ধূসর রঙের রংধনু পর্ব-০৮

0
210

#ধূসর_রঙের_রংধনু -৮
#তাসনিম_তামান্না

হৃদির জন্য রেখে দেওয়া আইয়াটাকে পুলিশ কাস্টারিতে নেওয়া হয়েছে। নিপার অবস্থা করুন মেয়ের শোকে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছে। যে টুকু সময় জ্ঞান থাকছে সেটুকু সময় কেঁদে কেটে এক সা বানিয়ে ফেলছে। নীলিমা কাঁদছে। রুদ্রের মুখটা শুকিয়ে গেছে। এই ক’দিনে হৃদিকে রুদ্র নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছিল কোনো অযত্ন করে নি। আইয়াটাকে পুলিশ জেরা করলেও তেমন সন্দেহ জনক কিছু পাই নি। সে সত্যি বলছে ‘বাচ্চা যদি আমি চু রি করতাম তাহলে কি আমি থেকে যেতাম আমি ও পালিয়ে যেতাম’
কথাটা সে ঠিকি বলেছে। মধ্যেরাতে নিপার জ্ঞান আসতেই রুদ্রকে তার পাশে বসে থাকতে দেখে হুরমুড়িয়ে উঠে বসে বলল
— আমার মেয়ে আমার মেয়ে কই রুদ্র আমার মেয়েকে পেয়েছেন?
রুদ্র মাথা নিচু করে বসে আছে এ প্রশ্নের উত্তর নেই তার কাছে। রুদ্র কাছ থেকে উত্তর না পেয়ে নিপা ধৈর্য্য হারা হয়ে গেলো বলল
— কি হলো উত্তর দিচ্ছেন না কেনো? আমার মেয়েকে পান নি তাই না?
নিপার চোখ দিয়ে অনর্গল অশ্রু ঝরতে লাগলো। রুদ্র কাতর কণ্ঠে বলল
— নিপা প্লিজ কেঁদো না আমি আমাদের মেয়েকে ঠিক খুঁজে বের করবো। তুমি প্লিজ কেঁদো না। শরীর খারাপ করবে তো একেতে সারাদিন কিছু খাও নি দাঁড়াও আমি তোমার জন্য খাবার আনছি।

নিপা কোনো উত্তর দিলো না। থম মেরে বসে রইলো। রুদ্র খাবার এনে নিপার মুখের কাছে একলোকমা দিতে নিপা মুখ ঘুরিয়ে বলল
— আমার মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না সে খেয়েছে কিনা তার ঠিক নাই সে কেমন আছে কোথায় আছে কিছু জানি না আর আমি মা হয়ে আরাম করে খাবো ভাবলেন কি করে আপনি?
— নিপা আমি বুঝতে পারছি ব্যপারটা কিন্তু নিপা দেখো মেয়ে কে খুঁজে পেতে হলে তোমাকে সুস্থ থাকতে হবে খেতে হবে দেখবে আমাদের মেয়েকে আমরা ঠিক খুঁজে পাবো।
নিপা ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল
— আমার মেয়েকে যতক্ষণ না না পাবো ততক্ষণ গলা দিয়ে খাবার নামবে না রুদ্র
— জোর করে একটু খাও বেশি খেতে হবে না
নিপা রুদ্রের হাত থেকে খাবার টা মুখে নিলো। দুলোকমা খেয়ে আর খেতে পারলো না রুদ্র আর জোর করলো না। প্লেট রেখে এসে রুদ্র নিপাকে জোর করে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে দিলো না হলে সারারাত জেগে কান্নাকাটি আর টেনশন করবে।

রুদ্রের চোখে ঘুম নেই রুমে থাকতে পারছে না বিছানায় দোলনায় তাকালেই বুকটা হাহাকার করে উঠছে। রুদ্র সিগারেটে টেনে ধোঁয়া গুলো আকাশে উড়িয়ে দিল কাঁধে কারোর হাতের স্পর্শ পেলো চমকালো না। স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল
— আমার মেয়ে কে তুমি সরাও নি তো বাবা?
অভিজিৎ একটু চমকালো আমতা আমতা করে বলল
— কি বলছিস এসব বাচ্চা মেয়ের সাথে আমার কি শ*ত্রুতা?
— হুম তাই তো কিন্তু আমি যদি কখনো জানতে পারি এই ঘৃ*ণিত কাজের পিছনে তুমি আছ তাহলে সে দিন ই ভুলে যাবো তুমি আমার বাবা
— রুদ্র তুই তোর বাবাকে সন্দেহ করছিস? তুই এসব কিভাবে ভাবতে পারলি?
— না ভাবার তো কিছু দেখছি না। আমি আজই একটা সত্যি জানলাম আর আজই আমার মেয়েটাও হারিয়ে গেলো। নিজেকে খুব নি*কৃ*ষ্ট মনে হচ্ছে জানো
অভিজিৎ একটু ঘামতে লাগলো শুকনো ঢোক গিলে বলল
— কিসের সত্যি জানতে পেরেছিস তুই?
— তোমার ঘৃ*ণি*ত কাজের
— কি বলতে চাইছিস তুই?
— তোমাকে আমার বাবা ভাবতেই ঘৃ*ণা লাগছে। তোমার পা*পের টাকায় এতো দিন খেয়ে পড়ে বড় হয়েছি ছিঃ
— রুদ্র আমি তোর বাবা হয় এসব কি কথা বলছিস
— বাবা হও বলেই তো এখনো আমার সামনে দাড়িয়ে আছো না হলে আমি যে কি করতাম… যাজ্ঞে ওসব কথা বাদ দাও বলো তো আর কি কি কুকৃত্তি ঘটিয়েছ? আমার সহজসরল মা টাও নিশ্চয়ই এসব জানে না তাই না তুমি সবাইকে ঠকিয়েছ কিভাবে পারো এসব?
— রুদ্র বাবা আমাকে তুই ভুল বুঝছিস আমাকে একটু এক্সপ্লেন করার সুযোগ দে
— কি বলবে বাবা তুমি যে গুলো বলবে তার মধ্যে কতটুকুই বা সত্যততা লুকিয়ে আছে সবটাই তো মিথ্যা দিয়ে তৈরি
অভিজিৎ কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না।
— জানো বাবা আমার এখন মনে হচ্ছে তুমিও আমাকে ভালোবাসে নি। আমার সাথে অভিনয় করেছ
— রুদ্র…
— বাবা প্লিজ আমাকে একটু একা থাকতে দাও
অভিজিৎ যেতেই রুদ্র আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল
— অভ্র একটা অদ্ভুত কথা শুনবে? আমি তোমাকে বড্ড মিস করছি। তুমি আমাকে আগলে রাখতে আগে বুঝি নি। তুমি বাবার এসব কথা জানতে তাই না? তুমি পারলে প্লিজ চলে এসো তোমাকে যে আমার নিপার হৃদির খুব প্রয়োজন।

দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ কেটে গেলো পুলিশ হৃদিকে খুঁজছে কিন্তু কোনো ক্লু পাচ্ছে না। যে কাজটা করেছে সে পাকা হাতেই করেছে কোনো ক্লু রাখে নি। পুলিশদেরও হিমশিম খেতে হচ্ছে। হৃদির খোঁজ পাওয়া গেলো না। নিপা কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে। ঠিক মতো খাইয়া, ঘুমাইয়া, শুধু উদাস হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। রুদ্রের সাথে তেমন আগের মতো রেগে চিৎকার চেচামেচি করে না। রুদ্র নিপার এমন নিরবতা মেনে নিতে পারছে না খুব কষ্ট হচ্ছে। নিপার বাবা-মা ও নিপাকে নিতে এসেছিলো। নিপা যায় নি। নিপাকে জানালা দিয়ে নিকষ কালো অম্বরিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে রুদ্র বলল
— নিপা তুমি চাইলে ও বাড়ি থেকে ক’দিন ঘুরে আসতে পারো
নিপা উত্তর দিলো না পাল্টা প্রশ্ন করলো
— আমার মেয়ে কে কবে খুঁজে পাবো রুদ্র আমার কোল খালি রুদ্র আমি এভাবে থাকতে পারছি না।

রুদ্র উত্তর দেওয়ার আগেই রুদ্রের ফোন সশব্দে বেজে উঠলো। পুলিশের নম্বর দেখে রুদ্র রিসিভ করে বলল
— অফিসার আমার মেয়েকে কি পেলেন?
পুলিশ ফোন দিয়েছে বুঝতে পেরে নিপা রুদ্রের পাশে এসে বসলো। অফিসার হতাশ কণ্ঠে বলল
— মি. রুদ্র একটা ব্যাড নিউজ আছে
কথাটা শোনা মাত্রই রুদ্রের ভয়ে বুক দুরুদুরু করতে লাগলো। রুদ্র নিপার দিকে তাকিয়ে বলল
— কি বলুন?
— আমরা আপনাদের বাড়ির কাছে ডাস্টবিনের পাশে একটা বাচ্চার লা শ পেয়েছি। যদি এসে আইডেন্টিটিফাই করতেন এটা আপনাদের বেবি কি-না…
রুদ্র থমথমে র*ক্ত শূন্য মুখে বলল
— কোথায় আসতে হবে?
— ফরেনসিক ল্যাবে আসুন।
— আসছি।
নিপার মুখ খুশিতে ঝলমলে করে উঠে বলল
— কি বলল অফিসার আমার মেয়েকে পেয়েছে তাই না? কি হলো কথা বলছেন না কেনো? কিছু তো বলুন
— নিপা… ওরা একটা বাচ্চার… লা*শ পেয়েছে

রুদ্রের মুখে এমন কথা শুনে নিপা থম মেরে গেলো। রুদ্র সেটা দেখে বলল
— আরে ভেঙে পড়ছ কেনো? ওরা তো বলে নি এটাই আমাদের হৃদি ওরা শুধু বলেছে আইডেন্টিটিফাই করে জানাতে ওটাই…
নিপা স্থির দৃষ্টি রুদ্রর দিকে তাকিয়ে বলল
— ওটা আমাদেরই হৃদি
রুদ্র ধমকে উঠে বলল
— সাট আপ নিপা উল্টো পাল্টা বকছ কেনো? চল আমার সাথে আর একদম ভেঙে পড়বে না। ওটা আমাদের হৃদি হতেই পারে না

নিপা রুদ্র বেড়িয়ে পড়লো ফরেনসিক ল্যাবের উদ্দেশ্য বাড়ির কাউকেই এই ব্যাপারে কিছু জানালো না।

চলবে ইনশাআল্লাহ