#দুই_হৃদয়ে_সন্ধি
#পর্বঃ২০
#Nova_Rahman
ব্যাগপত্র গুছিয়ে পুরোপুরি রেডি হয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো উদয়। রাতের ফ্লাইটে বাবা সারোয়ারের কাছে সিঙ্গাপুর যাচ্ছে উদয় আর তার মা ঊষা সারোয়ার। উদয়ের বাবাও একজন ডক্টর। তিনি বর্তমানে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। ড. সারোয়ারের খুব ইচ্ছে ছিল ছেলে আর বউকে নিজের সাথে সিঙ্গাপুর রাখবে। কিন্তু দেশের প্রতি এক আকাশ সমপরিমাণ ভালোবাসা আর মায়া মমতাকে তোয়াক্কা করে, অন্য দেশে বসতি স্থাপন করার সিদ্ধান্তে উদয় আর তার মা বরাবরই নারাজ পোষণ করতেন। বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন হওয়ায় উদয়ের সিদ্ধান্তে প্রিয় মাতৃভূমি ত্যাগ করতে নিজেকে প্রস্তুত করেন ঊষা সারোয়ার। __
উদয় একটা রঙিন কাগজের পদ্রদা হাতে নিয়ে, স্টাডি টেবিলে সামনে এসে দাড়াল। তেপায়া চেয়ারটা টেনে স্টাডি টেবিলে সামনে বসে, এলোমেলো ভাঙা চুড়া শব্দ ব্যাবহার করে রোদসীকে একখানা চিঠি লিখলো।
চিঠি~
প্রিয় ভৃঙ্গরাজের রুদ্রানী।
পত্রের শুরুতেই, মনে অন্তরের অন্তস্তল থেকে এক স্টেথোস্কোপের ভালোবাসা দিলাম তোমাকে। অবাক হচ্ছ! এক স্টেথোস্কোপের ভালোবাসা দিলাম বলে? অবাক হওয়ারেই কথা। যাকগে! অবাক হয়ো না। পৃথিবীর সবচেয়ে শুদ্ধতম ভালোবাসাটাই আমি তোমাকে দিলাম। আমার কাছে স্টেথোস্কোপের ভালোবাসাটাই পৃথিবীর সবচেয়ে শুদ্ধতম ভালোবাসা বলে মনে হয়। কারণ, স্টেথোস্কোপেই একমাত্র যে আমাদের মনকে বুঝতে পারে। একজন মানুষ অসুস্থ হলে, আমরা সবার আগে সেই জায়গা-টাতেই স্টেথোস্কোপটা ধরি, যেখানে আমাদের প্রিয় মানুষটাকে লুকিয়ে রাখি। আমার কাছে ডাক্তারি পেশাটা ছিল একটা নেশা। আর স্টেথোস্কোপ ছিল আমার ভালোবাসা।
তবে কি জানো রুদ্রাণী?
পৃথিবীর সব নেশাকে তুচ্ছ করে তোমার নেশাতে আসক্ত হয়েছিলাম। পৃথিবীর সব ভালোবাসাকে তুচ্ছজ্ঞান করে তোমাকে ভালোবেসে ছিলাম। কিন্তু তুমি কি করলে! একমুঠো দুঃখ আর অবহেলা প্রাপ্তির খাতায় জুড়ে দিলে।
“আমি আমার শান্তি বিসর্জন দিয়ে তোমাকে ভালোবেসে ছিলাম। ফলস্বরূপ একমুঠো দুঃখ কুড়িয়ে আমার শান্ত মনকে অশান্ত করলাম।”
তোমার অবহেলা আমাকে এতো আঘাত করতো। মাঝে মাঝে মনে হতো মরে যায়। গভীর রাতে গলা কাটা মুরগির মতো ছটফট করতাম। তোমার কথা মনে হলেই প্যানিক এ্যাট্রাকে মৃত্যুর মতো যন্ত্রণা হতো। মৃত্যুপথযাত্রী পানির তৃষ্ণার মতো, তোমাকে দেখতে চেয়েও পায়নি। তখন কি যে যন্ত্রণা হতো বুকে।। ভাবলেই গা শিউরে ওঠে। আমি সব সইতে পারবো কিন্তু অবহেলা না। আমি অবহেলা ফিরিয়ে দেই।
তোমাকে ভালোবাসি সম্মান করি। কিন্তু তোমাকে পাওয়ার যে প্রবল আকাঙ্ক্ষা ছিলো। সেটা আর এখন নেই। এখন আমি নিজেকে নিয়ে বাঁচতে চাই। নিজেকে ভালোবাসতে চাই। সবশেষে বুঝতে পারলাম__
“নিজেকে নিজে ভালোবাসার মতো শান্তি। অন্য কারো ভালোবাসায় পাওয়া যায় না।”
পুর্নজন্ম বলে যদি কোনো বিধান থাকতো। তাহলে আমি আবারও জন্ম নিতাম, শুধুমাত্র তোমার সাথে সংসার করার জন্য রোদসী।
“তোমাকে ছাড়া অপূর্ণ হয়ে। এক বুক হাহাকার নিয়ে পৃথিবী ত্যাগ করবো। এর থেকে বড় আফসোস হয় না বোধকরি। ”
“তোমার স্মৃতিতে কেমন সাদা কালো রংয়ের মতো ঝাপসা হয়ে থেকে গেলাম আমি। রঙিন হওয়া তো কেবল স্বপ্ন মাত্র।”
“তোমার উপমা থেকে আমার উপসংহারটা মুছে দিয়ো।”
প্রিয়দের ভালোবাসায় ভালো থেকো প্রিয় রুদ্রাণী। চলে যাচ্ছি দেশ ছেড়ে। ফিরবো কিনা জানিনা। পড়াশোনাটা এবার মন দিয়ে করতে পারবে। আমি নামক অসহ্যকর ব্যাক্তি আর তোমার ফোনের স্কিনে জ্বলজ্বল করবে না। সময়ে কিংবা অসময়ে তোমার ফোনে রিংটোনে শব্দে আর বিরক্ত হবে না।
ভালোবাসি রুদ্রাণী। অনেক বেশি ভালোবাসি। পাবোনা যেনেও ভালোবাসি। আজও আমি তোমাকেই ভালোবাসি প্রিয় রুদ্রাণী।
অকপটে সময়ে কিংবা অসময়ে যদি আমাকে মনে পড়ে। তাহলে ভৃঙ্গরাজকে সযত্নে গুঁজে নিও তোমার ঐ কর্ণে।
পরিশেষে বলবো। সব চেয়ো কিন্তু আমায় চেয়ো না। আমাকে চাইলে বরং তোমার প্রাপ্তির খাতায় শূণ্যতা মিলবে। আমায় মিলবে না। আমি আর তোমার হবো না। আর নিজের যত্ন নিয়ো।
______
তোমার প্রিয় ভৃঙ্গরাজ
উদয় চিঠিখানা ভাজ করে সযত্নে রেখে দিলো তার বুকপকেটে।
উদয় এবার আরো একটা রঙিন কাগজের পদ্রদা হাতে নিলো। সময়ের শেষ প্রান্তরে এসে এলোমেলো শব্দ জুড়ে প্রিয় বন্ধুকেও একটা চিঠি লিখলো।
~~চিঠি~~
প্রিয় রোদ
আমার দেখা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ছেলেটাকে পত্রের শুরুতেই দিলাম প্রাণঢালা ভালোবাসা। তোমাকে যতই ভালোবাসা দেই না কেনো ততোই কম হয়ে যাবে। বর্তমান ইমেইলের যুগে আমি তোমাকে হাতের লিখা চিঠি দিচ্ছি। ব্যাপারটা হাস্যকর হলেও মারাত্মক কিউট। তোমাকে মিস করবো ভীষণ। শহরের অলিতে-গলিতে বা চায়ের দোকানে কোথাও আর বসা হবে না। খোঁজে পাবেনা দেশমাতৃকার কোনো স্থানান্তরে আমি উদয়কে। তাই হাতের লেখা চিঠিটা রেখে গেলাম তোমার জন্য। স্মৃতির পাতায় রেখে দিয়ো যত্ন করে। প্রিয় মানুষের থেকে অবহেলিত হয়ে। এক বিষাদীত মন, কিছু তিক্ততা আর ব্যর্থতার গল্প নিয়ে পাড়ি দিবো সিঙ্গাপুরে। আর হয়তো বা দেশে ফিরা হবে না। তোমার বিয়েতেও থাকা হবে না। সময় ফুরিয়ে আসছে। আর লিখতে পারছি না। সবশেষে ভালো থেকো বন্ধু। আর শত ব্যস্ততার মধ্যে একটুখানি সময় বের করে প্রিয় মানুষটিকে দিও। একটা কথা মনে রাখবে অবহেলায় শুধু দূরত্ব বাড়ে, দূরত্ব গোছে না। আর ভালোবাসাও কমে যায়।
তোমার মেডিকেলের সঙ্গী
উদয় দুইটা চিঠিকে ভাজ করে দুইটা খামের ভিতর ঢুকিয়ে দিলো। এয়ারপোর্টে যাওয়ার পথে রোদসীদের বাড়ির দারোয়ানের কাছে দুইটা খাম দিয়ে, আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলল__
চাচা, এই খামটা রোদকে দিবেন। আর এই খামটা রোদসীকে দিবেন। আর বলবেন_এটা উদয় দিয়ে গেছে,কেমন।
উদয়ের কথার বিপরীতে রহিম মিয়া মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বলল। উদয় আর দাড়ালো না। কেউ দেখে ফেলার আগেই, চটজলদি বেড়িয়ে আসলো হাওলাদার বাড়ি থেকে। আসার সময় দারোয়ান চাচাকে কড়কড়ে দুইটা একহাজার টাকার নোট দিয়ে এসেছে। রহিম মিয়া টাকাগুলো পেয়ে,উদয়ের পানে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতার হাসি দিলেন।
__________________
চৌধুরী বাড়ির ডয়িং রুমে থমথমে পরিবেশ বিরাজমান করছে। নিস্তব্ধতা যেনো চারিদিকে জেঁকে ধরেছে। সবার নিশ্বাসের গতি ওঠানামা করছে। কোনো এক অনাকাঙ্খিত বার্তা শোনে। সবার চোখে মুখে অবিশ্বাসের রেশ। অবাকের সীমা পেরিয়ে সবাই কথা বলতেও ভুলে গেছে।
তাতান চৌধুরী গম্ভীর মুখে বসে বসে আছেন সোফাতে। তার ঠিক সামনেই মাথা নত করে দাঁড়িয়ে আছে তেজ। ঠিক তার পাশেই শুদ্ধ, উল্লাস, ইরফান, ত্বহা আর মেহু। তরু চোখ ছলছল করছে প্রিয় সইকে দেখে। কিন্তু অভিমানের পাল্লা ভাবি আজ। এতোকিছু হয়ে গেলো আর তাকে একটা বারও জানানো হয়নি। জাহানারা চৌধুরীও আজ বাকরুদ্ধ। কিছু বলার ভাষা খুজে পাচ্ছেন না তিনি। আত্মীয়স্বজন ছিছিছি করছে। তাতান চৌধুরী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল__
আমি বুঝতে পারছি না, তোমাদের দু’জনকে নিয়ে কি সিদ্ধান্ত নিবো। জাহানারা তুমি বলো আমি কি করবো। এতো বড় কাজটা আমাদের ছেলে কি করে করতে পারলো। তাও আবার দুই বছর আগে। মেয়েটা এখন প্রেগ্যানেন্ট। আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। স্বামীর কথার বিপরীতে জাহানারা চৌধুরী স্থুল কন্ঠ কাদে নামিয়ে বলল__
দেখুন যা হবার তো হয়েই গেছে। এখন আর নতুন করে অশান্তি করে লাভ কি। আর এমনিতেও তো মেহুকে আমরা আমাদের বাড়ির বউ করে নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম। এখন যখন হয়েই গেছে। তখন মেনে নেওয়া ছাড়া তো কোনো উপায় নেই।
তাতান চৌধুরী আর কথা বাড়ালেন না। চলে গেলেন নিজ কামরায়। তার এখন একটু রেস্ট নেওয়া দরকার। এতো চাপ তিনি নিতে পারছেন না। মেহু এক কোণে দাড়িয়ে থেকে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। মেয়েটার দুঃখ বুঝি এ জন্মে ফুরালো না।
শুদ্ধ এক পা দু পা করে এগিয়ে এলেন জাহানারা চৌধুরীর দিকে। অনুমতি বিহীন নিজের শক্তপোক্ত হাত দাড়া, জাহানারা চৌধুরীর হাত দু’টো ধীর মুষ্টি করে ধরলো। অনুনয় করে বলল__
আন্টি প্লিজ আর মুখ ফিরিয়ে রাখবেন না। অন্ততপক্ষে মেহুর দিকে তাকিয়ে আমাদের মাফ করে দিন।মানছি আমরা ভুল করেছি। কিন্তু সবটা ভুল বলে বিবেচনা করাটাও ভুল হবে। তখন আমরা ছোট ছিলাম। এতো বড় সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খাচ্ছিলাম। তখন কোনটা ভুল আর কোনটা সঠিক। সেটার সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। ভয় পেয়েছিলাম খুব। তাই আপনাদের কাছে আসিনি।
ও আন্টি মাফ করে দিন না। মেয়েটা বড্ড কপাল পোড়া। না আছে মা, না আছে বাবা। মেয়েটা বড্ড ভালোবাসার কাঙ্গাল। আপনি একটু ওকে ভালোবাসলে, ও আপনাকে সবটা দিয়ে ভালোবাসবে।
কথাগুলো বলার সময় শুদ্ধর কন্ঠ কাঁপছিল। মেহুকে নিয়ে বলতে গেলেই যেনো শুদ্ধর কন্ঠরোধ হয়। কি কষ্ট সহ্য করেছে মেয়েটা। ভাবতে গেলেই গায়ের লোম দাড়িয়ে পড়ে।
উল্লাস এবার জাহানারা চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলল____
আন্টি আপনি চাইলে আমরা আর তেজের সাথে মিশবো না। আমি জানি আপনি আমাদের কাউকেই সহ্য করতে পারেন না। আপনার মতে আমরা বড়লোক বাপের বিগড়ে যাওয়া বখাটে ছেলে। আসলেই ঠিক ভাবেন আন্টি। আমরা আসলেই বখাটে। কিন্তু মনুষ্যত্বহীন না। তেজকে আমরা খারাপ বানাইনি। তবে একটা কথা বলে যায় আন্টি। যখন আপনার খারাপ সময়ে আপনার ভালো বন্ধুগুলোকে আপনার পাশে পাবেন না। তখন এই বখাটে ছেলেগুলোকে ডাকতে পারেন। সাহায্য করতে ছুটে আসবো।
উল্লাস আর দাড়ালো না। একদমে পুরো কথাগুলো বলেই বেরিয়ে এলো বাসা থেকে। একে একে শুদ্ধ, ত্বহা আর ইরফানও বেরিয়ে এলো। জাহানারা চৌধুরী হতভম্ব হয়ে বলল,
এতো গাঢ় বন্ধু আজকাল দেখাই যায় না। তিনি হাসলেন। পরক্ষণেই চোখ ঘুরিয়ে অদূরে দাড়িয়ে তাকা মেহুর দিকে দৃষ্টি তাক করলেন। মেয়েটার শরীর শুকিয়ে হাড্ডিসার হয়ে গেছে। মায়াবী নয়ন জোড়ায় কালসিটে দাগ পড়েছে।
জাহানারা চৌধুরী মেহুর কাছে গিয়ে দাড়ালেন। আলতো হাতে মেহুর থুতনিতে হাত রেখে মুখটা উঁচু করে ধরলেন। ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলেন___
কি ব্যাপার চৌধুরী বাড়ির বউ বুঝি ভয় পেয়েছে? মেহু আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। জাহানারা চৌধুরীকে দুইহাতে ঝাপটে ধরে,মেহু ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না করে দিলো। জাহানারা চৌধুরী মেহুর মাথায় হাত বুলিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করছে। এতোদিন পরে যেনো মায়ের আদর পেলো মেহু। বিড়াল ছানার মতো গুটিয়ে রইলো জাহানারার বুকে।
তরু আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। রাগে দুঃখে চোখ দিয়ে পানি উপচিয়ে পড়ছে। তরু দ্রুত পা ফেলে মেহুর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। মেহুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে, পর পার ঠাস ঠাস করে মেহুর গালে দুইটা থাপড়া লাগিয়ে দিলো তরু। মেহু বেচারি গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে থাকে। তরু এবার মেহুকে রেখে তেজের দিকে ছুটে গেলো। তেজকে কিছু বুঝতে না দিয়ে,তেজের নাক বরাবর এক ঘুষি মারে। তেজ বেচারা তাল সামলাতে না পেরে মাটিতে পড়ে যায়। তরু হাটু মুড়ে বসে পরে মাটিতে। কান্নারা আজ দলাপাকিয়ে গলা দমবন্ধ করে দিচ্ছে।
তেজের নাক দিয়ে গলগল করে রক্ত বেরুচ্ছে। তেজ কোনোমতে রক্তটা মুছে তরুকে এসে জড়িয়ে ধরে। তেজের মতো করেই মেহুও তরুকে জড়িয়ে ধরে। সব রাগ অভিমান গুছিয়ে আবারও তিন বন্ধু এক হলো।
চলবে ___ইনশাআল্লাহ
#দুই_হৃদয়ে_সন্ধি
#পর্বঃ২১
#Nova_Rahman
আলাপনের রং মহলে পরিনত হয়েছে আজ চৌধুরীর বাড়ির ডয়িং রুম। কথার ফুলঝুরি আজ উপচিয়ে পড়ছে তাদের গল্পের ঝুলি থেকে। হাসাহাসি, অল্পস্বল্প খাবার দাবার, আড়াম্বণের এক মিষ্টি মূহুর্ত।
বড়দের থেকে একটু দূরে পায়ের উপর পা তুলে দিব্যি আরাম করে সোফায় বসে আছে রোদ। যদিও শান্ত শীতল তার চক্ষু চাহনি। কিন্তু ভিতরে এক আকাশ সমান তুমল আঁধির। ধৈর্য্য শক্তি আর বাদ মানছে না। বউকে দেখার এক সমুদ্র চক্ষু তৃষ্ণা নিয়ে দাঁতে দাঁত চিপে বসে আছে। পরিস্থিতি আজ শুভ দিনের কথাবার্তায় না হলে। সব অমর্ষ রোদ আজ উসুল দিতো।
সোফায় গা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিলো রোদ। পরক্ষণেই পকেট হাতড়ে মুঠোফোন টা বের করে আনলো। চটজলদি তরুর ফোনে কল দিলো। টানা দুইতিন বার রিং হওয়ার পর তরু কল রিসিভ করলো। তরু কল রিসিভ করেই হ্যালো বলল,
তরুকে আর কিছু বলতে না দিয়ে,মাঝ পথেই থামিয়ে দিল রোদ। রোদ এবার স্থুল কন্ঠ কাঁদে নামাল জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে তরুকে উদ্দেশ্য করে বলল,
শোনো মেয়ে,
আসার সময় শাড়ি পড়ে আসবে। আমি আমার প্রথম বিয়ের আলাপনে অলকানন্দাকে শাড়ি পরিহিত লুকে দেখতে চাই। এক হাত ঘোমটা টেনে,পায়ের নুপুর পড়ে। অলকানন্দা আসবে আমার বুকে ঘন্টা বাজিয়ে। শুনছো মেয়ে!
তরু আশ্চর্য হয়ে বলল,
হঠাৎ আপনার কি হলো। এমন আবেগঘন কথা বলছেন যে।
রোদ সময় নিলো। পরপর হেসে বলল __
তুমিই তো আমার আবেগ মেয়ে। তুমি আমার প্রেম, তুমিই আমার অলকানন্দনা।
তরু হাসলো। পরক্ষণেই মিহি কন্ঠে রোদকে জিজ্ঞেস করলো__
শাড়ি পড়েই আসতে হবে?
তরুর প্রশ্নের বিপরীতে রোদ চোখবুঁজেই উত্তর দিলো___
হ্যাঁ শাড়ি পড়েই আসতে হবে অলকানন্দা। একদম রক্তলাল রঙ্গনা হয়ে। চায়ের ট্রে হাতে নিয়ে, দীপ্ত পায়ে হেঁটে হেঁটে আমার সামনে এসে দাড়াবে। আটপৌরে শাড়ির ঘোমটা টেনে আমার সামনে এসে বসবে। আমি তাকাবো, দেখবো, আটপৌরের ঘোমটা তুলে হাতে হাজার দশেক টাকা তুলে দিব। তুমি টাকাগুলো নিয়ে, লজ্জায় মুখ লুকাবে শাড়ির আঁচলে। ব্যাপারটা সুন্দর না!
তরু ফের হাসলো। সেই হাসির শব্দদ্বয় এসে রোদের হৃদয়ে সন্ধির ঝড় তুললো।
রোদ নিজেকে সামলালো। বেসামাল হয়ে যাচ্ছিল। কন্ঠে স্থৈর্যতা এনে, রোদ খসখসে গলার তরুকে শুধালো __
হেহে করে না হেঁসে। আমি যা বলেছি তাই করো। তিড়িংতিড়িং করে একটুও এদিক থেকে ওদিক করবা না। শাড়ি পড়তে বলেছি মানে শাড়িই পড়বা। ওকে!
তরু আর কথা বাড়ালো না। মিহি কন্ঠে হেঁসে জবাব দিলো___
আজ্ঞে ডাক্তার সাহেব। তাই হবে।
রোদ আর কিছু বলল না। খট করে কল কেটে দিলো। সোফাতে গা এলিয়ে মৃদু হেঁসে বলল,
শোনো রাজ্ঞী অঙ্গজা।
“প্রেমে মারো নয়তো বিষে মারো। তবুও আমায় ভালোবেসো। কিন্তু ছেড়ে যেয়ো না।”
_______________
মেহু একটা বেগুনি রঙের শাড়ি বের করে তরুকে দেখালো। তরু চোখমুখ কুঁচকে বলল,
নারে দোস্ত! এটা হবে না। বেডা বলেছে লাল শাড়ি পড়ে যেতে। একদম রক্তলাল অঙ্গনা হয়ে।
তরুর কথার বিপরীতে মেহু মৃদু হেঁসে, চোখটিপে বলল___
বাহ! বর মশাইয়ের কথায় এখন থেকেই এতো উঠবস করছ ননদিনী।
তরু মেহুকে একটা চাপড় মেরে বলল,
শ’য়’তানি একদম পিঞ্চ মেরে কথা বলবি না। তারাতাড়ি সাজিয়ে দিবি কিনা বল। আমার ডাক্তার সাহেব আবার আমাকে বেশিক্ষণ না দেখতে পেলে, হুলুস্থুল কান্ড বাঁধিয়ে দিবে।
মেহু গালে হাত দিয়ে,অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
বা বাহ্! এতো প্রেম?
তরু মুচকি হেসে হাত নাড়িয়ে বলল__
শুধু প্রেম না। ভালোবাসাও সে আমার। আমি থাকে ভালোবাসি। যতখানি আঁধার ভালোবাসে আলোকে। আকাশ ভালোবাসে মেঘকে। নদী ভালোবাসে সাগরকে। চৈত্র ভালোবাসে বর্ষণকে। বুঝলেন মহারাণী।
মেহু শুধু অবাক হয়ে দেখে গেলো তরুকে। মেহু ফিসফিস করে বলল,
হুম বুঝলাম। ভালোবাসা সুন্দর। তার থেকেও বেশি সুন্দর আমার দোস্ত ননদিনী।
তরু তাড়া দিয়ে বলল___
তারাতাড়ি শাড়ি পড়িয়ে দে মেহু। আমার আর তর সইছে না। তরুর কথার বিপরীতে মেহু ভ্যাবলার মতো থাকিয়ে বলল,
দাঁড়া দিচ্ছি। এতো উতলা হবি না। তোর বর তোকে রেখে চলে যাচ্ছে না। তোর বর তোর মতোই। বউ পাগল জামাই। জামাই পাগল বউ।
তরু মুখ ভেঙচি মেরে বলল,
আমার জামাই আমাকে ভালোবাসে বলে। তোর কি জ্বলে?
তরুর কথার বিপরীতে মেহুও পাল্টা মুখ ভেঙচি মেরে বলল__
তোর জামাইয়ের ভালোবাসা দেখে আমার জ্বলবে কেনো রে? আমার জামাই আমাকে কম ভালোবাসে নাকি? তাকিয়ে দেখ! জামাইয়ের ভালোবাসায় একদম মোটা হয়ে গেছি। হুহ!
তরু অবাক হয়ে বলল__
বিয়ের পর লজ্জা শরম সব পানি দিয়ে গিলে ফেলেছিস। ছ্যাহ্!
মেহু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
তুইও বিয়েটা কর। তোরও লজ্জা শরম আর থাকবে না। দেখিস!
রোদের ধৈয্যের বাদ আর মানছে না। লজ্জা শরম সাইডে রেখে। অধৈর্য্যেহীন মানব বউ পাগল হয়ে এক অভাবনীয় কান্ড ঘটিয়ে ফেললো। রোদ বার কয়েক শ্বাস নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করলো। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তাক করে রিক হাওলাদারকে হাক ছেড়ে ডাকলো__
এসপি সাহেব।
রোদের ডাকে হকচকিয়ে রিক হাওলাদার তাকালো ছেলের পানে। ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো__
কি হয়েছে? এইভাবে ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছ কেনো?
রিক হাওলাদারের কথার বিপরীতে রোদ দাঁতে দাঁত চিপে বলল__
আমার বউ কোথায় এসপি সাহেব। আমার বউকে কি এনে দিবেন। নাকি আমিই বউয়ের রুমে চলে যাবো। বিশ্বাস করুন! ধৈয্য আর কুলচ্ছে না। বউকে দেখার জন্য চোখ দু’টো বেয়াড়া লাগামহীন হয়ে পড়েছে।
“চোখেরও আমার অসুখ করেছে। শুধুমাত্র অলকানন্দাকে দেখার জন্য। ”
প্লিজ! তাত্তাড়ি কিছু করুন। বউকে ছাড়া আমার কেমন দমবন্ধ দমবন্ধ লাগছে। শরীর অসাড় হয়ে আসছে। চোখে অন্ধকার দেখছি সবকিছু। তাত্তাড়ি আমার বউকে এনে দিন। না হলে, একবার বউয়ের রুমে চলে গেলে, আর সকাল না হওয়া অব্দি বেরুচ্ছি না। এখন বলুন কি করবেন! আমার বউকে এনে দিবেন। নাকি আমি বউয়ের ঘর থেকে ঘুরে আসবো।
রিক হাওলাদার হকচকিয়ে যায়। কি থেকে কি বলবেন, ঠিক ঠাহর করতে পারলো না। ছেলের মুখে ফের এমন বোমা বিস্ফোরণ কথা শুনে, তড়িৎ গতিতে দৃষ্টি ঘুরালো প্রিয় বন্ধুর দিকে। মনের ভিতর এক আকাশ সমপরিমাণ ভয় আর লজ্জা নিয়ে,দৃষ্টি তাক করলো প্রিয় বন্ধুর দিকে। তাতান আবার কিছু শুনে ফেলেনি তো?
তাতান চৌধুরী কেমন হা করে তাকিয়ে আছে রোদের পানে। লোকের মনে হয় বোধগম্য হয়নি। তার মেয়ের জামাই যে এতো মাত্রাতিরিক্ত ঠোঁটকাটা হতে পারে।
রিক হাওলাদার হেহে করে হেসে দিয়ে বলল__
এই তাতান শুনছিস?
রিক হাওলাদারের ডাকে তাতান চৌধুরীর কোনো ভাবান্তর নেই। সে যেনো বর্তমানে পৃথিবী ছেড়ে মঙ্গলগ্রহে অবস্থান করছে। তার কিছু বোধগম্য হচ্ছে না। সে একভাবেই তাকিয়ে আছে রোদের পানে।
তেজ হাত দিয়ে কান চেপে ধরে রেখেছে। পৃথিবীর কোনো ভাইয়েই তার বোনের নামে এমন কথা শুনতে প্রস্তুত নন। সেটা তেজকে দেখলেই বোঝা যায়। তেজ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল__
আল্লাহ, সব পাগল একসাথে কেনো? কেনো কেনো কেনো?
রিক হাওলাদার বিরক্ত হলো। কনুই দিয়ে বন্ধুকে একটা গুঁতো মেরে বলল__
এই তাতানের বাচ্চা তাতান। একদম হা করে আমার ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকবি না। আমার ছেলে লাখে একটা। শুধু একটু ঠোঁটকাটা স্বভাবের। এই আর কি। এইসব ব্যাপার না। চল আমরা গপ্পো করি।
তাতান চৌধুরী মুখ ঝামটি মেরে বলল,
দেখবো না মানে। যে ছেলের সাথে মেয়ে বিয়ে দিবো। সেই ছেলের চরিত্র সম্পর্কে আমি জানবো না। সেটা কি করে হয়।
রিক হাওলাদার মাথা চুলকে ফিসফিস করে বলল,
এতো জানতে যাসনে দোস্ত। বেশি জানতে গেলে নিজের চরিত্রেই কলঙ্ক লেগে যাবে।
তাতান চৌধুরী হিমশিম খেয়ে বলল,
কেনো?
তাতান চৌধুরীর প্রশ্নের বিপরীতে রিক হাওলাদার কোনো উত্তর দিলো না। চুপচাপ বসে রইল এক পাশে।
পিছন থেকে রোদ গলা উঁচিয়ে ডাক দিয়ে বলতে লাগলো__
ও প্রিয় শ্বশুরমশাই। এতো কি আমার বাপের সাথে গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করছেন। আমাকেও বলুন আমিও একটু শুনি।
রোদের কথার বিপরীতে তাতান চৌধুরীর বোন লাবণ্য মাহতাব মুখ ঝামটি মেরে বলল__
আমার ভাই আর তোমার বাপ বলাবলি করেছে। তুমি যে একটা ঠোঁটকাটা অসভ্য ছেলে।
রোদ ঠোঁট কামড়ে হেসে উত্তর দিলো __
আমি অসভ্য হলে,আপনার ভাই আরো বড় অসভ্য। লাবণ্য মাহতাব ন্যাকা কান্না করে তাতান চৌধুরীকে বলল_
ভাই দেখো দেখো! এই নাকি তোমার মেয়ের জামাই। কি অসভ্য ছেলেরে বাবা। নিজে অসভ্য হয়ে এখন তোমাকেও অসভ্য বলছে। ছিছিছি ছিহ!
লাবণ্য মাহতাবের কথার বিপরীতে রোদ দাঁত দিয়ে ঠোঁট চিপে বলল_
আরে ফুফিশ্বাশুরি আপনি এতো হাইপার হচ্ছেন কেনো? সব দিক বিবেচনা করে কথা বলবেন।পৃথিবীতে কোনো মানুষেই সভ্য হয়ে জন্ম নেয়নি। আপনার ভাইও সভ্য জাতে পড়ে না। আপনার ভাই, মানে আমার শ্রদ্ধেয় শ্বশুরমশাই যদি সভ্য জাতের মানুষ হয়ে জীবন যাপন করতেন। তাহলে তেজ আর তরু পৃথিবীতে এন্ট্রি নিতো না। সেই হিসাবে তো আমি উনার থেকে বেশ ভালো মানের উন্নত জীব। আমি তো শ্বশুরের মেয়ের সাথে এখনও কিছু করিনি।
আমি বউ পাগল হয়ে, দু’বছর ধরে বিয়ে বিয়ে করছি। কিন্তু আজও বিয়ে করতে পারিনি। আর ঐদিকে শ্বশুরের ছেলেকে দেখুন। কত ফাস্ট! বিয়ে করে একদম প্রেগন্যান্ট বউ নিয়ে হাজির। আর ঐদিকে বেচারা আমি বউকে টাচও করিনি। তারপরেও আমাকে সভ্য জাত থেকে অসভ্য জাতে ফিক্কা মারলেন। হাউ ইন্টারেস্টিং লজিক!
তাতান চৌধুরী শুকনো একটা ঢোক গিলে থমথমে গলায় রিক হাওলাদারকে শুধালো__
এটা কি তোর ছেলে?
রিক হাওলাদার নাক মুখ কুঁচকে উত্তর দিলো __
হ্যাঁ! এটা আমারেই ছেলে। শুধু ডাক্তারি পড়াশোনা করে ডিএনএ পাল্টে গেছে। এই যা!
বহু অপেক্ষা আর তৃষ্ণার্ত প্রাণের অবসান গঠিয়ে বধূ আসলো এক হাত লম্বা ঘোমটা টেনে চায়ের ট্রে হাতে নিয়ে। রোদ চোখ তুলে তাকালো। আবেশিত নয়ন ঘুরিয়ে দেখলো আর ফিসফিসিয়ে বলল,
শোনো মেয়ে অলকানন্দা,
“তুমি আমার জন্য একাই একবারই শেষ এবং শুরু। আমার তুমি ব্যথিত অন্য কাউকে লাগবে না।”
তরুকে দেখে চৈতালি হাওলাদার দ্রুত সোফা ছেড়ে উঠে এলো। এক হাতে মেহুকে আলিঙ্গন করে অন্য হাতে তরুকে আলিঙ্গন করলো। চায়ের ট্রে হাতে নিয়ে তরুকে বসতে বলল। তরু লম্বা ঘোমটাটা আরেকটু টেনে লম্বা করে রোদের মুখোমুখি বসলো।
মেহু গিয়ে জাহানারা চৌধুরীর পাশে দাঁড়ালো। জাহানারা চৌধুরী হাতের ইশারায় মেহুকে নিজের পাশে বসতে বলল। মেহু কোনো বাকধ্বনি ছাড়ায় জাহানারা চৌধুরীর পাশে গিয়ে বসে পড়লো।
বউ দেখার পর্ব গুছিয়ে রোদ এক হাজার টাকার কড়কড়ে একটা নোট তুলে দিলো তরুর হাতে। তরু টাকা নিয়ে, ঘাড় খাত করে তাকাল রোদের পানে। এই বুঝি চোখ দিয়ে রোদকে গিলে খাবে। রোদ ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো __
কি হয়েছে?
তরু কিছু বলল না। শুধু দাঁতে দাঁত চিপে কিড়মিড় করতে লাগলো।
বড়দের আলাপ আলোচনার পর্ব গুছিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই শুক্রবারে রোদ আর তরুর বিয়ের কাজ শেষ করা হবে।
খাওয়া দাওয়া পর্ব গুছিয়ে একে একে সবাই বিদায় নিয়ে বেরিয়ে আসলো চৌধুরী বাড়ি থেকে। রোদও আসলো সবার পিছন পিছন। বাগানে আসতেই রোদের মুঠোফোনটা কর্কশ শব্দ করে বেজে উঠলো। রোদ কপাল কুঁচকে, পকেট হাতড়ে মুঠোফোন তুলে নিলো হাতে।
ফোনের স্কিনে জ্বলজ্বল করছে অলকানন্দা নাম দিয়ে সেইভ করা নাম্বার টা। রোদ হাসলো, সময় নিলো। পরক্ষণেই বাগানে এক নির্জন স্থানে গিয়ে কল রিসিভ করলো।
রোদ ফোন রিসিভ করার সাথে সাথেই তরু বুলি আউড়াতে লাগলো__
এই যে মিস্টার জিংকু না চিংকু! আপনি না বলেছেন আমাকে দেখে ১০ হাজার টাকা দিবেন। তাহলে আপনি আমাকে ১ হাজার টাকা দিলেন কেনো? কেনো কেনো কেনো?
রোদ আলতো হেসে বলল,
কিহ! আমি দশ হাজার টাকা দিবো বলেছিলাম? এ্যাহ্ আমার তো মনে পড়ছে না। কি সব যা-তা বলছো তুমি।
তরু কপাট রাগ দেখিয়ে বলল,
একদম ভন্ডামি করবেন না। তাত্তাড়ি আমার টাকা দিন। না হলে আপনাকে বিয়ে করবো না। বাবাকে বলে বিয়ে ক্যান্সেল ঘোষণা করবো। তারপর দেখা যাবে কালকের খবরের হেডলাইনে লিখা আছে। বউ দেখতে গিয়ে বউকে পর্যাপ্ত পরিমানে টাকা না দেওয়াতে। বউ বিদ্রোহ ঘোষণা করে বিয়ে ক্যান্সেল করেছে। এখন বলুন কি করবেন?
তরুর কথার বিপরীতে রোদ ঠোঁট কামড়ে হেসে জবাব দিলো__
ঠিক আছে। বাগানের দখিন দিখে আসো। টাকার পাশাপাশি আরো স্পেশাল কিছু দিয়ে দিব। আসো, তাত্তাড়ি আসো।
স্পেশাল কিছুর কথা শুনে তরুর মন আনন্দে নেচে উঠে। তরু ফোনটাকে বিছানায় রেখে একদৌড়ে চলে যায় বাগানের দখিন দিকে। রোদ পিছন ফিরে দাড়িয়ে ছিল। তরু এসে রোদকে ডাকলো_
ডাক্তার সাহেব আমি এসে গেছি। রোদ সামনে তাকিয়ে বলল,
ওহ তুমি এসে গেছো।
তরু মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বলল।
রোদ একটু ঝোঁকে এসে তরুর কানে ফিসফিস করে বলল,
তা মেয়ে টাকা আগে নিবে নাকি রোদের থেকে স্পেশাল কিছু।
তরু কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দিলো __
স্পেশাল কিছুই আগে নিবো।
তরুর কথার বিপরীতে রোদ ঠোঁট কামড়ে হাসলো। তরু শুকনো একটা ঢোক গিললো সেই হাসি দেখে। কি মারাত্মক সুন্দর সেই হাসি।
তরুর ভাবনার মাঝেই রোদ হেঁচকা টানে তরুকে মিশিয়ে নিলো নিজের সাথে। একহাতে তরুর কোমর পেচিয়ে অন্য হাতে তরুর চুল ভাঁজে মুষ্টি করে ধরলো। আচমকা টান দেওয়াতে তরু কিছুটা ভড়কে গেলো। শুকনো ঢোক গিলে পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করলো। লজ্জায় আড়ষ্টতায় বুঝেও তা বুঝতে পারলো না তরু।
রোদ দুরত্ব গোছালো, কাছে এলো। ঠকঠক করে কাঁপতে থাকা তরুর ওষ্ঠদ্বয়ে চোখ বুলালো। কি সুন্দর থেমে থেমে কাঁপছে লোহিত ওষ্ঠদ্বয়। রোদ জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজালো। নিজেকে শান্ত করলো। কেমন বেয়াড়া লাগামহীন হয়ে যাচ্ছিলো। রোদ জোরে জোরে বার কয়েক শ্বাস নিয়ে নিজেকে ঠিক করলো। গোছালো দূরত্ব ক্ষুন্ন করে। সরে এলো তরুর কাছ থেকে।
তরু ভয় আর আড়ষ্টতায় চোখ খিঁচে বন্ধ করে রাখলো। রোদ হাসলো। পরক্ষণেই দু’হাতের সাহায্যে তরুর মুখশ্রী আঁজলা করে নিলো। আঁজলাকৃত মুখশ্রী দু’হাতের সাহায্যে একটু উঁচু করে ধরলো। তরু এখনও চোখ খিঁচে বন্ধ করে আছে।
রোদ আলতো হেসে তরুর ললাটে ওষ্ঠ ছোঁয়ালো। সময় নিয়ে শব্দ করে চুমু খেলো।
এক অনাকাঙ্খিত স্পর্শে তরুর শরীরে যেনো হিমশীতল স্রোত বয়ে গেলো।
শীতে জুবুথুবু মানুষের মতো ঠকঠক করে কাঁপতে লাগলো তরু।
রোদ একটু ঝুঁকে এসে তরুর কানে ফিসফিস করে বলল,
কি ম্যাডাম! আপনার কাছে অনাকাঙ্খিত স্পেশাল কিসটা কি মিষ্টি লাগেনি?
তরু জবুথবু হয়ে বলল,
__না।
রোদ ফের হাসলো। ঠোঁট উল্টিয়ে তরুকে বলল,
উমমম! মিষ্টি লাগবেই বা কি করে। এটা তো ঘুষ দেওয়া কিস। ঘুষ দেওয়া কিস মিষ্টি লাগেনা।
মিষ্ট লাগে ভালোবাসা-বাসি কিসে। দুই হৃদয়ে সন্ধির সন্ধিক্ষণে যে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। সেখানে অধরে অধর ঠেকিয়ে চুম্ম করলে মিষ্টি লাগবে। সেখানে ওষ্ঠদ্বয়ের মিষ্টি কি আর ললাটে পাবে। বলো মেয়ে!
তবে চিন্তা করো না মেয়ে। বিয়ের পর সবকিছু সাথে আমি পরিচয় করিয়ে দিবো। তোমার সাক্ষাৎ করাবো সুখময় এক ভালোবাসার সাথে।
তরু আর দাড়াল না। তাড়া দিলো রোদকে। বাসয় কাজ আছে বলে, শীতে ভোগা রোগীর মতো ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে, রোদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো বাড়ির ভিতরে।
‘রোদ পিছন থেকে হাসতে হাসতে তরুকে ডেকে বলল, ’
“কি মেয়ে অলকানন্দা টাকা নিবে না।”
তরুর দৌড়ের মাঝেই উত্তর দিলো_
না আমার টাকা লাগবে না।
#চলবে_ইনশাআল্লাহ