#না_চাইলেও_তুমি_আমার
পর্বঃ ২৪
জাহান আরা
মনোয়ারা বেগম,রাত্রি,আমির কেউ কিছু বুঝতে পারছে না।ওনারা ৩ জন তাকিয়ে আছে হাসনাত সাহেব,নিশান,নিষাদের দিকে।
খাওয়া শেষ করে টেবিল ছাড়তে ঘন্টাখানেক লেগে গেলো।
খাওয়া শেষ করে সবাই ড্রয়িং রুমে বসলো।চন্দ্র লজ্জায় মাথা তুলে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না।
নিজেকে নিজে মহাগাঁধী বলে কয়েকবার বকা দিলো।নিষাদ এসে চন্দ্রর পাশেই বসলো সোফায়,চন্দ্র চমকে উঠে নিষাদ পাশে বসায়।
কেমন অপরাধীর মতো লাগে চন্দ্রর,আমিরের দিকে তাকায় চন্দ্র।
আমির কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দুজনের দিকে,নিষাদের সেদিকে খেয়াল নেই।
চন্দ্র মনেমনে আল্লাহকে ডেকে যাচ্ছে ভয়ে।
নিষাদ পকেট থেকে ফোন বের করে ফোনে মনোযোগ দিয়ে বসে বসে কি যেনো দেখছে।ভয়ে চন্দ্রর আত্মারাম খাঁচা ছাড়ার যোগাড়।
নিষাদ ই বলে উঠে প্রথমে,”আমাদের অফিসে একটা পোস্ট খালি হয়েছে,সেদিন কথার কথা ভাইয়াকে বলতেই ভাইয়া বললো আপনার কথা,আপনি কি জব করতে ইচ্ছুক?
তাহলে আপনার সিভি টা আমাকে মেইল করে দিয়েন কাইন্ডলি।”
আমির নিশানের দিকে তাকায় মুহূর্তে,নিশান হাসনাত সাহেবের সাথে কথা বললেও কান খাড়া করে ছিলো,তাই আমিরের দিকে তাকিয়ে সম্মতি প্রকাশ সূচক মুচকি হাসি দেয়।
এটুকু বলে নিষাদ উঠে গেলো নিজের রুমের দিকে।আমিরের মুখ হাসিহাসি হয়ে গেলো নিষাদের কথা শুনে মুহূর্তেই।চন্দ্র স্বস্তি পেলো যেনো।আমিরের দিকে তাকালো,আমিরের মুখের স্বাভাবিক অবস্থা দেখে চন্দ্রর দেহে প্রাণ ফিরে এলো।
রাত ১১ টার বেশি বেজে গেছে,হাসনাত সাহেব আমিরকে কিছুতেই যেতে দিচ্ছেন না এই রাতে।অগত্যা আমিরকে থাকতে হলো।
বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে নিষাদ,মেজাজ চরমে উঠে আছে,কি বিয়ে করলো যে চাইলেই বউকে নিয়ে ঘুমাতে পারছে না,পাশাপাশি বসতে পারছে না।চন্দ্রর নিশ্চয় খুব শীত লাগছে,সুয়েটার কি খুলে ফেলেছে,কম্বল গায়ে দিয়েছে তো ঠিক মতো,হাত নিশ্চয় বাহিরে রেখে শুয়ে আছে।একবার গিয়ে ঠিকমতো শুইয়ে দিয়ে আসতে পারলে ভালো হতো।
সবচেয়ে বেশি ভালো হতো চন্দ্রকে জড়িয়ে ধরে শুতে পারলে,গতরাতে দেখেছে চন্দ্র কম্বলের বাহিরে চলে যায় বারবার।
উঠে রুম জুড়ে পায়চারি করতে লাগলো নিষাদ,চন্দ্রকে কাছে পেতে ভীষণ ইচ্ছে করছে তার।
কাছে যাওয়ার উপায় না পেয়ে চন্দ্রকে কল দিলো।
চন্দ্র বিছানায় বসে ভাবছে গতরাতে ছিলো নিষাদের বুকে অথচ আজকে দুজন আলাদা।এইতো ক’দিন হলো মাত্র বিয়ের,অথচ এতো মায়া কবে জন্ম নিলো নিষাদের জন্য।
ঠিক তখনই ফোন বেজে উঠে,চন্দ্রর মুখে হাসি ফুটে উঠে।
না দেখেই চন্দ্র বুঝে যায় নিষাদের কল এসেছে।
রিসিভ করে কাঁপা কাঁপা গলায় হ্যালো বলে চন্দ্র।
“সুয়েটার,চাদর গায়ে আছে তো?”
“চাদর,সুয়েটার পরে আমি ঘুমাবো না-কি,এখন তো শুয়েই যাবো কম্বল গায়ে দিয়ে।”
“বেশি কথা বলবা না,সুয়েটার পরে নাও,তারপর শোও”
“উফফ,আপনি এরকম করছেন কেনো,আমি ওভাবে ঘুমাতে পারি না,আপনি চলে আসেন না তাইলেই তো হয়।আমি এতোকিছু পারবো না করতে।”
“চন্দ্র,কথা যা বলেছি তা শুনো,তোমার যেই হিটলার ভাই,আমি ড্যাম শিওর তোমার ভাই রাতে আসবেই চেক করতে একবার হলেও।”
“খবরদার,আমার ভাইকে নিয়ে উল্টোপাল্টা কথা বলবেন না আপনি।”
“মানে যার জন্য করি চুরি সে বলে চোর,ভাইকে নিয়ে একটা কথা বলায় লেগে গেছে,আর তোমার ভাই যে আমাকে আমার বউয়ের থেকে আলাদা করে রেখেছে তার বেলায় কিছু না?”
“আমার ভাই কি ধরে রাখছে না-কি আপনাকে?
না-কি বেঁধে রেখেছে,নিজেরই ইচ্ছে নেই আসার তা বললেই তো হয়।”
নিষাদের ভীষণ মন খারাপ হলো এটা শুনে,চন্দ্রকে কাছে পেতে কি ভীষণ ইচ্ছে করে নিষাদের তা কি চন্দ্র এখনো বুঝে না?
আর কথা না বাড়িয়ে নিষাদ বলে,”সুয়েটার পরে শুয়ে যাও,অনেক ঠান্ডা পড়ছে,আমরা কাল ই চলে যাবো এখান থেকে।”
নিষাদের অভিমানী সুর বুঝতে দেরি হয় না চন্দ্রর,কিন্তু তবুও চুপ করে থাকে।
ফোন রেখে দেয় নিষাদ।
কেনো এরকম হচ্ছে তার, কেনো চন্দ্রকে ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারছে না সে,এক একটা মুহূর্ত একটা বছরের মতো লাগছে নিষাদের এখন।
কান্না করতে ইচ্ছে করছে খুব,কিন্তু পারছে না।সৃষ্টিকর্তা সে অধিকার দেয় নি,চাইলেই কাঁদতে পারে না তাই।
বারান্দায় গিয়ে বসে নিষাদ,চন্দ্রকে সে কি পরিমাণ চায় তা হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছে নিষাদ।
কিন্তু কি হবে শেষ পর্যন্ত,চন্দ্রর বাবা ভাই যদি না মেনে নায় তাহলে?
নিষাদ কি সবাই কে বুঝাতে পারবে সে চন্দ্রকে কতো টা ভালোবাসে?
চন্দ্রকে যদি হারিয়ে ফেলে শেষ পর্যন্ত নিষাদ বাঁঁচবে কিভাবে?
চন্দ্রকে ছাড়া নিষাদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না কখনো।
নিচতলায় গেস্ট রুমে আমির শুয়েছে,পাশের রুমে হাসনাত সাহেব আর মনোয়ারা বেগম।
শুয়ে শুয়ে আমির ভাবছে চন্দ্রকে কবে একটা ভালো পাত্রের কাছে বিয়ে দিয়ে মাথা থেকে দায়িত্ব শেষ করবে।
নিশানের মতো ভালো একটা ছেলে পেলে হতো,এরকম একটা পরিবার পেলে আর কিছু লাগতো না।
আমির একবার ভেবেছে নিষাদের কথা,কিন্তু রাত্রি বিশেষ পাত্তা দেয় নি,রাত্রির থেকে শুনেছে নিষাদ আর মারিয়ার সম্পর্কের কথা।
বোনদের ভবিষ্যতের কথা ভাবতে ভাবতে কতো রাত যে আমির নির্ঘুম কাটিয়েছে আমির জানে সুরমা জানে আর আল্লাহ জানে।
সংসারে মা না থাকলে কি কষ্ট তা আমিরের চাইতে ভালো কে বুঝে?
কতোদিন সুরমা রাগারাগি করেছে সন্তান নেয়ার জন্য,বাপের বাড়ি চলে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে।আমির কোনো ভাবে পাত্তা দেয় নি সেসব,সোজা বলে দিয়েছে,একবার যদি যায়,আজীবনের জন্য এই বাড়ি সুরমার জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যাবে।সুরমা যেতে দেরি হবে,ডিভোর্স লেটার যেতে দেরি হবে না।
আমিরের কঠিন কথার সামনে সুরমা টিকতে পারে নি,চন্দ্র তো বাসায় থাকে না,কিন্তু কোনোদিন রাত্রিকে একটা কাজ করতে দেয় নি,এতো যত্নে রেখেছে কিন্তু বোনদের বুঝতে দেয় নি।
ভালোবাসা আড়াল করার অস্বাভাবিক ক্ষমতা আমির তার বাবার থেকে পেয়েছে।
রোজ রাতে উঠে বোনদের রুম বাহিরে থেকে দেখে আসার একটা অভ্যাস আমিরের আছে,আজও শুয়ে থাকতে পারলো না তাই।
দোতলায় উঠেই দেখে চন্দ্রর রুমের দরজা কিছুটা খোলা।আমিরের বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠে। দরজায় নক করে,চন্দ্রর কোনো সাড়া পাচ্ছে না আমির।
দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলে ফেলে আমির,চন্দ্রর রুম খালি।
চন্দ্র কোথায় গেলো?
চোয়াল শক্ত হয়ে উঠে আবার আমিরের,নিষাদের রুমের দরজায় নক করে গিয়ে।
নিষাদের রুমের দরজায় টোকা পড়েছে,সাবধানে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় নিষাদ।এতো রাতে কে আসবে?
নিশ্চয় আমির এসেছে।চন্দ্র হলে কল দিতো আগে।
পা টিপে টিপে নিষাদ বিছানার পাশে যায়,তারপর বিছানা কিছুটা এলোমেলো করে দেয়,কম্বল উপরে মেলে দেয়।আরো একটু সময় অপেক্ষা করে চোখেমুখে ঘুমের ভাব ফুটিয়ে তুলে দরজা খুলে দেয়।
বাহিরে আমির দাঁড়িয়ে আছে,কিছু না বলেই রুমে ঢুকে যায় আমির,তারপর চারদিকে সতর্ক চোখে তাকায়।
“কোনো সমস্যা হয়েছে ভাইয়া?”
“না মানে,আমার ফোনে চার্জ দিতে হবে একটু,আমি তো চার্জার আনি নি,তাই ভাবলাম নিশানদের আর না ডাকি,এজন্যই তোমার রুমের দরজা নক করলাম।কিছু মনে করো নি তো।”
“না-না,কিছু মনে করি নি।”
“তুমি কি ঘুমিয়ে পড়ছিলে?”
“হ্যাঁ ভাইয়া,অফিসে খুব কাজ ছিলো তাই টায়ার্ড ছিলাম।”
আমির চারদিক তাকায়,সন্দেহবাতিক মন বারান্দার দিকে যায়।আমির এগিয়ে যায় সেদিকে,বারান্দা খালি দেখে।তারপর নিষাদ কে বলে,”বেশ বড় বারান্দা।”
নিষাদ বুঝে গেছে আমিরের আসল উদ্দেশ্য কি।আমির কি করবে বুঝতে পারছে না,নিষাদ কে জিজ্ঞেস করতে ও পারছে না চন্দ্রর কথা।
তাই আবার বললো,”আমি কি তোমার ওয়াশরুম টা ইউজ করতে পারি? ”
“নিঃসন্দেহে।”
আমির ওয়াশরুমে গিয়ে দরজা আটকে দেয়,তারপর একটু অপেক্ষা করে ফ্ল্যাশ করে চলে আসে।
নিষাদের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে আমিরের চোখে পড়ে না।
রুমে নিষাদের এক্সট্রা চার্জার ছিলো,নিষাদ তা বের করে আমিরের হাতে দিতেই আমির জিজ্ঞেস করে,”চার্জার দিয়ে কি করবো?”
হাসি চেপে নিষাদ বলে,”আপনি না ফোন চার্জে দিবেন বলেছেন?”
আমিরের মনে পড়ে যায়,”ওহ হ্যাঁ হ্যাঁ তাই তো,ভুলেই গেছিলাম” বলতে বলতে আমির চার্জার নিয়ে বের হয়ে যায়।
বের হতেই দেখতে পায় রাত্রি আর চন্দ্র কথা বলতে বলতে রাত্রির রুম থেকে আসছে চন্দ্রর রুমের দিকে। আমিরকে নিষাদের রুমের বাহিরে দেখে দুবোনেই থমকে দাঁড়ায়।চন্দ্র বুঝে যায় যা বুঝার।
আল্লাহর কাছে মনে মনে শুকরিয়া আদায় করে।
নিষাদের সাথে কথা শেষ করার পর চন্দ্র রুম থেকে বের হয়েছিলো নিষাদের রুমে যাওয়ার জন্য। তখনই রাত্রি কল দেয় চন্দ্রকে তাদের রুমে যাওয়ার জন্য।
গতকাল চন্দ্রর জন্মদিন ছিলো,জন্মদিনের গিফট রাত্রি অনেক আগে কিনে রেখেছে কিন্তু মনে ছিলো না সেদিনই উইশ করতে।
আমির চন্দ্র আর রাত্রির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,”ঘুমাস নি তোরা?”
“না ভাইয়া ঘুম আসছে না।”
আমির চন্দ্রর দিকে তাকায়,চন্দ্রর ২চোখ ভেজা।কি হয়েছে চন্দ্রর!
কেনো কাঁদছে!
ধীরপায়ে এসে আমির চন্দ্রর হাত ধরে,তারপর জিজ্ঞেস করে,”কাঁদছিস কেনো?”
আমিরের প্রশ্ন শুনে রাত্রি কেঁদে উঠে ঝরঝর করে।
অবাক হয় আমির।কি হয়েছে তার দুই বোনের?
কেনো কাঁদছে ওরা?
কিছুক্ষণ কান্নার পর দুজন কাঁদতে কাঁদতে যা বলে তার মানে হলো মায়ের কথা মনে পড়ছে দুজনের।
দুই বোনকে বুকে জড়িয়ে ধরে আমির।
মা’র কথা ভাবতেই মন খারাপ হয়ে যায় আমিরের,মা মারা গেছে তার জন্য না,মায়ের জীবনের লুকোনো কষ্টের কথা ভেবে,রাত্রি আর চন্দ্র কি জানে সেসব?
জানলে হয়তো ওরাও বলতো,মারা গিয়ে বেঁচে গেছে মা।
৩ ভাই বোন চন্দ্রর রুমে ঢুকে বিছানায় বসে।তারপর কথা বলতে বলতে কখন কে ঘুমিয়ে যায় কিভাবে কেউ টের পায় না।
সবার আগে ঘুম ভাঙে আমিরের,চোখ মেলে দেখে সে বসে বসেই ঘুমিয়েছে,পা ভাজ করে বসা,রাত্রি আর চন্দ্র ২জন ২ পায়ের উপর শুয়ে আছে।বোনদের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকায় আমির।
আশ্চর্য হয়ে ভাবে,কে বলবে ওরা বড় হয়ে গেছে,ঠিক তেমন লাগছে মা মারা যাওয়ার পর আমির যেভাবে ওদের বড় করেছে।
চন্দ্র টা ছিলো খুব ছোট,২ বোনের খাওয়া,পরা,গোসল,স্কুল সবই আমিরের দায়িত্বে ছিলো।কতোদিন কান ধরে ক্লাস করেছে আমির পড়া দিতে না পারায় ক্লাসে,সারারাত বোনদের জন্য পড়তে পারে নি।
কি সময় কাটিয়েছে আমির!
সেই সময়ের জন্য আমিরের কখনো আফসোস হয় না বরং গর্ব হয় সে ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করেছে,বাবার দায়িত্ব পালন করেছে,মায়ের দায়িত্ব পালন করেছে।
এতো দায়িত্ব নিয়েও হাফিয়ে উঠে নি কখনো,বরং অবশ্যকর্তব্য ভেবে করে গিয়েছে।
চন্দ্র জেগে উঠে,তার পরপরই রাত্রি উঠে।
নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে হাসনাত সাহেব আমির,নিশান,নিষাদ বাসায় ফিরে।
বাসায় ফিরেই নিষাদ সোফায় ধপ করে বসে পড়ে,হাসনাত সাহেব আর নিশান জগিং এর জন্য রেডি হয়ে বের হয়ে আসে।
নিষাদ কে বসে থাকতে দেখে হাসনাত সাহেব বলেন তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিতে।
সারারাত একবার চন্দ্রকে দেখতে পারে নি,কিছুতেই ইচ্ছে করছে না তাই নিষাদের যেতে,নিষাদ ‘কে তবুও বসে থাকতে দেখে হাসনাত সাহেব বলেন,”সময় গেলে,সাধন হবে না।”
এই কথা বলে হাসনাত সাহেব শীষ বাজান,উপর থেকে চন্দ্র নেমে আসে,জগিং এর জন্য যাবে চন্দ্র ও।
নিষাদের দিকে না তাকিয়ে নিশানের পিছু পিছু চন্দ্র দৌড়ে বের হয়ে যায়,চন্দ্রর পিছনে হাসনাত সাহেব।সবার পিছনে নিষাদ।
বাসার বাহিরে যেতেই হাসনাত সাহেব নিষাদকে বলে,”নো ম্যান,তোমাকে জগিং এ যেতে দেওয়া হবে না।”
নিষাদ কাতর চোখে তাকায় বাবার দিকে,তারপর হেসে উঠে দুজনেই।
হাসনাত সাহেব এগিয়ে যান,নিষাদ এসে চন্দ্রর হাত ধরে টেনে একটা ঝোপের আড়ালে টেনে নিয়ে যায়।
হাসনাত সাহেব ও একটু দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে যান।
একটু পরেই একজন লোক দৌড়াতে দৌড়াতে সেই ঝোপের দিকে যেতে নেয়,রাগী ভঙ্গিতে হাসনাত সাহেব সামনে দাঁড়ায় তার।
লোকটা অবাক হয়ে যায় হাসনাত সাহেব তার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ানোয়।
“আরে মশায়,পথ আটকে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো,সরুন না।”
“কেনো,আমাকে কেনো সরতে হবে?”
“আমি ওই ঝোপের দিকে যাবো তাই।”
“কেনো আপনাকে ঝোপের দিকেই কেনো যেতে হবে,আপনি ওই ঝাউতলার দিকেই যান না।”
লোকটা অবাক হয় হাসনাত সাহেবের কথা শুনে,তারপর বলে,”আমার ওদিকে যাওয়া দরকার আমি সেদিকে যাবো।”
“বলি মশায়,একবার ঝাউতলায় গিয়ে দেখুন না,ওটা বড় একটা খারাপ জায়গা নয় মোটেও,এই চলুন না আমি-ই না হয় সাথে করে নিয়ে যাই আপনাকে।”
“বললাম তো ভাই,আমি ওদিকে যাবো না,কেনো প্যাচাল করছেন অযথা?”
খেঁকিয়ে উঠে হাসনাত সাহেব বলে,”কেনো? যাবেন না কেনো শুনি,ঝাউতলা কি এতোই খারাপ না-কি? এই-যে হাজারে হাজারে লোক ঝাউ গাছ লাগাচ্ছে তা কি এমনি এমনি লাগাচ্ছে?
ঝাউ গাছের অর্থনৈতিক ভ্যালু আপনি জানেন?
বছরে কতো ঝাউ গাছ বিক্রি হয় তা জানেন আপনি?
আসছে ঝোপের আড়ালে যেতে,চলুন আমি আপনাকে ঝাউতলায় নিয়ে যাচ্ছি,আপনাকে আমি ঝাউ গাছের অর্থনৈতিক ভ্যালু ও সরেজমিনে বুঝাবো।”
হাসনাত সাহেবের কথা শেষ হতেই নিষাদ আর চন্দ্র বের হয়ে আসে।দুজনকে ফিরতে দেখে হাসনাত সাহেব আরো চড়া গলায় বলে,”মশায়,বাসায় ভাইয়ের ভয়ে আমার ছেলে বৌমা একটু কথা বলতে পারে না আর আপনি আসছেন এখন ওদের ডিস্টার্ব করতে,যান গিয়ে ঝোপের আড়ালে শুয়ে থাকেন।”
বলে বাসার দিকে যেতে লাগলেন।
নিষাদ হাসনাত সাহেব কে জিজ্ঞেস করে,”কিভাবে জানলে তুমি আমাদের বিয়ের কথা?”
“নিশান বলেছে সব।”
“তুমি কি রাগ করেছো শুনে?”
“অবশ্যই রাগ করেছি,বিয়ের সাক্ষী হিসেবে কি আমাকে তোর চোখে পড়ে নি না-কি?
বন্ধুদের ট্রিট দিলি আমাকে কি দিয়েছিস না-কি? ”
নিষাদ চন্দ্র দুজনেই হেসে উঠে শুনে।
বাসায় পৌঁছে নিষাদ সবার থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে যায়।আমির যখন বুঝলো নিষাদ অনির্দিষ্টকালের জন্য যাচ্ছে তখন পুরোপুরি স্বস্তি পেলো,তারমানে সে অযথা সন্দেহে ছিলো বুঝতে পেরে নাশতা করে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।
আমির চলে যেতেই হাসনাত সাহেব চন্দ্রকে নিয়ে নিষাদের ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেলেন।
চলবে….???