না চাহিলে যারে পাওয়া যায় পর্ব-২৩+২৪

0
450

#না চাহিলে যারে পাওয়া যায়
#পর্ব-২৩

খুব সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখে ভোরে ঘুম ভেঙে গেলো রাযীনের। খুশি মনে চোখ মেলতেই রুহিকে নজরে এলো। লক্ষী মেয়ের মতো শুয়ে আছে মেয়েটা। একটা বালিশ দু’হাতে আগলে নিয়ে বুকে জড়িয়ে আছে। এলো চুলগুলো বালিশে ছড়িয়ে আছে। রাযীন কিছুক্ষণ মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইলো। কি এক অমোঘ আকর্ষনে রুহির দিকে আরেকটু এগিয়ে এলো। কপালের উপর পড়ে থাকা ছোট ছোট চুলগুলো আঙুলের স্পর্শে সরিয়ে দিয়ে রুহির কপালে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ায়। বালিশ টেনে এনে রুহির মুখের কাছে মুখ রেখে বালিশে মাথা রেখে রুহিকে দেখতে লাগলো। মেয়েটা ততটা অসুন্দর না যতটা প্রথমে লেগেছিলো। দাঁতগুলো বড় হলেও ঝকঝকে বলে হাসলে দারুণ লাগে। রাযীনের ভীষণ ইচ্ছে হলো রুহিকে বুকের মাঝে নিয়ে জড়িয়ে ধরতে। পরক্ষণেই নিজের ভাবনায় লজ্জা পেলো। ধ্যাৎ! আজকাল সে রুহিতে একটু বেশি মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে। না চাইতেই রাযীন মুগ্ধ চোখে রুহিকে দেখতে দেখতে পূনরায় ঘুমের দেশে পাড়ি জমায়।

ঘুম ভাঙতে নিজেকে কারো বাহুতে বন্দি টের পেলো রুহি। মাথার উপর কেউ থুতনি ঠেকিয়ে ঘুমাচ্ছে। তার নিশ্বাস আছড়ে পড়ছে কারো বুকের উপর। রুহি আলতো করে নিজেকে সরিয়ে নিতে চাইলো কিন্তু পারলোনা। মানুষটা আরো একটু চেপে ধরলো তাকে। রুহি লোকটার বুকের আরেকটু কাছে ঘেঁষে গেলো। এখনতো নিশ্বাস ফেলারও জায়গা নেই। রুহির বুক দুরুদুরু কাঁপছে। মাথাটা বেকিয়ে কোনরকমে দেখলো মানুষটাকে। রাযীন মুখে মৃদু হাসি নিয়ে ঘুমাচ্ছে। রুহি ভ্রু কুঁচকে নিজের শোয়ার জায়গা দেখলো। সে কি আজ নিজের জায়গা ছেড়ে এসেছে? দেখে একটু লজ্জাই পেলো। দোষ অবশ্য ওর একার না। দু’জনেই বিছানার মাঝখান বরাবর শুয়ে আছে। রাযীনের উপর রাগ হচ্ছে সামান্য। মানুষটা আজকাল তার কাছাকাছি হওয়ার চেষ্টা করছে। এভাবে চললে খুব দ্রুতই তারা হয়তো.. বাকীটা ভাবতে পারে না রুহি। লজ্জায় গাল রক্তিম বর্ন ধারণ করলো, নিশ্বাস গাঢ় হলো কিছুটা উষ্ণও হলো হয়তে। নিজের মধ্যকার দ্বিধা এখনো কাটেনি রুহির। তবুও রাযীনের কাছে আসাটাকে খারাপ কিছু মনে হচ্ছে না। এটা কি বিয়ে নামক বৈধতার কারনে? ঠিক ভেবে পেলোনা। ভাবতে ভাবতে রাযীনের বুকে মাথা ঠেকালো। কিছু মনে হতেই বুকের দিকে তাকিয়ে দেখে ফিক করে হেসে দিলো। গল্পের নায়কের মতো রাযীন বুকের দু’টো বোতাম খোলা রেখে শার্ট পরা নেই। বরং ওর পরনে গলা অব্দি নরম গেন্জি। কাজেই বুকের পশম দেখার চান্স নেই। ভেবেই নিজেকেই খুব করে শাসন করলো রুহি। দিনদিন খুব অসভ্য হচ্ছিস রুহি। এসব কি ভাবছিস উল্টো পাল্টা বলতো? নিজের ভাবনার লাগাম টেনে ধর বদ মেয়ে।
“এই কি করছো কি রুহি সুরসুরি লাগছে তো?”
রাযীনের কন্ঠ কানে আসতেই রুহি স্হির হয়ে গেলো। কি করছিলো সে? না চাইতেই প্রশ্ন ছুড়ে দিলো রাযীনের দিকে-
“কি করলাম আমি?”
রাযীন হঠাৎ উপুড় হলো, রুহির চোখে চোখ রেখে বললো-
“কি করছিলো জানোনা? আমার বুকে নাক ঘষছিলে। দিলে তো আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে।”
রুহি ব্রীড়ার কারনে চোখ নামিয়ে নিয়ে মৃদুস্বরে বললো-
“আপনিও তো আমার ঘুম নষ্ট করেছেন। এভাবে আমায় জড়িয়ে ধরেছেন কেন?”
“আমার কি দোষ! সব দোষ তোমার, তোমাকে ভীষণ আদুরে বিড়ালছানার মতো দেখালে আমি কি বুকে না নিয়ে পারি?”
রুহির মুখে রা কাড়ে না। হঠাৎ কোথা থেকে লজ্জারা মেঘের দলের মতো নেমে এসে ওকে ঘিরে ধরছে যেন। রুহি মুখ ঘুড়িয়ে অন্য দিকে তাকালে রা্যীন দু’হাতে রুহির মুখ আগলে ধরে কানে ফিসফিস করলো-
“বিড়ালছানাটাকে একটু আদর দেই? প্লিজ প্লিজ মানা করোনা প্লিজ?”
রা্যীনের উষ্ন নিশ্বাস রুহির মুখের উপর আছড়ে পড়তেই ওর সমস্ত শরীর কেঁপে উঠলো। লজ্জাবনত চোখ বুজে ফেললো, নাকটা লালচে রং হয়ে গেছে, বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে সেখানে। রাযীন মন্ত্রমুগ্ধের মতো রুহির নাকের ডগায় ঠোঁট ছোঁয়ায় তারপর চোখে গালে কপালে। রা্যীনের আচরন ধীরে ধীরে দখলদারি হয়ে উঠছে। রুহির তনুমন কেঁপে কেঁপে উঠছে রাযীনের স্পর্শে। রাযীনের স্পর্শে তলিয়ে সুখের সাগরের অতলে তলিয়ে যেতে যেতে রুহির মনে আচমকা প্রশ্নটা বাড়ি মেরে যায়। আচ্ছা! রাজ তাকে ভালোবাসে তো? নাকি এই কাছে আসাটা শুধু শরীরী আকর্ষন? ওই যে স্প্যানীশ গার্লফ্রেন্ডের কথা বলে ওটা কি সত্যি? আর সে যে এতো সহজে আত্মসমর্পণ করলো শুভকে কি পুরোপুরি ভুলতে পেরেছে? যদি শুভর কথা কখনো রাজ জানতে পারে কি করবে তখন? ভাবমাটা মনে আসতেই রুহি যেন আচমকা কারেন্ট শক খেয়েছে। হুট করে চোখ মেলতেই রাযীনের ঘোলাটে লাল চোখে চোখ আঁটকে গেলো। দু’জনার মধ্যে ব্যবধান একইন্চিরও কম। রাযীনের গরম শ্বাস আর মাতাল চাহুনি উপেক্ষা করে রুহি কিছু বলতে যাবে ঠিক সেই সময় রাযীনের উষ্ণ আর্দ্র ওষ্ঠদ্বয় নেমে এলো ওর ওষ্ঠের উপর। সেই মুহুর্তো সুখের আবেশে বিলীন হতে হতে রুহির মনের প্রশ্নগুলোও যেন হাওয়াই মিঠাই এর মতো মিলিয়ে গেলো।

★★★

রুহি জানে না শুভ ওকে সবসময় ফলো করে। পারলে রাযীনের বেডরুমেও সর্বদা চোখ কান দিয়ে রাখে। খুব অসভ্য আচরণ হলেও শুভ নিজেকে এ থেকে নিরস্ত্র করতে পারে না। যে মেয়েটার জন্য নিজের বাসা বাড়ি ছেড়ে মধ্যবিত্ত চালে চলেছে, টিউশন করেছে, মেয়েটার খারাপ সময়ে পাশে থেকেছে বন্ধুর মতো, ভালোবেসেছে তাকে অন্য কারো হতে দেখাটা অসম্ভব। যত দিন যাচ্ছে রুহিকে পাওয়ার আকাঙ্খা বাড়ছে। কিন্তু কিভাবে পাবে রুহিকে সেটাই ভেবে পাচ্ছে না। আজ সকালে রুহি যখন নিচে নামলো ওকে একটু অন্যরকম দেখাচ্ছিলো। খাওয়ার টেবিলে রাযীন বারবার চোরা চোখে রুহিকে দেখছিলো, একটা মুচকি হাসি লেগেছিলো দু’জনার চেহারায়। শুভ যা বোঝার বুঝে গেলো। সে সেই মুহূর্তে নিজের নাস্তার প্লেট মেঝেতে ফেলে দোতলায় নিজের কামরায় ফিরে এসে ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর শুরু করলো। শিখা দৌড়ে এলো ছেলের পেছনে। শুভকে থামানোর বৃথা চেষ্টায় জানতে চাইলো-
“শুভ, আব্বু কি হলো হঠাৎ? এমন করছিস কেন বাবা?”
শুভ জবাব না দিয়ে আপন মনে জিনিস ভাঙছে। নিজের মোবাইল দুটো, ল্যাপটপ, শখের গিটার। ড্রেসিং টেবিলে হাত দিতেই শিখা এসে ছেলের হাত ধরলেন-
“শুভ! এমন করছিস কেন? কি হয়েছে তোর? কি লাগবে বল। তুই যা চাইবি মা তোকে তাই দেবে।”
“একথা তুমি আগেও বলেছো।”
শুভ মায়ের দিকে তাকালো। শিখা ভ্রু কুঁচকে বলে-
“হ্যা, তো? তোর কি চাই সেটা না বললে দেবো কি করে?”
“সত্যি দেবে?”
“আমি মিথ্যে বলি না।”
শুভ মায়ের হাত ছাড়িয়ে বিছানায় বসলো চুপচাপ। চুলগুলো ঠিক করে হাত দিয়ে-
“ভেবে দেখো মা, আমি আজপর্যন্ত কিছু চাইনি তোমার কাছে। এবারই প্রথম তুমি আমায় কিছু দিয়ে তোমার ভালোবাসা প্রমান করার সুযোগ পাচ্ছ। আশাকরি সেই সুযোগ কাজে লাগাবে।”
শিখা বিরক্তি নিয়ে ছেলেকে দেখলো-
“এতো হেয়ালি না করে বলো তোমার কি চাই। লাল টুকটুকে বউ চাই নাকি? আমি অবশ্য একটা মেয়েকে দেখেছি। আমার খুব পচ্ছন্দ হয়েছে। মেয়েটা কে জানো? তন্দ্রা। তন্দ্রাকে মনে আছে তোমার? তোমার ছোট আন্টির মেয়ে।”
শুভ সেসব কথা কানে তুললো না। ঠান্ডা গলায় বললো-
“আমার রুহিকে চাই মা। আই লাভ হার। ওর জন্যই বাড়ি ছাড়লাম। এতোদিন তোমাদের ছাড়াও কতো ভালো ছিলাম ওকে নিয়ে। হঠাৎ করে রাজ ভাই ফিরে এসে সব গুবলেট করে দিলো। মা শুনেছো কি বলেছি? আমার রুহিকে চাই রুহি রুহি রুহিকে চাই। না পেলে খুব খারাপ হয়ে যাবে। আমি কি করবো আমি জানিনা।”
শিখার দৃষ্টিতে অবিশ্বাস। সে বড় বড় চোখে ছেলেকে দেখছে। ওহহ, এতো বোকা কেন সে? ছেলের হঠাৎ ফিরে আসা, রুহির মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়া, শুভর আচমকা নানা বাড়ি থেকে ফিরে আসা, প্রায়ই রুহির আসেপাশে থাকা। মর্জিনা কয়েকবার বলেছিলো তবুও মাথা ঘামাননি এদিকে। শিখার কি খুশি হওয়া উচিত? না চাইতেই তুরুপের তাস হাতে পেয়ে যাওয়ার কারণে। কিন্তু এবার কি করবে শিখা? রাযীন কি এবার এতো সহজে হাল ছেড়ে দেবে? গতবারের মতো না বরং এবার এমন ব্যবস্থা করতে হবে যেন রাজ আর ফিরে না আসে। একেবারে দীর্ঘস্হায়ী ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু করবেটা কি? যা হোক কিছু একটা করা যাবে। আপাতত খুশি হওয়া যাক না হয়। শিখা চেহারায় অদ্ভুত হাসি ফুটিয়ে শুভর পাশে এসে বসলো।

চলবে—
©Farhana_Yesmin

#না চাহিলে যারে পাওয়া যায়
#পর্ব-২৪

খাওয়া শেষে মুখ মুছিয়ে দিতেই আশরাফ রুহিকে ইশারায় বসতে বলেন। সামনে দাঁড়ানো রোজীকে চোখের ইশারায় কিছু বলতেই রোজী উঠে গেলো। কিছুক্ষণ পর হাতে দুটো বাক্স নিয়ে ফিরে এলো। রুহির সামনে বসে বাক্স খুলে একজোড়া মোটা বালা বের করে রুহির দু’হাতে পড়িয়ে দিলেন-
“এটা আমার শাশুড়ী মায়ের থেকে পেয়েছিলাম। উত্তরাধিকার সুত্রে তোমায় দিলাম। আর এটা তোমার শশুরের তরফ থেকে উপহার তোমার জন্য। নিজে পচ্ছন্দ করে তার ভবিষ্যৎ বংশধরের মায়ের জন্য বানিয়েছেন। একটু পরে তোমার শশুরকে দেখাও।”
রোজী নিজেই রুহির গলায় হীরের হারটা পরিয়ে দিলেন। অপ্রস্তুত রুহি কিছু বলতে পারে না। এতোদিন পর হঠাৎ করে এসব দেওয়ার মানে কি বুঝতে পারে না। সে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে একবার শশুরের দিকে তাকাতেই দেখলো রুহির দিকে তাকিয়ে থেকে আশরাফের চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে। রোজী রুহির সামনে এসে বসলো, রুহির হাত নিজের হাতে নিলো-
“বউমা, এসব দেখে তোমার হয়তো অবাক লাগছে। ভাবছো এতোদিন পর এসবের আবার কি দরকার? আসলে মা, তোমার শশুরের শরীরটা তো ভালো না। কখন কি হয়ে যায় বলা যায় না। তোমাকে এ বাড়িতে বউ করে আনার পরে যথাযথ সম্মান দিতে না পারার আক্ষেপ সবসময় ছিলো তার। এসব দিয়ে সে হয়তো তার আক্ষেপ কিছুটা কমাতে চায়।”
রুহি চুপ করে রইলো। সোনা গয়না টাকা পয়সা এসব দিয়ে মনের শুন্যতা পূরণ হয়? রুহির আসলে জানা নেই। রোজী হয়তো রুহির মনের ভাব বুঝতে পারলেন-
“এক জিনিসের অভাব কিছুতেই আরেকটা দিয়ে পূরণ হয় না। তবে কি জানো, আজকাল রাজের বদলটা বেশ টের পাই। সুস্থ থাকাকালে নিজের ছেলের সাথে তার কোনদিন বনেনি। এখন আর বনাবনির প্রয়েজনই নেই। তবুও রাজ প্রতিদিন নিয়ম করে বাবার খোঁজ নিচ্ছে, ডাক্তারের কাছে ছোটাছুটি করছে এসব দেখেও ভালো লাগে। বুড়ো বয়সে সন্তানের কাছে বাবা মা বেশি কিছু তো চায় না। এই সামান্যতেই আমরা খুশি। জানি এ বাড়িতে বউ হয়ে এসে তুমি তেমন কিছু পাওনি তবুও ধৈর্য্য ধরে রাজের সাথে আছো এজন্য তোমার শশুর খুব খুশি হয়েছে তোমার উপর। তার ইচ্ছে তার ভুলত্রুটি তুমি ক্ষমা করে দেবে।”
“ছি মা এসব কেন বলছেন? বাবার উপর আমার কোন রাগ নেই। সত্যি বলছি বাবা, আমি আপনার উপর রাগ করে নেই।”
রুহি আশরাফের দিকে তাকিয়ে মনের কথাগুলো বলতেই আশরাফের চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। ঠোঁট বাকিয়ে হাসার চেষ্টা করলো। সুস্থ হাতটা তুলে আশির্বাদের ভঙ্গি করে নামালো। রোজী চুপচাপ তা দেখলো পাশে বসে। তারপর হালকা গলায় রুহিকে ডাকলো-
“একটা কথা বলি বউমা?”
রুহি মাথা নাড়তেই রোজী মৃদুস্বরে বলতে শুরু করে-
“বয়স হয়ে গেলে মানুষ সবসময় বেঁচে থাকার উৎস খুঁজে বেড়ায়। বংশের রক্ত খুঁজে বেড়ায়। তোমার শশুরের খুব ইচ্ছে রাজের সন্তানকে দাদার আদর দেওয়ার। যদি পারো তবে তার শেষ ইচ্ছেটা পূরণ করো তোমরা।”
শাশুড়ীর কথায় লজ্জা পেয়ে মুখ নামিয়ে নিলো রুহি। রোজী তা লক্ষ করে হাসলো, দীর্ঘ শ্বাস গোপন করে খুব ধীরে গলায় বলে-
“একজনকে তো হারিয়েই ফেললাম অকালে তাই আমি এখন আর স্বপ্ন টপ্ন দেখি না। তোমাদের উপর কোন কিছু চাপিয়ে দিচ্ছি না। তবে এ বাড়িতে মনেহয় একটা শিশুর সত্যিই প্রয়োজন আছে। ভেবে দেখো কিছু করা যায় কিনা।”
রুহির থুতনি বুকের সাথে সেটে আছে। বাচ্চার কথা ভাবা তো দূরের কথা মাথাতেই আসেনি। এখনো তো নিজেকে সামলে নিতেই পারলোনা। রুহি কিছু না বলে প্রায় পালিয়ে এলো রোজীর সামনে থেকে।

★★★

ক্লজেট থেকে নিজের কাপড় বের করতে যেয়ে বিরক্ত হলো সৌরভ। একটা কাপড়ও ঠিক জায়গায় নেই। পচ্ছন্দের শার্টটা খুঁজে না পেয়ে পুরো ক্লজেট এলোমেলো করে ফেললো। কিন্তু না কোথাও নেই শার্টটা। ঝিলিক একবার সে দৃশ্য দেখে নিজের কাজে মন দিলো। সৌরভ বিরক্ত নিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে ঝিলিকের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো-
“আমার আকাশি রঙের শার্টটা দেখেছো?”
ঝিলিক উত্তর দিলো না। সৌরভ ভ্রু কুঁচকে ঝিলিককে দেখলো। ওর মধ্যে কোন উৎকন্ঠা না দেখে সামনে এগিয়ে এসে ওর হাত ধরে থাকা কাগজটা কেঁড়ে নিতেই রুহি বিরক্তি নিয়ে তাকালো-
“কাগজটা ফেরত দাও সৌরভ।”
সৌরভ রাগে দাঁত কিড়মিড় করে-
“কিছুক্ষণ আগে তোমার কাছে কিছু জানতে চেয়েছি তার উত্তর দাও আগে।”
“তোমার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই। আমার কাগজ ফেরত দাও।”
ঝিলিক ঠান্ডা গলায় জবাব দিতেই সৌরভ বিস্মিত কন্ঠে বলে-
“বাহ, দারুণ জবাব দিলে এইজন্য তালি দিয়ে এপ্রিসিয়েট করা উচিত তোমাকে। তা ম্যাডাম কি রাজ কার্জ সম্পাদন করছিলেন আগে দেখি। মেকাপ আর শপিং ছাড়া পারোটা কি তুমি যে এতো ভাব দেখাচ্ছ?”
বলেই হাতের কাগজটা চোখের সামনে মেলে ধরলো। একটা ড্রেসের ডিজাইন করার চেষ্টা করছে ঝিলিক। তা দেখে সৌরভ হেসেই খুন হলো। ফটাফট হাতের কাগজটা ছিড়ে কুটিকুটি করলো-
“তোমার এই ফালতু কাজের চাইতে অনেক জরুরি আমার শার্ট খোঁজা। আজকে একটা জরুরি মিটিং আছে আমার, যাও শার্টটা খোঁজো।”
ঝিলিক ওঠার নাম নিলোনা, মুখচোখ শক্ত করে বসে রইলো-
“তোমার শার্ট তুমি খুঁজে নাও।”
সৌরভ কোমরের দু’পাশে হাত রেখে ঝিলিকের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে জানতে চাইলো-
“মানে কি?”
ঝিলিক সৌরভের চোখে চোখ রেখে বললো-
“মানে তাই যা তুমি শুনেছো। আমি তোমার শার্ট খুঁজে দিতে পারবোনা।”
সৌরভের চোখ লাল হচ্ছে ক্রমশ, অগ্নিমূর্তি ধারন করছে চেহারা-
“কেন পারবে না? এখন আমার কাজ করতে ভালো লাগে না বুঝি? হ্যা তা লাগবে কেন? এখন তো নাগ…”
“খবরদার যদি একটাও বাজে কথা বলো। তুমি জানো আমি এমন মেয়ে নই। রাজ পাঁচবছর দেশে ছিলোনা। ওর সাথে কোন যোগাযোগ ছিলোনা আমার। তোমার সাথে বিয়ের পর সে চেষ্টাও করিনি। কিন্তু তবুও প্রতিনিয়ত তোমার এসব কথা শুনতে হয়েছে আমাকে। যা নয় তাই বলেছো, বউ হিসেবে কখনো সম্মান দাওনি। অথচ তুমি অন্যায় করে জোর করে বিয়ে করেছিলে আমাকে। সে আচরণ নিয়ে কখনো তোমায় অনুশোচনা করতে দেখিনি। এতোদিন অনেক সয়েছি কিন্তু আর না। তুমি যদি তোমার আচরণে পরিবর্তন না আনো তবে তোমার সাথে থাকার আর কোন প্রয়োজন দেখি না আমি। তবে ভেবোনা চুপচাপ চলে যাবো তোমার জীবন থেকে। যাওয়ার আগে অবশ্যই সবাইকে সব জানিয়ে যাবো।”
ঝিলিক দুপদাপ পা ফেলে ঘর থেকে বেড়িয়ে এলো।পেছনে বিস্ময় নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলো সৌরভ।

★★★

“কি করছো?”
রুহি চমকে উঠে পিছু ফিরতেই শুভকে দেখলো। দরজায় দাঁড়িয়ে রুহিকে দেখছে। আলমারির দরজা আঁটকে রুহি প্রশ্ন নিয়ে শুভকে দেখলো। শুভ ওর দৃষ্টি পাত্তা ন দিয়ে রুমে এলো-
“তুমি তো আসতে বলবে না তাই আমি চলে এলাম। তা ভাইয়ের সাথে সংসার কেমন চলছে?”
রুহি নিজের বিরক্তিকর অভিব্যক্তি না লুকিয়ে জানতে চাইলো-
“কি চাই তোমার? এভাবে না বলে কারো রুমে আসতে নেই এটা কি জানো না?”
শুভ ফিকফিক করে হাসলো-
“অনেক কিছুই জানি না আমি যেমন তুমি জানো না অনেককিছু।”
রুহি বিস্মিত হলেও প্রকাশ করলোনা। ভ্রু কুঁচকে শুভর দিকে তাকালো-
“কি বলতে চাইছো স্পষ্ট করে বলো।”
“মানে বলছিলাম ভাইয়ার ব্যাপারে কতটুকু জানো তুমি? এই যে পাঁচ বছর দেশে ছিলোনা ওখানে কি একা একাই ছিলো? কারো সাথে প্রেম বা বিয়ে করেনি তো? এখন হঠাৎ দেশে এসে তোমায় নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠলো কেন সেটা নিয়েও তো ভাবা উচিত।”
“সেসব নিয়ে তোমার এতো ভাবনা কেন? তুমি নিজের ভাবনা ভাবো।”
মুখে বললেও মনে মনে রুহি শুভর প্রশ্নগুলোই ভাবছে। রুহির কথায় শুভর মুখের হাসি চওড়া হলো-
“নিজের ভাবনা ভাবছি বলেই তোমার কাছে এলাম। আমার কাছে নিজ বলতে তো তুমিই সে তুমি স্বীকার করো বা না করো।”
রুহি রেগে গেলো, গর্জে উঠে বললো-
“শুভ! বিহেভ ইয়োরসেলফ।”
শুভ আঁতকে উঠার ভঙ্গিতে দু’হাত উপরে তুলে-
“আরে আমি কি করলাম? তোমার ভালোর জন্যই তো বলা। আসলে জগতে ভালো মানুষের দাম নেই। আচ্ছা বলো তো, এই যে তুমি আমাকে আগে থেকেই চেনো, আমি তোমার সদ্য হওয়া প্রাক্তন প্রেমিক সেসব কি বলেছো ভাইকে?”
রুহি মনে মনে ভয় পেলেও চেহারার সে ভয় প্রকাশ করতে চাইলোনা। সে নিরুত্তর রইলো। শুভ মুচকি হাসলো-
“ভাইয়ের ও কপাল। যাকেই বউ হিসেবে পচ্ছন্দ করেছে বা করে তারই কিছু না কিছু ঘটনা হয়। বেচারা এবার এসব জানলে যে কি হবে?”
রুহি এবার ঘৃনা মিশ্রিত কন্ঠে বললো-
“তুমি নিশ্চয়ই নিজেকে এতোটা নিচে নামাবে না?”
“নিশ্চয়ই না। শুধু ভাবছিলাম কখনো যদি ভাইয়া জানে তখন কি হবে? ভাবো, ভাবো ব্যাপারটা রুহি, ভাবো একবার।”
শুভ শিষ দিতে দিতে চলে গেলে রুহি বজ্রাহতের ন্যায় বসে রইলো।

চলবে—
©Farhana_Yesmin