#দুই_হৃদয়ের_সন্ধি
#পর্বঃ৩৩
#লেখিকাঃদিশা_মনি
নকশি এই কদিন মেহরাবকে খুব মিস করতে লাগল। আগে যেই লোকটাকে পছন্দ করত না এখন তার বিরহই প্রচণ্ড রকম যন্ত্রণা দিচ্ছে মনে। নকশি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। অতঃপর চোখ দুটো বন্ধ করল কিন্তু কি আশ্চর্য তার চোখে ভেসে উঠল মেহরাবের চেহারা। নকশি নিজেও বুঝতে পারল না এটা কি হলো তার সাথে। তবে সে কি ঐ মেহরাব মাফিয়ার প্রেমে পড়ে গেল? ভাবতেই নকশির মন কেমন জানি করতে লাগল। সত্যিটা মন মানতেই যেন চায় না। সামান্য পরিমাণে শ্বাস নিয়ে সে বলে উঠল,
“নাহ, আমি আর এসব নিয়ে ভাববো না৷ যতোই ওনাকে ভোলার চেষ্টা করি আরো বেশি করে মনে পড়ে। এমন চলতে থাকলে তো আমি ওনার প্রেমেই…”
কথা বলতে গিয়ে থেমে যায় নকশি৷ তার মুখে লাজুক হাসি দেখা দেয়। নকশি এবার স্বগোতক্তি করতে বাধ্য হয় যে সে মেহরাবের প্রেমে পড়ে গেছে।
★★★
আরিফ ও মুসকান উর্মির জানাজা শেষে বাড়ি ফিরল। দুজনই কূজনকে অনেক শান্তনা দিয়েছে নিজেকে ঠিক রাখার। তবে তারা বুঝতে পারছে কূজনের মনের অবস্থা এখন খুব একটা ভালো না। অবশ্য ভালো না হওয়াই স্বাভাবিক। যা সব ঘটে গেল তাতে যে কারোরই মন খারাপ হবে। কূজন এখন কি ঝক্কির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে যে তার মধ্যে কি চলছে তা বোঝাই যায়। তবুও মুসকান বাড়ি ফিরে কূজনের জন্য হা হুতাশ করতে লাগল। এরমধ্যে হঠাৎ সে নিজেই মাথা ঘুড়ে পড়ে গেল। আরিফ চিন্তায় পড়ে গেল। সাথে সাথেই মুসকানকে নিয়ে রুমে গেল। ফোন করল ডাক্তারকে। ডাক্তার এসে চেক আপ করে বললেন,
“একটা খুশির খবর আছে। আপনি বাবা হতে চলেছেন।”
“কি খবর?”
“আপনি বাবা হতে চলেছেন।”
আরিফের মনে যেন খুশির হাওয়া বয়ে যায়। এত খুশির খবর যে পাবে সেটা কল্পনাও করে নি সে। মুসকানও ততক্ষনে জ্ঞান ফিরে আড়মোড়া ভেঙে উঠে পড়ে৷ আরিফ মুসকানকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“মুসকান আমাদের জীবনে নতুন অতিথির আগমন ঘটতে চলেছে। আমরা মা-বাবা হতে চলেছি ”
মুসকান কথাটা শুনে খুব একটা খুশি হতে পারে না। তবে আরিফের মুখ রাখতে মেকি হাসি হাসে। তবে মনে মনে বলে,
“আমি কিভাবে এখন বাচ্চা নিতে পারি? কেবল আমার মেডিকেলের প্রথম বর্ষ চলছে। এখন বাচ্চা নিলে তো আমার ক্যারিয়ার ঝুঁকিতে পড়বে। নাহ, আমার এমন কিছু করা যাবে না। আমার এত দিনের স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া। সেই স্বপ্নটাই আগে পূরণ করতে হবে। মা তো চাইলে পরেও হওয়া যাবে কিন্তু একবার বাচ্চার মা হয়ে গেলে পরে আর ডাক্তার হওয়ার সুযোগই পাব না। তাই আমি এখনই কোন বাচ্চা নিতে পারব না। পরে আরিফের সঙ্গে এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলতে হবে৷ নিজের ক্যারিয়ার বাঁচানোর জন্য এখন আমাকে এমন কিছু করতেই হবে।”
★★★
নকশি মোনালিসার সাথে বসে গল্প করছিল। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করার একপর্যায়ে নকশি মোনালিসাকে শুধায়,”আচ্ছা তোমার ভাইয়া এই পথে আসল কিভাবে?”
“ভাইয়া কিভাবে মাফিয়া হলো সেটা জানতে চাইছ তো?”
“হ্যাঁ আমি সেটাই জানতে চাইছি।”
“আসলে আমাদের দুজনের বাবা ছিলেন একজন কুখ্যাত সাধারণ ব্যবসায়ী। ভীষণ সৎ একজন মানুষ। তিনি একদম সাধারণ জীবন যাপন করতে পছন্দ করতেন। কিন্তু আমরা সেরকম ছিলাম না। আমি আর মম সবসময় আড়ম্বরপূর্ণ জীবন চাইতাম। আর ভাইয়া তো বাবার আদর্শে মানুষ হয়েছিক। ভাইয়া সবসময় বলতো বড় হয়ে অনেক বড় পুলিশ অফিসার হবেন। আর সেই সব প্রস্তুতিও নিচ্ছিল। ভাইয়া অনেক মেধাবী ছাত্র ছিল৷ পড়াশোনা কমপ্লিট করে পুলিশে জয়েন করার প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলেছিল কিন্তু এমন সময় আব্বু এক মাফিয়ার বিরুদ্ধে সাক্ষী দেওয়ায় সে তাকে মে*রে ফেল। তাও ভীষণ জ*ঘন্যভাবে মে*রে তার গো*স্ত কে*টে টুকরো টুকরো করে কু*কুরকে খাওয়ালো। কোন ছেলেরই বাবার এমন অবস্থা মেনে নেওয়া সম্ভব না। ভাইয়াও পারে নি। প্রতিশোধের নেশা ভেসে ওঠে তার মধ্যে। কিন্তু বললেই তো আর এমন বড় লোকের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানো যায়না। ভাইয়া আইনের সাহায্য নিতে চায় কিন্তু পুলিশ ঐ বড় মাফিয়ার ভয়ে কিছু করতে পারে নি। মাফিয়া টাকা দিয়ে সব ম্যানেজ করে নিয়ে মিথ্যা গল্প ফাদে। এই ঘটনাই ভাইয়ার জীবন বদলে দেয়। ভাইয়া মনে করে আইন, ন্যায়, সততা এসব ভুয়া এসব ফক্কিকার। তাই তো সে ন্যায় ভুলে প্রতিশোধের জন্য অন্যায়ের পথ বেছে নেয়। ঐ মাফিয়ার উপর প্রতিশোধ নিতে নিজেও অন্ধকার জগতে প্রবেশ করে। একসময় হয়ে ওঠে কুখ্যাত মাফিয়া। গড়ে তোলে নিজের সাম্রাজ্য এরপর ভাইয়া বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধও নেয়। কিন্তু তারপরও এই অন্ধকার জগত থেকে ফিরতে পারে নি?”
“কেন পারে নি?”
“এর জন্য সম্পূর্ণ দায়ী মম। ভাইয়া মাফিয়া হয়ে অনেক ধনী হয়ে গেছিল। মম তো বরাবরই উচ্চাকাঙ্খী ছিলেন। তাই ভাইয়া যখন মাফিয়া হয়ে এত ধনী হয়ে গেল তখন মন ভাইয়াকে নানারকম ভাবে বোঝাতে লাগল। এমনও বলল যে সে এখন এসব ছেড়ে দিলে আমাদের পরিবারের উপর বিশেষ করে আমার উপর বিপদ আসতে পারে। ভাইয়া আমাকে ভীষণ ভালোবাসেন তাই আমার বিপদের আশঙ্কা থেকে এই পথ আর ছাড়েন নি। ধীরে ধীরে এই অন্ধকার জগতের সাথে মানিয়েও নিলেন। একসময় মমের সব ধান্দাবাজি বুঝতে পারলেও তখন তার আর কিছুই করার ছিল না। কারণ ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। এখন ভাইয়া এই জগতে এমনভাবে আটকে গেছে যে চাইলেও বের হতে পারবে না।”
নকশি দৃঢ় ভাবে বলে ওঠে,
“আমি ওনাকে এই অন্ধকার জগত থেকে বের করবোই। একদম ওনাকে ওনার আগের জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে যাব। আর এটাই আমার চ্যালেঞ্জ।”
★★★
মুসকান বাচ্চা ন*ষ্ট করার কথা বলতেই আরিফের সর্বাঙ্গ জ্বলে ওঠে। পিতৃত্বের অনুভূতি উপলব্ধি করার আগেই যে এমন কিছু শুনতে হবে সেটা সে ভাবতেই পারে নি। আরিফ মুসকানের উপর গর্জে উঠে বলল,
“তুমি কিভাবে এমন কথা বললা? ”
“আমার কথা টা মন দিয়ে শুনুন আরিফ৷ আবেগ দিয়ে নয়, বিবেক দিয়ে ভাবুন। আমাদের দুজনের বয়স এখন বাচ্চা নেওয়ার জন্য যথেষ্ট কম। আমার ক্যারিয়ার পড়ে আছে। রুহিকে একা সামলাতেই আমি হিমশিম খাই সেখানে আরেকটা বাচ্চা হলে আমাদের জন্য সেটা বড় সমস্যা তৈরি করবে।”
“তাই বলে তুমি একটা বাচ্চাকে..”
“দেখুন এটা কোন বড় ব্যাপার না। অনেকেই এমন করে, এটা স্বাভাবিক। তাছাড়া আমরা তো চাইলে পরেও আবার বাচ্চা নিতে পারি।”
আরিফ রাগান্বিত হয়ে বলল,
“তোমার মন বলে কিছু নেই। মেয়েরা নাকি মা হওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকে কত মেয়ে সন্তান জন্ম দিতে পারে না জন্য প্রতিদিন আল্লাহর দরবারে মাথা ঠুকে কাঁদে আর তুমি….থাক আমি আর কিছু বলবো না। আমার একটাই কথা। আমি এই বাচ্চা চাই। তুমি যদি সামলাতে না পারো কোন ব্যাপার না। প্রয়োজনে আমি সারাদিন বাড়িতে পড়ে থাকব। তবু আমার এই বাচ্চাটা চাই।”
আরিফকে কোনভাবেই বোঝাতে না পেরে মুসকান হাল ছেড়ে দিলো। অতঃপর বললো,
“মনে রেখো কিন্তু এই বাচ্চার সব দায়িত্ব তোমাকেই নিতে হবে। পরে কিন্তু আমাকে বলতে পারবা না।”
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨
#দুই_হৃদয়ের_সন্ধি
#পর্বঃ৩৪
#লেখিকাঃদিশা_মনি
মেহরাবের ফেরার অপেক্ষায় দিন গুনতে লাগল নকশি। এরইমধ্যে যে তার পেছন পেছন নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেছে সেটা সে ভাবতেও পারে নি। মেহরাবের মা মালিনী বেগম নকশিকে কোন ভাবেই মেনে নিতে পারেন না। তাই তিনি ষড়যন্ত্র করতে থাকেন কিভাবে নকশিকে মেহরাবের জীবন থেকে সরানো যায়। আর এই থেকেই তিনি যোগাযোগ করেন মেহরাবের প্রধান শত্রু বলে বিবেচিত অন্য এক মাফিয়া আমানের সাথে। আমান তো মালিনী বেগমকে নিজের আস্তানায় দেখে খুব অবাক হয়ে যান। অতঃপর বলেন,
“আপনি আমার শত্রু মেহরাবের মা না? আপনি এখানে কি করছেন?”
মালিনী বেগম সামান্য হেসে বলেন,
“তোমার মনে আছে কিনা জানি না কিন্তু তুমি এক সময় আমার কাছে জানতে চেয়েছিলে মেহরাবের কোন দূর্বলতা আছে কিনা। আর এটা বলার বিনিময়ে আমাকে অনেক টাকাও অফার করেছিলে।”
“ও হ্যাঁ, মনে পড়েছে৷ কিন্তু সেটা তো অনেক দিন আগের কথা। আর আমার যতদূর মনে পড়ে আপনি বলেছিলেন আপনার ছেলে মানে মেহরাবের কোন দূর্বলতাও নেই।”
“এত দিন তো ছিল না কিন্তু এখন আছে।”
“কি সেই দূর্বলতা।”
“ওর স্ত্রী নকশিই এখন ওর একমাত্র দূর্বলতা। আমার মনে হয় যদি তুমি নকশিকে কোন ভাবে নিজের বাগে আনতে পারো তাহলেই মেহরাবকে জব্দ করতে পারো।”
“কিন্তু এটা কি এত সহজ হবে? ঐ নকশি যদি মেহরাবের সব থেকে বড় দূর্বলতা হয় তাহলে নিশ্চয়ই মেহরাব ওকে রক্ষার জন্য কঠিন ব্যবস্থা করে রেখেছে।”
“মেহরাব এখন কিছু জরুরি কাজে শহরের বাইরে আছে। আর এটাই তোমার জন্য মোক্ষম সুযোগ। তাছাড়া আমি তো আছিই তোমাকে হেল্প করার জন্য।”
“সত্যি বলছেন তো? আমাদের সাথে কিন্তু কোন চালাকি করার চেষ্টা করবেন না।”
“আমি তেমন কিছুই করবো না। শুধু আমার একাউন্টে একটু বেশি টাকা ঢুকিয়ে দিও। তাহলেই আমি খুশি।”
বলেই দাঁত কেলিয়ে হাসেন। আর মনে মনে বলেন,
“এভাবেই এক ঢিলে দুই পাখি মা*রব আমি। ঐ নকশিকেও পথ থেকে সরাবো, টাকাও পাবো আবার মেহরাবও আমাকে অপমান করার উপযুক্ত জবাব পাবে।”
★★★
এই কদিনে মোনালিসার সাথে বেশ ভাব হয়ে গেছে নকশির। তাই তো দুই ননদ জা মিলে এখন এক সাথে গল্প করছে। তাদের এই গল্পের মাঝেই হঠাৎ ঢুকে পড়েন মালিনী বেগম। তিনি এসেই বলেন,
“কি এত গল্প করছ তোমরা?”
মালিনী বেগমকে দেখেই নকশি চুপ হয়ে যায়। কেন জানি তার কাছে মালিনী বেগমকে খুব একটা সুবিধার মনে হয়না। মোনালিসা নিজের মায়ের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“মম, তুমিও এসে আমাদের সাথে গল্প্র যোগ দাও না। জানো ভাবি না অনেক কিছু জানে। ভাবির সাথে গল্প করে অনেক মজা।”
“তাই নাকি? কিন্তু তোমার ভাবি তো মনে হয় আমার উপস্থিতিতে খুব একটা খুশি হয়নি।”
নকশি সাথে সাথেই বলে ওঠে,
“না, না তেমনটা হয়। আমি আসলে..সেরকম কিছু ভাবিনি। আপনি চাইলে আমাদের আড্ডায় যোগ দিতেই পারেন।”
মালিনী বেগম নাটক করে বলেন,
“আমি জানি শুরুর দিকে তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি। আসলে আমি ভেবেছিলাম তুমি আমার ছেলের যোগ্য নও। সেই থেকেই আমি এমন করে ফেলেছি৷ তুমি এই বিষয়টা নিয়ে আমার উপর রাগ করে থেকো না।”
“আমি এমনটা ভাবিনি।”
“আমাদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক শাশুড়ী বৌমার মতো করতে চাই আমি।”
মালিনী বেগমের কথায় নকশি, মোনালিসা দুজনেই খুব খুশি হয়৷ তাদের দুজনের কাছেই মনে হয় সবটা এখন ভালো দিকে যাচ্ছে। যদি তারা মালিনী বেগমের মনে লুকিয়ে থাকা জঘন্য পরিকল্পনার ব্যাপারে জানত তাহলে হয়তো এমন ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতো।
★★★
পরদিন মোনালিসা তার বান্ধবীদের সাথে বাইরে আড্ডা দিতে চলে যায়। এই সুযোগটাকেই কাজে লাগান মালিনী বেগম। নকশির সাথে দেখা করে তাকে বলেন,
“সারা দিন আমি এভাবে বাড়িতে বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। চলো না দুজন শাশুড়ী বৌমা মিলে বাইরে থেকে কোথাও ঘুরে আসি।”
নকশিরও এভাবে বাড়িতে চার দেয়ালের মধ্যে থাকতে ভালো লাগছিল না। তাই সেও মালিনী বেগমের সাথে একমত জানিয়ে বলে,
“হ্যাঁ, চলুন। যাওয়াই যাক।”
দুজনে বেরুতে চাইলে কুদ্দুস তাদের দেখে বলে,
“আপনারা কোথায় যাচ্ছেন?”
মালিনী বেগম বিরক্ত হয়ে বলেন,
“আমরা দুজন একটু বাইরে ঘুরতে যাচ্ছি। কেন তোর কোন অসুবিধা আছে?”
“না ম্যাডাম, আমার আবার কি অসুবিধা। কিন্তু বস তো আমায় বলে গেছে ওনার স্ত্রীকে সবসময় নজরে রাখতে আর পাহারা দিতে। তাই আপনারা যেখানে যাবেন আমিও সেখানে যাবো।”
“তোকে আমাদের সাথে আসতে হবে না কুদ্দুস। আমরা দুজন শাশুড়ী বৌমা একটু ঘুরতে যাব সেখানেও গার্ড থাকবে এটা একদম ভালো লাগবে না। নকশি তোমার কি ভালো লাগবে?”
নকশিরও এটা ভালো লাগে না। তাই সে বলে,
“হ্যাঁ। আমিও চাই না আপনি আমাদের সাথে আসুন। আমরা দুজনেই যাব।”
“কিন্তু মেহরাব স্যার..”
মালিনী বেগম বলেন,
“ওকে আমি ম্যানেজ করে নেব।”
কুদ্দুস আর কোন বাধা প্রদান করে না।
★★★
ঘুরতে ঘুরতে একটা নির্জন নিরিবিলি যায়গায় চলে আসে দুজনে। সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে দেখে নকশি মালিনি বেগমকে বলেন,
“এখন মনে হয় আমাদের ফিরে যাওয়া উচিৎ।”
মালিনী বেগম উচ্চস্বরে হাসতে থাকেন। হাসতে হাসতে বলেন,
“তোর আর ফেরা হবে না। ঐ দিকে তাকিয়ে দেখ তোকে নেওয়ার জন্য কারা এসেছে।”
নকশি পাশে তাকাতেই দেখতে পায় কিছু ব*ন্দুকধারী লোক। ভয়ে তার অন্তরাত্মা কেপে ওঠে। তাদের মধ্যে থেকে আমান বলে ওঠে,
“এই তাহলে মেহরাবের সবথেকে বড় দূর্বলতা।”
“হুম। এবার আমাকে আমার যোগ্য এমাউন্ড দাও।”
আমান বাকা হেসে বলে,
“এত কাচা খেলোয়ার যে আমি নই। এই তোরা সবাই এদের দুজনকে তুলে নে। এবার ঐ মেহরাবকে আমি চরম ভাবে জব্দ করতে পারব। কারণ ওর মা এবং স্ত্রী দুজনেই আমাদের নাগালে।”
“তুমি কিন্তু আমাকে ঠকাচ্ছো আমান।”
“মানুষ ঠকানো আমার রক্তে মিশে আছে।”
বলেই বিকট হাসি দেয় আমান। অতঃপর তারা জোরপূর্বক নকশি আর মালিনী বেগমকে ধরে নিয়ে যায়।
★★★
মেহরাব বাড়িতে ফিরে নকশিকে দেখতে না পেয়ে ঘাবড়ে যায়। তড়িঘড়ি করে কুদ্দুসকে ডেকে জিজ্ঞেস করে,
“নকশি কোথায়?”
“ভাবি তো আপনার মায়ের সাথে ঘুরতে গেছে।”
“হোয়াট? তুই ওদের একা ছাড়লি কেন? তোকে না বলেছিলাম নকশিকে সবসময় পাহারায় রাখতে।”
“আমি যেতে দিতে চাইনি। ওনারাই জোর…”
এরমধ্যে মেহরাবের ফোন বেজে ওঠে।ফোন রিসিভ করতেই আমান অট্টহাসি দিয়ে বলে,
“তোর মা আর বউ আমার কব্জায় আছে। যদি তাদের বাঁচাতে চাস তো চলে আয় আমার আস্তানায়।”
“ইউ কাওয়ার্ড। ওদের কোন ক্ষতি হলে আমি কিন্তু তোকে ছাড়ব না।”
“চিন্তা করিস না ওদের কিছু করবো না। তার বিনিময়ে তোকে নিজেকে স্যারেন্ডার করতে হবে।”
বলেই আমান ফোন রেখে দেয়। নকশি চিৎকার করে বলে,
“একবার শুধু মেহরাবকে আসতে দে। তারপর তোদের সবাইকে উচিৎ শিক্ষা দেবে।”
আমান অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে বলে,
“আজ আমি তোদের সবাইকে জাহান্নামে পাঠানোর ব্যবস্থা করব। শুধু দেখে যা।”
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨