ধূসর রঙের রংধনু পর্ব-০৩

0
282

#ধূসর_রঙের_রংধনু -৩
#তাসনিম_তামান্না

বাবুকে রুমে এনে জামা পড়িয়ে দিতে দিতে নিপা আদুরে কন্ঠে নানানরকমের বুলি আউড়াতে লাগলো। আর বাবু পিটপিট করে তাকিয়ে আছে মায়ের মুখের দিকে হয়তো বোঝার চেষ্টা করছে মা কি বলছে। রুদ্র সাওয়ার নিয়ে এসে বাবুকে কোলে নিয়ে বলল

— বাবুর নাম ঠিক করেছো?
— হ্যা অভ্র ঠিক করে ছিল হৃদি।
— সুন্দর নাম। তাহলে আকিকার অনুষ্ঠান করতে হয়।

নিপা মাথা হেলিয়ে সম্মতি দিলো। রুদ্র আবার বলল
— যাও সাওয়ার নিয়ে এসো আমি বাবুকে দেখছি।

নিপা চলে গেলো। রুদ্র বাবুর মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
— শোন আমি তোর বায়োলজিকাল ফাদার নাই হতে পারি তাই বলে কি তুই আমাকে বাবা বলে ডাকবি না? মনে রাখবি আমি ই তোর বাবা তুই মানিস আর মানিস আমাকেই তোর বাবা বলে ডাকতে হবে।

কথা গুলো বলে বাবুর ছোট্ট কপালে চু!মু খেলো।

— শুনেছি মেয়েরা না-কি বাবাকে ভালোবাসে তুই আমাকে ভালোবাসবি তো? জানিস আমার মা না আমাকে একটুও ভালোবাসে না। তুই আমার মা তো তুই আমাকে ভালোবাসবি তো নাকি তুই ও ঔ অভ্র কে ভালোবাসবি? কি আছে বলতো ঔ অভ্রর মধ্যে সবাই কেনো ওকে ভালোবাসে? আমাকে কেউ কেনো একটুও ভালোবাসে না? তোর মা ও অভ্রকে ভালোবাসে। আমি কি দোষ করেছি বলতো?

নিপা সাওয়ার নিয়ে এসো দেখলো। রুদ্র বাবু কেউ নেই। নিচ থেকে চেচামেচি আওয়াজ আসছে। নিপা একটু ভয় পেলো বাবুর কিছু হলো না তো? ভেবে দিশেহারা হয়ে ছুটলো নিচে।

— সবসময় অভ্র অভ্র জপতে থাকো কেনো? কান প চে গেছে এই নামটা শুনতে শুনতে এবার তো থামো। মানছি তোমার ছেলে। ম রে ছে তো অনেক দিন হলো এবার অন্তত স্বাভাবিক হও। এভাবে থাকলে তো সবকিছুর সমাধান হয়ে যাবে না যা হবার হয়ে গেছে।

নিপা নিচে এসে দেখলো রুদ্র বাবুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শ্বাশুড়ি কাঁদছে শ্বশুর মশাই এর কথা শুনে বোঝা যাচ্ছে ঝামেলাটা অভ্রকে নিয়ে। অভ্র কে নিয়ে এমন কথা শুনে নিপা অবাক না হয়ে পারলো না। বাবা হয়ে ছেলেকে নাম শুনতে শুনতে কান প চে গেছে? এটা কেমন কথা? নিপা তার শ্বশুর শ্বাশুড়িকে যথেষ্ট সম্মান করে এবং ভালোবাসে সেই শ্বশুর মশাই এর থেকে এমন কথা শুনে একটুও ভালো লাগলো না। নিপার হঠাৎ মনে হলো অভ্র কে তার শ্বশুর অভিজিৎ দেখতে পারে না। অভ্র বেচেঁ থাকতেও তেমন কথা বলতেন না। এদিকে রুদ্রকে তিনি প্রচন্ড ভালোবাসেন। এই কথা গুলো আগেও কয়েক বার ভাবিয়েছিলো। এই নিয়ে প্রশ্ন ও করেছিল অভ্র কে অভ্র বরাবর ই এড়িয়ে গিয়েছিলো। এর কারণ কি?

নিপা শ্বাশুড়ির পাশে গিয়ে বসলো। বলল
— মা কাঁদবেন না। এভাবে কাঁদলে আপনার শরীর খারাপ করবে।
অভিজিৎ তেতে উঠে বলল
— হ্যাঁ হ্যাঁ তোমার শ্বাশুড়ি কে বোঝাও ম রা মানুষ ফিরে আসে না।
নিপা শান্ত কণ্ঠে বলল
— প্লিজ বাবা আপনি বাবা হয়ে ছেলের ম রার কথা বলতে একটুও কি বুক কাঁপছে না আপনার খারাপ লাগছে না? কিন্তু বিশ্বাস করুন আপনার কথা গুলো বলতে খারাপ না লাগলেও আপনার মুখ থেকে এমন কথা শুনে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। প্লিজ বাবা আপনি থামুন
অভিজিৎ হুংকার দিয়ে উঠে বলল
— তোমার কাছ থেকে শিখতে হবে আমি কি কথা বলবো আর কি বলবো না?
অভিজিৎ এর জায়গায় অন্য কেউ থাকলে হয়ত দমে যেতো কিন্তু অভিজিৎ দমলো না। নিপা বলল
— তেমনটা বলি নি বাবা। মা আপনি আসুন রুমে চলুন মেডিসিন নিবেন না হলে প্রেসার বাড়বে।

নীলিমা কে নিয়ে গিয়ে প্রেসারের সাথে ঘুমের ঔষধ ও খাইয়ে দিলো। নিপা জানে এখন না ঘুমালে টেনশন করে শরীর খারাপ করে ফেলবে। নিপার নিজেকে খুব দোষী মনে হলো কেনো ছাদে শুধু শুধু ঔ কথা গুলো বলতে গেলো? ওগুলো না বললে হয় তো নীলিমা এমন কাদতো না আর না অভিজিৎ এমন বিহেভ করতো। ইশ সব ওর দোষ। কেনো পাকনামি করতে গেলো? নিজেকে নিজে উল্টো পাল্টা বকে ওপরের অভ্র আর ওর রুমটার উদ্দেশ্য পা বাড়ালো। আসার সময় দেখলো রুদ্র অভিজিৎ সোফায় বসে আছে।

— বাবা তুমি মায়ের সাথে এভাবে কথা বলবে না।
— আমি জানি তোর কষ্ট হয় অভ্রের কথা বললে। তুই মুখ বুজে সব মেনে নিলে তো আমি সব মানবো না।
— বাবা অযথা এমন করছ হাইপার হয়েও না একটু মাথা ঠান্ডা করো
— কি মাথা ঠান্ডা করবো সারাক্ষণ যদি অভ্র অভ্র করতে থাকে তাহলে কার ভালো লাগবে
— বাবা প্লিজ থামো। মা নিপা শুনলে কষ্ট পাবে। আর আমি চাই না ওরা কষ্ট পাক।
— বিয়ে করে বড় হয়ে গেছিস? বাবার কথায় এখন তো সব দোষ খুঁজে পাবিই।
— বাবা তুমি ভুল বুঝচ্ছ। তুমি এখন তোমার মধ্যে নেই।
— হ্যাঁ আমার মধ্যে ভুত আছে।
রুদ্র অভিজিৎ এর কথা শুনে না হেসে পারলো না।

রুমটার যেনো প্রাণ নেই নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে আছে ধুলো জমতে শুরু করেছে প্রতিটা জিনিসপত্রে। নিপা ওর আর অভ্রর বিয়ের ছবিটা হাতে নিয়ে ওড়নার কোণা দিয়ে ধুলো মুছে অভ্রর ছবিতে চু!মু খেয়ে বলল

— কেমন আছো অভ্র? তোমাকে ছাড়া যে আমি মা কেউ ভালো নেই তুমি কি দেখছো না? খুব হাসছ তাই না? আমাদের কষ্ট দিয়ে খুব ভালো লাগছে তোমার? দুষ্টু তুমি! এই দুষ্টু তুমি টাকে খুব মিস করি বুঝো তুমি? কেনো চলে গেলে বলো তো?

নিপার চোখ দিয়ে টপটপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। পিছন থেকে রুদ্র ডেকে উঠলো

— নিপা। বাবু কাঁদছে। ক্ষুদা লাগছে মনে হয়।

নিপা চমকালো। এই প্রথম রুদ্র তার নাম ধরে ডাকলো। রুদ্র কাজ নিপাকে খুব করে চমকে দিচ্ছে। রুদ্র কে এভাবে সবকিছু মেনে নেওয়ার পাত্র নয়। ওর ওপরে কারোর জোর খাটে না। তবে কি রুদ্র ওকে ইচ্ছে করে বিয়ে করলো? কিন্তু কেনো? নিপার নিজেকে পাগল পাগল লাগছে। কোন গোলোকের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে ও? এতো প্রশ্নের উত্তর ও কীভাবে পাবে?

নিপা চোখ মুছে ছবিটা জায়গা মতো রেখে চলে গেলো। রুদ্র সারা রুম ঘুরে ঘুরে দেখলো। অভ্র আর নিপার ছবি টা ফ্রেম থেকে বের করে দু খন্ড করে আলাদা করে দিয়ে কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো। রুম থেকে বের হয়ে রুম লক করে দিলো যাতে নিপা এ রুমে আসতে না পারে। ওর যে অভ্রকে সহ্যই হয় না।

চলবে ইনশাআল্লাহ