দ্বাবিংশতি পর্ব-০৮

0
261

#দ্বাবিংশতি
#লিখনে_মৃত্তিকা_চৌধুরী
#পর্ব_৮

১৪.

বসু সাহেবের কথা শুনে প্রায় সাথে সাথেই রাই নিজের প্রাইভেট প্লেনের পাইলটকে কল দিলো।

“হ্যালো,এন্ড্রেয়?”

“ইয়েস,ম্যাম।”

“বি রেডি,উই হ্যাভ টু গো টু বাংলাদেশ রাইট নাও।”

“ওকে,ম্যাম।”

এন্ড্রেয়কে রেডি হতে বলে রাই নিজের গার্ডসদের মধ্যে থেকে সেরা পঁচিশজনকে বেছে নেয়।শুদ্ধ এখনো বাসায় আসেনি।রাই তার ড্রাইভারকে কল দেয়।কিন্তু কল বারবার রিং হয়ে কেটে যায়।রাই পাগলের মত করতে থাকে।কোথাও আরাভ শুদ্ধের সাথে কিছু কিরে বসে নি তো?শুদ্ধকে হারানোর ভয় রাইকে আরো কাবু করে ফেলে।রাই শুদ্ধকে ফোন দিতে গেলেই তার মনে পড়ে শুদ্ধের ফোনে তো এই দেশের সিমকার্ড নেই।

“নো,নো!সিরিয়াসলি,রাই?তুই এত বড় একটা ভুল কীভাবে করতে পারলি?”

শুদ্ধকে খোজার জন্য রাই নিজের গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।বাহিরে প্রচন্ড ঠান্ডা আর বরফ পড়ছে।কিন্তু এগুলোর পরোয়া রাইয়ের নেই।

“ম্যাম,ডেভিডের লাস্ট লোকেশন এটা!”(ইন্দ্র)

রাই ইন্দ্রের দেওয়া লোকেশন অনুযায়ী পৌছানোর জন্য উন্মাদের মত গাড়ি চালাচ্ছে।কোনো মতে ডেভিডের ফোনের লোকেশনে পৌছে রাই দেখলো গাড়িসহ ডেভিড রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।গাড়িতে শুদ্ধ নেই।রাই এম্বুলেন্সে কল দিয়ে শুদ্ধকে আশেপাশে খুজতে শুরু করলো।

শুদ্ধ কোথাও নেই!রাই নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে তার গাড়িতে দুবার সজোরে লাথি দিলো।এরপর পকেট থেকে ফোন বের করে আরাভের নাম্বারে কল দিলো।আরাভ সাথে সাথেই রিসিভ করলো।

” তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম,ডার্লিং!”

“আরাভ,শুদ্ধ কোথায়?”

“ওহ,ওই ডাক্তার?আমি কীভাবে জানবো?রোসালাইন!দ্যা ওয়ান্টেড মাফিয়া!পারলে সময় মত খুঁজে বাচিয়ে নাও তোমার সো কলড অফ হাজবেন্ডকে!”

আরাভ কল কেটে দেয়।রাই বুঝতে পারেনা আসলে তার কি করা উচিত?শুদ্ধকেই সে বাঁচাবে নাকি তার বোনকে?রাই আর কিছু না ভেবে মাথা ঠান্ডা করার চেষ্টা করে।

“কুল ডাউন,রাই রোসালাইন!ইউ হ্যাভ টু বি!”

আজ রাইয়ের মাথা শান্ত হলোনা।তার মাথায় একটাই কথা ঘুরছে “ডু ওর ডাই!”

রাই নিজের গান লোড করলো নিজের গাড়িতে বসে।এরপর ফুল স্পিডে আরাভদের আড্ডাখানার কাঁচ ভেঙে সেখানে প্রবেশ করলো।আরাভ বেশিরভাগ সময়ই তার নিজস্ব ক্লাবেই থাকে।রাইয়ের এমন এন্ট্রিতে কেউ তেমন একটা অবাক হলো বলে মনে হলোনা।রাই থামলোনা সে যতদূর পর্যন্ত যাওয়া যায় ততদূর পর্যন্ত গাড়ি চালিয়ে থামলো।আরাভের গার্ডস দিয়ে ক্লাব ভর্তি হয়ে আছে। সবার হাতে নানা ধরনের অস্ত্র আছে।

রাই গাড়ি থেকে বের হয়ে সোজা গিয়ে আরাভকে জরিয়ে ধরলো।আরাভ এবার কিছুটা অবাক হলো।রাইয়ের পেটে থাকা লম্বাটে আকৃতির কিছুর সাথে একটু স্পর্শ লাগতেই রাই তাকে আরো জোরে জরিয়ে ধরলো।আরাভের বুঝতে বাকি রইলো না সে রাইয়ের সাথে চালাকি করতে গিয়ে নিজে কেমনভাবে ফেসে গেছে।

রাইয়ের দেহে পারমাণবিক বোমা লাগানো আছে।যদিও তা সল্প পরিমাণে। কিন্তু এখানে এটি বিস্ফোরিত হলে চারপাশে থাকা এলকোহলের সাথে মিক্সড আপ হয়ে তা বিরাট আকার ধারণ করবে।রাই এবার আরাভের কানে কানে বললো,

“আই লাভ ইউ,আরাভ।হ্যাপি জার্নি মাই লাভ!”

রাইয়ের গার্ডসরা চারপাশটা ঘিরে ফেলেছে।বাহিরে প্রচন্ড গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।কেউ কেউ ভেতরেও এসে পড়েছে।রাই আরাভকে জরিয়ে ধরেই বললো আমাকে গুলি মারলে বা আমার শরীরের একটু এফোড় ওফোড় আর তুমি সোজা ওপরে।আরাভ রাইকে নাড়ানোর চেষ্টা করলোনা।আর রাইও এক পাও নড়লোনা।শুধু বললো,

“তোমার মা হাসপাতালে ছিলোনা?আরাভ!একটু আগেই দেখা করে আসলাম তার সাথে।”

মায়ের কথা শুনতেই আরাভের চোখ বড় বড় হয়ে গেল।

“নো,নো!রাই শি ইজ মাই মম!দ্যাট কান্ট বি ট্রু রাইট?”

রাই সজোরে হেসে বললো,”হি ইজ মাই হাজবেন্ড,আরাভ!”

ঠিক তখনই অক্ষত অবস্থায় আরাভের মাকে নিয়ে ক্লাবে প্রবেশ করলো ইউজিন।এবার রাই আরাভকে ছেড়ে সাবধানে দূরে দিয়ে দাঁড়ালো।নিজের মাকে দেখতে পেয়ে আরাভ দৌড়ে গিয়ে তার কাছে দাড়ালো।আরেকবারের জন্য রাই আরাভকে মানুষ ভেবে ভুল করলো।আরাভ নিজের মায়ের কাছে গিয়ে দাড়াতেই রাইয়ের চোখ দিয়ে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো আরাভের মাকে দেখে।রাই চায়নি এসবের ভেতর এই অসুস্থ মানুষটাকে জড়াতে।কিন্তু কি আর করার!আর এই সুযোগেই আরাভ তার অসুস্থ মায়ের গলা টিপে ধরলো।

এই দৃশ্য দেখে রাই অবাকের চরম সীমায় পৌছে গেল।আরাভ তার মাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“হোয়াই,মম?জাস্ট ডাই!আরাভ ডোন্ট নিড আ উইকপয়েন্ট।”

ইউজিন আরাভের এই কান্ড দেখে তাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়।তখনি রাইকে ইন্দ্র ফোন দেয়।রাই কল ধরতেই ইন্দ্র বলে,”ম্যাম, আরাভের যেই গার্ডসাদের লাস্ট লোকেশন ডেভিডের গাড়ির কাছে পাওয়া গেছিলো।তারা সবাইই ডিরেক্ট এই ক্লাবে এসেছে।দ্যাট মিন্স স্যার ওখানেই আছে।”

“গুড নিউজ!” রাই এবার আর দেরি করলোনা।সে ইউজিনকে আরাভকে ছেড়ে দিয়ে; আরাভের মাকে নিয়ে ক্লাবের বাহিরে যেতে বললো।আরাভ জানে রাই কাউকে ছেড়ে দেওয়ার মানুষ না।তাই আরাভ ইউজিনের পা জরিয়ে ধরে রেখেছে।ইউজিন আরাভের একটু আগে করা কান্ডের জন্য তার মুখে সজোরে লাত্থি দিতেই আরাভ ব্যথায় কুকিয়ে উঠে ইউজিনকে ছেড়ে দেয়।

১৫.🖤

ইউজিন বের হতেই রাই নিজের আশেপাশে থাকা সবগুলো সিসি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে পাশবিকতার সাথে হাসলো।এরপর গুনে গুনে পাঁচটা গুলি করলো আরাভের গায়ে।আর বললো,

“তোর মত জানো*** বেঁচে না থাকাটাই শ্রেয়।”রাই কথাটা বাংলায় বলায় আরাভ কিছুই বুঝলোনা।

এবার রাই নিজের গায়ের বোমাটা খুলে মাটিতে লাগলো।এতে টাইমার অন করে দিয়ে নিজের গার্ডসদের বেরিয়ে যেতে বললো।তখনি রাইয়ের একজন গার্ড শুদ্ধকে নিয়ে বেজমেন্ট থেকে বেরিয়ে আসলো।

“মুভ,মুভ!”

রাই তার গার্ডের দিকে নিজের গাড়ির চাবিটা ছুড়ে দিলো।এরপর তারা শুদ্ধকে নিয়ে বেরিয়ে গেল।আরাভের ক্লাবের আশেপাশটা গোলাগুলিরর কারণে ইতিমধ্যেই শ্মশানে পরিণত হয়েছে।রাই এবার দূর থেকে দাড়িয়ে টাইমারে গুলি মারতেই মুহুর্তেই সব ছারখার হয়ে গেল।

এলকোহলের সাথে মিশে আগুন আকাশের অনেক উপরে পৌছে গেল।আর বিস্ফোরণের জন্য রাইও ছিটকে অনেক দূরে গিয়ে পড়লো।রাইয়ের মাথাটা ঘুরছে প্রচন্ড আকারে ।আশেপাশে কেউ নেই!তার শরীরটা আজ বেশীই দূর্বল লাগছে।তাহলে কি আজই রাইয়ের এই সুন্দর পৃথিবীতে শেষ দিন?

কিসের কি?

রাইয়ের জ্ঞান ফিরলো প্রায় চার ঘন্টা পর।সে আশেপাশে তাকাতেই তার সব গার্ডসদের দেখতে পেল।ওরা রাইয়ের জ্ঞান ফিরেছে দেখে অনেক খুশি।

“আসলেই রাই মাফিয়া কুইন!বাট নট দ্যাট টাইপ অফ ব্লাক মাফিয়া!শি ইজ আ এঞ্জেল।”

রাই ইউজিনকে কাছে ডেকে শুদ্ধের কথা জিজ্ঞেস করার আগেই শুদ্ধ তার ওয়ার্ডে প্রবেশ করলো।শুদ্ধ হাসলো রাইকে দেখে।আর বললো,

“আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে বাঁচাতে আসবেনা।”

“তুমি আমায় রিভেঞ্জ নিতে এত হেল্প করলে আর আমি তোমাকে এভাবে ফেলে দিয়ে চলেযাবো।এটা কি হয়?”

কথাটা শোনা মাত্রই শুদ্ধের মেজাজ বিগড়ে গেল।এই মেয়ের কাছে প্রতিশোধ ছাড়া ভালোবাসার কোনো সময়ই নেই!অসহ্যকর।কিন্তু রাই নেহাতই অসুস্থ থাকায় শুদ্ধ তেমন কিছু বললোনা।

দুইঘন্টা পর রাই সবাইকে নিয়ে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো।এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন পেরিয়ে রাই সবাইকে নিয়ে বের হতেই বাধলো আরেক বিপত্তি।এত কিছু মাঝে সে বসু আঙ্কেল কথা ভুলেই গিয়েছিলো।

এদিকে সায়ান বুঝতে পেরেছিলো কেউ তাকে ফলো করছে।তাই ইচ্ছাকৃতভাবে জঙ্গল ঘেরা একটা এলাকায় গিয়ে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করেছে ওখানেই ফেলে রেখে এসেছে সে বসু সাহেবকে।বেশ রক্তক্ষরণ হওয়ায় বসু সাহেব অজ্ঞান অবস্থায় আছে দীর্ঘক্ষণ।

এয়ারপোর্টের বাহিরে যেতে যেতে রাই নিজের সিম কার্ড অন করে বসু সাহেবকে কল দিলো।বসু সাহেবের ফোন তার থেকে বেশ কয়েক হাত দূরেই পড়ে আছে।ফোনের শব্দে আবছা আবছা জ্ঞান ফিরলো সেক্রেটারি বসুর।সে চোখ খুলে হাতড়ে মোবাইলটা খুজতে লাগলো।আর এদিকে সায়ানের বাড়ির লোকজন
ফাইজাদের বাসায় সায়ানকে নিয়ে পৌছে গেছে বহুক্ষণ।

চলবে,