তোর রঙে রাঙাবো পর্ব-১৮

0
1937

#তোর_রঙে_রাঙাবো
#Part_18
#Writer_NOVA

দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে এলো।চারিদিকে কাজের সমাহার।নিজের বিয়ে হলে কি হবে?দুদন্ড বসার সময়ও নেই তাসিনের হাতে।গতকাল রাতে ঘরোয়াভাবেই হলুদের অনুষ্ঠান হয়ে গেছে। আজ তার বিয়ে।বিয়ের অনুষ্ঠান ছেলে-মেয়ে উভয়পক্ষই একসাথে আয়োজন করেছে। কারণ তাসিন বেশি সময় নষ্ট করতে চায় না।বৌ-ভাতের অনুষ্ঠান করতে গেলে শত্রুপক্ষের লোক ঝামেলা করতে পারে। বেশ বড় দেখতে কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে।

তীব্র বিশাল বড় একটা গিফট বক্স নিয়ে সেন্টারে ঢুকলো।রাই ওকে গতরাতে অনেক রিকুয়েষ্ট করে আসতে বলেছে।তাছাড়া রাই-কে দেখার লোভ হচ্ছিলো অনেক।তাই না এসে পারলোই না।আজ সাধারণ মানুষ হিসেবেই সে বিয়েতে এটেন্ড করেছে।এদিক সেদিক খুঁজে তাসিনকে দেখতে পেলো।তাসিন মোবাইলে কারো সাথে কথা বলছিলো।

তীব্রঃ আসসালামু আলাইকুম সমোন্ধি সাহেব।শাদী মোবারক হো।আপনার ব্যবস্থা তো হয়ে গেলো।এবার আমার ও আপনার বোনের ব্যবস্থাটাও করে দিন।একা একা আর কতদিন থাকবো।

তাসিনঃ ওকে আমি তোকে পরে কল করছি।ঐদিকের সবটা সামলে নিস।আর রাতের বেলা বস্তির লোকদের আমার বিয়ের খাবার পৌঁছে দিস।(কল টা কেটে তীব্রর দিকে তাকালো তাসিন)আরে অফিসার যে।কি খবর?আমিতো ভাবছিলাম তুমি আসবেই না।তারপরেও বারবার মনে হলো, যদি আসো তো ভালোই হবে।

তীব্রঃ কেমন কথা বললেন সমোন্ধী সাহেব।আমার একমাত্র হবু বউয়ের একমাত্র ভাই আপনি।আর আমি কি না আপনার বিয়েতে আসবো না।এমনটা কি হয় বলুন?আপনারা তো দাওয়াত না দিলেও আমি চলে আসতাম।

তাসিনঃ আমাদের সম্পর্কটা কি তুমি ভুলে গেছো তীব্র? তেলে আর জলে কিন্তু মিশ খায় না।

তীব্রঃ কেমন কথা বলেন আপনি?আমাদের সম্পর্ক আমি ভুলিনি।তবে এখন বিয়ের অনুষ্ঠানে আপনিও একজন সাধারণ মানুষ আর আমিও একজন সাধারণ মানুষ। সব জায়গায় সম্পর্ক মনে রাখলে চলে না মিস্টার আহনাফ আবেদিন তাসিন। এসব কথা বাদ দিন।আপনার বোন কোথায় তা বলুন।দেখছেন,আপনি আমার কথা ভুলে গেলোও আমার বউটা কিন্তু আমার কথা ভুলেনি।তাই কল করে চলে আসতে বললো।নিন ধরুন।আপনাদের বিয়ের গিফট।

ভাইয়ের বিয়ে মানে কাজ আর কাজ।এদিকে এক কাজ কমালে ঐদিকে আরেক কাজ বেড়ে যায়।ঘন্টাখানিকের মধ্যে বিয়ের প্রস্তুতি আরম্ভ হয়ে যাবে।আর আমার ভাইয়ুর এখনো তৈরি হওয়ার নাম,গন্ধ ও নেই। পুষ্প ভাবীকে পার্লারের লোক সাজাচ্ছে।আমি বিশাল এক লেহেঙ্গা পরে ভাইয়ুকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। সিঁড়ি দিয়ে লেহেঙ্গা উঁচু করে নামতে নামতে দেখি ভাইয়ু নিচে কারো সাথে কথা বলছে।

আমিঃ ভাইয়ু, তুমি এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছো।তৈরি হবে না।ঘন্টাখানিকের মধ্যে কাজী চলে আসবে।আর তুমি এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছো।জলদী উপরে এসো।তোমার রুমে আমি শেরওয়ানি, জুতা,ঘড়ি যাবতীয় জিনিসপত্র রেখে এসেছি।তুমি গোসল করে তৈরি হয়ে নেও।নিজের বিয়েতে কেউ বলে এমন টো টো করে ঘুরে।আল্লাহ, আমার ভাইটাকে তুমি একটু সুমতি দেও।জলদী এসো।

নিচে নামতে নামতে কথাগুলো বলছিলাম।সামনে তাকিয়ে দেখি তীব্র ড্যাব ড্যাব করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে কিছুটা অস্বস্তিতে পরে গেলাম।চোখ দুটো এদিক সেদিক ঘুরিয়ে মুখটা কুচোমুচো করে বললাম।

আমিঃ আর তীব্র আপনি।কখন এলেন?আমি তো ধরেই নিয়েছিলাম আপনি আসবেন না।আমাদের মতো গরীবের অনুষ্ঠানে বড়লোকদের পদধূলি পরবে, সেটা অবিশ্বাস্য ছিলো।

তীব্রঃ অপমান করছো।তুমি এতবার বললে আর আমি আসবো না।

তাসিনঃ তোরা কথা বল। আমি উপরে গিয়ে তৈরি হয়ে নিচ্ছি। আবির কি ফুলের ব্যবস্থা করে ফেলেছে রাইপরী।আমি কিন্তু বিয়ের আগে কাজটা সেরে নিবো।

আমিঃ আবির ভাইয়াকে আমি কল করেছিলাম।বলছে সবকিছু এখন শেষ পর্যায়ে।

ভাইয়ু কথা না বারিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেল।এবার আমি ভালো করে তীব্রর দিকে তাকালাম।আমাদের দুজনের ড্রেসের কালার আজ একিরকম।আমি এ্যাশ কালারের মধ্যে গোল্ডেন পাথরের কাজ করা লেহেঙ্গা পরেছি।আর তীব্র এ্যাশ কালারের কোর্ট,প্যান্ট।ভেতরে কালো শার্ট।এ্যাশ কালারের ঘড়ি,কানে কালো টপ,পায়ে কালো জুতা।চুলগুলো জেল দিয়ে হালকা করে সেট করে দেওয়া।আজ যে কেউ দেখলে তার ওপর ক্রাশ খাবে।বুঝি না বিয়ে বাড়িতে এত স্টাইল করে আসার কি দরকার আছে?এমনি তো কলেজে যেতো পুরো হাঁদারাম হয়ে।আর এখন পুরো শাহরুখ খান সেজে এসেছে।

তীব্রঃ আমাকে কি দাওয়াত করে এনে,এভাবেই দাঁড়া করিয়ে রাখবেন নাকি মিসেস ইমতিয়াজ আহমাদ?

আমিঃ নাহ তা কেন হবে?উপরে চলুন।(একটু ভেবে)ওয়েট আপনি আমাকে কি বললেন?

তীব্রঃ কোথায় কিছু না তো।চলুন উপরে যাই।

আমিঃ ব্যাটার ওপর রাগ উঠছে।কে বলেছিলো এরকম ড্রেসিং লুক দিয়ে আসতে।এখন সব মেয়েরা হা করে তাকে গিলবে।ধূর যত্তসব।ভালো লাগছে না কিছু। যে মেয়ে তার দিকে তাকাবে তার চোখ তুলে নিবো আমি।ছিঃ ছিঃ কি ভাবছি আমি এসব। তার দিকে যে খুশি সে তাকাক আমার কি?আমারও না মাথাটা গেছে। আমিও কি এই ব্যাটার প্রেমে পরে গেলাম নাকি।কি যা তা ভাবছি।রাই তোর মাথা গেছে। ডক্টর দেখা।(মনে মনে)

তীব্রঃ ও হ্যালো কি ভাবছেন এতো?চলুন ওপরে যাই।

আমিঃ হুম চলুন।

আমি আর কথা বারালাম না।চুপচাপ তার সাথে করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলাম।

🌺🌺🌺

পুষ্পর পরনে আজ লাল খয়েরী মিশ্রিত কালারের শাড়ি।গোল্ডেন স্টোনের কাজ করা।গা ভর্তি সোনার গহনা।হাত ভর্তি মেহেদী ও চুড়ি।পায়ে গোল্ডেন পাথরের উঁচু হিল জুতা।হাতে লাভ শেইপের একটা হাত ব্যাগ।সেটাও পুরোটা গোল্ডেন পাথরে কাজ করা।থেকে থেকে আলোতে ঝলকানি মারছে।মাথায় বিশাল ওড়নার ঘোমটা আর মুখে জমকালো সাজ।
মুখে তার মন কেড়ে নেওয়া হাসি।যে হাসির প্রেমে তাসিন বার বার পরে।বিয়ের দিন প্রত্যেক মেয়েকেই অসম্ভব সুন্দর লাগে।

তাসিনের গায়ে সেম কালারের শেরওয়ানি ও পায়জামা।শেরওয়ানির পুরোটা গোল্ডেন স্টোনের কাজ করা।মাথায় গোল্ডেন, খয়েরী মিশ্রিত পাগড়ি,পায়ে গোল্ডেন নাগড়া জুতো।

পুষ্পর চোখ লাল কাপড় দিয়ে বাঁধা। তাকে ধরে ধরে নিচে নামাচ্ছে রাই।আজ নাকি পুষ্পকে তাসিন একটা সারপ্রাইজ দিবে।তাই ওকে এখন স্টেজের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।সেন্টারের বাইরে বাগানের মতো ছোট জায়গায় একটা স্টেজ করা।সেখানে রয়েছে হাজার হাজার গোলাপ।৪ টা নার্সারি খালি করে ফেলেছে তাসিন।পুষ্পর অনেক শখ ছিলো বিয়ের দিন তার বর তাকে হাজারটা গোলাপ দিয়ে প্রপোজ করবে সবার সামনে।সেই শখটাই আজ তাসিন পূর্ণ করবে।রাই, পুষ্পকে স্টেজে উঠিয়ে নিচে নেমে গেল।পুষ্প চোখের কাপড়টা সরাতেই দেখতে পেলো গোলাপের ভুরের মধ্যে তাসিন হাঁটু গেড়ে ওর সামনে বসে আছে। দুই হাত ভর্তি লাল গোলাপ।

তাসিনঃ আই লাভ ইউ জান।অনেক ভালোবাসি তোমায়।তুমি যে জানে তাসিন।তোমায় ছাড়া আমি নিঃস্ব।তুমি কি বাকি জীবনের জন্য আমার হবে।অনেক যত্নে আগলে রাখবো তোমায়।তোমার জীবন সঙ্গী হওয়ার অনুমতিটা কি দিবে?যদিও সেটার প্রয়োজন আজ নেই। কারণ আর কিছু সময়ের মধ্যেই তুমি আমার হবে।আই এম রিয়েলি লাভ ইউ। ডু ইউ লাভ মি?????

পুষ্প মুখে হাত দিয়ে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দিয়ে তার অনরবত পানি পরছে। এই পানি দুঃখের নয় বরং সুখের।পুষ্প এত পরিমাণ খুশি হয়েছে যে কথা বলতেও ভুলে গেছে। শুধু মাথাটা ওপর নিচ নাড়িয়ে তাসিনের হাত থেকে ফুলগুলো নিলো।তাসিন উঠে দাঁড়িয়ে সবার সামনে পুষ্পর কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো।ওমনি সবাই হোওওও করে শব্দ করে উঠলো।সবার হাতে মোবাইল দিয়ে এতক্ষণ ভিডিও করছিলো।চারিদিক থেকে ক্যামেরার ঝালকানিতে সুন্দর মুহুর্তটা ক্যামেরাবন্দী হয়ে গেলো।

ধীর পায়ে স্টেজ থেকে পুষ্পকে ধরে নিচে নামলো তাসিন।তারপর সবার সামনে দিয়ে হাত ধরেই ভেতরে নিয়ে গেলো।পুরাটা,রাস্তা ওদের ওপর গোলাপের পাপড়ির বর্ষণ হচ্ছিল। পুষ্প আজ অনেক খুশি।ও কখনো ভাবেনি ওর ছোট ছোট ইচ্ছেগুলোকে এতটা মূল্য দিবে তাসিন।থেকে থেকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাসিনের দিকে তাকাচ্ছে সে।কিন্তু একবারের জন্যও তাসিন ওর দিকে তাকায়নি।কারণ ওর অভিমান এখনো ভাঙেনি।ভেতরে আসতেই এক প্রকার হালকা ঝাড়া মেরে নিজের হাতটা সরিয়ে হনহন করে অন্য দিকে চলে গেল তাসিন।এতে পুষ্পর অনেকটা খারাপ লাগলেও কিছু বললো না।তাসিনও এমনটা করতে চায়নি।কিন্তু ওর অভিমান না ভাঙ্গালে সে পুষ্পর সাথে কথা বলবে না এমনটা সে পণ করে বসে আছে।

🌺🌺🌺

সুন্দরভাবে বিয়েটা সম্পন্ন হলো।কোনো ঝামেলা হয়নি।আসার সময় পুষ্প তার বাবা-মাকে ধরে অনেক কান্না করছে। সেই দৃশ্যটা দেখে রাই নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি।তাকেও তো একদিন এভাবে তার ভাইকে ছেড়ে চলে যেতে হবে। তীব্র তার রুমালটা সেই প্রথম দিনের মতো বারিয়ে দিয়ে বলেছিলো।

তীব্রঃ রুমালটা দিয়ে চোখের পানি মুছে নেও।এই মায়াবী মুখে হাসি মানায়,কান্না নয়।দয়া করে তুমি কান্না বন্ধ করো।তোমার চোখে আমার পানি দেখতে ভালো লাগে না।

মুগ্ধ দৃষ্টিতে রাই তীব্রর দিকে কিছু সময় তাকিয়ে ছিলো।ছেলেটা সবসময় ওর দিকে খেয়াল।আজ সারাটা দিন ওর সাথে সাথে ছিলো।এক দন্ড সময়ের জন্যও ওকে চোখের আড়াল করেনি।আবারো ভালো লাগাটা ভেতর থেকে নড়াচড়া দিয়ে উঠলো রাইয়ের মনে।তাসিন,পুষ্প এক গাড়িতে আর আবির,রনি,রাই,
তীব্র আরেক গাড়িতে করে বাসায় পৌঁছে গেছে। গাড়িতে তাসিন শুধু পুষ্পর দিকে টিস্যু বাড়িয়ে দিয়েছিলো।তাছাড়া কোন কথা বলে নি।

রুমের মধ্যে বিশাল বড় এক ঘোমটা দিয়ে বসে আছে পুষ্প।রাই ওকে তাসিনের রুমে বসিয়ে দিয়ে চলে গেছে। চারিদিকে ওর প্রিয় ফুল গোলাপ,বেলী ও কাঠগোলাপের সমাহার।পুষ্পর পছন্দের ফুল দিয়েই বাসর ঘর সাজানো হয়েছে। পুরো রুমে ফুল ও রংবেরঙের মোম দিয়ে ভরপুর।পুষ্পর এভাবেই পরিবারকে ছেড়ে চলে এসেছে তার জন্য খারাপ লাগছে।তার মধ্যে আবার তাসিনের ইগনোর গুলো সহ্য করতে পারছে না।তাসিন রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। পুষ্প গুটি গুটি পায়ে বারান্দায় উঁকি দিলো।দেখতে পেলো তাসিন বিষন্ন মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।পুষ্প এই বিয়ের শাড়িতে আর থাকতে পারছে না। ওয়ারড্রব থেকে একটা লিনেন থ্রি পিস নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল। ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখলো তাসিন এখনো বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।

পুষ্পঃ মহারাজ বোধহয় খুব ভালো অভিমান করেছে আমার সাথে।এখন আমার তার মান ভাঙাতে গিয়ে দফারফা হয়ে যাবে।বেশি বুঝলে এমনি হয় পুষ্প।এবার ঠেলা সামলা।একে তো গালে চড় মেরেছিলি।আবার ইচ্ছে মতো বহু কথাও শুনিয়েছিস।এবার তোকে মাফ করে আপন করে নিলেই হয়।কি করবো, কি করবো?পেয়ে গেছি।আমার আদুরিনী, ননদীনি তো আমাকে কতগুলো আইডিয়া দিয়েছিলো।এখন সেগুলো কাজে লাগাই।পেছন থেকে গিয়ে জাপটে ধরে রাখবো। যতক্ষণ পর্যন্ত মান না ভাঙ্গবে।

যেমন ভাবা তেমন কাজ।দৌড়ে বারান্দায় গিয়ে পেছন থেকে জাপটে ধরলো তাসিনকে।তাসিন প্রথমে কিছুটা হকচকিয়ে গেলেও পরে কোন রিয়েকশন করলো না।চুপচাপ দাঁড়িয়ে রাতের তারাভরা আকাশ দেখতে লাগলো।অনেকক্ষণ ধরে জাপটে ধরে আছে পুষ্প। কিন্তু তাসিনের কোন হেলদোল নেই। তাই রেগে ওকে ছেড়ে হেচকা টান মেরে নিজের দিকে ঘুরালো।

পুষ্পঃ সমস্যা কি তোমার? তখন থেকে দেখছি আমাকে ইগনোর করছো।আমাকে ইগনোর করার সাহস হয় কি করে তোমার?কিছু একটা তো বলো।আমাকে বকো নয়তো মারো কিংবা যা খুশি তাই বলো।কিন্তু এভাবে চুপ করে থেকো না।আমি তোমাকে এভাবে নিতে পারছি না। আই এম সরি।তোমাকে সেদিন না জেনে অনেক কথা শুনিয়েছি।তার জন্য মাফ করে দিও।মানুষমাত্রই তো ভুল বলো।আমিও তেমন ভুল করে ফেলেছি।এবারের মতো মাফ করে দেওয়া যায় না।প্রমিস আর কখনো এমন করবো না। ভুল কি একা আমার হয়েছে বলো।তোমারও তো ছিলো।তুমি যদি আমাকে আগে বলে দিতে তাহলে হয়তো এই ঘটনাটা ঘটতো না।তুমিও তো বিষয়টা আমার থেকে লুকিয়েছো।প্লিজ এভাবে চুপ করে থেকো না।কিছু একটা বলো।

কথাগুলো বলে তাসিনকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো পুষ্প।এতক্ষণ পাথরের মতো থাকলো তাসিন এবার একটু নড়েচড়ে উঠলো।পুষ্পর চোখের পানিতে ওর টি-শার্ট ভিজে যাচ্ছে। তাসিন আর সহ্য করতে পারলো না। শক্ত করে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো তাসিন।চোখে তারও পানি।তবে এটা ব্যর্থতার নয়।নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের করে পাওয়ার পূর্ণতার।দুই হাত দিয়ে পুষ্পর মুখটা তুলে কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো।

তাসিনঃ আর কখনো আমাকে ভুল বুঝো না। বিশ্বাস করো আমি এটা নিতে পারবো না। তোমার মনে আমার জন্য কোন ঘৃণা থাকুক তা আমি কখনো চাই না।বড্ড বেশি ভালোবাসি তোমাকে।তুমিহীন আমিটা যে পুরোটাই ফাঁকা। অনেক ভালোবাসি জানে তাসিন। তুমি আমার জানে তাসিন।আজকের রাতটাই আমি চাই # তোর_রঙে_রাঙাবো নিজেকে।তুই কি আমায় সম্মতি দিবি?

পুষ্প তাসিনের বুকে মুখ লুকিয়ে লজ্জা রাঙা মুখে উত্তর দিলো।

পুষ্পঃ আমিও চাইছি নিজেকে তোর_রঙে_রাঙাবো। সারাটা জীবন সেই রঙ নিয়ে তোর পরিচয় নিয়ে কাটিয়ে দিবো।

তাসিন মুচকি হেসে পুষ্পকে কোলে তুলে নিলো।ধীর পায়ে এগিয়ে যেতে লাগলো বেডের দিকে।আর পুষ্প নিজের মুখ লুকালো তাসিনের বুকে।তারা আজ সব বাঁধা পেরিয়ে একে অপরে তোর_রাঙে_রাঙাবো বলে পণ করেছে।

#চলবে