দুই_হৃদয়ে_সন্ধি পর্ব-১৭+১৮

0
186

#দুই_হৃদয়ে_সন্ধি
#পর্বঃ১৭
#Nova_Rahman

‘দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো। তরুর স্তব্ধ নয়ন রোদের পানেই সীমাবদ্ধ ছিল। কি মুক্ত মায়া তার ডাক্তার সাহেবের মুখশ্রীতে। রোদ গান শেষ করে তরুর দিকে দৃষ্টি তাক করলো। তরুকে নিজের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে, রোদ ভ্রু নাচিয়ে তরুকে জিজ্ঞেস করলো__’

‘কি দেখছো মেয়ে?’

‘রোদের প্রশ্নের বিপরীতে তরু মুচকি হেসে বলল, ’

‘আপনাকে দেখছি ডাক্তার সাহেব। ’

‘রোদ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো__
আমি রোদের মধ্যে কি আছে। যা তুমি বারংবার দেখেতে চাও। ’

‘রোদের কথার বিপরীতে তরু মুচকি হেসে বলল,
আপনি রোদের মধ্যে উত্তাপ আছে। যা অন্য কারো মধ্যে নেই।’
তরুর কথা শুনে, রোদ সামান্য ঝোঁক এলো তরুর দিকে। কানের কাছে মুখ নিয়ে রোদ ফিসফিস করে বলল__
‘আমি রোদের উত্তাপ নিতে পারবে তো। আমি রোদ কিন্তু ঝলসে দেয় সবকিছু। ’

‘রোদের কথার বিপরীতে তরু স্মান হেঁসে বলল,
আপনি রোদের উত্তাপ গায়ে মাখতেই আমার জন্ম। আপনি রোদের ঝলসানো রূপ আমার কাছে জোসস্ লাগে। এক্কেবারে খেয়ে ফেলার মতো জোসস্!’

‘তরুর কথা শুনে রোদ আশ্চর্য হয়ে তরুকে ফের জিজ্ঞেস করলো__
তরু কি বললে তুমি! আবার বলো শুনি। আমার ঝলসানো রূপ তোমার কাছে জোস্ লাগে। এক্কেবারে খেয়ে ফেলার মতো জোস্! বাহ!’
এতোদিন এই রোদকে অসভ্য লোক বলে গালমন্দ করতে। এখন বলো তো, প্রকৃতপক্ষে কে বেশি অসভ্য। আমি নাকি তুমি। নাকি রোদের সান্নিধ্যে এসে, রোদের ছোঁয়া লেগেছে। বলো বলো বলো মেয়ে। তাত্তাড়ি বলো।

__তরু লজ্জায় মাথা নত করলো। জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে, দাঁত দিয়ে জ্বিভ কামড়ে ধরলো। তরুর অস্বস্তি হচ্ছে। ভীষণ রকমের অস্বস্তি যাকে বলে। কি থেকে কি বলে ফেললো। এখন তার জন্য লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে।
তরু দৃষ্টি সরালো। অদূরে তাকাল। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো। তরু ঝটপট উঠে এলো রোদের পাশ থেকে। লজ্জায় গা শিউরে উঠছে। গায়ের ওড়নাটা ঠিকঠাক করে, চোখ ফিরালো রোদের দিকে। এক্ষুনি বাড়ি ফিরতে হবে।

‘তরু ওড়নাটা হাতের আঙ্গুলের ভাঁজে মোচড়াতে মোচড়াতে রোদকে উদ্দেশ্য করে বলল,’

‘আসি ডাক্তার সাহেব। পরে আবার দেখা হবে।’

‘রোদের কানে, ডাক্তার সাহেব ডাক টা বড্ড আদুরে ঠেকলো। রোদ মুচকি হেসে সায় জানালো। রোদ উঠে এলো। দপাদপ পা ফেলে, একদম তরুর মুখোমুখি এসে দাড়াল। রোদ বাচ্চাদের মতো আবদার করলো। আমি তোমাকে একটু এগিয়ে দিয়ে আসি।’

‘রোদের এমন আবদার তরু আর না করতে পারলো না। তরু মুচকি হেসে মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বলল। পড়ন্ত বিকেলে দু’জন নির্জীব মানুষ হেটে যাচ্ছে সুনশান রাস্তা দিয়ে। মাঝে মধ্যে কয়টা গাড়ি শো শো শব্দ করে,তাদের পাশ কেটে বেরিয়ে যাচ্ছে। তরু এসে থামলো,বধূ ভেসে দাঁড়িয়ে থাকা কৃষ্ণচূড়া গাছের একদম নিচে। ’

‘তরু চক্ষু সরালো। রোদের থেকে বিদায় নিতে বলল,
আসি এবার। আর যেতে হবে না আপনাকে। রোদ স্মান হেঁসে তরুকে হাত নাড়িয়ে বিদায় দিলো। তরু এক পা দু পা করে সামনে এগুলো। আবার পিছু টানে পিছন ফিরে তাকাল। রোদ কেমন আমতা আমতা করছে। তরু সূচালো চোখে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে, অদূরে থেকে রোদকে জিজ্ঞেস করলো___’
কিছু বলবেন ডাক্তার সাহেব। বলতে চাইলে বলতে পারেন। আমি দাঁড়িয়ে আছি। শোনবো আপনার কথা।

‘রোদ ঘাড় খাত করে মাথা চুলকালো। নয়ন যেনো না বলা বহু কথা উপেক্ষা করছে। রোদ কিছু একটা ভেবে তরুর কথার প্রতিত্তোরে বলল,’

“তরু! ভালোবাসো আমাকে?”

‘রোদের কথা শোনে তরু থমকালো। থমকানো দৃষ্টি নিয়েই তরু উল্টো রোদকে প্রশ্ন করলো__
আপনি ভালোবাসেন আমাকে?

‘রোদ ভড়কালো। মুখ ফুটে কিছু বলল না। তরুকে কিছু না বলে, রোদ ফের তরুকে বিদায় দিলো। তরু হতাশ হলো। হতাশ মন নিয়ে পা বাড়ালো সামনের দিকে। কান্না পাচ্ছে ভীষণ। তরু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কান্না থামানোর বৃথা চেষ্টা করছে। রোদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেও পা বাড়ালো তার গন্তব্যে। মাঝে রেখে গেলো কিছু মূহুর্ত আর কৃঞ্চচূড়া গাছটা। ’

‘চার পাঁচ বার রিং হওয়ার পর কল রিসিভ করলো রোদসী। উদয় সেই কখন থেকে কল দিচ্ছে। এদিকে রোদসী লাপাত্তা। রোদসী কল রিসিভ করে বিরক্ত কন্ঠে উদয়কে শুধালো __
কি ব্যাপার উদয়? বার বার কল দিয়ে ডিস্টার্ব করছো কেনো?
উদয় চমকালো। চকিতে হুঁশ ফিরতেই মনে পড়লো। এটা নিত্যকার ঘটনা। রোদসী বরাবরই উদয়ের ফোন কলে বিরক্ত হয়। উদয় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল_____
আমার সাথে একটু দেখা করবে রোদসী। অনেক দিন হলো তোমাকে সামনা-সামনি দেখি না। হৃদয় পোড়ছে তোমার জন্য। প্লিজ একটু দেখা করবে। কি অনুনয় বলা কথা, ব্যথাতুর হৃদয়স্থল। প্রেমিকাকে দেখার কি আকুল আবেদন প্রেমিকের।

‘পাষান্ড মানবীর মন যেনো আরো কঠিন হলো। রোদসী যেনো ফের বিরক্ত হলো। বিরক্ত হয়ে, কঠিন কন্ঠে উদয়কে শুধালো___

‘দেখো উদয় আমি এখন আসতে পারবো না। আমি এখন পড়ছি। তুমি খুব ভালো করেই জানো সামনে আমার পরিক্ষা। পরিক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে না পারলে আমি মেডিকেলে চান্স পাবো না। ভাইয়ার মতো ডাক্তার হওয়া আমারও স্বপ্ন। এখন তুমি যদি এ স্বপ্নে বাধা প্রধান করো। তাহলে আমি তোমাকেও ছেড়ে আসতে বাধ্য হবো। ’
__তোমার আর কি। তোমার তো স্বপ্ন পূরণ হয়ে গেছে। দুইদিন পরে লাইসেন্স নিয়ে তুমি পুরোপুরি ডাক্তার হয়ে বের হবে। এখন তোমার আমাকে নিয়ে চিন্তা নেই। আমিও তোমার মতো সাবলীল হতে চাই। প্লিজ উদয় কারণে অকারণে ফোন করে আর বিরক্ত করো না।__

‘উদয়ের হৃদয়স্থল খুব বাজে ভাবে জখম হলো। মনে হচ্ছে, দগ্ধ হৃদয় পোড়ে কয়লা হলো বুঝি। উদয় সরি বলে কল কেটে দিলো। উদয় দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশ পানে তাকাল। ভঙ্গ হৃদয় নিয়ে আকাশকে তার অভিযোগ গুলো বলল,__’

“বেঁচে থাকতে তো পাত্তা দিচ্ছো না। মরে গেলে আর মায়া কান্না কেঁদো না। তোমার জন্য বুকটা আমার ভীষণভাবে পোড়ে রোদসী। একদিন আসবে। যেদিন আমাকে একটু ছুঁয়ে দেখার জন্য তুমি হাহাকার করবে। ঐ দিন আমি থাকবো না। তোমার প্রাপ্তির খাতায় সব থাকলেও আমি থাকবো না।”

“পৃথিবীর বুকে একঝাঁক রং নেমে এলো। কালো রং। একেই বুঝি সাঝ বেলা বলে। কালো রংয়ে আচ্ছাদিত শহরটা নিভু নিভু কৃত্রিম লাইটে জ্বলজ্বল করছে। ”

‘বিয়ের সাজে সজ্জিত হয়েছে আজ চেয়ারম্যান বাড়ি। রেনু বিবি আজ মহা খুশি। আপদ বিধেয় করতে পারবে এ বাড়ি থেকে। রান্নাবান্নায় ব্যস্ত কাজের মাসি গুলো। বিয়ের সব কিছু তদারকি করছেন রেনু বিবি নিজে। মেহুর জন্য পাত্রও তিনি দেখেছেন। পাশের গ্রামের মতিনের ছেলে। বিদেশ থেকে ফিরলো কদিন হলো। একটু আধটু মদ খায়। নেশা করে জোয়া খেলে। এতে রেনু বিবির কেনো মাথা ব্যথা নেই। আপদ বিধেয় হবে। আর কি চাই তার।’

__খুব বড়ো করে অনুষ্ঠান করা হয়েছে মেহুর বিয়েতে। গায়ে হলুদের ব্যবস্থা করার জন্য তাড়া দিচ্ছে রেনু বিবি। হলুদ লাগিয়েই তিনি ঘুমাতে যাবেন। মেহু প্রাণহীন দেহটা নিয়ে বসে আছে খাটে। চারদিক দিয়ে সমবয়সী মেয়েরা ঘিরে রেখেছে। একজন আরেক জনের গায়ে ঢলে পড়ে, উষ্কানী মূলক কথা বলেই যাচ্ছে মেহুকে। মেহুর বিরক্ত লাগছে ভারি। কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না। আজকে বিয়ের দিনেও রেনু বিবি মেহুকে ছাড়লো না। সন্ধ্যায় তরুকে বিয়ের ব্যাপারে বলার জন্য ফোন করেছিল মেহু। তখনই রেনু বিবিমেহুর থেকে ফোন নিয়ে, তরুকে সাব্য অসাব্য ভাষায় গালমন্দ করতে থাকেন। আর মেহুর বিয়েতে তেজকে যেনো বাড়ির আশেপাশেও না দেখে, এতেও হুমকি ধামকি দেয়।__

‘তরুকে গালমন্দ করায় মেহু একটু ক্ষেপে গিয়ে রেনু বিবির মুখের উপর কয়টা কথা বলে দেন। এতে রেনু বিবির শরীরের আগুন যেনো দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে। রান্না ঘর থেকে গরম কুন্তী এনে, মেহুর পিঠে সেটা সজোরে চেপে ধরে রেনু বিবি। যন্ত্রণায় মেহু কুঁকড়ে উঠলো। অস্পষ্টসুরে মুখ থেকে বেরিয়ে আসলো__ আল্লাহ বাঁচাও। ’

‘তেজ তার বন্ধুদের মুখ থেকে জানতে পারলো মেহুর বিয়ের কথা। ততক্ষণাত ছুটে এলো মেহুদের বাড়ি। তেজকে একা মেহুদের বাড়ির দিকে যেতে দেখে, বিপদের আশংকা অনুভব করলো তেজের বন্ধুরা। তেজ বড়লোক পরিবারের ছেলে হওয়ায়। তার বন্ধুরাও ছিলো সনামধন্য পরিবারের সন্তান। তেজের পাঁচটা ছেলে ফ্রেন্ড আছে। তার মধ্যে শুদ্ধ হলো গ্যাং লিডার। তার পরে তেজ, ত্বহা,উল্লাস, ইফান।’

__ইফান দ্রুত তার বাসায় যায়। বাবার লকার থেকে তার ব্যাক্তিগত বন্দুক টা চুরি করে নিয়ে আসে। সাথে তিনটা বুলেট। শুদ্ধ, ত্বহা,আর উল্লাসও কয়টা অস্ত্র চুরি করে তাদের বাড়ি থেকে। সবকিছু এক করে সবাই বের হয় মেহুদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। তেজ ততক্ষণে মেহুদের বাসায় পৌঁছে গেছে। বাইক থামিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, মেহুর রুমের জানলার ঠিক পাশেই। __

‘তেজ নয়ন ঘুরিয়ে দেখলো। তার মেহুরানীর মুখে কোনো আবেগ নেই, উল্লাস নেই, নেই কোনো প্রাপ্তির আনন্দ। অথচ তার আজকে খুশি হবার কথা। এতো শত কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে চলেছে জীবন। তবে কেনো তার মুখ এতো আঁধার আচ্ছন্ন। তেজ উত্তর খোঁজে পেলো না।’
প্রাপ্তির খাতায় বরাবরেই মেহুর শূন্য মিলে। তেজ ভাবলো। আচ্ছা এই প্রাপ্তির খাতায় পূর্ণতা কি তাকে দিয়েই হবে। হ্যাঁ তাকে দিয়েই হবে। তেজের মেহুরানী তেজকেই ভালোবাসে। তেজ হাসলো, কনিকের হাসি। পরক্ষণেই তেজের মনে পড়লো। আজকে পরে কালকেই মেহু অন্য কারো বউ। তেজের ভিতরটা মুচড় দিয়ে উঠলো। আপনা আপনি বুকের বা পাশটায় হাত চলে গেলো। তেজ অনুভব করলো, তার চোখ বেয়ে নোনা জল চুয়িয়ে পড়ছে। অশান্তিতে হৃদয় দুমড়ে মুচড়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে।

‘তেজ বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো নিচে। সারা শরীর অসাড় হয়ে আসছে। শরীরে কোনো বল খোঁজে পাচ্ছে না তেজ। তেজ পকেট হাতড়ে মুঠোফোন বের করে নিয়ে আসলো। লিস্টে গিয়ে মেহুকে কল দিলো।’

’মেহু ভাবলেশহীন ভাবে বসেছিল খাটে। কর্কশ শব্দে মুঠোফোন টা বেজে উঠতে, চোখ তুলে তাকাল। পাশ হাতড়ে মুঠোফোন টা হাতে তুলে নিলো মেহু। ফোনের স্কিনে তেজের নামটা জ্বল জ্বল করছে। তেজের নাম্বার দেখে, বুকের ভিতর টা দুমড়ে মুচড়ে উঠলো মেহুর। তেজকে না পাওয়া তৃষ্ণা হাহাকার করছে ভেতরটা। মেহু ফোন তুললো না। কল রিসিভ করে মেহু তেজকে কি বলবে। যে তার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে অন্যকারো সাথে। মেহু ফোন রেখে কান্না করতে থাকে।’

‘এর মাঝেই বাহির থেকে কয়টা মেয়ে এসে মেহুকে নিয়ে যায় হলুদ মাখাতে। মেহু কাঠের পুতুলের মতো চুপচাপ চলে যায় তাদের সাথে। রেনু বিবি পান চিবাতে চিবাতে মেহুর সামনে এসে দাঁড়ালো। রেনু বিবিকে দেখে মেহুর মরন দশা অবস্থা। রেনু বিবি একদলা থুতু ফেলে, মেহুর চিবুকে হাত দিয়ে, মুখটাকে উঁচু করে ধরলো। রেনু বিবি পান খাওয়া দাঁত বের হেঁসে দিয়ে বলল, বাহ! মায়ের মতোই ঝলসানো রূপ হয়েছে তোর। যে কাউকে রূপে মায়ায় ফেলতে পারবি। তবে ভয় পাসনে। আজকে তোকে আর মারবো না। তোর বিয়ে বলে কথা। তবে একটা কথা শোনে রাখ। ঐ বড়লোকের বেটা যদি এই বাড়িতে পা রাখে। বিয়েতে যদি কোনো বাদা সৃষ্টি করে। তাহলে ঐ ছেলেকে জানে মে/রে ফেলবো। কথাটা যেনো মাথায় থাকে।’

‘মেহু ভয়ে ভয়ে সায় জানালো। তেজ কিছু জানতে পারবে না।’

‘রেনু বিবি মুখ মুচড়ে চলে গেলো অন্য পাশে। মেহুকে নিয়ে বসানো হয় একটা সোফাতে। সামনে সাজানো আছে নানা রকমের ফল, বিভিন্ন প্রকার খাবার। একে একে সবাই এসে মেহুকে হলুদ লাগালো। দূর থেকে ভগ্নহৃদয় নিয়ে, তেজ নিরব দর্শকের মতো দেখে গেলো সব কিছু।’

চলবে__ইনশাআল্লাহ

#দুই_হৃদয়ে_সন্ধি
#পর্বঃ১৮
#Nova_Rahman

হলুদ লাগানো প্রায় শেষের দিকে। মাহির উঠে এলো মেহুর পাশ থেকে। মেহুকে নিয়ে আসা হলো তার রুমে। মেহুকে রুমে দিয়ে চলে গেলো পাশের বাড়ির মেয়েগুলো। আবার সকালে আসবে তারা। মেয়েগুলো চলে যেতেই, মাহির দ্রুত মেহুর রুমে ঢুকে ছিটকিনি লাগিয়ে দিলো।
আনমনা হয়ে মেহু বসে ছিল খাটের এক কোণে। কারো আসার শব্দ ঠাওর করতে পেরে, চকিতে সামনে তাকাল সে। হঠাৎ করে মাহিরকে নিজের রুমে দেখে, মেহু একটু অবাক হলো। অবাকের জন্য দরুন কপালের দু’পাশ কুঁচকে গেলো। মেহু অবাকের সীমা পার করে। ভ্রু কুঁচকে মাহিরকে প্রশ্ন করলো__

কি হলো মাহির ভাইয়া। হঠাৎ আমার রুমে যে!

মাহির তার তর্জনী আঙ্গুল ঠোঁটে ঠেকিয়ে, মেহুকে আস্তে কথা বলতে বললো। মেহুও বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। মাহির এবার এক পা, দু পা করে মেহুর সামনে এসে দাড়াল। মাহির খুব সিরিয়াস হয়ে, মেহুকে উদ্দেশ্য করে বলল__

দেখ মেহু, জীবন কিন্তু একটাই। এই একটা জীবনের অর্ধেক গেলো তোর বৃথা। প্রতিনিয়ত, কারণে অকারণে মার খেতে খেতে তোর জীবন অতিষ্ঠ। আচ্ছা মেনে নিলাম এটা তোর নিয়তি ছিল।

কিন্তু এখন,
এখন যেটা হচ্ছে সবটাই তোর হাতে। তুই চাইলেই সবকিছু সুন্দর করতে পারিস। ভুল পথে আর নিজেকে বাড়িয়ে দিস না। তুই খুব ভালো করেই জানিস, এতে তোর সুখ হবে না। এবারও দাউদাউ করে জ্বলবি। না পারবি সহ্য করতে। না পারবি পালিয়ে আসতে। এখনও সময় আছে। মেহু এবার নিজেকে নিয়ে একটু ভাব। নিজেকে একটু ভালোবাস।

“নিজেকে ভালোবাসা মানে স্বার্থপর হওয়া না। এটা গুরুত্বপূর্ণ। ”

আর ঐ রেনু বিবি, তোর আর তেজের কিচ্ছু করতে পারবে না। ঐ মহিলার ক্ষমতা শুধু একটাই। সেটা হলো তোকে আঘাত করা। কিছু পিচাশদের জন্মই হয় দূর্বলদের আঘাত করার জন্য। তাই বলে কি আমরা প্রতিবাদ করবো না। আমি তোকে কথা দিচ্ছি মেহু। আমি বেঁচে থাকতে, তোর আর তেজের কিচ্ছু হতে দিবো না। জীবন দিয়ে হলেও তোকে বাচাবো। এই শেষ বারের মতো এই ভাইয়ের একটা কথা শোন।

“পালিয়ে যা।”

লক্ষী বোন আমার। প্লিজ তেজের সাথে পালিয়ে যা। তেজ বাগানে তোর জন্য অপেক্ষা করছে। যা, চলে যা। আমি এদিকটায় সব সামলে নিবো। প্লিজ যা।

মেহু কিচ্ছুক্ষণ ভাবলো। পরক্ষণেই মাহিরকে দু-হাত দিয়ে ঝাপটে ধরলো। নিস্তব্ধ চোখগুলো আজকে বাঁধ ভেঙ্গেছে। উপচিয়ে পড়ছে জলের রাশি। মাহির সময় দিলো। মেহু আজ সব দুঃখ ভাসিয়ে দিলো অশ্রুজলে। মাহির এবার তাড়া দিলো। মেহু ভাইয়ের বুক থেকে মুখ তুলে তাকাল। মাহির আর দাড়ালো না। মেহুর হাত ধরে খুবিই সাবধানে বেরিয়ে আসলো বাড়ি থেকে।

কথায় আছে। যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধ্যে হয়। রেনু বিবির চোখ ফাঁকি দিতে গিয়ে আরো বিপদ ডেকে আনলো মাহির। মেহুকে নিয়ে পালাতে যাওয়ার সব কথাবার্তা, রেনু বিবি দরজার পাশে দাড়িয়ে, আড়ি পেতে শুনে নিয়েছে। মাহির মেহুকে নিয়ে বেরিয়ে যেতেই। রেনু বিবি একটা কাঠের লাঠি হাতে নিয়ে, বাগানে গেলো মেহুর পিছন পিছন।
বাগানের একপাশে তেজকে বসে থাকতে দেখে, মেহু দৌড়ে গিয়ে তেজের সামনে দাঁড়ালো। শুঁকনো পাতার খচখচে শব্দদ্বয়, কাছে পিঠে এসে ঘর্ষণ তুলতেই। চকিতে চোখ তুলে সামনে তাকালো তেজ। বাসন্তী কালার শাড়ী পড়ে, এক বাসন্তী কন্যা যেনো দাড়িয়ে আছে তেজের সামনে। তেজের চোখ জলে টইটম্বুর। প্রেমিকাকে হারানোর শোক হয়তো সইতে পারছিলো না প্রেমিক। তাই তো ছেলে হয়েও আবেগে গা ভাসিয়ে দিয়েছিলো।

নিসন্দেহে মেহু পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান মেয়ে। তাকে হারানোর ভয়ে একটা ছেলে শোকে কাতর হয়ে কান্না করছে। এর থেকে ভাগ্য কারো হয় না বোধকরি। তেজ উঠে এলো। এলোমেলো পা ফেলে একেবারে মেহুর নিকটে এসে দাড়ালো। মেহুকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে স্বস্তির নিশ্বাস নিলো। তেজ যেনো মেহুকে কাছে পেয়ে, নতুন করে দেহে প্রাণ ফিরে পেলো।

একটুখানি সুখের পরেই দুঃখ এসে যেনো মেহুর গায়ে হাতছানি দেয়। রেনু বিবি বাঘের মতো গর্জন করে, তেড়ে আসলো মেহুর দিকে। ভয়ে কম্পিতো হলো মেহুর শরীর। ঠকঠক করে কাঁপছে ওষ্ঠদ্বয়। রেনু বিবি তেড়ে এসে, মেহুর চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে, মেহুকে সরিয়ে আনলো তেজের থেকে। এলোপাতাড়ি মেহুকে কয়েক গা কিল ঘুষি লাগিয়ে। হাতে থাকা শক্ত কাঠের লাঠি দিয়ে, তেজের মাথায় সজোরে আঘাত করলো। তেজ ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলো। হাত দিয়ে থামানোর চেষ্টা করলো রেনু বিবিকে। কিন্তু পারলো না।

মনের কায়েস মিটিয়ে, রেনু বিবির নির্দয়ভাবে মেরে যাচ্ছে তেজ আর মেহুকে। তেজ চাইলেই আঘাত করতে পারে। কিন্তু মায়ের বয়সী মহিলার গায়ে আঘাত করবে। এমন ভাবনা তেজের মন সায় দিচ্ছে না। তেজকে মারার মাঝেই, শুদ্ধ, ত্বহা,ইরফান আর উল্লাস এসে হাজির হয় ঘটনা স্থলে। তেজকে এইভাবে মারতে দেখে, ইরফানের রাগ দপ করে মাথায় চড়ে বসে। ক্রোধে সরল নয়ন জোড়া রক্তলাল বর্ণ ধারন করলো। বন্ধু কম ভাই বেশি তারা।
শুদ্ধ বরাবরই শান্তস্বভাবের মানুষ। শুদ্ধ শান্তভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু শুদ্ধ জানেনা। রেনু বিবি ঠিক কতটা ভয়ানক।

রেনু বিবি এবার তেজকে রেখে শুদ্ধের দিকে তেড়ে এলো। কাঠের লাঠিটা দিয়ে শুদ্ধকেও কয়েক গা লাগিয়ে দিলো। শুদ্ধকে ছেড়ে আবার তেজের কাছে গেলো। মার খেয়ে মেহু সেই কখন জ্ঞান হারিয়েছে। মেহুর নিস্তব্ধ শরীরে একটা লাথি মেরে, তেজের কাছে গেলো রেনু বিবি। দু’হাত দিয়ে শরীরের তামাম শক্তি দিয়ে তেজের গলা চেপে ধরলো সে। তেজের দম বন্ধ হয়ে গলায় আঁটকে পড়েছে। চোখ দু’টো গোল হয়ে মনিকোঠা থেকে যেনো বেরিয়ে আসছে। তেজ আর পারছে না। এই বুঝি প্রাণটা বেরিয়ে আসলো দেহ থেকে।

ইরফান আর সহ্য করতে পারলো না। বাবার বন্দুক টা বের করে সুট করে দিলো রেনু বিবিকে। তাজা প্রানটা কেড়ে নিতে, একটা শব্দয় হয়েছে। বন্দুকের ক্লিপের শব্দে আশেপাশের গাছপালা গুলো যেনো নড়েচড়ে উঠলো। মাঠির দেহটা মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। বিয়ে বাড়িতে সাউন্ড বক্স আর বাজি ফাটানোর শব্দে, বন্দুকের ক্লিপের শব্দটা সেখান পর্যন্ত পৌঁছাতে পারলো না। আসলো না কেউ রেনু বিবিকে সাহায্য করতে। রেনু বিবি ছটফট করতে লাগলো। আস্তে আস্তে প্রাণপাখিটা উড়াল দিলো আকাশে।

কিছু সময়ের ব্যবধানে কি থেকে কি হয়ে গেলো, তেজ ঠাওর করতে পারলো না। শুদ্ধ ক্রোধে চেঁচিয়ে উঠলো। তর্জনীর আঙ্গুল উচিত, ইরফানকে শাসিয়ে বলল__
এটা কি করলি ইরফান। আমরা সবাই এবার ফেঁসে যাবো। মরে গেছে মহিলাটা।
ইরফান মাথা চুলকে বলল, বা** বুঝতে পারিনি মরে যাবে। আর তেজকে তো মেরে ফেলছিলো্ তখন তো কেউ কিছু করলিনা। যা হবার তা হয়ে গেছে। এখন এসব ভেবে লাভ নেই। এখন ভাব লাশটা কোথায় লুকাবো।
দূর থেকে মাহির সবকিছু পর্যবেক্ষণ করলো। দ্রত পা ফেলে মাহির ঘটনাস্থলে আসলো। মাহিরকে দেখে শুদ্ধ কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো। মাহির শুদ্ধকে আশ্বাস দিয়ে বলল,

ভয় পেয়ো না। আমি কাউকে কিচ্ছু বলবো না। তোমরা পালিয়ে যাও। আমি এদিকটায় সব সামলে নিবো। শুদ্ধ চেচিয়ে বলল,
আপনি কি করে সামলাবেন। উনাকে গুলি করা হয়েছে। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আসলেই আমরা সবাই ফেঁসে যাবো। শুদ্ধের কথায় মাহির হেসে বলল,
গুলিটা আমার বন্দুক থেকে চলেছে তোমাদের বন্দুক থেকে নয়। তাই ফাঁসতে যদি হয়, তাহলে আমি ফাঁসবো। তোমরা না। মাহিরের কথায় হতবিহ্বল হয়ে, ইরফান জলদি তার বন্দুক চেক করলো। তিনটা বুলেটেই আছে বন্দুকে। ইরফান লাফিয়ে উঠে বলল,

দোস্ত আমার বন্দুক থেকে বুলেট বের হয়নি। ইরফানের কথায় শুদ্ধ একটু শান্ত হলো। মাহির এবার সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল। পালিয়ে যাও সবাই। কেউ দেখে ফেলার আগে জলদি পালাও। আর তেজ তুমি। তুমি আমার বোনটাকে দেখে রেখ। আর এমুখো হয়ো না কোনোদিন। মেহুকেও আর এই চেয়ারম্যান বাড়ির আসে পাশে আসতে নিষেধ করবে। মেহু যেনো এইসব বিষয়ে কিছু জানতে না পারে। আমার কথা জানতে চাইলে বলবে, আমি বিদেশ চলে গিয়েছি।

মাহিরের কথার বিপরীতে তেজ মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালো। উল্লাস দ্রুত এসে মেহুকে কোলে তুলে নিলো। উল্লাস তার পরিচিত এক দাদির বাড়িতে, মেহুকে আজকে রাতের জন্য রেখে এসেছে। মেহুকে রেখে তেজ আসতে চাই ছিলো না। কিন্তু পরিস্থিতি তার হাতে নেই। মা জাহানারা চৌধুরী বার বার ফোন করছে বাড়ি ফিরবার জন্য। এই পরিস্থিতিতে মেহুকে তাদের বাড়িতেও নিয়ে যাওয়া যাবে না।
হাজারটা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে তেজকে। কোনো না কোনোভাবে সত্যিটা সামনে চলে আসবে। তখন মেহুকে হয়তো মেনে নাও নিতে পারে তেজের পরিবার। তেজ এখন এই বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাতে চাই না। তাই পরিস্থিতি আর সময় বুঝে সব সামনে নিয়ে আসবে।

ইরফান তার বাইকে করে তেজকে বাসায় পৌঁছে দিলো। কলিং বেলের শব্দ শোনে জাহানারা চৌধুরী দ্রুত দরজা খুলে দিলো। দরজার পাশে তেজকে জখম অবস্থায় দেখে, বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো জাহানারা চৌধুরীর।

জাহানারা চৌধুরী ছেলের এমন অবস্থা দেখে, অস্থির হয়ে তেজকে জিজ্ঞেস করলো।
কি হয়েছে আব্বা। তোমার এ অবস্থা হলো কি করে? এতো ব্যাথা পেলে কি করে। বলো।

তেজ সময় নিলো। ভেবেচিন্তে খুব সুন্দর ভাবে গুছিয়ে মাকে মিথ্যা বলল।
আম্মু ইরফানের বাইকে উঠেছিলাম। তখন একটা ট্রাকের সাথে লেগে, ছোট একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে। যার দরুন এমন ব্যাথা পেলাম।

ছেলের এমন কথা শোনে জাহানারা চৌধুরী চেচিয়ে বলে উঠলেন__
তোমাকে কতবার বলেছি তেজ। তুমি ইরফানের সাথে মিশবে না। ইরফান একটা বখাটে ছেলে। বাবার টাকা আছে, তাই হয়তো ছেলের করা অন্যায় গুলো দামাচাপা দিতে পারে। ইরফানের ভালো কোনো শিক্ষা আছে? না নেই তো। মাথার তারতুর সব তো ছিঁড়া ইরফানে। মদ খেয়ে এখানে সেখানে পরে থাকে। হুট করেই রেগে গিয়ে অনাকাঙ্খিত কান্ড করে বসে। আর বাইক চালালে তো ওর হুঁশেই থাকে না।

ইরফান সবেমাত্র তেজদের বাসায় ঢুকতে চেয়েছিলো। দরজার কাছে এসে, জাহানারা চৌধুরীর এমন কথা শোনে, মাঝপথেই যাত্রা থামিয়ে দিলো ইরফান। বাসায় আর ঢুকলো না। বেরিয়ে গেলো সদর দরজা পেরিয়ে। কারো পায়ের শব্দ ঠাওর করতে পেরে, জাহানারা চৌধুরী বেরিয়ে আসলো বাসা থেকে। বাসার বাহিরে ইরফান কে দেখতে পেয়ে, জাহানারা চৌধুরী একটু ইতস্তত বোধ করলো। ইরফান আর দাঁড়ালো না। বাইকে উঠে, তেজকে দেখে হাসলো। কি সুন্দর সেই হাসি। হাত নাড়িয়ে বিদায় দিয়ে চলে গেলো ইরফান। বন্ধুর জন্য তেজের বুকটা পোড়ছে ভীষণ ভাবে।

তেজের খুব ইচ্ছে করলো। মায়ের মুখের উপর কয়টা কথা বলতে। তেজের বলতে ইচ্ছে করছে__

আম্মু, তোমার ছেলের বিপদের সময় এই বখাটে ইরফানেই সবার আগে হাত বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু স্বভাবের গন্ডি পেড়িয়ে তেজ তা পারলো না।

সকাল হতেই তেজ বেরিয়ে যায় বাসা থেকে। সর্বপ্রথম উল্লাসের দাদির বাড়িতে গিয়ে মেহুর সাথে দেখা করে। একটু পর শুদ্ধ, ত্বহা, উল্লাস আর ইরফানও আসে সেখানে। মেহুর জ্ঞান ফিরেছে রাতে। হঠাৎ অচেনা কোথাও নিজেকে আবিষ্কার করে মেহু ঘাবড়ে গিয়েছিলো। তখন দাদিমা এসে মেহুকে শান্তনা দিয়ে বলল,
ভয় পাসনে মেয়ে। তেজ তোকে রেখে গিয়েছে। সকালে এসে আবার নিয়ে যাবে। তেজের নাম শোনে মেহু কিছুটা শান্ত হলো। তারপরেও অবাধ্য মন মানছে না। তেজকে একনজর দেখার জন্য, চোখগুলো চাতক পাখির মতো তাকিয়ে ছিলো দরজার পানে।

তেজকে দেখে মেহু দৌড়ে গিয়ে তেজকে জড়িয়ে ধরলো। ইরফান আর শুদ্ধ অপরদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। ফুপিয়ে কান্না করছে মেহু। তেজ সময় দিলো। মেহুকে নিজের বুক থেকে তুলে সামনে দাড় করালো। তেজ মেহুকে শান্তনা দিয়ে বলল,
কিচ্ছু হয়নি, সব ঠিক আছে। মেহু এতে করে যেনো একটা স্বস্তির নিশ্বাস নিলো।

শুদ্ধ এবার তেজকে ডেকে নিয়ে গেলো অন্য সাইডে। শুদ্ধ সময় নিয়ে তেজকে জিজ্ঞেস করলো__
কিছু কি ম্যানেজ করেছিস। মেহুকে কোথায় রাখবি। শুদ্ধের কথার বিপরীতে তেজ বলল,
না রে। কিচ্ছু করতে পারিনি। আমাদের বাড়িতেও নিয়ে যাওয়া যাবে না। মেহুকে নিয়ে গেলেই আম্মুকে সব সত্য বলতে হবে। আর সবকিছু সামনে আসলে, রেনু বিবির হত্যার কথাটাও সামনে চলে আসবে। এতে করে মাহির ভাই বিপদে পড়ে যাবে। মেহুও চিন্তা করবে। আর আম্মুও মেনে নিবে না।

শুদ্ধ কিচ্ছুক্ষণ ভেবে একটা সিদ্ধান্ত নিলো। সবাইকে একসাথে ডেকে তার সিদ্ধান্তের কথা জানালো। শুদ্ধ বলল,
তেজ তুই মেহুকে বিয়ে করে নে। আর একটা বাসা ভাড়া করে মেহুকে নিয়ে ঐখানে থাকতে তাক।। তেজ অবাক হয়ে বলল। পাগল, বাসা ভাড়ার টাকা কোত্থেকে আনবো। আর একটা সংসার চালাতে, কত টাকা লাগে তোর কোনো আইডিয়া আছে। আর বাড়ি থেকেই বা কি বলে বের হবো।

শুদ্ধ,তেজকে আশ্বাস দিয়ে বলল, আরে সব হবে। আমরা সবাই মিলে টাকা দিবো। দরকার হলে বাসা থেকে, কোচিং-এর নাম করে একস্ট্রা টাকা নিবো। আর তুই বাড়িতে বলবি। আমি হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করবো। তাহলেই তো হবে।
দেখ তেজ, এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। এমনিতেও এমন অবিবাহিত ছেলে মেয়েকে, কেউ বাসা ভাড়া দিবে না। তাই আমি যা বলছি তাই কর। আর দুই বছর পর কোনো না কোনো একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে। বর্তমান পরিস্থিতি দেখে ভবিষ্যত খারাপ করলে চলবে না।

তেজ সময় নিলো। কিচ্ছুক্ষণ ভেবে অপরাপর সিদ্ধান্তে হ্যাঁ বলল। তেজের হ্যাঁ তে সবাই হইহই করে উঠলো। মেহুকে রাজি করিয়ে, ত্বহা তার নানার সাহায্য নিয়ে, মেহু আর তেজের বিয়েটা করিয়ে দিলো। শহরে সাইডে একটা দুই রুমের বাসা ভাড়া নিলো তেজ। বন্ধুদের সাহায্যে নিয়ে টুকিটাকি কয়টা জিনিস কিনে ঘর সাজানো হলো। অনেক কষ্টে মা বাবাকে রাজি করিয়ে। তেজ হোস্টেলের নাম করে বেরিয়ে আসে বাড়ি থেকে। প্রতিমাসে চার বন্ধু মিলে দশ হাজার টাকা ম্যানেজ করে দেয় তেজকে। তেজও বাবার থেকে একস্ট্রা টাকা নিয়ে, কোনো মতে মেহুর পড়াশোনা পাশাপাশি সংসার চালানোর কাজ সারছে।

দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেলো দুইটা বছর। কলেজের গন্ডি পেরিয়ে এবার নতুন জীবনে পদার্পণ করবে তেজ আর মেহু। এর মধ্যেই সুখ সংবাদের মতো একটা দুশ্চিন্তা বর করলো তেজের মাথায়। তেজের গা হাত পা কাঁপছে। কোনো এক অজানা সুখ সংবাদ তেজকে আরো চিন্তিতো করে দিচ্ছে। মেহু পাশেই মুখ গোমড়া করে বসে আছে। এমনিতেই বন্ধুদের উপর ভরসা করে চলতে হয় তেজকে। এখন যদি এর মধ্যে আরেকজন আসে। তাহলে কেমনে বন্ধুদের কাছে মুখ দেখাবে তেজ।

তেজ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল। যা হবে দেখা যাবে।

চলবে__ইনশাআল্লাহ