তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম পর্ব-১৯

0
628

#তোর_প্রেমেতে_অন্ধ_হলাম
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ১৯ & {বোনাস}

সিয়া তার মা-নানু সবাই হলরুমেই বসে ছিলো। সিয়া মুড ভালো করার জন্য বসে বসে টিভি দেখছে। দোলা & শিউলি কাজ করছে। তখনই বাড়িতে আদিবা আসে।

আদিবা;; জেঠি মা!

দোলা;; আয় আয়, এতো দেরি করলি যে তোকে না আরো আগে আসতে বলেছিলাম।!

আদিবা;; সরি জেঠমা আসলে বাসায় সবকিছু গুছিয়ে আসতে আসতে দেরি হয়ে গেছে।

দোলা;; আচ্ছা আয় ভেতরে আয়।

আদিবা ভেতরে এসে সিয়ার পাশে বসে পরে। সিয়ার হাতে একটা পপকর্নের ঠোঙা ছিলো তা আদিবার দিকে এগিয়ে দেয়।

আদিবা;; সিরিয়াসলি সিয়া! তোর এক ফোটাও কি চিন্তা নেই?

সিয়া;; কিসের চিন্তা?

আদিবা;; কিসের চিন্তা মানে। তাহলে কি তুই অর্নীল কে ভালোবাসিস না। এভাবে এতো ইজিলি সব হয়ে যেতে দিবি তুই?

সিয়া;; তো এখন তুই আমাকে কি করতে বলিস,, চোখে গ্লিসারিন দিয়ে কাদবো। বিরহ-শোক পালন করবো। মরে যাবো??

আদিবা;; কিছু না।

সিয়া;; এমন যদি হতো যে কাল সকালে মানে কাল আমার বিয়ের আগেই যদি আমি মরে যেতাম।

আদিবা;; চুপ কর এইসব আজাইরা কথা বন্ধ কর তো।

সিয়া;; তো আর কি করবো। ভালো লাগে না এতো প্যারা।

আদিবা;; বাদ দে খেয়েছিস কিছু?

সিয়া;; না খাবো না, ভালো লাগে না খেতে।

আদিবা উঠে চলে যায়। দোলার সাথে কাজ করতে লাগে। আর সিয়া তার মুখ কে একেবারে বাংলার পাঁচ বানিয়ে রেখে দেয়। দেখতে দেখতে বেশ রাত হয়ে যায়। আর আদিবা আজ সিয়ার সাথেই থেকে যাবে।


ওদিকে রাত বেজে চলেছে প্রায় বারো টার কাছাকাছি। সায়ন তার হস্পিটাল থেকে গাড়ি করে ফিরছিলো। হস্পিটাল থেকে বেশ দূরে মাঝামাঝি রাস্তা তে আসতেই সামনে কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দ্রুত ব্রেক কষে দাঁড়ায়। সায়নের প্রথমে মেজাজ ভারি খারাপ হয়। এভাবে রাত-বিরাতে রাস্তার মাঝে এমন করে দাঁড়িয়ে থাকার কোন মানেই হয় না। সায়ন তার গাড়ি থেকে নেমে পরে। গাড়ি থেকে বের হয়ে দেখে সামনে একটা বাইক রাখা আর তার ওপর হেলান দিয়ে কেউ একজন দাঁড়িয়ে ফোন ঘাটছে। মাথায় হ্যালমেট পরা। যার ফলে মুখ দেখা যাচ্ছে না।

সায়ন;; Hay, who r u? এভাবে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? নিজেও যান আর অন্যকেও যেতে দিন।

_______________________

সায়ন;; কথা কি কানে যায় না নাকি! সামনে থেকে সরুন।

অর্নীল;; আর যদি না সরি তো।

হ্যাঁ ব্যাক্তিটি অর্নীল ছাড়া আর কেউ না। সায়নের কাছে গলার স্বর টা বেশ চেনা-জানা লাগলো। সে কপাল কুচকে তাকায়। আর অর্নীল এবার তার মাথা থেকে হ্যালমেট টা খুলে ফেলে। এলোমেলো চুল গুলো হাত দিয়ে কিছুটা ঝেরে নেয়। হ্যালমেট টা বাইকের ওপরে রেখে অর্নীল একটা সিগারেট জ্বালিয়ে সায়নের কাছে আসে।

সায়ন;; আবরার চৌধুরী অর্নীল?

অর্নীল;; ধরে নিন তাই।

সায়ন;; তো এখানে এভাবে আমার গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকার মানে কি?

অর্নীল;; অন্যের জিনিসে নজর দিয়েছেন তাই।

সায়ন;; মানে?

অর্নীল;; সিয়া।

সায়ন;; সিয়া!

অর্নীল;; ভালোবাসি আমি মেয়েটাকে। অনেক বেশি।

সায়ন;; সিরিয়াসলি? (অবাক হয়ে)

অর্নীল;; আমি বললাম তাই এনাফ, প্রুভ করার দরকার নেই আমার।

সায়ন;; কিন্তু সিয়া কখনোই আমাকে এইসব কিছুর ব্যাপারে বলে নি।

অর্নীল;; কেনো বলে নি! কারণ বিয়ে টা পারিবারিক ভাবে ঠিক হয়েছে।

সায়ন;; অর্থাৎ আপনারা একে ওপর কে ভালোবাসেন?

অর্নীল;; একদম ঠিক।

সায়ন;; তাহলে সিয়া হ্যাঁ কেনো বললো বিয়েতে?

অর্নীল;; সিয়া হ্যাঁ বলেছে কিন্তু আপনি না বলবেন।

সায়ন;; ___________________

অর্নীল;; কাল বিয়ে টা হচ্ছে না আপনাদের ওকে। আর বিয়ে ভাঙবেন আপনি নিজে।

সায়ন;; হুমম।

অর্নীল;; যদি বিয়ে ভেঙে দিন তাহলে সবারই ভালো হবে আর যদি না ভাঙেন মনে রাখবেন বিয়ে বাড়িতে সবাইকে কাফনের কাপড় পড়ে শুয়ে থাকতে হবে।

সায়ন;; আই থিং সেই অবস্থা হবে না। আমি তেমন ছেলে না যে থার্ড পারসন হয়ে কারো লাইফে যাবো। ট্রাস্ট মি আমি যদি আগে জানতাম বা সিয়া যদি আগে আমাকে শুধু ইশারাতেও বলে দিতো আপনাদের সম্পর্কের কথা তাহলে আমি ভূলে যেতাম যে সিয়া বলে আদৌও কোন মেয়ে কে আমি চিনি কিনা। নিশ্চিন্তে থাকুন, এই বিয়ে কখনোই হবে না। কাল আমার বরযাত্রি সিয়াকে বউ হিসেবে আনতে যাবে না।

অর্নীল;; বুদ্ধিমান আপনি।

এই বলেই সিগারেট টা ছুড়ে ফেলে দিয়ে অর্নীল বাইকে বসে হ্যালমেট টা পরে চলে আসে। সায়ন সেই রাস্তা তেই কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকে, তারপর গাড়িতে উঠে এসে পরে।

সায়ন বাড়িতে গিয়ে দেখে দেখে সবাই বিয়েতে কি করবে কি করবে না তা নিয়ে মাতামাতি করছে। এটা দেখে সায়নের কিছুটা খারাপই লাগলো। কেননা সবার এই আয়োজন বৃথা। সায়ন নিজের ঘরে চলে যেতো কিন্তু খেয়াল করে দেখে জাবেদ একটা কিণারে দুই হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। সায়ন কিছু বলতে গিয়েও বলে না। রুমে এসে হাত থেকে ঘড়ি টা খুলে ড্রেসিন টেবিলের ওপরে রাখে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে একটা বাজে বাজে এমন। সায়ন তার ফোনের দিকে তাকায়। সিয়াকে ফোন দিবে কি দিবে না তাই ভাবছে। বিয়ের আগের রাত যেহেতু তো না ঘুমানো টাই স্বাভাবিক। সায়ন বিছানাতে গিয়ে বসে সিয়ার কাছে ফোন দেয়। প্রথম বার বেজে কেটে গেলে পরেরবার সে ঠিক ধরে।

সিয়া;; হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম।

সায়ন;; ওয়ালাইকুম সালাম, সিয়া আমি সায়ন।

সিয়া;; জ্বি বলুন।

সায়ন;; কিছু কথা ছিলো তোমার সাথে।

সিয়া;; হুমমম।

সায়ন;; আজ কোন কিছুই লুকাবে না তুমি আমার কাছ থেকে৷ যা আছে সব বলবে।

সিয়া;; কি?

সায়ন;; অর্নীল কে ভালোবাসো তুমি তাই না?

সিয়া;; _____________________

সায়ন;; সিয়া বলো।

সিয়া;; হু হ হুমমমম।

সায়ন;; তো তুমি আমাকে আগেই এই ব্যাপারে বলো নি কেনো?

সিয়া;; বললেই কি এমন হতো।

সায়ন;; মানে, কি এমন হতো মানে? আরে কিছুই হতো না। কথা বিয়ে অব্দি গড়াতো না।

সিয়া;; তা আপনার সাথে হোক বা অন্য কারো সাথে বিয়ে অব্দি কথা তো গড়াতোই।

সায়ন;; কেনো? আন্টি! আন্টি তোমাদের এগ্যান্সটে দাড়াতো?

সিয়া;; মা সবই জানে।

সায়ন;; তাহলে তো হয়েই গেলো। আরে ইয়ার প্রব্লেম কি ছিলো?

সিয়া;; প্রব্লেম এই যে অর্নীলের বাবা আমার বাবা কে মেরে দিয়েছে। যদিও অনেক গুলো বছর আগের কথা তা। আমার তো মনেই নেই যে আমি বাবা কে দেখেছিও নাকি না। তো এখন আমার মা কি করে বাবার খুনির ছেলের হাতে আমাকে দিবে।

সায়ন;; ফর গড সেক এটা বলা বন্ধ করো। হ্যাঁ মানলাম যে যেমন মা তেমন মেয়ে আর যেমন বাবা তেমন ছেলে হয়। কিন্তু মনে রেখো হাতের পাঁচ আঙুল সমান না তেমনই সব সমান না। অর্নীল যে তার বাবার মতো হবে এমন কোন কথা না।

সিয়া;; ব্যাপার তা না। অর্নীল ছেলে হিসেবে অনেক ভালো। এটা আমার মাও মানে। তবে এটা তো আসলে হয় না যে আমি আমার বাবার খুনির বাসায় বউ হয়ে গিয়ে উঠবো। এটা আমার মায়ের কথা।

সায়ন;; আর তোমার??

সিয়া;; আমি ভালোবাসি।

সায়ন;; আর যাই বলো না কেনো সিয়া। এতে অর্নীলের বিন্দু মাত্র দোষও নেই, বিন্দুনাত্রও না। ছেলেটা শুধু এতে কষ্ট ছাড়া আর কিছুই পাচ্ছে না, কিচ্ছু না।

সিয়া;; আপনি আমাদের ব্যাপারে কীভাবে জেনেছেন?

সায়ন;; অর্নীল নিজের মুখে সব কিছু বলে দিয়ে গেছে।

সিয়া;; হুয়াট?

সায়ন;; হ্যাঁ।

সিয়া;; এখন কি হবে?

দুজনেই বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থাকে। না সিয়া কথা বলে আর না ই সায়ন। কিছুক্ষন পর সায়ন বলে ওঠে…..

সায়ন;; সিয়া।

সিয়া;; জ্বি।

সায়ন;; আমায় মাফ করো, আমি বিয়ে টা করতে পারবো না। এই বিয়ে হবে না।

সিয়া;; সায়ন আপ…

সায়ন;; না সিয়া, আমি পারবো না। না যদি ব্যাপার টা এমন হতো যে অর্নীল তোমাকে ধোকা দিয়ে ফেলে চলে গেছে বা তোমাদের মধ্যে এখন কোন রকমের কোন সম্পর্ক বাকি নেই তাহলে আমি অবশ্যই এই বিয়ে করতাম। বিকজ আই লাভ ইউ সিয়া। আমি নিজেও তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। কি করে জানি না। তবে যার ওপর অলরেডি অন্য জনের ভালোবাসার অধিকার আছে তাকে আমি নিজের ভাগে আবার কি করে আনি। আমার কোন আপত্তি থাকতো না। কিন্তু অর্নীল পাগল তোমার জন্য। অনেক ভালোবাসে ও তোমাকে। এতো ভালোবাসে যে আমিও হয়তো তোমাকে ওর মতো করে কখনো ভালোবাসতেই পারবো না। সিয়া ভালো হবে তুমি অর্নীল কে বিয়ে করো। কাল কোন বিয়ে হবে না।

এই বলেই সায়ন ফোন কেটে দেয় আর সিয়া অবাক হয়ে কান থেকে ফোন টা নিচে নামিয়ে ফেলে। তায্যব হয়ে তাকিয়ে আছে। তখনই রুমে আদিবা আসে। এসে দেখে সিয়া মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে।

আদিবা;; ওই মাইয়া এভাবে ভূতের মতো দাঁড়ায় আছোস কেনো? নিচে কখন থেকে ডাকতাছি শুনোস না?

সিয়া;; বিয়ে হবে না।

আদিবা;; কি কস?

সিয়া;; বিয়ে হবে না।

আদিবা;; মাথা ঠিক আছে কি আবোল-তাবোল কথা বলতাছস এখন। পাগল হয়ে গেলি নাকি?

সিয়া ধপ করে বসে পরে বিছানাতে।

সিয়া;; সায়ন ফোন করেছিলো। বললো অর্নীল নাকি তাকে আমাদের ব্যাপারে সবকিছুই বলে দিয়েছে। এখন এই বিয়ে আর সম্ভব না। সায়ন এই বিয়ে করতে পারবে না। সে নাকি তৃতীয় ব্যাক্তি হয়ে কারো লাইফে ঢুকতে চায় না। তাই এই বিয়ে করা এখন তার পক্ষে সম্ভব না।

আদিবা;; 😧

সিয়া আদিবার দিকে তাকায়। আর আদিবা শুধু এটাই ভাবছে যে দোলা বা শিউলি কেউ অর্নীল কে বিয়ের কথা বলবে না। আর সিয়ার তো বলার প্রশ্নই আসে না। কেননা সিয়া অর্নীলের সাথে কথাই বলে না। আর বিল্লাল আগে ভাগে বলে থাকলেও সাগর চৌধুরী কেই বলবে। আর সাগর চৌধুরী অর্নীল কে সিয়ার কাছ থেকে দূরে রাখতে চায় তাই সেও বলবে না কিছুই অর্নীল কে। আর আদিবার শশুড় বাড়িতেও বলার মতো তেমন কেউ নেই। আর সায়নের সাথে অর্নীলের তেমন একটা পরিচয় নেই, খুব কম। তাহলে কে? তাহলে কে? আদিবার মাথায় তখনই বাত্তি জ্বলে ওঠে। জাবেদের কথা মনে পরে। জাবেদ আর অর্নীল বেশ ভালো বন্ধু। একে ওপর কেও আলোই চেনে। তবে এই সিয়া আর অর্নীলের প্রেমের কাহীনি জাবেদ জানে না। নিজের ভাইয়ের বিয়ে যেহেতু জাবেদ অবশ্যই তাহলে তার সকল বন্ধু-বান্ধব কে ফোন দিয়ে ইনভাইট করেছিলো। তখন কোন ভাবে অর্নীলে কেও ফোন করে সে সব বলে দেয় নি তো!! আদিবার এখন পুরো সন্দেহ জাবেদের ওপর চলে গেলো। আর এক মূহুর্ত দেরি না করে আদিবা সোজা জাবেদ কে ফোন দেয়। আদিবা তো বাসায় নেই আজ, দিয়ার কাছে। জাবেদ রাত জেগে জেগে অফিসের কাজ করছিলো তখনই নিজের ফোনে ফোন আসে। সে রিসিভ করে। আর রিসিভ করার সাথে সাথে ওপর পাশ থেকে এক প্রকার চিল্লানো ভঙিতেই আদিবা বলে ওঠে……

আদিবা;; এই জাবেএএএএএএএদ!

জাবেদ;; আরে ঘোড়ার ডিম আস্তে। আগে জীবন তেজপাতা বানাই খাইতা এখন কি কানের মাথাও খাবা নাক, আস্তে বলো।

আদিবা;; বুলি ফুটছে বেশি তাই না।

জাবেদ;; না সোনা ইয়ার্কি করতাছি। বলো কি বলবা।

আদিবা;; সায়নের বিয়ে উপলক্ষে কাকে কাকে ফোন করেছো?

জাবেদ;; সবাই কে।

আদিবা;; সবাই কে কাকে?

জাবেদ;; আরে তাহসান, রাতুল, শ্যামল, তন্নি, সাফায়াত আরো কতো গুলা রয়েছে তাদের কে।

আদিবা;; আর কাউকে না 🙄?

জাবেদ;; ওহ হ্যাঁ আর অর্নীল কেও বলেছিলাম কিন্তু সেটা সকালে৷

আদিবা;; কিইইইইই? আপনিই তাহলে অর্নীল কে বলেছেন বিয়ের কথা?

জাবেদ;; আব…. হ্যাঁ। এতে এমন করার কি আছে?

আদিবা;; আল্লাহ, জানু গো তোমারে যদি সামনে পাইতাম গো কইষা একখান চুম্মা যে দিতাম গো। এক্কেরে লালে লাল বানাই দিতাম।

জাবেদ;; না দরকার নাই। আমি ফেইসবুকে একটা নিউজ দেখেছি যে চায়না তে নাকি এক বউ তার জামাই কে লাভ বাইট দিয়েছে তবে তার ৫ মিনিট পরেই জামাই মারা গেছে। আমি মাফও চাই, দোয়াও চাই। আমার লাগবো না।

আদিবা;; জাবেদ 😒😒

জাবেদ;; হাহাহাহাহাহাহাহাহাহা, ফাজলামি করতাছি। আচ্ছা এবার সোজা কথায় আসো কি হয়েছে বলো!

আদিবা;; কিছু না। আমি রাখি।

জাবেদ কিছু বলতে যাবে তার আগেই টুটুটু করে আদিবা ফোন কেটে দেয়। আদিবা এতোক্ষন করিডরে গিয়ে জাবেদের সাথে কথা বলছিলো রুমে এসেই সে আবার অবাক। সিয়া পাগল হয়ে গেছে। সে বিছানার ওপর ওঠে ইচ্ছে মতো বালিশের ভেতর থেকে সব তুলো গুলো বের করে সারা ঘরে ছিটিয়ে দিচ্ছে। পরক্ষণেই এক লাফে বিছানা থেকে নেমে সারা ঘরে লাফালাফি করতে থাকে আর হাতের চিপায় থাকা বালিশের ভেতর থেকে তুলো নিয়ে উড়াচ্ছে। সিয়া এগুলো করছে আর আদিবা চোখ-মুখ ছোট ছোট করে তার কান্ড দেখছে। এক সময় ধিরিম করে সিয়া ফ্লোরে বসে পরে। হাপিয়ে গেছে।

আদিবা;; শেষ? নাকি আরো বাকি আছে কিছু?

সিয়া এবার তার মাথা নিচে নামিয়ে দেয়। আর মাথা তুলে না। তা দেখে আদিবা কয়েক কদম তার দিকে এগিয়ে যায়। ওমা এ কি কান্ড! সিয়া কান্না করছে। আর হাতের উলটো পাশ দিয়ে বারবার চোখ মুছছে।

আদিবা;; বইন তুই আগে আমারে ক যে বিয়া ভাইংা গেছে দেইখা তুই কানতাছোস নাকি খুশির ঠ্যালায় কানতাছোস?

সিয়া;; আমি ভেবেছি অর্নীল হয়তো আমাকে একদম ভুলেই গিয়েছে। সে আর আমাকে মেনেই নিবে না। এখানেই সব শেষ, সম্পর্কের ইতি টানা হয়ে গেছে। কিন্তু আমি ভূল। অর্নীল সায়ন কে নিজের মুখে সব বলেছে।

আদিবা;; কি? জাবেদ তো অর্নীল কে বলেছে।

সিয়া;; হ্যাঁ, ভাইয়া অর্নীল কে বলেছে আর অর্নীল সায়ন কে।

আদিবা;; বিয়ে ভাইংা গেছে রে।

এই বলেই দুই বোনে মিলে কিটকিট করে হেসে দেয়। তবে মূহুর্তেই সিয়ার হাসি আবার গুম।

সিয়া;; কিন্তু কাল কি হবে বুঝেছিস তুই?

আদিবা;; সেটা তো আমিও ভাবছি।

সিয়া;; মা না জানি কি করে আর নানির তো সোজা প্রেসারই বেড়ে যাবে শুনলে, এখন কি হবে রে!!

আদিবা;; শোন যা হবে কাল দেখা যাবে এখন প্যারা নিস না তো।

সিয়া;; আরে কাল কি হবে তা ভেবে ভেবেই তো এখন শান্তিতে থাকতে পারছি না।

দোলার ডাক পরলে আদিবা উঠে চলে যায়। সিয়া তার রুমের দিকে তাকিয়ে দেঝে পুরো ঘর তুলো দিয়ে ভরে গেছে। সিয়া ক্লান্ত দৃষ্টিতে তাকায়। এখন আবার তাকে এই রুম পরিষ্কার করতে হবে, ধুর।



পরেরদিন সকালে~~

দোলা;; মা ওই ডালা টা নিয়ে এসো দেখি, ওখানে কত্তো গুলো জিনিস রয়েছে।

শিউলি;; এখানে এতো জিনিস কেনো। এগুলো তো সিয়ার রুমে থাকার কথা এখানে কি করে। আর আদিবা কোথায়?

আদিবা;; এসেছি।

দোলা;; সিয়া কে ডাক দে তো।

আদিবা;; ডাক দেওয়ার কি আছে। ওই দেখো সিড়ির ওপর সাদা জামা পরে দাঁড়িয়ে আছে। পেত্নী একটা।

দোলা;; এই নিচে নেমে আয় তো দেখি।

সিয়া যেই না সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে এলো ওমনি ল্যান্ডলাইনে ফোন। সিয়া সিড়ি দিয়ে নেমে আসতে গিয়েও আবার ঘুড়ে যায়। আদিবা মুখে কাপড় দিয়ে হাসে সিয়ার কান্ড দেখে।

তবে দোলা হাসি মুখে ফোন রিসিভ করে।

দোলা;; হ্যালো….

______________________________________________________________________________________________________________________________________________________

দোলার হাত থেকে ফোন টা নিচে পরে যায়। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। সিয়া কিছু শুকনো ঢোক গিলে। আদিবা একবার দোলার দিকে তাকায় আরেকবার সিয়ার দিকে। যার ভয় ছিলো তাই হয়তো হলো।

শিউলি;; কিরে এই অবস্থা কেনো? কি হয়েছে? কার ফোন ছিলো, কি বললো?

দোলা;; ___________________

শিউলি;; দোলা।

দোলা;; ___________________

শিউলি;; এই দোলা! কি হয়েছে রে?

দোলা;; বিয়ে হবে না। ভেঙে গিয়েছে।

শিউলি;; কি?

দোলা;; হ্যাঁ, বিয়ে ভেঙে গেছে।

আদিবা সেখানেই খুশিতে ছোট খাটো একটা চিৎকার দিয়ে ওঠে। সবাই তার দিকে তাকায়। কিন্তু পরিস্থিতি টা কোন্ট্রলে আনার জন্য আদিবা তার গলা কিছুটা ঝেড়ে কাশে। দোলা সিয়ার দিকে তাকায়। আর সিয়া সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে ছুটে নিজের রুমে এসে পরে।





চলবে~~