#নাম_না_জানা_পাখি
#নূর_নাফিসা_খুশি
#পর্ব_১১
সকালে রোজ কার মতো খুশি নাস্তা বানিয়ে খেয়ে রাহুলকে পড়াতে চলে যায়। এখন খুশির আম্মু টুকটাক কাজ করতে পারে রান্না করতে পারে। তাই খুশির কোনো চিন্তা নেই তার আম্মুকে নিয়ে। খুশি স্কুটি চালিয়ে চলে আসে রাহুলের ফ্লাটের কাছে স্কুটি রেখে পাসের ফ্লাটের দিকে তাকায় খুশি। একবার তাকিয়ে চলে যায় ওপরে বেল বাজাতেই রাহুলের আম্মু এসে খুলে দেয়। খুশিকে সামনে দেখে মুখে হাসিয়ে বলে রাহুলের আম্মু।
“তুমি চলে এসেছো এসো নাস্তা করবে।
” না ভাবি আমি বাসা থেকে নাস্তা করে এসেছি, রাহুল কি রুমে?
“হ্যাঁ এখনি গেলো খেয়ে।
” আচ্ছা আমি যাই তাহলে।
খুশি রাহুলের রুমে গিয়ে দেখলো রাহুল বারান্দায় বসে আছে, খুশি বুঝে না ছেলেটা বারান্দা ছাড়া রুমে পড়তে বসে না কেনো? খুশি গিয়ে নিজের চাইরে বসে। খুশিকে দেখে রাহুল বলে,,
“ম্যাম তুমি জানো মাহির আঙ্কেল খুব অসুস্থ।
খুশি চমকে উঠে বলে।
” কি হয়েছে মাহিরের? তুমি কি করে জানলে? কেমন আছে ও এখন?
“আঙ্কেল একটু আগে বারান্দায় এসেছিলো দেখে বুঝলাম শরীর খারাপ, জিজ্ঞেস করতে বললো তার নাকি একটু জ্বর । কিন্তু দেখে মনে হচ্ছিলো অনেক জ্বর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলো না।
খুশির মন ছটপট করতে লাগলো, মাহির কেমন আছে এখন খুবি কি খারাপ লাগছে তার। খুশি ভাবে রাহুলকে পড়া শেষে যাবে মাহিরের ফ্লাটে। তাই করলো, আজ খুব জলদি জলদি করে পড়ালো খুশি মাঝে কয়েকটি পড়া ভুল গেলো খুশির। নিজেকে সামলে নিয়ে আবার পড়াতে লাগলো খুশি। খুশির মন বারান্দার ওপারের মানুষ টার দিকে পরে আছে। খুশি কোন মতে রাহুলকে পড়িয়ে বেরিয়ে যায়, সোজা মাহিরের ফ্লাটে বেল বাজাতে গিয়ে দেখলো খোলায় আছে দরজা। খুশি ভিতরে গিয়ে ব্যাগ টা সোফায় রেখে মাহিরের রুমের দিকে যায়। রুমে গিয়ে দেখে মাহির বেডে শুয়ে আছে একটা ব্লাংকেট গায় দিয়ে। খুশি মাহিরের কাছে গিয়ে কপালে হাত দিয়ে দেখে সত্যিই অনেক জ্বর। কাপছে মাহির খুশি পুরো রুম খুঁজে আরেকটা ব্লাংকেট নিয়ে মাহিরের ওপর দিয়ে দেয়। মগে করে পানি এনে রুমাল ভিজিয়ে পানি পট্টি দিতে লাগে খুশি। মাহির জ্বরের ঘোরে কি জেনো বলছে দূর থেকে বুঝতে পারছে না খুশি। খুশি আরেকটু কাছে গিয়ে শুনে মাহির বলছে।
” আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না। তুমি সেদিন কেনো একবার আসোনি তুমি এসে সব সত্যি বললে তো আমাকে আমার আম্মুকে অপমানিত হতে হতো। তুমি স্বার্থপর একটা আসো নি তুমি আমার কাছে আসোনি।
খুশি বুঝতে পারছে না এই কথার মানে, কাকে কি বলছে মাহির। কাকে ভালোবাসে আর কে আসেনি খুশি কিছুই বুঝতে পারছে না। মাহিরের দিকে তাকিয়ে দেখে মাহির চুপ করে আছে এবার। খুশির কাছে কোনো ডাক্তারের নাম্বার নেই। খুশি রুমের এদিক সেদিক খুজে একটা মেডিসিনের বক্স পেলো। সেখান থেকে জ্বরের মেডিসিন আরও কিছু মেডিসিন বের করে মাহিরকে খাওয়াতে যায় খুশি। কিন্তু আবার খুশি খালি পেটে মেডিসিন খেলে তো বমি হতে পারে। খুশি রান্না ঘরে গিয়ে সুপ বানায় রান্না ঘরে সব কিছুই আছে। সুপ বানিয়ে মাহিরের কাছে যায় খুশি মাহিরকে একটু উঠিয়ে খুব কষ্ট করেই খাইয়ে দেয় সুপ টা। তারপরে মেডিসিন খাইয়ে দিয়ে আবার শুইয়ে দেয়। খুশি সব কিছু পরিস্কার করে মাহিরের কাছে আসে। হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ১০ টা ৩০ মিনিট পার হয়ে গেছে আজ আর কলেজে যাওয়া হবে না তার। আর মাহিরকে এই অবস্থায় ফেলে যেতেও পারবে না খুশি।
খুশি মাহিরের কপালে হাত রেখে দেখে আস্তে আস্তে জ্বর ছুরে যাচ্ছে। খুশি মাহিরের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে কি নিস্পাপ মুখ টা। খুশির ভাবতেই অবাক লাগছে এই মানুষ টা তার স্বামী। খুশির মুখে এক চিলতি হাসি ফুটে উঠে, মাহিরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগে খুশি।
মাহির ঘুমের ঘোরে আচকমা খুশির হাত ধরে টান দেয়। খুশি হুমরি খেয়ে মাহিরের ওপরে পরে, মাহির খুশিকে তার পাসে ভালো করে শুইয়ে দিয়ে একদম সক্ত করে জরিয়ে ধরে। খুশি চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে মাহিরের দিকে ব্যাপার টা এতো জলদি ঘটে গেলো খুশি কিছু বুঝলোই না। খুশি মাহিরের থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য প্রান পনে চেষ্টা করছে কিন্তু মাহির এতো সক্ত করে জরিয়ে ধরে আছে খুশির চৌদ্দগুষ্টি ও ছারাতে পারবে না। খুশির এমন মোচড়ামুচড়ি দেখে বিরক্ত হয়ে মাহির বলে।
“এতো নড়াচড়া করছো কেনো চুপ করে থাকো। এমনিতে তো আমার কাছেই আসো না, সপ্নে এসেও কি একটু সান্তি মতো থাকবে না।
মাহিরের কথা শুনে খুশি বুঝতে পারে মাহির এখনো ঘোরের মধ্যে আছে। ভুলভাল বকছে খুশি বলে।
” সপ্ন না এটা সত্যিই আমি।
মাহির জবাব দিলো না আরও সক্ত করে জরিয়ে ধরলো খুশিকে। খুশির যাই যাই অবস্থা,, মাহির খুশির আরও কাছে মুখ নিয়ে যায়। খুশির গলায় মুখ গুজে দেয় মাহির। খুশি কেপে উঠে এমন স্পর্শর সঙ্গে পরিচিত না খুশি। মাহির খুশির গলাই নিজের ওষ্ঠ জোড়া ছওয়াতে ব্যাস্ত। মাহিরের প্রতিটা স্পর্শতে কেপে কেপে উঠছে খুশি,, মাহির নিজের আয়াত্তে নেই কি করছে সেটাও মাহিরের জানা নেই। জ্বরের ঘোরে মাহির খুশির গরম শরীর পেয়ে আরও কাছে যেতে লাগে। এক সময় মাহির খুশির গলা থেকে উঠে ঠোটের দিকে এগোতে লাগে। খুশি বুঝতে পারে মাহিরকে না আটকালে অনেক কিছুই করে ফেলবে। খুশি মাহিরকে ভালোবাসে ঠিক মাহিরের ছোওয়ায় কোনো আপত্তি নেই খুশির। কিন্তু মাহির খুশিকে ভালোবাসে না আর না ভালোবেসে বিয়ে করেছে কি এক অজানা ভুলের শাস্তি দেওয়ার জন্য বিয়ে করেছে মাহির তাকে। মাহির যদি ভালোবেসে সুন্দর করে বিয়ে করতো খুশি নিজেই মাহিরের কাছে আসতো কিন্তু মাহিরের এটা ভালোবাসা।
খুশি কি করবে কি করবে ভেবে, যখনি মাহির খুশিকে কিস করতে যাবে তখনি গগন ফাঁটানো চিৎকার করে খিশি। কিসের কিস আর কিসের আদর মাহিরের ঘোর কাটিয়ে দিয়েছে খুশির চিৎকারে। মাহির হুরমুর করে উঠে বসে তাকিয়ে দেখে চোখে ঝাবসা ঝাবসা দেখছে মাহির। চোখ কচলে আবার ভালো করে তাকায় মাহির। মাহিরের জ্বর কমে গেছে এখন ঘোর লেগে ছিলো সেটাও খুশির চিৎকারে পগারপার।
খুশি তার বেডে শুয়ে থাকতে দেখে বেশ অবাক হয় মাহির। খুশি এখানে কি করে এলো বুঝতে পারছে না। ততক্ষণে খুশি বেড থেকে উঠে হাফাতে লেগেছে বুকে হাত দিয়ে। মাহির বলে!
“তুমি এখানে কি করছো?
খুশি বুঝতে পারে মাহির এতক্ষণ কি করেছে তার কিছুই মনে নেই। খুশি আর মনে করাতেও চাই না তাই নিজে সাভাবিক করে বলে।
” আমি রাহুলকে পড়াতে এসেছিলাম এসে শুনি আপনার খুব জ্বর তাই এখানে এসেছি জল পট্টি আর মেডিসিন খাইয়ে দিয়েছিলাম।
“বুঝলাম কিন্তু চিৎকার করলে কেনো?
” ইয়ে মানে ইঁদুর দেখেছিলাম দিয়ে ভয় পেয়েছি।
মাহিরের মুখ দেখে খুশি বুঝতে পারলো না তার কথা মাহির বিশ্বাস করলো নাকি করলো না। মাহির কিছু না বলে, বলে!
“কিছু রান্না করো আমার খুদা লাগছে।
মাহির অসুস্থ তাই খুশি কিছু বললো না অন্য সময় যদি এমন ওয়ার্ড দিয়ে কথা বলতো মাহিরের ৩৬ টা বাজিয়ে দিতো খুশি। খুশি রান্না ঘরে চলে যেতেই মাহির নিজের ল্যাপটপ বের করে তার রুমের ক্যামেরা চেক করে। মাহিরের রুমে ক্যামেরা লাগানো আছে একেই তো সেলিব্রিটি তার অপর একা থাকে তাই সেফটির জন্য লাগিয়ে রেখেছে। মাহির একে একে সব দেখতে লাগে,, খুশি এসে জক পট্টি দিয়ে সুপ খাওয়া থেকে মেডিসিন সব দেখে,, শেষের দিকে দেখে মাহিরের মাথা ঘুরে যায়। মাহির খুশির সঙ্গে কি কি করেছে সেটাও খুশি এই জন্য চিৎকার করেছিলো বুঝতে পারলো এবার মাহির। মাহির মুচকি হেসে ল্যাপটপ টা রেখে দেয়। ফ্রেশ হয়ে এসে রুমের বাইরে যায় মাহির। রান্না ঘরে দেখে খুশি পরটা বেলছে,, পুরা বউ বউ লাগছে খুশিকে মাহিরের কাছে। মাহির রান্না ঘরে গিয়ে পিছন থেকে খুশিকে জরিয়ে ধরে। খুশি চমকে উঠে মাহিরের এমম কান্ডে। খুশি বলে,,
” কি করছেন কি ছারুন, আপনি এসব করার জন্য বিয়ে করেননি আমাকে অধিকার দেখানোর জন্য করেছেন। (অভিমানী শুরে বলে খুশি)
মাহির মুচকি হেসে বলে,,
“অধিকারের মধ্যে এটা পরে না কি?
” শরুন তো নয়তো আমি চলে যাবো।
“এতোই সোজা নাকি? তুমি এসেছো তোমার ইচ্ছায় এবার যাবে আমার ইচ্ছাই।
” আমার শরীর খারাপ আপনি রেস্ট নেন গিয়ে। আমি নাস্তা বানিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
মাহির কিছু না বলে খুশির গালে একটা কিস করে ‘অকে’ বলে চলে যায়। খুশি তো রেগে ফাইয়ার,, না জানি কখন জেতে দিবে এখান থেকে আর কতো অত্যাচার সহ্য করতে হবে আজ খুশির।
খুশি নাস্তা বানিয়ে মাহিরকে দেয় মাহির মজায় মজায় খায় ঠিক কিন্তু একবারও বলে না কেমন হয়েছে। খুশির রাগ লাগে কিন্তু কিছু বলে না। খুশি ও খেয়ে নেই সেই ভোরে খেয়েছিল এখন ১১ টা ৩০ বাজে। মাহির দুপুরের খাবার রান্না করতে বারন করেছিলো কিন্তু খুশি শোনে নি। নিজের হাতে বিরিয়ানি রান্না করেছে। মাহির খেয়ে এবার প্রশংসা না করে থাকতে পারলো না।
“অনেক সুন্দর হয়েছে বিরিয়ানি টা বাট তুমি কি করে জানলে আমার বিরিয়ানি পছন্দ?
” রামপুর গেছিলেন তখন বলেছিলেন।
রামপুরের কথা শুনে মাহির আর কিছু বলে না চুপচাপ খেতে লাগে। মাহির খাওয়ার পর খুশিও খেয়ে নেয় মাহির বলেছিল তার সঙ্গে খেতে কিন্তু খায়নি। খুশি খেয়ে সব আবার সুন্দর গুছিয়ে রেখে মাহিরের রুমে যায় মাহির ফোন টিপছে। খুশি বলে,,
“আমার যেতে হবে এখন ৩টার সময় আমার রেস্টুরেন্টে যেতে হবে।
” যেতে হবে না।
মাহিরের কথায় খুশি অবাক হয়ে বলে।
“মানে কি অনেক তো থাকলাম আপনিও সুস্ত এখন আমি আর কি করবো?
” তোমাকে ওই জব আর করতে হবে না।
“আমি ওই জব ছারতে পারবো না।
” আমি তোমার বর লাগি, আমি যা বলবো তাই হবে নিজের পড়াশোনাই মন দাও।
“জব না করলে সংসার চলবে কি করে।
” সেটা আমি দেখে নিবো।
“আমি আপনার কাছে কিছু নিবো না।
মাহির এতোক্ষন ফোনের দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলছিল, এবার খুশির দিকে তাকিয়ে বলে।
” তোমাকে আমি জব দিচ্ছি তুমি কলেজ শেষে আমার ফ্লাটে আসবে, এখানে থাকবে আমার জন্য রান্না করে রাখবে। আমি তোমার বর লাগি শো বরের জন্য এই টুকু করায় যায় আমি রাতে বাসায় দিয়ে আসবো। আর যদি আমার কথা না শুনো তাহলে তোমার সাইন করা পেপার আছে আমার কাছে। বিয়ের টা যাবে তোমার আম্মুর কাছে আর আমার কথার অবাদ্ধ হওয়ার পেপার টা যাবে পলিশের কাছে। হটাৎ তোমার লুকিয়ে বিয়ের কথা শুনে তোমার আম্মু আবার অসুস্ত হয়ে পরবে কিন্তু আর পলিশ তো আছেই এবার তুমি কি করবে ভাবো।
খুশি কান্না করে বলে।
“আপনি খুব খারাপ একটা মানুষ।
” জানি।
খুশি কান্না করেই যাচ্ছে মাহির এবার সহ্য করতে না পেরে বলে।
“কান্না থামাও নয়তো আমি অনেক কিছু করে ফেলবো।(ধমক দিয়ে)
খুশি ভয়ে কান্না বন্ধ করে দেয়। মাহির মুচকি হেসে বলে।
” আমার মাথা ব্যাথা করছে বউ এখন একটু টিপে দাও।
খুশি কিছু না বলে মাহিরের মাথা টিপে দিতে লাগে আর মনে মনে বলে।
“তো বিয়ে হবে না শালা দেখিস তোর বউ পালিয়ে যাবে তোকে রেখে।(মনে মনে)
চলবে?