নিভৃতে যতনে পর্ব-২২+২৩

0
972

#নিভৃতে_যতনে
#Part_22
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat

বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি আমি৷ তাকিয়ে আছি ধূসর রাঙ্গা আকাশে দিকে। আকাশের বুকে ভীড় করেছে একরাশ বিষন্নতা। ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে। সেই বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে এলোমেলো হয়ে উড়ে চলেছে আমার অবাদ্ধ চুলগুলো। আমি স্বযত্নে সেগুলো আগলে কানে পিঠে গুঁজে দিচ্ছি। মনের দুয়ারে বার বার উঁকি দিচ্ছে কংলাক ঝর্ণার স্মৃতিগুলো। তখন রোয়েনের কথার পিঠে আমি কিছু বলতে পারি নি। বরং লজ্জায় কুঁকড়ে গিয়েছিলাম। যতক্ষণ সেখানে ছিলাম নতজানু হয়েছিলাম। লজ্জায় আর আড়ষ্টতার প্রবলে তার সাথে কথা বলা তো দূরে থাক চোখে চোখও রাখতে পারি নি আমি। বস্তুত, তার সাথে থাকাকালীন আমার লজ্জা যেন দ্বিগুণ বেড়ে যায়। এত লজ্জা কোথা থেকে আসে আল্লাহই জানে। এই যে এখনো তার কথা ভেবে লজ্জা পাচ্ছি। চোখে-মুখে ছেঁয়ে আছে রক্তিম লালাভ আভা। মনের ভিতর বইছে ভালোলাগা হাওয়া। মনের অজান্তেই জন্ম নিচ্ছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুভূতির অজস্র কণা। আমি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলিয়ে নেই। বিষন্ন প্রকৃতির দিকে চোখ যেতেই দৃষ্টি স্থির হয় আমার। আনমনেই গুনগুন করতে থাকি,

“এই মেঘলা দিনে একলা
ঘরে থাকেনাতো মন
কাছে যাবো কবে পাবো
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ?”

ক্ষণেই পিছনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে আমি গান গাওয়া বন্ধ করে দেই৷ তৎক্ষনাৎ পিছে ঘুরে দাঁড়াতেই চোখের সামনে ভেসে উঠে কাঙ্ক্ষিত চেহেরাটি। তাঁর শ্যামবর্ণ মুখশ্রী আজ দেখতে বড্ড সরল। চুলগুলো বাতাসের দোলে দুলতে দুলতে কপালে এসে পড়েছে। তাঁর অদ্ভুত নয়ন দুইটি আমাতেই নিবদ্ধ। আকস্মিকভাবে চারটি চোখ এক হতেই আমি দৃষ্টি সরিয়ে নেই। নতজানু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। তাঁর এই চোখে তাকানোর শক্তি আমার নেই। রোয়েন ধীর পায়ে আমার দিকে আসে। আমার পাশে এসে একটু বেঁকে কাঠের রেলিং এর উপর দুই হাত রেখে নিজের ভর ছেড়ে দেন। অতঃপর আমার দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বলেন,

— গান আর কথা কখনো অসম্পূর্ণ রাখতে নেই। এতে অতৃপ্তি ছাড়া কিছুই মিলে না।

কথাটা শোনে আমি রোয়েনের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাই। মিইয়ে যাওয়া গলায় বলি,

— না মানে..

আমার কথার মাঝে তিনি ফোঁড়ন দিয়ে বলে উঠেন,

— আমার সামনে নিজেকে গুটিয়ে রাখার কোন প্রয়োজন নেই। তুমি যেমন তেমনই থাকো। আমাকে জীবনসঙ্গী হিসাবে না দেখে বন্ধুর চোখে দেখো। দেখবে সম্পর্কটা দুইজনের কাছেই সহজ হয়ে যাবে।

আমি রোয়েনের দিকে তাকিয়ে সরু হাসির রেখা টেনে বলি,

— আর আপনি গুটিয়ে থাকলে বুঝি সম্পর্ক সহজ হবে? ফ্রি হতে হলে দুইজনকেই হতে হবে। একা আমি আর কত দূর এগুতে পারবো? আপনাকেও তো ফ্রি হতে হবে নাকি?

রোয়েন আমার দিকে তাকিয়ে বলে,

— চেষ্টা তো করছি এই।

— আন্ডা করচ্ছেন! একে চেষ্টা করা বলে? হুহ! আমাকে যা বললেন তা নিজের উপরও এপ্লাই করুন মিস্টার। বন্ধুত্বটা শুধু আমার দিক দিয়ে হবে কেন? দুইজনের দিক দিয়েই হতে হবে।

আমার কথাগুলো শুনে রোয়েন কিছুক্ষণ আমার পানে তাকিয়ে থাকলো। অতঃপর হালকা হেসে বলে,

— আচ্ছা।

তাঁর হাসি চোখে পড়তেই আমি স্থির হয়ে যাই। কি স্নিগ্ধ তাঁর হাসি। হালকা হাসির মাঝেও তাঁর গজদাঁত প্রদর্শিত। যা তার হাসির মাধুর্যতা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমি কিছুক্ষণ সেইদিকে তাকিয়ে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে শূন্য দৃষ্টিতে আকাশের পানে তাকাই। মানুষটিকে পূর্ণভাবে দেখার অধিকার আমার আছে কিন্তু তাও কোথাও যে একটা ‘কিন্তু’ থেকেই যায়। যা ক্ষণেই আমায় দৃষ্টি সরিয়ে নিতে বাধ্য করে। কিছুক্ষণ বাদেই কানে ভেসে আসে অনুভূতিপ্রবণ কিছু টুকরো টুকরো বাক্য,

— আকাশটা আজ বিষন্ন যে,
মেঘ করেছে কালো-
বিষন্নতায় মন ভরেছে
ক্যামনে লাগে ভালো?

কথাটা শুনে আমি রোয়েনের দিকে চকিতে চাই। রোয়েনের এই রুপ থেকে সম্পূর্ণভাবে অবগত আমি। তিনি আকাশের পানে তাকিয়ে আনমনা হয়ে বলেন,

– যার মিষ্টি কন্ঠে এতক্ষণ কাটছিল বিষন্নতা সে কি পারে না কাটাতে সম্পূর্ণ বিষন্নতা?

আমি রোয়েনের কথা অর্থ বুঝতে পেরে কিছুক্ষণ তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। মানুষটার আবদার করার ধরণও নিরালা। আমি মুচকি হেসে সম্মতি জানিয়ে গলা ঝেড়ে গানের সুর তুলে বিষন্নতাকে চলে যাওয়ার আহ্বান জানাই।

____________________

আজ সাজেকে আমাদের শেষ দিন। কাল ভোরেই রওনা দিবো আমরা ঢাকার উদ্দেশ্যে। পুনরায় সকলের পায়েই লেগে যাবে যান্ত্রিক জীবনের শিকল। ব্যস্ততায় ঢুবে যাবে সকলে। তাই সকলেই আজকের দিনটা মন খুলে উপভোগ করার চেষ্টা করছে। প্রকৃতির এক অপার ক্ষমতা হলো সে নিমিষেই সকলের ক্লান্তি চুষে নিয়ে উপহার দিতে পারে এক ঝাঁক প্রশান্তি। মানসিক প্রশান্তি৷ যা মানুষকে নতুনভাবে সবকিছু শুরু করার শক্তি দেয়।

আজ আমাদের শেষ গন্তব্য হলো কংলাক পাহাড়। উঁচু ঢালের উঁচু-নিচু এঁকেবেঁকে যাওয়া পথের শেষ সীমানায় এর আসল সৌন্দর্য নিহিত। আর সেই সৌন্দর্য দেখার লোভেই ছুটেছি আমরা সকলে। হাতে এক মাঝারি সাইজের কচি বাঁশ নিয়ে যে যার মত উপরের দিকে উঠে চলেছি। অনেকে আবার একটু দাঁড়িয়ে জিরিয়ে নিয়ে পানি পান করছে তো কেউ মুঠোফোনে এই সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে বন্দী করছে। আমিও হাতে মুঠোফোন নিয়ে হাতের তর্জনী দিয়ে সমানতালে তুলে চলেছি নির্মল প্রকৃতির ছবি। নিজেকে এই প্রকৃতির মাঝে বন্দী করার চেয়ে প্রকৃতিকে নিজের কাছে বন্দী করতে চাইছি। আমি প্রকৃতির মাঝে এতটাই বিভোর ছিলাম যে কখন আমার শুভ্র রঙ্গের ওড়নাটি মাটির সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে নিজের রঙ বদল করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তা টেরই পাইনি। হঠাৎ ওড়নায় টান পড়তে স্থির হয়ে যাই আমি। এক হাত দিয়ে নিজের ওড়না টেনে ধরে ঘাড় ঘুরিয়ে পুছে তাকাতেই দিকে রোয়েনের হাতের ভাজে আমার ওড়নার এক অংশ৷ আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই উনি বলে উঠেন,

— ওড়নাও ঠিক মত সামলাতে পারো না। ডাফার!

কথাটা বলেই তিনি নিজের পকেট থেকে রুমাল বের করে স্বযত্নে আমার ওড়নার এক অংশে লেগে থাকা ময়লাগুলো পরিষ্কার করে দিতে থাকেন। যা দেখা মাত্র মুহূর্তেই আমার ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠে প্রশস্ত হাসি। কখন যে নিজের অজান্তেই মুঠোফোনটি উঁচু করে দৃশ্যটি এর মাঝে বন্দী করে ফেলি কে জানে? রোয়েন নিজের কাজ শেষ করে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,

— ওড়না ঠিক করে নাও।

আমি হ্যাঁ সূচক মাথা দুলিয়ে ওড়নাটা টেনে নেই। আশেপাশে চোখ যেতেই দেখি অনেকেই আমাদের দেখে মিটিমিটি করে হাসছে। দূরেই কিছু মেয়ে রোয়েনকে দেখিয়ে তাঁর সঙ্গীকে শাসানো ভঙ্গিতে কিছু একটা বলছে। বিষয়টা যেন আমার মধ্যে এক গৌরবময় আনন্দ বয়ে আনছে। আমি ঠোঁটের কোনে হাসি ঝুলিয়ে পাশ ফিরে তাকাতেই নজরে পড়ে রক্তজবার একটি গাছ। যাতে ফুটে আছে রক্তিম লাল জবার দল। আমি সেদিকে কিছু প্রহর তাকিয়ে থেকে রোয়েনের দিকে তাকিয়ে মিইয়ে গলায় বলি,

— শুনেন!

রোয়েন আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেই আমি আড়ষ্ট কন্ঠে বলি,

— ওইখান থেকে কি একটা জবাফুল নেওয়া যাবে?

কথাটা বলেই আমি হাতের তর্জনী দিয়ে সেদিকে ইশারা করলাম। রোয়েন আমার হাতের তর্জনীর দিকটার অনুসরণ সামনে তাকিয়ে অকপটে বলেন,

— না।

কথাটা বলে তিনি আমার দিকে তাকান। স্বাভাবিক কন্ঠেই বলেন,

— প্রকৃতির সৌন্দর্য হরণ করা অন্যায়। যেখানে যার থাকা উচিৎ সেখানেই তাকে মানায় বেশি।

কথা কর্ণপাত হওয়া মত আমার চোখ-মুখে ছেঁয়ে যায় কালো মেঘ। আমি আর কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকি। অতঃপর বিরতি শেষে সকলের সাথে পুনরায় হাটা শুরু করি। বেশ কিছুক্ষণ হাটার পর হাতে টান অনুভব করি। আমি পিছে ঘুরে তাকিয়ে রোয়েনকে দেখতে পেয়ে বলি,

— কি হয়েছে?

রোয়েন কিছু না বলে ধীর পায়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ান। অতঃপর কিছু বুঝার আগেই তাঁর হাতে থাকা রক্তজবাটি খুবই সপ্তপর্ণে আমার কানে গুঁজে দেন তিনি। সাথে সাথে আমার ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠে মিষ্টি হাসি৷ তিনি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে হালকা হেসে বলেন,

— তাঁর মুখে এই মিষ্টি হাসিটা ফুটাতে মাঝেমধ্যে এমন অন্যায় করতে দোষ নেই।

___________________

কংলাক পাহাড়ের চূড়ায় এসে দাঁড়াতেই এক ঝাঁক শীতল বায়ুর দল ছুঁয়ে দিল মন। উপরে প্রগাঢ় নীলাভ আকাশ আর নিচে উঁচু নিচু ছোট বড় পাহাড়ের সারি প্রিয় সবুজ চাদরে মোড়ানো। তাদের ওপর দিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে মেঘবালিকাদের দল। মেঘদলের উপরে হাসছে সূর্য। রোদ ঠিকরে পড়ছে মেঘের গায়ে। কি অপরুপ সেই সৌন্দর্য। সকলেই পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে যখন ছবি তুলতে ব্যস্ত তখন রোয়েন আমায় নিয়ে বসে আছে টঙ ঘরের ছাওনিতে। দুইজনের হাতেই বেম্বো টি। সরু বাঁশের নলের ভিতর আসে এই চা। দেখতে আকর্ষণীয় হলেও স্বাদ অন্যান্য সাধারণ চায়ের মতই। চা খাওয়া শেষে রোয়েন নিয়ে আসে এক হালি পেয়ারা। আমাকে দুটো দিয়ে বাকি দুটো উনি নিয়ে নেন। আমি একটা পেয়ারে নিয়ে কামড় দিতেই দেখি পেয়ারার ভিতরে অংশ সম্পূর্ণ গোলাপি। দৃশ্যটি দেখামাত্র আমি ভড়কে যাই। অস্ফুটস্বরে জিজ্ঞেস করি,

— এমন কেন এইটা?

রোয়েন স্বাভাবিক কন্ঠে বলেন,

— এইগুলো এমনই হয়। তাই এত ভাবার কিছু নেই।

কথাটা বলে তিনি পেয়ারা খাওয়ায় মন দিলেন। আমিও আর কিছু না বলে আমার হাতে থাকা পেয়ারায় কামড় বসাই।

________________________

ভোর হতে না হতেই আমরা রওনা দেই ঢাকার উদ্দেশ্যে। তাও সকাল প্রায় নয়টার বেশি বেজে যায় খাগড়াছড়ি আসতে। খাগড়াছড়ি এসে আমার সকালের নাস্তাটা শেষ করেই উঠে পড়ি বাসে। বাস চলছে আপন গতিতে। বাসের মধ্যে চলছে হৈচৈ। নীলয় নামের ছেলেটি হাতে গিটার। সে হাতের তর্জনী তুলছে সুর। তারই সাথে কয়েক জোড়া পুরুষালী আর মেয়েলী কন্ঠ একত্রি হয়ে গাইছে গান। বাতাসে ভাসছি সেই গানের সুর।

“ভালোবাসবো বাসবো রে বন্ধু তোমায় যতনে
আমার মনের ঘরে চাঁন্দের আলো চুইয়া চুইয়া পড়ে
পুষে রাখবো রাখবো রে বন্ধু তোমায় যতনে
ভালোবাসবো বাসবো রে বন্ধু তোমায় যতনে”

গানটা কেন জানি না কিন্তু আমার বুকে গিয়ে বিঁধছিল। গানের প্রত্যেকটা লাইন সপ্তপর্ণে ছুঁয়ে যাচ্ছিল আমার মন ও হৃদয়। ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছিলাম আমি। হঠাৎ ঘোর থেকে বেরুতেই আমি রোয়েনের দিকে দৃষ্টি স্থির করি৷ তখন কর্ণধারে ভেসে আসে দ্বিতীয় সুর,

” দুধে আলতা গায়ের বরণ রূপ যে কাঁঞ্চা সোনা
আঁচল দিয়া ঢাইকা রাইখো চোখ যেন পড়ে না
দুধে আলতা গায়ের বরণ রূপ যে কাঁঞ্চা সোনা
আঁচল দিয়া ঢাইকা রাইখো চোখ যেন পড়ে না

আমি প্রথম দেখে পাগল হইলাম
মন তো আর মানে না

কাছে আইসো আইসো রে বন্ধু প্রেমের কারণে
ভালোবাইসো বাইসোরে বন্ধু আমায় যতনে”

ক্ষণেই রোয়েনের দৃষ্টি স্থির হয় আমার মাঝে। চার চোখ এক হতেই আমি প্রত্যেকবারের মত দৃষ্টি সরিয়ে নেই৷ শূন্য দৃষ্টিতে তাকাই আকাশের পানে। কেন না তাঁর সেই নয়ন যুগলে তাকিয়ে থাকার ক্ষমতা আমার নেই। একদম নেই!

#চলবে

#নিভৃতে_যতনে
#Part_23
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat

বেশ কয়েক সপ্তাহ কেটে গেলো সাজেক থেকে ফিরেছি আমরা। সাজেক থেকে ঢাকায় আসার পর মুহূর্তেই যেন সকলকে ঘিরে ধরে ব্যস্ততা। সকলের পায়ে লেগে যায় যান্ত্রিক জীবনের শিকল। রোয়েনও আবার কাজে ব্যস্ত হয়ে যায় আর আমি বন্দী হয়ে যাই চারদেয়ালের মাঝে। সারাদিন ঘরে বসেই দিন কাটে আমার। ভার্সিটি খুলতে এখনো এক-দেড় মাস বাকি। হাতে এখনো অফুরন্ত সময়। মোবাইল আর টিভি নিয়েই এই সময় পাড় করে ফেলি। মাঝে মধ্যে পলি আন্টির সাথে গল্পের আসর জমে কিন্তু কাজের তাড়া থাকায় তা বেশিক্ষণ স্থির হয়না। বিকেলের দিকে ছাদেই ঘন্টাখানিক সময় কাটে আমার। এরপর বাকিটা সময় রোয়েনের সাথে কেটে যায়। বলা বাহুল্য, রোয়েন আর আমার সম্পর্কের একটা গতি হয়েছে। বন্ধুত্বটা জিনিসটা ভালো মতই ছেঁয়ে গিয়েছে আমাদের মাঝে। কিন্তু তাই বলে যে উনি ত্যাড়ামি ছেড়ে দিয়েছে তা কিন্তু নয়। আমার সাথে তাঁর ত্যাড়ামি চলেই। স্বাদেই কি বলি ব্যাটা ঘাড়ত্যাড়া?

হেমন্তের রেশ কাটিয়ে চলে এসেছে শৈত্যপ্রবাহ। উত্তরা বাতাস বইছে। হিম হিম ভাব ছেঁয়ে আছে চারদিকে। ছাদের একপাশে থাকা প্রশস্ত বিস্তৃত কালো দোলনাটায় বসে দোল খাচ্ছি আমি। ক্ষণে ক্ষণে চোখ বুলাচ্ছি চারদিকে। এই বিল্ডিং এর ছাদটা বেশ সুন্দর। একপাশে রয়েছে নানান রকমের ফুলের গাছ। রক্তগোলাপ, রক্তজবা যেন এই ছাদের আসল সৌন্দর্য আর মনমাতানো সুবাসের রাণী হয়ে আছে বেলী, রজনীগন্ধা, হাসনাহেনা। তাদের মাঝেই এক কোনে উঁকি দিচ্ছে লজ্জাবতী গাছ। এইদিকটায় চোখ গেলেই যেন চোখ জুড়িয়ে আসে। ক্ষণেকের মাঝেই কিছু বাচ্চাপাটির দল এসে হামলে পড়ে ছাদে। মেতে উঠে চোর-পুলিশ ও কানামাছির খেলায়। আমি উৎসুক চোখে তাদের খেলা দেখছি ঠিক এমন সময় একটা চার বছর বয়সী বাচ্চা মেয়ে আমার সামনে বলে,

— এই আন্টি শুনো!

হঠাৎ ছোট বাচ্চার মুখে ‘আন্টি’ সম্মোধনটা শুনে আমি ভড়কে যাই। ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি বাচ্চাটার দিকে। বুঝার চেষ্টা করি আমাকে কোন দিক দিয়ে আন্টি লাগে? ভার্সিটিতেও উঠলাম না ভাই। এর আগেই আন্টি হয়ে গেলাম? হাও? মনের মাঝে যখন এইসব প্রশ্নের ছক কষছি তখন পুনরায় পিচ্চি মেয়েটা বলে উঠে,

— এই আন্টি! আন্টি!

বলে তার ছোট ছোট হাত দিয়ে আমার পা ধাক্কাতে থাকে। আমি পিচ্চিটার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলি,

— কি?

সে তার আমার দিকে দুই হাত উঁচু করে বলে,

— আমিও দোলনায় উঠবো।

আমি হালকা হেসে ওকে কোলে তুলে নিয়ে আমার পাশে বসিয়ে দেই। সে খুশি হয়ে বলে,

— থেংকিউ আন্টি।

‘আন্টি’ শব্দটা শুনে চোখ-মুখ ঘুচে এলো। এত আন্টি আন্টি করে কেন মাইয়া? আমাকে দেখতে মহিলা লাগে? আমি তেঁতো কন্ঠে বলে উঠি,

— আমাকে দেখতে তোমার আন্টি লাগে? আপু বলবে আমায়।

সে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করে,

— আচ্ছা। কিন্তু তোমার নাম কি?

— সিয়াশা, তোমার?

— মুসকান।

আমি ওর গোলগাল গালগুলো হালকা টেনে দিয়ে বলি,

— খুব মিষ্টি নাম তো তোমার।

— জানি। তা তুমি এইখানেই থাকো?

— হ্যাঁ কেন?

— এমনি৷ জানো আমিও এখানেই থাকি।

আমি আর কিছু বলতে যাবো তার আগে কিছু বাচ্চা এসে মুসকানকে খেলার জন্য বলে। মুসকানও জানায় সে খেলবে তাই আমাকে বলে নামিয়ে দিতে। আমি ওকে নামিয়ে দিতেই ও আমায় বলে,

— আসো তুমিও খেলবে আমাদের।

আমি অবাক হয়ে বলি,

— আমি?

সে মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বলে এবং আমার হাত ধরে টানাটানি শুরু করে দেয়। তার দেখাদেখি বাকি বাচ্চারাও এসে আমায় ঝাপটে ধরে। ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও আমি রাজি হয়ে যাই। সকলে মিলে কানামাছি খেলতে থাকি। একসময় খেলতে খেলতে তাদের সাথে আমিও বাচ্চা হয়ে যাই। প্রাণবন্ত হয়ে উঠি। বেশ কিছুক্ষণ পর পলি আন্টি ছাদে এসে আমায় নিচে ডেকে নিয়ে যায়। আমার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে বলে। আমিও সকলকে বায় বলে নিচে চলে আসি। বাসায় আসতে আমি পলি আন্টিকে জিজ্ঞেস করি,

— কি হয়েছে পলি আন্টি?

পলি আন্টি ইতস্তত করতে করতে বলেন,

— আফা আমার না কয়েকদিনে ছুটি লাগবো।

— হঠাৎ!

— আমার মার নাকি কঠিন অসুখ হইসে। কেমন যেন করতাসে। হয়তো বেশিদিন বাঁচবো না।বাপজান আমারে ফোন কইরা দেশে যাইতে কইতাসে।

আমি নিরদ্বিধায় বলি,

— তাহলে অপেক্ষা করছো কেন? এখনই রওনা দাও।

— না মানে আফা….

কথাটা বলতে সে বার বার ইতস্ততবোধ করছে। কেমন জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। আমি ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলি,

— কি বেতন লাগবে?

পলি আন্টি মাথা নিচু করে বলে,

— হো আফা।

— আচ্ছা দাঁড়াও আমি দেখছি।

কথাটা বলে আমি রুমের দিকে অগ্রসর হলাম। হাতে ফোন নিয়ে রোয়েনের নাম্বারে ডায়াল করলাম। বেশ কিছুক্ষণ রিং হবার পর রোয়েন ফোন রিসিভ করেন। তাকে সব খুলে বলতেই তিনি বললেন কাবার্ডের ড্রয়ারে কিছু ক্যাশ রাখা আছে। আমি যাতে সেখান থেকে পলি আন্টিকে বেতনটা আর সেই সাথে এক্সট্রা কিছু টাকাও দিয়ে দেই। কথাটা বলে তিনি ফোন রেখে দিলেন। আমিও রোয়েনের কথা কাবার্ড থেকে ক্যাশ বের করে পলি আন্টিকে দিয়ে দিলাম। বেতনের পাশাপাশি এক্সট্রা কিছু টাকা দেখে সে প্রায় কেঁদেই দিল। আমাকে আর রোয়েনকে অসংখ্যবার ধন্যবাদ দিতে থাকলো। হঠাৎই রোয়েনের প্রতি আমার সম্মানটা বেড়ে যায়। কেন না রোয়েন আজ তাকে যে সাহায্যটা করেছে তা কতজনেই বা করে? কিছু কিছু মানুষ আছে যারা অন্যের বিপদ হয়েছে শুনেও না শুনার ভাণ করে। নিজের প্রাপ্য বা সাহায্য চাইলেও অনেকে ইনিয়েবিনিয়ে দেয় তো দেয় না। সেখানে রোয়েনের মানবতা আর কর্মকাণ্ড জ্ঞান দেখে সত্যি আজ আমি গর্বিত

____________________

সন্ধ্যার সময় রোয়েন আসার আগে আমি তার কাপড়গুলো খাটের উপর গুছিয়ে রাখি। নিজ হাতে তাঁর জন্য কফি বানাই। কেন জানি না আজ আমার তার জন্য কিছু একটা করতে ইচ্ছে করছে। পলি আন্টি রাতের খাবার রেঁধে না গেলে হয়তো আজ আমি নিজ হাতেই তার জন্য রান্নাটা করতাম। আমি গ্যাস অফ করে রুমের দিকে যেতেই কলিংবেল বেজে উঠে। দরজা খুলতেই রোয়েনের মলিন চেহেরা ভেসে উঠে। মুখশ্রী দেখেই বুঝা যাচ্ছে বেশ ক্লান্ত উনি। আমি পাশে সরে দাঁড়াতেই রোয়েন জুতো খুলে নিজের গলার টাই ঢিলা করতে করতে ঘরের ভিতর প্রবেশ করে। টেবিলের উপর একটা পলিথিনের প্যাকেট রেখে ধীর পায়ে এগিয়ে যায় রুমে দিকে। আমি দরজা লাগিয়ে টেবিলের উপর থেকে ব্যাগটা হাতে নিয়ে খুলে দেখি তাতে আজও এক প্যাকেট ফুচকা আর এক বাটি চকলেট আইসক্রিম। আমি আনমনে এক মিষ্টি হেসে ফেলি৷ তাঁর এইসব ছোট ছোট লেয়ারগুলাই যথেষ্ট আমার মুখের হাসি ফুটানোর জন্য। হয়তো দামী দামী গিফটের মাঝেও এই সুখ পাওয়া যাবে না যেগুলো এই ছোট ছোট খুশির মাঝে পাওয়া যায়। আমি ফুচকা প্যাকেটটা রান্নাঘরে আর আইসক্রিমের বাটটা ফ্রিজে রেখে কফিটা পুনরায় হালকা গরম কাপে ঢেলে নিলাম। অতঃপর অগ্রসর হলাম রুমের দিকে। রুমে এসে দেখি রোয়েন এখনো ওয়াশরুমে। আমি খাটের পাশে সাইড টেবিলের উপর কাপটা রেখে বিছানা থেকে রোয়েনের ঘামযুক্ত শার্ট,টাইটা তুলে নিয়ে বারান্দায় মেলে দিলাম। পুনরায় রুমে বাকি জিনিসগুলো ঠিক করে নিলাম। কিছু প্রহর অতিক্রম হতেই রোয়েন ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে। নিজের চুলগুলো মুছে টাওয়ালটা বারান্দায় মেলে দিয়ে আসতেই আমি কফিটা এগিয়ে তাঁর দিকে। তা দেখা মাত্র সে কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো। অতঃপর কফিটা হাতে নিয়ে হালকা হেসে বলেন,

— আজ সত্যি মনে হচ্ছে আমি বিবাহিত আর আমারও একটা বউ আছে।

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করি,

— মানে?

তিনি কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে বিছানায় গিয়ে বসলেন। স্বাভাবিক কন্ঠেই বললেন,

— আজ তোমার কাজগুলো বউদের মত লাগছে।

আমি দুই হাত কোমরে রেখে বলি,

— তো বাকিদিন গুলোতে কি আমার কাজ পাশের বাসার ভাবীর মত লাগে?

কথাটা শুনে রোয়েন নিঃশব্দে হেসে উঠেন। এই প্রথম মনে হয় তাকে এতটা মন খুলে হাসতে দেখছি। একদম স্বচ্ছ এই হাসিটি। ঠোঁটের দুই কোনে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে গজদাঁত দুইটি। যা ক্ষণেই হাসিটাকে করে তুলছে অমায়িক আর প্রাণবন্ত। আমি বেশ কিছুক্ষণ তাঁর হাসির পানে তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে নেই। কেন না, তাঁর হাসি যে অস্ত্রধারী। হোক সেটা মুচকি অথবা প্রাণবন্ত হাসি, তাঁর হাসির মাধুর্যতাই যথেষ্ট আমায় বারংবার খুন করতে। বেশকিছু প্রহর পর উনি একটু স্বগতোক্তি সুরেই বললেন,

— বউ বউ ভাব কিন্তু তাও বউয়ের অভাব।

আমি বিস্মিত কন্ঠে বলি,

— মানে?

সে হেসেই বলে,

— আসলেই তুমি ডাফার!

আমি ফুঁসে উঠে বলি,

— আরেকবার যদি ডাফার ডেকেছেন তাহলে দেখিয়েন আমি কি করি।

সে কৌতুকের সুরেই বলে উঠে,

— তো কি ডাকবো মিস বুঁচি?

— একদম না৷ আমার নাক অনেক কিউট বুঝেছেন? একে অপমান করার অধিকার আপনার নেই৷

— তো কার আছে?

— কারো নাই। হুহ!

বলেই আমি গটগট করে রুম থেকে বেরিয়ে আসি। রাগে ফুঁসে উঠছি আমি। মনে মনে বলতে থাকি, “পেয়েছাটা কি হ্যাঁ? আমার নাক একটু চ্যাপ্টা বলে বার বার বুঁচি বলবে? একে যে আমি কি করবো।”
কথাটা ভাবতে ভাবতেই রান্নাঘরে চলে আসি আমি। তখন নজরে ফুচকার প্যাকেটটা নজরেই পড়তে আমার মাথায় শয়তানি বুদ্ধি এসে ভর করে আর ঠোঁটের কোন ফুটে উঠে পৈচাশিক হাসি। আমি দ্রুত ফ্রিজ থেকে আইসক্রিম বের করে একটা বাটিতে নিয়ে নেই। অতঃপর ফুচকার প্যাকেটটা খুলে তার থেকে তেঁতুলের টকটা বের করে আইসক্রিমের সাথে খানিকটা মিশিয়ে নেই। এরপর উপর দিয়ে আরেকটু ভালো আইসক্রিম দিয়ে দেই। আরেকটা বাটিতে নিজের জন্য কিছুটা আইসক্রিম নিয়ে নেই। অতঃপর দুইটা বাটি নিয়েই রুমে চলে যাই। রোয়েন বিছানার দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে মোবাইল টিপছে। আমি কিছু না বলে হাসি চেপে গিয়ে গোমড়া মুখ তাঁর সামনে টক মিশানো আইসক্রিমের বাটিটা এগিয়ে দেই। রোয়েন একবার আমার দিকে তাকিয়ে বাটিটার দিকে তাকালো। আইসক্রিম তারও পছন্দের তাই সেটা দেখে তিনি আর আপত্তি করলো না। এক হাতে মোবাইলটা রেখে অন্য হাতে বাটিটা নিয়ে নিলেন। রোয়েন হাতে বাটিটা নিতেই আমার ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠে সরু হাসির রেখা। মনে মনে বলি,

— আমাকে বুঁচি বলা তাই তো। এইবার বুঝুন ঠ্যালা।

রোয়েন কিছুক্ষণ মোবাইল স্ক্রোল করে পাশে রেখে দিল। অতঃপর এক চামচ আইসক্রিম মুখে দিতেই মুহুর্তেই তার চোখ-মুখ কুঁচকে হাসে। মুহূর্তেই তিনি ফিক করে মুখ থেকে আইসক্রিমটা বাটিতে ফালিয়ে দেন। বিস্ময়কর কন্ঠে বলে উঠেন,

— ইয়াক! এইটা কি?

কথা শুনে আমি হেসে কুটু কুটু হয়ে যাই। দম ফেটে হাসি উপচে পড়ে। আমি হাসতে হাসতে বলি,

— আমাকে বুঁচি বলার শাস্তি। আরও বলেন আমাকে বুঁচি।

রোয়েন মুখ-চোখ ঘুচিয়ে আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

— তাহলে যাকে আমি উপাধিটা দিয়েছি সেও তো এই শাস্তির ভাগিদার। আফটার অল নাম তো তাকেই দেওয়া।

কথাটা আমি বুঝার আগেই রোয়েন আমার মুখেও এক চামচ টকযুক্ত ওই আইসক্রিম ঢুকিয়ে দেন। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি ভড়কে যাই আর ভুলবশত আইসক্রিমটা খেয়ে ফেলি। এখন তো আমার প্রায় বমি আসার অতিক্রম। ইয়াক! এত বাজে টেস্ট। গলা ধরে গেলো আমার। আমি আমার হাতের বাটিটা সাইড টেবিলে রেখে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যাই কুলি করার জন্য। তা দেখে পিছ থেকে রোয়েন বলে উঠেন,

— তা মিস বুঁচি, কেমন লাগলো তোমার বানানো স্পেশাল আইসক্রিমের টেস্ট? অসাধারণ না?

___________________

রাতেরবেলা রোয়েনের সাথে এক চোট ঝগড়া করে ক্ষান্ত হই আমি। রোয়েনের সাথে না পেরে উঠার কষ্টে দুঃখে আগেই গাল ফুলিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি আমি। কিন্তু তাও যেন ঘুমের রেশ কাটিয়ে উঠতে পারিনি আমি। ঘড়িতে যখন সকাল দশটা ছুঁই ছুঁই তখনও আমি গভীর ঘুমে। কিন্তু তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। কোন কিছুর টুংটাং আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় আমার। একটু এপাশ-ওপাশ ঘুরে আধো আধো করে চোখ খুলে ঘড়ির দিকে নজর বুলাই। অতঃপর ঘড়ির দশটায় এসে ঠেকেছে দেখে ঘুম ছুটে যায় আমার। লাফিয়ে উঠি আমি। আজ পলি আন্টি না আসবে নাই নাস্তা বানানোর কথা। অথচ আমিই আজ এত বেলা পর্যন্ত ঘুমাচ্ছি? চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে রোয়েনকে দেখতে না পেয়ে বিছানা থেকে চট-জলদি নেমে পড়ি আমি। ক্ষণেই কর্ণধারে টুংটাং আওয়াজ প্রতিফলিত হতেই ভ্রু কুঁচকে আসে আমার। মূহুর্তেই শব্দটা কোথা থেকে আসছে তা জানার কৌতুহল সৃষ্টি হয়ে যায় আমার মাঝে। আমি রুম থেকে বেরিয়ে আসতে বুঝতে পারি আওয়াজ রান্নাঘর থেকে আসছে। সাথে সাথে আমার ভ্রু কুঁচকে আসে৷ আজ তো পলি আন্টি নেই তাহলে রান্নাঘরে কে? আমি ধীর পায়ে এগিয়ে যাই রান্নাঘরের দিকে। অতঃপর রান্নাঘরের সামনে এসে রোয়েন রান্না করতে দেখে আমার চোখ চড়কগাছ। বিস্ময়ে অভিভূত আমি।

#চলবে
ভুল-ক্রটি ধরিয়ে দিলে খুশি হবো।