#দুই_হৃদয়ের_সন্ধি
#পর্বঃ২৩+২৪
#লেখিকাঃদিশা_মনি
মুসকান আজ আরিফের সাথে বেরিয়েছে। দুজনে মিলে বাইরে ঘোরার কথা বলে আসলেও আদতে তারা এসেছে অন্য কাজে। মুসকান সিএনজিতে বসে থাকা অবস্থাতেও আরিফের চিন্তিত মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার কষ্ট যে লাঘব করতে পারবে না জানে। তবু আশ্বাস দিয়ে বলে,
“আপনি কোন চিন্তা করবেন না। দেখবেন সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।”
আরিফ কতোটা আশ্বস্ত হয় জানা নেই। কিন্তু মুসকান যথেষ্ট চেষ্টা করে তাকে বোঝানোর।
আরিফ ও মুসকান হাজির হয় একটি জুয়েলারী হাউজের সামনে। অতঃপর জুলেয়ারী হাউজে প্রবেশ করে দুজন। সেখানকার মালিক দুজনকে দেখে এগিয়ে এসে বলে,
“আসুন,আসুন। বলুন কি ডিজাইনের গহনা লাগবে?”
মুসকান মিনমিনে সুরে বলে,
“গহনা কিনতে নয়, বিক্রি করতে এসেছি।”
বলেই নিজের ব্যাগ থেকে কিছু গহনা বের করে সে। এই গহনাগুলো নিজের দাদির কাছ থেকে পেয়েছিল মুসকান। মুসকানের মায়ের দ্বিতীয় বিয়ের পরই মূলত তাকে এই গহনাগুলো দেয় তার দাদি। মুসকানের বিয়ের পর বিদায়ের সময় আবার মরিয়ম বেগম তার হাতে এই গহনাগুলো তুলে দেয়। নিজের দাদির দেওয়া গহনা যে এভাবে বিক্রি করতে হবে তা কখনো কল্পনাতেও আনে নি মুসকান। কিন্তু পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করলো এমনটা করতে। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ভাবতে থাকে মুসকান গতরাতের কথা।
আরিফ যখন তার কাছে জানতে চায় কি উপায়ে সে সব ধারের টাকা শোধ করবে তখন মুসকানের এই গহনার কথা মনে পড়ে যায়৷ আরিফকে বলায় সে তো প্রথমে রাজিই হতে চায়নি। পরে মুসকান অনেক বোঝানোর পর তারপর গিয়ে রাজি হয়েছে।
মুসকানের কাছে এই গহনা গুলোর থেকে বেশি মূল্যবান তার সংসার। তাই তো সে নিজের দাদীর থেকে পাওয়া এই উপহার গুলো এভাবে বিক্রি করতে দুবার ভাবেনি। এ প্রসঙ্গে নিজের দাদির বলা একটা কথাই মনে পড়ে যায় মুসকানের। তার দাদা যখন খুব অসুস্থ ছিল তখন তার দাদি দিনরাত তার সেবাযত্ন করত। সেইসময় ছোট্ট মুসকান গিয়ে নিজের দাদির পাশে বসে থাকত। দাদিকে এভাবে দাদাজানের সেবা করতে দেখে কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করত,
“তুমি দাদাজানের জন্য এত কষ্ট করছ কেন দাদি? ডাক্তার তো ওষুধ দিয়ে গেছেই।”
“পাগলী মেয়ে। ডাক্তার ওষুধ দিয়েছে তো কি? আমার নিজের স্বামীর প্রতি একটা দায়িত্ব আছে না? একটা মেয়ের কাছে তার স্বামীই হলো জীবনের সবথেকে বড় সম্পদ। স্বামীর জন্য পারলে একটা মেয়ের নিজের জীবনও বিলিয়ে দেওয়া উচিৎ।”
অতীতের স্মৃতি থেকে বেরিয়ে এসে বর্তমান নিয়ে ভাবতে লাগল মুসকান। গহনার দোকানের মালিক সব গহনা পর্যবেক্ষণ করে বললেন,
“এই সব গহনা মিলিয়ে মোট ৫ লাখ টাকার মতো হবে।”
আশাহত হলো মুসকান। সে আরো একটু বেশি প্রত্যাশা করেছিল। তাই সে বলে ওঠে,
“দাম আর একটু বাড়ানো যায়না?”
“সরি ম্যাডাম। এই গহনার জন্য পাঁচ লাখ টাকার বেশি দেওয়া যাবে না।”
মুসকান আরিফের দিকে তাকালো। আরিফও তার দিকে তাকিয়ে। মুসকান আরিফের উদ্যেশ্যে বলল,
“চলুন আশেপাশের কিছু জুয়েলারী হাউজে গিয়ে দেখি৷ হয়তো সেখানে বেশি টাকা…”
মুসকানের কথা শেষ না হতেই আরিফ বলে উঠল,
“তার কোন প্রয়োজন নেই। উনি যা দিতে চাইছেন তাতেই রাজি হয়ে যাই।”
“কিন্তু..”
“গহনাগুলোর দাম এর থেকে বেশি হবে বলে আমার মনে হয়না। তাই উনি যা দিতে চাইছেন দিক।”
৫ লাখ টাকায় গহনাগুলো বিক্রি করে টাকাগুলো একটি ব্যাগে করে নিয়ে বাইরে এলো দুজনে। আরিফের দুশ্চিন্তা যেন বাড়লো। ৫ লাখ টাকা যোগাড় হলেও এখনো ১৫ লাখ টাকার প্রয়োজন। যা মোটেও কোন সহজ ব্যাপার নয়। আরিফের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মুখ দেখে মুসকান তার কাধে হাত রাখল। ভরসা যোগান দিতে বলল,
“চিন্তা করবেন না। আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। দেখবেন বাকি টাকার এরেঞ্জমেন্টও ঠিক হয়ে যাবে।”
আরিফ হালকা মাথা দুলিয়ে সায় জানালো।
★★★
একটা গোটা সপ্তাহ যেন চোখের দেখায় মিলিয়ে গেল। এরমধ্যে সবার জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। নকশির ভার্সিটি লাইফ শুরু হয়েছে। সে এখন নিয়মিত ভার্সিটিতে যায়। মুসকানও মেডিকেলে পড়াশোনা শুরু করে দিয়েছে। সবকিছু বাইরে থেকে ঠিকঠাক লাগলেও ভেতরে অবস্থা মোটেই স্বাভাবিক নয়।
সময় ফুরিয়ে আসছে। আরিফের হাতে আর মাত্র ২ দিন। তার মধ্যেই যেকোনভাবে হোক ২০ লাখ টাকা জোগাড় করতে হবে। কিন্তু সে সর্বসাকুল্যে ৮ লাখ টাকার মতো যোগাড় করেছে। চিন্তায় ইদানীং তাই তার রাতের ঘুম উড়ে গেছে। যে আরিফ আগে কখনো সিগারেট ছুঁয়েও দেখেনি সে এখন প্রতিদিন রাতে অনেক সময় ধরে স্মোক করে। এসব নজর এড়ায় না মুসকানের। তার ভীষণ খারাপ লাগে এমন পরিস্থিতি দেখে। কিন্তু সেই বা কি করবে? পরিস্থিতি যে কারো হাতেই থাকে না। কেউ চাইলেই পরিস্থিতিকে নিজের ইচ্ছামতো নিয়ন্ত্রণও করতে পারে না।
আজ রাতে আরিফ যখন রুহিকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে স্মোক করতে বেলকনিতে যায় তখন মুসকান হঠাৎ করে বেলকনিতে চলে যায়। আরিফের হাত থেকে সিগারেট টেনে নিয়ে ছু’ড়ে ফেলে দেয়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“আপনি এমন করছেন কেন? নিজেকে একটু স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করুন না। এমন করলে তো আর সব ঠিক হয়ে যাবে না।”
আরিফ চিৎকার করে বলে ওঠে,
“আমি কি করতে পারি বলুন তো? পরিস্থিতি কি আমার নিয়ন্ত্রণে আছে যে আমি কিছু করব? আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। আপনি ভাবতে পারছেন মুসকান আর মাত্র দুদিন। এই দুদিন পরেই আমরা সবকিছু হারাতে চলেছি। না জানি কোন ভয়ানক বিপদ ঘনিয়ে আসছে আমাদের দিকে।”
মুসকান বিষন্ন গলায় বলল,
“জানি সময়টা সহজ নয়। কিন্তু এখনই তো এত ভেঙে পড়লে চলবে না আরিফ। আমরা ঠিকই কোন না কোন রাস্তা বের করে নেব। আপনি শুধু নিজেকে একটু শক্ত করুন।”
★★★
পরের দিন, বসার ঘরে বসে আতিকা চৌধুরীর সাথে আড্ডায় মেতে ছিল মুসকান ও নকশি। কথায় কথায় আতিকা চৌধুরী নিজের জীবনের অনেক ঘটনাও বললেন। তিনি জানালেন, একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু ছোট থেকেই দারুণ মেধা ছিল তার। কলেজ পর্যন্ত পড়াশোনাও করেছেন বিয়ের আগে। তারপর কলেজে উঠেই তিনি নজরে পড়ে যান আরিফের বাবার। আরিফের বাবা মানে আতিকা চৌধুরীর স্বামী আকরাম চৌধুরী আতিকা চৌধুরীর পিছু পিছু ঘুরতে থাকেন। তাকে প্রেমপত্রও দেন। এভাবেই একসময় দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারপর একদিন আকরামের বাড়িতে সবকিছু জানাজানি হলে আকরামের বাবা তাকে দেখতে আসেন। এক দেখাতেই তাকে পছন্দ করে বাড়ির বউ করে নিয়ে যান তিনি। আতিকা চৌধুরীর শ্বশুর ভীষণ ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি চাইতেন আতিকা চৌধুরী জীবনে সফল হোক। তাই তিনি বিয়ের পরেও পরিবারের সকলের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজের বৌমার পড়াশোনা চালিয়ে যান।
তবে আতিকা চৌধুরীর কপাল এতটাও ভালো ছিল না। শ্বশুর ভালো মানুষ হলেও শাশুড়ী এবং স্বামীর সাথে তার খারাপ সম্পর্ক হচ্ছিল। বিয়ের পর যেন তার চিরচেনা প্রেমিক আকরাম চৌধুরী বদলে যান। মায়ের প্ররোচনায় হোক বা নিজের বুদ্ধিতে আতিকা চৌধুরীর পড়াশোনা বন্ধ করতে তিনি বদ্ধপরিকর হয়ে ওঠেন। এই নিয়ে অনেক অশান্তিও হয়। তারমধ্যে আরিফের বড়বোন সুহানির জন্ম হয়। বছর দুয়েক বাদে আরিফও জন্ম নেয়। তবু আতিকা চৌধুরী পড়াশোনা চালিয়ে যান। শ্বশুরের থেকে পুরোদস্তুর সমর্থনও পান। কিন্তু এত কিছুর পর যখন তিনি কলেজের টিচারের চাকরি পান এবং চাকরিতে জয়েন করেন তখনই তার জীবনে কাল নেমে আসে।
আকরাম চৌধুরী গো ধরে বসেন আতিকাকে কিছুতেই চাকরি করতে দেবেন না। আতিকা চৌধুরীও নিজের সিদ্ধান্তে দৃঢ় ছিলেন। এখান থেকে মূলত ভাঙনের সূত্রপাত হয়।
আকরাম চৌধুরী আতিকার উপর অকথ্য অত্যাচার করতে থাকেন। এসব দেখে তার শ্বশুর ভীষণ রাগান্বিত হন এবং নিজের ছেলেকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এটা যেন আকরামকে আরো বেশি রাগিয়ে দেয়।
কিছুদিন পরেই একটি মেয়েকে নিয়ে বাড়ির চৌকাঠে এসে দাঁড়ান আকরাম চৌধুরী। নির্লজ্জের মতো নিজের বাবার সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন তিনি ঐ মেয়েকেই বিয়ে করতে চান। আতিকা চৌধুরীর পায়ের তলার মাটি যেন সরে যায়। সেদিন আকরাম চৌধুরী তাকেও ভীষণ অপমান করে। এমনকি একপর্যায়ে মুখে মুখে তিন তালাক দিয়ে দেয়। ব্যস,এতটুকুই যথেষ্ট ছিল। আতিকা চৌধুরীর মতো প্রবল আত্মসম্মানী এক নারীর পক্ষে আর থাকা সম্ভব ছিল না সেখানে। এতদিন তাও সন্তানদের মুখ চেয়ে ছিলেন তবে এখন সব মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। তাই স্বামীর সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে তিনি নিজের দুই ছেলে মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়িতে এসে ওঠেন। বাপের বাড়িতে এসে নানা জনের নানা কথায় বিরক্ত হন তিনি। হতে পারেন তিনি তালাকপ্রাপ্ত কিন্তু এতে তো তার কোন অপরাধ নেই। তাহলে তিনি এত কথা মুখ বুজে মেনে নেওয়ারও পক্ষপাতী ছিলেন না।
বাপের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে একটি ভাড়া বাসায় এসে ওঠেন। নিজের চাকরি সামলে সন্তান দুটোকে মানুষ করা কষ্টসাধ্য হলেও তিনি চেষ্টা চালিয়ে যান। নিজের বাপের বাড়ির পাশের বাড়ির এক দরিদ্র মেয়েকেও আসার সময় নিজের সাথে নিয়ে আসেন সন্তানদের সামলানোর জন্য।
এভাবে তার দিনগুলো কে’টে যায়। অতঃপর একদিন আতিকা চৌধুরীর শ্বশুর তাকে ফোন করে দেখা করতে বলেন। স্বামীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হলেও শ্বশুরের ডাক ফেরাতে পারেন না তিনি। তাই তো তার এক ডাকেই ছুটে যান। গিয়ে যা দেখেন এবং শোনেন তা তাকে মর্মাহত করে।
তার শ্বশুর মশাই এখন সম্পূর্ণ শয্যাশায়ী হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। শ্বশুরের পাশে বসে থাকা নিজের শাশুড়ির দিকে তাকাতে তার বুক যেন আরো কেপে ওঠে। মহিলার নাদুসনুদুস শরীর যেন শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।
আতিকা চৌধুরী তার শাশুড়ীর থেকে জানতে পারেন আকরামের নতুন স্ত্রী নাকি এই বাড়িতে বউ হয়ে আসার পর থেকে তাদের দুজনের উপর অত্যা’চার করেন। তাদের ঘরের এককোণে ফেলে রেখেছে। ঠিকমতো খেতেও দেয়না। সব শুনে তার বেশ খারাপ লাগে। সাথে ক্রোধও হয়। আতিকা চৌধুরীর শাশুড়ী তার কাছে বারবার হাতজোড় করে ক্ষমাও চেয়ে নেন। আতিকা চৌধুরী তেমন প্রতিক্রিয়া দেখান না। এমনিতেও তিনি কারো প্রতি মনে রাগ দুঃখ পুষে রাখেন নি।
আতিকা চৌধুরীর শ্বশুর তাকে কাছে ডেকে জানান, তার সব সম্পত্তি এখন আকরামের। কিন্তু শহরের উপকন্ঠে তিনি যেই বাড়িটা তৈরি করেছিলেন সেটা এখনো তার নামেই আছে। তিনি সেই বাড়ি আতিকা চৌধুরীকে দিতে চান। কিন্তু আতিকা চৌধুরী আপত্তি জানান। তখন তিনি আতিকা চৌধুরীর সামনে হাতজোড় করে অনুরোধ করে বলেন, তার জন্য নাহোক অন্তত তার নাতি-নাতনিদের জন্য হলেও যেন আতিকা চৌধুরী আপত্তি না জানান। তিনি এও বলেন এটাই মৃত্যুর আগে তার শেষ ইচ্ছা। এমন কথা শুনে ভাবনায় পড়ে গেলেন আতিকা চৌধুরী। তিনি আর রাজি না হয়ে থাকতে পারলেন না।
তারপরই নাকি শ্বশুরের দেওয়া এই বাড়িতে এসে ওঠেন তিনি। তিনি চেয়েছিলেন তার শ্বশুর শাশুড়ীকেও এখানে নিয়ে আসতে কিন্তু তার শ্বশুরের আর সেই সৌভাগ্য হয়নি। কারণ কিছুদিনের মধ্যেই তিনি মারা যান। তবে তিনি নিজের শাশুড়ীকে এখানে এনেছিলেন। তার শেষ দিনগুলো এখানেই চলে যায়।
অতীতের কথাগুলো শেষ করে চোখের জল লেপন করেন আতিকা চৌধুরী। নকশি, মুসকানের মুখও বিষন্নতায় ছেয়ে গেছে। যদিও নিজের মায়ের থেকে খালার ব্যাপারে টুকটাক কথা শুনেছিল মুসকান কিন্তু আজ খালার মুখে সব ঘটনার বিস্তারিত জেনে তার মন ভারাক্রান্ত হলো। আর মুসকানের জন্য তো এসব কিছু আরো বেশি কষ্টদায়ক। কারণ সে তো আর জানত না তার জীবনের এই মানুষটার জীবনে এত ভয়ানক একটা অতীত আছে। সে শুধু জানত উনি ডিভোর্সি তবে তার পেছনে যে এত গল্প সেটা জানা ছিল না।
এখন তো মুসকানের কাছে আতিকা চৌধুরী একজন আদর্শ হয়ে ওঠেন। যদিও আগে থেকেই তাকে সম্মান করতো তবে আজ সেই সম্মান যেন অনেকটাই বেড়ে গেল।
সব কথা শেষে আতিকা চৌধুরী বলেন,
“কাল আমার আরিফের জন্মদিন। সুহানি বেঁচে থাকতে বেশ ধুমধামের সাথে এই দিন পালন হতো। কিন্তু এবার যা পরিস্থিতি..সুহানির মৃত্যুর ধকল তো আরিফ এখনো কা’টিয়ে উঠতে পারে নি। নিজের বোন বলে কথা। ওরা পিঠাপিঠি হওয়ায় একে অপরের প্রতি মায়াও অনেক ছিল।”
নকশি হঠাৎ করে বলে ওঠে,
“এবার নাহয় আমরা প্রতিবারের মতোই আরিফ ভাইয়ার জন্মদিন ধুমধাম করে পালন করব। কি বলো ভাবি?”
মুসকান জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে। আতিকা চৌধুরী বা নকশি কেউ এখনো জানে না কাল তাদের জীবনে কি বিপদ ঘনিয়ে আসতে চলেছে। তাই হয়তো তারা কিছু ভাবছে না। কিন্তু মুসকানের কাছে তো কিছু অজানা নয়। আরিফের অস্থির অবস্থা তাকে যে ব্যকুল করে তুলেছে। সে নিজেও ভবিষ্যতের কথা ভেবে শঙ্কিত। কিন্তু আরিফ নিজেই তাকে বারণ করেছে বাড়ির কাউকে এই ব্যাপারে জানাতে। কারণ সে চায়নি এই নিয়ে ভেবে তারা দুশ্চিন্তা করুক। তাই মুসকানকে বলেছে সবার সাথে স্বাভাবিক আচরণ করতে।
এসব কারণেই মনে নানা উৎকন্ঠা থাকা স্বত্বেও মুসকান নকশির কথায় সম্মতি জানিয়ে বলে,
“হ্যাঁ, তা করাই যায়।”
আতিকা চৌধুরী বলেন,
“ও জন্মদিনে আমার হাতের পায়েস খেতে অনেক পছন্দ করে। আমি নাহয় ওর জন্য পায়েস বানাবো।”
নকশি বলে ওঠে,
“তবে ভাইয়ার থেকে কিন্তু সব লুকিয়ে রাখতে হবে। মানে ভাইয়াকে বার্থডে সারপ্রাইজ দিয়ে চমকে দিতে হবে।”
আতিকা চৌধুরী সম্মতি জানিয়ে বলেন,
“এটা ভালো হবে। সুহানিও প্রতি বছর এমন ভাবেই আরিফকে সারপ্রাইজ দিতো।”
“তাহলে সেই কথাই ফাইনাল। ভাবি সবকিছু একদম সারপ্রাইজ হবে কিন্তু।”
নকশির কথার বিপরীতে জোরপূর্বক সামান্য হাসে মুসকান। হাসতেও কুন্ঠাবোধ হচ্ছিল তার। যতবারই মনে পড়ছিল কালকে মাসের শেষ দিন, আরিফের বিধ্বস্ত চেহারা ততবারই তার হাসিই যেন তাকে ভৎসনা করছিল। মুসকান দু চোখ বুজে নেয়। হালকা নিঃশ্বাস ফেলে মনে মনে বলে,
“জানি না কাল আদতে কি হতে চলেছে। তবে আমি আশা করব ভালো কিছুই যেন হয়। কিন্তু মন যে বারবার বলছে কালকের দিনটা সত্যিকার অর্থেই আমাদের জন্য সারপ্রাইজিং হতে চলেছে। তবে কোন ভালো কিছু নয়৷ খুব ভয়ানক কিছু সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে। যার জন্য আমরা কেউই প্রস্তুত নই।”
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨