেয়ের মতো বিয়ে টা করে নেওয়া।

সিয়ার মাথায় আকাশ ভেঙে পরে। অর্নীল যে এগুলো তাকে বলছে তার যেনো বিশ্বাসই হচ্ছে না।

সিয়া;; অর্নীল ঠিক আছেন আপনি? আপনি এখন কি বলছেন কোন হুস আছে আপনার?

অর্নীল;; হ্যাঁ ড্রিং তো করি নি আমি তো একদম ঠিকই আছি।

সিয়া;; এইসবের মানে কি? তাহলে কি আমি…..

অর্নীল;; তোমার মা যার সাথে বিয়ে ঠিক করেছেন তাকেই বিয়ে করে নাও।

সিয়া;; অর্নীল….

অর্নীল;; শোন বাসায় যাও। কাল বিয়ে সব গিয়ে দেখো, ইনজয় করো। তা না করে কি এখানে এসে এমন কান্নাকাটি করছো।

সিয়া;; আমার ইমোশন”স গুলো এখন আপনার কাছে কান্নাকাটি মনে হচ্ছে তাই না?

অর্নীল;; ওমা কান্না করলে কাদছো তা বলবো না! আচ্ছা যাই হোক ছাড়ো এসব। যাও তুমি বাসায় যাও। বিয়ের আগে পরপুরুষের সাথে এভাবে দেখা বা কথা বলতে হয় না, বাড়ি যাও।

অর্নীল সিয়াকে এগুলো বলছিলো আর সিয়া এক ধ্যানে অর্নীলের দিকে তাকিয়ে ছিলো। চোখ দুটো সিয়ার ফুলে গেছে কান্না করতে করতে। অর্নীলের কথা বলার মাঝেই একটা ওয়েটার এসে ঠান্ডা পানি আর কফি দিয়ে চলে যায়। অর্নীল তখনও কথা বলতেই আছে।

অর্নীল;; বুঝলে, আমরা যা চাই তাই যে সবসময় পেতে হবে এমন তো কোন কথা না তাই না।

সিয়া;; আর যদি সেটা পাওয়ার সুযোগ থেকেও তাকে দূরে সরিয়ে দেই তো?

অর্নীল;; তাহলেও ভালো। বাদ দাও না। আরে মেয়ে বিয়ে কাল যাও সেদিক টা সামলাও। ধুম-ধাম করে বিয়ে হবে। আর ভুলে যেও যে আমি ছিলাম তোমার লাইফে। এখানেই শেষ, ব্রেকাপ বলা যায়। যাও সাবধানে বাসায় যাও হবু বউ।

সিয়ার এখন রাগ আউট অফ কোন্ট্রল চলে গেলো। ঝটকা দিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। দাঁত গুলো রাগে কটমট করছে। রাগ আর সামলাতে না পেরে টেবিলের ওপর যে গ্লাস ভর্তি পানি ছিলো তা হাতে নিয়ে ঠাস করে সোজা অর্নীলের মুখের ওপর ছুড়ে মারে সিয়া। অর্নীল তার চোখ বন্ধ করে ফেলে। চুল গুলোও ভিজে গেছে, তারপর হাত দিয়ে সামনে আসা চুল গুলো পেছনে ঠেলে দেয়। হাত মুঠিবদ্ধ করে মুখের সামনে এনে সিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

সিয়া;; Go to hell…!

এই বলেই সিয়া কফি শপ থেকে এসে পরে। হ্যালমেট টা পরে দ্রুত স্কুটি স্টার্ট দিয়ে বাসায় চলে যায়। বাসায় এসেই দেখে বাড়ির পুরো হুলিয়া চেঞ্জ। সিয়া হা হয়ে বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। বাড়ি টা সাজানো। সাদা আর হলুদ কালারের কাপড় দিয়ে বাইরের দিক টা সাজানো হয়েছে। বাড়ির পেছনে সাদা আর নেভি ব্লু কালারের মরিচ বাতি লাগানো হচ্ছে। বেশ অনেক মানুষ এখনই এসেছে। সিয়া ভেতরে গিয়ে দেখে সিড়িটাও অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে। হ্যান্ডেলের দিকে থোকা থোকা ফুল৷ সিয়া এই সবকিছু ঘুড়েঘুড়ে দেখছিলো তখনই পেছন থেকে কেউ একজন তাকে খুব টাইটলি জড়িয়ে ধরে।

আদিবা;; সিরুউউউউউউউউ….

সিয়া;; আরে ছাড়, দম গেলো আমার। ছাড় আমারে কুত্তি।

সিয়া আদিবার দিকে তাকায়

আদিবা;; কিরে তোর চোখ এমন ফুলেছে কেনো?

সিয়া;; আরে আর বলিস না। স্কুটি দিয়ে গিয়েছিলাম তো আর তুই তো জানিসই যে রাস্তায় কি ধুলোবালি। দুই চোখ ভরে ধুলো চলে গিয়েছে। ইচ্ছা মতো দুইহাতে ডলেছি তাই ফুলে গিয়েছে আর পানি বের হয়েছে।

আদিবা;; ওহ আচ্ছা।

সিয়া;; তুই কখন এসেছিস? আর ভাইয়াও কি এসেছে নাকি?

আদিবা;; না আপাতত শুধু আমিই এসেছি তারা সবাই বিয়ের দিন আসবে।

সিয়া;; ওহ বিয়ের জন্য এসেছিস তুই?

আদিবা;; অবশ্যই, তোর বিয়ে তো আমি আসবো না।

সিয়া;; হুমমম।

আদিবা;; যা রেডি হ, বাইরে বের হবো।

সিয়া;; আমার ভালো লাগছে না আমি না হয় না যাই। তোরা সবাই গিয়ে কেনাকাটা কর।

আদিবা;; বিয়ে তোর আর তুই যাবি না এ কেমন কথা?

সিয়া;; কিন্তু আ…….

শিউলি;; সিয়া এসেছিস, দ্রুত যা রেডি হ।

সিয়া;; ধুত্তুরি ছাই।

এই বলেই সিয়া রুমে চলে গেলো। একটা ব্রাউন কালারের গোল জামা পরে বের হয়ে পরে। তারা হয়তো দুপুরের দিকে গিয়েছিলো শপিং এ আর আসায় ফিরেছে সন্ধ্যে বেলা। ভাবা যায়! বাসায় এসে এক গাদা সব জিনিস রাখে। বাড়িতে যারা কাজ করছিলো তারা সব বাড়ির ভেতরে আনে। সিয়া দেখে সবাই কত্তো খুশি, কত্তো হ্যাপি তারা৷ কিন্তু এর একবিন্দু পরিমাণ হ্যাপিনেসও সিয়ার মাঝে নেই। কাজ করছে না কোন ফিলিং”স। তবে সিয়া অর্নীল কে দেখে বেশ অবাক। এতো চেনা মানুষ টা কি করে এতো অচেনা হয়ে গেলো জাস্ট ভাবতে পারছে না সে। অর্নীলের এক ফোটা চিন্তাও নেই। তাই তো কীভাবে আজ সকালে গরগর করে সব নির্দিধায় বলে দিলো। কিন্তু সিয়া যেনো এটা আর নিতে পারছে না। অর্নীল হয়তো তাকে কখনো ভালোই বাসে নি। তাই তো এতো সহজেই বিয়ে করতে বলে দিলো। মানুষ আলাদা হয়ে যায়, বিচ্ছেদ হয়ে যায় ঠিকআছে তবে তা হয়তো ফ্যামিলি না মেনে নেওয়ার জন্য বা ছেলের কাছে একটা ভালো চাকরি না থাকার জন্য। কিন্তু এখানে কি? এখানে তো সবই ঠিক ঠাক। তাহলে কেনো অর্নীল সিয়াকে অন্যজনের হয়ে যেতে বললো। সিয়া হলরুমে সবার সাথে বসে আছে আর তার মাথায় এগুলোই চিন্তা ভর করছে। নানান ভাবনায় মাথা পুরো হ্যাং মেরেছে। তবে সিয়া খেয়াল করলো যে তার মা, নানু, বোন সবাই সবাই অনেক খুশি৷ যাক অর্নীল যদি সিয়াকে ছেড়ে থাকতে পারে তবে সিয়া পারবে না কেনো। সবার মুখের দিকে তাকিয়ে তাকে এই বিয়ে করতে হলে তাই করবে। হ্যাঁ একটু কষ্ট হবে অর্নীলের জায়গায় অন্য কাউকে মেনে নিতে তবে মানয়ে নিবে। সিয়া এগুলোই ভাবছিলো তখন বিল্লাল আসে।

বিল্লাল;; সিয়া মা!!

সিয়া;; চাচ্চু।

সিয়া দ্রুত গিয়ে বিল্লাল কে জড়িয়ে ধরে।

বিল্লাল;; কিরে বিয়ের পাত্রি কেমন আছিস?

সিয়া;; চাচ্চু তুমিও না। আরে বাদ দাও তো এইসব। আর তুমি এখন এলে কেনো আগে কেনো এলে না। আরো আগে আসার কথা ছিলো তোমার।

বিল্লাল;; আরে মা রে অনেক কাজ ছিলো সেদিকে সেগুলোই করে এলাম।

সিয়া;; ভালো করেছো, এসো।

সবাই মিলে কথা বলতে লাগে। সিয়া এবার সবাই কে বলে একটু নিজের রুমে যায়। মুখে বলে এক কথা আর মন বলে আরেক কথা। মুখে হাজার টা বললেও মন তো আর মানে না। তাই সিয়া ফোন টা হাতে তুলে লাস্ট বারের মতো অর্নীল কে ফোন করেই বসে। সিয়া অর্নীল কে ফোনের ওপর ফোন করেই যাচ্ছে তবে ধরছে না। বিছানার ওপর মন মরা হয়ে বসে পরে। টুং শব্দে ফোন টা আবার হাতে নেয় দেখে অর্নীলের কাছ থেকেই ভয়েস মেসেজ এসেছে। সিয়া তা অন করে….

“” হেই নতুন বউ, বিয়ের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আমি চাই যে বিয়ে করে সবসময় তুমি খুশি থাকো। আর আমি জানি তুমি থাকবে। আর হ্যাঁ আরেকটা কথা সূর্য ডোবা মানেই কিন্তু চিরতরে অন্ধকার হয়ে যাওয়া নয়। মনে রেখো সূর্য ডুবে আরেকটা নতুন দিনকে আগমন করার জন্য, ঝলমলে একটা দিন উপহার দেবার জন্য ❤️””

ব্যাস অর্নীলের ভয়েস নোটে শুধু এইটুকুই বলা ছিলো। সিয়া কিছু বুঝে আবার কিছু মাথার ওপর দিয়েও যায়। তবে এটা বুঝে যে অর্নীল তাকে বিয়ে টা করে নিতে বলছে। বাইরে অনেক মানুষ, সবার অনেক শোরগোল শোনা যাচ্ছে। সিয়া এক কাজ করে, সে গিয়ে রুমের দরজা লাগিয়ে দেয়, ভেতরে এসে ফুল স্পীডে ফ্যান ছেড়ে দেয়। তারপর ধপ করে নিচে ফ্লোরে বসে বাচ্চাদের মতো হাউমাউ করে কেদে দেয়। ঢুকরে ঢুকরে কাদছে। ফোন টা অন করে তাতে অর্নীল আর তার ছবি এটা দেখে সিয়ার কান্নার বেগ যেনো আরো দ্বীগুণ হারে বেড়ে গেলো। প্রায় ১৫-২০ মিনিটের মতো এভাবে থেকে সিয়া ওয়াসরুমে চলে যায়। চোখে মুখে ইচ্ছে মতো পানি দিয়ে বেরিয়ে আসে৷ তারপরই দরজাতে কারো টোকা পরলে সিয়া গিয়ে খুলে দেয়। দেখে আদিবা দাঁড়িয়ে আছে।

সিয়া;; আরে ভেতরে যায়।

আদিবা;; সিয়া রে, দেখ না।

সিয়া;; কি? (নিজের চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে)

আদিবা;; আরে তোর হবু জামাই কে। মানে এই দেখ আমি আমার সাথে করে ছবি নিয়ে এসেছি উনার, হেব্বি হ্যান্ডসাম রে। একটা বার চোখ বুলিয়ে দেখ৷

সিয়া;; না, ইচ্ছে নেয়। যেমন ইচ্ছে তেমন দেখতে হোক। আমার কিছুই যায়-আসে না তাতে।

আদিবা;; এভাবে বলছিস কেনো! আরে তোর বিয়ে নিজের হবু কে একটা বার দেখবি না। না দেখলে চলে নাকি, দেখ তো আগে।

সিয়া;; বোন দেখ খুব খারাপ লাগছে। ভালো লাগছে না কোন কিছুতেই। বললাম তো যেমন খুশি তেমন দেখতে হোক। দেখার ইচ্ছে নেই আমার। সুন্দর হলেই কি আর বান্দর হলেই বা কি। আমি দেখবো না, মন চাইছে না।

আদিবা;; আচ্ছা ঠিকআছে আর জোর করবো না। খাস নি তো কিছুই। আমি খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি।

সিয়া;; হুমম।

আদিবা নিচে চলে যায়। আর সিয়া নিজের দুই হাত ভাজ করে করিডরের দরজাতে হেলান দিয়ে মাথা কিছুটা ঠেকিয়ে দাঁড়ায়। সবকিছুই কেমন যেনো ফিকে লাগছে তার কাছে।





চলবে~~