#দুই_হৃদয়ের_সন্ধি
#পর্বঃ৩৫
#লেখিকাঃদিশা_মনি
মেহরাব হাজির হয়েছে আমানের আস্তানায়। সাথে এনেছে নিজের গ্যাং এর সকল সদস্যদের নিয়ে। মেহরাব আজ আমানকে দেখিয়ে দিতে চায় মৌচাকে ঢি*ল মা*রলে তার পরিণাম কতোটা ভয়াবহ হতে পারে। কিন্তু আমানের আস্তানায় এসে সে হতবাক হয়ে যায়। কারণ যায়গাটা পুরোপুরি ফাকা ছিল। রাগে মেহরাবের হাত পায়ের রগ টনটনে হয়ে যায়। এই মুহুর্তে আমানকে হাতের কাছে পেলে যে সে কি করত সেটা নিজেও ভালো জানে না।
মেহরাবের এমন ভাবনার মধ্যেই তার ফোনে কল দেয় আমান। মেহরাব ফোনটা রিসিভ করে চিৎকার করে বলে ওঠে,
“কু*ত্তার বাচ্চা কোথায় তুই?”
” কুল, কুল মাই ডিয়ার এনিমি। এত উত্তেজিত হতে নেই। এত উত্তেজনা হার্টের জন্য ভালো না।”
“শোন, আমার মা ও স্ত্রীর গায়ে যদি একটা আঁচড় পড়ে, বিলিভ মি আমি তোকে একদম শে*ষ করে দেব।”
“তোর মা আর বউয়ের কিছু হবে না। কিন্তু সেই জন্য তোকে আমার কথা মতো কাজ করতে হবে।”
“শু*রের বাচ্চা।”
“আমাকে গালি দিয়ে কোন লাভ নেই। তোকে একটা ঠিকানা পাঠিয়ে দিচ্ছি দ্রুত সেখানে চলে আয়। আর হ্যাঁ, একদম একা আসবি। কাউকে সাথে নিবি না। কোন চালাকি করার কথা মাথাতেও আনবি না। নাহলে কিন্তু ওদেরকে খা*লাশ করে দেব।”
মেহরাব ফোনটা রেখে দেয়। অতঃপর নিজের গ্যাং এর সবাইকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
“তোমরা সবাই এখানেই থাকো। আমি আমার মা ও বউকে উদ্ধার করতে যাচ্ছি।”
কুদ্দুস সাথে সাথে আপত্তি জানিয়ে বলে ওঠে,
“এসব আপনি কি বলছেন বস? আমরা এভাবে একা একা আপনাকে যেতে দিতে পারি না।”
“কুদ্দুস, আমি যা বলছি তাই শোন, জেদ করিস না। ঐ আমান বলেছে আমাকে একা যেতে। নাহলে ও ওদের কোন ক্ষতি করে দেবে।”
“কিন্তু বস আপনি একা গেলে ওদের সাথে একা কিভাবে পেড়ে উঠবেন?”
“আমার সামর্থ্য সম্পর্কে কি তোর কোন ধারণা নেই? তুই কি আমাকে দূর্বল ভেবেছিস নাকি? আমি চাইলে অনেক কিছু করতে পারি তাও সম্পূর্ণ একা।”
“সেটা আমি জানি বস কিন্তু..”
“কোন কিন্তু না। এটা আমার একা লড়াই। আর আমি একাই লড়বো।”
________________________
আমান সব দুষ্টু পরিকল্পনা করেই রেখেছে এখন শুধু মেহরাবের আসার পালা। তারপরেই সে নিজের চাল চালবে৷ এতদিনে নিজের চিরশত্রুকে যোগ্য জবাব দিতে পারবে ভেবেই আনন্দে নেচে উঠল আমানের মন। তার গ্যাং এর একজন সদস্য এসে তাকে খবর দিল,
“বস, ঐ মেহরাব এদিকেই আসছে।”
আমান নিজের হাতে একটি রিভালবার নিয়ে অট্টহাসি দিয়ে বলে,
“আসতে দে ওকে। আজই ওর শেষ দিন হবে।”
এরমধ্যে মেহরাব প্রবেশ করে আমানের ডেরায়। সে এসেই হুংকার দিয়ে বলে ওঠে,
“আমান!! কাপু*রুষ কোথায় তুই?”
আমান মেহরাবের সামনে উপস্থিত হয়। বিকট হেসে বলে,
“এই তো ডিয়ার। এখানে আমি।”
“তোকে তো আমি…”
বলেই মেহরাব আমানের কলার চেপে ধরে। আমান কলার ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
“একদম বাড়াবাড়ি করবি না। নাহলে তোর মা ও বউ মরবে।”
মেহরাব সরে আসে। চোখ বন্ধ করে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে।
★★★
মুসকান আজ মেডিকেলে যেতেই দেখতে পায় গাইনি বিভাগের সামনে বেশ জটলা। সে এগিয়ে যেতেই দেখতে পায় একজন মহিলা বেশ কান্নাকাটি করছেন। তাকে সামলানোর চেষ্টায় ব্যস্ত তার পরিবারের সদস্যরা। মুসকান ব্যাপারটা ঠাহর করতে পারে না। এরমধ্যে একজন নার্স এসে মহিলার স্বামীকে বলেন,
“ম্যাডাম আপনাদের ডাকছে৷ আপনারা ভেতরে চলুন।”
মহিলা চিৎকার করে বলতে থাকে,
“আমি যাবো না কোথাও…ওখানে গেলে ওরা আমার বাচ্চাকে মে*রে ফেলবে।”
অনেক জোরাজোরি করা হলেও মহিলাকে কোনভাবেই নিয়ে যাওয়া সম্ভবপর হয়না। অবশেষে তার স্বামী বাধ্য হয়ে তাকে নিয়ে প্রস্থান করলো।
জট কাটতেই মুসকান সেই নার্সের কাছে গিয়ে শুধায়,
“এখানে কি হয়েছিল? ঐ মহিলা এমন রিয়্যাক্ট করছিল কেন?”
“আসলে ওনার প্রেগ্ন্যাসিতে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। যার ফলে সন্তান জন্ম দেওয়ার ফলে ওনার মৃত্যুর ঝুঁকি আছে। এইজন্য ডাক্তার ম্যাডাম ওনাকে বাচ্চাটা নষ্ট করার পরামর্শ দিয়েছিল৷ আর এটাই উনি মানতে চাইছেন না। ওনার একটাই কথা, উনি মরে গেলে মরবেন তবুও নিজের বাচ্চার কোন ক্ষতি হতে দেবেন না৷ সত্যি একেই বলে মা, যারা নিজেদের সন্তানের জন্য নিজের জীবন দিতেও দুবার ভাবেন না।”
এটুকু বলেই নার্সটি চলে যায়। তিনি চলে যেতেই মুসকান তার বলা কথাগুলোই ভাবতে থাকে। অতঃপর নিজের পেটের উপর হাত রাখে। তার বিবেক তাকে প্রশ্ন করে। যেখানে মানুষ নিজের সন্তানের জন্য নিজের জীবন বলি দিতে দুবার ভাবে না, সেখানে সে সামান্য ক্যারিয়ারের জন্য নিজের বাচ্চার জীবন ব*লি দিতে চাইছিল। নিজের উপর ঘৃণা জন্মায় মুসকানের। সে নিজের পেটের উপর মৃদুভাবে স্পর্শ করে। অতঃপর স্বগতোক্তি করে বলে,
“আমি নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছি। তুই কোন চিন্তা করিস না৷ আমি তোর মা নিজের ভুল বুঝে গেছি৷ আমি এখন অবশ্যই তোকে পৃথিবীতে আনব। নিজের মাকে তুই ক্ষমা করে দিস সোনা। এখন আরিফের কাছেও আমাকে ক্ষমা চাইতে হবে।”
★★★
আমান মেহরাবের মাথায় ব*ন্দুক তাক করলো। অতঃপর বলল,
“নিজের মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হ।”
মেহরাব সুযোগ বুঝে ব*ন্দুকটা কেড়ে নিলো। অতঃপর নির্বিচারে গু*লি করতে লাগল আমানের গ্যাং এর সদস্যদের উপর। কুদ্দুস ততক্ষণে মেহরাবের গ্যাং এর বাকি সদস্যদের নিয়ে হাজির হয়। দু-পক্ষের মধ্যে দুধর্ষ লড়াই চলতে থাকে। অবশেষে যখন আমানের দল হারতে বসে তখন আমান একটা জ*ঘন্য চাল চালে৷ সবার অলক্ষ্যে ব*ন্দুক তুলে নিয়ে সে সেই স্থানে যায় যেখানে নকশি আর মালিনী বেগমকে ব*ন্দি করে রাখা হয়েছে। সবার নজর এড়ালেও মেহরাবের তীক্ষ্ণ নজর এড়াতে ব্যর্থ হয় সে। মেহরাব কিছু সময়ের মধ্যে আমানকে দেখে তার পেছনে যেতে থাকে।
আমান দৌড়ে গিয়ে প্রথমে মালিনী বেগমের দিকে বন্দুক তাক করলো। বলল,
“আমি যদি আজ ম*রে যাই তো ম*রার আগে ঐ মেহরাবের পুরো পরিবারকে শে*ষ করে দিয়ে তারপর ম*রব।”
বলেই গু*লি চালিয়ে দেয় মালিনী বেগমের দিকে। মালিনী বেগমের বুক ভে*দ করে যায় গুলি। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর যখনই সে নকশিকে গু*লি করতে যাবে তার আগেই মেহরাব চলে আসে এবং গু*লি করে আমানের মাথার খুলি উড়িয়ে দেয়।
আমান সাথে সাথেই মা*রা যায়। মেহরাব গিয়ে নকশিকে ব*ন্দিদশা থেকে মুক্ত করে। এরপরই তার নজর পড়ে মালিনী বেগমের দিকে। সে দৌড়ে গিয়ে তার মায়ের কাছে গিয়ে বসে পড়ে। মালিনী বেগম অনেক কষ্টে নিজের হাত দুটো জোড় করে ক্ষীণ কন্ঠে বলেন,
“আমাকে ক্ষমা করে দিও মেহরাব। আমি অনেক অন্যায় করেছি৷ আমার জন্য তুমি এই অন্ধকার জগত থেকে বেরিয়ে যেতে পারো নি। আর আমিই নকশির ক্ষতি করার জন্য ঐ আমানের সাহায্য নিয়েছিলাম। কিন্তু দেখ আমি নিজের অন্যায়ের শাস্তি পেয়ে গেলাম। পারলে ক্ষমা করে দিও।”
বলেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মেহরাব নির্লিপ্ত চেয়ে রয়। হাজার হোক মা তো। তার চোখ দিয়ে নীরবে জল ঝড়তে থাকে।
★★★
১ সপ্তাহ পর,
নকশি খেয়াল করছে সেইদিনের ঐ ঘটনার পর থেকে মেহরাব অনেক বদলে গেছে। আগে মেহরাব সবসময় নকশির সাথে কথা বলার চেষ্টা করতো, নকশির এটেনশন পাওয়ার চেষ্টা করত কিন্তু এখন কেমন জানি এড়িয়ে চলে। নকশি এই রহস্যই ভেদ করতে চায়। তাই আজ সে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে মেহরাবকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করবে।
তবে নকশিকে কিছু করতে হলো না। মেহরাব আজ নিজে থেকেই নকশির কাছে এলো। অতঃপর নকশির দিকে একটা পেপার এগিয়ে দিলো। নকশি জিজ্ঞেস করল,
“এটা কি?”
“ডিভোর্স পেপারস।”
“মানে..এটার মানে কি?”
“তুমি জিতে গেলে নকশি। তুমি বলেছিলে না আমি নিজে থেকে তোমায় মুক্তি দেব। দেখ ঠিক তাই হলো। আমি এখন তোমায় এই সম্পর্ক থেকে মুক্তি দিতে চাই।”
“কিন্তু আমি মুক্তি চাই না। আমি আপনার সাথে থাকতে চাই।”
“সেটা আর সম্ভব না। তুমি সই করে দাও।”
“আপনি কি সত্যিই আমায় ডিভোর্স দিতে চান।”
“হ্যাঁ, সত্যিই।”
“আমার প্রতি কি আপনার কোন ভালোবাসা নেই?”
“প্রশ্নই ওঠে না।”
নকশির চোখে জল চলে আসে।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨