#নীরবে_তুমি_রবে
লেখনীতেঃ রিধিমা জান্নাত রূপা
পর্বঃ ১৮
.
সবেই দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে রেহেনা, রূপাকে দেখতে। সেই যে মেয়েটা তাকে কিছু না বলে উপরে এসছে, তারপর আর নিচে’ই নামে নি। মেয়েটা ঠিক আছে তো? সেটা ভেবেই উপরে আসেন তিনি রূপাকে দেখতে। এতক্ষণ রুমে কি করে মেয়েটা? সেটা ভেবেও কিছুটা বিচলিত হয়।
রুমে পা রাখতেই বাথরুমের দরজার দিকে চোখ পড়ে রেহেনার, রূপাকে দেয়াল ধরে রুমে ঢুকতে দেখে কিছুটা অবাক হন। দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসেন রূপার কাছে, দেওয়ালে ধরে রাখা হাতটা চেপে ধরে বলে উঠলেন,
“কি হয়েছে তোর? এমন করছিস কেন মা?”
“পেট ব্যাথা করছে ফুপি সহ্য করতে পারছি না, সাথে চারদিকে কেমন জানি ঘুরছে।”
“পেট ব্যাথা করছে, মাথা ঘুরছে? হঠাৎ কি হলো?”
উত্তেজিত কণ্ঠে বললেন রেহেনা। হঠাৎ এভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লো কেন মেয়েটা সেটা ভেবেই যেন অস্থির হয়ে পড়লেন মুহুর্তেই। দু’হাতে রূপাকে আগলে নিয়ে খাটে বসাতে বসাতে, “বাথরুমে কেন গিয়েছিলি এ অবস্থায়? পেট খারাপ লাগছে?”
ফুপির কথায় মাথায় ঝাকালো রূপা, মুখ ফুটে কথা বেরোতে চাইলো না যেন। আধশোয়া হয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে ধীর কণ্ঠে বলে উঠলো,
“গা গুলিয়ে উঠছে ফুপি, বমি হয়ছে।”
“বমি হয়ছে? আবার কেন? এই কয়েকমাসে তো ভালোই ছিলি মা, হঠাৎ আবার এমন হলো কেন?”
বলেই সেকেন্ডের মতো সময় নিলেন রেহেনা। আবারও বলতে লাগলেন,
“হবে না-ই কেন? সকাল থেকে তো কিছু মুখেও তুলিস নি, কয়েকদিন থেকেই তো দেখছি খাওয়া দাওয়া করছিস না। এমন করলে কি শরীর ঠিক থাকে?”
“এমনিতেই এমন হচ্ছে। ঠিক হয়ে যাবে, চিন্তা করো না।”
“কিইই ঠিক হয়ে যাবে? এমন করলে কি হবে? বলে বলেও তো খাওয়াতে পারি না, আমার কথা তো কানেই তুলিস না, তাসফি বকলে তবুও দুই একটা শুনিস। তারও যে আজকাল কি ব্যস্ততা আল্লাহ্ মালুম! আসুক আজ বাড়িতে, মেয়েটা এত অসুস্থ আর তার কোন ভ্রূক্ষেপ নাই।”
দু’জকেই বকাঝকা করতে করতে ওষুধের বাক্সে এ্যাসিডিটির ওষুধ খুঁজতে লাগলেন রেহেনা। ওষুধের পাতা ও এক গ্লাস পানি হাতে রূপার কাছে এগিয়ে আসতেই রূপা দূর্বল কণ্ঠে,
“আমি ঠিক আছি ফুপি।”
বললেও শুনলো না তার ফুপি। আর না তার বলা কথা মতো ঠিক রইলো। ওষুধ খেয়ে দুই এক ঢোক পানি খেতেই আবারও গা গুলিয়ে এলো রূপার। দ্রুত বিছানা থেকে উঠে ছুটে গেল বাথরুমে, আবারও গড়গড় করে বমি’তে বের করে দিল সমস্তকিছু।
দুপুর গড়িয়ে যেতেই রূপার বমি ও মাথা ঘোরা বন্ধ হলো, কিন্তু পেট ব্যাথা কিঞ্চিৎ পরিমাণ বৃদ্ধি পেল। রূপাকে এমতাবস্থায় দেখে তওহিদ সাহেবও বেশ চিন্তিত হয়ে উঠলেন, বকাবকি করতে লাগলেন রেহেনা কে। সাথে তাসফি’কেও বকাঝকা করতে লাগলেন মেয়েটার পর্যাপ্ত খেয়াল না রাখার জন্য। সর্বশেষে সিদ্ধান্ত নিলেন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন রূপা’কে, এভাবে ধরে নিয়ে বসে থাকার তো মানেই হয় না। এর ফাঁকে তাসফি’কে ফোন করলেন রেহেনা, সল্প কথায় সবটা বললেন রূপার অসুস্থতার কথা। সবটা শুনে বেশ উত্তেজিত হয়ে উঠলো তাসফি, তাকে এত লেট করে জানানোর জন্য খানিকটা রেগেও গেল, সহসায় বাড়ি আসতে চাইলো তাসফি। তাকে থেমে দিলেন তওহিদ সাহেব, সরাসরি হসপিটালেই আসতে বললেন। সব শুনে সম্মতি দিলেও শান্ত হতে পারলো না তাসফি।
.
সাদিকের ডিউটিরত হসপিটালেই রূপা’কে নিয়ে আসলে তাসফি, তাকেই দেখাতে চাইলো। সাদিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হওয়ায় আর অসুবিধাও হলো না। বাবা মা কে বাইরে বসতে বলে রূপাকে নিয়ে সাদিকের চেম্বারে ঢুকলো। রূপাকে ভালোভাবে চেক-আপ করে জানতে চাইলো সমস্যার কথা। সবটা জেনে বেশ কয়েকটা টেস্ট করতে দিলো, তারপর’ই কিছু বলতে পারবে বলে জানালো। ততক্ষণের জন্য পেইন কিলার খাইয়ে দিলো রূপাকে, ব্যাথা কমানোর জন্য।
চেম্বার ছেড়ে বেড়িয়ে’ই বাবা মা’কে বাসায় চলে যেতে বললো তাসফি, টেস্টগুলো করার পর রিপোর্ট দিতে দিতে বেশ দেরি হয়ে যাবে বলে। তওহিদ সাহেব ও রেহেনা যেতে না চাইলেও জোর করেই পাঠিয়ে দিতে চাইলো তাসফি। এতক্ষণ হসপিটালে থাকার তো মানে হয় না, তাছাড়া সে তো আছেই। শেষমেশ উপায় না পেয়ে চলে গেলেন তারা, কি হয় সেটাও জানাতে বলে গেলেন। তারা যেতেই তাসফিও রূপা’কে নিয়ে টেস্ট করাতে গেল।
চোখে মুখে ব্যাপক চিন্তিত ভাব নিয়ে বসে আছে তাসফি, পাশেই তার কাঁধে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে রূপা। টেস্টগুলো কিছুক্ষণ আগেই হয়ে গেছে তার, পেটে ব্যাথাও কমে গেলে। তবুও থেকে থেকে কেমন চোখ মুখ কুঁচকে ফেলছে মেয়েটা। প্রায় ঘন্টা খানিকের ব্যাবধানেই রূপার বিরক্তি হয়ে গেছে হসপিটালের এই পরিবেশ’টায়, তার চেয়েও অধিক বিরক্ত লাগছে তাসফি’র এই চিন্তিত ভাবটা। মিনিট দশেক চুপ থাকলেও এবার আর চুপ থাকতে পারলো না রূপা। হালকা মাথা ঘুরিয়ে তাসফির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
“এভাবে চুপ করে আছেন কেন? আসার পর থেকেই কোন কথা বলছেন না।”
চোখ ফিরিয়ে রূপার পানে তাকালো তাসফি, তবে কোন জবাব দিলো না। এতে আরও বিরক্ত হলো রূপা, আন্দাজ করলো তাসফি’র চিন্তিত হবার কারণ। ঘার থেকে মাথা উঠিয়ে সামান্য এগিয়ে এলো তাসফির কাছে, গালে হাত রেখে তার দিকে ফিরিয়ে বলে উঠলো,
“ঠিক আছি তো আমি, এতটা টেনশন নিচ্ছেন কেন?”
“তোমাকে নিয়ে আমার টেনশন নিতে হয় না রুপু, এভাবেই চলে আসে।”
সুপ্ত নিশ্বাস ছাড়লো রূপা, তাকিয়ে রইলো তাসফির মুখপানে। আর কি বলবে খুঁজে পেল না যেন। তাসফি আবারও বলে উঠলো,
“গত কয়েকদিনে একটু কি ব্যাস্ততা বেড়েছে আমার, আর এভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লো। একটু কি যত্ন নিতে পারো না নিজের?”
“উহুঁ! আপনি তো আছেন।”
“এতটা ভরসা করছো আর আমি’ই তোমার খেয়াল রাখতে পারলাম না, এটা তো ঠিক না রুপু।”
“ইস্! মোটেও না, যথেষ্ট খেয়াল রাখেন আপনি আমার। একদম এভাবে বলবেন না।”
বেশ উঁচু গলায় বলে উঠলো রূপা। একটু থেমে সেকেন্ডের মতো সময় নিয়ে আবারও বলে উঠলো,
“আচ্ছা এগুলো বাদ। শুনেন তো….”
“হু?”
“একটু বাইরে চলেন না, ভাল্লাগে না এখানে।”
“অসুস্থ শরীর নিয়ে বাইরে যেতে হবে না, এখানেই বসে থাকো।”
বলেই রূপাকে এক হাতে জড়িয়ে আরেকটু কাছে টেনে নিলো তাসফি। বুকে মাথা রেখে বললো —এভাবেই থাকো। এপাশটায় মানুষের আনাগোনা কম হওয়ায় তেমন কারোর নজরে পড়লো না তাদের, সরেও আসলো না রূপা। বলে উঠলো,
“প্লিজ! চলেন। একটু হাঁটাহাঁটি করেই চলে আসবো।”
“উফ্! রুপু, তুমি এত জেদি হয়ে যাচ্ছো কেন? সবসময় আমার সাথেই এত জেদ করো।”
“যতদিন আছি ততদিনেই জেদ দেখিয়ে যাবো, আর সেটাও শুধু আপনার সাথে।”
বলেই হাসলো রূপা, তাসফিও সামান্য হাসলো। রূপার জেদের কাছে হারও মানতে হলো তাকে। সাদিক কে ফোনে সবটা জানিয়ে রূপাকে নিয়ে বেড়িয়ে এলো হসপিটাল থেকে।
.
গোধুলি সন্ধ্যা পেরিয়ে সন্ধ্যা নেমেছে মাত্র। এসময়টায় যেন মোবাইল বেজে উঠলো তাসফি’র। সাদিক ফোন করেছে, সরাসরি তার চেম্বারে’ই যেতে বলছে। রিপোর্টগুলো যে তার কাছে সেটাও জানালো। হসপিটালের সামনের রাস্তায় থাকায় রূপাকে নিয়ে ভেতরে যাওয়ায় খুব একটা সময় লাগলো না।
চেম্বারে ঢুকতেই রূপাকে বসতে বললো সাদিক, আর তাসফি ‘কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
“ব্যাটা তুই বসিস না, যা আগে মিষ্টি নিয়ে আয়।”
বেশ হাসি লেগে আছে সাদিকের ঠোঁটে। তাসফি বুঝতে পারলো না হঠাৎ এমন কথার কারণ। না বসে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো রূপার পাশে। রূপাও কিঞ্চিৎ অবাক। সাদিক আবারও বলে উঠলো,
“দাঁড়িয়ে আছিস কেন? যা, মিষ্টি নিয়ে আয় আগে, তবেই বসতে পারবি। সুখবর তো আর খালি মুখে দিতে পারি না?”
“মানেএএ?”
আশ্চর্যের ন্যায় বলে উঠলো তাসফি! এতে যেন সাদিকের ঠোঁটের হাসিটা প্রসস্থ হলো। বলে উঠলো,
“বাবা হতে চলেছিস ব্যাটা, আর মানে জিজ্ঞেস করছিস আমাকে? তুই বাবা হচ্ছিস, আর এদিকে আমি বিয়ে’টাও করতে পারলাম না।”
শেষ কথাটা আফসোস নিয়েই বললো যেন সাদিক।এদিকে কথাটা কর্ণপাত হতেই কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো রূপা, স্থির হয়ে তাকিয়ে রইলো। তাসফিও হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। কথাটা শোনার পর যেন বেশ বেগ পেতে হলো তাকে। সাদিক আবারও তাসফি’কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
“বুঝছি! কথাটা হজম করতে পারিস নি তো? বস বস, বসে নিজেকে স্বাভাবিক করে নে আগে।”
বসে পড়লো তাসফি, হাত বারিয়ে চেপে ধরলো রূপার এক হাত। কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো রূপা। বাঁধা বাঁধা গলায় বলে উঠলো,
“কিইই বলছেন ভাইয়া? আমি….”
“আমি বলছি না, তোমার রিপোর্ট বলছে। আলট্রাসনোগ্রাফি’তে পজিটিভ এসেছে, তুমি মা হতে চলেছো রূপা।”
রূপার অপর হাত পেটে চলে গেল এবার, তাকালো তাসফি’র দিকে। নিজেকে স্বাভাবিক করতেই যেন মিনিট দুয়েক সময় ব্যায় করতে হলো। সাদিক রূপার থেকে জানতে চাইলে আরও কিছু তথ্য। লজ্জা ও বিভ্রান্ত হলেও বলতে হলো। সবটা শুনে সাদিক বলে উঠলো,
“তবে রূপার কিছুটা কম্পলিকেট আছে তাসফি। মাথা ঘোরা, বমি হওয়া স্বাভাবিক হলেও পেটে ব্যাথা খুব স্বাভাবিক নয়। ওর ইউরিন টেস্টে ইনফেকশন ধরা পড়ছে।”
বলেই একটু থামলো সাদিক। সেকেন্ডের মতো সময় নিয়ে আবারও বলতে লাগলো,
“তবে চিন্তার কারণ নাই, আমি কিছু ওষুধ দিচ্ছি সেগুলো টাইমলি নিক তাতেই হবে। সবে তো দুই মাস, এই সময় গুলোতে বেশ সাবধানে থাকতে হবে। আর হ্যাঁ! পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে।”
আরও সবটা বুঝিয়ে কিছু ওষুধ লিখে দিলো সাদিক, নিয়মিত খেতে ও সবসময় সাবধানে থাকতে বললো। দু’মাস হলে আবারও আসতে বললো। সবকিছু বুঝিয়ে রূপাকে নিয়ে বেড়িয়ে এলো তাসফি। রূপা ঠিক বুঝতে পারলো না তাসফির মনোভাব, সে খুশি কি না সেটাও ধরতে পারলো না।
হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে মেডিসিন গুলো কিনে নিলো তাসফি। বাইক’টা নিয়ে এসে রূপা’কে উঠতে বললেই তার মুখপানে তাকালো। এতক্ষণের আঁটকে রাখা কথাটা বলেই উঠলো তাসফি’কে।
“আপনি কি খুশি হন নি?”
“তোমাকে মেডিসিন গুলো নিতে বলেছিলাম রুপু, নিয়ম মেনে খেতেও বলেছিলাম। তাহলে এটা কিভাবে হলো? মেডিসিন গুলো খেয়েছিলে তো?”
খানিকটা চমকে উঠলো রূপা, তাসফির এমন প্রশ্ন একদম আশা করে নি সে। তাহলে কি তাসফি খুশি নয় এতে? নয়লে এমন প্রশ্ন করার মানে কি? মুহুর্তেই যেন গলা শুকিয়ে গেল রূপার, শুকনো ঢোক গিললো। কি বলবে সে? ওষুধগুলো ঠিকঠাক খায় নি? বলতে গিয়েও যেন সত্যি’টা বলতে পারলো না। তাসফির কথামতো প্রথম কিছুদিন নিয়ম করেই তো মেডিসিন গুলো খেয়েছে, কিন্তু তারপর তো ভুলো’ই বসেছিলো খাবার কথা। নিয়মের বাইরে গিয়ে মনে পড়েছে, তারপর খেয়েছে রূপা। কিছু হবে না ভাবলেও যা হবার তা হয়েই গেল যেন।
সত্যি’টা বলার সাহস না পেয়ে মিথ্যা’টাই বলতে হলো তাসফি’কে। ছোট করে ‘হু!’ তে জবাব দিলো রূপা। সুপ্ত নিশ্বাস ছাড়লো তাসফি, কথা না বাড়িয়ে রূপা ‘কে উঠতে বললো বাইকে।
.
বাসায় ঢুকতেই তওহিদ সাহেব ও রেহেনা বিচলিত হয়ে রূপার কথা জানতে চাইলে তাসফির কাছে। তাদের এতক্ষণেও কিছু জানায় নি বলে খানিকটা বকাঝকাও করলো। তাসফি রূপার কনসিভ করার কথা বলতেই নিশ্চুপ হয়ে গেলেন দুজনেই, আশ্চর্যের ন্যায় তাকিয়ে রইলেন তাদের দিকে। ছেলে মেয়ে দু’টোর সম্পর্কের সুতো এত তাড়াতাড়ি পেচিয়ে যাবে, আর এতটা তাড়াতাড়ি নাতি বা নাতনির মুখ দেখতে পাবেন সেটা ভেবেই অবাক তারা।
মাত্রারিক্ত খুশিতে চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো রেহেনার, রূপাকে জড়িয়ে বসে রইলেন অনেকক্ষণ। তওহিদ সাহেবও অনেক দোয়া ও আদর করলেন মেয়েটাকে। আরও কিছুটা সময় অতিক্রম হতেই রূপাকে উপরে গিয়ে ফ্রেশ হতে বললেন।
.
“হসপিটালের জামা’টা পাল্টে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে নেও। এভাবে থাকলে আবারও শরীর খারাপ লাগবে।”
রুমে ঢুকতেই তাসফির বলা কথাটা কর্ণপাত হলো রূপার, তাকালো সেদিকে। মাত্রই গোছল সেরে ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়েছে তাসফি। তাকে দেখেই চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো রূপা’র। ধীর কণ্ঠে বলে উঠলো,
“রেগে আছেন আমার প্রতি?”
“রেগে থাকার কারণ?”
সহসায় বলে উঠলো তাসফি। তাসফির পাল্টা প্রশ্নে মাথা নিচু করে, “আমাদের বাচ্চা’টা….”
বলেই একটু থামলো রূপা, মাথা উঁচিয়ে তাকালো তাসফি’র পানে। খানিকটা এগিয়ে এলো তাসফি। মাথা ঝাঁকিয়ে বললো,
“হু?”
“আপনি চান না? এতটুকুও খুশি নয় ও আসায়, নষ্ট করতে চান ওকে? আমি তো….”
“এ্যাই! রুপু। কিইই হয়ছে তোমার, হ্যাঁ? এসব কি বলছো?”
রূপা’র দু’হাতের বাহু ঝাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করলো তাসফি। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো রূপা। কি-ই বা বলতো সে? বাবা হবার কথাটা জানার পর থেকেই গুরুগম্ভীর চেহারা ও তাসফির চুপ করে থাকাটা মানতে পারছে না রূপা। বারংবার মনে উঁকি দিচ্ছে, তাসফি কি চায় না তাদের বাচ্চা’টা? মনের কথাটা চেপে রাখতেও পারলো না এবার, বলেই ফেললো।
হঠাৎই জড়িয়ে ধরলো তাসফি’কে রূপা। বুকে মুখ গুঁজে কান্নারত অবস্থায় বলতে লাগলো,
“এমন করছেন কেন আপনি? আপনার এই চুপ থাকা’টা তো মানতে পারছি না আমি।”
“এ্যাই মেয়ে! একদম কাঁদবা না, বলছিলাম না আমার সামনে না কাঁদতে?”
“আমি তো ইচ্ছে করে করি নি, ভুলে গেছিলাম ওষুধ গুলো খেতে। কিন্তু পরে খেয়েছি, তারপরও কেন এমনটা হলো….”
“আচ্ছা এবার চুপ, একদম কান্না করবা না। আমি কি বলেছি কিছু, তাহলে?”
বলেই মাথা উঠিয়ে রূপার মুখটা দু’হাতে আলতো করে মুছিয়ে দিলো তাসফি। আবারও কান্না থামাতে বললো। থেমে গেল রূপা, তবুও চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। তাসফি বলে উঠলো,
“এসব উল্টা পাল্টা কথা মাথায় আসে কিভাবে, হ্যাঁ?”
“আপনি ওকে….”
“আমি বলেছি ওকে চাই না? খুশি নয় আমি, এগুলো বলেছি আমি তোমায়?”
নিশ্চুপ রইলো রূপা, সহসায় কিছু বলতে পারলো না। খানিকটা সময় নিয়ে, “তাহলে তখন কেন বললেন ওষুধ গুলো খেয়েছিলাম কি না? হঠাৎ এভাবে চুপ হয়ে গেলেন কেন?”
বলতেই সামান্য হাসলো তাসফি। রূপার গালে আলতো করে হাত রেখে বলে উঠলো,
“বাবা হবো আমি, আর তুমি ভাবলে আমি খুশি নই? চাই না ওকে, তাই তো?”
মাথা নিচু করে ফেললো রূপা। কি বলবে সে? সে তো ঠিক এটাই ভেবেছিলো। তাসফি মাথা ঝুকিয়ে রূপার কপালে আলতো ভাবে ঠোঁটের স্পর্শ দিলো। তারপর বলেতে লাগলো,
“ও আমাদের বাচ্চা রুপু, আমাদের সন্তান। নিজের অস্তিত্ব’কে কিভাবে নষ্ট করার কথা ভাবনায় আনতে পারি, বলো? বাবা হওয়া থেকে কিভাবে নিজেকে বঞ্চিত করতে পারি?”
বলেই একটু থামলো তাসফি। সেকেন্ডের মতো সময় নিয়ে আবারও বলে উঠলো,
“আমি তো শুধু এত তাড়াতাড়ি চাই নি বাচ্চাটা। তুমি তো সময় চেয়েছিলো আমার কাছে। সেটা তো দিতে পারি নি, রাখতে পারি নি তোমাকে দেওয়া কথাটা। তাই হয়তো কথাটা শোনার পর মানতে পারি নি।”
“আপনার দেওয়া সময় তো আমি’ই ধরে রাখতে পারি নি, ভালোবেসে ফেলেছি আপনাকে। উঁহু! বাধ্য করেছেন। আপনাকে ভালোবাসতে বাধ্য করেছেন আপনি আমাকে।”
সামান্য হাসলো তাসফি রূপার কথায়। মেয়েটা তাকে এতটা ভালোবাসে, আর সেই ভালোবাসার জন্য তাকেই দোষারোপ করে। এই অভিযোগ’টায় রাগ লাগে না তাসফি’র, আর না খারাপ লাগে। বরং ব্যাপক ভালো লাগে তার কাছে এটা, অদ্ভুত এক অনুভূতি’র সৃষ্টি হয়। তাসফি বললো,
“তোমার বয়স অনেক কম রুপু, শরীর’টাও ঠিক নয় বাচ্চা ক্যারি করার জন্য। তাছাড়া সাদিকও বললো বেশ কম্পলিকেট আছে, আমার বড্ড ভয় লাগছে।”
“কিছু হবে না আমার, কিচ্ছু না। আপনি আছেন তো।”
বলেই তাসফি’কে জড়িয়ে ধরলো রূপা। আবারও বলে উঠলো,
“শেষ পর্যন্ত এভাবেই থাকবেন তো আমার সাথে, আমার হয়ে?”
ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো তাসফি’র। মেয়েটা তার বুকে মাথা রাখলেই যেন স্বস্তি পেল, নিমিষেই চিন্তিত ভাব’টা দূর হয়ে গেল রূপার বলা কথাটায়। হাতের বাঁধণ’টা শক্ত করে ফেললো মুহুর্তে’ই। বলে উঠলো,
“নীরবে! খুব গোপনে শুধু এই তুমি’তেই রবো, অনাগত তাকে নিয়ে এক নতুন গল্পের সূচনা গড়বো।”
.
.
চলবে…..