#দৃষ্টির_অলক্ষ্যে
#পর্বঃ২৮ ও ২৯
#রূপন্তি_রাহমান (ছদ্মনাম)
সালাম সাহেবের বাড়ি বসে আছেন খালেদ মোশাররফ এবং ফাহমিদা বেগম। অপেক্ষা সালাম সাহেবের আসার। হালিমা চায়ের কাপ এনে টি টেবিলে রাখলেন। তা দেখে ফাহমিদা বেগম কিঞ্চিৎ হাসলেন। বসার ঘরের এক কোণায় বকুল দাঁড়িয়ে। এতো বছর পর নিজের বাড়িতে খালেদ মোশাররফ কে দেখে চোখমুখ কুঁচকে তাকিয়ে আছেন। চিন্তা করতে লাগলেন ঠিক কি কারণে আসতে পারেন। কিন্তু তিনি খালেদ মোশাররফের উদ্দেশ্য বা অভিপ্রায় অর্থোদ্ধার করতে পারলেন না।
আধঘণ্টা অপেক্ষা করার পর সালাম এলেন বসার ঘরে। একটা পলক খালেদ মোশাররফের দিকে তাকিয়ে তিনি দৃষ্টি নত করে ফেলেন।
‘বাব্বাহ্! তোর সময়ের এতো দাম? সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি তোর আসার খবরই নেই।’
সালাম সাহেব অন্যদিকে তাকিয়ে আছেন। খালেদ মোশাররফের কথাগুলো যেন তাকে স্পর্শ করতে পারছে না। শুনতেই পাননি এমন ভাব।
আরো কিছু বলতে নিলেই ফাহমিদা বেগম খালেদ মোশাররফ কে ইশারায় না করে। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলেন খালেদ মোশাররফ। সালাম সাহেবের এমন ভাবলেশহীন ব্যবহারে মনঃক্ষুণ্ন হয় উনার।
‘যা বলতে এসেছি। নাযীফাহ’র বিয়ে ঠিক করেছি। আগামী শুক্রবার।’
দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন বকুল। খালেদ মোশাররফের কথায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যেতে নিলেই হালিমা গিয়ে উনাকে ধরেন। সালাম সাহেব বি’স্ফো’রিত চোখে তাকিয়ে আছেন। যেন খালেদ মোশাররফ অবিশ্বাস্য কিছু বলেছেন।
‘তোর আর আমার পথচলা সেই জন্মলগ্ন থেকে। একসাথে বেড়ে উঠা। শৈশব ছেড়ে কৈশোরে পা দিলাম। তারপর হলাম যুবক। বছর খানিকের ব্যবধানে। দু’জন বিয়েও করলাম। তুই সন্তানের বাবা হলেও আমি বাবা হলাম বহু পরে। নিজের সন্তানের থেকে আমার সন্তানকে তুই বেশি আদর করতি। এরপরে সব বদলে গেলো। তুই একপাক্ষিক দ্ব’ন্দ্ব শুরু করলি। আমার সাথে তোর কিসের শ’ত্রু’তা আমি আজও ভেবে পেলাম না। কাঁচা চুলে পাক ধরেছে। বয়সের ভাড়ে হাতের শিরা ভাসমান হয়েছে। আর বাঁচবোই কয়দিন। তোর সাথে আমার আড্ডায় মজতে ইচ্ছে করে, এক পাতে ভাত খেতে ইচ্ছে করে। হয়তো সেগুলো আর সম্ভব না। তুই আমাদের মাঝে অদৃশ্য দেয়াল তৈরি করেছিস। কেন করেছিস তা আমার আজও অজানা। যদি কখনো আমার মেয়েটাকে নিজের মেয়ের মতো ভেবে থাকিস আসিস এই অধমের বাড়ি। আমার মেয়েটা কিন্তু তোকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে।’
‘মেয়ের বিয়ে ঠিক করে ফেললে আর আমরা কিছু জানি না। এতোটা পর ভাবো?’
বকুলের কথায় মলিন হাসলো ফাহমিদা বেগম। খালেদ মোশাররফের কর্ণগোচর হলো না বকুলের কথা। উনি থমথমে মুখে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছেন।
‘অনেক সময় অনেক কিছু চাইলেও পারা যায় না। বিয়ে-শাদির ব্যপারে মেয়েটার উপর দিয়ে কি যায় তাতো জানোই। তাই কাউকে বলিনি।’
____________________
রাত পোহালেই বিয়ে। খালেদ মোশাররফ মোটামুটি আয়োজন করেছেন। মনোয়ারা বেগমের কথামতো পরে দুই পরিবার মিলে কমিউনিটি সেন্টারে বড় করে রিসিপশনের আয়োজন করবেন। ফয়সাল এসেছে দু’দিন আগে। এতেই যেন খালেদ মোশাররফের একটু স্বস্তি মিলিছে। ফাহিম টুকটাক জিনিস দেখাশোনা করছে। বড় দায়িত্ব তার কাঁধে দেওয়া হয়নি। সালাম সাহেবের পুরো পরিবার উপস্থিত। শিহাবকে জোর করে আনা হয়েছে। তবে সালাম সাহেব কিংবা খালেদ মোশাররফ কেউ কারো সাথে কথা বলছেন না।
ক্যাটারিং এর লোকরা কি করছে তা দেখার জন্য বাড়ির পিছন দিকে যায় খালেদ মোশাররফ। সেখানে পথ আগলে দাঁড়ায় সালাম সাহেব।
‘আমাদের দায়িত্ব দিলে কি আমরা দায়িত্ব পালন করতাম না? ছেলেপক্ষের লোক আনা লাগে।’
‘মানুষজন তো আমাকে বহু আগেই আমাকে পর করে দিয়েছে। দায়িত্বের কথা বললে যদি ভাবে সে তাকে দিয়ে কা’মলা খা’টাচ্ছি তাই আর বলিনি।’
গরু জ’বাই হচ্ছে। পাশেই ফয়সাল দাঁড়ানো। সে আচমকা দেখতে পেল সালাম সাহেব শিহাবকে টেনে কোথাও একটা নিয়ে যাচ্ছেন। সবার মনযোগ গরুর দিকে। ফয়সাল সবার দিকে একবার নজর বুলিয়ে তাদের পিছু ছুটলো।
____________________
নাযীফাহদের বাড়ি তে মোটামুটি জমজমাট থাকলেও একেবারে শান্ত তাহমিদদের বাসা। হাতে গোনা গুটিকয়েক মানুষজন।
গভীর রাত! নিদ্রায় তলিয়ে যাওয়া তাহমিদের ঘুম হালকা হয়ে যায় রিংটোনের শব্দে। ঘুমঘুম চোখে মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকাল সে। ফয়সাল নাম দেখেই তন্দ্রাভাব কে’টে গেল তার। তড়িঘড়ি করে উঠে বসে।
‘কোনো খবর আছে ফয়সাল ভাই?’
‘তোমাকে ইনবক্সে একটা ভিডিও দিচ্ছি। মুখ অস্পষ্ট হলেও কথাগুলো বোঝা যায়। আই থিংক এরাই মেইন কা’র্লপিট।’
কল কে’টে তাহমিদ মেসেঞ্জারে আসল। ভিডিওতে রেকর্ড হওয়া প্রতিটা কথা খুব মনযোগ সহকারে শুনলো। অতঃপর বাঁকা হেসে দুদিন আগে আসা কয়েকটা আপত্তিকর ছবি বের করলো।
‘ফাঁকা মাঠে তো অনেক গোল দিলেন। আমি আপনার নাকের ডগা দিয়ে বল নিয়ে গোল দিবো। আপনি কিচ্ছু করতে পারবেন না। কন্ঠস্বর যখন শুনেছি খোঁজে বের করতেও সময় লাগবে না। আর ফয়সাল ভাই তো আছেই।’
_________________
বরযাত্রী এসে হাজির হয় কনের বাড়ি। বর বরণ করছে কয়েকজন। বর আসার কথা শুনেই বুক ধু’কপুক করছে নাযীফাহ’র। আর কিছুক্ষন এরপরেই তার পরিচয় বদলে যাবে। ঠিকানা বদলে যাবে।
‘খুব কি ভ য় করছে?’
মাথা উঁচিয়ে তাকায় নাযীফাহ। চোখের সামনে তনয়াকে দেখে প্রশস্ত হাসল।
‘এসেছো?’
‘বোন বানিয়েছি। বোনের বিয়ে তে না এসে থাকা যায়। শুধু আমি না আমাদের এমডি স্যারও এসেছেন।’
‘সবাই আমাকে রেখে চলে গেল। তুমি থাকো না আমার পাশে।’
‘ভ’য় করছে বুঝি?’
বিনিময়ে নাযীফাহ লাজুক হাসল।
বিয়ে বাড়ির এই জমজমাট পরিবেশে হাসফাস করছে ফাহিম। নে’শা চেপেছে তার। এতো মানুষ জন তার বিরক্ত লাগছে। এতো ভীরের মাঝে নিজের কাঙ্ক্ষিত মানুষ টা কে পেয়ে তার পিছু পিছু গেলো ফাহিম। এই অসহ্য অবস্থা থেকে একমাত্র সেই উদ্ধার করতে পারবে।
বরের জন্য বরাদ্ধকৃত আসনে বসে আছে তাহমিদ।তার পাশে ফয়সাল এসে বসল। ভীরের মাঝে গতকাল রাতের কেউ একজনকে দেখতেই ফয়সাল সবার অগোচরে তাহমিদের হাত ধরে চোখের ইশারায় সামনে তাকাতে বলে। তাহমিদও ইশারায় কিছু জিজ্ঞেস করতেই ফয়সাল মাথা দুলায়।
____________________
বিয়ে পড়ানোর সময় হয়ে এলো। সবাই বর আর কনের কাছে। একটু ফাঁকা জায়গায় পেতেই যুবক এদিক ওদিক তাকিয়ে মোবাইল বের করল। ভাড়া করা ছেলেটাকে এখনই বিয়ের আসরে ডাকতে হবে। কাল রাতে মানুষ টা তাকে যেভাবে হুম কি দিল। বিয়েটা ভে’স্তে নাম দিলে তার মাকে মে’রে ই ফেলবে। বর্তমানে তার একটাই লক্ষ্য বিয়ে ভে’ঙে দেয়া।
পকেট থেকে মোবাইল বের করতেই ফাহিম গিয়ে তার পা জড়িয়ে ধরলো।
‘শিহাব ভাই আমাকে কিছু একটা দাও। আমি আর স’হ্য করতে পারছি না। সারা শরীর আমার কেমন জানি করছে। দাও না কিছু একটা।’
ফাহিম কে টেনে দাঁড় করাল শিহাব।
‘আমি কি এই বিয়ে বাড়িতে তোর জন্য ড্রা/গ নিয়ে ঘুরছি। কিছুক্ষণ বাদে নাযীফাহ’র বিদায়। তোর ডাক পড়বে। যা বোনের কাছে যা। আর এসব নিলে যে কেউ বুঝে যাবে। আমার জরুরি কাজ আছে।’
ফাহিম এবারে শিহাবের হাত জোড়া চেপে ধরলো। প্রবল উত্তেজনায় সারা শরীর কাঁপছে। ঘন ঘন শ্বাস ফেলছে। চক্ষু জোড়া ক্ষণে ক্ষণে র/ক্তি/ম হচ্ছে। সমস্ত কথা মুখে জড়িয়ে যাচ্ছে। কি বলতে কি বলছে কিছুরই আগামাথা নেই।
‘আল্লাহর দোহাই লাগে ভাই আমাকে কি করবা কর। আমি আর পারতেছি না।’
ফাহিমের অবস্থা বেগতিক। ফাহিমের এই করুণ হাল দেখে অপরাধবোধ ঘিরে ধরল তাকে। কি কাজের জন্য এসেছিল সেটাই ভুলে গেল শিহাব। মোবাইল প্যান্টের পকেটে রেখে ফাহিমের হাত দু’টো শক্ত করে ধরল।
‘আমার চোখের দিকে তাকা ফাহিম।’
ফাহিম শিহাবের কথা মতো তার চোখের দিকে তাকাল। মিনিট পাঁচেক তার সেই স্থির চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার পর সে পুনশ্চ বলল,
‘এবার চোখ দু’টো বন্ধ কর। আর অনুভব কর তোর আশেপাশে শুধু গাছ আর গাছ। তুই কোনো সবুজ গাছগাছালিতে ভরপুর কোনো উপত্যকায় দাঁড়িয়ে আছিস। সেখানে শুধু পাখির কিচিরমিচির শুনা যাচ্ছে। আর শীতল হাওয়া এসে গা ছুঁয়ে দিচ্ছে।’
এভাবে ঠিক কতক্ষণ ছিলো কারো জানা নেই। শিহাব ফাহিমের দিকে পলক হীন তাকিয়ে আছে। ফাহিম সেই কল্পনার হিমশীতল পবন গায়ে মাখছে।
‘এইবার ধীরে ধীরে চোখ খুল।’
এইবার ফাহিম ধীরে ধীরে চোখ খুলে। দু’চোখে যেন রাজ্যের ক্লান্তি আর দূর্বলতা।
‘এবার ঠিক আছিস?’
‘ভীষণ ঘুম পাচ্ছে শিহাব ভাই।’
‘যাক আল্লাহ আল্লাহ করে খালেদ ভাইয়ের মেয়েটার বিয়ে সম্পন্ন হলো। মেয়েটার জন্য কত টেনশন করতো মানুষটা। এবারে উনি একটু স্বস্তি পাবেন।’
রাস্তা দিয়ে দু’টো লোক বলতে বলতে যাচ্ছে। কথা গুলো শ্রবণেন্দ্রিয় হতেই চমকে উঠে শিহাব। তার মানে বিয়ে শেষ? সে তার কাজে এসেছিল এই ফাঁকা জায়গায়। ফাহিম সব ভেস্তে দিল। তার মা? মানুষটা তার মায়ের কোনো ক্ষতি করে বসবে না তো? ফাহিম রেখেই সে ছুটলো বিয়ে বাড়ির সেই জমজমাট পরিবেশে।
ফাহিম সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো। দুচোখে তার রাজ্যের ঘুম।
‘আরে ফাহিম তুই এই জায়গায়? ওইদিক তোর বোনের বিয়ে শেষ। তোকে তো তোর বাবা খুঁজছে।’
‘হয়তো মন খারাপ বোনের বিয়ে বলে।’
___________________
বিয়ে পড়ানো শেষ। তাহমিদের মুখে রাজ্য জয়ের হাসি। কবুল বলার আগ পর্যন্ত সে ভেবেছিল। কোনো না কোনো ঝা/মেলা হবে। সেভাবেই সে প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু ঝামেলা না হওয়ায় বেশ অবাকই হয়েছে। যে এতোগুলো বছর নাযীফাহ’র বিয়ে আটকে রাখল সে এতো সহজে নাযীফাহ’র বিয়ে হতে দিল ব্যপারটা হজম হচ্ছে না তাহমিদের। নাকি মানুষটা আরো বড় কোনো ফ/ন্দি আঁটেছে?
মনোয়ারা বেগম উনার হাত ব্যাগ থেকে দু’টো মাঝারি সাইজের চুড়ি বের করলেন। নাযীফাহ’র হাতে পড়াতে পড়াতে বললেন,
‘তোমার শ্বশুর বহু আগে দু’জোড়া চুড়ি গড়িয়েছিলেন। হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন তিনি আর বাঁ’চবেন না। একজোড়া মেয়ের জন্য আরেক জোড়া ছেলের বউয়ের জন্য। আমার ছেলের যা জেদ কোনোদিন ভাবিনি চুড়ি জোড়া তার মালিকের সাক্ষাৎ পাবে। তবে আজ আমার সংসার পূর্ণ।’
অতঃপর তিনি অশ্রুসিক্ত চোখে নাযীফাহ’র দু’হাতে চুমু আঁকলেন।
‘আমার ছোট্ট সংসারটা এই হাতে আগলে রাখবে তো মা? আমি না আর কিছুই চাই না।’
মাঝ বয়সী এই আবেগী নারীর দিকে তাকিয়ে রইলো নাযীফাহ।
তূবা নাযীফাহ’র মুখোমুখি হয়ে দাঁড়াল। নাযীফাহ’র গালে হাত রেখে অনিমেষ চেয়ে রইলো।
‘ নারী হিসেবে দায়িত্ব বেড়ে গেল। একটা সংসার গুটি কয়েক মানুষকে সামলাতে পারবে তো? মানুষ গুলোকে আগলে রেখো আর কিছু চাই না।’
মানুষের আড়ালে দাঁড়িয়ে অশ্রু বি/সর্জন দিচ্ছেন ফাহমিদা বেগম। এতোদিন চেয়ে এসেছেন মেয়ের যেন একটা গতি হয়। তবে আজ যেন কলিজা ফে/টে যাচ্ছে তার।
হালিমা এসে কাঁধে রাখতেই তার কান্নার মাত্রা বেড়ে গেল।
বিদায় বেলা! খালেদ মোশাররফের বুকে মাথা রেখে পাঞ্জাবি খামচে ধরে রেখেছে নাযীফাহ। বাবাকে তার ছাড়তে ইচ্ছে করছে না। একটুও না। ইচ্ছে করছে বাবার বুকেই সারাটা জীবন পার করে দিতে। সবকিছু কেমন এক পলকে বদলে গেলো। তার পরিচয়ও বদলে গেল।
‘দেরি হয়ে যাচ্ছে তো নাযীফাহ। এবার রওনা দেওয়া উচিত।’
বাবার কথা শুনে আরো আঁকড়ে ধরল সে বাবাকে। এক পর্যায়ে সে ফোপাঁতে শুরু করে। খালেদ মোশাররফের কলিজা ফে/টে যাচ্ছে। বলতে ইচ্ছে করছে আমার মেয়ে কে নিবেন না।
তিনি বুক থেকে মেয়ের মাথা তুললেন। কপালে চুমু দিয়ে বলেন,
‘মন দিয়ে সংসার করো মা। এই সহজ সরল মানুষ গুলোকে আগলে রেখে।’
‘তোমার ছেলে কোথায় বাবা?’
এতো মানুষজনের মাঝে খালেদ মোশাররফ এদিক ওদিক তাকালেন। অদূরে ফাহিম দাঁড়ানো। তিনি চোখের ইশারায় ডাকতেই সে ধীর পায়ে এগিয়ে এলো। নাযীফাহ ভাই দেখা মাত্রই দু’হাতে জড়িয়ে ধরে।
ফাহিমের কেমন অনুভব হচ্ছে হয়তো সে কাউকে বুঝাতে পারবে না। নাযীফাহ তার কানে কানে শ্লথ গলায় বলল,
‘তোর বোঁজা কমলো। কেউ সম্পদে ভাগ বসাবে না।’
বলেই ছেড়ে দিল ফাহিমকে। বোনের কথা শুনে ফাহিম একেবারে স্থির হয়ে গেল। হয়তো কথা গুলোর জবাব তার কাছে নেই।
‘আমার মাকে দেখে রেখো বাবা।’ বলেই এক মুহূর্ত দেরি করল না নাযীফাহ। গাড়িতে উঠে বসল।
________________________
মাকে খুঁজতে হয়রান শিহাব। কোথাও নেই। বড্ড ভয় হচ্ছে তার মায়ের জন্য। কিছু একটা করে ফেলল না তো। মাকে খুঁজতে খুঁজতে সে নাযীফাহদের রান্নাঘরের পিছনে এলো। সেখানে এসেই তার চোখ ছানাবড়া। তার মা অচেতন হয়ে পড়ে আছে। দৌড়ে সে মায়ের কাছে গেল। নিঃশ্বাস পড়ছে কি না তা আগে চেক করলো। নিঃশ্বাস নিচ্ছে দেখেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সে। তারপর দেখলো কোথাও কোনো আ’ঘা’ত আছে কিনা। না কোথাও কোনো আ’ঘা’তের চিহ্ন নেই। চিন্তা মুক্ত হলো শিহাব। সেখান থেকে মাকে কোলে নিয়ে উঠানো আসতেই সবাই ঘিরে ধরল। সালাম সাহেব হন্তদন্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
‘কি হয়েছে তোর মায়ের?’
শিহাব জবাব না দিয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে রইল। কিছু সময় বাদে বলল,
‘শরীর হয়তো দূ’র্বল। খাওয়া দাওয়া তো করে না ঠিক মতো।’
একটা রুমে শোয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন ফাহমিদা বেগম। সবাইকে বললেন যেন কেউ ভির না করে। শিহাব মায়ের হাত টা ধরে বলল,
‘আপনারা যান আমি মায়ের কাছে আছি।’
একেক করে সবাই চলে গেল। শিহাব মায়ের একটা হাত শক্ত করে ধরে বসে আছে।
‘তোমার ছেলে কা’পুরষ মা। সে নিজের মনের কথাও বলতে পারে না। নিজের মাকেও রক্ষা করতে পারেনা। তোমাকে নিয়ে কোথাও একটা চলে গেলে হয়তো একটু সুখে থাকতাম। এতো ভীতু কেন তোমার ছেলে।’
কেউ একজন শিহাবের কাছে এসে দাঁড়াল। শিহাব তাকাল না সেদিকে। সে জানে মানুষটা কে।
‘এটা তো শুধু ডেমো দেখালাম। এর থেকেও খা”রাপ কিছু হবে।’
_______________________
ঢাকা পৌঁছাতে প্রায় নয়টা বেজে গিয়েছিল। সেজন্য বাড়তি কোনো ঝামেলা না করে নাযীফাহ কে সোজা তাহমিদের রুমে বসিয়ে গিয়েছে তূবা আর তামান্না।
বধূ বেশে তাহমিদের রুমে বসে নাযীফাহ। বসে থাকতে থাকতে তার কোমড় ব্যথা করছে। এতক্ষণ চোখ বুলিয়ে সে তাহমিদ রুম দেখছিল। রুমটা বেশ পরিপাটি। অবশ্য মানুষটাকে দেখলে বোঝা যায় সে কত গুছানো। দরজা খোলার আওয়াজে গুটিয়ে বসে সে। তাহমিদ এসেছে।
দরজা আঁটকে নাযীফাহ’র মুখোমুখি বসে তাহমিদ। গলা খাঁকারি দিয়ে সে নাযীফাহ’র মেহেদি রাঙা হাত দুটো ধরল। শিউরে ওঠে নাযীফাহ। তবে মাথা তুলে তাকাল না। নতজানু হয়ে বসে থাকা নাযীফাহ’র দিকে তাহমিদ অপলক, অনিমেষ তাকিয়ে রইল। বহু দিনের চোখের তৃষ্ণা মিটাতে ব্যস্ত সে।
‘আপনার কি এভাবে থাকতে কষ্ট হচ্ছে?’
এপাশ ওপাশ মাথা নাড়ায় সে। তাহমিদ পুনশ্চ বলল,
‘আপনি কি মুখটা একটু উঁচু করবেন? আমি আপনাকে দেখবো। জানেন আমার না এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না আপনি আমার। একান্ত আমার। যাকে কবুল বলে সবার সামনে দিয়ে নিজের করে নিয়ে এসেছি। বধূ সাজে আমি একটু আপনাকে মন ভরে দেখি।’
লজ্জায় মাথা তুলে তাকাতে পারল না নাযীফাহ। সেভাবেই বসে রইল। নাযীফাহ কে লজ্জা পেতে দেখে স্মিত, কুসুমিত হাসল তাহমিদ। ঘড়ির কাঁটায় সময় টিকটিক করে অতিবাহিত হচ্ছে। আচমকাই তাহমিদ বলে উঠলো,
‘আই ওয়ান্ট টু কিস ইউর ফরহেড।’
এবারে নাযীফাহ মাথা উঁচিয়ে তাহমিদের চোখের দিকে তাকাল। চোখ জোড়ায় হাজারো আকুলতা। না এই তৃষ্ণার্ত চোখে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যাবে না। সে তলিয়ে যাবে অতলে। তাহমিদ পুনশ্চ বলল,
‘ক্যান আই?’
নাযীফাহ শুকনো ঢুগ গিলে। পুরো শরীর অসাড় হয়ে আসছে তার। উত্তর কি দিবে? হ্যা নাকি না। ভেবে পেল না সে।
‘উত্তর দিলেন না যে। আমি কি নিরবতা কে সম্মতির লক্ষন হিসেবে ধরে নিবো?’
এবারেও স্থির রইল সে। তাহমিদ হাত দু’টো ছেড়ে দু গালে হাত রাখল। আঁতকে উঠল সে। সারা শরীরের তার কম্পনের সৃষ্টি হয়। সারা শরীরের শক্তি যেন ক্রমান্বয়ে ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। তাহমিদ তার মুখটা সামান্য উঁচু করতেই সে চোখ বন্ধ করে নিল। তার উষ্ম, পিপাসার্ত ঠোঁট ছুঁয়াল নাযীফাহ’র কপালে।
সারা শরীর কাঁটা দিয়ে উঠে নাযীফাহ’র। শিঁড়দারা বেয়ে নামে তরল স্রোত। সে দু’হাতে খামচে ধরল তাহমিদের পাঞ্জাবি।
কপাল ছেড়ে এবার নাযীফাহ কে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিল তাহমিদ। অনুমতি নিল না।
___________________
নিস্তব্ধ রাত! সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। কানে মোবাইল চেপে অসহায় চিত্তে বসে আছে তূবা। দুচোখে ঘুম কিন্তু ফয়সালের জন্য ঘুমোতে পারছে না।
‘ফয়সাল আমাকে ঘুমোতে দিবে? আমি ঘুমের জন্য চোখ খুলতে পারছি না।’
ছাদে পায়চারি করছে ফয়সাল আর রাগে ফোঁস ফোঁস করছে। একবার ছাদের এদিকে যাচ্ছে তো আরেকবার অন্যদিকে।
‘বউকে আদর করার জন্য কাছে পেয়েছিলাম সেই প্রাচীনকালে। কাজ শেষে ঢাকা ফিরলাম কোথায় বউ কাছে আসবে। তাকে একটু আদর করবো তা না। শ্রদ্ধেয় শা লা বাবু তার শ্বশুর বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন। অবুঝ মন কে বুঝ দিলাম। তিনদিন পরে তো কাছে পাবো তখন পুষিয়ে নিবো। ওমা একি আমাকে কেউ বউয়ের কাছে ঘেঁষতেই দিচ্ছে না। আরে আজব বিয়ে করছে তাহমিদ আর বউ থেকে দূরে আমি। নিজে তো ঠিকই বউকে আদর করছে। আমি হতভাগা এই মাঝরাতে বউয়ের সাথে মোবাইলে কথা বলছি। তোমার ভাইকে আমি অভি শা প দিলাম সারাজীবন বউ দৌড়ের উপর রাখবে।’
‘আর তোমাকে তোমার বউ ছেড়ে দিবে?’
‘ওমা ছাড়বে কেন? দুজনে তো মির জাফর। একই র’ক্ত শরীরে। নেহাত তোমার শরীরের এই অবস্থা না হলে,,,,’
‘ফয়সাল আমার শরীর খারাপ করছে।’
‘আর আমার বউয়ের জন্য মন আনচান করছে।’
____________________
বসার ঘরে নাযীফাহকে ঘিরে বসে আছে তূবা আর তামান্না । বাসা মোটামুটি ফাঁকা। হাতে গোনা যে কয়জন আত্মীয় ছিল উনারা নাস্তা করেই চলে গেছেন।
তামান্না ঘাড় কাত করে আশেপাশে দেখল। না কেউ নেই। তূবার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে রগড় গলায় বলল,
‘কি গো বাইট টাইটের দা’গ তো গলায় দেখলাম না। নাকি মেকআপ করে ঢেকে এসেছো।’
নাযীফাহ একেবারে লজ্জায় সিটিয়ে গেল। মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে তার।
‘আহারে তাহমিদ আমার ফরএভার ক্রাশ। সেও বিয়ে করে নিল। ভেতরটা কেমন কাঁদছে। নিশ্চয়ই আমার ক্রাশ রাতে অনেক আদর করেছে। ওই পেট মোটা, টাক মাথা লোকটার প্রেমে না পড়লে আমি নির্ঘাত তাহমিদের সাথে প্রেম করতাম। আমার বর শার্ট গায়ে দিলে পেটের কাছের দু’টো বোতাম খোলা থাকে।’
‘আমি পেট মোটা আর টাক মাথা?’
‘তুমি চুপ থাকো।’ বলেই স্থির হয়ে গেল সে। পিছন ফিরে দেখে সোহেল রাগে ফুঁসছে। মিটমিট করে হাসছে তূবা। তামান্না দৌড়ে সোহেলের কাছে গেল।
‘আরে কে বলেছে এসব,,,, ‘
কথা শেষ করতে পারলো না তামান্না। তার আগেই হনহন করে সোহেল চলে গেল।
‘যাই আমি একটু জামাই কে আদর করে আসি। তোরা আড্ডা দে।’
‘তাহমিদ রুমে আছে। তুমি রুমে যাও। গিয়ে একটু বিশ্রাম নাও। ভালো লাগবে। আর ওর কথা কিন্তু মাইন্ড করো না। ও এমনই সবার সাথে সহজে মিশে যায়।’
বিনিময়ে নাযীফাহ শুধু হাসল।
__________________
‘কার্লপ্রিট তো তোমার চোখের সামনে।এদের মু’খোশ টেনে খুলে ফেল। বেশি সময় গড়ালে এরা আরো ভ’য়ংকর হয়ে যাবে।’
‘না ফয়সাল ভাই, এখনই সঠিক সময় আসেনি। আমি যদি হুট করে এসব বলি কেউ বিশ্বাস করবে না। তাছাড়া আপনি ফাহিম কে খেয়াল করেছেন?’
ফয়সাল কিছুক্ষণ ভাবলো।
‘ওকে তো সেভাবে খেয়াল করা হয়নি।’
‘ওর বিহেভিয়ার না কেমন এ/ব/নরমাল টাইপ। রেলওয়ে স্টেশনে নে/’শা খোর ছেলেদের মতো। ওর হাতের দিকে খেয়াল করলে বুঝতেেন। আমি যেমনটা ভাবছি তেমনটা হলে ফাহিমের জীবন হু’মকির মুখে। ওর ভবিষ্যত ধ্বংস হয়ে যাবে। তাছাড়া আমি তো এখন নাযীফাহ’র পাশে আছি। দেখি অলক্ষ্যে থেকে কি করতে পারে। হয়তো সে সামনে আসবে না হয় আমি অন্ধকার থেকে টেনে বের করবো।’
ফয়সাল তাহমিদের কাঁধে হাত রেখে কিছু বলতে গেলেই খেয়াল করলো নাযীফাহ দরজায় দাঁড়ানো। ফয়সাল তাহমিদ কে ইশারায় দেখালেই সে আশস্ত করে। শুনলে ভালো না শুনলে আরো ভালো । একদিন না একদিন সে জানতে পারবেই।
নাযীফাহ কে দেখে ফয়সাল চলে গেল। তাহমিদ নাযীফাহ’র কাছে যেতেই সে তাড়াতাড়ি করে বিছানায় উঠে বলল,
‘আমার শরীর খারাপ করছে আমি ঘুমাবো।’ বলেই তড়িঘড়ি করে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ল।
নাযীফাহ’র এমন বাচ্চামিতে হাসল তাহমিদ। সে হয়তো অন্যকিছু ভেবেছে। তাদের কথা যে শুনেনি এটাই অনেক।
__________________________
চোখের পলকে পাঁচটা মাস কে’টে গেল। এই পাঁচ মাসে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। তূবার প্রেগন্যান্সির আট মাস চলছে। ফয়সালের পা গলামি যেন দিনকে দিন বাড়ছে। তূবা মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে যায়। রেগেমেগে দু’কথা শুনিয়ে দিলে সে বলে,
‘আগের জমে থাকা পাগলামি গুলোও তো তোমাকে সহ্য করতে হবে।’
তাহমিদ যেন নাযীফাহ’র নে শায় আরো ডুবেছে। নাযীফাহও তাহমিদে আ সক্ত হয়েছে সমান তালে।
শুক্রবার!
দুজনেরই আজ অফিস বন্ধ। তাহমিদ ঘুমোচ্ছে। নাযীফাহ বারান্দায় এসে তোয়ালে মুড়ানো চুল গুলো ছেড়ে দিল। বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। চারপাশ রাতের আঁধারের ন্যায় অন্ধকার। আজ আর বৃষ্টি থামবে বলে মনে হয় না। বারান্দার গ্রিলে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে বৃষ্টি উপভোগ করছে সে। বৃষ্টির ছাঁট মুখে এসে পড়তেই এক অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে।
অকস্মাৎ এক শক্তপোক্ত পুরুষালী হাত নাযীফাহ’র শাড়ি ভেদ করে উন্মুক্ত উদর স্পর্শ করলো। ভড়কালো না নাযীফাহ। বরং মিষ্টি হাসলো। এই স্পর্শ তার চেনা। মানুষটা তার বড্ড কাছের। এই মানুষটা পাশে আছে বলেই জীবন বদলে গেছে তার। মানুষটার গায়ে মাতাল করা এক গন্ধ আছে যা নাযীফাহ ক্ষণে ক্ষণে পা গল করে দেয়।
তাহমিদ নাযীফাহ’র ভেজা চুলগুলে সরিয়ে কাঁধে ঠোঁট ছুঁয়াল।
‘এখানে দাঁড়িয়ে আছো যে ঠান্ডা লেগে যাবে তো।’
তাহমিদের উপর ভর ছেড়ে দিল নাযীফাহ।
‘উহু লাগবে না।’
‘কি সুন্দর রোমান্টিক ওয়েদার। আমার না আবার ইচ্ছে করছে,,,,,’
তাহমিদের বাহুতে হালকা চা’পড় মা’রে নাযীফাহ।
‘সারাক্ষণ মাথার মধ্যে কি এসবই ঘুরে?’
‘বউ পাশে থাকলে তো এসব ঘুরবেই মাথায়।’
‘জনাব দশটা বাজে। আপনার জন্য আমি এখনো খাইনি। মা ও আমার সাথে গাল ফুলিয়ে খায়নি। রুমের দরজা আঁটকে বসে আছে।’
‘তুমি বলোনি তার ছেলে দায়িত্বের সহিত কাজ করে যাচ্ছে। যেকোনো দিন সুখবর পাবে। বলছিলাম কি ওয়েদার টা কি রোমান্টিক মায়ের আশা পূরণ হওয়ারও একটা চান্স আছে।’
চোখ রাঙানি দেয় নাযীফাহ।
‘আপনি দিন দিন লাগামহীন হয়ে যাচ্ছেন।’
‘আচ্ছা নাযীফাহ? বিয়ের পাঁচ মাস শেষ না হতেই মা যে নাতিনাতনির জন্য বায়না করে তোমার রাগ হয়নি? সবাই তো বিয়ের প্রথম প্রথম চায় একটু ঘুরতে ফিরতে আনন্দ করতে।’
তাহমিদের খোঁচা খোঁচা দাড়িতে আবৃত গালে গাল ঘষে নাযীফাহ।
‘না জনাব। আমার তো বেশ লাগে। মায়ের আবদার শুনলে মাঝে মাঝে মনে হয় কোন ছোট বাচ্চা ভাই বোনের জন্য আবদার করছে। আপনি তাড়াতাড়ি গোসল করে আসেন। খিদে লেগেছে খুব। মাও না খেয়ে আছে। আজ আপনার প্রিয় ভুনাখিচুড়ি করেছি।’
‘একটু আদর করি?’
‘আবার।’
‘আজ তো ফাহিম আসার কথা। কাল মেসে নাকি বুয়া কি না কি রেঁধেছে কেউ খায়নি। বলেছিলাম এখানে থেকে কোচিং করতে। কিন্তু তুমি দিলে না। বাচ্চা ছেলে মেসে কি না কি খায়।’
তাহমিদের দিকে তাকিয়ে আছে নাযীফাহ। এই মানুষটা তার জীবনে আশার পর থেকেই অনেক কিছুই বদলেছে। ফাহিমের মাঝেও পরিবর্তন এসেছে। আগের ফাহিমকে যেন খুঁজে পায় সে। নিজের কৃতকর্মের জন্য কয়েকবার বোনের কাছে মাফও চেয়েছে ফাহিম।
‘ধন্যবাদ জনাব, আগের ফাহিমকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। আর একটু আধটু কষ্ট করুক।তাহলে বাবার মর্ম বুঝতে পারবে। তবে আজও জানলাম না ওর হয়েছিলটা কি।’
”আমাদের দৃষ্টির অলক্ষ্যে অনেক কিছুই ঘটে। মিত্রতার খো/লস ছেড়ে আপন মানুষগুলো যখন শ’ত্রুতার খোলসে আবৃত হয়, তখন পায়ের তলার মাটির সরে যায়। হয়তো আমরা আমাদের চোখ কালো কাপড়ে বেঁধে রাখি নয়তো তারা আমাদের চোখ দু’টো বেঁধে দেয়। প্রকাশ্য শ’ত্রু থেকে গোপন শ’ত্রু ভয়ানক। এরা জ্ব’লন্ত অ’গ্নি শি’খার ন্যায়।জ্বা’লিয়ে পুড়িয়ে ভ’স্ম করে দেয় বিশ্বাস আর ভালোবাসা।’
‘বুঝলাম না আপনার কথার মানে।’
‘তোমার জন্য একটা বিগ সারপ্রাইজ আছে। বিশেষ দিনে বিশেষ বো’ম ফাটবে।’
#চলবে