#তোর_রঙে_রাঙাবো
#Part_19
#Writer_NOVA
২ মাস পর……
ইদানীং তাসিন অনেক ব্যস্ত থাকে।তার দলের লোকের সাথে পুলিশের ঝামেলা হয়েছে। সেগুলো নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে করতে তার জীবন তেজপাতা হয়ে যাচ্ছে। বাসায় বেশিরভাগ সময় পুষ্প একাই থাকে।রাই কলেজ থেকে ফিরতে ফিরতে দুপুর ২টা।পুষ্প কলেজে যায় না। কারণ কয়েকদিন ধরে পুষ্পর শরীরটা ভালো যাচ্ছে না।মাথা ঘুরায়,শরীর দূর্বল লাগে,সবকিছু গন্ধ লাগে।আজ সকাল থেকে বেশ কয়েকবার বমিও হয়েছে। প্রথম প্রথম বিষয়টাকে পাত্তা না দিলেও এখন মনের মধ্যে খোটকা লাগছে। সিউর হতে হসপিটালে যাবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো।
পুষ্পঃ মনে হচ্ছে আমি প্রেগন্যান্ট। কিন্তু সিউর তো নই।কাকে জিজ্ঞেস করবো? আম্মুকে কল করে কি সিউর হবে?ধূর,আমার লজ্জা লাগে।আমি বরং রাই এলে ওকে নিয়ে হসপিটালে গিয়ে সিউর হবো।তার আগে কাউকে জানানোর দরকার নেই।কিরকম গা গুলিয়ে আসছে। অনেক টক খেতেও ইচ্ছে করছে।টক খেলে হয়তো গা গুলানো ভাবটা কমে যাবে। কিন্তু পাবো কোথায়?কিচেনে গিয়ে খুঁজে দেখি কিছু পাই কিনা।
শরীরটা প্রচুর দূর্বল লাগছে পুষ্পর।তারপরেও অনেকটা কষ্ট করে নিচে নেমে কিচেনে টক জাতীয় জিনিস খুঁজতে লাগলো।কিন্তু সারা কিচেন উলোট পালোট করেও কিছু পেলো না।মন খারাপ করে ফ্রীজ খুলেই তেঁতুল দেখতে পেলো।ফুসকার টক বানানোর জন্য তাসিনকে দিয়ে তেঁতুল এনে রেখেছিলো পুষ্প।এই মুহুর্তে সেটা অনেক কাজে লাগবে।কিছু না ভেবে পুরো তেঁতুলের বাটি নিয়ে সোফায় বসে পরলো পুষ্প।ওর এখন তেঁতুল খাওয়া ছাড়া অন্য কোন কাজ নেই।
কলেজ থেকে বাড়ি ফিরেই দেখলাম পুষ্প ভাবী বিশাল এক বাটি ভর্তি তেঁতুল সাবার করছে।বিষয়টা দেখেই আমার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। তার মানে আমাদের বাসায় নতুন অতিথি আসছে।
আমিঃ ভাবী সত্যি এটা। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।আমার যে কি খুশি লাগছে। আমি ফুপু হতে চলেছি।তোমাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দিবো তার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।
দৌড়ে গিয়ে সোফার মধ্যে ধপ করে বসে ভাবীর গলা জড়িয়ে ধরে কথাগুলো বললাম।বেচারী অনেকটা ভয় পেয়ে গেছে।হুট করে এমনটা হবে তা বুঝতে পারেনি।
পুষ্পঃ এখনো সিউর হয়নি।তাই এতো খুশি হয়ো না।বিকালে তুমি আমার সাথে হসপিটালে যাবে।এর আগে কাউকে জানাতে হবে না।
আমিঃ ভাইয়ুকে কল করে বলি।আমি তো খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাচ্ছি। কতটা খুশি লাগছে আমি তা বুঝাতে পারবো না।আমি সিউর আমাদের বাসায় নতুন মেহমান আসছে।তুমি সিউর না হলে আমার কি বলো তো?ভাইয়ুকে এত বড় একটা খুশির খবর না জানিয়ে আমি থাকতে পারি বল।
পুষ্পঃ না তাকে এখন জানিয়ো না।হসপিটাল থেকে ফিরে, পুরো সিউর হয়ে তারপর সারপ্রাইজ দিবো।
আমিঃ ওকে তুমি যা বলবে তাই হবে।কিন্তু আমি জানি আমি ফুপু হতে চেলেছি।কি মজা, কি মজা!!
পুষ্পঃ এবার হাত,মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো।আমি খাবার বেড়ে দিচ্ছে। খাবার খেয়ে দেরী করবো না। আমাদের জলদী করে হসপিটালে যেতে হবে।
আমিঃ তুমি খাবার বাড়তে থাকো।আমি এই যাবো আর এই আসবো।খুশিতে আমার গলা দিয়ে খাবার নামবে কিনা তার সন্দেহ আছে।
আমার কথায় পুষ্প ভাবী মুচকি হাসলো।আমি জলদী করে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এলাম।দুজন একসাথে খাবার খেয়ে হসপিটালের দিকে রওনা দিলাম।ভাবী কিছুটা ভয় পাচ্ছে। যদি সত্যি আমাদের ধারণা ভুল হয়।কিন্তু আমি খুশিতে আত্মহারা। হসপিটালের মহিলা ডাক্তারের সিরিয়াল দিয়ে আমরা বসে আছি।ভাবীর মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে সে অনেক চিন্তিত।
আমিঃ তুমি চিন্তা করো না তো।দেখবে সব ঠিক হবে।আমরা যা ধারণা করছি তাই হবে।কখনো কি কাউকে দেখেছো এই বিষয়টা নিয়ে এত নার্ভাস হতে।
পুষ্পঃ আমার তাও ভয় করছে। তুমি আমার সাথে থাকবে প্লিজ।
আমিঃ ওকে তুমি কোন চিন্তা করো না।আল্লাহ নিশ্চয়ই আমাদের জন্য ভালো কিছু রেখেছে।
ভেতরে যাওয়ার পর ভাবীকে কি কি জানি টেষ্ট করলো।তারপর রেজাল্ট আসলো ভাবী প্রেগন্যান্ট। আমি তো খুশিতে তখনই সবার সামনে ভাবীকে জড়িয়ে ধরেছি।রাস্তা দিয়ে খুশিমনে হাঁটছি।আর ভাবী লজ্জায় মাথা নিচু করে রেখেছে। গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি।আজ একসাথে সামনের স্টল থেকে ফুসকা খেয়ে তারপর রিকশা করে বাড়ি ফিরবো।আমি আর ভাবী প্ল্যান করছিলাম কি করে ভাইয়ুকে সারপ্রাইজ দিবো।ভাইয়ু নিশ্চয়ই এই খবরটা শুনে অনেক খুশি হবে।কিন্তু হঠাৎ আমাদের দুজনকে পেছন থেকে কেউ মুখ চেপে ধরলো। ধীরে ধীরে আমি ও ভাবী দুজনেই জ্ঞান হারালাম।
🌺🌺🌺
বদ্ধ রুমের একটা খুঁটির সাথে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় আছে তাসিন।সারা মুখের বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্ত পড়ছে।মাথাটা সামানের দিকে হেলে রয়েছে। প্রচুর মারধর করেছে ওকে।সকাল বেলা শরীফের কল পেয়ে এখানে ছুটে এসেছিলো।কিন্তু তাসিন বুঝে ওঠার আগেই কেউ ওর মাথায় শক্ত কিছু দ্বারা আঘাত করে। যাতে করে সে অজ্ঞান হয়ে যায়।অজ্ঞান থাকা অবস্থায় ওকে ইচ্ছে মতো মারে।এক বালতি পানি শরীরের ওপর পড়তেই মাথা ঝাড়া মেরে তোলে তাসিন।কিন্তু সামনের মানুষ দুটোকে দেখে তার রাগ সপ্ত আসমানে উঠে যায়।
তাসিনঃ সামনাসামনি লড়তে ভয় পাস নাকি তোরা?হারামীগুলো,তোদের মৃত্যু আমার হাতে লেখা আছে।তোরা একটু ওয়েট কর।
তাসিনের কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো সোহাগ ও শরীফ।এমনভাবে হাসছে, মনে হচ্ছে তাসিন কোন জোকস বলেছে।শরীফ, সোহাগের সাথে মিলেই তাসিনকে মারার প্ল্যান করেছে। তাই মিথ্যে কথা বলে তাসিনকে ওদের ডেরায় ডেকে এনেছে।
শরীফঃ কে কাকে মারে তাতো পরে দেখা যাবে?আগে তো নিজেকে আমাদের হাত থেকে রক্ষা কর।কি ভাবিস নিজেকে তুই? আরে তুই কি আদোও মাফিয়া কিং হওয়ার যোগ্য? তুই মরলে আমি সেই স্থানটা পূরণ করে দেখিয়ে দিবো মাফিয়া কিং কাকে বলে।
সোহাগঃ আমার বাবা সোবহান চৌধুরীকে মেরে তুই তোর পাওয়ার দেখিয়েছিস।এবার আমি তোকে মেরে আমার পাওয়ার দেখাবো।মনে রাখিস,তুই যদি মাফিয়া জগতের কিং হোস তাহলে আমিও সেই জগতের বাদশাহ।
সোহাগের কথা শুনে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো তাসিন।তারপর ওর দিকে তাকিয়ে বললো।
তাসিনঃ তুই নিজেকে বাদশাহ দাবি করিস?হাউ ফানি।তুই তো আমার সৈন্য হওয়ার যোগ্যতাও রাখিস না।আর তুই হবি বাদশাহ।তোর কাজ তো পেছন ফিরে আঘাত করা।ভয় পেয়ে আমাকে এখানে ডেকেছিস।তুই যদি সত্যি বাদশাহ হতি। তাহলে আমাকে এখানে ডাকতি না। বরং আমার ডেরা থেকে আমায় তুলে নিয়ে আসতি।আরে আমি তো কিং।তাই একাই তোদের ডেরায় পা ফেলেছি।আমার সাহসের ব্যাপারে নিশ্চয়ই তোদের ধারণা হয়ে গেছে। মাফিয়া জগতে আমার চেয়ে ওপরে কেউ নেই। আমিই কিং আবার আমিই বাদশাহ।
শরীফঃ মারের ডোজটা বোধহয় তোর কম পরে গেছে। তাই এখনো মুখ দিয়ে বুলি ফুটেছে। তোর ব্যবস্থা আমি করছি।
তাসিনঃ আরে তোর মতো হারামী বন্ধু যার থাকে তার কি আর কোন শত্রুর ভয় থাকে রে?তোর বাবার সাথে সাথে যদি তোকেও আমি উপরে পাঠিয়ে দিতাম। তাহলে হয়তো এই দিন আমায় দেখতে হতো না।
শরীফঃ সেটা তোর ভুল।কিন্তু আমি কোন ভুল করতে চাই না।তুই যেমন করে আমার বাবা ও ভাইকে মেরেছিস তার চেয়ে ভয়ানক মৃত্যু আমি তোকে দিবো।
তাসিনঃ তোর ভাই আসলো কোথা থেকে? (কপাল কুঁচকে)
শরীফঃ এত তাড়াতাড়ি আমার বড় ভাইয়ের কথা ভুলে গেলি।রাফিকে চিনিস না তুই? আমিও বা কি বলছি?তুই মনে রাখবি কি করে? আমার মনে আছে।কারণ রাফি ছিলো আমার বড় ভাই।
তাসিনঃ আমার সাথে যে গাদ্দারি করে। তার মৃত্যু এমনি হয়।সেটা তোর বাবা কিংবা ভাই হোক তা আমার দেখার বিষয় নয়।
শরীফ তাসিনের কথায় রেগে পাশে থাকা রড টাকে তুলে বেশ কয়েক ঘা মেরে দিলো।সোহাগ এসে শরীফকে আটকে দিলো।
সোহাগঃ আরে দোস্ত, মাথা ঠান্ডা কর।এখনি কি ওকে মেরে ফেলবি নাকি।আরো কাজ বাকি আছে তো আমাদের। ও যেভাবে আমাদের বাবা ও ভাইকে আমাদের থেকে কেড়ে নিয়েছে। তেমনি আমরাও ওর চোখের সামনে ওর বউ আর বোনের প্রাণ নিয়ে নিবো।তুই তো ভালো করেই জানিস, এই শালার নিজের জীবনের ভয় নেই। কিন্তু ওর দূর্বলতাই তো ওর বোন আর বউ।ওদের নিজের সামনে মরতে দেখলেই আমাদের কষ্ট উপলব্ধি করতে পারবে।কিছু সময়ের মধ্যেই ওরা দুজন আমাদের ডেরায় চলে আসবে।
সোহাগের কথা শুনে তাসিনের চোখ দুটো দপ করে জ্বলে উঠলো। ওর হার্ট ও অক্সিজেনে হাত দেওয়ার কথা বলছে ওরা।সোহাগ ওর সামনে এসে কথাগুলো বলছিলো।তাসিন রেগে ওর মাথা দিয়ে জোরে সোহাগের মাথায় আঘাত করলো।সোহাগ ব্যাথা পেয়ে মাথায় হাত দিয়ে সরে গেল।যেই রেগে তাসিনের দিকে তেড়ে যাবে ওমনি বাইরে থেকে চেঁচামিচি ও গুলির শব্দ শুনতে পেলো।
সোহাগঃ বাইরে কি হয়েছে?
শরীফঃ আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না।
সোহাগঃ চল তো গিয়ে দেখি।
তাসিনঃ কি আবার হবে?আমার খবর পেয়ে আমার লোকেরা নিশ্চয়ই চলে এসেছে। (বাঁকা হেসে)
সোহাগ ও শরীফ বাইরে যাবার আগেই গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে ভেতরে ঢুকলো তীব্র ও হাসিব।হাসিবকে দেখে শরীফ অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো। ততক্ষণে তীব্র ও হাসিব ওদের সামনে চলে এসেছে।
শরীফঃ রনি তুই???
হাসিবঃ সরি শরিফ।আমি শুধু রনি নই। হাসিবুর রহমান রনি।মাফিয়া কিং তাসিনের ডানহাত।নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছিস আমাকে দেখে।এতো বোকা ছেলেটা কি করে হাসিব হতে পারে?আমি এতদিন তোর থেকে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলাম।আরে বেঈমান,তোর খবর তো সেই কবের থেকে ভাই জানে।কিন্তু তোকে নিজের জানের জান দোস্ত ভেবে বারবার তোকে সুযোগ দিয়েছে।তুই সেটা কাজে লাগিয়ে নিজেকে না শুধরে বারবার একি ভুল করেছিস।আর তা হলো বিশ্বাসঘাতকতা। কিন্তু আমি তোর থেকে সবকিছু লুকিয়েছি।কারণ তোর মতো দুমুখো সাপের দ্বারা সবই সম্ভব।
শরীফের হাসিবের কথাগুলো হজম হলো না। কারণ সে কখনো কল্পনাও করতে পারেনি তার সাথে থাকা বোকা-সোকা দেখতে রনি ছেলেটা তাসিনের ডান হাত হাসিব হবে।শরীফ এখনো ঘোরপর মধ্যে আছে।
#চলবে