#দুই_হৃদয়ের_সন্ধি
#পর্বঃ২৯
#লেখিকাঃদিশা_মনি
নকশিকে নিয়ে নিজের বাড়িতে আসল মেহরাব। নকশি এখানে এসে মোটেই খুশি হলো না। তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে মনের অবস্থা। মেহরাব নকশিকে উদ্দ্যেশ্য করে বলল,
“দেখে নাও। আজ থেকে এটাই তোমার বন্দিশালা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এখান থেকে তোমার মুক্তি নেই।”
নকশি দূর্দান্ত আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলল,
‘আমার চ্যালঞ্জের কথা ভুলে যাবেন না। আমি যখন বলেছি ৬ মাসের মধ্যে আপনার থেকে মুক্তি পাবো তখন পাবোই।’
মেহরাব তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে৷ এরমধ্যে হঠাৎ করে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আছে একটি মেয়ে। নকশি মেয়েটর দিকে তাকালো। তার সমবয়সী হবে এই মেয়েটা। কিন্তু সে বুঝতে পারছে না যে এই মেয়েটা কে। মেয়েটি এগিয়ে এসে মেহরাবের দিকে হতবাকের মতো তাকিয়ে থাকল। অতঃপর নকশিকে পরখ করে নিয়ে শুধাল,
“এই মেয়েটা কে ভাইয়া?”
মেহরাব জবাব দিয়ে বলল,
“ও হলো নকশি। আমি ওকে বিয়ে করেছি। তার মানে আজ থেকে ও তোর ভাবি মোনালিসা।”
মোনালিসা নকশির দিকে এবার আরো বিস্ময়ের সাথে তাকালো। কন্ঠে বিস্ময় ফুটিয়ে বলল,
“তুমি হঠাৎ এভাবে কিভাবে বিয়ে করে নিলে ভাইয়া? আর এই মেয়েটা কে, কোন স্ট্যাটাস থেকে বিলং করে বলো তো? মম কি এই বিয়েটা মেনে নেবে?”
মেহরাব কন্ঠে কাঠিন্য এনে বলল,
“তোর মমের মানা না মানায় আমার কিছু যায় আসে না। আমি ওকে বিয়ে করেছি, ও আমার বউ। আর কিছু জানার আছে তোর?”
মোনালিসার খারাপ লাগল। থমথমে মুখ করে নিয়ে বলল,
“তুমি মমকে কেন সব সময় এভাবে বলো ভাইয়া? আমার খুব খারাপ লাগে।”
“এসব কথা বাদ দে তো। যা নকশিকে নিয়ে আমার রুমে যা।”
নকশি সাথে সাথেই প্রতিবাদ জানিয়ে বলল,
“আমি মোটেই আপনার রুমে থাকব না।”
“তুমি আমার বউ, তাই তোমাকে আমার রুমেই থাকতে হবে।”
“আপনি কি ভেবেছেন আমি আপনার সব কথা মেনে নেব নাকি?”
“চুপ। একটা কথা হবে না। আমার কথাই শেষ কথা। মোনালিসা ওকে নিয়ে যা।”
মোনালিসা গম্ভীর মুখে নকশির সামনে এসে বলল,
“আসুন ভাবি।”
নকশি আর কোন কথা না বাড়িয়ে মোনালিসার সাথে যেতে লাগল। সিঁড়ি দিয়ে কয়েক পা এগিয়ে যেতেই মোনালিসা হঠাৎ করে থেমে গিয়ে নকশিকে বলল,
“একটা কথা শুনুন ভাবি, ভাইয়ার সাথে এমন ভাবে কথা বলবেন না। মম পর্যন্ত তাকে সমীহ করে চলে। সেখানে আপনি নতুন বউ হয়ে এসে…”
“সবাইকে এক পাল্লায় মাখবেন না। আমি মুখ বুজে সব মেনে নেওয়ার মতো মেয়ে নই। ইজ দ্যাট ক্লিয়ার?”
“ইউ আর সো রুড। জানি না ভাইয়া কি দেখে আপনাকে বিয়ে করল। আপনি সুন্দর তো আছেনই। কিন্তু আপনার থেকে কত সুন্দরী মেয়ে ভাইয়ার পিছনে ঘরে প্রতিদিন।”
“তো আমি কি করব? আপনার ভাইয়াকে বলুন যত খুশি সুন্দরী মেয়েদের বিয়ে করতে। এমনিতেও উনি আমার সাথে কখনো স্বাভাবিক সংসার করতে পারবেন না। ওনাকে আমি হেইট করি। এই বিয়েও আমি মানি না। উনি জোর করে বিয়ে করেছেন আমায়।”
মোনালিসার কাছে ব্যাপারটা বেশ ইন্টারেস্টিং লাগতে লাগল। সে কিছু একটা ভেবে বলল,
“আপনার সাথে ভাইয়ার বিয়েটা কিভাবে হলো?”
“সেটা আপনার ভাইয়াকে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন। আমি অনেক টায়ার্ড। এত খোশগল্প করার টাইম নেই।”
মোনালিসার মুখ ছোট হয়ে গেল। সে আর কোন কথা না বলে নকশিকে নিয়ে চলল মেহরাবের রুমের দিকে।
★★★
মুসকান চুপচাপ রুহিকে কোলে নিয়ে রুমে বসে আছে। রুহি একটু আগেই ঘুমিয়েছে। হঠাৎ করেই আরিফ রুমে আসল। মুসকানের দিয়ে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“কেন করলেন আপনি এমনটা?”
“কি করলাম আমি?”
“নকশিকে এভাবে বিপদের মুখে ঠেলে দিলেন আপনি! এতটা স্বার্থপর কি ক্রে হলেন মুসকান?”
মুসকান শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো। রুহিকে শুইয়ে দিয়ে বলল,
“হ্যাঁ, আপনি আমাকেই ব্লেইম করুন। এছাড়া আর কি পারবেন আপনি বলুন?”
“আমি আপনাকে ব্লেইম করছি না! আমি জাস্ট..”
“থাক। আপনাকে আর কিছু বলতে হবে না। আসলে আমার ভাগ্যটাই খারাপ। হয়তো আমার ভাগ্যে সুখ নেই।”
“এমন ভাববেন না মুসকান।”
“কেন ভাবব না? আপনি নিজেই ভেবে দেখুন। বিয়ের পর একটা মেয়ে যেমন স্বাভাবিক জীবন পায় আমি কি তেমন পেয়েছি? না পাইনি। আপনি আমায় সেই সুযোগ দেননি। স্বামী-স্ত্রীর স্বাভাবিক সম্পর্ক হয়নি আমাদের মাঝে। না হয়েছে দেহের মিল আর না হৃদয়ের। শুধু একটার পর একটা ঝামেলাই হয়ে গেছে। মানুষের লাইফ এমন হতে পারে না। কেউ এমন লাইফ ডিজার্ভ করে না।”
“তো কি চান আপনি?”
“একটা স্বাভাবিক সম্পর্ক।”
আরিফ মুসকানের দিকে এগিয়ে এলো। মুসকানের গালে মৃদু স্পর্শ করল। অধর ছুইয়ে দিলো তার কপালে। মুসকানের পুরো শরীর কেপে উঠল। আরিফ মুসকানের অধরে অধর ছুয়ে দিল। ধীরে ধীরে আরো ঘনিষ্ঠ হতে লাগল। নিজের শার্ট খুলতে যাবে এমন সময় মুসকান বলল,
“আমি..আমি এভাবে কিছু চাইনি। আমি চেয়েছি যেদিন আমাদের হৃদয়ের সন্ধি হবে সেদিন…”
“আমি আর ওয়েট করতে পারব না মুসকান। আমি আপনাকে অনেক বেশি ফিল করছি। আপনার থেকে দূরে থাকা পসিবল নয়। প্লিজ আমাকে আটকাবেন না।”
আরিফের কন্ঠে স্পষ্ট অনুরোধ। মুসকান আর বাধা দিলো না। আরিফ মুসকানকে গভীর ভাবে স্পর্শ করতে লাগল। ধীরে ধীরে তারা একে অপরের মধ্যে হারিয়ে যেতে লাগল। এতদিনে যেন তাদের সম্পর্ক সত্যিকার অর্থে পূর্ণতা অর্জন করল।
★★★
নকশি মেহরাবের রুমে বসে হাসফাস করছে। একদমই ভালো লাগছে না তার। বিরক্তি নিয়ে সে বলল,
“জানি না আমার জীবনে হঠাৎ এ কোন ঝড় এলো। এই বাড়ি থেকে বের হতে পারলে বাঁচি।”
“সেটা তো আর হবে না মিসেস নকশি।”
মেহরাবের কন্ঠ শুনে তার দিকে তাকিয়ে নকশি শক্ত কন্ঠে বলল,
“কি হয় আর না হয় তা সামনে দেখা যাবে। আপনি আমার দেওয়া চ্যালেঞ্জটা ভুলবেন না।”
“বারবার মনে করাতে হবে না। আমার স্মৃতিশক্তি এতোটোও কাচা নয়। তো যাইহোক এখন শুরু করা যাক?”
“শুরু করা যাক মানে কি হ্যাঁ? অসভ্য লোক কোথাকার। আমি এই বিয়েই মানি না আর বাসর করবো ভেবেছেন আপনি। কক্ষনো না। আপনার মতো লোককে আমি আমার দেহ মন কিচ্ছু দেব না।”
মেহরাব ভাব নিয়ে বলল,
“আমি সেই টাইপের পুরুষ নই যে মেয়েদের উপর জোর করে তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ হবো। তুমি যতদিন নিজে থেকে চাইবে না ততদিন আমি তোমার কাছে যাব না। বাট, আমি শিওর একদিন তুমি আমার কাছে নিজে থেকে আসতে চাইবে। সেদিন তোমাকে এসব কিছুর জবাব দেব।”
“ঐ স্বপ্নই দেখুন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে। আপনার এই স্বপ্ন কোনদিন পূরণ হবার নয়। আমি মরে যাব তবুও আপনাকে চাইবো না।”
“সেটা তো সময়ই বলে দেবে।”
বলেই মেহরাব নিজের বিছানায় শুয়ে পড়লো। সাথে সাথেই নকশি উঠে গিয়ে ডিভানে শুয়ে পড়লো। মেহরাব কিছু বলল না। নিজের মতো শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨
#দুই_হৃদয়ের_সন্ধি
#পর্বঃ৩০
#লেখিকাঃদিশা_মনি
নকশি নিজের জামা কাপড় গোছাচ্ছিল। এমন সময় রুমে আসল মেহরাব। নকশি মেহরাবকে দেখে বিরক্ত হলো খুব। তার দিকে মনোযোগ না দিয়ে নিজের কাজ করতে লাগল। মেহরাব হঠাৎ করে নকশির হাত ধরে নিলো। নকশি রাগান্বিত স্বরে বলল,
“আমার হাত ধরেছেন কেন?”
“আমার সাথে নিচে চলুন।”
“কেন যাব আমি?”
“আমি বলেছি তাই।”
বলেই নকশিকে জোরপূর্বক নিয়ে যেতে লাগল। নকশি কিছুই বুঝে উঠতে পারল না যে সকাল সকাল এ আবার কি কাহিনি। সে শুধু বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে রইল। আর মেহরাবের সাথে যেতে লাগল। মেহরাব নকশিকে তাদের ড্রয়িং রুমে নিয়ে আসল। অতঃপর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একজন নারীকে বলল,
“এই নিন, আপনি যাকে দেখতে চেয়েছিলেন সে এসে গেছে।”
মালিনী বেগম, মেহরাবের মা। বেশ স্বার্থপর আর লোভী মহিলা। সাথে বেশ অহংকারীও। নকশিকে আপাদমস্তক ভালো করে পরখ করে নিয়ে তিনি বললেন,
“রিয়্যালি তুমি এই মেয়েটাকে বিয়ে করেছ? কি এমন স্পেশাল পেয়েছ এর মাঝে। এর থেকে কত সুন্দরী মেয়ে..”
“আপনার এসব বা*জে কথা আমি শুনতে চাই নি৷ আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার বউকে এমন কথা বললে আমি মোটেই সহ্য করব না। ওর সাথে কিন্তু আমারও সম্মান জড়িয়ে আছে।”
মেহরাবের মুখে এমন কথা শুনে নকশি যারপরনাই অবাক হলো। এমনটা মোটেও আশা করে নি সে। মেহরাব কিনা তার হয়ে প্রতিবাদ করছে৷ একটু ভালো লাগা কাজ করছিল তার মনে। তবে মেহরাবের করা ব্যবহার গুলো মনে করতেই সব ভালো লাগা মিলিয়ে গেল। নকশি শক্ত মুখ করে দাঁড়িয়ে রইল। তার এমনিতেও কারো সাপোর্ট এর প্রয়োজন নেই। সে এমন অবলা মেয়েদের মধ্যে পড়ে না যাদের হয়ে অন্যকে কথা বলতে হয়। নিজের হয়ে সে নিজেই বলতে পারে৷ তাই নকশি ঠিক করে নিল এরপর এই মালিনী বেগম কোন অপমান জনক কথা বললে সে যোগ্য জবাব দেবে।
মালিনী বেগম নকশিকে খোচা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতই ছিলেন৷ তাই তো তিনি বললেন,
“এই মেয়েকে দেখে তো মিডিল ক্লাস ঘরের মনে হচ্ছে। কিরকম সাধারণ সাজসজ্জা। প্যারিস থেকে ফিরে এসে যে এমন একটা মেয়েকে নিজের একমাত্র ছেলের বউ হিসেবে দেখব ভাবিনি।”
নকশি দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলল,
“হ্যাঁ, আমি মিডল ক্লাস ফ্যামিলি থেকে বিলং করি। আমার সাজসজ্জা এমনই। আপনাদের মতো মুখে এত রংচং মেখে ঘুরি না।”
“তোমার এত বড় সাহস তুমি আমাকে অপমান করো? তোমাকে তো আমি…”
বলে যেই না নকশির গায়ে হাত তুলতে যাবে তার আগেই মেহরাব তার মায়ের হাত ধরে নেয়। চোখ রাঙিয়ে বলে,
“এই ভুল আর দ্বিতীয় বার করবেন না আশা করি। ও আমার বউ। ওকে যখন আমি বিয়ে করেছি তখন ওর সম্মান রক্ষার দায়িত্বও আমার। এখন ও আমারই অংশ। তাই আমার সামনে এই স্পর্ধা দেখাবেন না। নাহলে এতদিন জন্মদাত্রী হিসেবে আপনাকে যেটুকু সম্মান দিয়েছি সেটুকুও আর পাবেন না।”
“মেহরাব, তুমি এই বাইরের মেয়ের জন্য আমার সাথে এমন করছ?”
“ও বাইরের কোন মেয়ে নয়। ও আমার বউ। কান খুলে শুনে রাখুন।”
এরমধ্যে মোনালিসা সেখানে হাজির হয়। এসব অশান্তি আচ করতে পেরে সে বলে,
“মম, তুমি আমার সাথে আসো তো। প্যারিসে গিয়ে কিভাবে দিনগুলো কা’টালে আমাকে একটু বলো।”
মেহরাব তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
“কিভাবে আর থাকবেন। নিশ্চয়ই ওখানে গিয়েও নতুন কোন বয়ফ্রেন্ড জুটিয়েছিলেন।”
মালিনী বেগম বেশ লজ্জায় পড়ে যান। তার নিজের চরিত্র সম্পর্কে তিনি নিজেও বেশ ভালো জানেন। তিনি মোটেও ধোয়া তুলসীপাতা নন। তবুও এভাবে একটা বাইরের মেয়ের সামনে যখন তার ছেলে তাকে এভাবে বলছে তখন খারাপ লাগারই কথা। তাই মালিনী বেগম বেশ কড়া গলায় বললেন,
“আমার সম্পর্কে এমন কথা বলবে না একদম। তোমাকে কিছু বলি না জন্য..”
“বলার মতো মুখ কি আপনার আছে?”
মেহরাবের এই একটা কথাতেই চুপ করতে বাধ্য হন মালিনী বেগম।
★★★
মুসকান আজ বেশ তাড়াতাড়ি মেডিকেল থেকে বাড়িতে ফিরল৷ আজ কেন জানি তার আরিফের সাথে বেশি বেশি সময় কা’টাতে ইচ্ছা করছে। মনে মনে নানা পরিকল্পনা করে নিলো সে। এরপর বাড়িতে আসতেই সে হতবাক হয়ে গেল। কূজন আজ অনেকদিন পর এসেছে। মুসকানকে দেখেই শুকনো মুখে এগিয়ে এলো। মুসকান সামান্য হেসে শুধায়,
“কেমন আছ কূজন ভাইয়া?”
“ভালো নেই।”
“কেন কি হয়েছে তোমার?”
কুজন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“আমার বিয়ে হয়ে গেছে মুসকান।”
মুসকান হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল কূজনের দিকে। সে ভাবতে পারছে না কিছুই। হঠাৎ কিভাবে বিয়েটা হলো? সে তো এই ব্যাপারে কিছু জানল না। মনে নানা রকম প্রশ্ন ঘুরছিল। তাই মুসকান জবাবের আশায় কূজনের দিকে তাকায়। কূজন কান্নামিশ্রিত গলায় বলে,
“আমাদের ভার্সিটির একটা মেয়ে আমায় ফা*সিয়ে বিয়ে করে নিয়েছে। জানিস, আজ ভার্সিটিতে কালচারার প্রোগ্রাম চলছিল। আর উর্মি নামের ঐ মেয়েটাও সেখানে উপস্থিত ছিল। উর্মি আগে থেকেই আমাকে পছন্দ করতো অনেকবার প্রপোজও করেছিল কিন্তু আমি ফিরিয়ে দিয়েছি। আজ হঠাৎ করেই ও আমাকে কিছু জরুরি কথা বলার জন্য নিরিবিলি যায়গায় ডাকে। অতঃপর হঠাৎ করে আমায় নিজের কাছে টেনে নিয়ে জোরপূর্বক আমার ঠোটে…..এমন সময় আমাদের ভার্সিটিরই কিছু ছেলে মেয়ে সেখানে হাজির হয়। সেই সময় উর্মি আমাকেই দোষী বানিয়ে নিজে ভিকটিম সেজে বসে থাকে। ব্যাপারটা অনেক দূর আগায়। কিছু ছেলে আমার গায়ে হাতও তোলে। আরিফ,চয়ন, আবির মানে আমার বন্ধুরাও আমাকে বিশ্বাস করছিল না। শেষ পর্যন্ত ভার্সিটির উপাচার্যের কানে কথাগুলো যায়। তিনি আমাদের দুজনের পরিবারের লোককেই ডেকে পাঠান। আমি সবার সামনে নিজেকে নির্দোষ দাবি করি কিন্তু ঐ উর্মি ন্যাকাকান্না করে যে নাটক করছিল সেটাই সবাই বিশ্বাস করে নেয়। আর আমার বাবা-মাকেও বিভিন্ন অসম্মানজনক কথা শুনতে হয়। ঐ উর্মির মা-বাবা পুলিশ কেইস করার হুমকি দেয়। আম্মু সেই সময় ওদের পা পর্যন্ত ধরতে গেছিল..”
এটুকু বলেই কান্নায় ভেঙে পড়তে লাগল কূজন। মুসকানের ভীষণ খারাপ লাগতে লাগল। কূজন আরো বলল, এরপরই নাকি ঐ উর্মি নামের মেয়েটা শর্ত দেয় যে, যদি কূজন তাকে বিয়ে করে কেবল মাত্র তাহলেই বিষয়টা মিটমাট হবে নাহলে কোর্ট অব্দি যাবে। তখন কূজনের বাবা নাকি ভয় পেয়ে যান। তাই রাজি হয়ে যান সেই শর্তে। কূজন এই বিয়ে করতে চায় নি। তখন তার মা-বাবা আ**ত্ম***হ ত্যা করার হু*মকি দিয়ে তাকে রাজি করায়।
সব কথা শুনে মুসকান অনেক বেশি হতবাক হয়। তার কি বলা উচিৎ সেটাই বুঝতে পারে না। কূজন হঠাৎ করে মুসকানের হাত ধরে নিয়ে বলে,
“আমি জানি এই পৃথিবীর আর কেউ আমাকে বিশ্বাস না করলেও তুই করবি। জানিস, এই সময় না আমার একটা মেন্টাল সাপোর্ট প্রয়োজন। তুই বল না মুসকান। তুই কি বিশ্বাস করিস যে আমি এমন একটা কাজ করতে পারি?”
মুসকান কিছু বলতে যাবে কি তার আগেই আরিফ চলে আসে। কূজনকে দেখে রেগে তেড়ে আসে। ক্ষুব্ধ স্বরে বলে,
“এই চ*রিত্রহীন ল*ম্পটটা কি করছে এখানে? একে বের করে দাও এখান থেকে।”
বলে যেই না কূজনের কাছে আসতে যাবে সেই সময়ই মুসকান ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে বলে উঠল,
“কূজন ভাইয়াকে কিছু বলবেন না। আমার মনে হয় উনি নির্দোষ।”
“এটা তুমি কি বলছ মুসকান? তুমি জানো না ও কি করেছে।”
“আমি সব জানি। ওকে ফাসানো হয়েছে।”
“এ নিশ্চয়ই কোন মিথ্যা গল্প বলেছে। আমরা সবাই নিজ চোখে দেখেছি..”
“চোখের দেখা সবসময় সত্যি হয়না।”
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨