#নীরব_সাক্ষী
#সূচনা_পর্ব
থর থর করে কাপছেঁ মুন তার-ই চোখের সামনে নিজের রুমে নোংরা আদিম খেলায় মত্ত আছে নিজের প্রান প্রিয় স্বামি রিদ তার-ই বোন প্রিয়ন্তি ৷ না না আপন বোন না খালাতো বোন ৷ এই সব দেখে মুনের যেন সারা শরীল গুলিয়ে এলো মনে হচ্ছে এখুনি বমি করে দিবে ৷রিদ রুমে মুনের উপস্তিতি বুজতে পেরে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে মুন দারিয়ে আছে ৷ রিদ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে প্রিয়ন্তি কে নিজের বুকের সাথে জরিয়ে ধরে ধরে আদর করতে লাগলো৷ মুন আর সহ্য করতে না পেরে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় ৷ মুন বসার ঘরে পৌছাতে মুনের শ্বাশুড়ী রিয়ানা বেগম মুনের চুলের মুঠি ধরে বলতে লাগলো এই বেশ্যার ঝি কাজ কাম ফেলাইয়া ঘরে যাইয়া খুটো মারিস হ্যা , বাকি কাজ গুলো কি তোর ওই নষ্টা মা আইয়া কইরা দিবো হ্যা…
” আম্মা আ,,আমি সব কাজ করে দিচ্ছি তবুও আমার আম্মু কে গালাগাল করবেন না দয়াকরে””
মুনের কথা শেষ হবার সাথে সাথে স্বজোড়ে মুনের গালে এক থাপ্পোর পড়লো , মুন থাপ্পোর খেয়ে ছিটকে ফ্লোরে পরে যায় ৷ তখনি রিদ একহাত দিয়ে মুনের চুলের গোছা গুলি হাতের মুঠে নিয়ে অন্য হাত দিয়ে মুখে গাল দুটো শক্ত করে চেপে ধরে বলে” শালী তোর সাহস কি করে হয় আমার অনুমতি ছাড়া আমার রুমে প্রবেশ করার বল কে অনুমতি দিয়েছে?””
চুল টেনে ধরায় মুনের মাথা মনে হচ্ছে ব্যাথায় ছিড়ে যাচ্ছে অন্যদিকে গাল চেপে ধরায় প্রচন্ড রকমের ব্যাথা অনুভব করছে মুন…..
“” কি হলো বল কেন গিয়েছিলে রুমে বল বলছি”” (রিদ)
রিদের কথা শুনে রিয়ানা বেগম গদগদ হয়ে বলে”” কি করেছে এ নবাবজাদীর বেটি বাবু””
“” কি করেছে শোন তোমার বউমার কাছে ৷ জানো মা প্রিয়ন্তি এসেছিলো আমার কাছে কি একটা ম্যাথ বুজছিলো না বলে ৷ আমি ওকে ম্যাথ টা সলভ করে দিচ্ছিলাম তখনি তোমার বউমা রুমে ঢুকে প্রিয়ন্তি কে দেখে কি সব বাজে গালাগাল করেছে৷”
রিদের কথা শুনে মুন যেন আকাশ থেকে পড়লো , এতো বড় মিথ্যে কথা কি করে বলতে পারে একজন মানুষ এটা মুন নিজেও বুজতে পারছে না ৷
অন্যদিকে রিদের কথা শুনে রিয়ানা বেগমের মাথায় যেন আগুন জ্বলে উঠলো নিজের বোনের মেয়ে কে নিজের থেকেও ভালোবাসে সে আর তাকে কটু কথা বলা , রিয়ানা বেগম দ্রুত রান্না ঘরে চলে গেলেন ৷ রিদ বুঝে উঠতে পারছে না তা মা কি করতে চাচ্ছে আর এদিকে মুন খুব ভালো করেই বুজতে পারছে আজ ওর কপালে কি আছে ৷ কিছুক্ষন পর রিয়ানা বেগম ঝাটা নিয়ে আসতে দেখে রিদের ঠোটের কোনে বাকা হাসি ফুটে উঠলো ….
রিয়ানা বেগম আসতে রিদ মুন কে ছেড়ে দিয়ে দুরে সরে দারায় …
“” তোর এতো বড় সাহস আমার কলিজার টুকরা প্রিয়ন্তি কে তুই গালাগাল করিস বাজারি মাইয়া আজ তোর একদিন কি আমার একদিন””
রিয়ানা বেগম এলোপাথারি সলার ঝাড়ু দিয়ে মুন কে পেটাতে লাগলো… এক একটা সালার বাড়ি যেন মুনের শরীরে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে ৷ পুরো ঝাড়ুর শলা মুনের শরীরে ভেঙে ক্ষ্রান্ত হোন রিয়ানা বেগম… মারা শেষে রিয়ানা বেগম নিজের ঘরে চলে যান৷ রিদ তার মা কে যেতে দেখে ধির পায়ে মুনের কাছে এসে বলে…….
“” বলেছিলাম তোকে আমার কথার বাইরে গেলে কি হতে পারে তোর, এখনো সময় আছে আমার কথায় রাজি হয়ে যা তাহলে তোকে রাজরানীর মতো করে রাখবো””
রিদের কথা শুনে মুন ঘৃনায় মুখ অন্যদিকে সরিয়ে নেয় ৷ সারা শরীরে অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছে ৷ ঝাড়ুর শলা গুলো ভেঙে ভেঙে সারা শরীলে গেথে আছে৷ চাইলেও মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না মুন রিদ কে….
রিদ বুজতে পারলো মুন তার প্রস্তাবে রাজি হবে না ৷ রাগে রিদ মুনের বুকে লাথি মেরে রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়৷
মুনের চোখ বেয়ে অঝরে পানি গড়িয়ে পড়ছে ৷ মুন শরীরে ব্যাথা নিয়ে অনেক কষ্ট করে দারাতে গিয়ে পরতে নিলে কেউ ধরে ফেলে …. মুন তাকিয়ে দেখে তার শ্বশুর রায়হান আহাম্মেদ ….
“” বউমা তোমার এই অবস্তা হলো কি করে””(রায়হান আহাম্মেদ)
“” বা,,বাবা আ,,পনি ক,,খন এ এলেন?”” (ভাঙা গলায় বললো মুন)
রায়হান আহাম্মেদ বুজতে পারলেন এটা কার কাজ…….
“” বউ মা তোমাকে কতোবার বলেছি এভাবে চুপ থেকে পরে পরে মার না খেয়ে তুমি তোমার বাবার বাসায় চলে যাও”””
মুন তার শশুরের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে ভাঙা গলায় বলে উঠলো “” বাবার বাসা ! আমার কি কোন বাড়ি আছে বাবা ? কেউ কি আমাকে চায় ? না আমার বাবা না আমার মা “”
“” না মা এভাবে বলে না এখানে থাকলে তুমি বাচঁবে না ৷ ওরা তোমাকে বাচঁতে দিবে না ৷ তুমি চলে যাও মা “”
“” কোথায় যাবো বাবা ? আমার যে কোন জায়গা নেই যাওয়ার….””
“” আমি ব্যাবস্তা করে দিবো তোমায় ৷ তুমি চলে যাবে এ নরকে তোমাকে থাকতে হবে না ৷ আমার চোখের সামনে তোমাকে এভাবে তিলে তিলে মরতে দেখতে পারবো না “”
মুন একদৃষ্টিতে তার শশুরের দিকে তাকিয়ে আছে ৷ মনের কেন যেন মনে হয় এ যেন তার শ্বশুর না তার নিজের বাবা ৷ মানুষ টা চেয়েও আমাকে বাচাঁতে পারে না বিধায় চোখে মুখে কষ্টের ছাপঁ……
“” বউ মা তুমি রুমে গিয়ে রেস্ট করো আমি মলম পাঠিয়ে দিচ্ছে ক্ষত স্থানে লাগালে ব্যাথ্যার উপশম হবে””
মুন মাথা নারিয়ে চিলেকোঠার রুমের দিকে পা বারাতে রায়হান আহাম্মেদ রেগে চেচিয়ে উঠলেন
“” বউমা আমি তোমাকে তোমার নিজের রুমে যেতে বলেছি চিলেকোঠার রুমে যেতে বলেনি””
মুন কিছু না বলে মাথা নিচু করে দারিয়ে আছে ৷ রায়হান আহাম্মেদ মুন কে কিছু বলতে না দেখে রিদ কে ডাকতে লাগলেন ৷ রিদ তার বাবার গলা পেয়ে প্রিয়ন্তি কে বিছানায় রেখে কোন মতে শরীরে শার্ট জরিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো….
রিদের বাবা তার সুপুত্রের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখে চোখ সরিয়ে নিলেন ৷ তিনি বুজতে পারলেন কেন তার লক্ষি বউমা নিজের রুমে না গিয়ে চিলেকোঠার রুমে যাচ্ছিলো কেন….
“” বাবা ডেকেছো?””(রিদ)
“” এই সব কি হচ্ছে রিদ? তুমি আর তোমার মা কখনো কি এই মেয়েটিকে একটু শান্তি দিবে না?””
রিদ তার বাবাব কথা গুলো শুনে অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে মুনের দিকে তাকাতে মুন ভয়ে কাঁপতে থাকে৷
“” বাবা তুমি কি বলছো আমি তা বুজতে পারছি না””
“” বুজতে পারছো না নাকি বুজতে চাইছো না কোনটা রিদ?”””
রিদের বাবার চেচামেচি শুনে রিয়ানা বেগম নিজের রুম থেকে বের হয়ে তেরে যায় মুন কে মারতে তখনি রিদ তার মায়ের হাত টেনে ধরে ইশারায় শান্ত থাকতে বলে….
“” তোমাদের নূনতম লজ্জা করে না তাই না রিয়ানা?””
“” কি বলতে চাইছো রিদের বাপ পরিষ্কার কইরা কও””
“” ঠিক আছে যখন তুমি আমার কথা বুজতে পারছো না তখন তোমাকে পরিষ্কার করে বলছি ৷ বউমার উপর কবে এই অর্তাচার বন্ধ করবে?”””
“” কিডা কইলো তোমার বউমার উপর আমি অতার্চার করি ? এই মাইয়া কইছে তাইনা? শয়তান মাইয়া আমার নামে শ্বশুরের কাছে কুটনামি করিস ? দারা ঝাড়ুর বাড়ি মনে হয় কম পরে গেছে এবা চলা কাঠ নিয়া আসি””
রিয়ানা বেগম রেগে মুন কে মারার জন্য জন্য চলাকাঠ আনতে যাবে ঠিক সে মুহূর্তে রায়হান আহাম্মেদ স্বজোড়ে এক থাপ্পোর মেরে বসেন রিয়ানার গালে ৷ হঠাৎ এমন কান্ডে সবাই স্তব্ধ ৷ রিয়ানা বেগম আগুন দৃষ্টি তে মুনের দিকে তাকিয়ে আছে৷
“” কি হলো বউমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন হ্যা , মারবে ওকে মেরে দেখাও তারপর দেখো আমি কি করি””
“” তুমি এই বাইরের মাইয়ার লাইগা আমার গায় হাত তোললা””
“” হ্যা তুলেছি বেশ করেছি ৷ মুন যেমন এ বাড়ির বউ তুমি ও তেমন এই বাড়ির বউ , মুন যদি বাইরের মেয়ে হয় তাহলে তুমিও বাইরের একজন মহিলা ৷ তোমরা দুজনে এ বাড়ির বউ আর তোমাদের স্টাট্রাস এক বুজতে পেরেছো?””
ত্রিশ বছর সংসার করে আজ প্রথম রিয়ানা তার স্বামীকে রাগতে দেখলো আর এই সবে পিছুনে এই মেয়ে টা দ্বায়ি… কথা গুলো ভাবতেই রিয়ানা বেগম রাগে ভিতরে ভিতরে ফুসতে লাগলো…..
“” আর রিদ তোকে বলছি ৷ এক জন আদর্শ ছেলে হতে গিয়ে একজন আদর্শ স্বামী হতে ভূলে যাস না৷ বউমা তার প্রিয় মানুষ গুলো কে ছেড়ে তোর কাছে পরে আছে আর তুই ওকে কষ্ট দিচ্ছিস ৷ “”
“” আমার ভূল হয়ে গেছে বাবা আর হবে না ৷ মুন আমাকে ক্ষমা করে দেও প্লিজ””
মুনে কথা গুলো বলতে বলতে রিদ মুনের হাত শক্ত করে চেপে ধরে .. মুন বুজতে পারছে রিদ তার বাবার সামনে ভালো সাজার জন্য এই অভিনয় করে যাচ্ছে ৷রিদ মুনে হাত টেনে রুমের নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে মুনের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে…” কি ভেবেছিস শালী বাবা কে দিয়ে কয়েকটা কথা শুনালে আমি ঠিক হয়ে যাবো হ্যা , তুই তোর এই বিচ্ছিরি মুখটা নিয়ে চলে যা আমার সামনে থেকে কারন তোকে আমার সহ্য হয়না””
মুন এক ঝলক নিজের বিছানায় তাকিয়ে দেখে প্রিয়ন্তি তার বিছানায় ঘুমিয়ে আছে আর নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রিয়ন্তির জামা কাপড় .. মুন দ্রুত নিজের চোখ দুটো সরিয়ে নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকে শাওয়ার অন করে তার নিচে দারিয়ে পরে ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে হার কাপানো ঠান্ডায় মুন ভিজে যাচ্ছে থর থর করে ঠান্ডায় মুনের ঠোট জোড়া কাঁপছে ৷ শরীরের কাটা যায়গা গুলোয় পানি লাগতেই আগুনের মতো জ্বলে উঠলো সেই জ্বালা মুন দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করতে লাগলো….
দশ মিনিট হতে-ই দরজায় কড়াঘাত পরতে লাগলো…
“” এই মা* বাইর হো আমার ওয়াশরুম থেকে বাইর হো বলছি””
রিদের নিজের মুখে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে লাগলো মুন কে , মুন শাওয়ার অফ করে ওয়াশরুমের দরজা খুলে দিতে রিদ হুরমুরিয়ে ভিতরে ঢুকে মুনে গালে চর মারে , মুন চর খেয়ে সেন্সলেস হয়ে যায়…
রাত তিনটে ঘুটঘুটে অন্ধকার চারিদিক মুনের জ্ঞান ফিরতে নিজেকে রিদের রুমের ব্যালকনিতে আবিষ্কার করে মুন ৷ ব্যাথায় পুরো শরীর যেন অবশ হয়ে গেছে ৷ মুন দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে ভাবতে লাগলো…..
আল্লাহ আমার কপালে যখন সুখ লিখোনি তাহলে কেন এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে পাঠালে আমায়? কি অপরাধ করেছিলাম আমি যার জন্য এমন স্বামীর সংস্যার করতে হচ্ছে ? ছোট বেলা থেকে না পেলাম বাবার আদর আর না পেলাম মায়ের আদর , বাবা মা থেকেও আজ নেই আমার কেন আল্লাহ কেন? ”
কথা গুলো ভাবতে ঢুকরে কেঁদে ওঠে মুন…. মুন কাদঁতে কাদঁতে জীবনে ফেলে আশা অতিতে ডুব দেয়…….
__________ “মুন বেপি কই তুই আর কতোক্ষন ধরে অপেক্ষা করবো তোর হুম””( সানজু)
“” সোনা আর একটু আমি এখুনি আসছি ৷ যাস্ট হেজাব টা পরে বের হবো””(মুন)
“” একঘন্টা ধরে দারিয়ে আছি আর তোর এই কথা শুনছি ধুর”” সানজু রাগ করে কল টা কেটে দিলো… মুন দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চুলো থেকে তরকারির পাতিল নামিয়ে আদরের ছোট ভাই মৃন্ময় কে ভাত বেরে দিয়ে রেডি হয়ে নিলো….””
“” আপু …””(মৃন্ময়)
“” হ্যা ভাই কিছু বলবি?””
“” বলছিলাম কি আমার জুতোটা না ছিড়ে গেছে দশটা টাকা হবে তোর কাছে জুতোটা সেলাই করে নিতাম ৷””
“” আম্মুকে বলেছিস তোর জুতো ছিড়ে গেছে?””
“” না মানে… আম্মুকে কিছু বলতে আমার ভিষন ভয় লাগে যদি আমাকে মারে..”” শেষের কথা গুলো নিচু গলায় বলে উঠলো মৃন্ময় “”
মুন দীর্ঘশ্বাস ফেলে ব্যাগ থেকে দশ টাকা বের করে মৃন্ময়ের হাতে দিয়ে না খেয়েই বেরিয়ে যায় মুন…….
এই গল্প টা অন্যসব গল্পের মতো না একটা বাস্তববাদী অসহায় এক মেয়ে গল্প যে কিনা জীবনের প্রত্যেকটা পদে পদে বাধার সম্মক্ষিন হয়েছে আর সেই বাধা হলো আপন মানুষ গুলো ৷ তবে হ্যা গল্প টা কারো জীবন থেকে নেওয়া৷ ভালো না লাগলে ইগনোর করুন৷
#চলবে……………….